কলঙ্কের ফুল – পর্ব ২০

0
351

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_২০
#Saji_Afroz
.
.
.
-কোথায় যাচ্ছিস তুই?
.
বাইরে বের হওয়ার সময় মায়ের ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লো রাজীব।
গম্ভীরমুখে জবাব দিলো-
আমি কি ছোট আছি আম্মা? সব কেনো তোমায় বলে করতে হবে?
-আজ সুপ্তির মা বাবা আসবেন। বাড়ির বাইরে যাসনা।
-উনারা আসুক, তাতে আমার কি!
-তুই ওদের মেয়ের জামাই হবি। তোর কিছুনা! তাছাড়া তারা আসবেন তোর আর সুপ্তির বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে।
.
মায়ের মুখে সুপ্তির সাথে তার বিয়ের কথা শুনে মাথাটা বিগড়ে গেলো রাজীবের।
চেঁচিয়ে বলে উঠলো সে-
আমি সুপ্তিকে বিয়ে করবো তোমায় বলেছিলাম?
তুমি আবার তোমার ভাইকেও আসতে বলে দিয়েছো! এতো কাবিল গিরি কে করতে বলেছে তোমাকে?
-রাজীব!
-কি রাজীব? তুমি জানোনা আমি মেহের কে ভালোবাসি? জানোনা বলো?
-হুম।
-তাহলে?
-কিন্তু…..
.
মাকে থামিয়ে রাজীব শান্ত গলায় বললো-
আমি মেহেরদের বাসায় যাচ্ছি। ওর খবর পাওয়া গিয়েছে আমার মন বলছে। কিন্তু তারা আমায় কিছু বলছেনা। তবে আমিও হাল ছাড়বোনা।
-ছ্যাচড়ার মতো লেগে থাকবি?
-হুম, তাই থাকবো।
.
আর কথা না বাড়িয়ে রাজীব হনহন করে বেরিয়ে যায় বাড়ির বাইরে।
.
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পেছনে ফিরে কুনসুম হক দেখতে পান, সুপ্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে হতভম্ব হয়ে। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
-সুপ্তি! আসলে রাজীব….
-থাক ফুফু। আমি সবটা শুনেছি। মা বাবারা রওনা হয়নি এখনো। এখানে এসে এসব দেখলে কষ্ট পাবে তারা। আমি বরং তাদের নিষেধ করি আসতে।
.
কথাটি বলে সুপ্তি ধীরেধীরে এগুতে থাকে নিজের রুমের দিকে।
.
.
.
-মেহেরীকা?
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতি দেখছিলো মেহেরীকা। মিলির ডাকে ঘোর কাটে তার।
-ভাবী? এসো।
-একা একা কি করা হচ্ছে?
-কিছুইনা।
-হুম। ধন্যবাদ দিতে আসলাম তোমায়।
-আমায়! কেনো?
-আদিকে দিয়ে আরিফকে বোঝানোর জন্য। তোমার জন্য আদি অফিসে জয়েন করেছে। এতে আরিফের চাপ কমবে অনেকটায়। আর আদি নাকি আরিফকে বলেছে সে আমায় সময় দেয়না বলে মনমরা থাকি আমি। আরিফ যখন তাকে জিজ্ঞাসা করে কে বলেছে এসব তখন তোমার নাম বলে আদি।
-এসব আরিফ ভাইয়া বলেছে তোমায়?
-হুম কাল রাতে। আর….
-কি?
-কালকের রাতটা স্পেশাল করেছে আমার জন্য। ফুল, বেলুন দিয়ে রুমটা সাজিয়েছিলো। আমার জন্য নতুন শাড়ি এনেছিলো আর আমাকে অনেক…
.
কথাটি বলে থেমে যায় মিলি।
.
মেহেরীকা বুঝতে পারলো সে কি বলতে চেয়েছে। কিন্তু লজ্জায় বলতে পারেনি।
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে মেহেরীকা বললো-
অনেক কি? বলো বলো?
-ধ্যাত কিছুনা।
-আচ্ছা কিছুনা।
-শুধু আমার জন্য না, তোমার জন্যও উপহার এনেছে তোমার ভাইয়া।
-ওমা তাই!
-হুম, বিছানার উপরে রাখা আছে। দেখে নিও।
-ধন্যবাদ বলিও ভাইয়াকে।
-তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার জন্য আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়েছে।
-ও তাই উপহার দিয়ে ঘুষ দিচ্ছো?
.
মেহেরীকার কথা শুনে উচ্চশব্দে হেসে উঠে মিলি। তার সাথে তাল মিলিয়ে সে নিজেও হেসে চলেছে।
.
.
.
-আপনি কি চাইছেন বড় ধরনের কোনো ঝামেলা করি আমি?
.
রাজীবের কথা শুনে শান্ত গলায় কাসেম আহম্মেদ জবাব দেন-
সব ঝামেলা তুমিই করেছো। আরো বাকি আছে?
-এতো কথা না বলে বলুন আমার মেহের কোথায়?
-তোমার মেহের!
-হুম আমার মেহের।
-সে আর তোমার মেহের নেই।
.
কাসেম আহম্মেদ এর কথা শুনে রাজীবের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
অবাক চোখে তাকিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে-
কি বলছেন কি এসব?
-যা বলছি সত্যি বলছি। এতো অবাক হওয়ার কি আছে! বিয়ের আসর ছেড়ে না পালালে সেদিনই তার বিয়ে হয়ে যেতো। অথচ সেদিন তুমি জানতে সব তবুও কিছু করোনি। আজ কেনো এতো মেহের মেহের করছো তুমি? বেঁচে আছে কিনা সঠিক জানতে চাইছো? জীবিত লাশ বানিয়ে শান্তি হচ্ছেনা তোমার? কি ভাবছো! বেঁচে থাকলে এসে সে তোমার পথের কাটা হবে? মোটেও না। শুনে রাখো রাজীব, মেহেরীকা এখন অন্য কারো স্ত্রী। আর ও যেখানেই আছে অনেক ভালো আছে। এখন তুমি যেতে পারো। এটা আমার দোকান, বাসা নয়।
.
কাসেম আহম্মেদ এর এতোগুলো কথা হজম করতে সময় লাগে রাজীবের। তার মেহের অন্য কারো হয়ে গিয়েছে। এটা কি মানা যায়? নাহ, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আসল কাহিনি না জেনে হাল ছাড়া ঠিক হবেনা, কিছুতেই না।
.
আপনমনে কথাগুলো বলে রাজীব ঠিক করে সে রায়হানের বাসায় যাবে। তার থেকে যদি কোনো সাহায্য পাওয়া যায়?
.
.
.
ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা ৭টা…..
আনিকা বসে আছে মেহেরীকার পাশে বিছানার উপরে।
-তোর শ্বশুড়বাড়ির সকলে এতো ভালোরে! মনে হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই বিয়েটা হয়েছে।
-হুম।
-সবাইকে দাওয়াত তো দিলাম এবার তোকেও বলছি, আমার বিয়েতে অবশ্যই যেতে হবে।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মেহেরীকা বললো-
সম্ভব নারে।
-কেনো?
-ওখানে রাজীব থাকবে।
-তো!
-তো? ও আমাকে আদিয়াত এর সাথে দেখবে। কতোটা খারাপ লাগবে ওর ভেবেছিস?
-তুইও তাকে সুপ্তির সাথে দেখবি।
-মানে?
-মানে রায়হান তাদের পরিবারের সকলকে দাওয়াত দিয়েছে। ওদের বাসায় এখন সুপ্তি আছে। বিয়েতে তাকেও নিয়ে আসবে।
-বিয়ে হয়েছে তাদের?
-রায়হানের কাছে শুনলাম সামনেই বিয়ে। তাছাড়া রাজীব ভাই তোকেও বলেছিলো তিনি সুপ্তিকে বিয়ে করবেন। বলেননি?
-হু।
-দেখ মেহেরীকা, এভাবে লুকোচুরি করে লাভ কি! আজ নয়তো কাল ঠিকই জানতে পারবে সবাই। আসিস প্লিজ। আমার বিয়েতে তুই থাকবিনা এটা কি করে হয় বল!
.
-কার বিয়ে?
.
আদির ডাকে পেছনে ফিরে আনিকা। আদিকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
আপনি মেহেরীকার হাসবেন্ড?
-হুম। কিন্তু আপনাকে চিনলাম না।
-আমি ওর বান্ধবী। আমার বিয়ে ২দিন পর।
-ওয়াও!
-মেহেরীকাকে দাওয়াত দিতে এসেছিলাম। কিন্তু সে যাবেই না বলছে। ভাইয়া প্লিজ নিয়ে যাবেন তাকে?
-কেনো যাবেনা! অবশ্যই যাবে। ওকে নেওয়ার দায়িত্ব আমার।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
-আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
.
আদি ওয়াশরুমের দিকে এগুতেই আনিকা দুষ্টু হাসি মেহেরীকার উদ্দেশ্য বললো-
রাজপুত্র একটা।
-কে?
-তোর বর। রাজকপাল তোর।
.
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মেহেরীকা বললো-
আমার আর কপাল!
.
.
.
নিজের রুমে বসে রায়হানের সাথে বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে রাজীব।
রায়হান বলেছে মেহেরের কোনো খবর আনিকা জানেনা। আসলেই কি সে জানেনা? কিন্তু মেহের যদি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে থাকে তাহলে আনিকার সাথেও করবে। আনিকা কি তাহলে রায়হান কে সত্যিটা বলেনি? কেনো? মেহের নিষেধ করেছে? সত্যিই কি তার মেহের অন্য কারো হয়ে গিয়েছে?
বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে রাজীব। একটা ভুলের শাস্তি এভাবে পেতে হবে ভাবেনি সে। এমন কেনো জীবনটা! সব পেয়েও হারালো আবার পেতে পেতেও হারালো সে।
আপনমনে কথাগুলো ভেবে রাজীবের চোখ ছলছল করে উঠে।
-আসবো?
.
সুপ্তির ডাকে আঙুল দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে রাজীব বললো-
তুই আবার কেনো এসেছিস?
.
ভেতরে এসে রাজীবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সুপ্তি জিজ্ঞাসা করলো-
পেয়েছো তোমার মেহের কে?
-কাঁটা গায়ে নুনের ছিটে দিতে এসেছিস তুই?
-নাহ, ওসব ছিটেফোঁটা আমি দিতে আসিনি। তোমার খুশিতেই আমার খুশি। তুমি যদি মেহেরীকা কে নিয়ে সুখে থাকো আমার চেয়ে খুশি কেউ হবেনা।
.
রাজীব কে চুপ থাকতে দেখে সুপ্তি আবারো বলা শুরু করলো-
জানো রাজীব ভাই, সবটা জেনেও আমি পড়ে আছি কেনো? মেহেরীকার সাথে যদি তোমার বিয়ে না হয় অন্য কাউকে বিয়েতো করবে তুমি, চিরকুমারতো থাকবেনা। কারণ এই বাড়ির একমাত্র ছেলে তুমি। ফুফুর দিকে তাকিয়ে হলেও বিয়েটা তুমি করবে অন্য কাউকে। আর অন্য কেউটা যদি আমি হয় সমস্যা কি বলো? জানি মেহেরীকার জায়গা আমি নিতে পারবোনা। কিন্তু ধীরে ধীরে তোমার মনে নতুন একটা জায়গা করে নিতে পারবো, এতোটুকু বিশ্বাস আমার আছে। আমার তোমাদের মাঝে আসার কোনো ইচ্ছে নেই। যেদিন তোমাদের বিয়ে হয়ে যাবে খুশি মনে মা বাবা যাকে বিয়ে করতে বলবেন, করবো।
-আসেনি আজ মামারা?
-না, নিষেধ করেছি আমি।
-হুম।
.
কথাগুলো বলে সুপ্তি দরজার দিকে পা বাড়ালে রাজীবের ডাকে থেমে গিয়ে বললো-
কি?
-মনে কষ্ট নিসনা। ভালোবাসার মানুষকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রনা অন্তত তুই বুঝবি।
-হুম।
.
.
.
সকাল ৭.৩০টা…
সকলে নাস্তা সেরে ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডায় মেতে আছে। এমন সময় লাগেজ হাতে সানিয়া এসে বললো-
আমি চলে যাচ্ছি।
.
সানিয়ার এমন কান্ডে সকলের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
মিলি এক গাল হাসি নিয়ে তার উদ্দেশ্যে বললো-
তোমার সব জিনিসপত্র নিয়েছো? না মানে কিছু ফেলে গেলে ওটা নেওয়ার নাম করে আবার আসবে তাই বলছিলাম আর কি।
.
মিলির কথা শুনে আমজাদ চৌধুরী ধমকের সুরে বললেন-
আহ মিলি! কখন, কাকে কি বলতে হয় কিছুইতো জানোনা দেখছি!
.
বাবার মুখে এমন কথা শুনে আরিফ বলে উঠলো-
দুঃখিত বাবা, আজ মিলি সঠিক মানুষকে সঠিক কথাই বলেছে।
.
আরিফের কথা শুনে যতটা না অবাক হয়েছে মিলি তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছেন আমজাদ চৌধুরী।
গম্ভীর গলায় তিনি বললেন-
আরিফ, তুমিও দেখছি বউ এর তারিফ দারী করতে শিখেছো!
.
-আঙ্কেল প্লিজ? আমার জন্য আপনারা তর্ক করবেন না।
.
সানিয়ার কথা শুনে আমজাদ চৌধুরী তার পাশে গিয়ে বললো-
এরশাদ এসেছে? আমাকে কিছু জানায়নি।
-খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
-তুমি কোথায় যাচ্ছো এখন?
-বান্ধবীর বাসায়।
-আমার এতোবড় বাড়ি থাকতে তুমি…..
-অনেকদিন ছিলাম আঙ্কেল। আজ আসি। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা।
-ঠিক আছে, তুমি যা ভালো মনে করো।
.
আমজাদ চৌধুরী আর কোনো কথা না বলে এগিয়ে যায় নিজের রুমের দিকে।
.
সানিয়ার উদ্দেশ্যে সালেহা চৌধুরী বললেন-
সাবধানে যাস মা। আমি যাই তোর আঙ্কেল এর কাছে।
.
কথাটি বলে সালেহা চৌধুরীও নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যান।
.
বড়দের চলে যেতে দেখে মিলি বলে উঠলো-
এবার আসো তুমি।
-হুম।
.
সানিয়ার পাশে গিয়ে মেহেরীকা তাকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো-
আমি জানি তুমি কেনো চলে যাচ্ছো। তোমাকে আমি আটকাবো না তবে একটা কথা বলবো। তুমি যদি পবিত্র মন নিয়ে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসো আদিকে সে তোমারই থাকবে।
.
সানিয়া মুচকি হেসে ফিসফিস করে বললো-
তার জন্য তোমায় মরতে হবে, সতীনের ঘর করার ইচ্ছে নেই আমার।
.
মেহেরীকার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আদির পাশে গিয়ে সানিয়া বললো-
ভালোবেসেছিলাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো৷ আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তুমি একান্তই আমার হয়ে যাবে।
আসি আমি।
.
.
.
রাত ১১টা…..
আদি সোফায় বসে কবিতার বই পড়ছে।
মিলির সাথে রান্নাঘরের কাজ সেরে এসে মেহেরীকা, আদির উদ্দেশ্যে বললো-
শুধু পড়লে হবে? লিখতে হবেনা?
-কি লিখবো?
-কবিতা। অনেক ভালো কবিতা লিখো তুমি। একটা বউ বের করো। সবার আগে আমি কিনবো।
-আমি বই বের করলে তোমায় কিনতে হবে নাকি! নিজেই উপহার দিবো।
কিন্তু কথা হচ্ছে তুমি কিভাবে জানলে আমি ভালো কবিতা লিখি? না মানে আমার লেখা কোনো কবিতা তুমি পড়োনি।
.
পড়েছিলাম কিন্তু চুরি করে। তবে এটা বলা যাবেনা।
সত্যি কথা চেপে গিয়ে মেহেরীকা বললো-
শুনেছি আরকি।
-ওহ।
-লেখা শুরু দাও। বই পড়বো তোমার।
.
কথাটি বলে মেহেরীকা বিছানা গুছাতে থাকে।
এদিকে আদি ভাবতে থাকে বই বের করলে বই এর নাম কি দিবে সে?
উম্ম…..
পেয়েছি! মেহেরজান।
.
আদির প্রথম প্রকাশিত বই এর নাম হবে মেহেরজান। যেখানে তার মেহেরকে উৎসর্গ করেই সব কবিতা লিখা থাকবে।
.
আপনমনে এসব ভেবে হেসে চলেছে আদি।
-এইযে?
.
মেহেরীকার ডাকে আদি বলে উঠে-
হুম?
-আজ সানিয়া চলে গিয়েছে। যাওয়ার সময় কি বলেছে মনে আছে? একান্ত করে তোমাকে পেতে চায় সে।
-হুম।
-তার মানে ও তোমায় সত্যি ভালোবাসে।
-একটা কথায় কি ভালোবাসা প্রমাণ হয় মেহের?
-হয়না?
-না। অপেক্ষা করো। নতুন কোনো প্লান করে আবার আসবে সে।
-হু।
-কাল আনিকার গায়েহলুদ না?
-হুম।
-শপিংমলে নিয়ে যাবো তোমায় বিকেলে।
-কেনো?
-বারে! আনিকার জন্য উপহার নিবেনা? তাছাড়া তোমার নিজেরও কেনাকাটা করা উচিত। বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা।
-আমি যাবোনা।
-কেনো!
-ভালো লাগছেনা।
-আমি কিন্তু আনিকাকে কথা দিয়েছি তোমায় নিয়ে যাবো।
-ঘুম পাচ্ছে আমার।
.
আর কোনো কথা না বলে লাইট বন্ধ করে মেহেরীকা শুয়ে পড়ে।
.
আদি বুঝতে পারেনা মাঝেমাঝে কি হয় এই মেয়ের!
.
.
.
মিলি রুমে ঢুকতেই তাকে টেনে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো আরিফ।
-উহু ছাড়ো আরিফ।
-কেনো ছাড়বো? এতোদিন ধরিনি বলে এতো অভিমান করেছো,মেহেরীকার কাছেও নালিশ দিয়েছো। আজ কেনো ছাড়ো ছাড়ো বলছো?
.
আরিফের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মিলি বললো-
শাড়িটা বদলে আসি আগে?
কাজ করার ফলে ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছি।
.
আরিফ আবারো মিলিকে নিজের কাছে টেনে এনে বললো-
আমিইতো। থাক না ঘাম।
-আরে গন্ধ লাগবে।
-নাহ সুগন্ধ।
.
আরিফের কথায় উচ্চশব্দে হেসে উঠে মিলি।
আরিফ তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে মিলি বললো-
আজ তুমি প্রথম বাবার কাছে আমার হয়ে কথা বলেছো।
-আজ তুমি যা বলেছো ঠিক বলেছো তাই।
-এমনিতে বলিনা?
-উম্ম… নাহ।
.
আরিফের কথা শুনে তার বুকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মারতে থাকে মিলি।
তার কাণ্ড দেখে আরিফ বলে উঠে-
আজ তাহলে বউ এর মার খেয়েই রাত কাটাতে হবে!
.
.
.
.
আজ আনিকার গায়েহলুদ। চেনাপরিচিত সকলে অনেক আগে চলে আসলেও তার বান্ধবী মেহেরীকার কোনো খবর নেই। অনেকবার ফোনও দিয়েছে সে। কিন্তু রিসিভ করেনি মেহেরীকা। তবে কি আসবেনা মেহেরীকা?
এসব ভেবে আনিকার মনটায় খারাপ হয়ে যায়।
.
না যাবোনা আমি। কিছুতেই না। আমি যদি যাই গায়েহলুদে, রাজীব নিশ্চয় খবর পেয়ে আনিকাদের বাসায় চলে আসবে। রাজীবের মুখোমুখি হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি আমি। ওর মায়াভরা মুখটা দেখে দূর্বল হয়ে যাবো আমি, সামলাতে পারবোনা নিজেকে। এই অভিশপ্ত জীবন থেকে দূরেই থাক রাজীব, দূরেই থাক।
.
রিং টোনের শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে মেহেরীকা।
বাবার ফোন দেখে রিসিভ করে বলে-
হ্যালো বাবা।
-তুই কি আনিকার গায়েহলুদ এ আসবি?
-না বাবা।
-সেই ভালো। আসিস না মা।
-যাবোনা, চিন্তা করোনা।
.
ফোনের লাইন কেটে কাঁদতে থাকে মেহেরীকা অঝর ধারায়।
.
.
.
বেস্ট ফ্রেন্ড এর গায়েহলুদে না এসে থাকতেই পারবেনা মেহের। তবে আজ তার মেহেরের দেখা পাবে সে!
.
এসব ভেবে পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করে আনিকার ছোট ভাইয়ের নাম্বারে।
-হ্যালো অনিল?
-হুম ভাইয়া বলেন?
-তোমাদের ওখানে মেহেরীকা এসেছে?
-কই নাতো!
.
হতাশ কণ্ঠে রাজীব বললো-
যদি সে আসে আমায় খবর দিতে পারবে?
-কেনো পারবোনা!
-আচ্ছা, মনে থাকে যেনো।
-ঠিক আছে ভাইয়া।
.
রায়হানের বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে আনিকার পরিবারের সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক হয় রাজীবের। আর এই সুযোগটায় আজ সে কাজে লাগিয়েছে।
এখন শুধু একটা ফোনের অপেক্ষা। অনিল এর ফোন আসলেই রাজীব ছুটে যাবে তার মেহেরের কাছে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here