পালিয়ে বিয়ে – পর্ব ২৪(শেষ)

0
526

#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_24
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

অর্নীল গোসল করতে যাওয়ার পর মিম অর্নীলের শার্ট প্যান্ট আয়রন করলো। অর্নীল গোসল থেকে বেরিয়ে মিমকে বলল

-শার্টটা পরিয়ে দাও।
-আপনার হাতে কি হয়েছে? 😏😏
-আচ্ছা আমিই পরছি। (শার্টটা হাতে নিয়ে)
-না থাক আমিই দিচ্ছি পরিয়ে।

এরপর মিম অর্নীলের শার্ট পরিয়ে দিল আর প্যান্ট অর্নীল নিজে পরেছিলো। চুল ঠিক করে রেডি হয়ে দুইজন একসাথে নিচে নামলো।

-গুড মর্নিং (অনু)
-মর্নিং দি। আম্মু কোথায়? (চেয়ার টান দিয়ে বসে)
-আসছে। ওই তো চলে এসেছে।
-বস আম্মু।
-আজকে অফিস যাচ্ছো? (মিসেস চৌধুরী)
-হ্যা মা। অফিসের স্টাফরা আমি না থাকাতে উল্টাপাল্টা কাজ করছে। আজকে গিয়ে সবগুলোকে ধোলাই করব।
-শুরু হয়ে গেল বাঘের বাঘ বন্দি খেলা। (মুখ ভেংচিয়ে মিম)
-কিছু বললা? (অর্নীল)
-আরে না। নিন খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে নয়ত।
-হুম।

এরপর অর্নীল খেয়ে অফিসে চলে যায়। মিম খাবার খেয়ে ঘরে যায়। ঘরের ফুলগুলো এখনো কত তাজা। মিম সবগুলো ফুল ছুঁয়ে দেখলো আর বিছানাটা ছুঁয়ে দেখলো।

-চৌধুরী ছাড়া মিমের জীবন সম্পুর্ন অর্থহীন। (মনে মনে বলল মিম)

মিম ঘর গুছাচ্ছিলো আর তখন অনু এলো মিমের ঘরে।

-এই মেয়ে কি করছো? (অনু)
-বসো দি। ঘর টা গুছাচ্ছি।
-সেইটা তো দেখতেই পাচ্ছি৷ কালকে ভাই উলটাপালটা কিছু করেনি তো? (বসতে বসতে অনু)
-মুচকি হেসে মিম মাথা নাড়ালো।
-ঠিক হয়ে গেছে দেখেছো। ও এমনি মেঘের মত। কখন কি করে বোঝাই যায়না।
-দি একটা কথা বলার ছিল?
-হ্যা বলো
-আমায় নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যেতে পারবে ওকে না জানিয়ে?
-ডাক্তারের কাছে কেন? তাও ভাইকে না জানিয়ে? (অবাক হয়ে অনু)
-দি আসলে আমি আবার কনসিভ করতে চাই। (হাতের আঙুল মোচড়াতে মোচড়াতে মিম)
-এইটা হয়ত এখন খুব বিপদজনক হবে।
-কিন্তু আমি চাই দি। একটা ছোট্ট শরীর যে আমার মধ্য দিয়ে বড় হবে,,আমাকে মা ডাকবে,,ছোট ছোট হাত দিয়ে আমায় ছুঁবে,,সারাবাড়ি মাতিয়ে রাখবে। প্লিজ দি একটু নিয়ে চলনা প্লিজ। কথা দিচ্ছি বিপদজনক হলে আমি বেবি নিব না। (অনুনয় বিনয় করে মিম)
-আচ্ছা ঠিক আছে। এখনি কি যাবে?
-হ্যা উনি আসার আগেই ফিরে আসতে হবে।
-আচ্ছা রেডি হও। আমি আম্মুকে ম্যানেজ করছি।
-থ্যাংক ইউ দি। (অনুকে জড়িয়ে ধরে মিম)

অনু আর মিম মিলে বাইরে বেরিয়ে গেল। গার্ডদের বলে গেল অর্নীল যাতে না জানে যে আমরা বেরিয়েছি। অনুর গাড়িতে করে ওরা হাসপাতালে গেল। একজন বিশিষ্ট গাইনী বিশেষজ্ঞ এর কাছে মিম যা যা টেস্ট করানোর সব করালো। সর্বশেষে ডাক্তার মিমকে চেকাপ করে বললেন

-কোনো ঝুঁকি নেই আপনার। আপনি চাইলেই মা হতে পারেন।
-খুশিতে মিম কেঁদেই দিল। ধন্যবাদ ডক্টর।
-ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।

রিপোর্ট গুলো এনে মিম কাবার্ডের ভেতর রেখে দিল যাতে অর্নীল না দেখে৷ মিম খুশিতে কি করবে বুঝতেই পারছেনা। মিম হাসপাতাল থেকে এসে অর্নীলকে ফোন দিল

-কি করছেন?
-ফাইল দেখছি। তুমি কি করছো?
-কিছুনা। খেয়েছেন কিছু?
-হুম। শৈলি কাচ্চি করে নিয়ে এসেছিলো আমার জন্য সেগুলোই খেলাম।
-কিহ? ওর হাতের রান্না আপনি খেয়েছেন? (বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় মিম)
-রেগে গেছে। (মনে মনে অর্নীল)
-কথা বলছেন না কেন😠😠😠😠
-আসলে শৈলি এতকরে বলল না করতে পারলাম না। বিশ্বাস কর একটুও খেতে চাইনি কিন্তু বাধ্য হয়েই খেতে হয়েছে। তবে খাবারটা খুব টেস্টি ছিল। (হুদ্দাই মিথ্যা কথা)
-ওহ তাইনা? এক্ষুণি বমি করে সব ফেলে দিন। আপনি দরকার হলে না খেয়ে থাকতেন কিন্তু আপনি অন্য মেয়ের রান্না কি করে খেতে পারলেন জবাব দিন আমায়😠😠😠😠(মিম রেগে আগুন)
-কি করব বল আমার তো আর কেউ নেই যে রান্না করে খাওয়াবে। 😉😉😉
-ওকে বাই।

মিম রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিল। আধা ঘন্টার মধ্যে চিকেন বল আর স্যান্ডুইচ বানিয়ে অনুর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল মিম। অফিসে মিম অগ্নিমূর্তি হয়ে ঢুকছে আর সবাই যে সালাম দিচ্ছে সেই খেয়াল নেই মিমের। শৈলি মিমকে দেখে হতভম্ব। শৈলিকে দেখে মিম আরো রেগে গেল। কোনো কথা না বলে মিম অর্নীলের কেবিনে ঢুকে গেল। মিমকে দেখে অর্নীল অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে৷

-তুমি এই সময়? তাও আমার অফিসে? (চেয়ার থেকে উঠে গেল অর্নীল)
-কেন আসতে পারিনা? 😠😠😠
-এখনো দেখি রেগে আছে (মনে মনে অর্নীল) হাতে কি?
-আপনার খাবার।
-আমি তো খেয়েছি। আর কত খাব। শৈলির কাচ্চিই তো…… (শেষ করতে পারল না কথা)
-চুপ একদম। শৈলির কাচ্চি খাওয়াচ্ছি। এক্ষুণি আপনি সব বমি করে ফেলে দিন।
-পাগল হয়ে গেল নাকি? না আর রাগানো যাবেনা (মনে মনে অর্নীল) শোনো জান এইভাবে চাইলেই তো আর বমি করা যায়না। একবার যখন খেয়েই ফেলেছি তাহলে আর কি!!
-এক্ষুণি আমার আনা খাবার খাবেন। হা করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
-আবার খেতে পারব না। একটু আগেই তো খেলাম (মিথ্যে কথা। কাজের প্রেসারে অর্নীল কিছুই খেতে পারেনি)
-Anyway আপনার চেহারা কিন্তু বলছেনা আপনি খেয়েছেন।
-চেহারায় লেখা থাকে নাকি খেয়েছি কি না? (ভ্রু কুঁচকে অর্নীল)
-হ্যা থাকেই তো।
-শৈলি? শৈলি? (মিম শৈলিকে ডাকছে)
-তুমি শৈলিকে ডাকছো কেন? (সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে অর্নীল)
-জ্বি ম্যাম? (কেবিনে এসে শৈলি)
-উনি কি কিছু খেয়েছেন লাঞ্চ এ?
-Oh sheet!! (বিপরীত দিকে ঘুরে অর্নীল)
-না তো ম্যাম। স্যার অনেক বিজি তাই খাওয়ার সময় পায়নি। অনেকবার বলেছি খেতে কিন্তু খায়নি।
-ওকে থ্যাংকস। যাও তুমি।

শৈলি চলে যাওয়ার পর মিম অর্নীলের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। অর্নীল ভ্রু চুলকাচ্ছে।

-কি সমস্যা কি তোমার? এইভাবে তাঁকিয়ে আছো কেন? (ল্যাপটপ হাতে নিয়ে অর্নীল)
-আপনি নাকি কাচ্চি খেয়েছেন? (ভ্রু উঁচু করে মিম)
-নিজের বউয়ের কাছে প্রেস্টিজের বারটা বেজে গেল (বিড়বিড় করে অর্নীল)
-কি বিড়বিড় করছেন? (চিল্লিয়ে মিম)
-কিছু নাহ (জবাবটা যে কি দেই? মনে মনে অর্নীল)
-হইছে চেহারার এমন করতে হবেনা। খেয়ে নিন আগে।
-তুমি খেয়েছো?
-হুম। শৈলির কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিলো তাই খাবার বানিয়ে এনেছি।
-😏😏😏😏😏 আমি তো তোমাকে রাগানোর জন্যই বলেছিলাম।
-আপনি পারেন ই তো এইটা। হা করেন।

অর্নীলের কোলে বসে মিম অর্নীলকে খাইয়ে দিল। খাবার শেষ করে মিমকে বসিয়ে রেখে কথা বলতে বলতে কাজ করছিলো অর্নীল।

চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_25 & #last_part
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

মিমকে বসিয়ে রেখে অর্নীল অফিসের সব কাজ শেষ করলো। মিম ঘুরে ঘুরে অফিস দেখছিলো আর স্টাফদের সাথে কথা বলছিলো। বিকেলের শেষে অর্নীলের সব কাজ শেষ হয়ে যায়। মিমকে জিজ্ঞেস করে

-ঘুরতে যাবে?
-কোথায়? (উল্লাসিত হয়ে মিম)
-Wherever…..!!
-তাহলে চলুন বাইরে কোথাও ঘুরে আসি।
-ফুচকা খাবে?
-কিহহহ? আপনি আমায় ফুচকা খেতে দিবেন? (লাফিয়ে মিম)
-আরে আস্তে। চলো!

এরপর অর্নীল ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। শৈলিকে বলে গেল ম্যানেজারকে সব দেখতে। আর আজকে অফিস দুই ঘন্টা লেইটে অফ করতে।

বাসায় ফোন করে বলে দিয়েছে ওরা বাইরে থেকে ডিনার করে আসবে আর আম্মু, অনুর জন্য ডিনার পাঠিয়ে দিবে। মিম আজকে ছাড়া পাখির মত সব জায়গায় ঘুরলো সন্ধ্যার পর ঘুরতে আসলেই অনেক ভাল লাগে। মিম একসাথে তিন প্লেট ফুচকা খেলো আর অর্নীল একটা ফুচকা খেয়েছে তাও মিমের জোরাজোরিতে নয়ত মেয়েটা রাগ করত! রাতে ডিনার করে বাড়ি ফেরার সময় অর্নীল ড্রাইভ করছে আর মিমকে বলছে

-আজকে অনেকদিন পর দুইজন ভাল সময় কাটালাম।
-হ্যা আমি তো ভীষণ খুশি। থ্যাংক ইউ৷ (অর্নীলের একহাত জড়িয়ে ধরে মিম)
-থ্যাংক ইউ কেন বলতে হবে। বউকে খুশি রাখা তো আমার রেসপন্সিবিলিটি 😜😜
-আপনি না অনেক মজা করেন এখন!
-রেগে থাকি এইটাই ভাল লাগবে?
-মোটেও না।

ওরা কথা বলতে বলতে বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে দুইজন ফ্রেশ হলো আর মিম অনুর ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করলো। অর্নীল এই ফাঁকে অফিসের কিছু ইম্পোর্টেন্ট কাজ কম্পলিট করলো৷

রাত ১২ টায়…….

-কাজ শেষ হয়নি এখনো? (ঘরে ঢুকে মিম)
-এইত শেষ। একটা গুড নিউজ আছে! (ল্যাপটপ টা অফ করে মিমের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-কি? (অর্নীলের পাশে বসে)
-ইন্ডিয়া আর থাইল্যান্ড এ MA Group Of Industry এর ব্রাঞ্চ করছি।
-সত্যিই ভাল খবর। আমায় তো আপনি আজও পর্যন্ত বললেন না এই MA এর মানেটা কি?
-মিম অর্নীল (কাগজগুলো ড্রয়ারে রেখে)
-কিহহহহ?
-হুম।
-আম্মু আর দি বাদে আমি?
-আম্মু আর দি এরও আছে। বাট ভাব্বার বিষয় হচ্ছে এতগুলো কোম্পানি একসাথে সামলাবো কি করে?
-দি কে দায়িত্ব দিলেই তো হয়।
-দি কোনোভাবেই অফিস যাবেনা। কথা একটাই সব ভাই করবে। সাক্সেসফুল হলেও লাইফে প্যারা থেকেই যায়। যাই হোক ঘুমাবো আসো।
-আপনি ঘুমান আমি চেঞ্জ করে আসছি।
-যাও।

মিম চেঞ্জ করে লাইট অফ করে বিছানায় চলে যায়। অর্নীল মিমকে জড়িয়ে ধরে।

-একটা কথা বলি?
-হুম
-আমি আবার কনসিভ করবো।

মিমের কথাশুনে অর্নীল মাথা উঁচু করে মিমের দিকে তাঁকালো। এরপর বলল

-বাট আমি চাইনা। আমার কোনো বেবি লাগবেনা,,তুমি থাকলেই হবে। তুমিই সবকিছু আমার কাছে।
-আমার কিছুই হবেনা। আজকে আপনাকে না জানিয়ে সব টেস্ট করিয়েছি। ডক্টর বলেছে I can be a mother.
-আমাকে না জানিয়ে?? (মিমকে ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে তাঁকালো অর্নীল মিমের দিকে)
-হ্যাঁ ,, জানালে তো যেতে দিতেন না তাই। দি কে নিয়ে গেছিলাম।
-রিপোর্ট গুলো কোথায়?
-এক মিনিট!

লাইট অন করে মিম কাবার্ড থেকে রিপোর্ট গুলো এনে অর্নীলের হাতে দিল। অর্নীল ভাল করে রিপোর্টের প্রত্যেকটা লিখা চেক করছিলো। রিপোর্ট টা পজিটিভ ই ছিল। অর্নীল দেখা শেষে খাটের পাশের টি টেবিলের ওপর রিপোর্ট টা রেখে দেয়।

-তোমার যদি কিছু হয় সত্যিই আমি বাঁচবোনা। (মিমের হাত ধরে অর্নীল)
-আমিও থাকতে পারব না। (অর্নীলকে জড়িয়ে ধরে মিম) আমার দুনিয়ায় আর কেউ নেই আপনি ছাড়া। আপনার জন্যই আজ আমি সম্মানিত।
-বাদ দাও সেইগুলো। বেবি তো লাগবে তাই না? (মিমকে ধাক্কা মেরে বালিশে শুইয়ে)
-না লাগবেনায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!
-😂😂😂😂😂😂

(“ফ্ল্যাশব্যাক” মিম কিভাবে অর্নীলকে ভালবেসে ফেলল)

অর্নীলের সাথে দিনের পর দিন এসএমএস এ কথা বলে মিম ও আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পরছিলো অর্নীলের প্রতি। অর্নীলের প্রেস মিটিং আর প্রেস কনফারেন্স গুলো সব টিভিতে দেখত মিম। একদিন অর্নীল একটা রেডিও শো এর চিফ গেস্ট হিসেবে এসেছিলো। অর্নীলকে RJ প্রশ্ন করেছিলো

-জীবনে প্রেমে কখনো পরেছেন স্যার?
-মনে হয়!!
-অর্নীল চৌধুরীর মুখে এ কথাটা অবাক হওয়ার মত। আর সেই অবাক করা বিষয়টাতেই কিন্তু আমাদের কৌতুহল বেশি। প্লিজ স্যার বলুন কে সে?
-অবশ্যই একটা মেয়ে! (এ কথা বলে অর্নীল হেসে দিল)
-হাহাহাহা। নাম বা কোনো বর্ননা কি বলা যায়না স্যার?
-কোনো এক বৃষ্টির দিনে সেই মায়াবতীর সাথে আমার co accidently দেখা হয়ে যায়। তাকে হেল্প করা আর তাকে নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া ঠিক এতটুকুই যথেষ্ট কারো প্রেমে পরার। মেয়েটার নাম মিম। কিন্তু বলা হয়নি তাকে এখনো।
-স্যার সিরিয়াসলি? কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা। দর্শকদের নিশ্চই সেইটা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
-সে যদি শুনে থাকে তাহলে হয়ত সেই বিশ্বাস করবে।

মিম সাথে সাথে তখন কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেলে। মিমের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। অর্নীল চৌধুরীর মত ছেলে কখনই লাইভে এসব কথা বলতে পারেনা যদি না সে সত্যি সত্যিই তাকে ভালবাসে। অনেক ভাবনা চিন্তা করে রাত সাড়ে তিনটায় মিম অর্নীলকে ফোন দিল। অর্নীল তখন মাত্র বিছানায় গিয়েছিলো ঘুমাবে বলে

-আপনি কি সত্যিই আমায় ভালবাসেন? (নিচু গলায় মিম)
-ভালবাসি কি না জানিনা বাট তোমার ভাবনা থেকে বেরুতে পারছিনা।
-প্লিজ হেয়ালি করবেন না। আপনার মত ছেলে আমার মত মেয়েকে কোনোদিন ভালবাসবেনা আর বাসতে পারেও না।
-সেইটা কোনো ব্যক্তির উপর নয়, মনের উপর dependent. মন কাকে পছন্দ করে ফেলে সেইটাই তো বোঝা যায়না।
-আপনি অর্নীল চৌধুরী,, সব মেয়ের একান্ত চাওয়া। আপনার জন্য যেমন তেমন মেয়ে মানায় না।
-তুমি তো যেমন তেমন নও। আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি আর বিয়েও করতে চাই। (বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্নীল)
-আমি এতিম,,কেউ নেই আমার। চাচা চাচির কাছে মানুষ হয়ে উঠা আর তারা কোনোদিন ই এই সম্পর্ক মেনে নিবেনা। তারা এই জন্যই মেনে নিবেনা কারণ তারা কোনো নিন্মবিত্তের ঘাড়ে আমায় চাপিয়ে দিবে।
-তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করে দেখাবো আর কখনই কোনো কষ্ট পেতে দিব না, I swear.
-আমি কি বলব জানি না! আসলে আমিও এতদিনে আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছি।
-কালকে বনশ্রী দেখা কর।
-বনশ্রী কোথায়?
-ব্যাংক এর পাশে যেই ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট আছে ওইখানে।
-ওকে।

ওকে বলেই মিম ফোন কেটে দেয়। ফোন কাটার কিছুক্ষণ পরেই অর্নীল টেক্সট করলো

-Ei jibone prothom nojor tmr uporei poreche r truly speaking tmi na chailew tmy ami biye kortam r seita jor korei. R thank you
-মিম শুধু হাসলো আর কিছু বলল না।

পরেরদিন অর্নীল মিমের সাথে দেখা করলো। মিম ঘামছে তো ঘামছেই। অর্নীল শুধু দেখছে মিম কতটা নার্ভাস।

-Be cool! এত নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই তো। (অর্নীল মিমকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে)
-মিম অর্নীলের দিকে তাঁকালো আর একটু লজ্জা পেল

ওরা অনেকক্ষন কথা বলল আর অর্নীল মিমকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এলো। এইভাবে ওরা সারারাত ফোনে কথা বলত আর একে অপরকে চিনার চেষ্টা করত। একদিন মিম ওর চাচা চাচির কাছে ধরা পরে যায় আর তার পরেরদিন ওরা মিমকে জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে চায়। সেইদিন ই মিম অর্নীলের সাথে পালিয়ে যায় আর বিয়ে করে।

“বর্তমান”

মাঝরাতে…..

-শুনছেন? (মিম)
-হুম বলো (ঘুম ঘুম চোখে অর্নীল)
-আমি একটু ছাদে যাব। খুব মন চাইছে
-কিহ? এত রাতে ছাদে? (ফোনের ঘড়ি দেখে অর্নীল)
-প্লিজ একটু চলেন। প্লিজ।
-কিসব পাগলামী কর তুমি বল তো? (বিছানা থেকে উঠে অর্নীল)
-প্লিজ (বাচ্চাদের মত করে মিম)
-আচ্ছা আসো (মিমের হাত ধরে নিয়ে যায় অর্নীল)

একমাস পর মিম কনসিভ করে। অনু,,মিসেস চৌধুরী আর অর্নীল তো আছেই যারা মিমকে চোখে হারায়। মিমের নিচে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অর্নীল। তবুও মিম খুশি যে সবাই ওর ঘরে এসে গল্প করে আর ওকে অনেক ভালবাসে। এত ভাল শ্বাশুরি সব মেয়ের কপালে থাকেনা, ভাল দি ও থাকেনা। আর অর্নীলের কথা বাদ ই দিলাম। ও তো world best husband. আমার অহংকার ও! ছয়মাস পর মিমের টেস্ট করে জানতে পারলো টুইন বেবি হবে। এইটা শুনে অর্নীল এত খুশি হয়েছে যে ওইদিন ও মিমকে সারারাত জড়িয়ে রেখেছে। বাড়ির সবাই ও অনেক খুশি। মিমের বেবি হওয়ার পরেই আবির আর অনুর বিয়ে দিবে অর্নীল। মিম প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় মিমের কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছে অর্নীল। রাতে মিম ঘুমাতে পারত না যন্ত্রনায়। অর্নীল ও ঘুমাতো না। দুইজন বারান্দায় বসে গল্প করত আর অর্নীল মিমের পেটে কান পেতে সব ফিল করত। আস্তে আস্তে সেই সময় ও এগিয়ে আসে। অর্নীল আর মিমের একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হয়। বাড়ির সবার মতামত নিয়ে অর্নীল ওদের নাম দিয়েছিল আবিদ আর অবনী।

২ বছর পর……

-দি আমি পাগল হয়ে যাব এদের যন্ত্রনায়। হাঁটা শিখেছে আর দেখো কি কি করছে। ড্রেসিংটেবিল এর উপর কিছু রাখা যায়না ওদের জন্য। দেখো পাউডার দিয়ে পুরো ঘর মেখে ফেলেছে। (হয়রান হয়ে মিম)
-হাহাহাহা। কার ভাতিজা,,ভাতিজি দেখতে হবেনা? পি মনি চলে এসেছে ওদের দেখার জন্য। (দুইজনকে কোলে নিয়ে অনু) এই দুইটা কিউটিকে ছাড়া ওইখানে থাকতে পারিনা। তাই তো প্রতিদিন ই চলে আসি।
-তোমায় বলেছিলাম আবির দা কে নিয়ে এই বাসায় থাকার জন্য কিন্তু তুমিই তো থাকলে না।
-চলেই আসবো। ওদের ছাড়া থাকতেই পারিনা। অর্নীল আসেনি এখনো? আটটা তো বাজে।
-আসতেছে রাস্তায়। শায়লা ঘরটা একটু ক্লিন করে দিয়ে যাও তারাতারি। (চিল্লিয়ে মিম)

অর্নীল ঘরে ঢুকেই দেখে আবিদ অবনীকে মারছে। অর্নীল লুকিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে। অবনী যখন চিৎকার দেয় তখন আবিদ অবনীকে ছেড়ে দিয়ে হেসে দেয়। অর্নীলকে দেখে আবিদ আর অবনী দুইজন অর্নীলের কাছে হামাগুড়ি দিয়ে যায়। অর্নীল দুইজনকে কোলে তুলে কিস করে।

-এই দুইজনের জ্বালায় এখন আমাকে পাগল হয়ে যেতে হবে। কি যে করে সারাদিন! (মিম)
-তোমরা নাকি তোমার মাম্মকে অনেক জ্বালাও? (হাসতে হাসতে অর্নীল)
-সারাদিন তো থাকেন না তাই বুঝেন না।
-বাবাই মাম্মামকে আরো বেশি করে জ্বালাবা। তোমরা জ্বালাবা দিনে আর আমি রাতে😂😂
-আপনি মানুষ হবেন না কোনোদিন? (ভ্রু উঁচু করে মিম)
-আমি কি তাহলে অমানুষ নাকি🙄🙄
-হ্যা তাই। যান গোসল করে আসেন। আমি আম্মুর ঘরে যাচ্ছি। আবিদকে দি’র কাছে দিয়ে আসেন। আমি অবনীকে নিয়ে যাচ্ছি।
-দি কখন আসলো? (অবনীকে মিমের কোলে দিয়ে)
-কিছুক্ষণ আগেই।

মিম অবনীকে নিয়ে চলে গেলো আর আবিদ অর্নীলের কোলে।

-এই দুষ্টু দুইটাকে সামলে আবার বাড়ির সবার খেয়াল কি করে রাখে মেয়েটা? সত্যিই অনেক বেশি অসাধারণ ও। (অর্নীল মনে মনে)

অর্নীল ফ্রেশ হয়ে এসে বেডরুমে দুইজনের সাথে খেলা করে আর মিমকে বারবার রাগাচ্ছে অর্নীল। মিম দুইজনের ড্রেস পালটে দিচ্ছে আর অর্নীলকে চোখ রাঙাচ্ছে।

-মেয়েটা ঠিক তোমার মতই রাগী হয়েছে তাই তো আবিদের কাছে মার খায়। শুধু আমিই পারলাম না তোমায় মারতে। (অর্নীল)
-কিহহহহহহহ? আপনি আমায় মারার হুমকি দেন? 😠😠
-বাচ্চাদের সামনে বাবা মায়ের ঝগড়া করতে হয়না জান। (মিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অর্নীল)
-ওই দেখেন আবার লেগে গেছে দুইটায়! এইইইইইইইইইই (আবিদ আর অবনীকে ধমক দিয়ে মিম)
-ভয় পাইছি🤣😂🤣😂🤣😂🤣😂। তোমার সাহস কেমনে হয় আমার ছেলে মেয়েদের ধমক দেওয়ার?
-এখন কিন্তু আপনাকেও দিব😠😠
-আবিদ, অবনী বাবাই থামো (অর্নীল)
-আপনার মতই ত্যাড়া! এমনে বললে শুনবেনা।
-ওইইইইইইই আমি ত্যাড়া? 😡😡
-হয় আপনি ওদের মারামারি থামাবেন নয়ত আজকে আমি আপনার বাঁকা রগ সোজা করব।
-😥😥😥 প্রত্যেকটা বাঘের মত স্বামী তার সিংহী বউয়ের কাছে অসহায়।
-আমি সিংহী?😠😠 আজকে থেকে আপনি ওদের নিয়ে থাকেন আর আমি এ ঘরে ঘুমাবোনা। আলাদা ঘুমাবো।

অর্নীল এইবার ঠ্যালা সামলাও😂

অনেক বেশি ভাল লাগার গল্প ছিল আমার এইটা। Deperate love এর পর দ্বিতীয় ভালবাসা আমার এইটা। তাই সুন্দর এন্ডিং দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাকিটা আমার পাঠক/পাঠিকার হাতে। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here