সুখ – পর্ব ৩০ এবং শেষ

0
495

#সুখ
#Part_30 & #last_part
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সাকিব নীলিমাকে রাগাতে রাগাতেই ঘুমিয়ে গেলো। নীলিমা আগেই ঘুম।

মাঝরাতে……

-শুনছেন, এই শুনছেন? (সাকিবকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নীলিমা)
-হ্যা বলো। (ঘুম ঘুম চোখে সাকিব)
-বৃষ্টি পরছে। জানালা টা লাগিয়ে দিন। (চোখ বন্ধ করে নীলিমা)
-তুমি লাগাও। তোমার পাশেই তো জানালা।
-প্লিজ লাগান না। আমি ভয় পাই।

সাকিব ঘুম ঘুম চোখে উঠেই থাইটা টেনে দিল। নিজের জায়গায় আসতে গিয়ে নীলিমার চুরির সাথে হাত লেগে সাকিব ব্যথা পেলো আর বাঁকা হয়ে নীলিমার উপর পরে গেলো। নীলিমা এত জোরে চিৎকার দিল যে সাকিব বাধ্য হলো নীলিমার মুখ চেপে ধরতে।

-আল্লাহ গো আল্লাহ! এই খাডাস টা আমার উপরেই পরলো! আজকে গেলাম আমি। (কুঁকড়াতে কুঁকড়াতে নীলিমা)
-স্যরি স্যরি। আমি দেখিনি। (উঠে গিয়ে সাকিব) অনেক ব্যথা পাইছো?
-পিঠে বেশি পেয়েছি।
-ওহ শিট! আমি স্যরি নীলু। আমি সত্যিই দেখিনাই। মলম লাগায় দিব?
-না।
-অবশ্য মলম লাগালেও কিছু হবেনা কজ আমি পড়েছি তাই ব্যথাটা বেশি লাগেনি। (চোখ মেরে সাকিব)
-ওই কি বোঝাতে চান আপনি? (সাকিবের টি শার্টের নেক ধরে নীলিমা)
-কিচ্ছুনা জানপাখি। এখন ছাড়ো ঘুমাই। এইভাবে ধরে থাকলে আমার আবার অন্যকিছু মন চাইবে৷ (নীলিমাকে চুমু দিয়ে)
-ধুর ধুর আমি ঘুমাবোই না আপনার সাথে। চললাম আমি। (উঠে গিয়ে নীলিমা)
-আহা গো কই চললা?
-গেস্টরুমে৷
-গেস্টরুমের চাবি তো আমার কাছে।
-দেন চাবি দেন।
-পাগল না পেট খারাপ যে আমি তোমায় চাবি দিব?

ওরা এইভাবে কথা বলতে বলতেই কারেন্ট চলে যায় আর সারা বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়। নীলিমার বেডরুমের ল্যাম্পশ্যাড টাও অফ হয়ে যায়। বাইরে বৃষ্টির পরিমাণ ও বাড়ছে। নীলিমা আস্তে আস্তে হেঁটে খাটে এসে সাকিবকে জড়িয়ে ধরে বসলো।

-চাবি দেই? যাও গেস্টরুমে। (পিঞ্চ করে সাকিব)
-না। এখানেই থাকবো।
-এখানে থাকলে আমার কথা শুনতে হবে।
-শুনবো।
-খুলো।
-কি খুলবো?
-বারান্দার দরজাটা।।
-না পারবো না। বাইরে বৃষ্টি। ভিজে যাব।
-ভিজাতেই তো চাই।
-দেখেন আজাইরা কাজ করবেন না। রাত সাড়ে তিনটা বাজে। এখন আপনি বৃষ্টি তে ভিজবেন?
-ইয়েস বউ ইয়েস। চলো।

সাকিব নীলিমাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় না গিয়ে সোজা ছাদে গেলো। ছাদে নিয়ে সাকিব নীলিমাকে ভিজিয়েই ছাড়লো। কত বছর পর এইভাবে বৃষ্টি তে ভিজছে নীলিমা ওর মনে নাই। সাকিব প্রায় প্রায়ই ভিজে বাসায় ফেরে। ওর নাকি ভাল্লাগে। বৃষ্টি আসলেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে সাকিব ভেজার জন্য। নীলিমা প্রথম ভিজতে বিরক্ত হলেও পরে অনেক এঞ্জয় করে। সাকিব ছাঁদের খোলা সিঁড়ির উপর বসে আছে আর নীলিমা নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছে।

-ওই নাচবা? (সাকিব)
-আসেন নাচি। আমাকে নাচাতেই তো আপনার ভাললাগে। এই অসময়ে কেউ বৃষ্টি তে ভিজে? আপনার মতো পাগলকে দিয়েই সম্ভব।
-আসছি।

সাকিব সিঁড়ি থেকে নেমে নীলিমার কোমড়ে হাত দিয়ে নাচছিলো। হঠাৎ ই সাকিব নীলিমাকে ছাদের দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালো। নীলিমার শরীর থেকে শাড়ির আচলটা সরিয়ে নীলিমার ঘাড়ে কিস করছিলো। বৃষ্টি তো পরছেই। আর কি চাই??? সাকিব হাঁটু পর্যন্ত শর্ট প্যান্ট আর টি শার্ট পরেছিলো। নীলিমা সাকিবের টি শার্ট খামচে ধরে রেখেছে। সাকিব আবার নীলিমার ঠোঁটে কিস করছিলো। নীলিমা বাঁধা দিতে যেয়েও দেয় না। আরও কিছুক্ষণ ভেজার পর ওরা নিচে নেমে এলো। সাকিব নীলিমাকে কোলে নিয়েই নিচে নামালো। বেডরুমের দরজা লক করে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো নীলিমাকে নিয়ে। দুইজন গোসল করে বেরিয়ে আসতে আসতে আযান দিয়ে দিয়েছে। বাইরে বৃষ্টি পরছিল তখনো তাই সাকিব আর মসজিদে যায়নি নামাজ পড়তে। ঘরেই দুইজন একসাথে নামাজ পরলো। এরপর একটু রেস্ট নিয়ে নীলিমা রান্নাঘরে গেলো আর সাকিব পরে পরে ঘুমাচ্ছে।

নীলিমা রান্না করার মাঝেই বাঁধন এসে নীলিমাকে হেল্প করছিলো। দুই জা মিলে গল্প করছে আর রাঁধছে। সকাল আটটায় সবাই ডায়নিং এ আসে। রুদ্র বাইরে গিয়েছিলো নিবিরকে নিয়ে ঘুরতে। নিবিরকে অনেক চকলেট আর বেলুন কিনে দিয়েছে রুদ্র। তুলি ড্রইংরুমে বসেছিলো তখন।

-সকাল বেলা কোথায় গিয়েছিলে? (রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলো)
-তোমাদের বাসার গার্ডেনটা ঘুরলাম এরপর একটু রাস্তায় গিয়েছিলাম নিবিরকে নিয়ে। (রুদ্র)
-ভাই আমাকে দুইটা চকলেট দাও। (তুলি)
-না বড়দি ভাই। ভাইয়া কিনে দিয়েছে আমাকে তাই আমিই খাবো। (নিবির)
-নিবির! (সাকিব সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
-গুড মর্নিং বাবাই। (তুলি)
-গুড মর্নিং আব্বু। (রুদ্র)
-গুড মর্নিং। সকাল সকাল এত চকলেটস আর বেলুন কোথায় পেলা তুমি? (সাকিব নিবিরকে)
-রুদ্র ভাইয়া দিয়েছে। আমরা সকালে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। (নিবির)
-রুদ্র, নিবির তো এমনিতেই দুষ্ট। তুমি আদর দিয়ে দিয়ে আরো মাথায় তুলে ফেলছো।
-বাবাই ভাইয়া তো কখনো আমায় মাথায় তুলেনি। (নিবির)
-হইছে পাঁকামো করনা। চকলেটস গুলো ঘরে রেখে এসো। এখন ব্রেকফাস্ট করবে৷ তাড়াতাড়ি আসো। (নিবির)
-না ভাই তুমি এখানে থাকো। এইগুলো আমার কাছে দাও আমি রেখে আসছি (তুলি)
-নাও আবার খেয়ো না তোমার বর দিয়েছে বলে! (নিবির)
-ওরে পাকনা রে! (নিবিরকে কোলে নিয়ে আয়ান)
-চাচ্চু আজকে আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবা পার্কে?
-স্কুলের হোম ওয়ার্ক করেছো? (আয়ান)
-হ্যা করেছি তো।
-তাহলে আমিও নিয়ে যাব।
-উম্মায়াহ (আয়ানকে চুমু দিয়ে নিবির)

নিবির আয়ানের কোল থেকে নেমে রান্নাঘরে গেলো।

-চাচি মা, চাচিমা। (বাঁধনের শাড়ির আঁচল টেনে নিবির)
-হ্যা আব্বু বলো। তুমি রান্নাঘরে কেন? কালো হয়ে যাবে তো আমার আব্বুটা। (হাত ধুয়ে নিবিরকে কোলে নিলো বাঁধন)
-আমি একটু কফি খাবো। রুদ্র ভাইয়া আর আমার জন্য একটু কফি দিবা? (নিবির)
-এখন রুদ্র ভাইয়া সব না? আমরা কিচ্ছু না? (গাল ফুলিয়ে বাঁধন)
-তুমি তো আমার চাচিমা। উম্মায়াহ (বাঁধনকে কিস করে নিবির)
-নিবির চাচিমা কে ছাড়ো বিরক্ত করনা। তুমি যাও আমি সবার জন্য কফি নিয়ে আসছি। (নীলিমা)
-দাও ভাবি আমি দিয়ে আসি। (বাঁধন)
-নাও।

বাঁধন সবাইকে কফি দিচ্ছিলো আর সাকিব কফি হাতে নিয়ে রান্নাঘরে গেলো।

-কি ম্যাডাম আপনি খেয়েছেন? (নীলিমাকে জিজ্ঞেস করলো সাকিব)
-সময় ই তো পেলাম না। আপনার ঘুম ভাঙছে তাহলে?
-না এখনো ঘুমিয়েই আছি কালকের বৃষ্টিস্নাত রাতের কথা মনে করে। (কফিতে চুমুক দিয়ে সাকিব)
-হইছে থামেন। কালকে যা করছেন আপনি! আপনি শ্বশুর মনে রাখবেন।
-তো? আমার তো বউ আছে নাকি?
-আসছে……!
-নাও বাকি কফিটুকু খাও। (নীলিমার দিকে কফি মগ এগিয়ে দিয়ে সাকিব)
-হাতে ময়দা দেখতে পাচ্ছেন? (হাত দেখিয়ে নীলিমা)
-তো কি? আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

সাকিব ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে নীলিমাকে কফি খাইয়ে দিচ্ছিলো। বাঁধন আর নিবির পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে। বাঁধন নিবিরকে আওয়াজ করতে না করেছে।

-ভাইয়া? (বাঁধন সাকিবকে ডাকলো)
-কি?
-ভাবিকে খাওয়াচ্ছিলেন? (হাত থেকে ট্রে টা রেখে)
-দেখলাই তো। আবার জিজ্ঞেস করে!
-আমি বুঝিনা আপনার ক্যারেক্টার আয়ানের মধ্যে নাই কেন? আপনার নখের যোগ্য ও তো ও না। দুইভাই কে বলবে?
-কেন আমার ভাই আবার কি করছে?
-আমাকে জিজ্ঞেস ই করলো না খেয়েছি কি না। আর আপনি এসে খাইয়ে দিচ্ছেন।
-লাভ মেরিজ করছিলা তো। বিয়ের আগেই তো প্রতিদিন দশবার করে সময় অসময়ে জিজ্ঞেস করছো খাইছো? ঘুমাইছো? কি কর? গোসল করছো? তাই এখন আর জিজ্ঞেস করতে হয়না বুঝছো বাঁধন। (হাসতে হাসতে সাকিব)
-আপনি কি ফাইজলামি ছাড়বেন না? (হাসতে হাসতে নীলিমা)
-পুরা পঁচায় দিল। (বাঁধন)
-ভাইয়া লাভ ইউ। আমার মনের কথাটাই বলছো। বিয়ের আগে এইটারে ভাল লাগতো। এখন ভাঙা রেডিও মনে হয়। (রান্নাঘরে এসে আয়ান)
-আমি ভাঙা রেডিও? ভাইয়া ভাবি কিছু বলবেন না? (কাঁদো কাঁদো হয়ে বাঁধন)
-তোরে থাপ্পর মারমু। ওর মতো ভালো সেকেন্ড কাউকে পাবি? তোরে না আমি বাসা থেকে বের করে দিব ওকে কষ্ট দিলে। এই যে বাঁধন বলে দিয়েছি। (সাকিব)
-ভাইয়া আমি তোমার ভাই! ভাইয়ের থেকে ও আগে? (আয়ান)
-বাঁধন তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো? খুন্তি পেটা কেন করছো না আয়ানকে? (নীলিমা)
-সত্যি ভাবি এখন ওকে আমি খুন্তি পেটাই করব। (হাতে কাঠের খুন্তি নিয়ে বাঁধন)

আয়ান খুন্তির বারি খাওয়ার আগেই বাঁধনকে পুরো ড্রইংরুম দৌঁড় করায়। তুলি, তিশা, রুদ্র, নিবির ফ্রি তে বিনোদন নিচ্ছে আর ওদের থামানোর ট্রাই করছে।

নিবির বাঁধনের পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে

-চাচিমা ওইদিকে চাচ্চু।

শেষ মেশ বাঁধন ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পরে। আয়ান বাঁধনের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে আর বাঁধনের সামনে এনে বলে,

-হা কর খাইয়ে দেই।
-হইছে ছাড়ো তুমি।
-আহা রাগ করেনা বাঁধন জি!
-তুমি দাও আমিই খেতে পারি।
-খেয়ে নাও বাঁধন। এই সুযোগ আর না ও পেতে পারো। (রানাঘর থেকে বেরিয়ে সাকিব)
-ভাইয়া বলছে বলে খাচ্ছি। তাড়াতাড়ি খাওয়ায় দাও।

আয়ান অর্ধেক পানি খেলো আর বাকি অর্ধেক বাঁধনের মাথায় ঢেলে দিলো। সবাই হা করে তাঁকিয়ে থেক ফিক করে হেসে দিল। নীলিমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। সাকিব বলছে,

-আজকে তো তুই গেলি আয়ান। হাহাহা

বাঁধন টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে পুরোটা আয়ানের মাথায় ঢেলে দিলো। নিবির তো সেই মজা নিচ্ছে। রুদ্র আর তুলি হাসতে হাসতে ফ্লোরেই বসে পরে। তিশা বুয়াকে ডেকে এনে ঘরটা মুছতে বলে।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে….

-সিরিয়াসলি বলছি বেস্ট একটা ফেমিলি পেয়েছি। এত মিল আর কোনো ফেমিলিতে আছে বলে আমার মনে হয়না। আমি ধন্য আব্বু আম্মুর মতো শ্বশুর শ্বাশুড়ি পেয়ে। চাচিমা আর চাচ্চুর মতো মানুষ ই হয় না। সত্যিই অনেক খুশি আমি। (রুদ্র)
-তুমি কিছুই দেখো নি। আমরা সবাই মিলে যা করি তা কোনো সুস্থ মানুষ দেখলে পাগল ই হয়ে যাবে। (তিশা) আম্মু আসার পর পুরো বাড়ির পরিবেশটাই পালটে গেছে। আর চাচিমা তো আছেই।
-ভাইয়া আর ভাবি আছে বলেই আমাদের সংসারটা এত সুন্দর। স্পেশালি ভাবি আসলেই বেস্ট একজন মানুষ। (বাঁধন)
-থামবা নাকি? আমার প্রশংসা করতে বসছে! (নীলিমা)
-না আম্মু চাচিমা ভুল কিছু বলেনি। (তুলি)
-আমার কথা কেউ বলো। (নিবির)

নিবিরের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। সাকিবের পায়ের উপর বসিয়ে সাকিব নিবিরকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। রুদ্র আর তুলি বলল,

-আমার ভাই সেরাদের থেকেও সেরা। হাহাহা।

সমাপ্ত❤

একটা সম্পর্ক তৈরি করতে গেলে সৃষ্টি হয় আরো কতগুলো সম্পর্কের। সেই সম্পর্কগুলো নষ্ট করার অধিকার তোমার নেই। যদি মানুষটাই এলোমেলো হয় তাহলে তা ভিন্ন কথা। রেপড হলেই যে মেয়েটি খারাপ তা নয়, রেপড হলেই যে মেয়েটি সব হারিয়েছে তা নয়, রেপড হলেই যে মেয়েটি কারো বউ হওয়ার যোগ্য নয় তা নয়। এসব বাদ দিয়ে সিচুয়েশন বুঝো। আর সুখ খুব সহজেই ধরা দেয়না। স্থায়ী কিছুর জন্য ধৈর্য ধরতে হয়। তবেই সংসার হবে সুখের। আর সুখ আসবে পায়ের তলায়।

ধন্যবাদ সবাইকে এতদিন সাথে থাকার জন্য। কেমন লাগলো জানাবা সবাই। ☺😣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here