ঘায়েল – পর্ব ১৭

0
212

#ঘায়েল
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
.
.
.
রুম্পা পুনমের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো-
আমার মামা বলেছে মানে এটা হবেই। তাই মামাকে দিয়েই কাজটা সারালাম। তোর রানবী ভাই কি করবে রে এখন! উফফ… আই লাভ রানবী! মানে আমার রানবীর কাপুর।
.
এতোক্ষণ পুরো বিষয়টা মজার ভেবে নিলেও, কেনো যেনো রুম্পার কথাটি একেবারেই পছন্দ হলোনা পুনমের।
সে কোনো কথা না বলে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে।
এদিকে সালাউদ্দিনের ফোনের রিং টোন বেজে উঠলো।
তিনি কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
রানবী রুম্পার উদ্দেশ্যে বললো-
আমি একটু আসছি।
.
রুম্পা ৩২দাঁত বের করে হেসে বলে উঠলো-
ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো।
.
.
রুম্পার কথাটি এতোটা কেনো খারাপ লাগলো পুনমের কাছে।
তোর ভাই আমার রানবী!
ওর রানবী মানেটা কি?
বিয়ে কি হয়ে গিয়েছে?
.
-হু হয়নি বিয়ে।
.
রানবীর কথা শুনে পুনম বলে উঠলো-
কি চায়? রুম্পার কাছে থাকা উচিত আপনার। সে আপনার হবু বউ।
-বউ থাকতে হবু বউ দিয়ে কি করবো আমি!
তবে হ্যাঁ, তবে তুমি তো আমাকে ডিভোর্স দিবে বলেছো। তাই ওকে লাইনে রাখাই যায়। কি বলো?
.
পুনমের রাগ হচ্ছে, প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার।
কেনো তা জানেনা। তবুও রাগ হচ্ছে।
.
রানবী হালকা কেশে বললো-
চলো।
-কোথায়?
-ড্রয়িং রুমে।
-আমি যাবো না।
-আরে তোমার তো খুশি হবার কথা। তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবে। আমার একটা গতি হোক, এটা তুমি চাওনা বলো?
-তার মানে ডিভোর্স টা দিবেন আপনি?
-হু।
-ওই রুম্পাকে দেখে এক লাফে ডিভোর্স দিতে রাজি। বাহ!
-হু। জেলাস?
-নো!
-হ্যাঁ।
-না!
-আরে হ্যাঁ।
-একদমই না।
-তবে চলো ড্রয়িংরুমে। আমার বিয়ের কথপোকথন শুনবে। নাহলে বুঝবো তুমি জেলাস হচ্ছো।
.
ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে পুনম বললো-
চলেন।
.
.
.
রানবী এসে দেখলো, সালাউদ্দিন ফোনে কথা বলে মাত্রই এসে বসেছে সোফায়।
তিনি বললেন-
তা রানবী, কবে নিয়ে যাচ্ছো তোমার সাথে ঢাকায়?
মাহিমের উদ্দেশ্যে রানবী বললো-
কিরে দোস্ত? তুই আঙ্কেল কে কিছু জানাস নি কেনো?
.
মাহিম বুঝে উঠতে পারলো না কি বলতে চায়ছে রানবী।
রানবী সালাউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বললো-
সে আপনি যখন চান তখনি যেতে পারেন।
.
রানবীর কথা শুনে সকলে চমকে গেলেও সালাউদ্দিন ও রুম্পা হেসে চলেছে।
সালাউদ্দিন বললেন-
আমি জানতাম তুমি রাজি হবে।
-হু, রাজি না হবার কি হয়েছে!
.
রুম্পা পুনমের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো-
তোর ভাই এর বন্ধু আমার হতে চলেছে।
.
পুনমের নাকটা ফুলতে লাগলো। মেয়ে কিভাবে এতো বেহায়া হতে পারে জানা ছিলোনা তার।
.
রানবী মৃদু হেসে বললো-
বউমার হাতের চা খেতে তো আসতে পারেনই।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে সালাউদ্দিন বললেন-
বউমা?
-হুম। আমি তো বিবাহিত।
-বিবাহিত!
.
আফরোজা ইসলাম, মাহাফুজ ইসলাম ও মাহিম ঘাবড়ে গেলো রানবীর কথা শুনে।
সত্যিটা কিছুতেই প্রকাশ করা ঠিক হবেনা।
রানবী বললো-
হু আমি বিবাহিত। আসলে যেখানে যাই এমন প্রস্তাব আসতেই থাকতো। তাই বাসার লোক বাধ্য হয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
.
রুম্পা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলে সালাউদ্দিন বললেন-
বিবাহিত ছেলেকেই পছন্দ করতে গেলি কেনো শুনি! যাক বাদ দে। এরপর অবিবাহিত কাউকেই পছন্দ করিস। রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
-আমি বিশ্বাস করিনা ও বিবাহিত।
এই রানবী, দেখি তোমার বউ এর ছবি?
.
আবারো চিন্তায় পড়ে গেলো সকলে।
রানবী মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললো-
এই যে, এইটা।
.
পুনম দেখলো নুসাইবার সাথে রানবীর ছবি। এই ছবিটি নিশ্চয় নুসাইনার এনগেজমেন্ট এর দিন তোলা হয়েছে।
তা দেখে পুনম মুচকি মুচকি হেসে চলেছে।
এদিকে ছবিটি দেখে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো রুম্পা।
সে হনহনিয়ে চলে গেলো ভেতরের দিকে।
রানবী বললো-
যাও পুনম। শান্তনা দিয়ে আসো তোমার বান্ধবী কে।
.
সালাউদ্দিন হালকা কেশে বললেন-
তাহলে আজ আমি উঠি।
.
সালাউদ্দিন চলে যেতেই মাহাফুজ ইসলাম বললেন-
কার ছবি দেখালে?
-বান্ধবীর সাথে একটা ছবি ছিলো।
বাহ! তোমার দেখি সেই বুদ্ধি।
.
মাহিম বললো-
হ্যাঁ! তবে আমকে দোস্ত বানিয়ে দিয়েছে। সাথে তুই তুকারিও ফ্রি।
.
রানবী মৃদু হেসে বললো-
সরি ভাইয়া।
.
.
.
পুনমের রুমে বসে এক নাগাড়ে কেঁদে চলেছে রুম্পা।
পুনম বললো-
রানবীর কাপুর কে পাসনি তাতে কি হয়েছে। রানবীর সিং কে নিশ্চয় পাবি।
.
রুম্পা কাঁদতে কাঁদতেই বললো-
কিন্তু আমার ওকেই চাই।
-ও তো বিবাহিত।
-সেটাই তো সমস্যা। আমি ভেবেছিলার ওর আলিয়া হবো আমি। এখন দেখছি আগে থেকেই আলিয়া আছে! তাহলে আমি কে?
-ভিলেন।
-মানে?
-মানে এতো কান্নাকাটি করে লাভ কি!
.
রুম্পা কেঁদেই চলেছে।
কিন্তু পুনমের মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করছে।
সে ভেবেছিলো, রানবী বিয়েটায় রাজি হবে। কিন্তু এমন টা হয়নি। কিন্তু তার কেনো ভালো লাগছে এতে?
এটাও কি সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ?
রানবী থাকলে হয়তো এটাই বলতো।
কথাটি ভেবেই হেসে উঠলো পুনম।
রুম্পা চোখ রাঙিয়ে বললো-
আমার দুঃখে তুই হাসছিস!
.
.
.
বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেলো রানবী কে দেখা যাচ্ছেনা।
তাকে হঠাৎ করেই দেখতে না পেয়ে অস্থিরতা কাজ করছে পুনমের মাঝে।
তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে পুনমের।
খুঁজতে লাগলো সে রানবী কে।
.
.
রানবী ছাদের উপরের দোলনাটায় বসে বাসার সকলের সাথে ফোনে কথা বলছে। খায়রুনের কাছে রিমা ফোন দিতেই সে বলে উঠলো-
কবে ফিরবে বউ নিয়ে? তোদের মিস করছি।
-আমিও করছি। কিন্তু সে করছেনা।
-তোকে বলেছে?
-না তা বলেনি।
-তবে?
-একবারো জানতে চায়নি তোমাদের কথা।
-আমাদের সাথে তার কথা হয়েছে তাই জানতে চায়নি।
.
অবাক হয়ে রানবী বললো-
সত্যি?
-হ্যাঁ। আর কি বলেছে জানিস?
-কি?
-আমাকে নাকি সে ভাবী ডাকবেনা। বুবু ডাকবে।
.
খায়রুনের কথা শুনে অবাক হলেও ভালোলাগা কাজ করছে রানবীর মাঝে। তবে কি পুনম তার পরিবার কে আপন করে নিতে পারছে?
.
.
একটু পরেই ছাদে এসে পুনম দেখলো, রানবী বসে রয়েছে দোলনার উপরে।
পুনম তার পাশে এসে বসে বললো-
একা একা জোসনা বিলাস করছেন?
-হু।
-কেনো? আজ ভাইয়ার রুমেও জায়গা হয়নি?
-রুম দিয়েছে আরেকটি। কিন্তু ঘুম আসছেনা।
-হঠাৎ নির্ঘুম রাত কাটানোর ইচ্ছে?
-এমনিতেই।
.
চুপচাপ দুজনে।
নীরবতা বিরাজ করছে দুজনের মাঝে।
সেই নীরবতা ভেঙ্গে পুনমই বললো-
বিয়েটাতে রাজি হলেন না কেনো?
-সতীন রাখার ইচ্ছে আছে?
-আমি তো ডিভোর্স দিবো।
-কিন্তু আমি তো ছাড়বোনা তোমাকে। তাই তোমার কথা ভেবেই রাজি হলাম না।
.
আজ রানবীর কথা শুনে কেনো যেনো রাগ হচ্ছেনা পুনমের।
মৃদু হাসছে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে।
রানবী বললো-
হাসি দিয়ে আরো ঘায়েল করতে চায়ছো আমাকে?
.
জবাব দিলোনা পুনম। রানবীর কথাই যেনো শুনে যেতে ইচ্ছে করছে।
.
পুনমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রানবী বললো-
আমি যান্ত্রিক এই পৃথিবীটাকে এক পাশে সরিয়ে রাখি,
আমি কেবলই তোমাতে মগ্ন থাকি।
কেননা আমি একবার নয়,
বারবার ঘায়েল হই তোমারই প্রেমে।
.
পুনমের খুব করে ইচ্ছে করছে আজ, রানবীর কাধে মাথাটা রেখে বসার জন্য।
তবুও ইচ্ছেটা দমিয়ে সে উঠে যেতে চায়লে রানবী তার হাতটা ধরে ফেললো।
-আসোনা, আজ জোসনা বিলাস করি দুজনে?
.
.
.
সকালের মিষ্টি রোদ মুখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো রানবীর।
নিজের বুকে পুনমকে আবিষ্কার করে সে মুখের কোণে হাসি ফুটালো।
পরম শান্তিতে রানবীর বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমোচ্ছে পুনম। মুখের উপরে চুল এসে পড়েছে তার।
রানবী খুব সাবধানে চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে। তবুও ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো পুনমের। কিছুক্ষণ রানবীর দিকে তাকানোর পর সে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লো।
মৃদু স্বরে বললো-
আমি এখন আসি।
.
রানবীর ডাকে থেমে গেলো পুনম।
রানবী বললো-
আজ ঢাকা ফিরে যাবো ১০টার পরে। আমরা ক্লাস শুরু করবো দুজনে। তৈরী হয়ে থেকো কেমন।
-হু।
.
.
.
সকালের নাস্তে সেরে পুনমের জন্য অপেক্ষা করছে রানবী।
আজকের রাতটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে তার জন্য। এর আগেও পুনম কে বুকে নিয়ে রাত কাটিয়েছিলো সে। তবে তখন পুনম জ্বরের ঘোরে ছিলো। কিন্তু কাল সে নিজের ইচ্ছেতেই…
ভাবতেই ভালো লাগা কাজ করছে রানবীর মনে।
আফরোজা ইসলাম তার দিকে তাকিয়ে বললেন-
আর কটা দিন থেকে গেলে হয়না?
-আসলে মা ক্লাস করতে হবে পুনমের। অনেকদিন মিস হয়ে গেলো।
.
ইপশিতা এসে তাদের উদ্দেশ্যে বললো-
পুনম তো রুমে নেই। পাচ্ছিনা ওকে।
.
ইপশিতার কথা শোনার পরে সকলে খুঁজতে লাগলো পুনম কে।
কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলোনা তাকে।
রানবী কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফরোজা ইসলামের উদ্দেশ্যে বললো-
কোথায় পুনম?
.
(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here