কলঙ্কের ফুল – স্পেশাল পর্ব

0
449

#কলঙ্কের_ফুল
#ঈদ_স্পেশাল
#Saji_Afroz
.
.
.
পড়ন্ত বিকেলবেলায় আলো ছায়ার খেলায় মুখোরিত হয়ে আছে প্রকৃতির সুর।
গাছে গাছে বসে থাকা পাখির কলরব কানে বাজছে মেহেরীকার। শুনতে কি ভালোই না লাগছে তার! সাথে স্নিগ্ধ বাতাস তাকে স্পর্শ করছে। আর অজানা এক ভালো লাগা কাজ করছে তার মনে।
মেয়েদের জীবনটা কেমন যেনো অদ্ভুত। মাঝপথে সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে একদল অচেনা মানুষের সাথে সারাটাজীবন কাটিয়ে দিতে হয়।
কিন্তু তার বেলায় এই নিয়মটা অদ্ভুত মনেই হয়না। মনেহয় এটাই যে সব থেকে বড় প্রাপ্তি। আদিয়াত ও তার পরিবার মেহেরীকার জীবনে আর্শীবাদ স্বরূপ।
.
বিছানায় শুয়ে থাকা আদরীকার কান্নার শব্দ শুনতে পেলো মেহেরীকা। তাড়াহুড়ো করে বারান্দা থেকে বেরুতেই দেখতে পেলো আদি তাকে নিজের কোলে তুলে নিয়েছে।
আদির কোলে নিজের জায়গা পেতেই কান্না থামিয়ে মুখে হাসির রেখা ফুটালো আদরীকা।
ভ্রু জোড়া কুচকে গলার স্বর গম্ভীর করে আদির উদ্দেশ্যে মেহেরীকা বললো-
তুমি আজো অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছো।
-হু। কি সমস্যা?
-কি সমস্যা মানে? কই! ভাইয়াকে কোনোদিন আসতে দেখলাম না।
-ভাইয়া আসেনা বলেইতো আমি আসতে পারি। এখন চুপ থাকো তো। আমার মেয়ের সাথে খেলতে দাও আমায়।
.
আদির পাশে এসে তার কোল থেকে আদরীকাকে নিতে নিতে মেহেরীকা বললো-
কতবার বলেছি তোমাকে? এভাবে বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে ওকে কোলে নিবানা। মনে থাকেনা?
-উহু! দেখলেই যে নিতে ইচ্ছে করে।
-ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর নিবে। এক্কেবারে ইফতার পর্যন্ত দায়িত্ব তোমার।
-আমিতো সারাজীবনই নিতে পারবো।
-আচ্ছা তাই!
.
মেহেরীকার কাছে এসে তার কপালে আসা চুলগুলো ঠিক করে আদি বললো-
আজ বাচ্চার সাথে সাথে বাচ্চার মাকেও কোলে নিতে মন চাইছে।
.
মুচকি হেসে মেহেরীকা বললো-
তুমি কি ফ্রেশ হয়ে আসবা নাকি আদরীকাকে তার দাদির কাছে নিয়ে যাবো?
-উফফ… হুমকি ছাড়া আর কিইবা জানো! যাচ্ছি।
.
.
.
ইফতার তৈরীর জন্য মেহেরীকা রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই মিলি বলে উঠলো-
আদরীকা কার কাছে?
-তার বাবার কাছে।
-আজো চলে এসেছে?
-হু।
-নিজেদের অফিস হয়াতে ঈদ চলে আসাতেও অফিস করতে হচ্ছে দুই ভাইকে।
– সবটা তো তাদেরই সামাল দিতে হয় ভাবী।
-তা জানি।
-আচ্ছা ভাইয়া কি ঈদের সময়ও অফিসে যায়?
.
মেহেরীকার কথায় উচ্চশব্দে হেসে উঠলো মিলি। হাসতে হাসতেই বললো-
যদি পারতো তাহলে চলেই যেতো। যখন নতুন নতুন বাবা ওকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন সে কি করেছে জানো?
-কি?
-ঈদের দিন অফিসে যাবার জন্য তৈরী হয়ে নিয়েছিলো।
-তারপর?
-তারপর আর কি! বাবা সে কি বকাবকি করলো ওকে। এরপর থেকে এমন পাগলামি আর করেনা।
.
মিলির কথা শুনে হাসলো মেহেরীকা। মিলিকে উদ্দেশ্যে করে বললো-
আজ ইফতারে কি কি চলবে ভাবী?
.
.
.
একই সাথে সকলে ইফতার করতে বসেছে একই টেবিলে।
আরিফও আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি এসেছে।
সাইরেন বাজতেই খাওয়া শুরু করলো সবাই।
আদির দিকে তাকিয়ে সালেহা চৌধুরী জিজ্ঞাসা করলেন-
আদি তোর মেয়ে কইরে?
-ফুল ঘুমোচ্ছে।
.
আমজাদ চৌধুরী মেহেরীকার উদ্দেশ্যে বললেন-
বউমা? হালিম টা অনেক মজা হয়েছে। নিশ্চয় তুমি করেছো?
.
মৃদু হেসে মেহেরীকা জবাব দিলো-
জ্বী বাবা।
-শুনলাম আজ সৌদি আরবে ঈদ হয়ে গিয়েছে তাহলে কাল আমাদের হবে।
.
পিয়াজু খেতে খেতে আদিয়াত বললো-
যদি চাঁদ দেখা যায় তবে আর কি।
-হুম। তা ঈদ উপলক্ষে খাবারের আইটেম কি কি করবে ঠিক করেছো তোমরা?
.
মুচকি হেসে মেহেরীকা বললো-
আপনি কি খেতে চান তাই বলুন বাবা।
.
আমজাদ চৌধুরী কিছু বলার আগেই সালেহা চৌধুরী বললেন-
মিষ্টি কিছুর কথা একদমই বলবেনা তুমি। ডায়াবেটিস এর কথা মাথায় রেখো।
-বউমা আমাকে ঝাল খাইয়ে অভ্যাস করে ফেলেছে এই কয়েকদিনেই, চিন্তা করোনা। আমিতো কাচ্চি বিরিয়ানির কথা বলতে চাইছি। সেটাও কি খেতে পারবো না?
-হুম তা পারবে।
.
মেহেরীকাকে উদ্দেশ্য করে আমজাদ চৌধুরী বললেন-
তাহলে আমার জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি করবা তুমি নিজের হাতে।
.
শ্বশুড়ের কথা শুনে মেহেরীকা বললো-
নিশ্চয়।
.
.
সবার কার্যকলাপ দেখে মুখটা ভার করে মিলি বলে উঠলো-
আমাকে কেউ কিছু করতে বলছেনা। আমি কি খুব খারাপ রান্না করি?
.
মিলির কথা শুনে হেসে উঠলো সকলে।
সালেহা চৌধুরী বললেন-
আমার জন্য কদুর সেমাই করো তুমি।
.
মুখে হাসি এনে মিলি বললো-
ঠিক আছে। আর আরিফ সাহেব? আপনার জন্য কি করবো?
.
হালকা কেশে আরিফ বললো-
তুমি যা করো তাই দিও।
.
সবার হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললেন সালেহা চৌধুরী।
এতো তাড়াতাড়ি সবটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে ভাবতে পারেননি তিনি।
আমজাদ চৌধুরীও সবটা মেনে নিবেন এতো সহজে তার অজানা ছিলো।
অবশ্য মেহেরীকার মতো বউমা আর আদরীকার মতো নাতনি পেলে রাগ করে কি থাকা যায়?
মোটেও না। আদরীকাতো এই চৌধুরী বাড়ির আলো। সকলের চোখের মনি সে।
এখন শুধু একটাই আশা, এই বাড়ির প্রত্যেকেই আজীবন এইভাবেই ভালো থাকুক।
.
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ১১টা…..
সোফার উপর বসে আদরীকাকে কোলে নিয়ে খুনসুটিতে মেতে আছে আরিফ।
তা দেখে আমজাদ চৌধুরী বললেন-
তুই বাসায় আসার পর থেকেই আমার নাতনিকে কাছেই পাইনা আমি।
-ও কি শুধু তোমার নাতনি? আমার ভাইজি না বুঝি?
-তা বাচ্চা এতো ভালো লাগলে নিজে একটা নিচ্ছিস না কেনো?
.
বাবার কথা শুনে হেসে উঠলো আরিফ। হাসতে হাসতেই বললো-
আদরীকা বড় হওয়ার জন্য। সে বড় হলেইতো তার বোন/ভাইয়ের যত্ন করতে পারবে।
.
আরিফের কথা শুনে তার দিকে এগিয়ে এসে আদি বললো-
যত্ন করার মানুষের অভাব হবেনা ভাইয়া। তুমি আমার ফুলের জন্য খেলার সাথী এনে দাওতো।
.
বাপ ছেলেদের কথা শুনে দূর থেকে হেসে চলেছে সালেহা চৌধুরী, মেহেরীকা, মিলি ও দিবা।
মিলিকে উদ্দেশ্য করে দিবা বললো-
হুম ভাবী। এবার আরেকটা পুচকু এনে দাও আমাদের জন্য।
.
লাজুক স্বরে মিলি বললো-
এতো করে যখন বলছো তবে পুচকু একটা আনার কথা ভাবাই যায়।
.
মিলির কথা শুনে খোচা মেরে দিবা বললো-
তোমার বুঝি ইচ্ছে নেই?
.
এপর্যায়ে মুখ খুললেন সালেহা চৌধুরী-
আহা! আমি একজন বয়স্ক মানুষ এখানে বসে আছি সেই খেয়াল তোদের আছে?
.
সালেহা চৌধুরীর কথা শুনে সকলে নিশ্চুপ হয়ে গেলে তিনি বললেন-
আমিও কিন্তু আরেকটা পুচকে চাই।
.
আবারো হাসির রোল পড়লো সবার মাঝে।
মেহেরীকা হাসতে হাসতেই বললো-
শুধু গল্প করলে চলবে নাকি কাল ঈদের জন্য খাবারের আয়োজন করতে হবে?
.
মেহেরীকার কথা শুনে সালেহা চৌধুরী বললেন-
তাতো এখন থেকেই করতে হবে। আমাদের বাড়ির নাম চৌধুরী বাড়ি বলে কথা!
.
.
.
রাত ১২.৩০ হয়ে গেলো কিন্তু মেহেরীকার কোনো খবর নেই। আদিয়াত সেই কখন থেকেই রুমটা সাজিয়ে রেখেছে তার জন্য।
ভাবতে ভাবতেই দরজা ঠেলে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো মেহেরীকা।
আদিয়াত চুপচাপ আদরীকার পাশে বসে পড়লো।
আদরীকার মাথায় হাত রেখে বললো সে-
আদরিকা হলো আমাদের
বাগানের সুখের ফুল,
মনের মতো গড়বো তাকে
করবো না যে ভুল।
এক পা দু পা করে
হবে সে অনেক বড়,
অন্যায় কে দিবেনা প্রশ্রয়, হবে না জড়োসড়ো।
ফুল হলো আমাদের
রাজ্যের রাজকন্যা,
সুখের ছিলোনা শেষ,,
শেষ প্রহরে এসেও বলব
ভালোই ছিলাম বেশ।
.
চারপাশটা দেখে আদির দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা বললো-
মেয়েকে কবিতা শোনানোর জন্য রুম সাজিয়ে ফেলেছো?
.
আদি দেখলো আদরীকা ঘুমিয়ে পড়েছে। সে আদরীকাকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে বললো-
ঈদ মোবারক।
-তোমাকেও ঈদের শুভেচ্ছা। কিন্তু এসব কি ঈদ উপলক্ষে?
-তোমার আমার আর ফুলের এক সাথে প্রথম ঈদ বলে কথা। সেই উপলক্ষে।
.
মেহেরীকার হাত ধরে টেবিলের পাশে তাকে নিয়ে আসলো আদিয়াত৷ টেবিলের উপরে রাখা লাভ শেইপের একটা কেক। যার উপরে লেখা আছে, হ্যাপি ঈদ ডে।
কেকটি দেখে মেহেরীকা বলে উঠলো-
তুমি পারোও বটে!
.
দুজনে একসাথে কেক কাটার পরে হাতে সামান্য কেক নিয়ে মেহেরীকাকে খাইয়ে দিলো আদি। দুষ্টুমির ছলে মেহেরীকার নাকে কেক লাগিয়ে দিতেই সে বলে উঠলো-
ওহহো আদিয়াত! বাচ্চামি স্বভাবটা কি যাবেনা তোমার?
.
কথাটি বলে মেহেরীকা ওয়াশ রুমে দিকে এগুতে চাইলে আদি তাকে নিজের কাছে টেনে এনে বললো-
আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
.
মেহেরীকার নাকের উপর লাগানো কেক নিজের জিভ দিয়ে তুলে নিলো আদি।
আদির সাথে মেহেরীকা একই রুমে থাকছে অনেকদিন হতে চললো। কিন্তু আদিয়াত এমনটা এর আগে কখনো করেনি। তাই হঠাৎ আদিয়াতের এমন কান্ডে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মেহেরীকা। নিজেকে আদির কাছ থেকে সরাতেই সে বলে উঠলো-
সরি মেহের। আমি আসলে…. না মানে…
.
আদিকে এমন আমতাআমতা করতে দেখে মনটা ছোট হয়ে গেলো মেহেরীকা। এসবের জন্য কি নিজের বউকে সরি বলতে হয়? মোটেও না।
আপনমনে এসব ভেবে
আদিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে আচমকা জড়িয়ে ধরলো মেহেরীকা।
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আদি বললো-
বউকে আদর করার লাইসেন্স কি পেতে পারি আজ?
.
লাজুক স্বরে মেহেরীকা জবাব দিলো-
হু।
.
মেহেরীকাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল আদি। তারপর নিজের ভর টাও ছেড়ে দিলো সে মেহেরীকার শরীরের উপর।
পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে আদির নিশ্বাসের মাঝে ডুবে যেতে লাগলো সে। পুরো শরীরজুড়ে একটি ঘোর কাজ করতে লাগলো মেহেরীকার।
মেহেরীকার শ্বাস ধীরেধীরে ভারী হতে শুরু করেছে বুঝতে পেরে তার নাকের সাথে নাক ঘষলো আদি।
আদির এক একটা স্পর্শ মেহেরীকার সারা শরীর শিহরিত করে তুলছে।
বুকের ভেতর থেকে শুধু ধরাম ধরাম হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ ভেসে আসছে তার কানে। হার্টবিট যে কতোতে উঠে এসেছে সেটা তার অজানা। আদির কাছে আসায় এতোটা ভালোলাগা কাজ করবে জানলে কখনো
এতোটা সময় এভাবে দূরে দূরে থাকতো না সে, ভেবেই আদিয়াতের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরলো মেহেরীকা।
আদি মুখ তুলে তার উদ্দেশ্যে বললো-
এই মেহের?
.
কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে মেহেরীকা বললো-
-হু?
-শুধু নিলেই হবে নাকি?
.
চোখ জোড়া খুলে আদির কপালে গভীরভাবে একটি চুমু বসিয়ে দিলো মেহেরীকা।
মেহেরীকার কাছে সাড়া পেয়ে তার মাঝে মিশে যেতে থাকলো আদিয়াত।
.
.
.
ফযরের আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙলো আদির।
বুকের উপরে শুয়ে থাকা মেহেরীকার উদ্দেশ্যে সে বললো-
এই মেহের? নামাজ পড়বেনা?
.
ঘুমঘুম কণ্ঠে মেহেরীকা জবাব দিলো-
শুনেছি, উঠছি।
.
শোয়া থেকে বসে মেহেরীকা বললো-
দেরী হয়ে গেলো! গোসল সেরে নামাজ আদায় করে রান্নাঘরে যেতে হবে। আজ ঈদ না?
-দেরী হয়নি। ধীরেধীরে সেরে নাও সব।
-হু।
.
.
দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করার পর আচমকা আদির পায়ে ধরে সালাম করলো মেহেরীকা।
-এই কি করছো?
-ঈদের প্রথম সালাম তোমাকে করেছি। এবার আমার বকশিস দাও?
.
মেহেরীকার হাতটা এগিয়ে নিয়ে আদি বললো-
সেটা তুমি সালাম না করলেও পেতে। এখন চোখটা বন্ধ করে হাতটা এভাবে বাড়িয়ে রাখো। চোখ কিন্তু খুলবেনা। ঠিক আছে?
-হু, ঠিক আছে।
.
মেহেরীকার হাতে একটা প্যাকেট দিতেই চোখ মেললো সে।
উৎসুক দৃষ্টিতে সে আদির দিকে তাকিয়ে বললো-
এতে কি আছে?
-খুলেই দেখো।
.
প্যাকেট খুলতেই মেহেরীকা একটা বই দেখতে পেলো। বইয়ের উপরে নিজের ছবি দেখে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো সে।
আরো ভালো করে লক্ষ্য করতেই চোখে পড়লো বই ও লেখকের নাম।
~মেহেরজান~
~আদিয়াত চৌধুরী~
.
-এটা তোমার ঈদের বকশিস। আমার প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই তোমাকে নিয়ে।
.
আদির কথার পিঠে কোনো কথা না বলে চুপচাপ বই এর প্রথম পাতাটি খুলে প্রথম কবিতা পড়তে শুরু করলো মেহেরীকা।
————————
ভালোবাসি তোমায়
সূর্যের প্রখর
তৃপ্তিময় রোদে।
ভালোবাসি তোমায়
দিব্যি রাতের
মায়াতে।
ভালোবাসি তোমায়
নিশি চাঁদের
জ্যোৎস্নার ছায়াতে।
ভালোবাসি তোমায়
ভোরবেলার
শিশির ভেজা ঘাসেতে।
ভালোবাসি তোমায়
সকাল বেলার
পাখির ডাকেতে।
ভালোবাসি তোমায়
ফুলের স্নিগ্ধ
সৌরভেতে।
ভালোবাসি তোমায়
রাখালিয়ার
সুরের বাঁশিতে।
ভালোবাসি তোমায় মেহের
ভালোবাসবো জন্মজন্মান্তর,
একি সাথে আছি রবো মোরা
যুগে যুগান্তর।
.
একটি কবিতা নয় পুরো একটি কবিতার বই তাকে নিয়ে আদিয়াত লিখেছে! ভাবতেই চোখ বেয়ে সুখের অশ্রু ঝরতে লাগলো মেহেরীকার।
মেহেরীকার চোখে পানি দেখে তাকে কাছে টেনে আদি বললো-
কাঁদছো কেনো? কান্না করার জন্য করলাম এসব?
-খুশির কান্না এটা, তুমি বুঝবেনা। আমি কখনো ভাবিনি। আমার জীবনটা এতোটা সুন্দর হবে। নাহলে যে পরিস্থিতিতে আমি ছিলাম! আমার অতীত মনে হলেই…
.
মেহেরীকাকে থামিয়ে আদি বললো-
ভালো থাকতে হলে জীবনে থাকা চাই সন্তুষ্টি। আর সেজন্য বর্তমানকে বর্তমান দিয়েই বিবেচনা করতে হবে। উপভোগ করতে হবে সবটা আনন্দ আজই। কারণ যা চলে গিয়েছে তা আর ফিরে আসবেনা। যা আছে তা অমূল্য, তাকে সাজাতে হয়। এভাবেই ভালো থাকা যায়।
কেনো অতীত টেনে আনো বারবার?
.
কোনো কথা না বলে আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো মেহেরীকা।
আদি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো-
পাগলি একটা।
.
আদির বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে শান্ত গলায় মেহেরীকা বললো-
আদিয়াত?
-বলো মেহের?
-এভাবে সবসময় পাশে থেকো। আরো বেশি ভালোবাসতে চাই তোমায়।
.
(সমাপ্ত)
.
বি:দ্র: গল্পে কিন্তু নুপুর আপ্পির দুটি কবিতা উল্লেখ আছে। 😍 আর এই ছবিটা এতো সুন্দরভাবে এডিট করে দিয়েছে ছোট ভাই ফয়সাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here