বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ১৭

0
1310

বিষাক্তময় আসক্তি (The Villain😈)
Sumaiya Akter Mim
পর্ব ১৭………..🌼

“শু শু করে বাতাস আসছে জানালার কাঁচ বেদ করে।আয়ানা বাহিরের দিকে মুখ করে বসে আছে! ইরফান গাড়ি চালাচ্ছে আর আড় চোখে বার বার আয়ানাকে দেখছে।আয়ানা ইরফানের ভয়ে বারবার জানালার সাথে ঘেঁষে বসছে!তা দেখে ইরফান একটানে আয়ানাকে নিজের বুকের উপর এনে ফেললো ! হঠাৎ এমন হওয়া আয়ানা ভয়ে ইরফানের জেকেট শক্ত করে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।। ইরফান আয়ানার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে আবার ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিল।। ইরফান ড্রাইভ করছে আর বলছে,,,,

____এতো দূরে দূরে কেনো থাকো আয়ু জান?এই বার ঠিক আছে বলে মুচকি হেসে মাথায় চুমু খায়।।আর আয়ানা বেচারি ইরফানের বুকের মধ্যে থেকে একটু চোখ তুলে বিড়াল ছানাদের মতো আবার ইরফানের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে।।‌‌______

_____অন্যদিকে নিলাম বেলীতে ইরফান আর আয়ানার হলুদের তোরজোর ব্যবস্থা চলছে।। ইরফান জানিয়ে দিয়েছে বিয়ের সব কাজ নিলাম বেলীতে হবে।‌আয়ানা পালানোর ফলে ইরফান লিপা বেলীতে বিয়ের কোনো কাজ করতে চায় না।।সে চায় বিয়ের কাজ নিজ বাড়িতে হবে।।আয়ানাকে বিয়ের বিষয় নিয়ে কোনো ছাড় দিবে না।। গতকাল রাতে আয়ানার সহ পরিবারের লোকজন নিলাম বেলীতে ইরফানের গেস্ট হাউস উঠেছে।।। সবাই আয়ানাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলো। তাঁর উপর গত দুই দিন ধরে জিসান নিখোঁজ !এই নিয়ে সবার চিন্তার শেষ নেই।।‌তবু ও কিছু করার নেই তাই চুপচাপ সব সহ্য করছে।।আর মেয়ের বিয়ের ব্যাবস্থা করছে।।

_______________________________________

“খান বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়। এরা হচ্ছে মূলত এলাকার মানুষ যারা সবাই খান বংশের হয়ে গোলামী করে।।নিলাম বেলীর প্রত্যেকটা ঘরের সদস্যরা গোলামীর পাশাপাশি অনেক ভালোবাসেন খান বংশের সবাই কে।।‌আদীম কাল থেকেই এই খান বংশের রাজত্ব চলছে।।আগে ইমরান খানের বাবা তার আগে তাদের পর্ব পুরুষ এখন তারা।।। আজকে যারা এসেছে তারা ইরফানের বিয়ে উপলক্ষে ও ইলেকশনের কথা বলতে এসেছে।।। ইমরান খান চেয়ারের বসে আছে আর তার পাশে দাঁড়িয়ে পান চিবোচ্ছে আলি আকবর।। ইলেকশনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে তাঁরা!!

____বাড়ির গেইটের ভেতর শু শু করে তিনটি গাড়ি প্রবেশ করতে সবাই জায়গায় করে দেয়।।। ইরফান আর ইরফানের বডিগার্ডদের গাড়ি।।।গার্ডরা নেমে ইরফানের পাশে দরজাটা খুলে দিতে ইরফান হিরোদের মতো স্টাইল নিয়ে গাড়ি থেকে নামতে চারপাশে কোলাহল শুরু হয়ে যায়।। সবাই হাসি হাসি মুখে ইরফানের বাহবাহ জানাতে থাকে।।তা দেখে ভিতু চোখে সব কিছু পরখ করতে থাকে আয়ানা।।____

_________ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আয়ানার পাশে দরজাটা খুলে দেয়!আয়ানার হাত ধরে সাবধানে আয়ানাকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।। খুব অবাক করার বিষয় এতোক্ষণ সব মানুষ গুলো ইরফানের জয় গান করছিল তারা এখন মাথা নিচু করে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে! একবার ও চোখ তুলে তাকালো না পর্যন্ত।।আয়ানা চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখছে।। মানুষ গুলো অদ্ভুত নিচের দিকে তাকিয়ে কিন্তু মুখে হাসি।। মনে হচ্ছে রাজা রানী যাচ্ছে আর তাঁরা স্বাগতম জানাছে।। ইরফান মুচকি হেসে আয়ানাকে জরিয়ে ধরে ইমরান খান যেখানে বসে আছে সেখানে গেলো।।। ইমরান খান হেসে পুত্র আর পুত্র বধূকে দোয়া করলো।।।__________

_______আয়ানা এখনো গোলগাল চোখে সামনের মানুষ গুলো কে দেখছে যারা এখনো মাথা নিচু করে আছে।।আয়ানার সব কিছু কেমন ভয় ভয় করছে।এই অদ্ভুত সব মানুষের ভিড়ে তাকে এখন বন্দি জীবন যাপন করতে হবে।।।। এদের দেখে বুঝা যাচ্ছে শুধু সে না এখানের প্রত্যেকটি মানুষ এই এরোগেন্ট বদমেজাজি ভিলেন টাকে ভয় পায়!আর পাবে না কেনো কি হিংস্র সে।আয়ানার ভাবনার ছেদ পড়ে ইরফানের কথায়_______

_____এতো কি ভাবছো জান?এরা সব আমার পোষা প্রাণী সামনের মানুষ গুলোকে দেখিয়ে। আমি যতোক্ষন অনমুতি না দিবো এরা কেউ উপরে চোখ তুলে তাকাবে ও না। আমি না চাইলে সারা দিন রাত এরা এখানেই থাকবে।।আর এরা ভুলে ও তোমার দিকে তাকাবে না, কারণ তোমার দিকে তাকানো মানে মৃত্যু!আর তা আমার হাতে!বলে বাঁকা হেসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ইরফান।।আয়ানা ইরফানের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে,, তার বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না যে এখান থেকে পালাতে পারবে সে।। বিশাল বড় বাড়িটা পুরো একটা এরিয়ে জুরে। বাড়িটা যেমন সুন্দর তেমনি তার পরিবেশ।।সারা বাড়ি জোরে গার্ড! কোনো জায়গায় বাকি নেই গার্ড ছাড়া।। বাড়িটার দেওয়াল ও বিশাল উঁচু এখান থেকে টপকানো ও যাবে না।এক কথায় ইরফান আয়ানাকে নিজের রাজ্যে বন্ধি করে ফেলেছে।।।আয়ানা এখন এই বিশাল বাড়িটায় বন্দি।।_________

________ইরফান আয়ানাকে শক্ত করে জড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে করে জোরে চিৎকার করে বলল________

“সবাই কান খুলে শোনে রাখো! এই হচ্ছে আমার জান মিসেস আয়ানা ইরফান খান। তোমাদের ছোট মালকিন সবাই তাকে সম্মান প্রদর্শন করো__________

____ইরফানের কথায় স্বায় জানিয়ে একজন খাস লোক এগিয়ে আসলো এবং আয়ানাকে উদ্দেশ্য করে মাথা নিচু করে বলল,,,______

“সালাম ম্যাম জান! কথাটা বলতে দেরী হয়েছে ইরফানের বাঘের মতো হুংকার দিতে দেরি হয় নি,,,,

_____ইরফান লোকটির গলা ধরে একদম উপরে তুলে ফেললো!শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় লোকটা পা নাড়াচাড়া করে ছটপট করতে লাগলো!তা দেখে আয়ানা ভয়ে কিছু দূর গিয়ে কাঁপতে লাগলো। শুধু আয়ানা নয় আশেপাশের সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে কাঁপছে।। লোকটার ছটপটানিতে মাথার কালো টুপিটা নিচে পরে যায়।। ইরফান লোকটিকে ছুরে মারে তাতে করে লোকটা ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে।। ইরফান লোকটিকে আবার কলার ধরে টেনে তুলে বলতে লাগে_________

______তোর সাহস কী করে হয় আমার জানকে ম্যাম জান বলার!অনলি ম্যাম বলবি! বুঝতে পেরেছিস কি বলেছি?_______

______লোকটি ভয়ে তাড়াতাড়ি মাথা নাড়লো!যার মানে বুঝতে পেরেছে। ইরফান লোকটার কলার ছেড়ে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।।লোকটা কাশতে কাশতে সেখান থেকে ভয়ে পালায়।।________

________ইরফান সবার দিকে তাকিয়ে আয়ানাকে নিজের সাথে মিশিয়ে জোরে চিৎকার করে বলতে লাগে,,,,,______

“অনলি ম্যাম নট মেনশন ম্যাম জান।ইজ দ্যা ক্লিয়ার চিৎকার করে________

জ্বি ছোট স্যার সবাই এক সাথে বলে উঠলো____

_______এলাকার প্রত্যেকে এবং কি বাহিরের সকলে ইমরান খানকে বড় স্যার কিংবা বড় হুজুর আর ইরফানকে ছোট স্যার বলে ডাকে। ইসহাককে সবাই দেখে না বিদায় তাকে ইসহাক স্যার বলে ডাকে।। মিসেস আসফিয়া খানকে এলাকার মহিলারা এবং কর্মচারী সকল ব্যাক্তিরা ম্যাম সাহেবা বলে ডাকে।।আর সাফিয়া কে ম্যাম জান বলে ডাকে।। সেই সুবাদে আয়ানাকে ও ছোট ম্যাম জান বলে ডাকে।। কিন্তু সে কি করে জানবে ,, যেখানে ইরফান ব্যাতিত কেউ আয়ানার দিকে তাকানো নিষেধ সেখানে তাঁর জানকে তার ভালোবাসার নামে ডাকবে।।।সে তা কখনো হতে দিবে না!!!!!_____________

________ইরফান আয়ানার হাত ধরে সেখান থেকে হন হন করে ভেতরে চলে গেলো।। ইরফান আয়ানাকে নিয়ে প্রবেশ করতে সেখানে এক এক করে আয়ানার বাড়ির সবাই উপস্থিত হলো। কিন্তু কাউকে আয়ানার সাথে কথা বলতে না দিয়ে উপরের রুমে নিয়ে গেলো।।‌‌_______

____আয়ানাকে ইরফানের পাশের রুমটায় নিয়ে এসেছে।।হালকা পিংক আর ধূসর রঙের রুমটা খুব বেশী সুন্দর করে সাজানো।। আজকে আয়ানা এখানে থাকবে।।একদম ইরফানের পাশাপাশি রুমে।। আয়ানা রুমটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর ইরফান আয়ানাকে।।। হঠাৎ আয়ানা নিজের পেটের উপর হাতের স্পর্শ পেতে চোখ দুটো চেপে বন্ধ করে ফেলে। ইরফান আয়ানার খোপা করা চুল গুলো খোলে দিয়ে তাতে মুখ ডুবিয়ে দেয়।।______

_____কী আছে তোমর মাঝে আয়ু জান ? কী আছে ? কেনো আমি এতো আসক্তি হয়ে পরি তোমার উপর।।। তুমি আমার নেশা!আর এই নেশায় আমি আসক্ত থাকতে চাই সারাজীবন।বলে আয়ানার চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে।।‌।।

_____ইরফানের এই নেশা ভরা ভয়েসে ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে আয়ানা।। ইরফান আয়ানার চুল থেকে মুখ উঠিয়ে আয়ানাকে সামনের দিকে ফিরালো।আয়ানা এখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে ।। ইরফান আয়ানার গালে চুমু খেয়ে বলল______

“আজকে সন্ধ্যার জন্য প্রস্তুত থেকও মেরি জান! আমি এখন একটু বাহিরে যাবো আর সন্ধ্যার সময় আসবো।। তুমি ঠিক সময় তৈরি হয়ে থেকবে।। দুপুরে খাবার নিয়ে তোমার আম্মি আসবে ফ্রেশ হয়ে খাবারটা লক্ষি মেয়ের মতো কমপ্লিট করবে।।।

ইরফানের কথায় মাথা নেড়ে সায় জানায় আয়ানা।। ইরফান মুচকি হেসে আবার বলতে লাগে,,,

___তুমি তোমার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে পারবে! কিন্তু ভুলে ও আগের মতো কাজ করো না !এখান থেকে তুমি আমার অনুমতি ছাড়া পালাতে পারবে না।। এখানে পদে পদে আমাকে পাবে।।।আর আমি চাইবো তুমি এমন কোনো ভুল না করো যার শাস্তি তোমার পরিবার ভোগ করতে হয়।।।।।_______

জ্বি।আয়ানা মাথা নিচু করে বললো।।।

___ইরফান আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে কিছুক্ষণ আয়ানার দিকে তাকিয়ে বাহিরে চলে যায়।।। ইরফান চলে যেতে আসফিয়া এসে আয়ানাকে দেখে যায়।।।

____দুপুরে আয়ানাকে ফ্রেশ করিয়ে খাবার খাইয়ে দেয় শীতল, সাথে অনেক উপদেশ ও।।শীতলের সব কথায় ইরফানকে নিয়ে নতুন জীবন ইরফানের সাথে মানিয়ে নেওয়া আরো অনেক কিছু।।আয়ানা শুধু মাথা নাড়িয়ে গেছে কিছু বলেনি।।। চোখের পানি ও আড়াল করেছে নিজের মায়ের কাছ থেকে।।আর কাউকে দেখাবে না নিজের কষ্ট কারণ তাকে কষ্ট পেতে দেখলে দ্বিগুণ কষ্ট হয় তার পরিবারের।।। জিসানের কথা ও কিছু বলে নাই।।। জিসানের মৃত্যু টা সম্পূর্ণ ভাবে মনে করতে পারছে না সব আবছা আবছা।। তবে ইরফান জিসানকে মেরেছে তা খুব ভালো করে মনে আছে তাঁর।। এখনো চোখে ভাসে জীসানকে হাঙ্গরের পেটে যেতে দেখার সিনটা।।।।

________________________________________________

সারা বাড়িতে কাজের লোকের ছুটাছুটি করে কাজ করছে।।।ডেকোরেশনের লোকেরা বাড়িটাকে সাজাচ্ছে এখনো অনেক কাজ বাকি।।‌অনেক মানুষ কাজ করছে কিন্তু একদিনের মধ্যে এতো কাজ আর এতো বড় বিয়ে একটু হিমসিম খেতে হচ্ছে।।।

_____কিছুক্ষন আগে কয়েক জন ডিজাইনার গার্ল এসে আয়ানাকে আজকের হলুদের লেহেঙ্গা এবং জুয়েলারি দিয়ে গেছে।। কিছুক্ষণ বাদে র্পালারের লোক আয়ানাকে তৈরি করতে আসবে।সব জিসান ঠিক করে রেখেছে।।।আয়ানার পাশে তুতুল বসে বসে নেড়ে নেড়ে সব দেখছে খুব দামী এবং রয়েল সব জিনিস।___________

_____আয়ানা তুতুলের পাশ থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়।তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুতুল।।।আয়ানাকে কিছু বলার মতো তার কাছে কিছু নেই।।আয়ানার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।।।‌‌

____আজকে গায়ের হলুদ মেহেন্দি আর কাল বিয়ে।।তারপর সারাজীবন এই চার দেয়ালে বন্দী।।।কী করে থাকবে।।কিছুই বুঝতে পারছে না।।। কেনো জীবন তাকে যেমন চেয়েছিল তেমন টা দেয়নী।।।সে ভালোবাসা চেয়েছিল কিন্তু এমন বিষাক্ত ভালোবাসা না।।।যে ভালোবাসা অন্যের মৃত্যুর কারণ হয় সেই ভালোবাসা সে চায় নি।।।এই বিষে ভরা ভালোবাসা শুধু ধ্বংস করবে।।।তার জিবনটাকে বিষিয়ে তুলবে।।। এমন অতিরিক্ত ভালোবাসা সে চায়নি।।।এসব ভেবে গরিয়ে পরলো দুই ফোটা অশ্রু কণা আয়ানার চোখ থেকে।।।।।।

#To_Be_Continued…….🌼

(কালকের পর্ব wedding special, সবাই গিফট নিয়ে এসো🥰😌)
#Happy_Reading

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here