ঘায়েল – পর্ব ২০

0
162

#ঘায়েল
#পর্ব_২০
#Saji_Afroz
.
.
.
-কি অবস্থা তোমাদের? শুরু থেকে এতো প্লান করে বিয়েটা দিলাম। এখন সামান্য পটিয়ে পুনম কে নিজের কাছে রাখতে পারছোনা?
.
এই মেসেজটি দেখে পুনম পুরাই চমকে গেলো। কেননা মেসেজটি দিয়েছে তার বড় ভাই মাহিম!
মাহিম পরিকল্পনা করে এমনটি করেছে! এ যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।
রানবী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো-
কি বলবে বলো?
.
অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
অনেক কিছুই।
-সে অনেক কিছুটা কি?
-আমাদের বিয়ের সময় বড় ভাইয়া কে আপনি কিডন্যাপ করেননি। তাইনা?
.
পুনমের কথা শুনে রানবী বললো-
এসব কেনো বলছো?
.
রানবীর দিকে তার মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে পুনম বললো-
শুরু থেকে সব মেসেজ আমি দেখেছি। আমি এখানে না থাকাকালীন সব খবরাখবর ভাইয়া আপনাকে দিয়েছে। এসবের মানে কি আমাকে বলবেন?
.
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রানবী।
পুনম বললো-
আমি এখুনি চট্রগ্রাম যাবো।
-কেনো?
-ভাইয়ার কাছে জানতে চাইবো সবটা। মা বাবাকে বলবো ভাইয়ার কথা।
.
পুনম লাগেজ নিয়ে কাপড় গোছাতে শুরু করলে রানবী বললো-
তোমার মা বাবাও জানে সব কিছু। তারাও শামিল ছিলো এই প্লেনে।
.
কথাটি শুনে ধপ করে বিছানার উপরে বসে পড়লো পুনম।
হঠাৎ করেই ঘামতে শুরু করেছে সে।
সবাই জড়িত আছে এসবে। মানেটা কি! কেনো তারা এমন করলো? এতো অভিনয় করলো তার সাথে?
.
পুনমের পাশে বসলো রানবী।
তার হাতের উপর হাতটা রেখে বললো-
ভেবোনা তুমি এতো। যা হয়েছে তোমার ভালোর জন্য হয়েছে।
.
রানবীর হাতটা এক ঝাটকায় সরিয়ে দিয়ে পুনম বললো-
আমাকে বলবে কিসে ভালো হয়েছে?
.
নিশ্চুপ হয়ে থাকলো রানবী।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পুনম বললো-
নিজের পরিবারই যেখানে আমাকে ঠকালো, আপনাকে কি বলবো আমি! একটা কথা রাখুন।
আমাকে প্লিজ চট্রগ্রামে নিয়ে চলুন।
-হু। তৈরী হয়ে নাও।
.
.
.
হঠাৎ পুনম ও রানবীর আগমনে পুনমের বাড়ির সকলে হতভম্ব হয়ে গেলো।
পুনমের মা বললেন-
এভাবে হুট করে কেনো চলে এলি?
-আমি এসেছি বলে অনেক খারাপ লাগছে তাইনা?
-এসব কি বলছিস তুই?
-ঠিকই বলছি।
.
পুনমের লাল চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে আফরোজা ইসলাম বললেন-
কি হয়েছে?
-তোমরা সবাই মিলে প্লান করে আমাকে রানবীর সাথে বিয়েটা দিয়েছো। কেনো এমন করলে??
.
পুনম সবটা জেনে গিয়েছে!
তা জেনে সকলের মুখই গম্ভীর আকার ধারণ করলো।
মাহিম বললো-
আমরা কেনো প্লান করবো?
-করোনি? তাহলে আজ যে মেসেজ গুলো আমি দেখেছি সেসব কি?
.
মাহিমের উত্তরের অপেক্ষা না করে মাহাফুজ ইসলাম বললেন-
হ্যাঁ করেছি আমরা এসব। কিন্তু যা করেছি তোর ভালোর জন্যই।
.
ছলছল দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
আমি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছি তাইনা? তাই তো একটা ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে তার কাছেই কৌশলে আমাকে গছালে। বিয়ে নিয়ে মানুষের কতো স্বপ্ন থাকে! আমারো ছিলো। আর তোমরা কিনা খরচার ভয়ে এসব প্লান করলে। পড়ালেখার খরচ টাও না চালানোর ফন্দি এটা। আরে এতোই যদি বোঝা হয়ে থাকতাম কেনো বললেনা আমাকে? চলে যেতাম কোথাও। অন্তত নষ্ট গলিতে গলিতে ঘুরেফিরে নিজের খরচ নিজেই চালাতাম।
.
কথাটি শুনে তার দিকে আফরোজা ইসলাম এগিয়ে এসে, বাম গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনি বললেন-
কি বলছিস টা কি তুই! কেনো করেছি আমরা এসব শুনবি? শুন তাহলে। এলাকার মাস্তান সালাউদ্দিন তার ছেলের জন্য তোকে ঠিক করেছে। তোর নিশ্চয় অজানা নয়, সে যা বলে তা করেই ছাড়ে। সালাউদ্দিনের ছেলে সাবের তোকে পছন্দ করেছিলো। তোকে পাওয়ার জন্য সে ডুবাই গমন করেছে প্রতিষ্ঠিত হতে। তার এই পরিবর্তন দেখে সালাউদ্দিনের অনেক খুশি হয়। সে নিজে মাস্তান হলেও ছেলেকে এই রূপে দেখতে চান না। তাই তিনি তোর জন্য ছেলের এই পরিবর্তন দেখে আমাদের জানায়, সাবেরের বউ হবি তুই। আমরা কি করে পারি? সালাউদ্দিনের বাড়িতে তোকে পাঠাতে? যেখানে তুই একেবারেই অপছন্দ করিস তাকে।
.
পুনম বললো-
আমাকে বলোনি কেনো এসব?
-কেননা তুই জানলে টেনশন করবি। মনেমনে কষ্ট পাবি। এতে তোর পড়ালেখারও ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা তোকে কিছু না জানিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিই। ঢাকা থেকে তোকে এখানে আনার কোনো ইচ্ছে আমাদের ছিলোনা। তবুও কতোদিন আর লুকিয়ে রাখা যেতো! তাই যখন জানতে পারলাম রানবী তোকে ভালোবাসে, ওকে বললাম বিয়েটা করে নিতে তোকে। রানবী ভরসা দিয়েছিলো, সে তোকে খুশি রাখবে। সেই ভরসায় ওর কাছে….
-ও আমাকে ভালোবাসে তোমরা কি করে বুঝলে?
.
মাহিম মুখ খুললো এই পর্যায়ে-
আমি যেদিন ঢাকায় যাই, রানবীর বন্ধুরা বলেছিলো তুই তার গফ। রানবী জানায় এটা মিথ্যে। রানবী তোর বফ নয় বরং সে তোকে ভালোবাসে।তবুও আমি রানবীর ব্যাপারে সবটা জানতে চাই। রানবীর বাবার নাম শুনে আমি চমকে যাই। তার কাছে তার বাবার ছবি দেখতে চাই। ছবি দেখে আরো চমকে যাই আমি।
-কেনো?
-তোর মনে আছে সেলিম আঙ্কেলের কথা?
.
পুনমের মনে পড়ে গেলো সেই দিনটার কথা।
পাড়ার ছোটছোট ছেলেমেয়েদের সাথে সে মজা করছিলো। এমন সময় একটা বয়স্ক লোক এসে তার সম্পর্কে জানতে চায়। পুনমের বাবা মাহাফুজ ইসলাম তার পাশেই ছিলো। তিনি সেলিম কে নিয়ে নিজের বাসায় আসেন।
সেলিম জানায়, তার ছোট ছেলের জন্য পুনম কে বউ করে নিয়ে যেতে চায়। মেয়েটিকে বড় আদর লেগেছে তার। কিন্তু মাহাফুজ ইসলাম মেয়ে বিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলোনা তখন।
.
এসব অজানা নয় পুনমের। মাহিমের দিকে তাকিয়ে সে বললো-
হ্যাঁ মনে আছে।
-রানবী তারই ছেলে। মানুষ টি ভালো ছিলেন। তার কাছ থেকেই পারিবারিক স্ট্যাটাস সম্পর্কে অবগত ছিলাম আমরা। তাই রানবীর হাতে তোকে তুলে দিতে দ্বিধা করিনি।
সাবের কিছুদিন পরেই দেশে ফিরবে শুনেছিলাম পুনম! সে ফিরলে কি হবে ভেবে দেখেছিস?
তোকে বললে তুইতো বিয়ে করতে রাজি হতিনা। তাই তোর কথা ভেবেই এমনটা করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। রানবীর কোনো দোষ নেই। আমাদের কথাতে সে এসব করেছে। নিজের ক্যারিয়ার বা সম্মানের কথা ভাবেনি। তবে ওর একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো। তুইও তাকে ভালোবাসবি। আর তখন সালাউদ্দিন কে বলতে পারতাম আমরা, পুনম নিজের ইচ্ছেতে অন্যকারো সাথে থাকছে। সব ঠিক হয়ে যাবে ভেবেই তোকে কিছুই বলিনি আমরা কেউ এখন অবধি।
.
রানবী এতোকিছু এতোদিন যাবৎ লুকিয়ে রেখেছিলো!
তার ভালোবাসার গভীরতা মাপার ক্ষমতা নেই পুনমের। বারবার ভুলই বুঝে গিয়েছে রানবী কে সে।
রানবীর দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলতে চায়লেই ভেতরে প্রবেশ করলেন সালাউদ্দিন। হাতে তার মিষ্টির প্যাকেট।
এক গাল হাসি নিয়ে তিনি বললেন-
সবাই আছে দেখছি এখানে! খুশির খবর টা দিয়েই দিই। সাবের আসতেছে।
.
পুনম আপনমনে বললো-
আবার কি ঘটতে চলেছে!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here