কলঙ্কের ফুল – পর্ব ১৩

0
214

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_১৩
#Saji_Afroz
.
.
.
সানিয়া আষ্টেপৃষ্ঠে আদিকে জড়িয়ে আছে দেখে থমকে যায় মেহেরীকা।
একটা বিবাহিত পুরুষকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতে লজ্জা করছেনা এই মেয়ের! আদি ঠিকই বলেছে সানিয়া নামক মেয়েটা ভালোনা, একদমই ভালোনা।
নিজের মনে কথাগুলো বলে মেহেরীকা তাদের পাশে এগিয়ে গিয়ে কঠিন গলায় বললো-
এসব কি হচ্ছে?
.
মেহেরীকার গলার আওয়াজ শুনতেই আদিকে ছেড়ে দিয়ে সানিয়া দ্রুত হেটে চলে যায় নিজের রুমের দিকে।
.
মেহেরীকার রাগান্বিত চোখ দেখে ধীর গলায় আদি বলে-
আমি কিছু করিনি। ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
-তুমি কি বাচ্চা? কারো আদর লাগবে আর সে এসে জড়িয়ে ধরবে?
-মেহের আসলে….
.
আদির কথা না শুনে মেহেরীকা হনহন করে এগুতে থাকে নিজের রুমের দিকে।
.
.
.
চোখ দুটো মাত্রই লেগে এসেছিলো মুনিয়ার।
হঠাৎ মোবাইলের রিং টুনের শব্দে চমকে যায় সে। তার নিজের কোনো ফোন নেই। দরকারে বোনের ফোন ব্যবহার করতো।
এতো রাতে মেহেরীকার ফোনে কার কল আসতে পারে? আর না ভেবে মুনিয়া ফোন হাতেই নিতেই দেখতে পায় রাজীবের কল।
.
লম্বা একটা দম ফেলে সে রিসিভ করে বললো-
হ্যালো রাজীব?
-ভাইয়া থেকে রাজীব এ নেমে গেলাম?
-এটাই স্বাভাবিক নয় কি?
-ওহ। কেমন আছো?
-যেমন থাকার কথা তেমনি আছি। আপনিতো বেশ ভালোই আছেন।
-কেনো মনে হচ্ছে?
-শুনলাম সামনে বিয়ে আপনার, ভালো না থাকলে কি আর বিয়ে করতেন।
-তুমি কি এসব বলার জন্যই আমার বাসায় আমাকে খুঁজতে এসেছিলে?
-নাহ। আপনি বিয়ে করেন বা দূরে গিয়ে মরেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। কিন্তু আপনার জন্য আমার বোনটা বাড়ি ছাড়া হয়েছে, সেটা কিভাবে ভুলি বলেন?
-বাড়ি এটা ছেড়েছে কি হয়েছে! নিশ্চয় তাকে নিরাপদ কোথাও রেখেছো তোমরা বা সে গিয়েছে।
-আপনি কি কিছুই জানেন না বলতে চাইছেন?
-মানে?
-মানে আপুর কোনো খবর আমরা বিয়ের রাত থেকে পাইনা।
.
কথাটি শুনেই রাজীবের বুকের মাঝে অজানা এক ভয় কাজ করছে। সে ভেবেছিলো মুনিয়া বা তার বাবা মেহেরীকার কোনো ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তারাই মেহেরীকার কোনো খবর জানেনা! তাহলে কোথায় গেলো তার মেহের?
.
রাজীবের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে মুনিয়া বললো-
ভণিতা করে লাভ নেই। আমি আপনাকে কি করতে পারবো! কিছুই না। কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি যে মেয়েটিকে ভালোবাসেন দাবী করেছিলেন সেই মেয়েটির এমন পরিণতি কি করে আপনি হতে দিলেন? এতোই ঠুনকো আপনার ভালোবাসা! আমার আপু ভুল করেছে। আসলেই সে ভুল করেছে। মানুষ চিনতে ভুল করেছে, ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে, ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছে।
যেটার মাশুল হয়তো তাকে জীবন দিয়ে দিতে হলো।
.
এতোগুলো কথা শুনলেও শেষের কথাটি রাজীবের হজম করতে কষ্ট হয়।
কোনো জবাব দিতে কষ্ট হচ্ছে তার, গলাটা ধরে আসছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ নিয়ে বলে-
আমার মেহেরের কিছু হয়নি।
.
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুনিয়া বলে-
কিভাবে বুঝলেন কিছু হয়নি? যদি কিছু নাই হতো তবে কোথায় সে?
.
আর কোনো কথা না শুনে রাজীব লাইন কেটে দেয়। মনে করতে মেহেরীকার সাথে শেষ দেখার কথা।
সেদিন মেহেরীকা বলেছিলো, যত যাই হয়ে যাক ওর পরিবার ওর পাশে ঢাল হয়ে থাকবে।
রাজীবের কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও তাদের সাথে সর্বদা সে থাকবে। তাহলে আজ তার পরিবারের সদস্যরাই কেনো বলছে তারা জানেনা মেহের কোথায়?
.
মুনিয়ার বিশ্বাস তার বোন সুস্থ রয়েছে। কিন্তু সে চায় রাজীব অপমানবোধে ভুগুক, কষ্ট পাক। যে কারণে বোনকে নিয়ে এমন একটা কথা বলে ফেলেছে সে। আচ্ছা রাজীব কি সত্যি ভাবছে তার বোনকে নিয়ে? নাকি সবটাই তার অভিনয়?
.
.
.
মেহেরীকার পিছু পিছু রুমে গিয়ে আদি তার এক হাত টেনে নিজের বাহুডোরে এনে বললো-
আমার বউ এর বুঝি রাগ হয়েছে?
.
মেহেরীকা এক ঝাটকায় নিজেকে সরিয়ে দরজা লাগিয়ে আদির পাশে এসে বললো-
আমার কেনো রাগ হবে? আর কি যেনো বললেন আমি আপনার বউ! আমি আপনার বউ নয় মিস্টার আদিয়াত চৌধুরী। আমার কাজ হলো সানিয়ার হাত থেকে আপনাকে বাঁচানো। আর আমি সেটাই করেছি।
-কিন্তু তুমিতো সানিয়াকে সুযোগ দিতে বলেছিলে।
-হুম বলেছি। এখনো বলবো। কিন্তু এভাবে নয়। আমি ওকে ভালো মেয়ে মনে করেই বলেছিলাম কিন্তু সেতো বিবাহিত পুরুষের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করতে চায় এটা জানতাম নাকি!
-তাহলে বুঝো এবার কেমন মেয়ে সে।
-সেটাই, খুব খারাপ।
.
বিছানার উপর বসে পড়ে মেহেরীকা। কেনো সে এতো রেগে গিয়েছে নিজেই বুঝতে পারছেনা। সানিয়াতো ভালোবাসে আদিকে, সে জড়িয়ে ধরতেই পারে। তাহলে কেনো সে এমন আচরণ করেছে আদির সাথে?
লম্বা একটা দম ফেলে আদির উদ্দেশ্যে বলে মেহেরীকা-
আমি দুঃখিত। সানিয়া আপনাকে ভালোবাসে তাই সে এমন আচরণ করেছে। এটার জন্য তাকে আমরা খারাপ বলতে পারিনা।
-মেহের! এতোক্ষণ যা বলেছিলে ঠিক ছিলো, এখন এই কথাটা আমি মানতে পারছিনা। আরে ও সবার সাথেই এমন করে।
-আমি ঘুমোবো এখন।
-মেহের?
-হু?
-তুমি করেই ডেকো আমায়। শুনতে ভালো লাগে।
.
.
.
-এই যে চৌধুরী সাহেব?
ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?
.
সালেহা চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমজাদ চৌধুরী বলেন-
জেগে আছি।
-তাহলে আমার দিকে ঘুরো, কথা আছে তোমার সাথে।
.
আমজাদ চৌধুরী তার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করেন-
কি কথা?
-আমার উপর এখনো রেগে আছো তুমি?
-তোমার উপর কোনো রাগ নেই আমার। নিজের ভাগ্যের উপর রাগ। একটা ছেলের জন্যও মনের মতো বউ আমি আনতে পারিনি।
-কোনটা খারাপ?
-খারাপ আমি বলছিনা।
-তাহলে?
-আরো ভালো পেতে পারতো।
-একটা কথা জানোতো? জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটাই আল্লাহ্‌ নির্ধারণ করে দেন।
-হুম। তবুও আফসোস থেকে যায়। মিলির টা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু মেহেরীকা নামক মেয়েটাকে আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে।
-কেনো?
-কোথাকার কোন মেয়ে আদির বউ হয়ে চলে এসেছে। ২-৩ দিন হতে চললো তার বাসার কোনো খবর নেই।
-সে বাসায় চিঠি দিয়ে বলে এসেছে।
-বিষয়টা তুমি বুঝছোনা সালেহা। এক কাজ করো।
-কি?
-কালই ওই মেয়ের বাসা ঈদগাহ কোন জায়গায়, বাড়ির নাম এসব জিজ্ঞাসা করবা। যতই জানিয়ে আসুক। নিশ্চয় তার বাসার সবাই চিন্তিত আছে।
-হুম কথাটি মন্দ বলোনি।
-তবে হ্যাঁ, সে যেনো বুঝতে না পারে কেনো জিজ্ঞাসা করছো। ঘাবড়ে যেতে পারে।
-ঠিক আছে।
.
.
.
চোখে ঘুম নেই রাজীবের। মুনিয়ার সাথে কথা বলার পর তার অস্থিরতা আরো বেড়ে গিয়েছে। এতোদিন ভেবেছিলো তার মেহের হয়তো ঠিক আছে, তার পরিবার জানে সে কোথায়। কিন্তু আজ মুনিয়া জানিয়ে দিয়েছে তারা জানেনা মেহেরের কোনো খবর। তাহলে কোথায় গেলো মেহের? সত্যিই কি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে?
.
পকেট থেকে মোবাইল বের করে রাজীব ঘেটে বের করে মেহেরীকার ছবি। মেহেরীকার ছবি দেখতে দেখতে তাদের এনগেজমেন্ট এর ছবি আসতেই রাজীবের চোখ দুটি ছলছল করে উঠে। সেদিনও ভাবতে পারেনি রাজীব, তার মেহের এতোটা কাছে এসেও দূরে সরে যাবে।
মেহেরের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে রাজীবের। হাতের মোবাইল টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার টেনে সিগারেট এর প্যাকেট-টা হাতে নেয় রাজীব। ইদানিং এই সিগারেট-ই তার মনে একটু হলেও শান্তি দিতে পারে।
.
.
.
-না প্লিজ, না। আমি যেতে চাই। এমনটা তুমি করতে পারোনা। প্লিজ যেতে দাও আমায়….
.
ঘুমের মাঝে এমন বিড়বিড় করা কথা কানে আসতেই আদির ঘুম ভেঙ্গে যায়।
উঠে বসে বোঝার চেষ্টা করে কোথা থেকে এমন শব্দ আসছে। পরক্ষণেই তার মেহেরীকার কথা পড়তেই সোফা ছেড়ে উঠে লাইট জ্বালিয়ে এগিয়ে যায় মেহেরীকার কাছে।
মেহেরীকা কিসব যেনো বিড়বিড় করে বলছে ঘুমের মাঝে। মেহেরীকা কি বলছে তা শোনার জন্য আদি তার কানটা মেহেরীকার মুখের কাছে নিয়ে যায়। আদি তার কান মেহেরীকার মুখের কাছে নিয়ে যাওয়াই, ভুলবশত আদির কান মেহেরীকার ঠোঁট স্পর্শ করতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। চোখ খুলেই আদিকে এতো কাছে দেখে এক ধাক্কা মেরে বিছানার নিচে ফেলে দেয় সে।
আদিকে ধাক্কা মেরেই ক্ষান্ত হয়নি মেহেরীকা।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
লজ্জা করেনা একটা মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে এসব করতে? তোরা সব ছেলেই দেখি এমন। কাউকে চেনা যায়না। তোকে যাও ভালো মনে করেছিলাম, তুইও…..
.
আরো কিছু বলতে গিয়ে বললোনা মেহেরীকা।
.
আদি হাসতে হাসতে নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মেহেরীকার উদ্দেশ্যে বললো-
তুমি করে বলতে বলেছি আর তুমি তুই তে নেমে গেলে! যাক,
তোমার সাথে খারাপ কিছু করার সুযোগ আমি সেদিনই পেয়েছিলাম, যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। করেছি কিছু? নাতো?
যাক আজও তোমার দোষ নেই। আসলে তুমি ঘুমের মাঝে কিসব যেনো বিড়বিড় করে বলছিলে। ভেবেছিলাম তোমার কিছু লাগবে তাই ঘুমের মাঝেই বলছো। সত্যি বলতে তোমাকে ডেকে তোমার ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই আমি ওভাবে শুনতে চেয়েছিলাম কি বলছো তুমি। কি করে বলবো যে মেয়েকে হাজার ডাকলে ঘুম ভাঙ্গেনা আজ সে…..
-সরি।
-কি?
-বলছি আমি দুঃখিত।
-তুই তুকানি করে এখন সরি বললে হবে শুধু?
-কি করতে হবে?
-বিড়বিড় করে কি বলছিলে তা বলতে হবে।
.
মেহেরীকার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই খারাপ দিনটা সে স্বপ্নে দেখছিলো, কিন্তু বিড়বিড় করে কি বলছিলো সে নিজেই জানেনা। এই সম্পর্কে কিছু বলেছে কি? হয়তো। ভাগ্যিস আদিয়াত কিছু শুনেনি। নাহলে….
.
-কি হলো মেহের?
-আসলে আমি নিজেইতো জানিনা আমি কি বলছিলাম।
-তাই!
-হুম। অন্য কিছু বলুন।
-উম্ম…
আজ না, আরেকদিন বলবো। সেদিন আমার কথা রাখতে হবে কিন্তু।
.
মেহেরীকা হেসে জবাব দেয়-
ঠিক আছে। তাহলে এখন ঘুমাই।
-আর না ঘুমাও। দেখো এখন কটা বাজে। ০৪.৪০। আর কিছুক্ষণ পরে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যেও।
-কিন্তু এতোক্ষণ কি করবো আমি?
-এতোক্ষণ কই! কিছু সময় বাকি আর। তুমি চাইলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার সাথে গল্প করতে পারো। আপত্তি আছে কোনো?
-নাহ।
.
.
-জানো মেহের? আজ যখন সানিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো বলে তুমি রিয়েক্ট করেছিলে তোমাকে এক্কেবারে বউ এর মতো লেগেছে। মনে হচ্ছিলো তখনি তুমি সানিয়াকে রাগে খেয়েই ফেলতে।
.
আদির কথা শুনে মেহেরীকারও তখনের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। আসলেই সে কি বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে? কিন্তু কেনো?
.
মেহেরীকাকে নীরব থাকতে দেখে আদি বলে-
আমি মজা করছিলাম। এটা নিয়েও আবার গালটা ফুলাইও না।
.
মুচকি হেসে মেহেরীকা বলে-
আমাকে মিথ্যে কেনো বলেছিলে?
-কবে?
-তোমার নাম আদি। কিন্তু তোমার নামতো আদিয়াত।
.
মৃদু হেসে আদি জবাব দেয়-
-মিথ্যে বলিনি। আদিও আমার নাম।
-মিথ্যেই বলেছো। তুমি বলেছো মেহেরীকা বড় নাম, কিন্তু তোমার নাম ছোট, আদি চৌধুরী। অথচ আদিয়াত থেকে ছোট করেই সবাই আদি ডাকে তোমায়। এবার বলো, মিথ্যে
বলোনি?
-হুম বলেছিলাম। আসলে….
-কি?
-তোমাকে মেহের নামে ডাকার জন্যই…
-কেনো? আমাকে কেনো মেহের নামে ডাকার জন্য মিথ্যে বললে?
.
এই প্রশ্নের উত্তর আদির নিজেরই জানা নেই। কি বলবে সে এখন মেহের কে?
.
-কি হলো আদিয়াত?
-আরে এটা না বুঝার কি আছে! মেহেরীকা…. এতো বড় নামে ডাকতে ডাকতে দিনের অর্ধেক সময় চলে যাবে আমার। আমি আবার সময় অকারণে নষ্ট করা পছন্দ করিনা। তাই আর কি…
-কি! অকারণে সময় নষ্ট করা পছন্দ করোনা! কেনো? মোবাইল, ল্যাপটপ টিপাটিপির জন্য?
.
কথাটি বলে মেহেরীকা নিজেই হেসে উঠে উচ্চশব্দে।
এই প্রথম মেহেরীকার এমন প্রাণবন্ত হাসি দেখছে আদি।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে মেহেরীকার দিকে।
.
মেহেরীকা খেয়াল করে আদি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কিছুটা বিব্রতবোধ করে মেহেরীকা বললো-
আমি ভেতরে যাচ্ছি, আজানের সময় হয়ে এসেছে প্রায়।
.
এক পা এগুতেই মেহেরীকা শাড়ির সাথে পা পিছলে পড়ে যেতে চাইলেই আদি ধরে ফেলে তাকে। নিজেকে স্বাভাবিক করে আদির কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলে সে-
আসলে শাড়ি পরার অভ্যেস নেইতো তাই এমন প্রায় হয়।
-না পরলেই হয়।
-কিন্তু মা আমাকে সব শাড়িই দিয়েছেন। সমস্যা নেই, ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া কতোদিন বা আছি এখানে।
.
কথাটি বলে মেহেরীকা বারান্দা ছেড়ে রুমে চলে গেলেও আদি দাঁড়িয়ে থাকে নিজের জায়গায়। কেনো যেনো তার খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, মেহের তুমি যেওনা। আজীবন এখানে আমার সাথেই থেকো।
.
.
.
সকাল ৮টা…..
ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে সালেহা চৌধুরী, মিলি আর মেহেরীকা।
তখনি আরিফ এসে বললো-
আমি তাহলে আসি। মিলি দরজা লাগিয়ে দাও।
-হুম।
.
-ভাইয়া দাড়া?
.
আদির ডাকে সকলেই তার দিকে তাকাতেই চমকে যায়। সবার মনে একটায় প্রশ্ন,, যে সময়ে নাস্তা সেরে তার আরেকঘুম দেওয়ার কথা, সে সময়ে তৈরি হয়ে কোথায় যাচ্ছে আদি?
.
মায়ের কাছে এগিয়ে এসে মাকে আচমকা পায়ে ধরে সালাম করে আদি বললো-
বাবাকেও করে এসেছি সালাম।
.
অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে সালেহা চৌধুরী প্রশ্ন করেন-
কিন্তু কেনো?
-আজ থেকে ভাইয়ার সাথে আমিও অফিসে যাবো।
.
কথাটি শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলেও তার কথার মান রেখেছে বলে মেহেরীকা খুশি হয়।
মেহেরীকার মুখে হাসি দেখে মিলি বলে উঠে-
এতোদিন যা কেউ করাতে পারেনি মেহেরীকা ঘরে প্রবেশ করেই তা করিয়ে ফেলেছে। সত্যি মেহেরীকা তোমার জবাব নেই।
.
মৃদু হেসে মেহেরীকা বলে-
আমি কিছু করিনি ভাবী।
-আচ্ছা তাই! বিশ্বাস হয়না।
.
শ্বাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে মিলি প্রশ্ন ছুড়ে-
মা আপনি বলুন? এটা মেহেরীকার জাদু নয় কি?
-অবশ্যই। আমি জানতাম আমার বানর ছেলেটাকে একমাত্র মেহেরীকা মানে তার মেহের ঠিক করতে পারবে।
.
কথাটি শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়ে আদি তার ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো-
ভাইয়া যাবি? নাকি এদের বকবকানি শুনবি?
.
আরিফ মুচকি হেসে বললো-
হুম চল।
.
.
.
-কই যাস এতো সকালে?
.
মায়ের করা প্রশ্নে দাঁড়িয়ে পড়ে রাজীব জবাব দেয়-
মেহের কে খুঁজতে।
.
ছেলের কথা শুনে চমকে যান কুনসুম হক। এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও ওই মেয়ের কথা তার ছেলে কিভাবে বলছে বুঝতে পারছেন না তিনি।
শান্ত গলায় রাজীবের পাশে গিয়ে বলেন-
মেহেরীকাকে তার বাসার মানুষ লুকিয়ে রেখেছে। কোথায় পাবি তুই তাকে?
-না জেনে কথা বলা ঠিক না আম্মা। শুরু থেকেই তোমার কথা শোনা আমার উচিত হয়নি।
-আমি তোর খারাপ চাই?
-না তবে মেহেরের ভালোও চাওনা।
-রাজীব!
.
লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাজীব বললো-
মা আমার মেহের কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সে বেঁচে আছে কিনা সেটাও কেউ জানেনা। আমার ওকে খুঁজে বের করতেই হবে।
.
কথাটি বলেই রাজীব এগুতে থাকে সদর দরজার দিকে।
তখনি কুনসুম হক বলেন-
আজ বাসায় সুপ্তি আসবে বলেছে। এখন থেকে তোর সুপ্তির কথা ভাবা দরকার। মেয়েটার সাথে কিছুদিন পর বিয়ে তোর।
.
আপাতত মেহের কে ছাড়া কারো কথা ভাবতে চায়না রাজীব। তাই সে মায়ের কথায় কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাসা থেকে। উদ্দেশ্য আগে মেহেরীকার বাবার সাথে দেখা করবে। তিনি যদি সত্যিই মেহেরীকার কোনো খবর না পেয়ে থাকেন তাহলে সে নিজেই তার মেহের কে খুঁজে বের করবে। যা ভুল হয়েছিলো সব শুধরে নিবে এবার।
নিজের মনে কথাগুলো বলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাজীব, মেহেরীকার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
.
.
সকালে নাস্তা করার সময় মেহেরীকা খেয়াল করে দিবার মুখটা কেমন শুকনো ছিলো। ভালো করে কিছু খায়নি মেয়েটি। সে কি কোনো সমস্যায় ভুগছে, যা কাউকে বলতে পারছেনা? একবার না হয় দিবার কাছ থেকেই জিজ্ঞাসা করেই দেখা যাক।
আপনমনে কথাগুলো বলে দিবার রুমে যেতেই চমকে যায় মেহেরীকা।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here