#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_19-21
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অদৃকার কথা শুনে ইশান চোখ রাঙিয়ে তাঁকালো অদৃকার দিকে। অদৃকা সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলল।
-চলুন ঘুমাবেন। (অদৃকা ইশানকে)
-না আপনি যান। আমার ঘুম আসছেনা।
-প্লিজ চলুন। এখানে একা একা দাঁড়িয়ে থেকে কি করবেন?
-আপনি গিয়ে ঘুমান প্লিজ।
-যাবেন না ঘুমাতে?
-না।
-কালকে থেকে আর এমন হবেনা দেখবেন। যাই আমি। (মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো অদৃকা বারান্দা থেকে)
ইশান বারান্দার চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে। অদৃকা ঘরে এসে আবার শুয়ে পরে। অদৃকা ঘুমাতে অনেক বেশি ভালোবাসে। শোয়ার সাথে সাথে অদৃকা ঘুমিয়ে পরলো। উঠলো একেবারে সকালে ……..
সকালে উঠে দেখে ইশান ফ্রেশ হচ্ছে। অদৃকা দ্রুত উঠে গেলো। তিন্নি এরই মাঝে হিয়াকে নিয়ে চলে এসেছে। হিয়া কাঁদছে। অদৃকা সাথে সাথে হিয়াকে কোলে নিলো। হিয়ার কান্নার আওয়াজ শুনে ইশান দৌঁড়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। ততক্ষনে হিয়া অদৃকাকে পেয়ে থেমে গেছে। ইশান কতক্ষণ অদৃকার দিকে তাঁকিয়ে থাকে। এরপর মুখ ধুয়ে আসে। ইশান রেডি হচ্ছে আর অদৃকা হিয়াকে খাওয়াচ্ছে। কতরকম গল্প করছে অদৃকা হিয়ার সাথে খাওয়াতে খাওয়াতে। ইশান চুল আঁচড়াচ্ছে আর সেগুলো শুনছে। এরপর ইশান শার্ট প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইশান ড্রেস পরে আসে। তখন হিয়া ঘুমিয়ে পরেছে। সকাল ৮ টা বাজে। ঘুমন্ত হিয়াকে চুমু দিল ইশান। এরপর ব্লেজার পরে নিচে গেলো। ইশান নিচে যাওয়ার পর অদৃকা দেখলো ইশান ওয়ালেট, ঘড়ি আর ফোন ফেলে গেছে। অদৃকা সেগুলো নিয়ে নিচে নামে। ইশান তখন ব্রেকফাস্ট করছিল।
-এইগুলো রেখে এসেছিলেন। (ইশানের দিকে এগিয়ে দিলো জিনিসগুলো অদৃকা)
-থ্যাংক্স। (অদৃকার দিকে না তাঁকিয়েই ইশান)
-একটা কথা ছিল?
-কি?
-বাবুনির ফুড শেষ হয়ে গেছে। সেইগুলো আনতে হবে।
-হিয়ার খাবার শেষ আর সেইটা এখন বলছেন আমায়? রহিম চাচা রহিম চাচা (বাড়ির কাজের লোককে ডাকলো ইশান)
-আরে রহিম চাচা কি করবে?
-হিয়ার খাবার আনবে।
-না। অফিস থেকে আসার সময় আপনি নিয়ে আসবেন। বাবার দায়িত্ব টা ফুলফিল ভাবে পালন করুন।
-ততক্ষনে আমার মেয়ে খাবে কি?
-এখনো ২ দিনের খাবার আছে। চিন্তার কিছু নেই। আসার সময় নিয়ে আসলেই হবে।
-আচ্ছা। বউমনি আমি গেলাম।
-যাও।
-আমাকে বললেন না? (আস্তে করে বলল অদৃকা)
-কিই?
-না আসলে সাবধানে যাবেন।
এরপর ইশান চলে গেলো। অদৃকা ব্রেকফাস্ট করে ঘর গুছালো। হিয়ার জামা ধুয়ে দিলো। তিন্নির সাথে রান্না করলো। সব কাজ অদৃকা করলো। ঘরের ফুলগুলো সরালো,,ইহিতার ব্যবহার করা কসমেটিক্স,, পার্ফিউম,, জামা কাপড় সব সুন্দর করে গুছিয়ে আলমারিতে যত্ন করে রেখে দিলো অদৃকা। এগুলোতে যে ইহিতার ছোঁয়া আছে। খুব সুন্দর করে এলোমেলো ঘরটাকে গুছিয়ে ফেলল অদৃকা। হিয়া ঘুম থেকে উঠার পর হিয়াকে গোসল করিয়ে দিল। হিয়ার চুল আঁচড়ে দিল আর হিয়ার কতগুলো ছবি তুলে এলবাম করে রাখলো অদৃকা। হিয়া একটু একটু হাঁটতে চেষ্টা করে কিন্তু আবার পরে যায়। ইশান হিয়াকে শুধুমাত্র পাপা ডাক শিখিয়েছে তাই হিয়া পাপা অস্পষ্ট ভাবে বলে। লাঞ্চে তিন্নি আর অদৃকা একসাথে খেলো এরপর দুইজন মিলে গল্প করলো। ইহিতার থেকে কম সুন্দরি অদৃকা নয়। Nosepin টায় অদৃকাকে বেশ মানিয়েছে। নোজপিনের জন্য অদৃকাকে অনেক বেশি কিউট লাগে। সারাদিন হেলে খেলেই গেলো অদৃকার। সন্ধ্যা পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ইশান ফিরছেনা। অদৃকার টেনশন হচ্ছে। তিন্নি অদৃকার টেনশন দেখে হাসছে।
-এত টেনশন না করে ফোন দিলেই তো পারো? (তিন্নি)
-বউমনি ওনার নাম্বার তো নেই।
-ইশান লিখে সেইভ করা আছে আমার ফোন এ দেখো।
-আচ্ছা।
এরপর অদৃকা তিন্নির ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে ইশানকে ডায়াল করলো। ২ বার রিং হওয়ার পর ইশান রিসিভ করলো।
-কে বলছেন?(নাম্বারটা অচেনা তাই)
-আমি অদৃকা,আপনি আসছেন না কেনো বাসায়?
-সুপার শপ এ আছি। রাস্তায় জ্যাম আসতে লেট হবে।
-কতক্ষণ লাগবে?
-Half an hour.
-আচ্ছা সাবধানে আসবেন। রাখছি।
-কি এইবার শান্তি লাগলো?(তিন্নি অদৃকাকে বলল্)
-বউমনি শান্তি তো লাগবেই। উনি কি কি খেতে পছন্দ করে? বলো করে ফেলি
-ভূনা খিচুড়ি সাথে গরুর মাংস।
-আর কি?
-সাথে লেমন জুস রাখতে পারো। ও অনেক বেশি জুস পছন্দ করে।
-করছি। আর ডিনারে কি খাবে এইগুলো? (মুখটা মলিন করে ফেলল অদৃকা)
-অবশ্যই। ওর প্রিয় খাবার এইগুলো।
-বিদেশে বড় হয়েছে কে বলবে? পছন্দ তো সব বাঙালী খাবার।
-ও এমনি।
-দেরি হয়ে যাচ্ছে বউমনি। রান্নাটা করে ফেলি। আমার আম্মুটাকে দেখো। (হিয়াকে চুমু দিয়ে)
-আচ্ছা আমি কি হেল্প করব?
-না বউমনি আমার ওর জন্য আমি রান্না করব। হাহাহা।
হেসে হেসে অদৃকা রান্নাঘরে চলে গেলো। অদৃকার রান্না প্রায় শেষ তখন ইশান বাসায় আসলো। ড্রইং রুমে তিন্নির কোলে হিয়া বসেছিলো। ইশান হিয়াকে কোলে নিয়ে ড্রইং রুমে বসলো। ইহিতা একগ্লাস জুস নিয়ে আসলো ইশানের জন্য।
-এই নিন জুসটা খেয়ে নিন। (জুসের গ্লাস ইশানকে এগিয়ে দিয়ে)
-থ্যাংক্স। (গ্লাসটা হাতে নিয়ে ইশান)
-কিসের এত থ্যাংক্স থ্যাংক্স? নিজের বউকে কি কেউ থ্যাংক্স দেয়?
-ইশান থতমত খেয়ে যায় তিন্নির সামনে এই কথা বলায়। ইশান আর কিছু বলেনা। জুসটা খেয়ে নেয়।
-এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসেন ডিনার করার সময় হয়ে গেছে। (হিয়াকে ইশানের কোল থেকে নিয়ে)
-হুম
এরপর ইশান উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অদৃকা আর তিন্নি খাবার সার্ভ করে। সিমি হিয়াকে নিয়ে খেলছে। ইশান গোসল করে নিচে নামলো। টেবিলে বসে ভূনা খিচুড়ি দেখে ইশান তিন্নির মুখের দিকে তাঁকালো।
-ভাই আমি কিন্তু কিছু করিনাই। খেয়ে বলো আগে কেমন হয়েছে। (তিন্নি)
-তোমরা বসে আছো কেন? খাও। (আয়মান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল)
-সবাই খাচ্ছে আর অবাক হচ্ছে। ইশান ও প্লেটের সব খাবার খেয়ে ফেলল।
-বউমনি জাস্ট দুর্দান্ত রকমের টেস্টি হয়েছে। আরেকটু দাও না! (পিচ্চিদের মতো করে ইশান)
-অদৃকা রান্না করেছে আজকে তোমার জন্য।
-কে রান্না করেছে I don’t care but খাবারটা যে অনেক ভালো হয়েছে সেইটুকু বলতে পারি।
সবাই অদৃকার রান্নার প্রশংসা করলো। তিন্নি হাসছে আর অদৃকাকে এপ্রিশিয়েট করছে। ডিনার করে ইশান হিয়াকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। অদৃকা আর তিন্নি খাবারগুলো গুছিয়ে যার যার ঘরে গেলো। অদৃকা ঘরে গিয়ে দেখে ইশান ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে আর হিয়ার সাথে দুষ্টামি করছে। অদৃকা দরজা লক করে দিয়ে হিয়াকে কোলে নিয়ে ইশানের পাশে বসে। ইশানের একটু অস্বস্তি হয়। ইশান একটু সরে বসে।
-আজকে বিছানায় ঘুমাবেন।
-সেইটা পরে দেখবো। ড্রেসিং টেবিলের উপরের জিনিসপত্র গুলো কোথায়?
-আলমারিতে একসাথে করে রেখে দিয়েছি সব।
-কেন?
-এমনি।
-এমনি মানে? আমার ইহিতার জিনিসপত্র সেইগুলো সেইটা কি জানেন না? (রেগে গিয়ে ইশান)
-জানি তাই ধুলোয় নষ্ট হতে দেইনি। আলমারিতে তুলে রেখেছি। ঘুমাবো সরুন। আম্মুর(হিয়ার) ঘুম পেয়ে গেছে।
-সরছি। (ল্যাপটপ নিয়ে ইশান উঠে গেলো)
-দাঁড়ান কোথায় যাচ্ছেন? (ইশানের হাত ধরে অদৃকা)
-সোফায়।(হাত ছাড়িয়ে ইশান)
-না। আজকে থেকে একসাথে ঘুমাবো। স্ত্রী হিসেবে সেই অধিকার আমার আছে।
-আমি মানিনা সেইটা।
-হিয়া মাঝে থাকবে। এখন তো হলো।
-না। আমি বিছানায় ঘুমাবো না।
-ঝগড়া করবেন পরে। টাইম ওয়েস্ট না করে লাইট অফ করে দিন। নয়ত হিয়া ঘুমাবেনা।
-দিচ্ছি। (লাইট অফ করে ইশান সোফায় গিয়ে বসলো)
অদৃকা রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে ইশানকে টেনে এনে ধাক্কা মেরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ইশান তো রেগে আগুন। অদৃকার কোলে হিয়া ঘুমাচ্ছিলো বলে ইশান অদৃকাকে কিছু বলল না। অদৃকা হিয়াকে কোলে নিয়ে মাঝে শুইয়ে দেয়। এরপর বিছানার আরেকপাশে অদৃকা শুয়ে পরে। মাঝরাতে অদৃকা উঠে দেখে ইশান ঘুমাচ্ছে হিয়ার উপর হাত রেখে। এতদিন তো ঘুমায়নি তাই হুশ নেই কার উপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছে। অদৃকা আস্তে করে হিয়াকে সাইডে শুইয়ে দেয় আর অদৃকা মাঝে শুয়ে পরে।
চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_20
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অদৃকা হিয়াকে সরিয়ে ইশানের সাথে শুয়ে পরলো। অদৃকা মাঝে আর একপাশে হিয়া আরেকপাশে ইশান। রাত্রি শেষে হঠাৎ ইশানের ফোন বেজে উঠে। ইশান বেঘোরে ঘুমুচ্ছে অদৃকা উঠে ফোন রিসিভ করে। ইশানের PA ফোন করেছিলো। সকালে আর্জেন্ট মিটিং আছে তাই ইশানকে জানালো। অদৃকা ফোন রেখে শুয়ে পরলো।
সকালবেলা …..
ইশান স্বভাবতই আগে উঠে ঘুম থেকে। আজও তাই করলো। ইশান ঘুম থেকে জেগে দেখে ৬:৩৫ বাজে। ইশান আড়মোরা ভাংতেই দেখে অদৃকার ওড়না ইশানের পিঠের নিচে আর অদৃকা এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে হিয়ার আঙ্গুল ধরে। হিয়াও ঘুমাচ্ছে। ইশান সারারাত অদৃকার সাথে শুয়েছিলো সেই হুশ নেই ইশানের। অদৃকার এলোমেলো চুল,,অদৃকার সুন্দর মুখ,,অগোছালো ভাবে ঘুমানো এসব ইশান খেয়াল করলেও ভ্রুক্ষেপ করলোনা। তারাতারি করে বিছানা থেকে নেমে গেলো ইশান আর অদৃকাকে ডাকলো। অদৃকা উঠে বসলো।
-কি হয়েছে ডাকছেন কেন? (ঘুম ঘুম চোখে অদৃকা)
-এই ফাজিল মেয়ে আমার সাথে শুয়েছেন কেন?(চোখ রাঙিয়ে ইশান)
-তো কি অন্য ছেলের সাথে শুবো নাকি? আজিব!
-থাপ্পর মেরে দাঁত ফেলে দেব বেয়াদব। বলেছিনা আমার ধারে কাছে আসতে না!
-আপনার সুন্দরি PA ফোন করেছিলো ভোরে। বলেছে সকালে মিটিং আছে তারাতারি অফিস যেতে।
-সেইটা এখন বলছেন আমাকে? (রাগী চোখে ইশান)
-যান ফ্রেশ হয়ে আসেন আর একদম গরুর মতো চেঁচাবেন না। বাবুনি ঘুমাচ্ছে জেগে যাবে।
– Whattt? আমি গরু? R u crazy??
-No I am ok but u r mad.
-Hey You… don’t underestimate me.
-যান যান আমি উঠবো সরুন। (ইশানকে ধাক্কা দিয়েই অদৃকা নিচে চলে গেলো)
কি মেয়েরে বাবা! একেকসময় একেক রুপ! এই মেয়েকে দেখলে কি innocent মনে হয় কিন্তু ভেতরে ভেতরে এত কিছু! এসব অদৃকা চলে যাওয়ার পর ইশান ভাবছে।
ইশান ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে তখন অদৃকা ঘরে আসে। হিয়া এখনো ঘুমিয়ে আছে। অদৃকা ইশানকে সব এগিয়ে দিলো। এরপর সিমিকে ঘরে রেখে দুইজন একসাথে নিচে নামলো। ইশান আগে আর অদৃকা পরে। ইশান ব্রেকফাস্ট করলো আর চলে গেলো। অদৃকা ওড়না আঙ্গুলে ঘুরাচ্ছে আর মনে মনে বলছে ইশান জি আপনার ভালোবাসা এত সহজে পাবো না তাই আমায় পাগলামো করতেই হবে কিচ্ছু করার নেই। যেদিন আমায় মেনে নিবেন সেইদিনই মাফ চেয়ে নিবো। এসব ভাবতে ভাবতে অদৃকা হিয়ার কান্নার আওয়াজ শুনে দৌঁড়ে উপরে গেলো। হিয়াকে খাবার খাইয়ে অদৃকা হিয়াকে নিয়ে তিন্নির কাছে গেলো। এরপর তিন্নি আর অদৃকা হিয়াকে নিয়ে শপিং এ গেলো। সবার জন্য শপিং করবে তাই। যাওয়ার সময় তিন্নি ইশানকে ফোন দিলো। ইশানকে আসতে বলায় ইশান না করে দিলো। শুধু বলল হিয়াকে যাতে দেখে রাখে। তিন্নি ফোন কেটে দিয়ে আপসেট হয়ে অদৃকাকে বলল আপনার সে আসবেনা। অদৃকার ও মন খারাপ হয়ে গেলো। আধা ঘন্টা পর তিন্নি আর অদৃকা CT max এর সামনে গাড়ি থেকে নামে। গাড়ি থেকে নামার পর অদৃকাকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো অশ্রাব্য ভাষায় কথা শুনাচ্ছিলো আর বারবার টিজ করছিলো। অদৃকা একবার ছেলেগুলোর দিকে তাঁকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। তিন্নির কোলে হিয়া ছিল। শপিং শেষ করে তিন্নি আর অদৃকা গাড়ির দিকে যাচ্ছিলো কিন্তু ছেলেগুলো আবারো ঠিক একইভাবে বিরক্ত করছে। পেছন থেকে ইশান বউমনি বলে তিন্নিকে ডাক দিলো। তিন্নি আর অদৃকা দুইজনেই পিছু ফিরে তাঁকালো। ইশানের চেহারায় রাগ স্পষ্ট। ইশান হাত ইশারা করে অদৃকাকে ইশানের সামনে আসতে বলল। অদৃকা ইশানের সামনে এসে দাঁড়ালো। ছেলেগুলো ইশানকে দেখে বলল
-ইশান স্যার আপনি? (ভয়ে ভয়ে)
-লাস্ট ২ ঘন্টা ধরে আমি এসব দেখছিলাম। তো ভার্সিটিতে না গিয়ে বাবা মা নিশ্চই এই কাজগুলো করার জন্য টাকা খরচ করে? (ইশান দাঁতে দাঁত চেপে রেখে)
-স্যরি স্যার আসলে
-Do U know who is she? (অদৃকার দিকে ইশারা করে ইশান) She is my wife. এত বড় স্পর্ধা কোথায় পেলে তোমরা?
-স্যার স্যরি আর হবেনা।
-নেক্সট টাইম এমন কিছু দেখলে সেইদিন স্যরি বলার জন্য ঠোঁট গুলো থাকবে না। মাইন্ড ইট।
এই বলে ইশান সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। ইশান প্রচন্ড রেগে আছে কিন্তু ভার্সিটি স্টুডেন্ট বলে কিছু বলেনি। অদৃকা আর তিন্নি একে অপরের দিকে তাঁকিয়ে চোখাচোখি করছে। বাসায় এসে অদৃকা হিয়াকে নিয়ে ঘরে যায়। ইশান এসে মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে। অদৃকা হিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেয়। ইশান সেইম ভাবেই বসে আছে। অদৃকা ইশানকে এভাবে রেগে যেতে দেখেনি কোনোদিন কিন্তু আজ দেখলো। ইশান চুপ করে আছে। অদৃকা পা উঠিয়ে খাটে বসলো। একদম চুপচাপ বসে আছে। ইশানকে কিছু বলার সাহস হচ্ছেনা অদৃকার। কিছুক্ষন পর ইশান বলল
-নেক্সট টাইম এইভাবে একা বাইরে না গেলে খুশি হবো। (এই কথা বলে ইশান ওয়াশরুমে চলে যায়)
অদৃকা ভাবছে উনি কি বললেন! ইশান আজ সারাদিন বাসায় থাকবে তাহলে! এইটা ভেবেই অদৃকা আনন্দিত হচ্ছে।
চলবে
#পালিয়ে_বিয়ে
#Part_21
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অদৃকা শুধু এইটা ভেবেই আনন্দিত হচ্ছে যে আজ ইশান সারাদিন বাসায় থাকবে। ইশান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অদৃকা খাটে বসে ঝিমাচ্ছে। ইশান শুধু তাকিয়েই থাকে অদৃকা কি করে এইটা দেখার আশায়। ইশান টাওয়েল সোফার উপর রেখে অদৃকার দিকে তাঁকিয়ে আছে আর হাসছে। অদৃকা বসে বসে কিভাবে ঝিমাচ্ছে এইটা দেখে!! এক পর্যায়ে ইশান জোরে হেসে দেয় আর অদৃকা চোখ তুলে দেখে ইশান হাসছে। অদৃকা দাঁড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
-হাসছেন কেন?
-মুরগীর মত ঝিমালে তো হাসবই!
-আমি মুরগী? (চোখ রাঙিয়ে অদৃকা)
-চোখ রাঙান কেন?
-হাসেন কেন?
-তর্ক বাদ দিন। ঘুম পেয়েছে ঘুমিয়ে যাবেন কথা শেষ।
-আপনার মতই তো যখন যা মন চায় করি নাকি?
-ঝগড়া করবেন না তো!
-লাঞ্চে কি খাবেন বলুন?
-যা রান্না করে বউমনি সেইটাই।
-আপনি কি খাবেন সেইটা বলুন!
-বিরিয়ানি হলে ভালো হয়।
-আচ্ছা করে দিচ্ছি।
-তাই নাকি?
-তো কি মনে হয়! পারিনা নাকি?
-না অনেক পারেন।
-ইয়েস। হিয়ার পাশে বসুন।
-আচ্ছা।
অদৃকা রান্না করতে গেলো। ইশান হিয়ার পাশে বসে ফোন টিপছিলো। লাঞ্চে অদৃকা ইশানকে ডাকলো আর ইশান খেতে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে টিভি দেখতে বসলো ইশান। প্রায় ২ ঘন্টা টিভি দেখে ঘুমিয়ে পরলো। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে ইশান হিয়ার সাথে খেলল। সারাদিন হেসে খেলেই গেলো ইশানের। রাতে ঘুমানোর সময় অদৃকা ইশানকে বলল
-খাটে শুবেন ঠিক আছে কিন্তু হিয়ার উপরে হাত তুলে দেন কেন? ব্যথা পায় না!
-আমি তো বুঝিনাই। বুঝলে তো আর দিতাম না।
-আমি মাঝে শুচ্ছি।
-এই না। আমি গেস্ট রুমে চলে যাই। আপনি হিয়াকে নিয়ে এখানে থাকেন।
-পা কেটে দিব একদম। এখানেই ঘুমুবেন। আর আমি মাঝেই শুবো।
-একবার না বলেছিনা।
অদৃকা আর কোনো তর্ক না করে লাইট অফ করে ইশানের পাশে শুয়ে পরলো। ইশানের দিকে তাঁকিয়ে বলল
-আপনার স্ত্রী হই না এখন আমি? কেন আমাকে এইভাবে দূরে সরিয়ে রাখছেন বলুন তো! কষ্ট হয়না আমার??
ইশান কিছু না বলে কিছু স্পেস রেখে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলো। অদৃকাও হিয়ার দিকে তাঁকিয়ে শুয়ে পরলো।
সকালবেলা ইশান অফিসে চলে গেলো। এইদিকে সবাই মিলে ইশানকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য গত কালকেই প্ল্যান করে রেখেছে। আজ ইশানের বার্থডে। সবাই মিলে সব রেডি করলো সারাদিন ধরে। অদৃকা রান্না বান্না করলো,,হিয়াকে রেডি করালো। সন্ধ্যার আগে আগে কেক নিয়ে আসলো আয়মান। কেকটাতে ইশান আর হিয়ার ছবি। অসম্ভব সুন্দর ভাবে আয়োজন করলো আয়মান আর তিন্নি। ইশানের গাড়ির আওয়াজ শুনে সবাই বাড়ির সব লাইটস অফ করে দিল। হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায় ইশান ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে বাড়িতে ঢুকে। অদৃকা সম্পুর্ন ইহিতার মতো করে সেজেছে ইহিতার শাড়ি আর গহনা পরে। ইহিতার মতো হেয়ার স্টাইল করেছে অদৃকা। ইশান দরজার সামনে আসতেই সবকয়টা রঙীন বাতি জ্বালিয়ে দিলো আয়মান। সবাই ইশানকে উইশ করলো শুধু অদৃকা করলো না। অদৃকা হিয়াকে কোলে নিয়ে সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যখন বাড়ির সম্পুর্ন আলো জ্বালালো তখন ইশান অদৃকাকে দেখে হাত থেকে ফোন ফেলে দিলো। ইশান বিশ্বাস করতে পারছেনা কে এইটা? ইশান দৌঁড়ে অদৃকার সামনে যায় আর অদৃকার বাহু ধরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব দেখে অদৃকার। ইশান অস্পষ্ট স্বরে বলে
-ইহিতা তুমি?
-শুভ জন্মদিন মাই লাইফ। (ইশানের গালে হাত রেখে অদৃকা)
ইশান তখন অদৃকার বাহু ছেড়ে দেয় আর ছোট্ট একটা থ্যাংক্স দেয়। ইশান সম্পুর্ন ভেঙ্গে পরেছে অদৃকাকে এভাবে দেখে। ইশান বারবার অদৃকার দিকে তাঁকাচ্ছে আর অদৃকা ইশানের দিকে। ইশান আর অদৃকা মিলে কেক কাটলো। অদৃকা ইশানকে খাইয়ে দিলো কিন্তু ইশান অদৃকাকে খাওয়ালো না। কেক কেটেই ইশান নিজের ঘরে চলে গেলো। সবাই বুঝতে পেরেছে ইশানের কোথায় আঘাত লেগেছে কিন্তু অদৃকা তো ইচ্ছে করে এমন করেনি! হৈ চৈ সব বন্ধ হয়ে গেলো। অদৃকা তিন্নির কোলে হিয়াকে দিয়ে উপরে চলে গেলো। অদৃকা ইশানকে ঘরে না পেয়ে ছাদে গেলো। গিয়ে দেখে ইশান কাঁদছে। ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ইশান কাঁদছে আর সেইটা অদৃকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। অদৃকা খুব দ্রুত হেঁটে ইশানের কাছে গেলো। ইশানকে নিজের দিকে ঘুরালো অদৃকা। ইশানের ঘামে ভেজা শরীরকেই জড়িয়ে ধরলো অদৃকা। ইশানকে জড়িয়ে ধরে অদৃকা কেঁদে দিলো। ইশান অদৃকাকে সরাতে চাইলেও অদৃকা সরাতে দিলো না।
-কেন এমন করছেন আমার সাথে বলুন তো? আমিও তো একটা মানুষ। আজ এক সপ্তাহ ধরে এসব সহ্য করছি। নিজে তো কষ্ট পাচ্ছেন সাথে আমাকেও কষ্ট দিচ্ছেন। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন তো ইহিতা আপুর স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে পারবেন সারাজীবন? নাকি এভাবেই নির্জীব মানুষের মতো জীবন কাটিয়ে দিবেন? ইশান একটা মেয়ে আর কত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে বলুন তো আমায়? আমার সামনে আপনি সারাক্ষণ ইহিতা আপুর জন্য কষ্ট পান সেইটা কি আমার খুব ভালো লাগে? আজ যে এখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন কেন কাঁদছেন জবাব দিন আমায়?
ইশানকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে অদৃকা ইশান সরাতেও পারছেনা আর কিছু বলতেও পারছেনা! অদৃকা ইশানের শার্ট মুঠো করে ধরে বুকে মাথা দিয়ে কাঁদছে। ইশান শুধু রাতেও স্তব্ধ আকাশ দেখছে। আর চোখ দিয়ে পানি ঝরাচ্ছে। কিছুক্ষন পর অদৃকা ইশানকে ছেড়ে দিয়ে নিচে চলে এলো। অদৃকা ফ্রেশ হয়ে খাটের উপর বসে মাথা নিচু করে কাঁদছিলো। প্রায় ১০ মিনিট পর ইশান ঘরে আসে। অদৃকাকে কাঁদতে দেখে ইশান কিছু বলেনা। অদৃকা দেখেনি ইশান ঘরে আসছে। অদৃকা ইশানের ওয়ালেট রাখার আওয়াজ শুনে ইশানের দিকে তাঁকিয়ে চোখ মুছে ফেলল। ইশান ফ্রেশ হয়ে অদৃকাকে নিয়ে খেতে গেলো। সবাই একসাথে ডিনার করলো। অদৃকা খাবার নাড়াচাড়া করে কিছু মুখে না দিয়েই হিয়াকে নিয়ে গেস্ট রুমে ঘুমাতে গেলো। অদৃকা যে খায়নি তা ইশান খুব ভালোভাবে খেয়াল করলো কিন্তু কিছু বলল না। ইশান খেয়ে উঠে গেলো। ইশান ঘরে গিয়ে দেখে অদৃকা আর হিয়া ঘরে নেই। ইশান গেস্ট রুম লক দেখে বুঝতে পারে অদৃকা এখানেই আছে। ইশান দরজা নক করে। অদৃকা দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে চলে আসে। ইশান অদৃকাকে বলে
-তোমার ঘর এটা নয় অদৃকা।
অদৃকা বিস্ময় নিয়ে ইশানের দিকে তাঁকায়। কান্না করার পর চোখ নাক মুখ লাল হয়ে আছে অদৃকার। ইশান কি সত্যিই অদৃকাকে তুমি বলল ! ইশান আবার বলল
-হিয়াকে কোলে নাও আর ঘরে আসো।
অদৃকা আবারো অবাক হয়ে যায় ইশানের কথা শুনে। এইবার ইশান নিজেই হিয়াকে কোলে নিয়ে আর অদৃকার হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়। হিয়া ঘুমিয়ে পরেছে তাই ইশান হিয়াকে বাম পাশে খাটে শুইয়ে দিলো। ইশান দরজা লক করে দিলো। অদৃকাকে খাটে বসে থাকতে দেখে ইশান অদৃকার হাত ধরে অদৃকার কোলে শুয়ে পরে। অদৃকা অবাকের উচ্চসীমায় পৌঁছে গেছে ইশানের এমন ব্যবহার দেখে। ইশান অদৃকার হাতে চুমু দিলো। অদৃকা কেঁপে উঠলো। ইশান অদৃকার মাথা নিচু করে অদৃকার ঠোঁটে চুমু দিলো। অদৃকা এইবার ইশানকে জিজ্ঞেস করলো
-আপনি ঠিক আছেন? কি করছেন এসব? (অনেক কষ্ট হলো অদৃকার ইশানকে এই প্রশ্ন করতে)
চলবে