,
-তোর অন্তত একবার ভাবা দরকার ছিল এই রিলেশন করার আগে! ও তোকে ছ্যাঁকা দিল এখন ঠেলা সামলা! আমিই জোশ আছি কোনো রিলেশন নেই আর কোনো ঝামেলাও নেই। (গল্পের নায়িকা)
-তুই তো তুই ই। রিলেশন না থাকলে কি হবে? ভার্সিটির সব ছেলেরা তোর পিছনে ঘুরে। যেমন রুপ আর তেমনি সম্ভ্রান্ত পরিবার তোর! আর কি লাগবে তোর? (নায়িকার বান্ধবী)
-বুঝতে হবে who I am? ইহিতা চৌধুরী। স্ট্যাটাস তো অবশ্যই থাকবে। (চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে গাড়ি থেকে নেমে ইহিতা)
তিথি গাড়ি থেকে নামলো না। ভার্সিটি তে এসে গেছে তবুও গাড়ি থেকে নামছেনা। ইহিতা তিথিকে বলল
-নামবিনা নাকি তোকে সহ গাড়ি লক করে দিব?
-দাঁড়া আসছি। (তিথি)
ইহিতা গাড়ির চাবি আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে ক্যাম্পাসে ঢুকলো। তিথি ইহিতার পেছন পেছন আসছিল। ইহিতা আজকেও লেইট করে ক্লাশরুমে ঢুকেছে আর স্যারের পার্মিশন না নিয়েই ক্লাশরুমে ঢুকে পরে। গিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চে বসে পড়ে। তার ক্লাশের ফার্স্ট বেঞ্চটা তার জন্য বরাদ্দ। কেউ ইহিতাকে কিছু বলার সাহস পায়না। কারণ ইহিতার বাবার কথায় চলে এই ভার্সিটি। আর্থিক সব অনুদান ইহিতার বাবা দেয় এই ভার্সিটির। ইহিতা পড়াশুনার জন্য ভার্সিটি তে আসেনা,,উচ্ছৃঙ্খলতা দেখাতেই আসে। টিচার ক্লাশ করাচ্ছে আর ইহিতা হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছে। এইটা নতুন কিছুনা। প্রতিদিনকার ঘটনা এইটা। সবাই এইসব দেখে অভ্যস্ত।
স্যার ক্লাশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগেই ইহিতা বেরিয়ে গেল। পাশে তিথি বসা ছিল। তিথি ক্লাশ করছিল। ভার্সিটির শিক্ষকেরা আর শিক্ষার্থীরা ইহিতাকে অহংকারী আর বেয়াদব বলেই জানে। কিন্তু কেউ ইহিতার দিকে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পায়না। ভার্সিটির সব ছেলেই ইহিতার জন্য পাগল। ইহিতার বাবার এত আদর পেয়েই ইহিতা বখে গেছে। ইহিতার বাবা কোনোদিন ইহিতার গায়ে ফুলে টোকা লাগতে দেননি কারণ ইহিতার মা নেই। সে যাই হোক,,,ইহিতা ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে বসে জুস খাচ্ছিল। এরপর তিথিকে এসএমএস করে ইহিতা গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষন এইদিক সেইদিক ঘুরে দুপুরে বাসায় আসে। বাসায় সিমি (কাজের মেয়ে) ছাড়া কেউ নেই আর থাকেও না।
-ম্যাম কিছু খাবেন? (সিমি ইহিতাকে জিজ্ঞেস করলো)
-না। এক কাজ করো এসিটা বাড়িয়ে দাও আর এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।
-ওকে ম্যাম।
সিমি চলে যাওয়ার পর ইহিতা চেঞ্জ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। সারাদিন গেমস খেলে সময় পার করে দিল। রাতে আশরাফ চৌধুরী মানে ইহিতার বাবা আসলেন ইহিতার ঘরে।
-মামনি what r u doing now??
-Nothing বাবা। আসো।(উঠে বসে)
-কি করলে সারাদিন?(ইহিতার মাথায় হাত রেখে আশরাফ চৌধুরী)
-গান আর ল্যাপটপ।
-ডিনার করবে এসো। আর তোমার জন্য একটা গিফট আছে। তারাতারি এসো।
-আসছি। (খুশি হয়ে)
ইহিতা নিচে যায়। তখন আশরাফ চৌধুরী ইহিতাকে একটা বড় প্যাকেট দিলেন আর একটা চাবি দিলেন।
-এগুলো কি বাবা? (ইহিতা)
-প্যাকেট তোমার জন্য লেটেস্ট মডেল এর ড্রেস আর নতুন গাড়ির চাবি এইটা।
-সত্যিইইইইইইইইইই? গাড়ি কোথায় বাবা?(অনেক এক্সাইটেড হয়ে)
-গার্ডেনে।
-আমি দেখে আসছি।
পিছু পিছু সিমি আর আশরাফ চৌধুরী ও গেলেন। ইহিতা গাড়ি চালাচ্ছিল আর হাসছিল। তা দেখে আশরাফ চৌধুরী কেঁদে দিলেন। চোখের পানি মুছে তিনি ইহিতাকে নেমে আসতে বললেন। ইহিতা আসার পর দুইজন একসাথে ডিনার করলো আর যে যার মত শুয়ে পরলো।
পরেরদিন সকালে ইহিতা নতুন গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি তে যায়। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে পাশে থাকা কাঁদা দিয়ে একটা ছেলে ইহিতার ড্রেস নষ্ট করে দেয়। ছেলেটা বাইক নিয়ে ঢুকছিল ভার্সিটি তে। ইহিতা রেগে আগুন হয়ে যায় আর ছেলেটার কলার ধরে বলে
-How dare u to spoil my dress? (রাগে ইহিতা দাঁতে দাঁত চেপে আছে)
#চলবে,,,,,,,,,,,,,
,
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_2
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
,
ইহিতার ড্রেসে কাঁদা লেগে যাওয়ার পর ইহিতা ছেলেটার শার্টের কলার ধরলো।
-How dare u to spoil my dress? (রাগী দৃষ্টিতে ইহিতা)
-ম্যাম mind ur self. (অভ্র ইহিতার হাত নামিয়ে শার্ট থেকে)
-What did u say? তুই আমাকে বলছিস এই কথা? এই ছোট লোক তোর এত বড় সাহস কি করে হয় ইহিতা চৌধুরীর সাথে এইভাবে কথা বলার? (চেঁচিয়ে ইহিতা)
-অভ্র বাইক থেকে নামে সাথে ছিল অভ্রর ফ্রেন্ড সে ও নামে। আর ইহিতার এমন আচরণ দেখে সবাই ক্যাম্পাসে জড় হয়।
-এই যে মিস কথা সাবধানে বলুন। আমার বিহেভ ছোট লোকদের মত করিনি যে এইভাবে আমায় অপমান করবেন।
-তুই কি এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট? আগে তো তোকে দেখিনি। আর এই কারণেই তুই জানিস না যে আমি কে? আর তোর কি হাল করতে পারি? (ইহিতার রাগ চরম পর্যায়ে)
-আমার জানার প্রয়োজন নেই। আমি আপনার মত ফ্যাশন শো করতে আসিনি ক্যাম্পাসে । নিজের দিকে তাঁকিয়ে দেখুন কি বাজে লাগছে আবার আপনি অসভ্যের মত চেচাচ্ছেন? (অভ্র)
-তোকে আজ আমি মেরেই ফেলব। (ইহিতা গাড়ি থেকে হকি স্টিক বের করে অভ্রর গায়ে মারার আগেই অভ্র ইহিতাকে থাপ্পড় মারে)
সবাই থ হয়ে যায় প্রিন্সিপাল সহ। কিন্তু কারো আগানোর সাহস নেই।
-কেমন মেয়ে আপনি? মিনিমাম মেয়েদের মত আচরণ নেই তো আপনার মধ্যে! ফালতু সব। (এই কথা বলে অভ্র বাইক নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল)
ইহিতা গালে হাত দিয়ে স্টিল দাঁড়িয়ে আছে। তিথি ইহিতার বাবাকে ফোন দিয়ে ভার্সিটি তে আসতে বলেছে এতক্ষনে। ইহিতার বাবাকে দেখে সবাই সালাম দেয় আর প্রিন্সিপাল এগিয়ে আসেন। ইহিতাকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইহিতার বাবা সামনে গেলেন। কিন্তু ইহিতা নড়ছেনা। এরপর তিথি সব বলার পর ইহিতার বাবা চশমা চোখ থেকে খুলে ভেঙ্গে ফেলেন আর প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞেস করেন ইহিতাকে কোন ছেলে মেরেছে তাকে যেন এক মিনিটে এখানে আনে। প্রিন্সিপাল অভ্রকে ডেকে পাঠালেন। অভ্র ইহিতার বাবার সামনে আসলো।
-তোর সাহস হয় কি করে আমার কলিজার উপর হাত তোলা? যাকে এখনো একটা পিঁপড়া কামড় দেয়নি আর আজ তাকে তুই মেরেছিস? দেখ কি করেছিস আমার মেয়ের? (অভ্রকে থাপ্পর মেরে)
-What is this? এইটা কি ভার্সিটি নাকি কারো বাবার সম্পদ। আর আপনার মেয়ে আমার সাথে কি করেছে সেইটা দেখেননি? না দেখে কেন মারলেন আমাকে?(অভ্র)
-আমার মেয়ে তোকে মেরে ফেলবে তবুও একটা আওয়াজ করতে পারবিনা তুই। কোন সাহসে মেরেছিস আমার মেয়েকে জবাব দে!!
-স্যরি সেইটা আপনার মেয়েকেই জিজ্ঞেস করবেন। আমার ক্লাস আছে ছাড়ুন। (এই বলে অভ্র সেখান থেকে চলে গেল)
ইহিতার বাবা ইহিতাকে গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে গেল বাসায়। ইহিতার গালে অভ্রর তিন আংগুলের দাগ স্পষ্ট ভাবে ফুটে আছে। সিমিকে দিয়ে ইহিতার গালে যত মেডিসিন আছে সব লাগালো ইহিতার বাবা। ইহিতা চুপ করে আছে এখনো। ইহিতাকে কথা বলতে বলছে সিমি আর ইহিতার বাবা কিন্তু ইহিতা কথা বলছেনা। ইহিতা এই প্রথম কারো হাত থেকে মার খেলো। কোনো শিক্ষক কোনোদিন তার দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেনি আর মার দেওয়া তো দূর। কিন্তু অভ্র আজ ইহিতাকে ভার্সিটির সবার সামনে চড় মেরেছে। ইহিতার কাছে এইটা অনেক বেশি যন্ত্রণার লাগছে। এক পর্যায়ে ইহিতা ঘরের সব কিছু ভাংচুর করতে শুরু করে। আশরাফ চৌধুরী ইহিতাকে বলেন
-মা তোর যত খুশি ভাং কিন্তু একটু কথা বল আর একটু শান্ত হ।
-বাবা ওই ছেলেকে আমি আস্ত রাখব না। ও আমায় মেরেছে? ইহিতা চৌধুরীকে মেরেছে ও? শেষ করে ফেলব আমি ওকে। (পাগলের মত করে)
-আমি নিজে ওকে শাস্তি দিব। তুই শুধু একটু শান্ত হ ইহিতা।
-এরপর ইহিতা চুপচাপ বিছানায় গিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখছে। এখনো হাতের ছাপ দেখা যাচ্ছে। এরপর ইহিতা আয়নাও ভেঙ্গে ফেলে। পরে এক মাস ইহিতা ভার্সিটি তে যায়নি। এমনকি বাসা থেকেও বের হয়নি। ওইদিকে অভ্রর ঠিকানা কেউ জানেনা বলে ইহিতার বাবা অভ্রকে কিছু করতে পারেননি।
এক মাস পর ইহিতা ভার্সিটি তে যায়। অভ্র ৪ তলায় আনমনে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইহিতার গাড়ি দেখে অভ্র চমকে যায়। দ্রুত নিচে নেমে আসে অভ্র। ইহিতা একটা বই হাতে নিয়ে ক্লাস রুমের দিকে যায়। অভ্র ইহিতাকে থামায়।
-ইহিতা? (পেছন থেকে অভ্র)
-ইহিতা পেছন ঘুরে রাগী দৃষ্টিতে তাঁকায় অভ্রর দিকে।
-স্যরি সেইদিন আপনাকে থাপ্পড় মেরেছিলাম বলে। আমি চট করে রেগে গিয়ে কি করি আমার খেয়াল থাকেনা। তাই ওইভাবে রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম। আপনি গত একমাস আসেননি ভার্সিটি তে তাই স্যরি বলতে পারিনি। (অভ্র)
-ইহিতা কিছুই না বলে উপরে চলে যায়। ইহিতা আর অভ্র দুইজনেই কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট। কিন্তু অভ্রকে দেখে কেউ বলবে না যে অভ্র স্টুডেন্ট। মনে হয় পড়া লেখা শেষ।
আজ ইহিতা প্রথম বেঞ্চে না বসে ৩ নম্বর বেঞ্চে বসলো আর ইংলিশ ক্লাসটা মনোযোগ দিয়ে করলো। স্যার একটা কোয়েশ্চন করেছিল যেইটার উত্তর অভ্র ছাড়া আর কেউ দিতে পারেনি। সবাই অবাক হয়ে যায় আর লেকচারার নিজে অভিভূত হয়ে যান অভ্রর উত্তর শুনে। ইহিতা তখন উত্তরটা নোট করলো। ইংলিশ ক্লাস শেষ করে সবাই ল্যাব এ গেল কিন্তু ইহিতা বসেছিল। অভ্র বের হওয়ার আগে ইহিতাকে বলল
-যাবেননা ল্যাব এ?
-That’s none of ur business. Just go from here. Otherwise…..
-Otherwise?? (অভ্র ইহিতাকে প্রশ্ন করলো)
-হে ওইদিন কিছু বলিনি বাট এইটা ভেবো না ইহিতা কিছু করতে পারেনা।
-ওকে ভাবলাম না। (এই বলে অভ্র চলে গেল)
ক্লাস শেষ হওয়ার পর অভ্র ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। ইহিতা গাড়িতে উঠতে যাবে তখন এক ভিক্ষুক এসে দাঁড়ালো ইহিতার সামনে। ইহিতা রেগে যায়।
-আমি ছাড়া কি আর কেউ নেই দান করার? আমার কাছে কেন আসলি? (থালা ছুড়ে মেরে ইহিতা)
অভ্রর এইটা দেখে প্রচন্ড রাগ হয়। ইহিতার সামনে দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার একটা নোট বের করে ভিক্ষুককে দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলল।
-গাড়ি,, বাড়ি থাকলেই মানুষ মানুষের মত হয়না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুকুরই হয় যেমনটা আপনি নিজে। (এই কথা বলে অভ্র এক সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে বাইক নিয়ে চলে গেল)
ইহিতা রাগে গাড়ি হাই স্পিডে চালিয়ে বাসায় এলো। ইহিতা তার বাবাকে ফোন করে বাসায় আসতে বলল। ইহিতার বাবা অফিসের সব কাজ ফেলে বাসায় চলে আসে।
-বাবা ওই ভার্সিটি তে হয় ওই ছোট লোকটা থাকবে নয়ত আমি?
-কোন ছোটলোক?
-ওইদিন যে আমায় মেরেছিল।
-ও আবার কি করেছে তোমায়? (রেগে গিয়ে আশরাফ চৌধুরী)
-আজকে ও আমায় কুকুর বলেছে কুকুর। (ভাস ছুঁড়ে মেরে ইহিতা)
-What? আমি এখনি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলছি।
-ওই ছেলেকে ভার্সিটি থেকে বের করে দিন। (আশরাফ চৌধুরী)
-স্যার সেইটা সম্ভব নয়। (প্রিন্সিপাল)
-What? আপনি আমাকে বলছেন সম্ভব নয়?
-স্যরি স্যার। ছেলেটা অনেক মেধাবী আর outstanding personality. ওর মত ভার্সিটি তে সেকেন্ড কপি নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা এইবার ভিপি ইলেকশনে ইহিতা মামনির বিরুদ্ধে অভ্র দাঁড়াবে।
-What? আমার মেয়ের বিরুদ্ধে?
-হ্যাঁ স্যার। তাই আর সেই চান্সটা নেই বের করার। পরে ভার্সিটি র ছেলে মেয়েরা ক্ষেপে যাবে আর কমিশন পর্যন্ত গড়াবে এই ঘটনা। তাই আমি আর রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা। মাফ করবেন।(প্রিন্সিপাল)
ইহিতার বাবা ফোন রেখে দিয়ে ইহিতাকে সব বললেন।
#চলবে,,,,,,,,,,
,
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_3
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
,
প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলা শেষ করে ইহিতার বাবা ইহিতাকে সব খুলে বললেন। ইহিতা রাগে ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙ্গে ফেলে।
-ওই ছেলের সাহস হয় কি করে ইহিতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর? আর বাবা তুমি কিছুই করতে পারছো না?
-মামনি প্রিন্সিপাল যেখানে অনড় সেখানে আমি কি করতে পারি? বাট তুই টেনশন করিস না সবাই তোকেই জয়ী করবে। তুই মাথা ঠান্ডা করে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আয়।
-নো। আমি কোথাও যাব না।
-পাগলামি করিস না ইহিতা। চল আমার সাথে বাইরে যাব।
-রেডি হয়ে আসি?
-যা তারাতারি আসবি কিন্তু।
-ওকে।
ইহিতার বাবা ইহিতার মন ভালো করতে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায় ইহিতাকে। CT max এর সামনে ইহিতা অভ্রকে দেখে আয়মান মির্জা আর মিসেস আয়মান মির্জার সাথে। ইহিতা তার বাবাকে বলে গাড়ি থামাতে।
-বাবা ওই ছেলে এখানে কি করছে? তাও আয়মান মির্জার সাথে? (অভ্রকে দেখিয়ে)
-আয়মান মির্জা? (অবাক হয়ে ইহিতার বাবা) কই দেখি?
-দেখো
-সত্যিই তো আয়মান মির্জার সাথে এই ছেলে। আর এই ক্ষেত মার্কা ছেলেকে দেখ কি স্মার্ট লাগছে। ব্যাপার কি?
-বাদ দাও চলো
এই কথা বলে ইহিতা সেখান থেকে চলে গেলো। আয়মান মির্জা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ইয়াং লিডারশিপ এর মেইন লিডার।
ইহিতা বাসায় এসে ভাবতে লাগলো আয়মান মির্জার সাথে ওই ছেলে কেন? থাকতেও পারে তাতে আমার কি! ইহিতা এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল। তিনদিন পর ভিপি ইলেকশন। ভার্সিটি তে এই নিয়ে অনেক হৈ চৈ হচ্ছে কারণ এই প্রথম ইহিতার বিরুদ্ধে কেউ ইলেকশন করছে। ইহিতা যথারীতি ভার্সিটি তে গিয়ে যা করার তাই করলো। কোনো ক্লাস না করেই বাসায় চলে আসলো। ইলেকশনের আগে পর্যন্ত ইহিতা ভার্সিটি তে যায়নি। ইহিতা ভার্সিটি তে না গেলে অভ্র ক্লাস না করে বাইরে বসে থাকে মন খারাপ করে। এই দুইদিন অভ্র তাই ই করলো কারণ ইহিতা আসেনি। ইলেকশনের দিন ইহিতা আসলো ক্যাম্পাসে। নীল রঙের শার্ট আর বাদামী রঙের প্যান্ট পরে। চুলগুলো খোলা আর সানগ্লাস পরা। অভ্র অনেকক্ষণ তাঁকিয়ে ছিল। তারপর চোখ সরিয়ে নিজের কাজ করলো। ইহিতা আর অভ্রকে একসাথে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু ইহিতা সেই কথা না শুনে দোতলায় গিয়ে ফোনে গেমস খেলছে নিশ্চিন্ত মনে। কারণ ইহিতার কনফিডেন্স আছে ইহিতা জিতবে। সারাদিন ইহিতা একই জায়গায় বসে রইলো। রাতে ইলেকশনের রেজাল্ট পাবলিশ করে প্রিন্সিপাল আর রেজাল্ট ইহিতার বিরুদ্ধে অর্থাৎ অভ্র জিতেছে ইলেকশনে। অভ্র কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই ইহিতার দিকে তাঁকায়। ইহিতা হাতের ফোন ভেঙ্গে ফেলে আর গাড়ি নিয়ে খুব দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। ইহিতার বাবা এই কথা শুনার পর প্রিন্সিপালকে প্রচুর থ্রেড করে। ইহিতাকে তিনি সামলাচ্ছেন। আর অভ্র বাসায় গিয়ে ইহিতার কথা ভাবছে। মেয়েটা কি করছে না করছে এই নিয়ে! খুব বেশি বারাবারি কি হয়ে যাচ্ছে? এসব ভাবতে ভাবতে অভ্র ঘুমিয়ে পরে। পরেরদিন অভ্রকে ব্যাচ আর দায়িত্ব দেওয়া হয় আর শপথ করানো হয়। কিন্তু ইহিতা ভার্সিটি তে আসেনি। অভ্রর মন ভীষণ খারাপ। এইভাবে সাতদিন চলে যায় কিন্তু ইহিতা ভার্সিটি তে আসেনা। এরপর অভ্র ইহিতার বাসায় চলে যায়। ইহিতা অভ্রকে দেখে অবাক তো হয়ই সাথে তেলে বেগুনে জ্বলতে থাকে। অভ্র ইহিতাকে বলল
-ভার্সিটি তে যাও না কেন?
-আমাকে তুমি বলছো কোন সাহসে? (ইহিতা)
-ঝগড়া বাদ দাও। ভার্সিটি তে চলো।
-How dare u to force me? কোন সাহসে এসব কথা আসছে মুখ দিয়ে?
-ভিপি হিসেবে কলেজের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট এর প্রতি আমার দায়িত্ব রয়েছে সো চলো।
-আমি যাব না না না।
-তুমি যাবে যাবে আর যাবে। (ইহিতার হাত ধরে)
-আমার হাত ধরার সাহস কোথায় পেলি ছোটলোক? (রেগে গিয়ে ইহিতা)
-যা খুশি বলো। ওহ হ্যাঁ আজকে থেকে প্রতিদিন ভার্সিটি তে যাবে আর নিয়মিত ক্লাস করবে। আর most importantly এসব ড্রেস আর পরা যাবেনা। যাও তারাতারি চেঞ্জ করে এইটা পরে আসো। (অভ্র একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে)
-My foot. (প্যাকেট টা ছুড়ে মেরে ইহিতা)
-এইটাই যে তোমায় পরতে হবে ইহিতা চৌধুরী।
-বের হ আমার বাসা থেকে। জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার।
-আগে ভার্সিটি তে চলো। আর তুমি যদি স্ব ইচ্ছায় এই ড্রেসটা পরে ভার্সিটি তে না যাও তাহলে আমি নিজের হাতে তোমায় এই ড্রেস পরাবো আর ভার্সিটির সবার সামনে তোমায় কিস করব। বলো কোনটাতে রাজি তুমি?(অভ্র সোফায় বসে)
-How dare u bloody sheet?
-ইহিতা ইনাফ। যা বলেছো বলেছো আর না। সোজা আংগুলে ঘি উঠবেনা। বুঝেছি আঙ্গুল বাঁকা করতেই হবে। (হাত ধরে অভ্র ইহিতার ঘরে নিয়ে গেল ইহিতাকে)
-আমার বাসায় এসে আমার সাথে এই ব্যবহার? তোকে আমি দেখে নেব ফাজিল!(অভ্রর হাত থেকে ড্রেসটা নিয়ে)
-১০ মিনিটে আসো। (ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে)
-ইহিতা দরজা লাগিয়ে দিল।
১৫ মিনিট পর ইহিতা রেডি হয়ে বেরিয়ে আসলো। অভ্র আর সিমি ইহিতার দিকে মুগ্ধ চোখে তাঁকিয়ে আছে।
-এইভাবে তাঁকিয়ে আছো কেন তোমরা? (চেঁচিয়ে ইহিতা)
-ম্যাম কি সুন্দর লাগছে আপনাকে দেখতে! (সিমি)
-চুপ একদম বেয়াদব। যাও এখান থেকে। (ইহিতা সিমিকে ধমক দিয়ে)
-চলো।
-তোকে আমি দেখে নেব অভ্র।
-দেখো। এখন চলো।
অভ্র ইহিতাকে নিয়ে ভার্সিটি তে যায় আর সেকেন্ড বেঞ্চে ইহিতাকে বসিয়ে ও থার্ড বেঞ্চে ইহিতার পেছনে বসে। ইহিতার সামনে গিয়ে বলে
-আজ সবগুলো ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করে তারপর বাসায় যাবা আর এর বিপরীতে কিছু হলে বুঝই তো কি করব!
-তোকে আমি শেষ করে ফেলব অভ্র।
-সে পরে দেখব। আগে ক্লাসগুলো করে, নোট করে বাসায় গিয়ে পরবে। ফোন হাতে দেখলেই খবর আছে।
-জাস্ট মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। তোর কথা শুনতে ইহিতা চৌধুরী বাধ্য নয়।
-হাজারবার বাধ্য।
-অভ্র। (চোখ রাঙিয়ে ইহিতা)
অভ্র পেছনে ছিল তাই আজ ইহিতা সবগুলো ক্লাস ঠিকঠাক মত করেছে। আজকে ভালোই লেগেছে ইহিতার। ইহিতার এমন পরিবর্তনে শিক্ষকরা সহ সবাই খুশি। বেশ প্রানোচ্ছল ভাবেই ক্লাস করেছে ইহিতা। তিথি এসব দেখে পুরো হা হয়ে তাঁকিয়ে আছে অভ্রর দিকে। অভ্রকে ইশারা করে তিথি জিজ্ঞেস করে
-কেমনে সম্ভব?
-অভ্র হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় চাইলেই সম্ভব।
ক্লাস করা শেষে ইহিতা বের হয়ে যায়। অভ্র সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এক ছেলে ভুলে ইহিতার ওড়নায় পারা দেয় যার কারণে ইহিতা টান খেয়ে অভ্রর হাতের উপর পরে যায় আর অভ্র ইহিতাকে ধরে। ইহিতা পরার সাথে সাথেই পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে ওড়নাটা সিঁড়িতে পরে আছে আর একটা ছেলে স্টিল সেখানে হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র ইহিতার দিকে তাঁকিয়ে ওই ছেলের সামনে যায় ইহিতাকে ছেড়ে। অভ্র দেখে বুঝেছে ইচ্ছে করে ছেলেটা এমন করেনি।
-নেক্সট টাইম যেন এমন ভুল না হয়। (ফ্লোর থেকে ওড়না উঠিয়ে অভ্র)
-জ্বি ভাইয়া। (ভয়ে ভয়ে ছেলেটি বলল)
-যাও এখন।
অভ্র ইহিতাকে ওড়নাটা দিল আর বইগুলো উঠিয়ে গাড়ি পর্যন্ত ইহিতাকে দিয়ে আসলো। ইহিতা চলে গেলো অভ্রকে কিছু না বলেই। অভ্র একটু মুচকি হাসলো আর বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
#চলবে……..
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_4
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
,
অভ্র ইহিতা চলে যাওয়ার পর বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়। ইহিতা বাসায় এসে ড্রেস খুলে টুকরা টুকরা করে কাটে। আর সেইগুলো ছাদে নিয়ে উড়িয়ে দেয়। অভ্রকে মনে মনে অনেক বকা দিচ্ছে ইহিতা। এরপর ইহিতা নিজের মত করে এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। এর মধ্যে ইহিতার ফোন বাজলো। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপর পাশ থেকে একটা ছেলে বলল
-কাজটা ভাল করলেনা ইহিতা। এর মাশুল তোমায় গুনতে হবে। (এই বলে ছেলেটা ফোন কেটে দিল)
ইহিতা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কে ফোন করলো আর কেনই বা এসব বলল? ইহিতা আবার কল ব্যাক করে দেখলো কিন্তু ফোন বন্ধ। ইহিতা এসব পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিল। ইহিতার বাবা বাসায় আসার পর একসাথে গল্প করে ডিনার সেরে ইহিতা শুয়ে পরলো। ইহিতা ভাবতেও পারছেনা আগামীকাল ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে!! ইহিতা সকালে ঘুম থেকে উঠে শর্ট ড্রেস পরে ভার্সিটি তে যাবে বলে গাড়ি বের করলো। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর ইহিতা খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করে আর হোল্ডিং এর সাথে লেগে ইহিতার মাথা কেটে যায়। গাড়ি ব্রেক করার কারণ হলো সামনে একটা কার দাঁড় করানো। ইহিতা কপালে টিস্যু ধরে বেরিয়ে আসে। গাড়িটার সামনে যাওয়ার পরেই ইহিতাকে জোর করে সেই কারে বসানো হয়। আর একজনকে ফোন করে বলে ইহিতার গাড়ি ইহিতার বাসায় দিয়ে আসতে। ইহিতা গাড়িতে উঠে অভ্রকে দেখে চমকে যায় আর প্রচন্ড রেগে যায়।
-এই ছোটলোকের বাচ্চা তুই আমায় কেন এইভাবে নিয়ে আসলি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে? (ইহিতা চিৎকার করে)
-একদম কথা কম বলবে। নয়ত মুখে স্কচটেপ মেরে দিব।(অভ্র)
-গাড়ি থামা। I say stop the car. (চিৎকার করে ইহিতা)
এরপর অভ্র আর কোনো কথা না বলে আরো জোরে গাড়ি চালাতে থাকে। কিন্তু ইহিতা অনর্গল চেঁচিয়েই যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ইহিতা গাড়িতে থাকা বটল ছুঁড়ে মারে বাইরে। এতে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু অভ্র তবুও থামলো না।
একটা বাংলোর সামনে গাড়ি পার্ক করলো অভ্র। ইহিতাকে গাড়ি থেকে জোর করে নামালো। কিন্তু ইহিতা নামবে না। এরপর অভ্র ইহিতাকে কোলে করেই ভেতরে ঢুকলো। ইহিতা অভ্রর শার্ট ছিঁড়ে ফেলেছে জিদ্দে। কিন্তু অভ্র কিছুই করছেনা। ড্রয়িংরুম এ নিয়ে অভ্র ইহিতাকে বসালো। এরপর ইহিতার হাতে একটা ল্যাহেঙ্গা দিয়ে বলল
-Quickly যাও আর এটা পরে আসো। Just go fast. উকিল সাহেব চলে আসবেন এখন। (অভ্র)
-উকিল আসবেন মানে? আর তুই এভাবে আমায় এইটা পরতে বলছিস কেন?(চিৎকার করে ইহিতা)
-আজ আমাদের মেরিজ রেজিস্ট্রি হবে। (অভ্র শান্ত গলায় বলল ইহিতাকে)
-What??? এই জানোয়ার তোর সাহস হয় কি করে এসব বলার? ইহিতা চৌধুরীকে বিয়ে করবে তোর মত ছোটলোক? My foot. Just let me go. (ইহিতা ভাংচুর করতে করতে)
-কে ছোটলোক আর কে বড়লোক সেইটা আজ ই প্রমাণ হবে। বেশি কথা না বলে এইটা পরে আসো নয়ত আমিই বাধ্য হব পরিয়ে দিতে।
-তুই আমায় টাচ করে দেখ শুধু। আমার বাবা যদি জানে তার মেয়েকে তুই এইভাবে তুলে এনে বিয়ে করছিস তোকে জিন্দা কবর দেবে। ভালোয় ভালোয় আমায় ছেড়ে দে। (ইহিতা)
-এরপর অভ্র নিজেই ইহিতাকে জোর করে ল্যাহেঙ্গা পরিয়ে দিল চোখ বন্ধ রেখে। অভ্র জানে ইহিতা পরবেনা তাই নিজেই পরিয়ে দিল। ইহিতা যা মেকাপ করা ছিল তাতে চলবে। এরপর অভ্র উকিলকে ভেতরে আসতে বললেন। অভ্র রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে ইহিতাকে বলল সাইন করতে কিন্তু ইহিতা কলম ছুঁড়ে মারলো আর পেপার ছিঁড়ে ফেলল। তখন অভ্র বলল
-জানি তুমি এইটা করবে তাই ২৫০ কপি রেজিস্ট্রি পেপার বানিয়েছি আমি। কয়টা ছিঁড়তে পারো দেখি। সাইন তো তোমায় করতেই হবে ইহিতা চৌধুরী।
-আমি সাইন করব না না । তোর মতো লোফারকে কোনোদিন আমি বিয়ে করব না। দরকার হলে কোনোদিন বিয়ে ই করব না।
-ইহিতা সিনক্রিয়েট করো না। ভালোয় ভালোয় সাইন করে দাও তাতে তোমারই মঙ্গল। (অভ্র)
-মঙ্গল মাই ফুট। (ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙ্গে)
অভ্র প্রচন্ড ক্ষেপে যায় আর ইহিতার গালে জোরে একটা থাপ্পর মারে। এরপর ইহিতার হাত ধরে পেপারে সাইন করায়। সাইন করানো শেষ হলে উকিলকে চলে যেতে বলে অভ্র। উকিল চলে যাওয়ার পর অভ্র ইহিতার ঘাড় ধরে ইহিতার গালে আর কপালে চুমু দেয়।
-Sorry আমি তোমায় মারতে চাইনি কিন্তু তোমার জেদের জন্যই তুমি মার খেলে। বাসায় চলো এখন।(ইহিতার হাত ধরে)
-ইহিতা নড়ছেনা দেখে অভ্র ইহিতাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায়। এরপর অভ্র ড্রাইভ করে নিজের বাসায় যায়। বাসার সামনে এসে অভ্র ইহিতাকে বলে নামতে। এরপর ইহিতা নেমে যায় আর অনেক অবাক হয়। এইটা তো মির্জা প্যালেস! এখানে নিয়ে আসলো কেন ছোট লোকটা আমায়?? এরপর অভ্র ইহিতাকে নিয়ে ভেতরে যায় আর সবাইকে ডাকে।
-বউমনি? বউমনি? আম্মু?
-কি হয়েছে দেবরজি চেচাচ্ছেন কে… (তিন্নি কথা বলতে গিয়ে থেমে যায় দুইজনকে বিয়ের সাজে দেখে)
-কি হয়েছে ইশান (সবাই অভ্রকে ইশান ডাকে) চেচাচ্ছিস কেন? এই মেয়ে কে? (অভ্রর আম্মু)
-আম্মু আমি বলছি। তোমার ছেলের আর বলতে হবে না! (তিন্নি)
-কি হয়েছে বউমা? (তিন্নিকে উদ্দেশ্য করে অভ্রর আম্মু)
#চলবে,,,,,,,,,,
,
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_5
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
,
ইশান বিয়ে করে ইহিতাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর সবাই অবাক হলো। ইশানের ভাবি তিন্নি বলল
-আম্মু আমি বলি। ও হচ্ছে ইহিতা চৌধুরী। আশরাফ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। চিনেছেন?
-হ্যা বাট এই অসভ্য আর আনকালচার্ড মেয়ে ইশান তোর সাথে কেন? (রেগে গিয়ে মিসেস মির্জা)
-আম্মু আমি ইহিতাকে ভালোবাসি। আর এ কারণেই তোমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে এনেছি। তার জন্য আমি স্যরি। বউমনিকে বলেছি সব। ভাইয়াও জানে। তুমি আর পাপা জানো না শুধু। (অভ্র)
-এক মিনিট এখানে কোন কমেডি শো হচ্ছে? তুমি এই ফ্যামিলির ছোট ছেলে I mean Ishan Mirja? (ইহিতা অভ্রর দিকে তাঁকিয়ে)
-হ্যাঁ ইহিতা। (তিন্নি)
-কিন্তু আমি যতটুকু জানি আয়মান মির্জার ছোট ভাই লন্ডনে থেকে পড়াশুনা করে আর সেখানেই সে সেটেল! তাহলে ভার্সিটি তে তুমি কেন ছিলে? (অভ্রকে প্রশ্ন করলো ইহিতা)
-তোমার জানা ভুল নয়। আমি লন্ডন থেকেই Phd করেছি in English. (অভ্র)
-What? তাহলে এই ভার্সিটি? (অবাক হয়ে ইহিতা)
-সে অনেক কাহিনী ইহিতা। এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করো। আর ইশান তুমি ইহিতার বাবাকে কল করে আসতে বলো। আমি পাপা আর ওকে(আয়মান) আসতে বলছি। (তিন্নি)
-ঠিক আছে বউমনি। আর আম্মু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তোমার ঘরে চলো। আর বউমনি তুমি ওকেকে আমার ঘরে নিয়ে যাও।(ইশান)
-তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই ইশান। আমার ছেলে আজ বিয়ে করেছে তাও না জানিয়ে আমাদের! বাহ ইশান বাহ! (মিসেস মির্জা)
-আম্মু একবার শুনুন ও কি বলতে চায়। তারপর না হয় সবটা বিচার করবেন! (তিন্নি)
-বউমা তুমি ওকে সাপোর্ট করছো?
-না মা আমি শুধু আপনাকে শুনতে বলছি ইশানের কথাগুলো।
-আয় আমার ঘরে। (মিসেস মির্জা সেখান থেকে চলে গেলেন)
-যাও আর শুনো রেগে যেয়ো না ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ো! (তিন্নি ইশানকে এ কথা বলে ইহিতাকে নিয়ে উপরে গেলো)
ইশান পা টিপে টিপে আম্মুর ঘরে গেলো।
-আম্মু স্যরি তো!! তোমার ছেলে না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছে মাফ করে দাও।(মিসেস মির্জাকে জড়িয়ে ধরে ইশান)
-না ছাড় তুই আমাকে! আমি কোনো সাধারণ ঘরের মেয়েকে আমার ছোট ছেলের বউ বানাতে চেয়েছিলাম। যে হবে নম্র ভদ্র ঠিক আমার তিন্নি মায়ের মতো। এই বেয়াদব মেয়ের মতো মেয়েকে চাইনি!
-আম্মু বউমনির সাথে কারো তুলনা চলেনা। ইহিতা অনেক ভালো মেয়ে কিন্তু শাসনের অভাবে এমন হয়ে গেছে। প্লিজ আম্মু ওকে কষ্ট দিও না কারণ জানই তো ওর মা নেই। আমার জন্য হলেও অন্তত ওকে মেনে নাও। তুমি আর বউমনি হেল্প করলেই ও ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ আম্মু,, প্লিজ
-ইশান আমি কোনো ফোর্স শুনব না। যা তুই এখান থেকে। (মিসেস মির্জা একটু কষ্ট পেয়ে)। Well establish করেছি তোদের দুই ভাইকে আমি আর তোর পাপা মিলে। কোনোদিন কোনো কিছুতে অপুর্ন রাখিনি। দেশের বাইরে রেখে মানুষ করেছি তোদের যাতে কোনো বাজে সঙ্গ না পাস। কিন্তু ইশান আজ তোর ভাইয়ের স্ট্যাটাসটা কোথায় থাকবে আর তোর পাপারই বা ইমেজ কোথায় থাকলো? একটা বার কি ভাবলি না? তোর কথা আমি বাদই দিলাম। ১৪ বছর পর দেশে এসে ১৪ দিন যেতে না যেতেই এই কাজ করে ফেললি?
-আম্মু মাফ করে দাও আমায়। জীবনের প্রথম আর শেষ ভুল এইটাই।
-ইশান leave me alone. (মিসেস মির্জা)
-আম্মু? (ইশান প্রায় কেঁদে দিয়ে)
-ইশান don’t be emotional. এসব আমার একদম পছন্দ নয়। (মিসেস মির্জা)
-আম্মু আসব? (আয়মান)
-আয়।
-ভাইয়া আম্মুকে একটু বুঝানা? দেখ আম্মু কিছুতেই বুঝতে চাইছেনা! (ইশান)
-তুই যা আমি দেখছি। (আয়মান)
-ভাইয়া!
-ইশান যেতে বলছিনা আমি! (রাগী দৃষ্টিতে আয়মান)
-যাচ্ছি। (এই বলে ইশান চলে গেলো)
-বাবু আমি তোর কাছ থেকে ওর হয়ে সাফাই শুনতে চাইনা! (মিসেস মির্জা আয়মানকে উদ্দেশ্য করে)
-আম্মু তুমি কি ভেবে দেখছো ও তোমার ছোট ছেলে আর আমাদের সবার কত আদরের? ও না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে কি আমার ভাই কাঁদবে? তুমিই বলো আম্মু? কোনোদিন তো আমাদের দুই ভাইয়ের চোখের পানি তুমি ফ্লোরে পরতে দাওনি আর আজ ইশান কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো সেইটা দেখলেনা আম্মু?
-মিসেস মির্জা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।
-আম্মু প্লিজ আম্মু মন খারাপ করোনা। ৫ বছর ধরে ইশান ইহিতাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। যার কারণে ও বাংলাদেশে আসে। আজ কি ওর ভালবাসা বৃথা যাবে আম্মু?
-২৫ বছর ধরে আমি মানুষ করলাম সেই মূল্য কি ও দিয়েছে বাবু?
-আম্মু তোমার মূল্য ও কি করে দিবে? তোমার ভালবাসার কোনো মূল্য আমাদের কারো কাছে নেই আম্মু। ইহিতা ঠিক হয়ে যাবে শুধু সময় লাগবে। তুমি আর তিন্নি ওকে সাপোর্ট করো দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। আম্মু এই নাও নেকলেস। ইহিতাকে বরণ করো এইটা দিয়ে! (আয়মান একটা হিরার নেকলেস মিসেস মির্জার হাতে দিয়ে)
-বাবু?
-প্লিজ আম্মু চলো।
-চল।
-থ্যাংকইউ আম্মু। জানি তুমি বুঝবে। bcz আমার আম্মু বেস্ট। (মিসেস মির্জার হাতে চুমু দিয়ে)
-হয়েছে এখন চল ইশানের ঘরে।
-আসো।
এইদিকে ইহিতা ইশানের ঘরে গিয়ে থতমত খেয়ে যায়। দেয়ালের সব জায়গায় ইশানের ছবি। এত্ত সুন্দর লাগছে ইশানকে যা ইহিতা মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখছেই। তিন্নি বলল
-এইটাই আমার দেবর। আর এতদিন যেই রুপ দেখেছো সেইটা সাময়িক শুধুমাত্র তোমার জন্য। আমার স্মার্ট দেবর তোমার জন্য ক্ষেত সাজলো। এতে অবশ্য আমি আর তোমার ভাইয়া অনেক রিয়েক্ট করেছিলাম কিন্তু পরে মানিয়ে নিয়েছি। কারণ love at 1st sight বলেও একটা কথা আছে। (তিন্নি ইহিতাকে বলল)
-আপনাকে আমি পার্সোনালি চিনিনা কিন্তু আপনার বিষয়ে যতটুকু জানতাম আপনি তার থেকেও অনেক বেশি ভালো। (ইহিতা তিন্নিকে বলল)
-তাই? আমি মোটেও ভালোনা যখন বকব তখন বুঝবে। (তিন্নি)
-তিন্নি আসব? (আয়মান আর মিসেস মির্জা)
-আসো। তুমি কখন আসলে?
-২০ মিনিটস হবে। ইশান কই?(ঘরের চারিদিকে তাঁকিয়ে)
-ও তো ঘরে আসে নাই। কেন আম্মুর সাথে না ছিল?
-দাঁড়াও আম্মু আমি ইশানকে নিয়ে আসি।
আয়মান ছাদে গিয়ে ইশানকে পেলো আর ইশান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
-ইশান? তুই আবারো কাঁদছিস? (আয়মান)
-ভাইয়া তুমি? (ভ্যাবাচেকা খেয়ে ইশান)
-চল
-কোথায়?
-সারপ্রাইজ আছে চল
আয়মান ইশানকে নিয়ে ইশানের ঘরে গেলো। ইশানকে দেখে ইহিতা রেগে গেলো কিন্তু তিন্নির ইশারাতে থেমে গেলো ইহিতা। মিসেস মির্জা ইহিতাকে নেকলেস পরিয়ে দিয়ে দোয়া করেন। কিন্তু ইহিতা এতে ভ্রুক্ষেপই করলো না। ইশান আয়মানকে জড়িয়ে ধরলো
-ভাইয়া তোকে কোনোদিন থ্যাংক্স দেইনি আর আজ ও দিব না।
-শয়তান ছেলে তোর কাছ থেকে আমি থ্যাংক্স চেয়েছি? (আয়মান)
-U r best ভাইয়া।
-উহু এসব পামে আমি ফুলছিনা।
-হিংসে হচ্ছে কিন্তু আমার! তুমি আমার বরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছো! (তিন্নি ইশানকে বলল)
-বউমনি আগে আমার ভাই তারপর তোমার বর।
-হইছে তিনজন ফ্রেশ হয়ে নিচে আসেন। লাঞ্চ করতে হবে তো নাকি? (তিন্নি)
-পাপা আসুক! (আয়মান)
-পাপা আসছে। (তিন্নি)
-আচ্ছা তুমি আগে ঘরে আসো কথা আছে আমার। (আয়মান তিন্নিকে বলল)
-চলো।
এরপর সবাই ইশানের ঘর থেকে চলে গেল। ইশান আর ইহিতা দুইজন দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
#চলবে……..
পালিয়ে_বিয়ে
পর্বঃ১+৫