পালিয়ে বিয়ে – পর্ব ২২-২৪(শেষ সিজন ১)

0
561

#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_22
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

ইশান অদৃকার প্রশ্ন শুনে উঠে বসলো। ইশান তখন মায়াবী দৃষ্টিতে তাঁকালো অদৃকার দিকে। অদৃকার সিল্কি চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো ইশান। ইশান বলল

-আমি ঠিক আছি আর সম্পুর্ন ঠিকই আছি। এতদিন ঠিক ছিলাম না। ইহিতাকে ভালবাসি ৬ বছর ধরে। বিয়ের এক বছরের মাথায় ও মারা গেলো। ৬ বছরের অপেক্ষা,,আক্ষেপ সব সব নষ্ট হয়ে গেলো আমার যখন ইহিতা আমার বুকের উপর শুয়ে মারা গেলো। এই ৮ টা মাস প্রতিটা সেকেন্ড ইহিতাকে খুঁজেছি আমি। অনেক ভালোবাসি ওকে আমি। ও আমার মনের জায়গাতেই আছে যে জায়গায় ওর থাকার কথা। কিন্তু এই সত্যির মাঝেও চরম সত্যি হচ্ছে তোমায় আমি বিয়ে করেছি। হ্যা সেইটা নিজের ইচ্ছায় করিনি সেইটা তুমিও ভালো জানো। কিন্তু আমার ইচ্ছা অনিচ্ছায় তো তোমার জীবন টা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ইহিতা আজ নেই কিন্তু ওর স্মৃতি তো থাকবে আমার কাছে সারাজীবন। তোমায় বিয়ে করেছি কষ্ট দেওয়ার জন্যে নয়। কিন্তু সেই কষ্ট টাই তুমি পাচ্ছো। তোমায় কষ্ট দেওয়ার কোনো অধিকার নেই আমার।

-এতদিন তাহলে কোথায় ছিল আপনার এই কথাগুলো? নাকি এতদিন আমি ছিলাম না? ইশান জীবন কাউকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়না কিন্তু আপনাকে দিয়েছে। আমাকে কি আপনার যোগ্য মনে হয়না? নাকি আমি ইহিতা আপুর মতো আপনাকে ভালোবাসতে পারিনি? (ইশানকে জড়িয়ে ধরে অদৃকা)
-ইহিতার মতো করে ভালোবাসা লাগবে না তুমি তোমার মতো করেই ভালোবেসো। (চোখের পানি মুছে ইশান)
-কাঁদছেন কেন আপনি? (ইশানের দিকে তাঁকিয়ে অদৃকা)
-নাহ এমনি। (বিছানা থেকে উঠে ইশান)
-আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাই না?
-না। তুমি আমায় কষ্ট দেওয়ার কে বলো তো? স্রষ্টা চান এমনটাই হোক তাইই হয়েছে।
-ইশান আপনি আপনার মতো থাকুন। আর বিরক্ত করব না আপনাকে। আমি জানি আপনি কতটা ভালোবাসেন ইহিতা আপুকে যার কারণে এসব আপনি মেনে নিতে পারছেন না। সমস্যা নেই এইভাবেই থাকব আমি সারাজীবন। শুধু আপনার সাথে থাকতে দিলেই হবে আর কিছু লাগবেনা। ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো। (অদৃকা পিছু হাঁটতে নিলে ইশান অদৃকাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে)

অদৃকার মাথা ইশানের বুকের সাথে বারি খায়। চুলগুলো খুলে গেছে। ইশান অদৃকাকে বলল

-ইহিতা আমার অতীত আর তুমি বর্তমান। মানুষ বর্তমানকে নিয়ে বাঁচতে পারে, অতীতকে নিয়ে নয়। অতীত মানুষকে তিলে তিলে নিঃস্ব করে দেয়। আজ আমার ইহিতা যদি থাকতো তোমার বদলে তাহলে হয়ত ও বলত ইশান তুমি ঠিক করছোনা। তোমার সুখ দেখতে চেয়েছিলাম আমি, চোখের পানি নয়। ইহিতা আর তোমার মধ্যে তফাত টা কি জানো? ইহিতা ছিল আমার প্রথম প্রেম আর তুমি প্রথম বন্ধু। মানুষ কখনই এই দুইটা জিনিস ভুলতে পারেনা। তুমি থাকলেও যেমন আমি ইহিতাকে ভুলতে পারবোনা তেমনি তোমায় ছাড়া সামনে চলতে পারবোনা। ইহিতাকে ভুলাও আমার পক্ষে সম্ভব নয় আর তোমাকে কষ্ট দেওয়াও আমার দ্বারা সম্ভব না। হয়ত তুমি আমার হবে বলেই এত আয়োজন।
-এত পাগল ছিলেন আপনি ইহিতা আপুর জন্য? (শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো অদৃকা)
-থাক সেইসব বাদ দাও। আর কোনোদিন ইহিতার জিনিসপত্র ধরো না।
-না ধরবোনা।
-হিয়াকে সবসময় নিজের মেয়ের মতো আদর করো। কখনো ওকে বুঝতে দিও না যে তুমি ওর মা নও।
-কি বললেন আপনি? আমি হিয়ার মা না তো কে ওর মা? (রেগে গিয়ে অদৃকা)
-ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো।
-যান।
-তুমি?
-ঘুমাবোনা।

ইশান অদৃকাকে বিছানায় এনে মাঝে শোয়ালো আর হিয়াকে দেখলো একটু। এরপর ইশান অদৃকাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। ইশানের দিকে তাঁকিয়ে আছে অদৃকা। আর মনে মনে বলছে এই ছেলেটাকে আর কোনোদিন কষ্ট দেওয়া যাবেনা। জীবনের বড় কষ্ট টাই পেয়েছে ও! আর ইহিতার নাম বলবেনা অদৃকা ইশানের সামনে। এরপর অদৃকাও ঘুমিয়ে পরলো।

সকালে অদৃকা ঘুম থেকে উঠে দেখে ইশান আর হিয়া দুইজন ই ঘুমাচ্ছে। অদৃকা উঠে যায়। অদৃকা ফ্রেশ হয়ে ইশানের জন্য খাবার রেডি করে। তিন্নি আজ অদৃকার মুখে অন্যরকম খুশির ঝলক দেখতে পাচ্ছে। তিন্নি রান্নাঘরে গিয়ে অদৃকাকে জিজ্ঞেস করলো

-ব্যাপার কি? লাভ বাইট নাকি অন্য কিছু?
-কিছুইনা বউমনি। (হেসে দিয়ে অদৃকা)
-ইশান কই?
-ঘুমায়।
-উঠে নাই?
-না।
-ডেকে দাও। অফিস যাবেনা। কয়টা বেজে গেছে।
-হ্যা বউমনি যাচ্ছি। তুমি একটু দেখো এগুলো!

অদৃকা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দেখলো ইশান নামছে হিয়াকে কোলে নিয়ে। অদৃকা এগিয়ে গিয়ে হিয়াকে কোলে নিলো। ইশানকে জিজ্ঞেস করলো

-অফিসে যাবেন না?
-না।
-কেন?
-পরে বলবো। জুস দিয়ে যাও।
-দিচ্ছি। শরীর খারাপ না তো আবার!
-আরে না। হিয়াকে দিয়ে যাও আমার কাছে।

অদৃকা ইশানকে জুস এনে দিলো। ইশান ইশানের PA কে ফোন করে বলল আগামী ৭ দিন সে অফিসে যাবেনা। সব যেন ম্যানেজ করে ম্যানেজার আর তানমনা (ইশানের PA) মিলে। অদৃকা ইশানকে জিজ্ঞেস করলো

-৭ দিন যাবেন না কেন?
-বলবো তো! ব্রেকফাস্ট সার্ভ করো
-করছি আসেন।

সবাই মিলে এক সাথে ব্রেকফাস্ট খেতে বসলো। ইশান খাওয়ার মাঝে সবাইকে বলল

-আমি আজ রাতের ফ্লাইটে কক্সবাজার যাচ্ছি অদৃকা আর হিয়াকে নিয়ে।
-সবাই অবাক হয়ে গেলো সাথে অদৃকাও।
-আমরাও তাই ভাবছিলাম তোর বাইরে যাওয়া দরকার। দেশের বাইরে যা।(আয়মান)
-না ভাইয়া। হিয়া বড় হলে বাইরে যাওয়ার প্ল্যান করবো।
-অফিসে তাহলে আমি বসছি। তুই ঘুরে আয়।(মিস্টার মির্জা)
-হুম।

চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_23
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

ইশান অদৃকাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে এই কথা ভেবেই অদৃকা আনন্দে লাফাচ্ছে। অদৃকা ব্রেকফাস্ট টেবিল থেকে হিয়াকে নিয়ে ঘরে যায়। ইশান খাওয়া শেষ করে ঘরে যায়। ইশানকে দেখে অদৃকা ইশানের কাছে এগিয়ে যায় হিয়াকে কোলে নিয়ে। অদৃকা ইশানকে জিজ্ঞেস করে

-আমরা কি সত্যিই outing এ যাচ্ছি?
-হুম।
-বিশ্বাস হচ্ছেনা!
-হিয়াকে আমার কাছে দিয়ে তুমি রেডি হও। বিশ্বাস হওয়া লাগবেনা।
-যাবো তো রাতে। এখন কিসের রেডি?
-কিছু লাগলে বলো অর্ডার করে দেই। আর কাপড় গুছাতে হবেনা?
-হ্যা তা তো হবেই।
-সেগুলোই করো এখন। আমি হিয়াকে দেখছি। (হিয়াকে কোলে নিয়ে ইশান)
-আচ্ছা।

অদৃকা যাওয়ার জন্য সম্পুর্ন তৈরি। সন্ধ্যার পর ইশান,,অদৃকা আর হিয়াকে নিয়ে রেডি হয়ে নিচে নামলো। ইশান হোয়াইট শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পরেছে। অদৃকা ব্ল্যাক শাড়ি আর গা ভর্তি গহনা। হিয়াকে অদৃকা টি শার্ট আর শকস পরিয়েছে। তিন জনকেই দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইশান এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর ইশান অদৃকা পেছনে বসে আছে। ইশানের কোলে হিয়া। ইশান হিয়ার সাথে কত কথা বলছে। অদৃকা সেই কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর হাসছে। ইশান অদৃকার দিকে এক নজর তাঁকিয়ে আবার হিয়ার সাথে মজা করা শুরু করে। ১ ঘন্টা পর ইশান এয়ারপোর্ট গিয়ে পোঁছালো আর সব ফর্মালিটি মেইন্টেইন করে প্লেনে উঠলো অদৃকা আর হিয়াকে নিয়ে। বিমান ফ্লাই করার পর বেশিক্ষণ লাগেনি ওদের কক্সবাজার পোঁছাতে। মধ্যরাতে হিয়াকে আর অদৃকাকে নিয়ে ইশান বুক করা হোটেলে উঠে। হোটেল রুমে গিয়ে ইশান হিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দেয় কারণ হিয়া ঘুমিয়ে গেছে। এরপর ইশান আর অদৃকা ফ্রেশ হয়। ইশান কফি খাচ্ছিলো তখন অদৃকা ভেজা চুল নিয়ে ইশানের পাশে দাঁড়ালো। ইশান কফির মগটা রেখে অদৃকার সামনে গেলো। অদৃকার কাঁধে হাত রেখে বলল

-এত রাতে গোসল না করলেও পারতে। ঠান্ডা লেগে যাবে।
-করে ফেললাম। একা একা কফি খাচ্ছেন কেন?
-তোমারও আছে। ড্রেসিং এর উপরে দেখো।
-নিয়ে আসছি।

ইশান আর অদৃকা দুইজন মিলে কফি খেলো আর গল্প করলো অনেক। ইশান বেশিরভাগ ঈ ইহিতার কথা বলেছে অদৃকাকে। কিন্তু অদৃকা রাগ হয়নি বরং আরো জানার আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রায় ভোর তখন অদৃকা আর ইশান ঘুমাতে যায়। দুইজন এক সাথেই শুয়ে পরলো। ইশান অদৃকার হাত ধরে ঘুমিয়ে যায়। আর অদৃকা হিয়ার উপর হাত রেখে শুয়ে পরে।

সকালে ইশান ঘুম থেকে জেগে দেখে অদৃকা এখনো উঠেনি। ইশান এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে অদৃকার দিকে। অদৃকা আড়মোরা ভেঙ্গে জেগে দেখে ইশান হাতের উপর মাথা দিয়ে অদৃকার দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইশান তো খেয়াল করেনি অদৃকা জেগে গেছে। অদৃকা ইশানের নাকের মাথা ধরে খুব জোরে একটা টান দেয় আর উঠে যায়। ইশান নাক আংগুলে ধরে বসে থাকে। অদৃকা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইশান ওইভাবেই নাক ধরে বসে আছে। অদৃকা ইশানের সামনে যাওয়ার সাথে সাথেই ইশান অদৃকাকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় আর অদৃকার হাত চেপে ধরে। অদৃকা হতভম্ব হয়ে যায়। ইশান অদৃকার নাকের উপর নাক রেখে বলে

-আমার নাক ধরে টান দিয়েছো! এর শাস্তি কি হতে পারে জানো?
-যাই হোক আমি নিতে প্রস্তুত।
-রাতে দিবো এখন নয়। হিয়া উঠে গেছে। চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
-আগে তো আমায় উঠতে দিন নইলে কিভাবে উঠবো?
-আচ্ছা উঠো।

ইশান টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে হিয়া আর অদৃকাকে নিয়ে বের হয়। অদৃকা হাফ জিন্স,,টি শার্ট আর লং কোটি পরেছে। চুলগুলো ছাড়া। ইশানের কোলে হিয়া আর অদৃকা ইশানের হাত জড়িয়ে ধরে আছে। সি বিচ এ গিয়ে দুইজন মিলে অনেক আনন্দ করলো। অনেকক্ষণ মজা করে দুইজন হোটেলে ফিরে এলো। ফ্রেশ হয়ে ভ্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইলো অদৃকা। ইশান পিছু গিয়ে অদৃকাকে জড়িয়ে ধরলো।

চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#part_24 & #last_part
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

অদৃকা আনমনে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তখন ইশান অদৃকাকে জড়িয়ে ধরলো পেছন থেকে। অদৃকা কেঁপে উঠলো। অদৃকা পেছন থেকে ঘুরে তাঁকালো ইশানের দিকে। ইশানের চোখে মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অদৃকাকে কাছে পাওয়ার আকুলতা। অদৃকা বিছানায় তাঁকিয়ে দেখছে হিয়া ঘুমিয়ে আছে। অদৃকা ইশানের গলা জড়িয়ে ধরলো। ইশানের নিঃশ্বাস পরছে অদৃকার চোখে আর মুখে। অদৃকা ইশানকে বলল

-বাবুর এক বছর হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। আমি চাই হিয়ার জন্মদিন ধুমধাম করে উদযাপন করা হোক। আর ইহিতা আপুর মৃত্যুবার্ষিকী গ্রামে করব। এখানে নয়
-আমিও তাই ভাবছিলাম। হিয়ার এক বছর পূর্ন হওয়ার দিন থেকে ঠিক ৭ দিন পরেই তো ইহিতার মৃত্যুবার্ষিকী।
-এই জায়গায় কতদিন থাকছি?
-মাত্রই তো আসলাম। এখনি যাওয়ার চিন্তা করলে কিভাবে হবে?
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-হুম
-আপনি কি শুধু দায় সারতে আমায় মেনে নিয়েছেন নাকি ভালোবেসে?
-ভাবতে হবে!(অদৃকা কে রাগানোর জন্য এই কথা বলল ইশান)
-আচ্ছা ভাবুন। (ইশানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে দাঁড়ালো অদৃকা)
-ভাবছি আরেকটা বিয়ে করি তাহলে হ্যাট্রিক হয়ে যাবে। আবার এইটাও ভাবছি এইবার যাকে বিয়ে করব তার ঘরে একটা ছেলে সহ করব। কি বলো? (বিছানায় শুয়ে ইশান অদৃকার দিকে তাঁকিয়ে কথাগুলো বলল)

অদৃকা ইশানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইশানের বুকের উপর শুয়ে ইশানকে জড়িয়ে ধরলো আর ইশানকে বলল

-সেইদিন আর ইশান মির্জা দুনিয়াতেই থাকবেনা।
-তাহলে কোথায় যাবে? (ইশান অদৃকাকে জড়িয়ে ধরে)
-ওপারে আর সাথে অদৃকা আর হিয়া।
-থাপ্পর মারবো আবার এই কথা বললে (অদৃকার কথা শুনে রেগে গেলো ইশান) প্রথম ভালোবাসা ধরে রাখতে পারিনি। বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। শেষ ভালোবাসা আর হারাতে চাইনা।
-ইহিতা আপু যেই বাঁধন ছিঁড়ে গেছে সেই বাঁধন তো একদিন আমাকেও ছিঁড়তে হবে।
-অদৃকা চুপ। (ইশান শক্ত করে অদৃকাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।)

অদৃকাও পরম শান্তিতে ইশানকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনে হারিয়ে গেলো ভালোবাসার মায়ার জগতে। অদৃকা ইশান আর হিয়া ৮ দিন কক্সবাজার অনেক আনন্দে কাটিয়েছে। বাসায় ফেরার পর অদৃকা আর ইশানের মধ্যে প্রাপ্তি আর তৃপ্তির একটা সুখ অনুভব করলো তিন্নি। দুজনকে সুখে দেখে তিন্নি নিজের অজান্তে হেসে দেয় আর ওদের জন্য দোয়া করে। এরপর থেকে ইহিতার বাবা অদৃকাকে নিজের মেয়ে বলে ডাকেন। আয়মান অদৃকার ফুপ্পির কাছ থেকে অদৃকার সমস্ত সম্পত্তির উইল এনে দিয়েছে অদৃকাকে। অদৃকা সেইদিনই সব সম্পত্তি হিয়ার নামে উইল করে দেয় আর পেপার আয়মানের কাছেই রেখে দেয়। অনেকদিন পরর মির্জা পরিবারে আবারো আলো জ্বালালো অদৃকা। সবার মুখেই এখন একটা তৃপ্তির হাসি।

সারা বাড়ি মাথায় করে রাখে তিন্নি অদৃকা আর হিয়া মিলে। দুই মা এক মেয়ের পিছু ছুটে আর চেঁচামেচি করে। ইহিতার মায়া আস্তে আস্তে কাটাচ্ছে ইশান কিন্তু কোনোদিন ইহিতাকে ভুলবে না ইশান। আজও ইহিতাকে মনে করে রাত জাগে ইশান,, চোখের পানি ফালায় ইশান। অদৃকা বিছানায় শুয়ে শুয়ে তখন কাঁদে আর ইশানকে দেখে। বাঁধা দেয়না অদৃকা ইশানকে। হিয়াও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। অদৃকার অস্তিত্ব জুড়ে শুধু ইশান আর হিয়া।

৬ বছর পর…….

– ওই আমাকে সুন্দর লাগছে তো? নাকি বুড়ি হয়ে গেছি? (শাড়ির দিকে তাঁকিয়ে ইশানকে কথাটা জিজ্ঞেস করলো অদৃকা)
-অদৃকা এইটা কি বললা? তুমি এত তারাতারি বুড়ি হয়ে যাবা? (ব্লেজার ঠিক করে ইশান)
-তুমি এখনো আগের মতই স্মার্ট আছো। আর আমিই আনস্মার্ট হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
-ওহ মাম্মাম come on!! আর কত বলবা এক কথা? (হিয়া ঘরে ঢুকতে ঢুকতে) আমার ফ্রেন্ডস এর মাম্মিরা বলে অদৃকা মির্জা অনেক কিউট আর অনেক সুন্দর।আর আজ যখন তোমায় এভাবে সবাই দেখবে তখন কি হবে আমি সেইটাই ভাবছি। আচ্ছা মাম্মাম আমি Doraemon এর গেজেট দিয়ে ভবিষ্যৎ ঘুরে এসে তোমায় বলছি।
-হিয়া তুমি আবারো বেশি কথা বলছো! এত কথা কি তোমার ফ্রেন্ডস রা বলে? (চোখ রাঙিয়ে বলল অদৃকা)
-চলো আমার ফ্রেন্ডস রা নিচে ওয়েট করছে।
-মামনি পাপাকে কেমন লাগছে? (হিয়ার দিকে তাঁকিয়ে বলল ইশান)
-আমার মাম্মাম আর পাপা world best। তাদের সুন্দর লাগবেনা তো কাদের লাগবে? কিন্তু আমি ভাবছি আমি এত কালো কি করে হলাম?
-আর এক মুহূর্ত এই মেয়েকে এখানে রাখা যাবেনা। এত কথা কেমনে বলতে পারে? আমার কোলে আসো। কেক কাটবে চলো। লেট হয়ে যাচ্ছে। (অদৃকা হিয়াকে কোলে নিয়ে)
-আমার প্রিন্সেসকে অনেক কিউট লাগছে।
-ড্রেসটা তো মাম্মাম এনে দিয়েছে তাই মাম্মাম এর মতো কিউট লাগছে। বুঝেছো পাপা?
-কেন তোমার পাপা কিউট না? (মুখ গোমড়া করে ইশান)
-বউমনি বউমনি (তিন্নিকে জোরে জোরে ডাকছে অদৃকা)
-কিরে কি হলো? নিচে আয়। (তিন্নি ঘরে ঢুকে)
-বউমনি এই পাগল দুইটাকে সামলাও প্লিজ নয়ত আমাকে কোথাও রেখে আসো।
-কেন আবার কি করেছে ওরা? (হাসতে হাসতে আয়মান) মামনি আবার কি করেছো তুমি? আজকেও মাম্মামকে রাগিয়ে দিয়েছো? (হিয়াকে কোলে নিয়ে আয়মান)
-আমি রাগাতে চাইনি তো বড় আব্বু। মাম্মাম এমনিতেই রেগে যায় আর বড় আম্মুর (তিন্নি) হেল্প নেয় আমাকে থামানোর জন্য।
-হাহাহাহা। আমার বুড়িটা দিন দিন পেঁকে যাচ্ছে ।(আয়মান হিয়ার গালে চুমু দিয়ে)
-ধ্যাৎ বড় আব্বু কি বলো? বুড়ি তো হচ্ছে মাম্মাম।

এই কথা বলেই আয়মানের কোল থেকে হিয়া নেমে দৌঁড়ে নানুভাই আর দাদুভাইয়ের কাছে চলে যায়। ইশান সহ সবাই মুখ চেপে হাসছে আর অদৃকার মাথায় আগুন। ইশান হঠাৎ অদৃকাকে কোলে তুলে নেয় আর নিচে নিয়ে আসে। আজ হিয়ার সপ্তম জন্মবার্ষিকী। হিয়ার জন্য অদৃকা আর কোনো সন্তান নেয়নি। ইশান আর হিয়াকে ঘিরেই এখন অদৃকার জীবন। ইশান অফিস থেকে ফেরার পর অদৃকা আর হিয়ার মুখ দেখেই সব ভুলে যায়। হিয়া জানেনা ইহিতা নামে কেউ তার আসল মা। হিয়া ইশান আরর অদৃকাকে সবসময় world best parents বলে। অদৃকা কেঁদে দেয় তখন আর হিয়াকে জড়িয়ে ধরে। কোনো কিছুর অভাব আর অপূর্নতা নেই ইশান আর অদৃকার সংসারে। তবে ইশান সবসময় ইহিতার কবরের পাশে বসে কাঁদে। অদৃকা তখন ইশানকে জড়িয়ে ধরে। এভাবেই অদৃকা সবসময় ইশানকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে। ইশান ওর জীবনে অদৃকার ভূমিকা কোনোদিন অস্বীকার করবেনা। এখনো ইশান খোলা রাস্তায় হেডলাইটের আলোতে বসে অদৃকাকে নতুন করে চায়। নতুন করে প্রপোজ করে অদৃকাকে। তখন অদৃকা শাড়ির আচল ধরে ইশানের মায়াভরা মুখের দিকে তাঁকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে দেয়।

এভাবেই যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক ইশান আর অদৃকার অমর আর পবিত্র প্রেম। কেমন হয়েছে জানাবেন। ট্রাজেডির মধ্যে লিখেছি। জানিনা কে কিভাবে নিবেন। তবে ভালো এন্ডিং দিতে চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here