পালিয়ে বিয়ে – পর্ব ১৫-১৮

0
216

#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_15-18
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

ইশান অদৃকাকে রাগে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল। অদৃকা অসহায়ের মতো তাঁকিয়ে ছিল ইশানের দিকে। কিন্তু ইশান এতটাই রেগে গেছে বিয়ের কথা শুনে যা বলার বাইরে! তাই ইশান অদৃকাকে একা ফেলেই চলে গেল। কিছুদুর যাওয়ার পর তিন্নি ফোন দেয় ইশানকে। ইশান ফোন রিসিভ করে।

-বলো বউমনি।(রেগে ইশান)
-আর কতক্ষন লাগবে আসতে? হিয়া কাঁদছে কিন্তু
-ঘন্টা খানেক লাগবে বউমনি।
-মেজাজ এত চওড়া কেন?
-এমনেই।
-বলো কেন?

এরপর ইশান তিন্নিকে সব বলল। এসব শুনে তিন্নি রেগে গেলো ইশানের উপর।

-কাজটা তুমি ঠিক করলে না ইশান! (তিন্নি)
-ভুল কি করেছি বউমনি? ওই মেয়ের সাহস হয় কি করে আমার ইহিতার জায়গা চাওয়ার? (গাড়ি থামিয়ে ইশান)
-মেয়েটা নিশ্চই কোনো বিপদে পরেছে তাই এমন বলেছে। তুমি যাও ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো। আর সেইটা আমি বলছি ইশান। (তিন্নি বেশ জোরে আওয়াজ করে)
-কিন্তু বউমনি?
-কোনো কিন্তু না ইশান। অদৃকাকে নিয়েই বাসায় ঢুকবে। ফোন রাখছি আমি।

ইশান এইবার কন্ট্রোল এর বাইরে চলে গেলো। ও রাগে গাড়ি ঘুরালো আর গাড়ির স্পিড ৮৫ কিমি/হাওয়ার করলো। ইশান যেখানে অদৃকাকে নামিয়ে দিয়েছিল সেখানেই অদৃকা বসে ছিল। ও কোনো ফোন আনেনি যে কাউকে ফোন করবে। আর কাকেই বা করবে ফোন? এসব ভেবে ভেবে অদৃকা পাগল হয়ে যাচ্ছে। আচমকাই ইশানের গাড়ি অদৃকার সামনে থামলো। অদৃকা ইশানকে বলল

-আপনি? (অনেক অবাক হয়ে অদৃকা)
-গাড়িতে বসেন & fast. আমায় তারাতারি বাসায় যেতে হবে।
-কিন্তু
-just shut up. যা বলেছি করুন।

এরপর অদৃকা গাড়িতে বসলো। ইশান অদৃকাকে পেছনে বসতে বলল। অদৃকা চুপচাপ বসে আছে। প্রায় পৌনে ২ ঘন্টা পর ইশান বাসায় আসলো। ইশানের বাসা দেখে অদৃকা অবাক হলো। এত সুন্দর আর এত বড় বাসা! ইশান আগে আগে চলে গেলো আর অদৃকা পিছু পিছু আসলো। তিন্নি ড্রইংরুমে বসে হিরার সাথে খেলছিল। সাথে সিমি ছিল। ইশান এসে আগে হিয়াকে কোলে নিয়ে চুমু খেল। হিয়াকে আদর করছে ইশান আর অদৃকা দেখছে। তিন্নি অদৃকাকে জিজ্ঞেস করলো

-অদৃকা Am I right?
– অদৃকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। জ্বি কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
-ইশান ফোনে বলেছে।
-ওহ! আসলে আমি জানতাম না উনি বিবাহিত আর আপনার মতো কিউট একটা ওয়াইফ আছে ওনার আর এই মায়াপরীটা আছে! স্যরি আমার ভুলের জন্য।
-তুমি কি বললে? ইশান আমার ভাই হয়। আমার দেবর ও। (রেগে গিয়ে তিন্নি)
-এই মেয়ের মাথায় প্রবলেম আছে বউমনি সেইটা তোমায় আগেই বলেছিলাম। তোমার জন্যই এই উটকো ঝামেলাকে আনতে হলো আমার। (হিয়াকে কোলে নিয়ে ইশান)
-স্যরি। আমি বুঝিনি আসলেই। (মাথা নিচু করে অদৃকা)
-It’s okay.
-তাহলে এই বেবিটা? (অদৃকা)
-ইশানেরই মেয়ে।
-ও। বাবুর আম্মু কোথায়?

অদৃকার এ কথা শুনে ইশান রেগে গেল আর অদৃকাকে বলল

-গেস্ট হয়ে এসেছেন সেই মতই থাকবেন। বেশি কথা একদম বলবেন না। (এই কথা বলে ইশান হিয়াকে নিয়ে চলে গেলো)
-ওর কথায় কিছু মনে করোনা। ওর জীবনের রঙীন সময় হারিয়ে গেছে একটা আকস্মিক দুর্ঘটনায়। (তিন্নি)
-মানে?

এরপর অদৃকাকে বসিয়ে তিন্নি সব বলল। অদৃকা কেঁদে দিল। সাথে সিমি আর তিন্নিও কাঁদছে।

-এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে ওনার সাথে! এই মায়াপরীটা কিভাবে আছে মায়ের আদর ছাড়া? (অদৃকা)
-ইশানের ভালোবাসায়। মেয়েকে চোখের আড়াল করেনা ইশান। হয়ত ইশান মুখে কিছু বলেনা কিন্তু ওর নিঃশ্বাস আর প্রশ্বাস জুড়েই ইহিতা আছে। সকালে যখন মামনিকে আনতে যাই তখন বুঝি কত রাত ঘুমায়না ইশান। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারিনা আমরা। ও কষ্ট পাবে বলে। এখন নিশ্চই ইশান কাঁদছে। (চোখের পানি মুছতে মুছতে তিন্নি)
-আমি বুঝতে পারিনি। (অদৃকা)
-যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। সিমি ওকে গেস্ট রুমে নিয়ে যাও। আলমারিতে নতুন কাপড় রাখা আছে। যেইটা ইচ্ছা পরো।
-আচ্ছা।

অদৃকা ফ্রেশ হয়ে তিন্নির কাছে যায়। তিন্নি লাঞ্চ সার্ভ করছিল। ইশান এখনো নিচে নামেনি। হিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিচে খেতে আসে ইশান। অদৃকা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। ইশানের চোখ মুখ ফোলা আর চোখ লাল হয়ে আছে সেইটা অদৃকা আর তিন্নি দুই জনেই খেয়াল করলো। অদৃকা নিজেকে দোষ দিচ্ছে এসবের জন্য। মিসেস মির্জা,,ইশানের পাপা,,আয়মান কেউ বাসায় নেই। সবাই রাতে আসবে। ইশান খুব দ্রুত কোনো রকম খেয়ে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। তিন্নিও আর কিছু জিজ্ঞেস করলোনা। লাঞ্চ শেষ করে তিন্নি আর অদৃকা একসাথে বসলো। তিন্নি অদৃকার প্রব্লেম সম্পর্কে জানতে চাইলে অদৃকা সব বলল তিন্নিকে। ঘটনাটা ছিল অদৃকার বাবা মা মারা যাওয়ার আগে অদৃকাকে সব সম্পত্তি দিয়ে যান। কিন্তু অদৃকার ফুপ্পি সেই সম্পত্তি পাওয়ার জন্য ফালতু একটা বেকার ছেলের সাথে অদৃকার বিয়ে দিতে চায় কিন্তু অদৃকা সেখান থেকে পালিয়ে আসে। অদৃকা সবেমাত্র পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছে আর এর মাঝেই সে তার ফুপ্পির আসল রুপ দেখতে পায়। এসব বলতে বলতে অদৃকা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। এর মাঝে অদৃকা একবারো ইশানের বেডরুমে যায়নি।

চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_16
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

অদৃকা আসার পর তিন্নি একজন সঙ্গী পেয়েছে। কিন্তু অদৃকার নিজেকে ঝামেলা মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে অদৃকা নিজের অজান্তে ইশানকে কষ্ট দিয়ে ফেলল। এসব ভেবে অদৃকার মন ভীষণ খারাপ। রাত পর্যন্ত ইশান নিচে নামলো না। তিন্নি ৩ বার গিয়ে হিয়াকে দেখে এসেছে। কিন্তু অদৃকা যায়নি একবারো ইশানের ঘরে। রাতে সবাই এক সাথে ডিনার করে। রাতে যখন সবাই খেতে বসলো তখন সবাই তিন্নিকে জিজ্ঞেস করছিল এই মেয়ে কে? (অদৃকাকে উদ্দেশ্য করে)

এরপর তিন্নি অদৃকার সব কথা বলল সবাইকে। ইশান চুপচাপ খাচ্ছে। আর হিয়া সিমির কোলে। অদৃকাকে দেখে হিয়া অদৃকার কোলে আসতে চাইছে। অদৃকা ও ছটফট করছে হিয়াকে কোলে নেওয়ার জন্য। এরপর অদৃকা খাওয়া শেষ না করেই হিয়াকে কোলে নিলো। হিয়াকে কোলে নেওয়ার পর হিয়া অদৃকার চুল ধরে হেসে দেয়। অদৃকা হিয়াকে চুমু দিল। এরপর হিয়াকে কোলে নিয়েই খাওয়া শেষ করলো অদৃকা। সবাই হিয়ার দিকে তাঁকিয়ে ছিল। কতটা খুশি হয়েছে হিয়া অদৃকাকে পেয়ে। ইশান খাওয়া শেষ করেই হিয়াকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। হিয়া তখন কেঁদে দিলো। কিন্তু ইশান হিয়াকে থামাতে থামাতে উপরে উঠে গেলো। অদৃকার মন খারাপ হয়ে গেলো ইশানের এমন ব্যবহারে। অদৃকাকে তখন তিন্নি বলল

-কিছু মনে করো না!
-না বউমনি। (মন খারাপ করে অদৃকা)

রাতে অদৃকা গেস্ট রুমে ঘুমিয়ে পরলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইহিতার বাবা,,ইশানের মা,,ইশানের পাপা তিন্নি আর আয়মানকে ডাকলো।

-মেয়েটা(অদৃকা) তো ভালই বউমা! (মিসেস মির্জা)
-হ্যা মা অনেক হাসি খুশি একটা মেয়ে। (তিন্নি)
-দেখতেও অনেক সুন্দরী। আর higher educated ও। (ইহিতার বাবা)
-হ্যা আংকেল। আসলে আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি একটা কথা বলব? (তিন্নি)
-বলো(পাপা)
-আজকে হিয়া অদৃকার কোলে অনেক খুশি ছিল। মনে হলো অদৃকাকে ও আগে থেকেই চিনে। আর ইশানের সারাটা জীবন পরে আছে। আমি চাইছি যদি অদৃকা রাজি থাকে তাহলে ইশানের সাথে অদৃকার বিয়ে দিলে কেমন হয়?
-বউমা আমরাও এই কথাটাই ভাবছিলাম। ছেলেটা আর কত একা থাকবে। ওর ও তো একটা চাওয়া পাওয়া আছে। আর ওর মন থেকে ইহিতার স্মৃতি মুছার জন্য একটা ওয়ে দরকার। আর এইটা হচ্ছে অদৃকার মতো ভালো আর রুচিশীল একটা মেয়ের সঙ্গ। (ইহিতার বাবা)
-হ্যা বেয়াই আপনে ঠিক কথাই বলেছেন। (মিস্টার মির্জা)
-কিন্তু পাপা ইশান তো রাজি হবেনা! আর ও চাইবেনা আবার বিয়ে করতে! (আয়মান)
-জানি আয়মান। কিন্তু ওকে তো রাজি করাতে হবে নয়ত এই ছোট মেয়েটা তো মায়ের আদর থেকে সারাজীবন বঞ্চিত হবে। (ইহিতার বাবা)
-ইশানকে বলে দেখব আমরা কালকে সন্ধ্যায় যখন ও বাসায় আসবে। (তিন্নি)
-পাপা আমিও একটু খোঁজ নেই অদৃকার। কালকের মধ্যে ওর খোঁজ নিচ্ছি আমি। (আয়মান)
-সেইটাই ভালো। (মিস্টার মির্জা)

ইশান হিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ইশানের কিছুতেই ঘুম আসছেনা। এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে কত মজা করেছে ইশান আর ইহিতা সেসব ভেবেই কাঁদছে ইশান। ইশানের বারবার মনে হয় এই বুঝি ইহিতা ফিরে আসবে আর বলবে আমি এসে গেছি তো! আর কত কাঁদবে? তার ৮ মাসের ছোট্ট মেয়েটা মাত্র ৭ দিনই পেয়েছে মায়ের আদর।

আরো একটা নির্ঘুম রাতের সমাপ্তি হলো ইশানের। সকালে ইশান রেডি হয়ে টেবিলে আসলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য।

-ওয়ালেট আর ঘড়ি নিয়েছো ইশান? নিশ্চই না? (তিন্নি)
-স্যরি বউমনি ভুলে গেছি। আমি নিয়ে আসছি।
-দাঁড়াও তোমায় যেতে হবেনা। আমি নিয়ে আসছি।(তিন্নি) ফাইল নিয়েছো সব?
-হ্যা।

তিন্নি ইশানের ঘরে গিয়ে সব নিয়ে আসলো। হিয়া অদৃকার সাথে সোফায় বসে খেলছে। ইশান হিয়াকে দেখছে হিয়া কতটা খুশি। ইশান নাস্তা করে হিয়াকে আদর করে চলে গেলো। হিয়াকে নিয়ে খেলতে খেলতে অদৃকা ইশানের ঘরে গেলো। দেয়ালে শুধুই ইহিতার ছবি আর হিয়ার ছবি। ইহিতার ব্যবহার করা পার্ফিউম টাও দেখতে পেলো অদৃকা। অনেক সুন্দর ইশানের রুমটা কিন্তু সব জায়গাতেই শোকের অনেক বড় একটা ছাপ। অদৃকা চলে আসলো ইশানের রুম থেকে। অদৃকা ওর জামাকাপড় গুছাচ্ছে হিয়াকে সিমির কোলে দিয়ে। অদৃকা চলে যাবে কারণ ও চায়না ইশান আবার কষ্ট পাক ওর জন্য। তিন্নি অদৃকাকে খুঁজতে যখন গেস্ট রুমে আসলো তখন দেখলো অদৃকা রেডি হচ্ছে।

-কি ব্যাপার কোথায় যাচ্ছো? (তিন্নি অবাক হয়ে অদৃকাকে জিজ্ঞেস করলো)
-বউমনি চলে যাচ্ছি। একটা দিন তো আপনাদের অনেক কষ্ট দিলাম। আর কত?
-বুঝলাম। তা যাবেন কোথায়?
-সিংগাপুরেই চলে যাব। ব্যাংকে ক্যাশ যা আছে সেইগুলো নিয়ে। ফুপ্পি তো ভেংগেই ফেলেছে সব। আর আপনাদেরকেই বা কতদিন কষ্ট দিব এভাবে আগাছা হয়ে থেকে?
-যদি পার্মানেন্ট করে রাখি তো?
-মানে?
-হিয়ার সবচেয়ে ভালো আম্মু হয়ে দেখাবা? পারবানা?
-তার মানে? (অদৃকা অবাক হয়ে যায়)
-তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমার ভাইয়ের বউ বানাবো তোমায়! ইশানের দায়িত্ব আর মামনির দায়িত্ব সব নিজের হাতে সামলাতে হবে।

চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_17
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

তিন্নি অদৃকাকে জিজ্ঞেস করলো অদৃকার কোনো আপত্তি আছে নাকি ইশানকে বিয়ে করার জন্য। অদৃকা আমতা আমতা করে তিন্নিকে বলে

-বউমনি এইটা কি বললেন? উনি ইহিতা আপুকে কতটা ভালোবাসে তা কি আপনি জানেন না? ওই জায়গায় আমি কিভাবে যাব?
-হ্যা জানি অদৃকা আর জানি বলেই আমরা চাইছি তুমি সেই দায়িত্ব টা নাও। ইশান কতটা কষ্টের মধ্যে আছে এই ৮ টা মাস ধরে তা শুধু ইশানই ভালো বলতে পারবে। আর তোমার যদি ইশানকে না পছন্দ হয় আর যদি না চাও তাহলে থাক। জোর করব না আমরা তোমায়।
-বউমনি এইটা কি বলছেন আপনি? উনার মতো Handsome r dashing ছেলেকে কে না পছন্দ করবে? আর রাজি হওয়ার ব্যাপারটা তো উনার জন্য। উনি রাজি হবেন না আমি যতটুকু বুঝি।
-তুমি রাজি? শুধুমাত্র ইশানকে সুন্দর আর আনন্দময় জীবন দিবা তুমি। এছাড়া আর কিছু চাইনা আমি তোমার কাছে। ইশানকে আবার হাসি খুশি দেখতে চাই। আর আমার বিশ্বাস এইটা তুমি পারবে। (অদৃকার কাঁধে হাত রেখে তিন্নি)
-বউমনি?
-হ্যা অদৃকা। ইশানকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দাও। আর হিয়া এখন থেকে তোমার নিজের মেয়ে। মনে থাকবে?
-হ্যা বউমনি।
-এখন এইগুলো ঠিক করে রেখে নিচে আসো।
-আসছি। (আস্তে করে বলল অদৃকা)

দুপুরে আয়মান তিন্নিকে ফোন দিয়ে বলল

-যতটুকু ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি ভালো অদৃকা। ওর সব রেকর্ড পজিটিভ। মোস্ট ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। স্কলারশিপ পেয়ে সিংগাপুর গিয়েছিল। আর ওর ফুপ্পির কথাটা সত্যি।
-তাহলে অদৃকার প্রপার্টি? (তিন্নি)
-সেইগুলো সব ফিরিয়ে দেওয়ার ট্রাই করব আমি। আমার ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বললাম ও দেখছে ব্যাপারটা।
-তারাতারি বাসায় এসো। ইশানের সাথে কথা বলব তো সবাই আজকে।
-আচ্ছা এখন রাখছি।
-লাঞ্চ করছো?
-হ্যা মাত্রই করলাম। তুমি?
-করব এখন।
-করো তাহলে। বাই
-হুম বাই।

তিন্নি অদৃকাকে নিয়ে লাঞ্চ করতে বসলো। ইশান প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় চলে আসে অফিস থেকে। আজও তাই করলো। অদৃকা তিন্নির রুমে বসে হিয়ার সাথে দুষ্টামি করছিল। ইশান নক করে তিন্নির রুমে ঢুকলো নিজের ঘরে না গিয়ে। তার কারণ হচ্ছে হিয়া এই ঘরে। ইশান কে দেখে অদৃকা উঠে দাঁড়ালো একটু দূরে। কিন্তু ইশান অদৃকার দিকে তাঁকালো না। ইশান হিয়াকে কোলে নিয়ে আদর করলো। এরপর ইশান হিয়াকে তিন্নির কাছে রেখে ফ্রেশ হতে গেলো। এরই মধ্যে সবাই বাসায় চলে এসেছে। মিস্টার মির্জা,,মিসেস মির্জা,,আয়মান,,ইহিতার বাবা সবাই ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে বসলো। অদৃকা সবার জন্য স্ন্যাকস করেছে। চিকেন চপ আর কফি। অদৃকা রান্নাও করতে পারে অনেক ভালো। তিন্নি অদৃকার জন্য দুপুরে অনেক গুলো ড্রেস অর্ডার করেছিল। সন্ধ্যায় দিয়ে গেছে। সবাই যখন ড্রইং এ বসে গল্প করছিল ইশান তখন হাত দিয়ে চুল নাড়াতে নাড়াতে আসছিল কারণ চুল ভেজা ছিল। অদৃকা আঁড় চোখে একবার তাঁকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। ইশান তিন্নির থেকে হিয়াকে নিয়ে নিজের কোলে বসালো। সবাই কথা বলছে এর মাঝে ইশানের আম্মু ইশানকে বললেন

-আব্বু তোর সাথে আমাদের কিছু কথা আছে।
-হ্যা আম্মু বলো। (ইশান)
-অদৃকা তুমি দাদুমনি কে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। (অদৃকাকে উদ্দেশ্য করে ইশানের আম্মু)
-আচ্ছা আন্টি। (অদৃকা)

এরপর অদৃকা ইশানের কাছ থেকে হিয়াকে কোলে নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেলো। বেশ ভালোই ভাব জমেছে হিয়া আর অদৃকার। অদৃকা বাচ্চাদের অনেক পছন্দ করে। তার মধ্যে হিয়া তো একদম একটা পুতুল।

-ইশান আর কত এভাবে থাকবি? এইবার তো একটা বিয়ে করা উচিৎ তোর। অন্তত দাদুভাইয়ের জন্য হলেও দরকার। (মিসেস মির্জা)
-আম্মু তুমি এই কথা কিভাবে বললা? (রেগে গিয়ে ইশান)
-ইশান প্লিজ রেগে যাস না। আমরা তোর আর মামনির ভালোর জন্যই এই ডিসিশন টা নিয়েছি।(আয়মান)
-ভাইয়া প্লিজ। আমি কোনোদিন কাউকে স্ত্রী র মর্যাদা দিতে পারবোনা। ইহিতা ছিল আমার আর আমারই থাকবে। ইহিতার জায়গা আর কারো জন্য নয়।
-ইশান ইহিতা এখন নেই। দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে ও চলে গেছে। ওর কথা মনে রেখে কি তুমি বাকি জীবনটা চলতে পারবা? পারবানা। হিয়ার জন্য হলেও তোমায় বিয়ে করতে হবে। (ইহিতার বাবা)
-বাবা আপনিও বলছেন এই কথা! কেন হিয়াকে কি আমি অযত্নে রেখেছি? নাকি ওর মায়ের আদর আমি দিতে পারিনা? বিন্দুপরিমান কমতি রাখিনি আমি আমার মেয়ের প্রতি। তারপরেও কেন আপনারা এই কথা বলছেন?
-ইশান এই বিষয়ে তুমি রাজি না থাকলেও আমার ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি আর নেক্সট উইকে তোমার আর অদৃকার বিয়ে হচ্ছে আর এইটাই ফাইনাল। (তিন্নি)
-Whattt? বউমনি R u okay? এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে? আর যেখানে আমি এক মেয়ের বাবা? বউমনি অন্তত তুমি খুব ভালো করেই জানো ইহিতার জায়গাটা ঠিক কোথায় আমার কাছে!
-জানি। আর সেইজন্যই বলছি নিজের জীবনটাকে আবার নতুন করে সাজাও যাতে ইহিতা কোনো কষ্ট না পায়।
-আমি পারবোনা বউমনি আর কাউকে বিয়ে করতে। জাস্ট পারব না।
-ইশান পাগালামো করিসনা আব্বু। একবার কি তুই হিয়ার কথা ভেবেছিস? ও সারাটাজীবন মা ছাড়া কিভাবে থাকবে? যখন বড় হয়ে জানবে ওর মা মারা গেছে তখন কি করে ও নিজেকে সামলাবে? শুধু নিজের কথা ভাবিস না আব্বু। হিয়ার কথাটাও ভাব। (ইশানের পাপা)
-পাপা আমি এত কথা শুনতে চাইনা। আমার জীবনে আর কেউ আসবেনা আর এইটাই শেষ কথা। (ইশান দাঁড়িয়ে যায়)
-ইশান বসো। মাথা ঠান্ডা করে ভাবো প্লিজ। (তিন্নি)
-বউমনি এখানে ভাবাভাবির কিছু নাই। আমি আর কারো মায়ায় জড়াবো না। আর আমার হিয়াকেও জড়াতে দিবনা।
-অদৃকার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে ইশান আর এইটাই ফাইনাল। (আয়মান)
-কতটুকু জানো ওই মেয়ের সম্বন্ধে? না জেনে শুনেই আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য মউরিয়া হয়ে গিয়েছো!(ইশান রেগে গিয়ে আয়মানকে বলল)
-তোর ভাই যে না জেনে শুনে কিছু করেনা তা কি ভুলে গেছিস? ওর প্রত্যেকটা খবর নিয়েই তোকে বলছি।
-বাদ দাও ওসব। (ইশান)
-ইশান মা হয়ে তোকে বলছি আব্বু রাজি হয়ে যা। তোর নিজের জন্য না হলেও হিয়ার জন্য। ওই মেয়েটাকে মা ডাকার,মায়ের আদর পাওয়ার সুযোগ দে।
-ইশান ভাই প্লিজ রাজি হয়ে যা। দেখিস আবার একটা সুন্দর সংসার হবে আমাদের। ইহিতার জায়গা দিতে হবেনা তোকে শুধু তুই বিয়েটা কর। (আয়মান) দেখবি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-ইশান এতগুলো মানুষ তোমায় বলছে। অলরেডি আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি কারণ আমরা জানি ইশান আমাদের মতের বিরুদ্ধে কিছু করবেনা। (তিন্নি)
-কালকে জানাবো। এখন আমি ঘুমাবো। হিয়াকে দিয়ে যাও আমার ঘরে। (ইশান)
-ডিনার করবে আসো।
-না। ঘুমাবো এখন আমি। ক্ষুধা নেই। (এই কথা বলে ইশান দ্রুত ঘরে চলে যায়)

চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_18
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

ইশান না খেয়েই নিজের ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর খাবার নিয়ে তিন্নি আর আয়মান ইশানের ঘরে ঢুকলো। ইশান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। একদম নাজেহাল অবস্থা ইশানের। আয়মান ইশানের ঘাড়ে হাত রাখলো। ইশান সাথে সাথে পিছু তাঁকিয়ে দেখে আয়মান। ইশান আয়মানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।

-ইশান কাঁদছিস কেন? আমার ভাই কেন কাঁদবে?
-ভাইয়া রে আমি পারব না আর কাউকে মেনে নিতে। কিভাবে আমি তোমাদের কথা রাখবো বলো?(কেঁদে কেঁদে ইশান)
-জীবন এইটাই ভাই। তোর জন্য না হলেও হিয়ার জন্য তোকে আবার বিয়ে করতে হবে। আচ্ছা তুই কি একটাবার ভেবেছিস যখন হিয়া বড় হবে আর জানতে চাইবে আম্মু কোথায় তখন তুই কি জবাব দিবি? আর কতদিন মেয়েটা এমন খাপছাড়া ভাবে মানুষ হবে? তুই অফিসে থাকবি আর ওরে দেখার কেউ থাকবেনা। তখন কি তোর ভাল্লাগবে? আর যখন ওর একটা মা আসবে তখন সব দিক থেকে ভালো হবে সব দিক থেকে। প্লিজ ভাই তুই একটাবার ভেবে দেখ। এখন হয়ত তিন্নি দেখছে কিন্তু সারাজীবন কি তিন্নি পারবে? বল তুই
– কালকে সকালে বলব। (চোখ মুছে ইশান)
-এখন ঘরে আয়। খাবি
-না ভাইয়া ক্ষুধা নেই।
-ইশান আয়। (ইশানকে টেনে এনে খাটে বসালো আয়মান) তিন্নি প্লেট টা দাও।
-নাও।

ইশানকে আয়মান জোর করে বকা দিয়ে খাইয়ে দিল। ইশানকে আয়মান খাইয়ে দিচ্ছিল ঠিক তখনি অদৃকা হিয়াকে কোলে নিয়ে ইশানের ঘরে এলো।

-স্যরি ডিস্টার্ব করার জন্য। আসলে হিয়া ঘুমিয়ে পরেছে তাই শুইয়ে দিতে আসলাম।
-আসো। ডিস্টার্ব কেন হবে?(তিন্নি)

অদৃকা হিয়াকে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় ড্রেসিং টেবিলে থাকা কসমেটিক্স বক্সে লেগে অদৃকার ওড়না ছিঁড়ে যায়। ইশান আওয়াজ শুনে পিছু ফিরে তাঁকায়। দেখে অদৃকার ওড়না বক্সের সাথে লেগে আছে। অদৃকা প্রস্তুত ছিল না এমন একটা সিচুয়েশন এর জন্য। তাই অদৃকা একটু লজ্জা পায় আর তিন্নি গিয়ে ওড়না ছাড়িয়ে দিয়ে আসে। এরপর অদৃকা চলে যায়।

আয়মান অনেকক্ষণ ইশানকে বুঝিয়ে ইশানকে ঘুমাতে বলে চলে গেলো। কিন্তু আজ যে ইশানের ঘুম আসবেনা। একদিকে তার হিয়া আরেকদিকে তার ইহিতা আর অন্যদিকে সবার ভালোবাসা। কোনটা রাখবে ইশান? সারারাত ভেবে ভেবে ইশান পাড় করে দেয়। সারাটা রাত ইশান ফ্লোরে বসেছিল। ফজরের আজানের সময় ইশান ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে। কেন যেন আজ ইশানের নামাজ পড়তে ইচ্ছে করলো তাই পরলো। এরপর ইশান হিয়ার দিকে তাঁকিয়ে দেখে হিয়া জেগে গেছে আর হাত পা নাড়িয়ে খেলছে। ইশান হিয়ার জামাকাপড় পাল্টে হিয়াকে কোলে তুলে নিলো। সিমিকে ডেকে হিয়াকে সিমির কাছে দিলো। এরপর ইশান রেডি হয়ে ৮ টার সময় নিচে আসলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য। পাশেই অদৃকা দাঁড়ানো হিয়াকে কোলে নিয়ে। সবাই বসে আছে ইশানের জন্য ব্রেকফাস্ট টেবিলে। ইশান টেবিলে বসে কিছুক্ষন চুপ ছিল। যখন সবাই ইশানের মুখের দিকে তাঁকিয়ে ছিল তখন ইশান উঠে দাঁড়িয়ে বলল বিয়ের আয়োজন করো আর কোনো গেস্টকে ডাকার প্রয়োজন নেই। এই কথা বলে ইশান বেরিয়ে যেতে লাগলো তিন্নি বলল

-ইশান খেয়ে যাও।
-অফিসে খেয়ে নিবো। খাবার প্যাক করে দাও।

সবাই খুব খুশি হয়েছে ইশান রাজি হওয়ায়। তিন্নি সিমিকে দিয়ে ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিল ইশানকে। অদৃকা একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। কিন্তু অদৃকা মন থেকেই ইশানের জীবন পাল্টে দিতে চায় আর হিয়ার বেস্ট আম্মু হয়ে দেখাতে চায়। অদৃকা হিয়াকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো আর হিয়ার সাথে খেলতে খেলতে হিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। তিন্নি,, অদৃকা আর মিসেস মির্জা মিলে সব প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করলেন। বিয়ের আগের ৭ দিন ইশান আর অদৃকার খুব কম দেখা হয়েছে একে অপরের সাথে। অদৃকাই যায় না ইশানের সামনে কারণ এখন অদৃকা কেমন যেন মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে ইশানের।

৭ দিন পর…..

ইশানের কথামতো ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হলো ইশান আর অদৃকার। ইহিতার বাবা অদৃকাকে নিজের মেয়ে বলে ডাকেন। অদৃকা যখন কবুল বলছিল তখন হিয়ার আঙ্গুল মুঠি করে ধরে রেখেছিলো। ইশান কাঁপা কাঁপা গলায় কবুল পড়ছিলো। বিয়ে শেষ হওয়ার পর অদৃকা হিয়াকে চুমু দেয়। হিয়াও ছোট ছোট হাত দিয়ে অদৃকার নাকফুলটা ধরে যেইটা নিয়ম অনুযায়ী কবুল পড়ার আগে ইশান অদৃকাকে পরিয়ে দিয়েছিল। এইটাই মির্জা বাড়ির রীতি। বেশ লাগছে আজ অদৃকাকে। একদম একটা পরী। সবাইকে সালাম করলো ইশান আর অদৃকা মিলে। ইশানের মুখে বিন্দু পরিমান হাসি নেই। ফর্মালিটি শেষ করে ইশান নিজের ঘরে চলে গেলো কিন্তু ফুল দিয়ে বিছানা সাজানো দেখে ইশান রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বলল না। ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে পরলো ইশান। কিছুক্ষন পর তিন্নি এসে অদৃকাকে দিয়ে গেলো ইশানের ঘরে।

-ইশান আজ হিয়া আমার সাথে থাকুক। (তিন্নি)
-কেন?
-কোনো কেন নেই। আজ হিয়া আমার সাথে ঘুমাবে।
-না। বউমনি হিয়াকে দিয়ে যাও
-হ্যা বউমনি হিয়াকে দিয়ে যান। (অদৃকা)
-বেশি কথা বলো তো তোমরা। আমি যা বলেছি সেইটাই হবে। গেলাম আমি।
-বউমনি আমি হিয়াকে…. (ইশান কথা শেষ করার আগেই তিন্নি দরজা লক করে দিয়ে বেরিয়ে গেলো)

অদৃকা দেয়ালগুলো দেখছে। সবকয়টি দেয়ালে ইহিতার ছবি। কি মায়াবী ছিল ইহিতা! সেইসব ভাবছে অদৃকা। ইশান সোফাতেই বসে আছে। অদৃকা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর হাল্কা চোখে ইশানকে দেখছে। প্রায় অনেকক্ষণ দুইজন চুপ থাকার পর ইশান দাঁড়িয়ে বলল

-আমার মেয়ের আম্মু হয়ে দেখাবেন কিন্তু আমার স্ত্রী নয়। এতদিন যেইভাবে ছিলেন ঠিক সেইভাবেই থাকবেন। শুধু ঘর টা আলাদা হবে। আজ থেকে তো এই ঘরেই থাকবেন। আমার মেয়ের বিন্দুমাত্র কষ্ট যাতে না হয়। আর আমার কোনো বিষয়ে কোনো এন্টারফেয়ার করবেন না।
-শেষের কথাটা কি ঠিক বললেন?
-কেন আপনার কি মনে হয়? (রাগী চোখে ইশান)
-এখন থেকে ঠিক ৪৫ মিনিট আগে আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি আর এখন কিভাবে সেইটার উল্টা হয় বলুন তো?
-বেশি কথা আমি পছন্দ করিনা। ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমান। আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি। (চোখ রাঙিয়ে ইশান)
-কেন? আমার পাশে ঘুমাবেন না ঠিক আছে কিন্তু এত বড় বিছানায় কি আপনার জায়গা হবেনা?
-না
-আমি ফ্লোরে ঘুমাচ্ছি আপনি খাটে ঘুমান।
-কোনো দরকার নেই। আমি সোফাতেই ঘুমাবো।
-আচ্ছা।

এরপর অদৃকা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলো। ইশান অনেক আগেই শুয়ে পরেছে। কিন্তু ঘুমাচ্ছেনা।

-আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি? (অদৃকা ইশানের দিকে ঘুরে)
-হুম
-এই ৮ টা মাসের একটা দিন ও কি আপনি ঘুমাননি ঠিক করে?
-সেইটা আপনার না জানলেও চলবে। আর কোনো কথা না।
-আচ্ছা।

এরপর অদৃকা ঘুমিয়ে পরলো। মাঝরাতে অদৃকার ঘুম ভেঙ্গে যায়। লাইটের আলোতে সোফায় তাঁকিয়ে দেখে ইশান নেই। অদৃকা বিছানা থেকে উঠে যায়। বারান্দার দরজা খোলা দেখে অদৃকা বারান্দায় যায়।

-এত রাতে কফি খাচ্ছেন? (অদৃকা ইশানকে জিজ্ঞেস করলো)
-হুম অভ্যাস হয়ে গেছে। রাত জেগে কফি খাওয়া।(কফিতে চুমুক দিয়ে ইশান)
-ঘুমাননি আপনি?
-হয়ত না।
-চাঁদটা কিন্তু অনেক সুন্দর আজকে। আমার দেখে তো হিংসে হচ্ছে।

অদৃকার মুখে এ কথা শুনে ইশান অদৃকার দিকে তাঁকালো। মন ভরে দেখলো অদৃকাকে। কিছুক্ষন পর আবার চোখ সরিয়ে বলল

-হুম।
-কি দেখছিলেন এতক্ষন?
-ইহিতা এইই কথাটা বলতো তো তাই।
-ওহ আচ্ছা। ইহিতা আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসতো তাই না?
-হুম
-সেইরকম যদি আমিও বাসি?

অদৃকার এই কথা শুনে ইশান চোখ লাল করে তাঁকালো অদৃকার দিকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here