ঘায়েল – পর্ব ১৮

0
217

#ঘায়েল
#পর্ব_১৮
#Saji_Afroz
.
.
.
সদর দরজায় পুনম কে দেখে সকলে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
আফরোজা ইসলাম গম্ভীর গলায় বললেন-
কোথায় গিয়েছিস তুই?
-রুম্পাও বাড়িতে চলে যাবে। সে তো সালাউদ্দিন আঙ্কেলের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো। আবার কবে দেখা হবে! তাই দেখা করতে গিয়েছিলাম।
-না বলে কেনো গিয়েছিস?
.
মায়ের দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?
-ছেলেটার অবস্থা দেখছিস তুই?
-কি দেখবো?
-কি দেখবি মানে! তোকে না দেখে সে ভেবেছে…
-পালিয়ে গিয়েছি? যাইনি। ঢাকা তো যাবো আমি।
.
কথা না বাড়িয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে রানবী বললো-
চলো তবে।
.
.
.
ঢাকায় পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।
সারা রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলেনি।
রানবীর পরিবার তারা ফিরে আসাতে অনেক বেশিই খুশি।
সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে দুজনে রুমে আসলো।
আচমকা রানবী পুনমকে কাছে টেনে ক্ষীণ স্বরে বললো-
আমাকে ভয় দেখানোর জন্যই এমনটা তুমি করেছো তাইনা?
-নাহ। তবে আমার আসার ইচ্ছে ছিলোনা এটা ঠিক।
-তবে কেনো এলে?
.
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে পুনম বললো-
ক্লাস করতে এসেছি।
এবার ছাড়ুন।
.
সাথে সাথেই ছেড়ে দিলো তাকে রানবী। সে চলে যেতে চায়লে পুনম তার হাত ধরে বললো-
কিছু একটার টানে এসেছি। জানিনা তা কি।
.
.
.
ড্রয়িংরুমে বসে আছে রিমা। ফোনে কথা বলছে সে তার বফ এর সাথে।
-অনেক বেশি ভালোবাসো আমাকে। তাইনা বাবুটা?
.
ওপাশ থেকে বফ জবাব দিলো-
হু বাসিতো!
-মরতে পারবে তো আমার জন্য?
-কেনো নয়! একবার বলে দেখো।
-মরতে হবেনা। আপাতত ব্রেকাপ করলেই চলবে।
-মানে!
-মানে আমার আর তোমাকে ভালো লাগছেনা। ব্রেকাপ তোমার সাথে। বাই।
.
লাইন কেটে ফোনটা বন্ধ করে দিলো রিমা।
নিজেরমনে হেসে চলেছে সে।
পুনম এতোক্ষণ যাবৎ তার সব কথাই শুনেছে। তার পাশে এসে বসতেই চমকে গেলো রিমা।
পুনম বললো-
এভাবে কাউকে ঠকিয়ে কি লাভ?
-ওদের স্বভাবও এমন ভাবী।
-সবার কি সেইম? কি করে বলতে পারো? হতে পারে কেউ তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে?
.
তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে রিমা বললো-
বাসেনি।
-উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছো নিজেকে? তুমিতো সব মজা হিসেবেই নিয়েছো। সুযোগ দিয়ে দেখো ভালোবাসা কেমন। এসব মজার চেয়েও আলাদা ভালোলাগা কিন্তু ভালোবাসাতেই আছে। এসব করে সাময়িক আনন্দ হয়তো তুমি পাবে কিন্তু সুখী হতে পারবেনা।
.
পুনম নিজের কথাগুলো বলে চলে গেলো রুমের দিকে।
রিমা তার কথার অর্থ বুঝতে চেষ্টা করলো।
.
.
পরেরদিন সকালে নাস্তা সারার পরে রানবী এসে পুনমের উদ্দেশ্যে বললো-
কলেজ যাবার জন্য তৈরী হয়ে নাও।
.
পুনম ভেবেছিলো রানবী এমনিতেই তাকে এটা বলেছিলো। কিন্তু সে যে সত্যিই তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিবে ভাবেনি!
.
পুনম তৈরী হবার পরে কলেজের উদ্দেশ্যে রানবীর সাথেই বেরিয়ে পড়লো।
রানবী বললো-
এক খাটে যেহেতু শুই আমরা, এক রিকশাতে উঠতে সমস্যা নেই। কি বলো?
.
মিষ্টিসুরে পুনম বললো-
হু।
.
রিকশায় পাশাপাশি বসে রয়েছে পুনম ও রানবী।
রিকশাটা অন্য রিকশার তুলনায় অনেকটাই ছোট।
দুজনে দুজনের শরীর ঘেষে বসে রয়েছে।
পুনম বললো-
রিকশাটা ছোট।
-আরেকটা নিবো?
-আমি কি তা বলেছি?
-সমস্যা হলে বলতে পারো।
-কোনো সমস্যা নেই।
.
কলেজে চলে এসেছে তারা।
রিকশার ভাড়া চুকানোর পরে পুনম বললো-
আপনার ক্লাস শুরু হতে তো সময় আছে তাইনা?
-হু। কেনো?
-আমার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। খাওয়াবেন?
.
পুনমের আচরণ দেখে খুব বেশি অবাক হলো রানবী।
হঠাৎ এতোটা সহজভাবে সে সব কিছু কেনো নিচ্ছে! তবে কি তার মনে রানবীর জন্য কোনো জায়গা তৈরী হচ্ছে!
.
.
.
ধীরেধীরে দিন কাটতে লাগলো।
পুনম সবার সাথেই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
ইদানিং খায়রুনের সাথে সাথে বাসার কাজে হাতও লাগায়।
আজ পুনম রান্না করতে চায়লে খায়রুন বললো-
আমি সেরে নিবো। কি দরকার কষ্ট করার?
-কেনো গো বুবু? এটা কি আমারও বাড়ি নয় কি?
.
পুনমের কথা শুনে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে খায়রুন বললো-
এভাবে আস্তেধীরে যেনো রানবী কেও মেনে নাও। এই দোয়া করি।
.
.
রান্নার কাজ সারার পর পুনমের ফোনে তার মায়ের ফোন এলো।মায়েদের সাথেও তার সম্পর্কটাও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
-হ্যালো আম্মু?
-কাল তো তোর জন্মদিন। এই প্রথম কোনো জন্মদিনে তোর পরিবার তোর সাথে নেই।
-আরেকটা পরিবার তো আছে সাথে।
-তুই সব মেনে নিচ্ছিস জেনে খুশি হলাম।
-ওসব বাদ দাও। কুরিয়ারে করে হলেও আমার জন্মদিনের উপহার পাঠাবে কাল।
-হ্যাঁ পাঠাবো।
.
মায়ের সাথে কথা বলা শেষে পেছনে ফিরে রানবী কে দেখতে পেলো পুনম।
.
রানবী বললো-
কাল তোমার জন্মদিন?
-হু। জানতেন না?
-নাহ।
-এতোকিছু জানেন এটা জানেন না! খুব খারাপ।
-আসলেই।
-জানেন না নাকি গিফট এর ভয়ে?
-রানবী এতোটাও কিপ্টে নয়।
.
মুচকি হাসলো পুনম।
.
রানবী বললো-
বলো তোমার কি চায়?
-আপনি যা দেন।
-নাহ, তোমার কি চায় বলো।
-আমি যা চাই দিতে পারবেন?
-অবশ্যই।
.
হাত বাড়িয়ে দিয়ে পুনম বললো-
প্রমিজ?
.
তার হাতের উপর হাতটা রেখে রানবী বললো-
হু প্রমিজ!
-কালই চেয়ে নিবো। তখন কিন্তু না করতে পারবেন না।
-রানবী ওয়াদার খেলাপ করেনা কখনো।
.
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ১২টা…
সকলের সাথে আড্ডা দেয়ার পরে নিজের রুমে আসলো পুনম।
রুমটা অন্ধকার দেখে সে লাইটের সুইচ অন করলো।
রানবী অনেক গুলো বেলুন হাতে নিয়ে বললো-
শুভ জন্মদিন পুনম!
.
রানবী কে এভাবে সারপ্রাইজ দিতে দেখে চমকে গেলো পুনম।
পুরো রুমটা বেলুন দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে সে। রানবীর সামনে একটি ছোট টেবিল রয়েছে। তাতে একটি চকোলেট ফ্লেবারের লাভ শেইপের কেক রাখা।
সবটা যেনো স্বপ্ন লাগছে পুনমের কাছে!
.
.
রানবীর সাথে কেকটা কাটলো পুনম।
তার মুখে হালকা কেক লাগিয়ে দিতেই সে বলে উঠলো-
বাচ্চা স্বভাব এসব।
-কেক কাটবো কিন্তু মুখে লাগাবো না, তা কি করে হয়?
.
মৃদু হাসলো পুনম।
.
রানবী বললো-
এবার বলো কি চায় তোমার?
-বলবো?
-হু।
-একটু দাঁড়ান। ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
রানবী জানে, পুনম আজ তার মনের কথা বলবে।
এতদিন পুনমের আচরণে এটাই স্পষ্ট, সেও রানবীর উপরে ঘায়েল হয়েছে!
আজ তবে পুনমের মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটি শুনতে চলেছে রানবী!
পুনম নিশ্চয় বলবে, সে সব ভুলে নতুনভাবে সংসার করতে চায় তার সাথে?
.
-শুনছেন?
.
পুনমের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো রানবী।
পুনম তার দিকে একটা কাগজ বারিয়ে দিয়ে বললো-
এখানে একটা সাইন চাই আপনার।
-এটা কি?
-খুলেই দেখুন।
.
ডিভোর্স পেপার দেখে রানবী যেনো বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।
চোখ জোড়া বড়বড় করে রানবী বললো-
এসবের মানে কি পুনম?
-রানবী তার ওয়াদার খেলাপ করেনা। মনে আছে তো?
.
শান্ত স্বরে রানবী জবাব দিলো-
হু।
.
তার হাতে কলমটা ঢুকিয়ে দিয়ে পুনম বললো-
তাহলে আজকে আমার জন্মদিনে এই উপহার টাই আমাকে দিন।
.
পুনমের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রানবী।
এটাই পুনমের আসলের রূপ!
তবে এতোদিন সে কি দেখেছে?
সবটাই অভিনয়!
.
পুনম বলে উঠলো-
কি হলো? সাইন করুন।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here