#সুখ
#Part_17
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সাকিব নীলিমাকে দেখছে আর কফি খাচ্ছে। আজকের কফিটা অন্যরকম লাগছে কারণ আজ ও নিজেই বানিয়েছে। কফি খাওয়া শেষ করে সাকিব ল্যাপটপ নিয়ে বসে। ল্যাপটপ অন করতেই একটা রোমান্টিক মুভির কিছু নোটিফিকেশন এলো। বরাবর ই সাকিব এসব এভয়েড করে। আজও তাই করলো। নিজের অফিসের সব ফরম্যাট ঠিক করলো আর পেপারস গুলো কম্পলিট করলো। কাজ করতে করতে ল্যাপটপ অন করেই সোফার উপর ঘুমিয়ে যায় সাকিব। ভোরে ফজরের আযানে ঘুম ভাঙে নীলিমার। চোখ মেলে তাঁকিয়ে দেখে সাকিব পাশে নেই। উঠে বসতেই দেখে সাকিব সোফার উপর হ্যালান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে আর পাশে ল্যাপটপ অন করা। নীলিমা চুলে হাতখোপা করতে করতে উঠে আর সাকিবের সামনে গিয়ে ল্যাপটপ টা অফ করে।
-শুনছেন? এই যে মিস্টার আহমেদ শুনছেন?
-হুম।
-আযান দিয়েছে তো। নামাজ পড়তে যাবেন না?
-কখন দিলো আযান? (চোখ মেলে তাঁকিয়ে সাকিব)
-ওই তো এখনো হচ্ছে আযান। এখানে কেন ঘুমিয়েছেন? খাটে জায়গা ছিল না?
-কখন ঘুমালাম টেরই তো পেলাম না। যাই হোক, আমার পাঞ্জাবি বের কর। ফ্রেশ হয়ে আসি।
-তারাতারি যান।
সাকিব ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি পরে নামাজ পরতে চলে গেলো। সাকিব চলে যাওয়ার পর নীলিমাও নামাজ পড়ে নিলো। আর ঘরের পর্দা গুলো সরিয়ে দেয়। সাকিবের ল্যাপটপের তারগুলো গুছায় আর ল্যাপটপ নিয়ে ওর ড্রয়ারে রাখে। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে নীলিমা একটা শাড়ি পড়ে, সিল্কের শাড়ি। সাকিব চলে আসবে এখনি তাই ওর জন্য আগে কফি করলো। জুস সাকিব তেমন একটা খায় না। কফিটাই ওর ফেভারিট। কফি বানাতে বানাতে সাকিব বাসায় চলে আসে।
-ঘরে যান আমি কফি নিয়ে আসছি।
-আচ্ছা।
ঘরে গিয়ে সাকিব আগের দিনের পেপার পড়তে বসে। নীলিমা ততক্ষণে চলে এসেছে। নীলিমাকে এইবার ভাল করে খেয়াল করলো সাকিব।
-শাড়িটা পালটে ফেলো। এই শাড়িটা পরার কোনো দরকার নেই।
-কেন কি হয়েছে?
-তোমাকে সব বুঝিয়ে কেন বলতে হয়? শাড়ি পরতে সমস্যা হলে লং ড্রেস পরতে পারো। বাট এই ধরনের শাড়ি পরতে হবেনা।
-আচ্ছা চেইঞ্জ করে আসছি।
নীলিমা আলমারি থেকে একটা চুরিদার বের করে ওয়াশরুমে যায়। শাড়ি পালটে লং ড্রেস টাই পরে আসে সাথে চুরিদার।
-এইবার ঠিক আছে?
-পার্ফেক্ট। বউ না এইবার মেয়ে মেয়ে লাগছে। (হাসতে হাসতে সাকিব)
-কি আজওব!
-তোমাকে সব ড্রেসেই কি মানায়?
-মে বি। আম্মুও বলতো আগে। বাট গহনাতে আমাকে মানায় না।
-নাহ তো! বেশ লাগে। স্পেশালি নোজপিন টায়। আহা ক্রাশের শুরু তো সেখানেই।
-থামবেন আপনি? যত্তসব উলট পালট কথা। অফিস যাবেন?
-হুম একটু পরেই।
-আচ্ছা আমি গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানাই।
নীলিমা নিচে যায় ব্রেকফাস্ট বানাতে। সাকিব ও আসে পিছু পিছু।
-হেল্প করি? (সাকিব)
-কি দরকার? ঘরে গিয়ে ঘুমান যান।
-আরেহ না। এই সকালে আমি খুব কম ই ঘুমাই।
-তাহলে এক কাজ করেন পেয়াজ কাটেন। ওইটা আমার আবার পোশায় না।
-আচ্ছা দাও। চপিং বোর্ড কোথায়?
-চোখ নাই? দেখাই তো যাচ্ছে।
-মেয়েদের চোখেই পরে😑
সাকিব টুকিটাকি সবজি কেটে দিচ্ছিলো আর নীলিমা রান্না করছে। মাঝে মাঝে ফাইজলামি ও করছে। নীলিমার আম্মু ড্রইংরুমে ঢুকতেই দেখে জামাই আর মেয়ে একসাথে রান্না করছে।
-আমার চুলের ক্লিপটা ভাল করে লাগিয়ে দিন তো। খুলে গেছে।
-এক সেকেন্ড।
সাকিব হাত ধুয়ে নীলিমার চুল ঠিক করে দিল।
-ওড়নাটার এই পাশ উঠিয়ে দিন।
সাকিব এইবার না হেসে পারলো না। নীলিমা তো কি রাগ ওর হাসি দেখে। সাকিব নীলিমার ওড়না উঠিয়ে দিল। রান্না প্রায় শেষ। সবাই ড্রইংরুমে এসে দেখে ওরা একসাথে রান্না করছে৷
– ভাইয়া? সকাল সকাল তুমি রান্নাঘরে? (চোখ মেরে আয়ান)
-আয়ান তুই যে অনেক ফাজিল সেইটা কি তুই জানিস? (সাকিব)
-সুহা তো আমাকে ফাজিল বলেই। কাহিনী কি? ভাবি ভাইয়া কি ইদানীং তোমায় ছাড়তে চাইছে না নাকি?
-অসভ্য কোথাকারের! বড় ভাই আর ভাবিকে এসব বলছিস তুই। আজকে তোর ব্রেকফাস্ট করা লাগবেনা। যা তুই!
-তোমার আগেই আমি ব্রেকফাস্ট করে নিব। দেখতে চাও? (হাসতে হাসতে আয়ান)
-আবার?
সাকিবের সাথে আয়ান কিছুক্ষণ মজা করে ডায়নিং এ গিয়ে বসে। সবাই চলে এসেছে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। সাকিবের আম্মু আর নীলিমার আব্বু আম্মুও চলে এসেছে। নীলিমা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে তুলি আর তিশাকে রেডি করে স্কুলে পাঠানোর জন্য। তিশা বায়না করছে আজকে ও আম্মুকে নিয়ে যাবে স্কুলে। সাকিব শেষে বলল
-নীলু যাও। আমিই তোমাদের ড্রপ করে দিয়ে আসছি। স্কুল বাসে যেতে হবেনা আজকে ওদের।
-ইয়েএএএএএ কি মজা আজকে বাবাই আর আম্মু যাবে স্কুলে। (তিশা নাচতে নাচতে)
সাকিব ফরমাল ড্রেস পরে আসলো। নীলিমাও চেঞ্জ করে দামী একটা চুরিদার পরলো। চুলগুলো জুটি করা আর চোখে কাজল। লিপস্টিক ও লাগায়নি।
-মামনি তোমার আম্মুকে কি স্কুলে থাকতে হবে? (সাকিব)
-হ্যা বাবাই।
-তোমার আম্মু তো এখানে কিছুই চিনেনা। একা একা কিভাবে থাকবে এতক্ষণ?
-বসে থাকবে আমার জন্য ওয়েটিং রুমে। (তিশা)
সাকিব ও ওদের স্কুলে ছেড়ে দিয়ে নীলিমাকে বলল,
-কোথাও বের হইয়ো না। ছুটি হলে আমিই নিতে আসব তোমাদের। সাবধানে থেকো।
-আচ্ছা আপনি যান। আমি পারবো সমস্যা হবেনা।
সাকিব চলে গেলো আর নীলিমা তিশাকে নিয়ে ওর ক্লাসরুমে গেলো। তিশার ফ্রেন্ডস রা বলছে কি সুন্দর দেখতে তোর আম্মুকে তিশা! অন্যান্য গার্ডিয়ান রা নীলিমালে পেরেন্টস ডে তেই দেখেছে।
-তিশা আম্মু তোমার ক্লাস নয়টায় শুরু হবেনা?
-হ্যা আম্মু।
-আর মাত্র ২ মিনিট বাকি। তুমি ক্লাস কর। আম্মু বাইরে আছি।
-ঠিক আছে আম্মু।
নীলিমা বের হয়ে ক্যাম্পাসে যায়। ক্যাম্পাস টা অনেক বড়। ক্যাম্পাসের সাইডে একটা পার্ক আর ছোট্ট পুকুর আছে। নীলিমা হাঁটতে হাঁটতে সেখানে গেলো। সেই জায়গার দোতালায় তুলির ক্লাস। তুলি ওর আম্মুকে দেখলো। তুলির ক্লাসে তখন ছিল ইশতিয়াক স্যার। তুলিকে বাইরে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে তিনি তুলিকে দাঁড় করালেন।
-কি সমস্যা? ফিজিক্স পারো বলে ক্লাসে মোনোযোদ দিবেনা?? ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে বাইরে কেন তাঁকিয়ে আছো?
-স্যার আমি একটু বাইরে যাব। প্লিজ লেট মি গো। (তুলি ঘামছে)
-Anything wrong?
-ইয়াহ! প্লিজ স্যার।
-ওকে ইউ ক্যান গো।
তুলি বাইরে এসে ওর ক্লাসরুম থেকে সরে গিয়ে ওর আম্মুকে ডাকছে। নীলিমা উপরে তাঁকিয়ে দেখলো তুলি ডাকছে।
-হ্যা তুলি বলো? কি হয়েছে? (উপরে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-আম্মু তুমি এখান থেকে চলে যাও। ইশতিয়াক স্যার আমার ক্লাসে। আর এইটা আমার ক্লাস।
-ওকে তুলি আমি এখনি সরে যাচ্ছি।
নীলিমা দ্রুতই সেখান থেকে চলে আসে। তুলি ওর ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস শেষ হওয়ার পর ইশতিয়াক স্যার ওয়েটিং রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো। নীলিমা একাই ওয়েটিং রুমে বসেছিলো আর বাকিসব গার্ডিয়ানস রা যে যার মত ক্যম্পাসে ঘুরছে। ইশতিয়াক স্যার ওয়েটিং রুম ক্রস করেও আবার ব্যাক চলে এলেন। নীলিমা তখন ফোন টিপছিলো। স্যার ওয়েটিং রুমে ঢুকে বললেন,
-হ্যালো মিসেস আহমেদ!
নীলিমা তাঁকিয়ে দেখে সেই স্যারটা। এইবার নীলিমার বিরক্তি চরম পর্যায়ে।
-কি সমস্যা আপনার? জানেন ই তো আমি মিসেস তাহলে কেন আমাকে এইভাবে বিরক্ত করছেন? আর আপনার সাহস কিভাবে হয় আমার বাসার নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার?
-ভাল বাসলে মানুষ কত কিছু করে আর আমি তো সামান্য নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাই দ্য ওয়ে আজকেও আপনাকে কম সুন্দর লাগছেনা। চুরিদারের সাথে স্লিপার বেশ মানিয়েছে। (নীলিমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে)
-মিস্টার ইশতিয়াক আমার স্বামীকে আপনি চেনেন না। ও কিন্তু এখনো জানেনা এসব। জানলে ও কি করবে ও নিজেও সেইটা জানেনা।
-স্যরি? আপনার কি মনে হয় তাকে জানিয়ে আমি আপনাকে ভালবাসবো?
-What rubbish! আমাকে ভাল একজন ই বাসে আর সে সাকিব আহম্মেদ।
-মেয়েদের নিয়ে এসেছেন স্কুলে?
-সেইটা কি আপনাকে বলা লাগবে?
-না বলুন সমস্যা নেই। চলুন বাইরে কোথাও যাই। আপনার সাথে আমার কথা আছে।
-বাট আই হ্যাভেন্ট। সো প্লিজ লেট মি আলোন।
-তা বললে তো হবেনা। আফটার অল আপনি আমাদের টপার স্টুডেন্ট তুলিকা আহম্মেদ এর স্টেপ মাদার। আপ্যায়ন না করি কিভাবে?
-স্টেপ মাদার মানে? আমি তুলির ই মা। স্টেপ মাদার এসব আমি বুঝিনা। প্লিজ যান তো আপনি এখান থেকে। নয়ত এক্ষুণি আমি তুলির বাবাইকে ডাকব। স্কুল থেকেও রাস্টিকেট করা হতে পারে আপনাকে।
-সে যাই হোক, আমি কিন্তু সত্যিই আপনাকে বিয়ে করতে চাই। কেন থাকবেন দুই মেয়ের স্টেপ মাদার হয়ে? বয়সে এত বড় একজনের সাথে সংসার করার কোনো মানেই হয়না। ফিজিক্যালি বা মেন্টালি সে আপনার যোগ্য ই না। এত সুন্দরী একজন রমণি কিভাবে পরে থাকে সেই সংসারে তা আমার জানা নেই। স্কুলের মেয়েরা আমার জন্যে পাগল। আমি কাউকেই পাত্তা দেইনি। ফ্ল্যার্ট করতে পারতাম বাট করিনি। কারণ ওইসব চিন্তা ভাবনা নেই আমার। জোর করে হলেও আপনাকে আমার লাগবে।
-“চরিত্রের দোষ” শব্দটা শুনেছেন এর আগে? বদ লোক কোথাকার।
নীলিমা আর তর্কে না গিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। ইশতিয়াক স্যার ও ভাবছেন একটা মেয়ে এতটা সুন্দর হয় কি করে? তিশার স্কুল ছুটি হবে আরো দুই ঘন্টা পর। সবকিছুই এখন অসহ্য লাগছে নীলিমার। এতক্ষণ কত সুন্দর মুডে ছিল ও। ক্যাম্পাসেই হাঁটাহাঁটি করছে নীলিমা। কোনোমতে দুইটা ঘন্টা কাটলেই হয়। দুইজন গার্ডিয়ান নীলিমার কাছে যায়।
-হ্যালো মিসেস আহম্মেদ । ভালো আছেন?
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা?
-তুলির ক্লাসমেটের আম্মু।
-ও আচ্ছা আচ্ছা।
ওদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতেই সাকিব স্কুলে চলে আসে। সাকিবকে দেখে নীলিমার যেন প্রাণ ফিরে এলো। সাকিবের কাছে এগিয়ে গেলো নীলিমা।
-বোর হওনি? (সাকিব)
-না ভালই লাগছিলো।
-আরো ১০ মিনিটস বাকি। তোমাদের বাসায় দিয়ে আবার অফিসে যেতে হবে।
-কেন আজ কি অনেক প্রেসার?
-মোটামোটি ভালই।
ওদের কথা বলতে বলতেই তিশার ছুটি হয়ে গেলো। সাকিব তুলিকে বলে এলো স্কুল বাসে চলে যেতে। তিশা আর নীলিমাকে নিয়ে সাকিব বাসায় গেলো। সারারাস্তা নীলিমা কি যেন একটা ভাবছিলো। সাকিবের তা সুবিধার মনে হলো না। ভেবেছে অফিস থেকে এসে রাতে জিজ্ঞেস করবে। ওদের বাড়ির গেইটে নামিয়ে দিয়েই সাকিব আবার অফিসে ব্যাক করে।
চলবে