#পালিয়ে_বিয়ে
#part_11
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ইশান আর ইহিতা এখন খুব ভালোভাবে মিশে গেছে একে অপরের প্রতি। ইহিতা এখন ইশানকে ছাড়া কিছু বুঝে না। ভার্সিটি তে ইহিতা একদম ভদ্রভাবে পড়াশুনা করে। এখন আর ইহিতা উচ্ছৃঙ্খল ভাবে চলে না। কোনো কিছুতে জেদ ও করেনা। ইহিতার এমন ব্যবহারে ইহিতার বাবা সহ সবাই অনেক খুশি স্পেশালি ইশান। ইশানের সাথে সারাক্ষণ দুষ্টামি,, দৌঁড়াদৌঁড়ি এসব নিয়েই এখন ইহিতা ব্যস্ত থাকে। তিন্নি তো আছেই যাকে ছাড়া ইহিতার একদমই চলে না। ইশান আর ইহিতার রোম্যান্স ও হয় অনেক। যখন ইশান ইহিতার কাছে আসে তখন ইহিতা লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইশান সেই মুহূর্ত টা অনেক বেশি উপভোগ করে। অন্যদিকে ইহিতার মেডিসিন গুলো শেষ যেইগুলো তার বাবা তাকে দিয়ে গেছিল। মেডিসিন দিতে বিকেলে ইহিতার বাবা ইশানের বাসায় আসে। ইশান তখন জিজ্ঞেস করে
-বাবা এতগুলো ওষুধ কিসের?
-কিছুনা বাবা। আসলে এইগুলো বডি ফিট রাখার ওষুধ। ইহিতা এইগুলো ছোট থেকেই খায়।
-কিন্তু নাম উঠানো কেন?
-ও কিছুনা। আসলে আমার আর্জেন্ট একটা মিটিং আছে। যেতে হবে আমায়। তুমি ইহিতাকে এগুলো প্রতিদিন দুইটা করে খাইয়ে দিও।
-কিন্তু বাবা শুনুন।
মিস্টার চৌধুরী খুব দ্রুত বেরিয়ে এলেন সেখান থেকে। গাড়ির সামনে এসে অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে পানি ফেলছেন তিনি। চশমা খুলে চোখ মুছে গাড়ি নিয়ে তিনি চলে যান। ইশান খুব বেশি ফ্রাস্টেটেড হয়ে গেছে এতগুলো মেডিসিন দেখে। ইশান প্যাকেট টা নিয়ে ঘরে আসলো। ইহিতা চুল আঁচড়াচ্ছিল।
-ইহিতা (চিন্তা মাখা মুখ নিয়ে ইশান)
-হ্যা বলো? (ইশানের দিকে মুখ ঘুরিয়ে)
-বাবা মেডিসিন গুলো দিয়ে গেলেন। কিসের মেডিসিন এইগুলো? তুমি নাকি ছোট থেকেই এইগুলো খাও। কই আমি তো জানতাম না।
-বাবা বলতেন কিসের নাকি ভিটামিন ক্যাপসুল এগুলো। আমিও খাই। পুরো ২০ টা বছর ধরে একটানা খাচ্ছি এই ওষুধ গুলো।
-What? ইহিতা তুমি আর কিছুই জানো না এ ব্যাপারে? (অনেক অবাক হয়ে ইশান)
-না।
-এই নাও একটা ওষুধ খেয়ে নাও। (মেডিসিনের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে ইশান)
-হুম।
ইশান একটু পর ভুলে গেল এই ব্যাপারটা কিন্তু ভাবছে না তা না। ইশান ভাবছে সরাসরি একদিন বাবার সাথে কথা বলবে। এসব ভেবে ইশান ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে। ইহিতার মিষ্টি একটা হাসিতে ইশান ভুলে যায় সবকিছু।
একদিন ভার্সিটি তে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে ইহিতা সেন্সলেস হয়ে যায়। হাত থেকে পড়ে পার্ফিউম এর বোতলটা ভেঙ্গে যায়। ইশান পিছু ফিরে দেখে ইহিতা পরে আছে ফ্লোর এ। ইহিতার কপাল কেটে গেছে। ইশান দৌঁড়ে ইহিতাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। সাথে আয়মান আর তিন্নিও যায়। ইশান কাঁদছে। আয়মান ইশানকে কাঁদতে দেখে ইশানকে সামলাচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে ইহিতার বাবা হাসপাতালে আসলেন। তার চোখে পানি। ইশানকে জিজ্ঞেস করলেন
-আমার মেয়ে কোথায় ইশান?
-আংকেল আপনি কাঁদছেন কেন? আপনারা এইভাবে ভেঙ্গে পরলে কি করে হবে? (আয়মান)
-ইহিতা কোথায়?
-OT তে। মাথা কেটে গেছে। আমার মনে হয়না খুব বেশি সিরিয়াস কিছু হয়েছে ইহিতার! শান্ত হোন আংকেল প্লিজ। দেখেন ইশান ও কিভাবে কাঁদছে। কিভাবে সামলাবো আপনাদের বলুন তো? (আয়মান)
মিস্টার চৌধুরী অনেক বেশি ছটফট করছেন। উনি সম্পুর্ন ভেঙ্গে পরেছেন। আজ যদি ইহিতা সত্যিটা জেনে যায়! এই ভয়ে উনি আরো বেশি ভেঙ্গে পরেছেন। ইশানের থেকে অনেক বেশি ফ্রাস্টেশন এ তিনি আছেন। ১ ঘন্টা পর ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এলেন। ইশান দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছে গেলো।
-ইহিতা কেমন আছে ডক্টর?
-মিস্টার চৌধুরী আপনি আমার সাথে কেবিনে আসুন। মিস্টার মির্জা আপনার সাথে পরে কথা বলছি। (ইশানের কাঁধে হাত রেখে বলল ডক্টর)
ইহিতার বাবা ডাক্তারের সাথে ডাক্তারের কেবিনে আসলো। ছোট থেকেই এই ডক্টর ইহিতার ট্রিটমেন্ট করছেন।
-সাগর (ডাক্তার) আমার মেয়েটা কেমন আছে?
-আশরাফ ইহিতা is in middle stage. নিজেকে শক্ত কর। (চৌধুরীর হাত ধরে বলল ডাক্তার)
-সাগর তুই তো অনেক বড় ডাক্তার! সাগর বাঁচিয়ে দে না আমার মেয়েকে। ২৩ টা বছর ধরে এই কষ্ট বুকের ভেতর চাপা দিয়ে আছি। বিন্দুমাত্র শেয়ার করতে পারিনি কাউকে। ওর ৩ বছর বয়স থেকেই ওষুধ খাইয়ে যাচ্ছি। আমার ২০ বছরের পরিশ্রম কি শেষ হয়ে যাবে সাগর? বল না শেষ হয়ে যাবে? আমার ফুঁটফুঁটে মেয়েটা কি আর আমাকে বাবা ডাকবেনা? আজ ওর কত সুন্দর একটা সংসার হয়েছে,,কত সুন্দর মেয়ের জামাই আছে আমার। সব কি এভাবে শেষ হয়ে যাবে? (কান্না ভেজা দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাঁকিয়ে)
-আশরাফ নিজেকে শক্ত কর। ২৩ বছর কি আমি কম চেষ্টা করেছি। কোনো মেডিক্যাল বোর্ড বাদ রাখিনি। বিশ্বের সব কয়টা মেডিক্যাল বোর্ডের সাথে মিটিং করেছি। তাদের মুখে একটাই বুলি এইটা কখনই সম্ভব না। (চশমা খুলে রেখে ডাক্তার) যে কোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে আশরাফ। তোকে শক্ত থাকতে হবে। ইশান যদি এই ব্যাপারে একটু কিছু জানে তাহলে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে ও।
-আমি জানি। কিন্তু আমি আমার মেয়েকে ছাড়া থাকব কিভাবে? বলনা কিভাবে থাকব? (চোখ দিয়ে পানি ঝরছেই)
-মেনে নিতে হবে আশরাফ। ভাগ্যের উপর কারো জোর চলে না। চল মামনিকে দেখবি। চোখ মুছ। ইশান যেন কিছু টের না পায়।(ডাক্তার চোখ মুছে)
-চল।
ডাক্তার ইশানকে নিয়ে ইহিতার কেবিনে গেলো। ইহিতার জ্ঞান ফিরেছে মাত্রই। কপালে ব্যান্ডেজ করা আর হাতে স্যালাইন পুশ করা। ইহিতা সবাইকে দেখে হেসে দেয়। ইহিতাকে হাসতে দেখে ইহিতার বাবা ডাক্তারের দিকে তাঁকিয়ে কেঁদে দেয় নিঃশব্দে। ডাক্তার তখন ইহিতার বাবার কাঁধে হাত রেখে তাকে থামতে বলেন। ইশান ইহিতার হাত শক্ত করে ধরে একটা চুমু দেয়। আয়মান তখন ইশানের কাঁধে হাত রাখে। তিন্নি ইহিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-কেমন লাগছে এখন ইহিতা?
-বউমনি ভালো লাগছে।
-ইশান থাকো আমরা আসছি। বাইরে আছি। (তিন্নি)
আয়মান তিন্নি চলে গেলো বাইরে। ডাক্তার ইহিতাকে চেকাপ করিয়ে আশরাফ চৌধুরীকে নিয়ে বাইরে চলে আসেন। ইহিতা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেমন আছে? কিন্তু চৌধুরী কোনো জবাব না দিয়ে মুখ হাত দিয়ে ঢেকে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ডাক্তারের কেবিনে মাথা নিচু করে কাঁদছেন। আজ যেন তার সব চাপা কষ্ট বেরিয়ে আসতে চাইছে। ডাক্তার চৌধুরীকে সামলে নিলেন। পৃথীবিরর কোনো বাবা চায়না তার সামনে তার মেয়েটা মরে যাক। সেখানে আশরাফ চৌধুরী কিভাবে চাইবেন তার হাতে গড়া পুতুলটা এভাবেই তার চোখের সামনে শেষ হয়ে যাক?
বিকেলে ইহিতাকে বাসায় নিয়ে যায় ইশান। হসপিটাল বিল আয়মান দেয়। ইহিতার বাবা বারবার না করা সত্বেও আয়মান বিল পে মেন্ট করে। ইহিতার বাবা ও যায় সাথে। ইহিতার সাথে তিনি কথা বলেন। মেয়েকে বারবার বলছেন আমার ইহিতার কিছু হবেনা। ইহিতার সুপারম্যান বাবা আছে না? এ কথা শুনে ইহিতা হেসে দেয় আর বলে
-বাবা ইহিতা এখন বড় হয়ে গেছে। আর এইটা সত্যি যে তুমি আমার সুপারম্যান বাবা।
-মামনি বাসায় যাবে না? তোমার লেটেস্ট মডেলের গাড়িগুলো যে তার মালিককে চাইছে,,তোমার টেডি বিয়ারগুলো শুধু বলে ইহিতা কোথায়? তখন বলো তো আমি কি জবাব দেই? (চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে ইহিতার বাবার)
-বাবা আমি ছোট নই। বড় হয়ে গিয়েছি না।
-ইশান আজকে ইহিতা আমার বাসায় যাবে। তুমিও চলো।
-কিন্তু বাবা ওর এই অবস্থায়?
-হ্যা ইশান। আজকে থেকে আমার কাছে থাকবে আমার মেয়ে।
-আংকেল এইটা কিভাবে সম্ভব?
-চলো। আমি জানিনা কিভাবে সম্ভব! আমি ইহিতার গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছি ড্রাইভারকে। ইহিতা ড্রাইভ করবে আজকে।
-বাবা আপনি কি বলছেন এসব? ও কিভাবে ড্রাইভ করবে এই অবস্থায়? আমি করব।
-না ইহিতা করবে আর ওর পাশে আমি বসব। যেমনটা আমরা প্রতিদিন ঘুরতে যেতাম। তাই না মামনি?
-কিন্তু বাবা আমি ড্রাইভ করতে পারব?
-আমার মেয়ে সব পারবে। ইশান ইহিতাকে তৈরি করে নিচে নিয়ে আসো।
-আচ্ছা।
ইশান ইহিতাকে রেডি করে কোলে করে নিচে নামালো। সবার সাথে দেখা করে রাতেই চলে আসলো ইহিতা ওর নিজের বাসায়। ইহিতা আস্তে আস্তে ওর প্রিয় গাড়িটা ড্রাইভ করছে আর আশরাফ চৌধুরী মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইশান বারবার বলছে খারাপ লাগলে ব্রেক করো। কিন্তু ইহিতা সারা রাস্তা আসলো নিজে নিজে ড্রাইভ করে। বাসার সামনে আসার পর ইশান ইহিতাকে সাবধানে নামালো আর কোলে নিয়ে দোতালায় ইহিতার ঘরে নিয়ে ইহিতাকে শোয়ালো।
১ বছর পর কি হতে যাচ্ছে তারই অপেক্ষা নেক্সট পর্বে
চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_12
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ইশান ইহিতাকে ওর রুমে নিয়ে গেলো কোলে করে। ইহিতার মাথা ব্যথা করছে। ইশান ইহিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল খুব সাবধানে কারণ কপালে ব্যান্ডেজ করা। ইশানের মন ভালো নেই দেখে ইহিতা বলল
-কি ব্যাপার? কি হয়েছে তোমার? (ইশানের গালে হাত রেখে)
-তুমি খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে যাও প্লিজ। তোমাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না আমার। (ইহিতার হাতে চুমু দিয়ে বলল ইশান)
-হবো তো! তুমি কেঁদো না তো! আমি কি মরে গেছি নাকি বলো তো?
-ইহিতা আর একদিন যদি তোমার মুখে মরে যাওয়ার কথা শুনি সেইদিন আমি নিজেই তোমাকে মেরে ফেলব। (রেগে গিয়ে ইশান)
সিমি এসে ইশান আর ইহিতার খাবার দিয়ে গেলো। ইশান ইহিতাকে খাইয়ে দিল কিন্তু নিজে কিছু খেলো না। ইহিতা জোর করে ইশানকে খেতে বাধ্য করলো। ইশান ইহিতাকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে ইহিতাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। ইশান ইহিতার ঘুমন্ত মুখটা দেখছে আর ইহিতাকে চুমু দিচ্ছে।
প্রায় ৭ দিন পর ইহিতা সুস্থ হয়। এর মাঝে আয়মান আর তিন্নি প্রতিদিন এসে ইহিতাকে দেখে যায়। ইশান এক মুহূর্তের জন্যও কোথাও যায়না ইহিতাকে ছেড়ে। ইহিতা এখন ওর বাবার বাসাতেই থাকে। মাঝে মাঝে শ্বশুর বাড়ি যায়। বেশ ভালোই কাটছে ইহিতা আর ইশানের দিন। কিন্তু ইহিতা মাঝে মাঝে অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। মিস্টার চৌধুরী কোনো টেস্ট করাতে দেন না ইশানকে সত্যিটা প্রকাশের ভয়ে।
প্রায় ১ বছর পর………
ইহিতা প্রেগন্যান্ট কিন্ত হাসি নেই ইহিতার বাবার মুখে। ইহিতা আর ইশানের মুখে রাজ্য জয় করার হাসি। তিন্নি আর আয়মান খুব ধুমধাম করে সেলিব্রেট করে আর মিস্টার মির্জা,, মিসেস মির্জা তো ইহিতাকে চোখে হারান। কারণ তাদের বংশের প্রথম প্রদীপ ইহিতাই দিতে চলেছে। ইশান ইহিতাকে মাথায় করে রাখে। তিন্নি ইহিতার দেখা শুনা করে। মিস্টার চৌধুরী ইহিতার ভালো টেক কেয়ারের জন্য মির্জা প্যালেসে পাঠিয়ে দিলেন। ইশান ভার্সিটি তে যায়না আর ইহিতাকেও পাঠায় না। সারাক্ষণ ইহিতাকে আনন্দের মধ্যে রাখে ইশান। কিন্তু ৬ মাস পার হয়ে যাবার পর ইহিতা কেমন যেন হয়ে যায়। জোর করে হাসে,, ঠিক মতো কথা বলে না। এসব ইশানের চোখে খুব প্রখর ভাবে পরে। একদিন ইহিতাকে ইশান জিজ্ঞেস করে
-ইহিতা? সোনা কি হয়েছে তোমার? কিসের এত চিন্তা করছো তুমি ইদানীং?
-আমি ভাবছি আমার দুষ্টু ইশান কি আমার মামনিকে দেখে রাখতে পারবে? (মুখে একটা কৃত্রিম হাসি এনে)
-কেন মামনির মাম্মাম আছে না?
-ইহিতার মুখ মলিন হয়ে যায় এ কথা শুনে। চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু ইহিতা চায়না ইশানকে ধাপে ধাপে কষ্ট দিতে। তাই ইহিতা সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
-হ্যা আছে তো।
-তাহলে এত চিন্তা করতে হবে না। খাবে চলো
-তুমি খাইয়ে দিবে তো?
-কবে আমি তোমায় না খাইয়ে দিছি শুনি তো?
-কোনোদিন না। আমি না থাকলে তখন অন্যকাউকে খাইয়ে দিবে। (আস্তে করে বলল ইহিতা)
-কিছু বললে?
-কই না তো।
-চলো
৩ মাস পর ইহিতার ডেলিভারি পেইন উঠে প্রচন্ড। ইহিতা কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে সব। এই কান্না কিসের সেইটা ইহিতাই ভালো জানে। কোনো স্ট্রেস ছাড়াই ইহিতা আর ইশানের খুব সুন্দর একটা মেয়ে হলো। ইহিতা সবার আগে কোলে নিয়ে তাকে আদর করলো। ইশান আগে ইহিতাকে জড়িয়ে ধরলো।
-খুব কষ্ট দিয়েছি না আমি তোমায়? স্যরি
-এই বোকা সবারই তো কষ্ট হয়। আমার একার কষ্ট হয়েছে নাকি হ্যা?
-আমাকে দাও ওকে।
-নাও।
ইশান তার মেয়েকে আদর করছে আর ইহিতা দেখছে আর মনে মনে বলছে “সারাজীবন করো এমন আদর ওকে। আমি তো থাকব না। ওকে নতুন মা এনে দিও। ওকে আমার থেকে বেশি ভালোবেসো” এসব ভাবতে ভাবতে ইহিতা কেঁদে দেয় শব্দ করে। ইশান ইহিতার চোখের পানি মুছে দেয় আর ইহিতা খুব শক্ত করে ইশানকে জড়িয়ে ধরে। কেউ চায়না তার ভালোবাসার মানুষকে অন্য একজনের সাথে দেখতে কিন্তু ভাগ্য আজ ইহিতার বিরুদ্ধে। এই কান্নার মানে হয়ত ইশান বুঝছে না আর ইহিতা চাইছেও না ইশান বুঝুক। ইহিতার বাবার দিকে তাঁকিয়ে ইহিতা চোখে চোখে বলে দিতে চাইছে যে বাবা আমি সব জেনে গেছি। তোমার মেয়ে আর কয়েকদিন এর অতিথি এই পৃথীবি তে। তারপরই সে চলে যাবে স্বামী,সন্তান আর সুপারম্যান বাবাকে ছেড়ে। কিন্তু সেখানে ইহিতা ইশানকে ছাড়া থাকবে কি করে?
ইশান পরেরদিন সকালে ইহিতাকে বাসায় নিয়ে যায়। ইহিতাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যায় ইশান আর মেয়েটা তিন্নির কোলে। তিন্নি ইশানকে বলল
-ইশান বাবু আমার কাছে থাক। তুমি ইহিতাকে ফ্রেশ করিয়ে দাও।
-আচ্ছা বউমনি।
ইশান ইহিতাকে ফ্রেশ করিয়ে দেয়। আর ইহিতা বলে
-মামনিকে নিয়ে আসো আমার কাছে। (চোখ টলমল করছে ইহিতার)
-যাচ্ছি তুমি বসো। উঠবেনা একদম।
-আচ্ছা তারাতারি যাও।
ইশান তিন্নির কাছ থেকে বাবুকে এনে ইহিতার কোলে দেয়। ইহিতা কোলে নিয়ে হেসে দেয়।
– একটা কথা বলি?(ইশানকে উদ্দেশ্য করে ইহিতা)
-বলো
-এখন আমাকে আগের থেকে বেশি ভালোবাসবে তো?
-তোমাকে কি আমি কোনোদিন কম ভালোবেসেছি জানপাখি? বলো তো! (ইহিতার গালে হাত রেখে ইশান)
-না এখন থেকে আরো ভালোবাসবে।
-আচ্ছা। এখন তো উঠেন। খেতে হবে তো!
-খাইয়ে দাও।
-আসছি।
ইশান কোনোদিন ইহিতার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলেনি,, কোনোদিন ধমক দেয়নি ইহিতাকে। ইহিতার ভুলগুলো মেনে নিয়েছে শুধুমাত্র ইহিতার মনে ইশানের একটু জায়গার জন্য। ইশান আর ইহিতার মেয়ের নাম রাখে ইহিতা। নাম হচ্ছে হিয়া বিনতে ইশান। বাড়ির সবাই ইহিতাকে অনেক আদর করে। ইহিতার বাবা ইহিতাকে ছেড়ে কোথাও যান না। সবাই ইহিতাকে ঘিরে রেখেছে মায়া দিয়ে।
হিয়ার বয়স যেদিন ৭ দিন সেইদিন ইহিতার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়। ইহিতা চিৎকার করে ইশানকে ডাকছে। ইশান নিচে ছিল। দৌঁড়ে এসে দেখে ইহিতা ফ্লোরে শুয়ে ছটফট করছে। ইশান ইহিতাকে কোলে তুলে নেয়। ইহিতা শক্ত করে ইশানকে জড়িয়ে ধরে। ইশান ইহিতাকে নিয়ে খুব দ্রুত হাসপাতালে যায়। হয়ত এইটাই শেষ দেখা ইহিতা ইশানের। হিয়াকে মিসেস মির্জার কাছে রেখে তিন্নিও যায় হাসপাতালে। মিস্টার চৌধুরী এ কথা শুনে এক সেকেন্ড দেরি না করে চলে এলেন হাসপাতালে। ডক্টর সাগর আর সিংগাপুরের ৩ জন ডাক্তার মিলে ইহিতার অপারেশন করছে। ইশানের মনে আজ কেন যেন ইহিতাকে হারানোর ভয় কাজ করছে। নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা ইশান! ইশান বাইরে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে। ২ ঘন্টা পর ডাক্তাররা বেরিয়ে এসে বললেন
-লাস্ট আধা ঘন্টা আছে ইহিতার হাতে। চাইলে আপনারা কথা বলে আসতে পারেন।
-ইশান এইটা শুনে মনে হলো স্বপ্ন দেখছে। ইশান বলল আধা ঘন্টা মানে?
-মিস্টার মির্জা ইহিতার ব্রেইন টিউমার আর সেইটা জন্মের পর থেকেই। এইটা ভালো হতো যদি ব্রেইন এর আশেপাশে থাকত। একদম গ্রন্থির মাঝে টিউমারটা গেঁথে আছে। অপারেশন করা হলেই মারা যেত ইহিতা। নিজেকে সামলান ইশান। বাস্তবতা মেনে নিন। (ডক্টর সাগর)
এ কথা শুনে ইশান হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো ডাক্তারের দিকে। মাটিতে বসে পরলো ইশান।
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_13
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ডাক্তারের কথা শুনে ইশান মাটিতে বসে পরলো আর হতভম্ব হয়ে ডাক্তারের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। আয়মান,,তিন্নি ইশান আর ডাক্তারের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইহিতার বাবা চশমা খুলে ফ্লোরে বসে পরলেন। ইশান একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। ওর কি বলা উচিৎ বা কি বলবে সেইটাই ইশান জানেনা। কেবিন থেকে নার্স এসে ডাক্তারকে বলল
-স্যার পেশেন্ট তার বেবিকে দেখতে চাইছে। কি করবো?
-যা করতে চাইছে করতে দাও। আটকিয়ো না। আশরাফ হিয়াকে হসপিটালে নিয়ে আয়। (ইহিতার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ডাক্তার)
আয়মান খুব দ্রুত বাসায় ফোন করলো আর তার আম্মুকে বলল হিয়াকে নিয়ে ইমিডিয়েট হসপিটালে আসতে। আয়মান ইশানকে উঠিয়ে কেবিনে নিয়ে গেলো। ইশান এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে ইহিতার দিকে। চোখ গুলো লাল রঙের হয়ে গেছে। ইহিতার চোখ থেকে ঝর্না বইছে। কে কাকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা কেউ! ইহিতা ইশানের হাতের উপর হাত রাখলো।
-হিয়ার আব্বু? এই হিয়ার আব্বু? কথা বলবেনা হিয়ার আম্মুর সাথে? (কথাগুলো বলতে গিয়ে ইহিতার গলা ধরে আসছিল)
-ইশান এখনো কিছু বলছে না শুধু তাঁকিয়ে আছে।
-হিয়ার আব্বু শোনো আমার হিয়াকে দেখো কিন্তু। তুমি তোমার খেয়াল রেখো আর কখনো আমায় মনে করে কেঁদো না কিন্তু। হিয়াকে সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবেসো। আমি থাকব না তো কি হয়েছে হিয়া তো আছে। একটা বিয়ে করো আমার ছোট্ট হিয়ার জন্য। আর শোনো তাকে ভালোবেসো অনেক আর একটা অনুরোধ রাখবে?
-ইহিতা তুমি এসব কি বলছো? কিচ্ছু হবেনা তোমার! আমরা আছি না? (আয়মান চোখের পানি মুছতে মুছতে)
-ভাইয়া ও কথা বলছে না কেন? ভাইয়া ওকে কথা বলতে বলেন। ও কি একটাবার আমায় জড়িয়ে ধরবেনা? ও এভাবে তাঁকিয়ে আছে কেন আমার দিকে? ও হিয়ার আব্বু কথা বলো না একটু! হিয়ার আব্বু??? (ইহিতা কাঁদছে)
-ইশান এই ইশান! ভাই,,, ইশান! ভাই আমার, একটাবার কথা বল। এভাবে চুপ করে থাকিস না! দেখ ইহিতা কাঁদছে,,তোর ইহিতা কাঁদছে। একটাবার ওর সাথে কথা বল। এভাবে চুপ করে থাকিস না।
-একা আমায় রেখে চলে যাবে? হিয়াকে রেখে চলে যাবে? আমার ভালোবাসা তোমার কাছে কিছুই ছিল না? (শান্ত গলায় বলল ইশান)
-হিয়ার আব্বু একটাবার আমায় জড়িয়ে ধরো একটাবার। (ইহিতা উঠতে চেষ্টা করে)
আয়মান ইহিতাকে উঠিয়ে দেয়। ইহিতা ইশানকে জড়িয়ে ধরে। ইশান ইহিতাকে পাগলের মতো জাপটে ধরে আছে। একদম অন্তরে ঢুকিয়ে ফেলছে ইশান ইহিতাকে। ইহিতার চুলগুলো সব ইশানের হাতের মুঠো বন্ধি হয়ে আছে। কেঁদে দুইজনেই গা ভাসাচ্ছে। ইহিতার আব্বু,,আয়মান,,তিন্নি,, ডাক্তার,, নার্স সবাই কাঁদছে। তিন্নি সামনে আগানোর সাহস পাচ্ছেনা। এরই মাঝে ইহিতার শ্বাশুরি আর শ্বশুর হিয়াকে নিয়ে কেবিনে ঢুকে। হিয়া কাঁদছে অনেক। হিয়ার কান্নার আওয়াজ শুনে ইহিতা হিয়ার দিকে তাঁকায় আর খুব দ্রুত হিয়াকে কোলে নেয়। ইহিতা হিয়াকে কোলে নেওয়ার পর হিয়া একদম চুপ হয়ে যায় আর ইহিতার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে থাকে। ইহিতা বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে হিয়াকে। ইশান ইহিতাকে ছাড়ছেনা। ইহিতার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে ইশান বলে
-এই ছোট্ট হিয়াটা কি থাকতে পারবে ওর আম্মুকে ছাড়া? ও হিয়ার আম্মু তুমি প্লিজ কোথাও যেয়ো না হিয়াকে আর আমাকে ছেড়ে। আমি বেঁচে থেকেও যে মরে যাব। ইহিতা সোনা প্লিজ তুমি যেয়ো না কোথাও! (ইশানের চোখ থেকে শুধু পানি পরছে)
-আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমি কিভাবে থাকব তোমাদের ছাড়া? আমি মরতে চাইনা, আমি মরতে চাইনা। (এক হাতে ইশানকে জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে হিয়াকে নিয়ে ইহিতা)
-ইহিতা আমি তোমায় কোথাও যেতে দিব না। কোত্থাও না। তুমি আমার আর আমার কাছেই থাকবে। ইহিতা আমায় একা করে দিও না। আমি পাগল হয়ে যাব ইহিতা,পাগল হয়ে যাব। (কাঁদছে ইশান)
-হিয়ার আব্বু আমার হিয়াকে দেখো আর ওকে কখনো কষ্ট দিও না। ওর জন্য একটা মা এনে দিও। (এই কথা বলার সময় ইহিতার বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো)
-চুপ করো তুমি। আমার ইহিতার কিচ্ছু হবেনা, কিচ্ছুনা। (ইহিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে হিয়া)
-বাবা আমায় মাফ করে দিও। এতদিন অনেক অন্যায় করেছি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। হিয়ার সাথে থেকো। আর ওর (ইশানের) জন্য একটা মিষ্টি মেয়েকে এনে দিও। আর ভাইয়া বউমনি হিয়াকে দেখো আর আমার এইই পাগলটাকেও দেখো। আমার বাবা কেও দেখো। আম্মু, আব্বু আমায় মাফ করে দিয়ো। অনেক বেয়াদবি করেছি তোমাদের সাথে। মাফ করে দিও। আর তোমাদের হিয়াকে দেখে রেখো। আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস দুটো রেখে যাচ্ছি আমার ইশান আর হিয়া। ওদের অযত্ন করো না।
কেউ কিছু বলতে পারছেনা। শুধু কাঁদছে। নার্সরা সবাই বেরিয়ে গেছে এই দৃশ্য সইতে না পেরে। মায়ের কোলে সন্তান রেখে মা মারা যাচ্ছে। এর থেকে দূর্ভাগা এই দুনিয়ায় হয়ত আর কেউ নেই। ইহিতা ইশানকে ছেড়ে দিয়ে হিয়াকে ইশানের কোলে দিল।
-কাঁদবেনা একদম। আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে,,হিয়াকে খাওয়াবে,,গোসল করাবে,,খেলবে ওর সাথে। সব দায়িত্ব তোমায় দিয়ে গেলাম কিন্তু। কোনো দায়িত্ব নিতে যদি ভুল করেছো তো দেখো!!! (চোখের পানি মুছতে মুছতে ইহিতা)
-আমি কেমনে থাকব ইহিতা? আমায় নিয়ে যাও না তোমার সাথে! তোমায় ছাড়া আমি কেমনে থাকব বলো ইহিতা বলো? তুমি কেন বুঝছো না ইহিতা ছাড়া ইশান…… (ইশানের কথা শেষ করার আগেই ইহিতা ইশানের বুকের উপর মাথা কাত করে দেয় আর হিয়ার উপর এক হাত ফেলে দেয়।) ইশান তখন ধুক করে উঠে। ইশানের হাত কাঁপছে। আয়মান হিয়াকে নেয় ইশানের কাছ থেকে আর ইশান ইহিতার মাথা নাড়িয়ে দেখে ইহিতা কথা বলছেনা। ইশান ইহিতার গাল ধরে বলে
-ইহিতা? এই হিয়ার আম্মু? কোথায় গেলা তুমি? এই ইহিতা? ইহিতায়ায়া?
ইহিতার বাবা চুপ হয়ে যায় আর ডাক্তার ইশানকে সরিয়ে দেয় ইহিতার সামনে থেকে। তিন্নি সেন্সলেস হয়ে যায়। আয়মান হিয়াকে সিমির কাছে দিয়ে তিন্নির জ্ঞান ফিরালো। তিন্নি তখন আয়মানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। ইহিতার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে ইশান। হিয়া অনেক কান্না করছে। হিয়ার কান্না কেউ থামাতে পারছেনা। ইশান তখন হিয়াকে কোলে নেয়। হিয়াকে কোলে নিয়ে ইশান ইহিতার লাশের সামনে যায়। হিয়া তখন ইহিতার জামা ধরে টানাটানি করছিল। কিন্তু ইহিতার নির্জীব শরীর তার আদরের মেয়ের ছোঁয়া বুঝতে পারছেনা।
আমি জানিনা আমি কতবার কাঁদলাম এইটা লিখতে গিয়ে।
চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_14
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ইশান হিয়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুধু কাঁদছে। সামনে ইহিতার মায়াভরা মুখটি চোখ বন্ধ করে রেখেছে সারাজীবনের জন্য। ইহিতার বাবা কিছু বলছেনা। ডাক্তার সাগর ইহিতার বাবাকে সামলাচ্ছেন। আয়মান আর তিন্নি ইশানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তিন্নি হিয়াকে ইশানের কোল থেকে নেয়। আয়মানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় ইশান।
-ভাইয়ারে আমি থাকব কিভাবে এই মায়াপরীকে ছাড়া? আমার হিয়া থাকবে কিভাবে? ও এইভাবে আমাদের দুইজনকে একা ছেড়ে চলে গেল কেন? ভাইয়া কথা বলো। আর কখনই তো ও আমায় বলবেনা খাইয়ে দাও। বলবেনা দুষ্টামি করো না। ভাইয়া আমার বুকটা যে ফেটে যাচ্ছে রে ভাইয়া। ইহিতাকে এনে দাও ভাইয়া এনে দাও। আমি মরে যাব ওকে ছাড়া।
-ভাই তুই কাঁদিস না। তুই এইভাবে ভেঙ্গে পরলে হিয়া আম্মুকে কে দেখবে বল? এখন তোর উপরে দায়িত্ব কত তুই জানিস না? শক্ত কর নিজেকে।
-ভাইয়া আমি ইহিতাকে ছাড়া থাকতে পারব না। ভাইয়া এনে দেও ওকে।
আয়মান কাঁদছে কিন্তু কি বলবে ও! তিন্নি করিডোরে দাঁড়ায় হিয়াকে নিয়ে। ইশানের মা বাবা তিন্নির পাশে বসে কাঁদছে। ১ ঘন্টার মধ্যে ইহিতাকে দাফন করা হলো। ইশান হাতে মাটি লাগা থাকা অবস্থায় হিয়াকে নিয়ে কবরের সামনে বসে পরলো আর চোখের পানি দিয়ে কবর ভিজাচ্ছে। হিয়াও চিৎকার করে কাঁদছে। ইশান কোনো কথা বলছেনা শুধু হিয়ার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
-আম্মু দেখ না তোর আম্মু কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে তোকে আর আমাকে ছেড়ে। বলতো আম্মু তুই কি থাকতে পারবি তোর আম্মুকে ছাড়া?
-আয়মান পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে সাথে ইহিতার বাবা আর শ্বশুর।
-ইশান হিয়াকে বলছে জানো হিয়া তোমার আম্মু কখনো অন্ধকারে থাকতে পারতো না। আজ দেখো ও নিজেই অন্ধকার হয়ে গেছে। ও ভয় পেলেই আমার টি শার্ট ছিঁড়ে ফেলত টান দিয়ে কিন্তু এখন কে ছিঁড়বে? আমি ওর এত স্মৃতি নিয়ে কিভাবে বাঁচবো বলনা হিয়া আম্মু?
মিস্টার মির্জা আর আয়মান ইশানকে উঠালো। বাড়ির গার্ডেনেই কবর দেওয়া হয়েছে ইহিতাকে। ইশান উঠবেনা আয়মান জোর করে উঠালো ইশানকে। তিন্নির কোলে দিল হিয়াকে। আয়মান তিন্নিকে বলল হিয়াকে খাবার খাওয়াতে। আয়মান ইশানকে নিয়ে গেস্ট রুমে গেল কারণ ওর বেডরুমে গেলেই ও আবার পাগলামি শুরু করবে ইহিতার সব কিছু দেখে। আয়মান নিজে ইশানকে ফ্রেশ করিয়ে দিল। এই অবস্থায় কে কাকে দেখবে? কিন্তু আয়মান আর তিন্নি শক্ত হাতে সব সামলাচ্ছে। রাত যত বাড়ছে ইশানের কান্নার আওয়াজ তত জোরেই শুনা যাচ্ছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবাই কাঁদছে। কিন্তু কেউ ইশানকে শান্তনা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। ইশান এখনো ওর বেডরুমে যায়নি। মাটিতে শুয়ে শুয়ে শুধু কাঁদছে। সারাদিনে কেউ কিছু খায়নি। ইশানের চোখে চোখ রেখে কেউ কিছু বলতে পারছেনা। নিজের চোখে ছোট্ট মেয়েটা রেখে ইশানের এত ভালোবাসা উপেক্ষা করে ইহিতার চলে যাওয়াটা দেখেছে ইশান। বারবার ইহিতার কথা কানে বাজছে ইশানের। বেয়াদব,,স্টুপিড,, ছোটলোক,, ইহিতার বিভিন্ন ভঙ্গিতে কথা বলা এসব ইশানকে আরো কষ্ট দিচ্ছে। রাতে ইশানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো এসব এখন সবই স্মৃতি ইশানের কাছে! ইশান আর পারছেনা এভাবে থাকতে। কষ্টের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ইশান। ইশানের সামনে থাকা একটা ছুড়ি হাতে নেয় ইশান। আয়মান আর মিস্টার মির্জা দৌঁড়ে এসে আটকায় ইশানকে। ইশান ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বলে
-পাপা আমি এভাবে বেঁচে থেকে কি করব পাপা? পাপা আমি পারব না এভাবে বেঁচে থাকতে। আমার ইহিতাকে এনে দাও তোমরা। আমি মরে যাব পাপা। আমি মরে যাব।
-আব্বু তুই না আমার লক্ষ্মী ছেলে। আমার দাদুভাইকে কে দেখবে তুই এমন করলে। আব্বু পাগলামি করিস না। (কাঁদতে কাঁদতে মিস্টার মির্জা)
-ইশান কেঁদো না। নিজেকে শক্ত করো। এইটাই হওয়ার ছিল। (চোখ মুছতে মুছতে ইহিতার বাবা)
-ভাই তুই না আমার ভাই। ইশান মির্জাকে এভাবে মানায় না। আমার ভাই সবসময় হাসি খুশি থাকে। সেই ভাইকে আমি দেখতে চাই। অন্তত আমাদের হিয়া মামনির জন্য। (আয়মান)
-ইশান দেখো হিয়া কিভাবে তাঁকিয়ে আছে তোমার দিকে! তুমি এই পাগলামি করলে এই মেয়েটাকে কে দেখবে?
ইশান হিয়াকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসে পরে। তিন্নি ইশানের জন্য ভাত নিয়ে আসলো। ইশানকে জোর করে খাইয়ে দিল তিন্নি। কিন্তু নিজে কিছু খেলো না। কেউ কিছুই খায়নি।
এভাবে কেটে গেল ৮ টা মাস। হিয়া এখন বসতে পারে আর একদম ইহিতার মতো হয়েছে দেখতে। ইশান আগের থেকে অনেক শান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ইশানের কষ্টের সাক্ষি হয়ে থাকে প্রতিটা রাত। মিস্টার মির্জা ইশানকে কাজে ব্যস্ত রাখতে চান যাতে ইশান ইহিতাকে ভুলতে পারে। তাই তিনি সমস্ত ব্যবসা ইশানের উপর দিয়ে দিলেন। ইহিতার বাবা ইশানদের সাথেই থাকেন। যদিও তিনি থাকতে চাননি কিন্তু সবার জোরাজোরিতে থাকতে হয়েছে। তিন্নি আর সিমি মিলে হিয়াকে দেখে রাখে। এখন সবাই মেনে নিয়েছে সব শুধুমাত্র হিয়ার দিকে তাঁকিয়ে। ইশান আর এখন প্রকাশ্যে কাঁদেনা। ইহিতা মারা যাবার ৫ মাস পর্যন্ত ইশান নিজের ঘরে যায়নি। কিন্তু এখন হিয়াকে নিয়ে ইশান ইহিতা আর ওর বেডরুমেই থাকে। সারাদিন অফিস করে রাতে ফিরে যখন হিয়ার মায়াবী মুখটা দেখে তখন ইশান সব ভুলে যায় আর ফ্রেশ না হয়েই মেয়ের সাথে খেলতে শুরু করে। তখন তিন্নি এসে ইশানকে বকা দেয় আর তখন ইশান ফ্রেশ হতে যায়। কিন্তু একটা রাত ইশান ঘুমাতে পারেনা। শুধুই ছটফট করে। ইশান এর মাঝে হিয়াকে নিয়ে পার্মানেন্টলি লন্ডন চলে যেতে চায় কিন্তু কেউ যেতে দেয়না ইশানকে। এখন সবাই নতুন করে ইশানের জীবন সাজিয়ে দিতে চাইছে কিন্তু ইশানকে কেউ কিছু জানায়নি। এমনকি ইহিতার বাবাও চান ইশান নতুন করে আবার জীবন শুরু করুক।
একদিন ইশান মিটিং এ রাঙামাটি যায়। ফেরার সময়সময় হিয়ার সাথে লাইভ কন্টাক্ট করতে করতে ফিরে। তিন্নি হিয়ার সামনে ফোন দিয়ে রেখেছে আর ইশান হিয়ার সাথে কথা বলছে। হিয়া এখন পাপা বলতে পারে। রাস্তায় আসার সময় হঠাৎ ইশান গাড়ি ব্রেক করে। খুব দ্রুত গাড়ি ব্রেক করায় কলটা কেটে যায়। ইশান সামনে তাঁকিয়ে দেখে একটা মেয়ে হাত দিয়ে ইশারা করছে গাড়ি থামানোর জন্য। ইশান গাড়ি থামানোর সাথে সাথে মেয়েটা ইশানের গাড়িতে উঠে পরে। ইশান রেগে যায়।
-Hey who r you? আমার গাড়িতে এইভাবে বসলেন কেন?
-আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। প্লিজ গাড়ি স্টার্ট করুন। নয়ত ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে। প্লিজ তারাতারি চলুন না।
-Whatt? আপনি আমাকে বলছেন গাড়ি স্টার্ট করতে? আর আপনি কি বললেন পালিয়ে এসেছেন? নামুন আমার গাড়ি থেকে। Nonsense কোথাকারের। নামুন বলছি। (চেঁচিয়ে ইশান)
-প্লিজ আপনি এমন করবেন না। আমি অনেক বিপদে আছি। আপনি এখান থেকে চলুন প্লিজ। আপনাকে আমি সব বলছি। (মেয়েটা)
-দেখে তো মনে হচ্ছে আজকে আপনার বিয়ে ছিল। তা বিয়ের স্টেজ থেকেই কি পালিয়েছেন?
-প্লিজ আগে তো এখান থেকে চলুন। আপনাকে আমি সব বলছি।
-হুম। (ইশান গাড়ি স্টার্ট করে সেখান থেকে চলে গেল)
-আমি অদৃকা। সিংগাপুর থেকে দেশে ফিরেছি ৩ দিন হলো। আর এসেই শুনি আমার ফুপ্পি আমার বিয়ে ঠিক করেছেন। আমি বিয়ে করব না বলেই পালিয়ে এসেছি।
-তা বিয়ে কেন করবেন না? (গাড়ি চালাতে চালাতে ইশান) বয়ফ্রেন্ড আছে?
-আরে না। ওইসব কিছুনা। সে অনেক কথা। স্যরি আপনাকে আমি ঝামেলায় ফেলে দিলাম।
-নামবেন কোথায়?
-কোথায় নামব জানিনা। ঢাকাতে আমার কোনো রিলেটিভ থাকেনা।
-আজিব তো! কোথায় নামবেন জানেন না আর আমার গাড়িতে উঠলেন?
-যদি কিছু মনে না করেন আপনাকে একটা কথা বলি? (আমতা আমতা করে অদৃকা)
-হুম
-আপনি মেরিজ রেজিস্ট্রি তে সাইন করতে পারবেন? যাতে আমি আমার ফুপ্পিকে দেখাতে পারি আমি মেরিড। কথা দিচ্ছি আপনার কোনো ঝামেলা হবেনা। ফুপ্পি ট্রাস্ট করলেই আমি আপনাকে ছেড়ে দিব আর আমি বাইরে চলে যাব।(ভয়ে ভয়ে অদৃকা)
-ইশান এ কথা শুনে গাড়ি খুব জোরে ব্রেক করে। কি বললেন আপনি? (রাগী দৃষ্টিতে ইশান)
-আসলে আমার ছেলে ফ্রেন্ডস দের সবাইকে ফুপ্পি চিনে তো তাই। নয়ত ওদেরই হেল্প নিতাম।
-নামুন আমার গাড়ি থেকে। just get down from my car. (চিৎকার করে ইশান)
#চলবে………
11+14