#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_17
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল মিমকে বলল ওদের বেবি মিস্ক্যারেজ হওয়া শুধুমাত্র একটা এক্সিডেন্ট ছিল আর কিছুই না। মিম খাটের উপর বসলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না!! অর্নীল জানালার গ্রিলে একহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-অনেক তো কষ্ট দিলা আর কত? (মিমের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-মিম কিছু বলছেনা।
-যেখানে দরকার ছিল আকাশ পরিমান ভরসা সেখানে আমি কিছুই পাইনি, যেখানে যেই মূহুর্তে তোমার ভালবাসা আমার দরকার ছিল সেখানেও আমি কিছু পাইনি। এতটাই জঘন্য ভাব তুমি আমাকে? আচ্ছা মিম এইভাবে কি কোনো সম্পর্ক আদৌ টিকে থাকে?
-নষ্ট করতে চান?
-আজব কথা! (দুই হাত ছড়িয়ে অর্নীল) তোমার মাথায় কি মিনিমাম সেন্স নেই? নষ্ট করতে চাইলে এই একটা বছর বসে থাকতাম না। এই এক বছরে ১০ দিন ঘুমিয়েছি নাকি জানিনা। খাটে ঘুমায়নি, চেয়ারে ঘুমিয়েছি। আর খোঁজ নেওয়ার কথা যদি বল এই যে ইয়ার রিং,, হাতের রিং,, পেন্ডেন্ট,, তোমার পারফিউম,,কসমেটিকস এভ্রিথিং এসব কে এনে দিয়েছে?
-রিন্তি।
-সিরিয়াসলি? এসব আমি এনে দিয়েছি সব imported.
-আপনি মানে? (অবাক হয়ে মিম)
-প্রতি মাসে তোমার পকেট মানি সব ই আমি দিয়েছি। শুধু থেকেছো রিন্তির কাছে। আমার বউ কেন অন্যের দয়ায় চলবে? আর প্রতিদিন রাতে যে তোমায় দেখতে যেতাম সেইটা জানো তো?
-You are a great cheater!!!! (মিম অর্নীল কে জড়িয়ে ধরলো কাঁদতে কাঁদতে) এই কথাগুলো এতদিন কেন বলেন নি?
-কেন আমায় বলতে হবে? তোমার কি জানা নেই অর্নীল তোমায় ঠিক কতটুকু ভালবাসে? আরে কাকে কি বলছি? যদি তোমার সেই সেন্স থাকতই তাহলে তো এতগুলো দিন আলাদা থাকতে না।
-মিম আর কিছু বলেনি।
-বাসায় চল। আম্মু আর দি এতদিন তোমার জন্য ওয়েট করেছে। আর তাদের ওয়েট করিও না। (মিমের চুল ঠিক করে দিয়ে অর্নীল)
-হুম। (আস্তে করে বলল মিম)
এরপর অর্নীল মিমকে নিয়ে বাসায় চলে এলো। মিমকে দেখে অনু আর ওর আম্মু তো ভীষণ খুশি। সেখানে অরুনিমাও ছিল। ওদের দেখে অরুনিমা দাঁড়ালো। মিম অরুনিমাকে দেখে অর্নীলের দিকে তাঁকালো আবার অরুনিমার দিকে তাঁকালো। অর্নীল ও অরুনিমাকে দেখে অবাক হল কারণ ও লন্ডন চলে গিয়েছিল আবার ব্যাক করলো যে!!
-তুই এখানে? (অর্নীল অরুনিমাকে জিজ্ঞেস করলো)
-কালকেই এসেছি বাংলাদেশে। এখানেই থাকব এখন থেকে। তোকে কিছু কথা বলতে এলাম। ১০ মিনিট সময় হবে?
-আমি একা? (অর্নীল)
-হুম।
-অর্নীল মিমের দিকে তাঁকালো। মিম উপরে ওর ঘরে চলে গেলো। চল ছাদে আয়। (অরুনিমাকে বলল)
-চল।
অর্নীল আর অরুনিমা ছাদে গেলো। অরুনিমা অর্নীলকে বলল
-সেই teen age থেকে তোকে ভালবেসেছি৷ আজও পর্যন্ত কোনো ছেলের প্রতি তাঁকাইনি। তুই ছাড়া কোনো ছেলে আমার হাজবেন্ড হবে সেইটা ভাবতেই পারতাম না ইভেন এখনো ভাবতে কষ্ট হয়। জানিস অর্নীল ভালবেসে না পাওয়ার কষ্টটা যে কি সেইটা যদি তুই একবার বুঝতি। এক বছর হল আমি বাংলাদেশে ছিলাম না কিন্তু আমি তোকে ভুলতে পারিনাই৷ জানিস অর্নীল আমি কোনোদিন তোর আর মিমের খারাপ চাইনি শুধু তোকে চেয়েছিলাম। পাগলের মত ভালবাসি তো তাই তোর ক্ষতির কথা মাথায় ও আসেনা। আমি যা অন্যায় করেছি সব তোর জন্য,,যা কিছু পেয়েছি সব তোর জন্য। কলিজাটা ছিঁড়ে যায় যখন তোকে মিমের সাথে দেখি (অরুনিমার চোখ দিয়ে পানি পরছে)।
-এসব বলার জন্যেই ডেকেছিস?
-না। আমার বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড দেওয়ার জন্য। কি করব পাপা আর ভাইয়া বিয়ে ঠিক করেছে। এখনো ছেলেকেই দেখিনি ইচ্ছে নেই তাই।
-Congratulations!! জীবনে কেউ কখনো একা থাকতে পারেনা সেইটা ভালবেসেই হোক আর ভালবাসা না পেয়েই হোক। তুই যে বিয়ে করছিস এইটাই অনেক। ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনীর চেয়ে এইটাই অনেক বেশি ভাল সিদ্ধান্ত। তুই পারবি আমি জানি।
-হুম। যা মিমের কাছে যা। (চোখ মুছে) আমিও চলে যাব। আশা করব দুইজন একসাথে আসবি বিয়েতে।
-অবশ্যই। (কার্ডটি নিয়ে)
অরুনিমা নেমে যাওয়ার পরে অর্নীল ও ছাদ থেকে নেমে এলো। সোজা বেডরুমে গেল অর্নীল। গিয়ে দেখে মিম বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
-এখনো চেঞ্জ করনি তুমি? (পেছন থেকে মিমকে জড়িয়ে ধরে)
-বলল তো অনেক কিছুই। এখন কোনটা রেখে কোনটা বলব?
-প্রপোজ করেছে আবার?
-ওইরকম ই কিছু।
-বিয়ে করে নেন ওকে। আমারো মনে হয় মেয়েটা আপনাকে সত্যিই ভালবাসে। নয়ত এত অপমানের পরেও আবার আসত না।
-জানি সেইটা বাট তুমি মেনে নিতে পারবে তো? (মিমকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে) কাঁদছো কেন?
-মন চেয়েছে তাই।
-অরুনিমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আদিত্য নামে কারো সাথে। এইটা বলার জন্যই ও ডেকেছিলো। আর আমরা ইনভাইটেড।
-ভাল।
অর্নীলের হাত সরিয়ে মিম টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। অর্নীল ভাবছে
-এই মেয়েটা ইদানীং এত রাগ করে কেন? বিশাল গ্যাপ এই জন্য নাকি অন্য কিছু?
অর্নীল এসব ভাবনা বাদ দিয়ে নিচে গেল। অর্নীল ওর আম্মু আর দি কে বলল
-আম্মু আমি আবার বিয়ে করতে চাই।
-কিহহহহ? (অবাক হয়ে অনু)
-দি রিল্যাক্স। মিমকেই আমি আবার বিয়ে করতে চাই। কোনো গেট টুগেদার করা হয়নি আগের বিয়েতে। কিন্তু আমি চাইছি আগামী পরশুই সেইটা হোক। মিমকে আমি কথা দিয়েছি ওকে আবার বিয়ে করেই ওকে টাচ করব। আর বেশিদিন ওর থেকে দূরে থাকতে পারব না। তাই যা করার তারাতারি কর।
-ভাই তোর কি লজ্জা করেনা আম্মু আর দি র সামনে এসব বলতে? (অনু অর্নীলের কান ধরে)
-ছাড় তো! লজ্জা কেন করবে? ছেলেই তো বলছে আর তো কেউ বলেনি।
-তোর ওই introvert স্বভাব গেল কই? অনেক পালটে গেছিস তো! (অনু)
-তুই তাহলে আজ থেকেই মিমকে নিয়ে কেনাকাটা শুরু কর। তোদের দুইভাই বোনের কোন কোন ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করবি লিস্ট করে দিস আমাকে৷ আমি ম্যানেজারকে সব বলে যার যার দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছি। (অর্নীলের আম্মু)
-আমার ফ্রেন্ড বলতে আবির দা আর আকাশ। এই দুইজন আর বাকিরা বিজনেস পার্টনার। (অর্নীল)
-আবিরের নাম শুনে অনু কাশলো।
-কিরে দি পানি খা যা। (হাল্কা হেসে)
-কিরে ব্যাপার কি? তোরা এমন করছিস কেন? (অর্নীলের আম্মু) আর আবির কে? তোর ফ্রেন্ড হলে তুই দা কেন বললি?
-উনি আমার থেকেও অনেক বড় আম্মু। আর উনি একজন কার্ডিওলজিস্ট। (অর্নীল)
-আচ্ছা। আর অনু তোর ইনভাইটেশন লিস্ট আজকে রাতের মধ্যেই করে দিবি।
-উঠ তুই! (অর্নীলের হাত ধরে অনু)
-কেন দি?
-উঠতে বলেছি তুই উঠবি।
অনু অর্নীলকে উঠিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। মিম চুল বাঁধতে বাঁধতে বেরিয়ে আসে। এসে দেখে অনুর ঘরে দুইভাই বোন ঝগড়া করছে। অনু অর্নীলকে মারছে আর অর্নীল দৌঁড়াচ্ছে।
-ওই দি থাম। ব্যাথা পাব তো!
-তোর ব্যথা পাওয়াই উচিৎ। তুই আবিরের নাম জানিস কি করে বল?
-তোর আবিরই আমাকে বলেছে। ওই তুই ফ্লাওয়ার ভাস হাত থেকে রাখ৷ এখনো বাচ্চার বাবা হইনি আর তুই আমায় মারতে চাস? তোকে কিন্তু এখন বাড়ি থেকে বের করে আবির দা র কাছে রেখে আসব।
-আবারো আবির দা (অনু অর্নীলের পেছন দৌঁড়াচ্ছে)
অর্নীল দৌড়াতে দৌড়াতে নিচে চলে যায়।
-এই আব্বু তুই এইভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? (অর্নীলের আম্মু)
-উপরে তাঁকিয়ে দেখো তোমার ঘরের বুয়া আমাকে মারতে আসছে।
-ভাই তুই কি বললি? আমি বুয়া? আম্মু তুমি সরো আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। ও বেশি ফাজিল হয়ে গেছে।
মিম উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে আর হাসছে। অর্নীল এত ফাজলামো করতে পারে সেইটা তো জানত না মিম!! ভাই বোন মিলে নিচে এখনো দৌড়াচ্ছে। অর্নীলের আম্মু হাসছে আর ভাবছে ১৭ বছর পর আজ আবার অর্নীল আর অনু এইভাবে ফাজলামো করছে। অর্নীল কে ঠিক এভাবেই দেখতে চায় ওর আম্মু আর দি।
আর দৌড়াতে না পেরে অর্নীল অনুকে কোলে তুলল আর উপরে গিয়ে অনুর খাটের উপর অনুকে বসিয়ে রেখে বলল
-তুই যদি আর এক পা নড়েছিস এখান থেকে তোর পা কেটে কার্ডিওলজিস্টকে পাঠিয়ে দিব। অনেক দৌড় করেছিস আমায়। হুউউউউউউউউউউ ঘেমে গেলাম একদম।
-ভাই তোকে আবার কিন্তু পিটাবো।
-তাহলে তোকে আবার ওই কার্ডিওলজিস্ট এর কাছে রেখে আসব।
এরপর অনুকে ভেঙিয়ে অর্নীল চলে গেল। মিমের হাসির আওয়াজ শুনে অর্নীল থেমে গেল।
-হাসছো কেন?
-একটু আগে যে এভাবে সারা বাড়ি দৌড়ালো সেইটা অর্নীল চৌধুরী তো?
-🙄🙄🙄🙄🙄
-হাহাহাহাহাহা আজ আপনার আরো একটা রুপ দেখলাম। সিরিয়েসলি বলছি অনেক ভাল লেগেছে আপনাকে এইভাবে দেখে। আপনি মজাও করতে পারেন তাও এইভাবে? 😂😂😂😂😂😂
-হইছে পরে পেট ব্যথা করবে। (মিমের পেটে খোচা মেরে অর্নীল) ঘরে আসো।
-আসছি।
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_18
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল মিমকে ঘরে নিয়ে এলো। অর্নীল ঘরে এসে শার্ট টা খুলে মিমের হাতে দিল। মিম শার্টটা হাতে নিয়ে বলল
-এইটা আমি কি করব?
-মাথায় দিতে পারো। (টাওয়েলটা হাতে নিয়ে)
-আপনি আবারো মজা করছেন?
-এইটা তোমার হাতে দিয়েছি ধুয়ে দেওয়ার জন্য,,খাওয়ার জন্য তো দেইনি যে জিজ্ঞেস করতে হবে। আজব বউ!!!
-আমাকে দিয়ে আপনি শার্ট ধোয়াবেন? মায়া লাগবেনা? (অসহায়ের মত মিম অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে রইলো)
-না গো মায়া লাগবেনা। একটা বছর দূরে থাকার উসুল না উঠিয়েই অর্নীল তোমায় ছেড়ে দেবে ভেবেছো? 🙄🙄🙄
-ঠিক আছে ধুয়ে দিচ্ছি। এইটা আর এমন কি কাজ!!
-সেইটাই তো। যাও তুমি গিয়ে এইটা ধোও৷ আমি গোসল করে আসি। (এরপর অর্নীল গুনগুন করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেল। যাওয়ার আগে মিমের দিকে তাঁকিয়ে শিষ মারলো)
-এই ছেলে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি? 😡😡😡😡
-মিমের রাগ দেখে অর্নীল হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিল।
গোসল করে এসে দেখে মিম শার্টটা ধুয়ে বুয়াকে দিয়ে ছাদে পাঠিয়ে দিয়েছে।
-একদম পার্ফেক্ট ওয়াইফ লাগছে এখন। দাঁড়াও আরো একটা কাজ বাকি আছে।
অর্নীল মিমের চুলগুলো কাঠি দিয়ে বেঁধে দিল আর মিমের শাড়ির আচল কোমড়ে এনে গুঁজে দিল। মিমের থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে অর্নীল মিমকে বলল
-একদম টিপিকাল হাউজওয়াইফ। খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু তোমায়। এভাবে তো তোমায় ভাবিই নি🤔🤔🤔
-আপনার কি শ্যুগার বেড়ে গেছে? নাকি জ্বর জ্বর লাগছে? (অর্নীলের কপালে হাত দিয়ে মিম🤤🤤)
-শ্যুগার ও বাড়েনি আর জ্বর ও আসেনি। কিন্তু তোমার কালার করা চুলগুলো কিন্তু দুর্দান্ত।
-কেন এর আগে দেখেন নি আমার চুল? 🙄🙄
-প্রশংসা তো আর করিনি 😒😒
-কি হয়েছে আপনার বলেন তো শুনি। (কোমড় থেকে শাড়ির আচল খুলে মিম)
-Let’s think!!! কই কিছু তো হয়নি।
-তাহলে এমন এবনরমালের মত আচরণ করছেন যে😏😏
-কই এবনরমালের মত আচরণ করছি? (আয়নায় নিজের চুলগুলো ঠিক করতে করতে অর্নীল) ভাবছি আমার চুলগুলোও কালার করে ফেলি।
-এহহহহ ছিঃঃ ভুলেও এই কাজ করবেন না আপনি। এমনিতেই আপনি অনেক সুন্দর😍😍।
-ক্রাশ খেয়েছো নাকি? 🤭🤭🤭
-ক্রাশ খাওয়ার কি আছে আজব!! 😑😑
-অন্যের বরকে দেখে ক্রাশ খাওয়া গুনাহ। (সোফায় বসে অর্নীল)
-অন্যের বর মানে? (অর্নীলের দিকে ঘুরে তাকিয়ে মিম)
-দেখো আমি মিমের বর আর তোমাকে আমি চিনিনা। আমি ওই মিমকে চিনি যেই মিম আমায় না দেখে ১ সেকেন্ড থাকতে পারতো না,, আমার বুকে না ঘুমালে ওর ঘুম আসতো না,,আমার প্রত্যেকটা কথা যে আদেশ বাক্য হিসেবে মানত আমি ঠিক সেই মিমকেই চিনি।
-আর কত কথা শোনাবেন এখন? স্যরি তো বললাম ই আমার ভুলের জন্য? 😞😞😞
-সিরিয়াসলি? আচ্ছা তোমার স্যরি accepted. এখন তুমি আমাকে ওই একটা বছর পরিপূর্ণ করে দাও যেইটা আমি তোমায় ছাড়া কাটিয়েছি। পারবে মিম? (অর্নীল দাঁড়িয়ে গেল) পারবেনা। দুনিয়ায় এমন কোনো সম্পর্ক নেই যেখানে কোনো ঝামেলা হয়না। কিন্তু সেই সম্পর্ক গুলো থেকে কোনো মানুষ ই ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়না। তুমি জানো এত্তগুলো দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি? নিজের সেন্স দিয়ে কি ভেবেছিলে কতটা কষ্ট হতে পারে আমার? স্টিল নাও আমার বিশ্বাস ই হতে চায়না যে তুমি এমন কিছু করেছিলে!!!! এখন যদি তুমি সমস্ত ভালবাসা আমার পায়ের সামনে এনেও জড়ো কর না তবুও আমার এই কষ্ট শেষ হবেনা।
-মিম কিছুই বলছেনা। কি বলবে? দোষ তো ওর!!! তাই সব শুনছে।
-সরো ঘুমাবো। (মিমকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে অর্নীল বিছানায় চলে গেল)
বিছানায় গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে ইউজ করছিলো অর্নীল। মিম অর্নীলের বরাবর হয়েই বসলো সোফার উপর। মিমের জন্য অর্নীল নতুন ফোন এনে দিয়েছে সেইটা টি টেবিলের উপর রাখা৷ অর্নীল হাত থেকে ফোন রেখে সোজা মিমের দিকে তাকায় আবার ঘুরে শুয়ে পরে৷ তখন অর্নীল ঘুমিয়ে যায় আর মিম আয়নার সামনে গিয়ে চুলে হাত দিয়ে দেখে সুন্দর ভাবেই বেঁধে দিয়েছে অর্নীল তাই আর খুলে না। এই বিকেলবেলা অর্নীল লাঞ্চ না করেই ঘুমিয়ে গেছে৷ মিম ও আর খায়নি। বেডরুমের বারান্দায় সুন্দর একটা দোলনা আছে। সেখানে গিয়ে বসলো মিম। বাইরে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিল মিম। অর্নীল কি এখন প্রতিনিয়ত ই ওকে এমন কথা শুনাবে? এসব বসে ভাবতে ভাবতে মিম ফোনের আওয়াজ পেয়ে উঠে ঘরে আসে। অর্নীলের ফোন বাজছে। অর্নীলকে ডেকে দিয়ে মিম অর্নীলের ফোনটা ওর হাতে দেয়। অর্নীল ফোন রিসিভ করে বিরক্ত হয়ে যায়।
-Hey listen who is your siyam? উল্টাপালটা কথা আর কত শোনাবেন আপনি? (অর্নীল পুরোপুরি রেগে গেছে) কতবার বলেছি আমি অর্নীল চৌধুরী কোনো সিয়াম না😠😠😠😠
-যে কেউ নিজেকে অর্নীল চৌধুরী দাবি করে। আর সিয়াম প্লিজ তুমি আমার সাথে মজা কর না। (ফোনের অপর প্রান্ত থেকে)
-Whattttt the!!
এই কথা বলেই অর্নীল খুব জোরে ফোন আছাড় মারলো। মিম আস্তে করে তখন বাইরে চলে গেল। বাইরে গিয়ে মিম নিজের হার্টবিট গুনছে। পুরোপুরি ভয় পেয়ে গেছে মিম। মিম মনে মনে বলছে
-ও যে আজকাল কি হয়ে গেছে ও নিজেই জানেনা😣😣
এরই মাঝে অর্নীল মিমকে ডাকলো।
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_19
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল ফোনটা ভেঙ্গে ফেলে জোরে জোরে মিম মিম বলে ডাকছিলো। মিম তো দরজার বাইরে। ভয়ে মিমের হাত পা কাঁপছে৷ আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে মিম গেলো অর্নীলের সামনে।
-এতক্ষন কোথায় ছিলে? কতক্ষন ধরে ডাকছিলাম তোমায়? (রেগে গিয়ে)
-স্যরি।
-লাঞ্চ করেছিলে?
-মিম মাথা নাড়িয়ে না করলো।
-কিহ? (শরীর থেকে কম্বল সরিয়ে অর্নীল)
-আপনি তো ঘুমাচ্ছিলেন তাই আমিও খাইনি।
-এত প্রেম দেখাতে কে বলেছে? খাওনি কেন? (ঝারি দিয়ে অর্নীল)
-আপনি যে এইভাবে ফোনগুলো ভাঙেন এইটা কি ঠিক? রেগে গেলেই যে আপনি ভাঙচুর করেন এইটা ঠিক না।
-অর্নীল চোখ ঘুরিয়ে তাঁকালো মিমের দিকে। টাকা আমার,,কিনেছি আমি আর আমিই ভাঙব বুঝেছো?
এই কথা বলে অর্নীল ওয়াশরুমে মুখ ধুতে চলে গেল। মিম আহত মনে ভাবতে লাগলো
-আমার অর্নীল কতটা পালটে গেছে। চিনতেই পারছিনা ওকে আমি। ও আমার সাথে ও কেমন ব্যবহার করে। এই গ্যাপটা আমার প্রতি ওর ভালবাসা কমিয়ে দিয়েছে। এর কারণ তো আমিই। যাক ওর যা ভাল মনে হচ্ছে করছে। (হাল্কা করে চোখের পানি মুছলো মিম)
অর্নীল ফিরে এসে মিমকে বলল
-দশ মিনিটে লাঞ্চ শেষ কর এরপর আমি, তুমি আর দি বের হব।
-কোথায়?
-শপিং করতে। (হাতে ঘড়ি পরে)
-হঠাৎ শপিং করতে যাব কেন?
-পরশু আমাদের বিয়ে। (শার্ট খুঁজতে খুঁজতে অর্নীল)
-ও!! ব্ল্যাক কালার শার্ট টা পরুন৷
-কেন?
-কালো রঙে আপনাকে ভাল মানায়।
-I know (কালো শার্ট বের করে অর্নীল)
-আমিও কি এখনি রেডি হব?
-হুম।
অর্নীল রেডি হয়ে আগে আগে বেরিয়ে নিচে চলে গেল। মিম আরো একবার কষ্ট পেল অর্নীলের এমন আচরণে। মিমকে তো অর্নীল রেডি করিয়ে দেয় কিন্তু আজ তাঁকালো না পর্যন্ত!! মিম অর্নীলের পছন্দের একটা শাড়ি পরলো। অর্নীল হাই হিল পছন্দ করেনা তারপরেও মিম শাড়ির সাথে হিল পরলো৷ শাড়ির আচলটা ছেড়ে দিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিল। হাল্কা একটু মেকাপ করলো। ব্লাউজের ফিতা আর ওভার বেন কলারের হুক টা কিছুতেই লাগাতে পারছেনা মিম। অনুকে ডাকবে কিন্তু অনু নেই নিজের ঘরে। হয়ত নিচে চলে গেছে!! মিম অর্নীলকে এসএমএস করে বলল
-একটু ঘরে আসবেন?
অর্নীল এক মিনিট পর ঘরে এলো।
-হুম বল কি হয়েছে? (মিমকে দেখলো তাঁকিয়ে)
-আমি ফিতাটা আর হুকটা লাগাতে পারছিনা। যদি একটু লাগিয়ে দিতেন। (পেছনে হাত দিয়ে)
-সামনে গিয়ে অর্নীল ফিতা আর হুক লাগিয়ে দিল।
-ঠিক আছে সবকিছু? (নিজেকে দেখিয়ে মিম)
-সেইটা আমার থেকে তুমি ভাল বুঝো। (মিমের পায়ের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-হুম। আচ্ছা আমি রেডি। চলুন৷
-শিওর তুমি রেডি? (মিমের চোখের দিকে তাঁকালো অর্নীল)
-হ্যা। (মিম চাইছে অর্নীল কিছু বলুক)
-ok Let’s go. (ড্রেসিংটেবিল এর উপর থেকে মানিব্যাগ টা নিয়ে)
-অর্নীল কিছুই বলল না আমাকে!!! (মনে মনে বলল মিম)
নিচে গিয়ে হাল্কা কিছু খেলো মিম। অনু আগে থেকেই রেডি হয়ে বসেছিলো৷ মিমের চুল খোলা আর পায়ে হিল দেখে অনু অবাক হয়ে গেলো। মিমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-কি ব্যাপার? চুল খোলা আর পায়ে হিল কেন?
-কেন দি?
-ভাই কিন্তু এইগুলো একদম পছন্দ করেনা৷ দেখোনা আমি ভাইয়ের সাথে বেরোলে প্লেইন শু পরি আর চুল বাঁধি।
-সমস্যা নেই কি হবে!! (অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে মিম)
-অর্নীল গাড়ির চাবিটাকে শক্ত করে হাতে মুঠিবদ্ধ করছে।
-তাছাড়া তোমার ভাইয়ের সমান হতে গেলে হিল না পরলে কেমন লাগবে? হিল পরেও তো ওনার সমান হতে পারিনা সেই কাঁধেই পরে থাকি৷ (অর্নীলকে শুনিয়ে কথাগুলো বলছে মিম)
-তোরা কি যাবি নাকি এখানে দাঁড়িয়ে বকবক করবি? (ধমক দিয়ে অর্নীল)
-যাচ্ছি তো ভাই! (মিমকে টেনে নিয়ে বাইরে চলে গেল অনু)
মিম আর অনু একসাথে পেছন সিটে বসলো আর অর্নীল গাড়ি ড্রাইভ করছে। কখনই ড্রাইভার দিয়ে ড্রাইভ করায় না অর্নীল৷ যেখানেই যাক নিজে নিজে ড্রাইভ করে যাবে। অনুও একই কাজ করে৷ সারা রাস্তা মিম আর অনু অনেক মজা আর হাসাহাসি করলো। শপিং মলের সামনে গিয়ে অর্নীল গাড়ি পার্ক করে বের হলো। মিম আর অনুও গাড়ি থেকে নামলো। গাড়ি থেকে নেমে অনু পুরো অবাক। এ কাকে দেখছে!!! আবির এখানে!!!
-কেমন আছো অর্নীল? (হ্যান্ডশেক করে আবির অর্নীলের সাথে)
-ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
-এইত!! (অনুর দিকে তাঁকিয়ে)
-এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে তুমি আমার কথা শুনলে এই জন্য অনেক থ্যাংকস! (অর্নীল)
-It’s my pleasure অর্নীল। কেমন আছো মিম?
-জ্বি ভাল আছি। আপনি?
-আমিও ভাল আছি। চলো ভেতরে যাই।
-হুম চলো।
অর্নীল আর আবির কথা বলতে বলতে যাচ্ছে আর মিম অনুকে জিজ্ঞেস করছে
-দি এত হ্যান্ডসাম কেন ভাইয়া?
-আমার ভাইয়ের থেকে বেশি নয়😕😕
-তা ঠিক আছে কিন্তু তুমি কথা বললে না কেন?
-আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছে কেমন আছি😒😒
-ও আচ্ছা😂😂😂😂
অর্নীল সবার আগে গিয়ে শাড়ির দোকানে ঢুকলো। দোকানদার অর্নীলকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।
-স্যার আপনি😱😱? আসসালামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম।
-স্যার প্লিজ বসেন। (চেয়ার এগিয়ে দিয়ে)
-না ঠিক আছে। আপনি ব্রাইডাল কিছু শাড়ি আর ল্যাহেঙ্গা দেখান।
-ওকে স্যার৷
অর্নীল ড্রেসগুলো দেখছে আর আবির অনুর সামনে গেল। মিম একটু সরে দাঁড়ালো।
-কেমন আছেন? (আবির)
-জ্বি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?😒
-আলহামদুলিল্লাহ।
-এত ব্যস্ত মানুষ হঠাৎ মলে কি করে? 🙄🙄
-একমাত্র শালা আমার অর্নীল। ওর জন্য সব ব্যস্ততার ছুটি আজকে। বিকেলে বলেছে শপিং করতে যেতে হবে ব্যাস আমি আর কিছুই শুনতে চাইনা। এরপর এখানে আমার আর কিছু কি বলার থাকে?
-ও গুড। শালা বলেছে বলে আপনার টাইম হয়ে গেল আর আমি বললে তো মাসে একবারো হয়না।
-আবির মাথা চুলকাচ্ছে।
-দি এইদিকে আয় তো (অর্নীল) দেখতো কোন রঙটা সুন্দর?
-মিমকে অফ হোয়াইটে দারুন মানায়৷ তুই এক কাজ কর ল্যাহেঙ্গা এই অফ হোয়াইট টা নে।
-একটাই কি নিব নাকি? আরেকটা চুজ কর। (ধমক দিয়ে অর্নীল)
আরেকটা হাল্কা অরেঞ্জ কালারের ল্যাহেঙ্গা পছন্দ হলো অনুর। মিমের ও ভাল লেগেছে ওইটা। দুইটা ল্যাহেঙ্গাই অনেক সুন্দর৷ অর্নীল মোট চারটা ল্যাহেঙ্গা নিল। দুইটা অফ হোয়াইট আর দুইটা অরেঞ্জ কালার। হুবহু সেইম ডিজাইনের। অনু আর মিম দুইজনেই বুঝেছে এতগুলো ল্যাহেঙ্গা কেন নিল! দুইটা অনুর আর দুইটা মিমের!! এরপর অন্যদোকানে গিয়ে শাড়ি কিনলো। এরপর গহনার দোকানে গিয়ে আগে অনুকে একটা ডায়মন্ডের নেকলেস কিনে দিল আর হুবহু সেইম ডিজাইনের মিমকে কিনে দিল।
-আবির দা (অর্নীল আবিরকে ডাকলো)
-হ্যা বল।
-আমি আর তুমি একই রকম ব্লেজার কিনছি। কি কালার নিলে ভাল হবে?
-মানে৷ কি অর্নীল? বিয়ে তোমার, আমার না কিন্তু।
-জানি। এখন তারাতারি বল কি কালার নিব।
-তাহলে আমার একটা কথা রাখতে হবে?
-কি?
-আমি নিজে তোমার ড্রেস কিনে দিব।
-এইটা সম্ভব না৷ আমি তোমায় জিজ্ঞেস করেছি তুমি বল।
-আমি বলছি নীল রঙ নে। (অনু)
-এই জায়গায় দুই মিনিট দাঁড়া আমি অর্ডার দিয়ে আসছি। (অর্নীল)
-যা।
-কাজটা কি তুমি ঠিক করলে? (আবির অনুকে জিজ্ঞেস করলো)
-আমার ভাইকে আমার থেকে বেশি ভাল আর কেউ চিনেনা। ও যেহেতু একবার বলেছে তোমায় ও শপিং করিয়ে দিবে তার মানে দিবেই। তাই আর টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনি।
-এখানে আমি ছোট হলাম না?
-একটুও না।
ওরা কথা বলতে বলতে অর্নীল চলে এলো। এখনো অনেক কেনাকাটা বাকি। জুয়েলারি আরো কিনতে হবে,,টুকিটাকি আরো অনেক কিছু। অর্নীল এরপর কসমেটিকস এর দোকানে গেল। কসমেটিকস মিমের অনেক আছে তারপরেও বিয়ের সাজ বলে কথা। মোটামোটি শপিং শেষ করে রাত বারটার পরে মার্কেট থেকে বের হলো ওরা।
-ডিনার করবেনা? (আবির)
-হ্যা কোন রেস্টুরেন্টে যাব? (অর্নীল)
-তোমার যেইটাতে ইচ্ছা।
-আচ্ছা চল।
আবিরের গাড়িতে অনু যায় আর অর্নীলের পাশে মিম বসে। আবির অর্নীলের গাড়ির পেছনে৷ অর্নীল ড্রাইভ করছে। মলে আসার পর মিমের সাথে একটাও কথা বলেনি অর্নীল। এখনো কোনো কথা বলছেনা। অর্নীল একটা নতুন ফোন কিনেছে। রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অর্নীল দাঁড়ালো। গাড়ি লক করে আবিরের জন্য ওয়েট করছে আর তখনি আবির চলে আসে। এরপর সবাই মিলে ডিনার করে রাত দেড়টার দিকে রওনা দেয়। খাবারের বিল আবির জোর করে পে করে।
-অর্নীল আমি দিয়ে আসি বাসায় তোমাদের? (আবির)
-না। তুমি বাসায় চলে যাও। তোমাকে উলটা আর যেতে হবেনা। আমি পারব যেতে।
-সাবধানে যেয়ো। আর গিয়ে কল করো।
-তুমিও। বাই।
অর্নীল আবিরকে বাই বলে বেরিয়ে যায়। রাস্তা পুরো ফাঁকা। শুধু হেডলাইটের আলো জ্বলছে রাস্তায়। খুব দ্রুতই অর্নীল গাড়ি চালাচ্ছিলো। বাসায় আসার পর হর্নের শব্দ শুনে অর্নীলের আম্মু বাইরে এলো।
-কিরে এত দেরি হল যে?
-হুম আম্মু। গার্ড? (দুইজন গার্ডকে ডাক দিয়ে অর্নীল)
-জ্বি স্যার। (দৌড়ে সামনে এসে)
-এইগুলো বাসায় নিয়ে এসো। (শপিং ব্যাগের কথা বলল)
-ওকে স্যার।
এরপর গার্ডরা সব ঘরে দিয়ে গেল। অর্নীল বেডরুমে ঢুকে হাত থেকে ঘড়ি খুলে আর শার্টের একটা বোতাম খুলে বিছানায় শুয়ে পরলো। মিম ঘরে এসে দেখে অর্নীল চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
-কফি বানিয়ে নিয়ে আসব?
এর মধ্যেই ঘরে কাজের মেয়ে এলো
-স্যার আপনার কফি। ম্যাডাম পাঠাইছে।
-আচ্ছা তুমি যাও।
অর্নীল উঠে কফি খাচ্ছিলো। কফি খাওয়া শেষ করে দেখলো মিম ফ্রেশ হয়ে চলে এসেছে। এরপর অর্নীল ফ্রেশ হয়ে এলো৷ ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন সেট আপ করলো। মিম খাটে বসেছিলো। ফোন ঠিক করার পর লাইট অফ করে অর্নীল সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। বিকেলের পর থেকে একটা কথা বলেনি মিমের সাথে। মিম আর সহ্য করতে না পেরে লাইট অন করে অর্নীলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। অর্নীল মিমের দিকে তাঁকালো।
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_19
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল ফোনটা ভেঙ্গে ফেলে জোরে জোরে মিম মিম বলে ডাকছিলো। মিম তো দরজার বাইরে। ভয়ে মিমের হাত পা কাঁপছে৷ আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে মিম গেলো অর্নীলের সামনে।
-এতক্ষন কোথায় ছিলে? কতক্ষন ধরে ডাকছিলাম তোমায়? (রেগে গিয়ে)
-স্যরি।
-লাঞ্চ করেছিলে?
-মিম মাথা নাড়িয়ে না করলো।
-কিহ? (শরীর থেকে কম্বল সরিয়ে অর্নীল)
-আপনি তো ঘুমাচ্ছিলেন তাই আমিও খাইনি।
-এত প্রেম দেখাতে কে বলেছে? খাওনি কেন? (ঝারি দিয়ে অর্নীল)
-আপনি যে এইভাবে ফোনগুলো ভাঙেন এইটা কি ঠিক? রেগে গেলেই যে আপনি ভাঙচুর করেন এইটা ঠিক না।
-অর্নীল চোখ ঘুরিয়ে তাঁকালো মিমের দিকে। টাকা আমার,,কিনেছি আমি আর আমিই ভাঙব বুঝেছো?
এই কথা বলে অর্নীল ওয়াশরুমে মুখ ধুতে চলে গেল। মিম আহত মনে ভাবতে লাগলো
-আমার অর্নীল কতটা পালটে গেছে। চিনতেই পারছিনা ওকে আমি। ও আমার সাথে ও কেমন ব্যবহার করে। এই গ্যাপটা আমার প্রতি ওর ভালবাসা কমিয়ে দিয়েছে। এর কারণ তো আমিই। যাক ওর যা ভাল মনে হচ্ছে করছে। (হাল্কা করে চোখের পানি মুছলো মিম)
অর্নীল ফিরে এসে মিমকে বলল
-দশ মিনিটে লাঞ্চ শেষ কর এরপর আমি, তুমি আর দি বের হব।
-কোথায়?
-শপিং করতে। (হাতে ঘড়ি পরে)
-হঠাৎ শপিং করতে যাব কেন?
-পরশু আমাদের বিয়ে। (শার্ট খুঁজতে খুঁজতে অর্নীল)
-ও!! ব্ল্যাক কালার শার্ট টা পরুন৷
-কেন?
-কালো রঙে আপনাকে ভাল মানায়।
-I know (কালো শার্ট বের করে অর্নীল)
-আমিও কি এখনি রেডি হব?
-হুম।
অর্নীল রেডি হয়ে আগে আগে বেরিয়ে নিচে চলে গেল। মিম আরো একবার কষ্ট পেল অর্নীলের এমন আচরণে। মিমকে তো অর্নীল রেডি করিয়ে দেয় কিন্তু আজ তাঁকালো না পর্যন্ত!! মিম অর্নীলের পছন্দের একটা শাড়ি পরলো। অর্নীল হাই হিল পছন্দ করেনা তারপরেও মিম শাড়ির সাথে হিল পরলো৷ শাড়ির আচলটা ছেড়ে দিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিল। হাল্কা একটু মেকাপ করলো। ব্লাউজের ফিতা আর ওভার বেন কলারের হুক টা কিছুতেই লাগাতে পারছেনা মিম। অনুকে ডাকবে কিন্তু অনু নেই নিজের ঘরে। হয়ত নিচে চলে গেছে!! মিম অর্নীলকে এসএমএস করে বলল
-একটু ঘরে আসবেন?
অর্নীল এক মিনিট পর ঘরে এলো।
-হুম বল কি হয়েছে? (মিমকে দেখলো তাঁকিয়ে)
-আমি ফিতাটা আর হুকটা লাগাতে পারছিনা। যদি একটু লাগিয়ে দিতেন। (পেছনে হাত দিয়ে)
-সামনে গিয়ে অর্নীল ফিতা আর হুক লাগিয়ে দিল।
-ঠিক আছে সবকিছু? (নিজেকে দেখিয়ে মিম)
-সেইটা আমার থেকে তুমি ভাল বুঝো। (মিমের পায়ের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-হুম। আচ্ছা আমি রেডি। চলুন৷
-শিওর তুমি রেডি? (মিমের চোখের দিকে তাঁকালো অর্নীল)
-হ্যা। (মিম চাইছে অর্নীল কিছু বলুক)
-ok Let’s go. (ড্রেসিংটেবিল এর উপর থেকে মানিব্যাগ টা নিয়ে)
-অর্নীল কিছুই বলল না আমাকে!!! (মনে মনে বলল মিম)
নিচে গিয়ে হাল্কা কিছু খেলো মিম। অনু আগে থেকেই রেডি হয়ে বসেছিলো৷ মিমের চুল খোলা আর পায়ে হিল দেখে অনু অবাক হয়ে গেলো। মিমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-কি ব্যাপার? চুল খোলা আর পায়ে হিল কেন?
-কেন দি?
-ভাই কিন্তু এইগুলো একদম পছন্দ করেনা৷ দেখোনা আমি ভাইয়ের সাথে বেরোলে প্লেইন শু পরি আর চুল বাঁধি।
-সমস্যা নেই কি হবে!! (অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে মিম)
-অর্নীল গাড়ির চাবিটাকে শক্ত করে হাতে মুঠিবদ্ধ করছে।
-তাছাড়া তোমার ভাইয়ের সমান হতে গেলে হিল না পরলে কেমন লাগবে? হিল পরেও তো ওনার সমান হতে পারিনা সেই কাঁধেই পরে থাকি৷ (অর্নীলকে শুনিয়ে কথাগুলো বলছে মিম)
-তোরা কি যাবি নাকি এখানে দাঁড়িয়ে বকবক করবি? (ধমক দিয়ে অর্নীল)
-যাচ্ছি তো ভাই! (মিমকে টেনে নিয়ে বাইরে চলে গেল অনু)
মিম আর অনু একসাথে পেছন সিটে বসলো আর অর্নীল গাড়ি ড্রাইভ করছে। কখনই ড্রাইভার দিয়ে ড্রাইভ করায় না অর্নীল৷ যেখানেই যাক নিজে নিজে ড্রাইভ করে যাবে। অনুও একই কাজ করে৷ সারা রাস্তা মিম আর অনু অনেক মজা আর হাসাহাসি করলো। শপিং মলের সামনে গিয়ে অর্নীল গাড়ি পার্ক করে বের হলো। মিম আর অনুও গাড়ি থেকে নামলো। গাড়ি থেকে নেমে অনু পুরো অবাক। এ কাকে দেখছে!!! আবির এখানে!!!
-কেমন আছো অর্নীল? (হ্যান্ডশেক করে আবির অর্নীলের সাথে)
-ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
-এইত!! (অনুর দিকে তাঁকিয়ে)
-এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে তুমি আমার কথা শুনলে এই জন্য অনেক থ্যাংকস! (অর্নীল)
-It’s my pleasure অর্নীল। কেমন আছো মিম?
-জ্বি ভাল আছি। আপনি?
-আমিও ভাল আছি। চলো ভেতরে যাই।
-হুম চলো।
অর্নীল আর আবির কথা বলতে বলতে যাচ্ছে আর মিম অনুকে জিজ্ঞেস করছে
-দি এত হ্যান্ডসাম কেন ভাইয়া?
-আমার ভাইয়ের থেকে বেশি নয়😕😕
-তা ঠিক আছে কিন্তু তুমি কথা বললে না কেন?
-আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছে কেমন আছি😒😒
-ও আচ্ছা😂😂😂😂
অর্নীল সবার আগে গিয়ে শাড়ির দোকানে ঢুকলো। দোকানদার অর্নীলকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।
-স্যার আপনি😱😱? আসসালামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম।
-স্যার প্লিজ বসেন। (চেয়ার এগিয়ে দিয়ে)
-না ঠিক আছে। আপনি ব্রাইডাল কিছু শাড়ি আর ল্যাহেঙ্গা দেখান।
-ওকে স্যার৷
অর্নীল ড্রেসগুলো দেখছে আর আবির অনুর সামনে গেল। মিম একটু সরে দাঁড়ালো।
-কেমন আছেন? (আবির)
-জ্বি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?😒
-আলহামদুলিল্লাহ।
-এত ব্যস্ত মানুষ হঠাৎ মলে কি করে? 🙄🙄
-একমাত্র শালা আমার অর্নীল। ওর জন্য সব ব্যস্ততার ছুটি আজকে। বিকেলে বলেছে শপিং করতে যেতে হবে ব্যাস আমি আর কিছুই শুনতে চাইনা। এরপর এখানে আমার আর কিছু কি বলার থাকে?
-ও গুড। শালা বলেছে বলে আপনার টাইম হয়ে গেল আর আমি বললে তো মাসে একবারো হয়না।
-আবির মাথা চুলকাচ্ছে।
-দি এইদিকে আয় তো (অর্নীল) দেখতো কোন রঙটা সুন্দর?
-মিমকে অফ হোয়াইটে দারুন মানায়৷ তুই এক কাজ কর ল্যাহেঙ্গা এই অফ হোয়াইট টা নে।
-একটাই কি নিব নাকি? আরেকটা চুজ কর। (ধমক দিয়ে অর্নীল)
আরেকটা হাল্কা অরেঞ্জ কালারের ল্যাহেঙ্গা পছন্দ হলো অনুর। মিমের ও ভাল লেগেছে ওইটা। দুইটা ল্যাহেঙ্গাই অনেক সুন্দর৷ অর্নীল মোট চারটা ল্যাহেঙ্গা নিল। দুইটা অফ হোয়াইট আর দুইটা অরেঞ্জ কালার। হুবহু সেইম ডিজাইনের। অনু আর মিম দুইজনেই বুঝেছে এতগুলো ল্যাহেঙ্গা কেন নিল! দুইটা অনুর আর দুইটা মিমের!! এরপর অন্যদোকানে গিয়ে শাড়ি কিনলো। এরপর গহনার দোকানে গিয়ে আগে অনুকে একটা ডায়মন্ডের নেকলেস কিনে দিল আর হুবহু সেইম ডিজাইনের মিমকে কিনে দিল।
-আবির দা (অর্নীল আবিরকে ডাকলো)
-হ্যা বল।
-আমি আর তুমি একই রকম ব্লেজার কিনছি। কি কালার নিলে ভাল হবে?
-মানে৷ কি অর্নীল? বিয়ে তোমার, আমার না কিন্তু।
-জানি। এখন তারাতারি বল কি কালার নিব।
-তাহলে আমার একটা কথা রাখতে হবে?
-কি?
-আমি নিজে তোমার ড্রেস কিনে দিব।
-এইটা সম্ভব না৷ আমি তোমায় জিজ্ঞেস করেছি তুমি বল।
-আমি বলছি নীল রঙ নে। (অনু)
-এই জায়গায় দুই মিনিট দাঁড়া আমি অর্ডার দিয়ে আসছি। (অর্নীল)
-যা।
-কাজটা কি তুমি ঠিক করলে? (আবির অনুকে জিজ্ঞেস করলো)
-আমার ভাইকে আমার থেকে বেশি ভাল আর কেউ চিনেনা। ও যেহেতু একবার বলেছে তোমায় ও শপিং করিয়ে দিবে তার মানে দিবেই। তাই আর টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনি।
-এখানে আমি ছোট হলাম না?
-একটুও না।
ওরা কথা বলতে বলতে অর্নীল চলে এলো। এখনো অনেক কেনাকাটা বাকি। জুয়েলারি আরো কিনতে হবে,,টুকিটাকি আরো অনেক কিছু। অর্নীল এরপর কসমেটিকস এর দোকানে গেল। কসমেটিকস মিমের অনেক আছে তারপরেও বিয়ের সাজ বলে কথা। মোটামোটি শপিং শেষ করে রাত বারটার পরে মার্কেট থেকে বের হলো ওরা।
-ডিনার করবেনা? (আবির)
-হ্যা কোন রেস্টুরেন্টে যাব? (অর্নীল)
-তোমার যেইটাতে ইচ্ছা।
-আচ্ছা চল।
আবিরের গাড়িতে অনু যায় আর অর্নীলের পাশে মিম বসে। আবির অর্নীলের গাড়ির পেছনে৷ অর্নীল ড্রাইভ করছে। মলে আসার পর মিমের সাথে একটাও কথা বলেনি অর্নীল। এখনো কোনো কথা বলছেনা। অর্নীল একটা নতুন ফোন কিনেছে। রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অর্নীল দাঁড়ালো। গাড়ি লক করে আবিরের জন্য ওয়েট করছে আর তখনি আবির চলে আসে। এরপর সবাই মিলে ডিনার করে রাত দেড়টার দিকে রওনা দেয়। খাবারের বিল আবির জোর করে পে করে।
-অর্নীল আমি দিয়ে আসি বাসায় তোমাদের? (আবির)
-না। তুমি বাসায় চলে যাও। তোমাকে উলটা আর যেতে হবেনা। আমি পারব যেতে।
-সাবধানে যেয়ো। আর গিয়ে কল করো।
-তুমিও। বাই।
অর্নীল আবিরকে বাই বলে বেরিয়ে যায়। রাস্তা পুরো ফাঁকা। শুধু হেডলাইটের আলো জ্বলছে রাস্তায়। খুব দ্রুতই অর্নীল গাড়ি চালাচ্ছিলো। বাসায় আসার পর হর্নের শব্দ শুনে অর্নীলের আম্মু বাইরে এলো।
-কিরে এত দেরি হল যে?
-হুম আম্মু। গার্ড? (দুইজন গার্ডকে ডাক দিয়ে অর্নীল)
-জ্বি স্যার। (দৌড়ে সামনে এসে)
-এইগুলো বাসায় নিয়ে এসো। (শপিং ব্যাগের কথা বলল)
-ওকে স্যার।
এরপর গার্ডরা সব ঘরে দিয়ে গেল। অর্নীল বেডরুমে ঢুকে হাত থেকে ঘড়ি খুলে আর শার্টের একটা বোতাম খুলে বিছানায় শুয়ে পরলো। মিম ঘরে এসে দেখে অর্নীল চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
-কফি বানিয়ে নিয়ে আসব?
এর মধ্যেই ঘরে কাজের মেয়ে এলো
-স্যার আপনার কফি। ম্যাডাম পাঠাইছে।
-আচ্ছা তুমি যাও।
অর্নীল উঠে কফি খাচ্ছিলো। কফি খাওয়া শেষ করে দেখলো মিম ফ্রেশ হয়ে চলে এসেছে। এরপর অর্নীল ফ্রেশ হয়ে এলো৷ ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন সেট আপ করলো। মিম খাটে বসেছিলো। ফোন ঠিক করার পর লাইট অফ করে অর্নীল সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। বিকেলের পর থেকে একটা কথা বলেনি মিমের সাথে। মিম আর সহ্য করতে না পেরে লাইট অন করে অর্নীলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। অর্নীল মিমের দিকে তাঁকালো।
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_20
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অর্নীল সোফায় শুয়েছিল বলে মিম আর সহ্য করতে না পেরে লাইট অন করে অর্নীলের সামনে যায়। অর্নীল মিমের দিকে তাঁকালো।
-এই সমস্যা কি আপনার? এমন করছেন কেন আমার সাথে? যদি এমনই করবেন তাহলে বাসায় কেন এনেছেন আমায়? (অর্নীলের পাশে বসে অর্নীলের টি শার্ট ধরে)
-অর্নীল মিমের হাতের দিকে তাঁকালো।
-এখানে কেন ঘুমিয়েছেন? আমি এখন পুরোনো হয়ে গেছি তাই না? এখন আমার সাথে আপনার কথা বলতেও ইচ্ছে করেনা তাইনা? (মিম তো কেঁদেই দিল)
-এত রাতে ঢং না করে বিছানায় যাও। (মিমের হাত বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে) কালকে আমায় অফিসে যেতে হবে So let me sleep.
-এখানে না, বিছানায় ঘুমাবেন। আসেন (অর্নীলের হাত টেনে মিম)
-মিম তুমি ঘুমাও। আমি এখানেই ঠিক আছি।
-না আপনি ঠিক নেই। কেন এইভাবে আমায় ইগনোর করছেন? (একটু জোরে চেঁচিয়ে মিম)
-এইটা ইগনোর না মিম। মাথা ব্যাথা করছে যাও এখান থেকে। (একটু মুখ বাঁকিয়ে)
-মাথা ব্যথা করছে? জ্বর আসবে নাকি? (কপালে হাত দিয়ে মিম)
-না৷ তুমি ঘুমাও। আমায় ও একটু ঘুমাতে দাও।
-এখানে নয়, বিছানায়।
এরপর অর্নীল ঘর থেকে বেরিয়ে গেস্টরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। মিমের সামনে আর এক মিনিট থাকলে হয়ত আজকে মিম মার খেতো। মিম দরজার দিকে তাঁকিয়ে খাটে বসে পরলো৷ সারারাত ঘুম আসেনাই মিম। অর্নীল ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরার মতো ঘুমালো সারারাত। মিম বারান্দার গ্রিল ধরে সারারাত দাঁড়িয়ে ছিল। ভোরে আজান শুনে মিম অযূ করে এসে নামাজ পরলো। নামাজ শেষ করে গেস্টরুমে গিয়ে দেখে দরজা এখনো লাগানো। মিম নিচে যায় আর ব্রেকফাস্ট বানায়।
সকাল ৮ টায় সবাই ড্রইংরুমে আসে। কিন্তু অর্নীল এখনো আসেনি।
-মিম ভাই কোথায়? এখনো কি ঘুমায় নাকি ও? (অনু)
-মনে হয়।
-কেন? মনে হয় কেন? তুমি জানো না?
-না দি আসলে কালকে ও গেস্টরুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে। সকালে দেখলাম দরজা লাগানো৷
-ঝগড়া হয়েছে?
-না তবুও উনি কেন যে এমন করছেন!
-আচ্ছা আমি দেখছি।
এই কথা বলে অনু সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যাবে তখনি অর্নীল শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে নিচে আসে।
-কিরে ভাই এতক্ষণ কি করলি?
-ঘুমাচ্ছিলাম। তারাতারি ব্রেকফাস্ট দে। অফিস যেতে হবে। I am already late. (চেয়ার টান দিয়ে বসে)
-মাথা ব্যথা কমেছে আপনার? (খাবার দিতে দিতে মিম)
-হুম।
-খাবার খেয়ে জুসটা খেয়ে নিন।
-কিরে অর্নীল তুই কোথাও যাচ্ছিস নাকি? (টেবিলে বসে অর্নীলের আম্মু)
-অফিসে যাচ্ছি।
-আজকে অফিস কিসের? পরশু বিয়ে আর আজ অফিস। তাছাড়া ভুলে গেলি নাকি যে আজ সন্ধ্যায় মেহেন্দির অনুষ্ঠান আছে৷ বাসা ডেকোরেট করছে সবাই কোথায় একটু দেখবি আর তুই অফিস যাচ্ছিস!😡😡
-স্যরি আম্মু। বাট আজ না গেলে হবেনা। একটা মিটিং আছে।
-অর্নীল আমি কিন্তু এইবার ভীষণ রেগে যাচ্ছি। (অর্নীলের আম্মু)
-দুপুরের পরে চলে আসব। ওকে?
-ঠিক দুইটায় বাসায় দেখতে চাই তোকে।
-হ্যা দুইটাতেই চলে আসব। যাচ্ছি এখন বাই৷
অর্নীল মিমকে কিছু না বলেই চলে গেলো। মিম যে খায়নি সেইটা নিয়েও কিছু বলল না। মিম মন খারাপ করে টেবিলে বসলো। এরপর গল্প করতে করতে অনু,, মিম আর ওর শ্বাশুরি খাবার খেলো।
ম্যানেজার সবকিছু দেখছে৷ পুরো বাড়িটা সাজানোর দায়িত্ব ম্যানেজারের উপরেই। কিভাবে সাজানো হবে সেইটা অনু বলে দিয়েছে আর সেই অনুযায়ী তিনি সব দেখছেন।
বিকেলে অনু মিমের ঘরে গেলো।
-কি একা একা মন খারাপ করে বসে আছো যে! লাঞ্চ ও তো করলে না।
-আসলে দি ক্ষুধা লাগেনি।
-ভাই রাস্তায় আছে আসছে।
-উনি না দুইটায় বাসায় আসে!🙄🙄
-কোথায় নাকি গিয়েছিলো তাই লেইট হলো। যাই হোক একটু পর পার্লার থেকে মেয়েরা আসবে। তুমি ফ্রেশ হও। আর ল্যাহেঙ্গা কোনটা পরবা?
-তুমি বলো
-অফ হোয়াইট টা পর আজকে। আমিও ভাবছি ওইটাই পরব।
-আচ্ছা দি।
অনু আর মিম কথা বলতে বলতেই অর্নীল ঘরে ঢুকলো। অর্নীল হাতে করে এক বক্স মেহেদী নিয়ে আসলো। অর্নীলের আম্মু বলে দিয়েছে মেহেদী আনার জন্য।
-এই দেখ তো এইগুলা ঠিক আছে কি না? (অনুকে বক্সটা দিয়ে অর্নীল)
-হুম ঠিক আছে।
-তুই আর মিম দুইজনের গেট আপ যাতে এক থাকে।
-কেন? বিয়ে কি আমারো দিয়ে দিচ্ছিস নাকি?😃
-না। এইটা আমার ইচ্ছা। পূরণ করবি আশা করি।
-অবশ্যই ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ তো করতেই হবে।
-আবির দা আসবে।
-কিহহহহ? আজকেও আসবে? (অবাক হয়ে অনু)
-হুম।
-আচ্ছা তোরা কথা বল আমি গিয়ে দেখি কাজ কতটুকু শেষ হলো!!
-যা।
অনু চলে যাওয়ার পর অর্নীল মিমের দিকে তাঁকিয়ে হাসলো৷ কিন্তু হাসির কারণ বলল না। মিম ও কিছু বলল না। অর্নীল ড্রেস চেঞ্জ না করেই নিচে গার্ডেনের দিকে গেলো। অনুও ছিল সেখানে।
-এইগুলা কি দি? এখনো স্টেজ কমপ্লিট করা হয়নি? একটু পরে তো গেস্টরা আসা শুরু করবে।
-স্যার! (পেছন থেকে শৈলি ডাক দিল)
-চলে এসেছো।
-হ্যা স্যার। আপনার মেহেন্দি বলে কথা। 😁😁😁
-আমার নয় আমার বউয়ের 😏😏😏। এখন গিয়ে স্টেজটা আগে কমপ্লিট কর। এরপর শুনো গার্ডেনে যতগুলো গাছ আছে সবগুলো লাইটিং করে দিও। আর দি তুই গিয়ে গেইট টা দেখ। আমি উপরে যাচ্ছি। এরপর তুই ও আয়।
-আসছি।
অর্নীল ঘরে এসে দেখে মিমকে সাজানোর জন্য মেয়েরা এসে বসে আছে আর মিম ঘুমাচ্ছে।
-আসসালামুয়লাইকুম স্যার। (মেয়েরা)
-ওয়ালাইকুম সালাম। ম্যাম কোথায়?
-মিম ম্যাম নাকি ঘরে ঘুমাচ্ছেন। তাই আমরা বসে আছি।
-আচ্ছা বসুন।
অর্নীল ঘরে গিয়ে দেখে মিম সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে। অর্নীল যা রেগে গেছে এইটা দেখে৷
-মিম এই মিম
-হুম। (ঘুম ঘুম চোখে)
-এখন কি ঘুমানোর সময়? (ঝারি দিয়ে অর্নীল)
-একটু ঘুমাই প্লিজ। অনেক ঘুম পেয়েছে।
-What the!! যাও ফ্রেশ হও। পার্লার থেকে মেয়েরা এসে বসে আছে। (একটানে মিমকে উঠিয়ে)
-ওরা চলে এসেছে? (চোখ টেনে খুলতেই পারছেনা)
-এখন বলছো এ কথা!!! 😠😠😠
অর্নীল মিমকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে পানিভর্তি বাথ টাবে শুইয়ে দিয়ে আসে।
-কি করছেন আপনি? (হঠাৎ বুঝে উঠে মিম)
-দুই মিনিটে ফ্রেশ হয়ে গেস্টরুমে যাও। এক সেকেন্ড লেইট হলে ঘুম কাকে বলে শিখিয়ে দিব😡😡
এই কথা বলে অর্নীল চলে গেল। মিম পানির মধ্যেই বসে বসে ঝিমাচ্ছে। অর্নীলের কথা মনে হতেই দ্রুত বেরিয়ে আসে। কোনোমতে শাড়িটা পেঁচিয়ে গেস্টরুমে যায় মিম। এরপর রেডি হতে বসে। কিছুক্ষণ পর অনুও রেডি হতে চলে আসে।
সন্ধ্যার পর অর্নীল রেডি হয়ে গেস্টদের সাথে কথা বলছে। আবির ও চলে এসেছে। একই ড্রেসে অর্নীল আর আবির। ব্লু ব্লেজার,, ব্ল্যাক শার্ট আর ব্লু প্যান্ট। অর্নীল শৈলিকে কল করলো
-স্টেইজ কম্পলিট?
-ইয়েস স্যার। একবার এসে আপনি দেখে গেলে ভাল হত!
-আসছি।
-তুমি থাকো আমি আসছি (আবিরকে বলল অর্নীল)
-কোথায় যাচ্ছো?
-গার্ডেনে স্টেইজ টা দেখে আসি।
-চলো আমিও যাচ্ছি।
-আসো।
দুইজন মিলে সব চেক করলো। অর্নীল কে দেখে শৈলি বলল
-স্যার একটা কথা বলি?
-হুম
-আপনাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে😍😍
-সেইটা আমি জানি😏😏। প্রেস কখন আসবে?
-অনুষ্ঠান শুরুর আগেই চলে আসবে।
-আচ্ছা আর তুমি এখানে থেকো। আর সবাইকে কাজগুলো দেখিয়ে দিও।
-স্যার মাঝের জায়গাটায় একটা বেড শিট দিলে ভাল হত। ম্যাম বসবে তো!
-আম্মুকে গিয়ে বল।
-আচ্ছা।
অর্নীল আবিরের সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতর এলো। মিসেস চৌধুরী গেস্টদের ওয়েলকাম জানাচ্ছেন। অনু মিমকে নিয়ে নিচে নামছিলো তখন সবাই উপরের দিকে তাঁকালো। আবির তাঁকিয়ে আছে অনুর দিকে আর অর্নীল মিমের দিকে। অর্নীল পুরো হা হয়ে গেছে। মিম নিচে নামার পর মিসেস চৌধুরী সবার সাথে মিমের পরিচয় করিয়ে দিল আর অর্নীল পুরো ভ্যাবলার মত এখনো তাঁকিয়ে আছে।
-শালাবাবু😁😁😁😁(অর্নীল কে খোঁচা দিয়ে আবির)
-হ্যা (ঘোর ভাঙ্গার পর)
-এভাবে কি দেখছিলে?
-কি দেখব? (একটু ভাব নিয়ে অর্নীল)
-আর যাই বলো তুমি কিন্তু আমার সাথে ভাব নিতে পারো না।
-এই কারনেই তো শালাবাবু বলতে পারলা😑😑
-😂😂😂😂😂
চলবে