ঘায়েল – পর্ব ১০

0
214

#ঘায়েল
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
.
.
.
রানবীর কথা শুনে পুনমের চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো।
কাজি অফিসে মানেটা কি!
রানবী বললো-
মনেমনে এতো না ভেবে আমাকে জিজ্ঞেস করলেই পারো। আমরা কাজি অফিসে কেনো এসেছি জানতে চাওতো? তবে শুনো, আজ আমাদের বিয়ে।
.
তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুনম বললো-
আমাদের মানে?
-তোমার আর আমার।
-পাগল নাকি! আমি কেনো বিয়ে করতে যাবো তোর মতো একটা থার্ড ক্লাস ছেলেকে!
-আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছিনা, জানিয়ে দিলাম শুধু।
-ওহ তাই! আমাকে মেরে ফেললেও বিয়েটা করবো না আমি।
-মাহিম ভাইকে মারবো বললে করবে তো?
.
পুনমের মনে এলো মাহিমের কথা। ভাই এর কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য এসব করেছে সে। মাহিম তো ভিক্টোরিয়া পার্কেই ছিলো। তবে এখন কোথায়!
.
পুনমের পাশে এসে, তার গলায় একটা মালা পরিয়ে
দিয়ে রানবী বললো-
তোমার ভাই বাদশার কাছে জিম্মি আছে। বিয়েটা ভালোই ভালোই করে নাও। নাহলে ভাই এর দেখা আর পাবেনা।
.
এদিকে কাজি সাহেব কে নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলো রনি ও আকিব।
রানবী নিজের গলায় নিজেই মালা পরিয়ে কাজির উদ্দেশ্যে বললো-
বিয়ে শুরু করুন।
.
পুনমের দিকে তাকিয়ে কাজি সাহেব বললেন-
মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে ১৮বছর হয়নি!
.
কাজির কথা শুনে হেসে উঠলো রানবী। কাজির উদ্দেশ্যে হাসতে হাসতেই বললো-
দেখতে ছোটখাটো, ১৮পার হয়ে গিয়েছে তার। আর আমার বন্ধুরা তো সব বুঝিয়ে দিয়েছে আপনাকে তাইনা?
-হ্যাঁ।
-তবে দেরী কেনো! শুরু করুন বিয়ে।
.
.
.
সবেমাত্র নতুন প্রেমিকের সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছে রিমা।
সাথে সাথেই রানবীর ফোন এসেছে।
-হ্যাঁ ভাইয়া বল?
-তুই কোথায় রে?
-রেস্টুরেন্টে।
-ওহ! এখুনি বাসায় যা।
-কেনো!
-আরে যা না। দরকার আছে তোকে আমার।
-তোর এনগেজমেন্ট বলে? তাতো বিকেলে।
-এতো কথা বলছিস কেনো! তুই কি বফ এর সাথে?
-ইয়ে মানে, একেবারেই নতুন তো…
-ঘায়েল হয়েছিস ওর উপর?
.
রিমা তার নতুন প্রেমিকের দিকে ভালোভাবে একবার তাকিয়ে রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
নাহ।
-তাহলে উঠে যেতে সমস্যা নেই। এখুনি বাসায় যাবি।
-ওকে। বাট হয়েছে টা কি?
-উফফ… এসেই দেখবি। তবে যাই হয়ে যাক। আমার পক্ষে থাকবি আর বড় আপু, ভাইয়া, মাকে সামলাবি।
-কোনো কান্ড ঘটিয়েছিস?
-একটু পরেই দেখবি।
.
.
.
হালকা আকাশি রঙের একটা গাউন নুসাইবার জন্য নিয়ে আসলো নাতাশা।
নুসাইবার খাটের উপর গাউনটি রাখলো সে।
নাতাশা খেয়াল করলো, নুসাইবা চুপচাপ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
নাতাশা তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো-
মনে হচ্ছে তুই খুশি নেই?
.
শান্ত গলায় নুসাইবা বললো-
এমন কিছু না।
-ডিসিশন তো তুই নিয়েছিস। তবে এখন তুই কেনো মনমরা?
.
এর উত্তর জানা থাকলেও বললো না নুসাইবা। মুখে হাসি এনে বোনের পাশে এসে বললো-
আজ আমাকে তুই সাজিয়ে দিবি?
.
তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে নাতাশা বললো-
আমার এক্স এর সাথে আমার বোনের এনগেজমেন্ট আজ। তোর কি এমন দোষ করেছিলাম আমি? যার শাস্তি স্বরূপ এসব করাচ্ছিস আমাকে দিয়ে? রানবী আমার এক্স হলেও একসময় আমি ভালোবেসে ছিলাম ওকে। চোখের সামনে তোদের দেখলে আগের স্মৃতি একটু হলেও মনে পড়বেনা আমার? সাথে সাদ্দাম কিছু বুঝতে পারবে বলে এই ভয় নিয়ে দিন কাটাতে হবে। তবুও আমি রাজি হয়েছি এসবে। আর আজ তোকে সাজাতে হবে এটা এমন আর কি! সাজিয়ে দিলাম নাহয়।
.
মুখে কিছু না বললেও নিজের মনে নুসাইবা বললো-
আমাকে ক্ষমা করে দিস আপু!
.
.
.
পুনম কে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করতেই সবাই ভাবলো, সে তার বন্ধবী! হয়তো বা এনগেজমেন্ট উপলক্ষে এসেছে।
কিন্তু রানবীর মুখে পুনম তার স্ত্রী শুনে সকলে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।
সাবিনা ও সবুজ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
কি জবাব দিবে তারা সাদ্দাম কে!
সাবিনা রানবীর পাশে এসে বললো-
তুই এসব মজা নিচ্ছিস৷ তাইনা রানবী?
-নাহ।
-না মানে! ওদিকে একটা মেয়ে তোর জন্য বসে আছে আশা করে, আর তুই কিনা অন্য আরেকটা মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ে আসলি! এই মেয়েটাকেই যদি তুই ভালোবাসতি তবে আমাদের জানালি না কেনো?
-উহু! নুসাইবার পরিবার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তাইনা? চলো! যেতে হবে আমাদের।
-যেতে হবে মানে! কোথায় যাবো?
-কেনো? এনগেজমেন্ট এ। নুসাইবার এনগেজমেন্ট হবে।
-আর তোর এই বউ টার কি হবে?
-ভুলবশত বিয়েটা হয়েছে। ডিভোর্স দিয়ে দিবো। কাউকে জানানোর তো দরকার নেই তাইনা বিয়েটার কথা? এনগেজমেন্ট টা সেরে আসি। বিয়ে তো দেরী আছে। ততদিনে ডিভোর্স হয়ে যাবে। কি চলবে তো?
.
সাবিনা অবাক হয়ে বললো-
এমন করা যায়?
-হু যায় তো!
.
এদিকে রানবীর কান্ড দেখে তার বড় ভাই জাফর বেরিয়ে পড়লেন বাসা থেকে। বাসায় থাকলে তার মাথাটা আরো খারাপ হয়ে যাবে।
সবুজ চুপচাপ তার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে।
খায়রুন ও রিমা দাঁড়িয়ে আছে সবুজের পাশে।
খায়রুন রিমার উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে বললো-
ভালোবাসতো পুনম কে, এনগেজমেন্ট নুসাইবার সাথে, বিয়ে করে আনলো কাকে?
.
রিমা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো-
জানিনা ভাবি!
.
এতোকিছুর মাঝেও রানবীর মা আনোয়ারা ইসলাম দেখে যাচ্ছেন, পুনম কে! মেয়েটিকে বড্ড পরিচিত লাগছে তার। কোথায় যেনো দেখেছে!
ড্রয়িংরুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে পুনম।
ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে সে।
এতো কথা বলে যাচ্ছে সকলে, সেদিকে তার খেয়াল নেই।
দৃষ্টি তার নিচের দিকে।
চোখ বেয়ে পড়ছে টপটপ করে পানি। নাকটা লাল টকটকে হয়ে আছে। মাথায় উড়না দেয়া, গলায় ভারী মালাটা সব মিলিয়ে নতুন বউ এর মতোই লাগছে তাকে।
তবে রানবী তাকে এভাবে হুট করে বিয়ে করার কারণ কি!
.
সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আনোয়ারা ইসলাম রানবীর উদ্দেশ্যে বললেন-
মেয়েটিকে তুই কি জোর করে বিয়ে করেছিস?
-আমার কথা টা শুনো?
-হ্যাঁ নাকি না?
.
মায়ের পাশে এসে তাকে টেনে অন্য রুমে নিয়ে যাচ্ছে রানবী।
বাকি সকলের উদ্দেশ্যে বললো-
সবাই প্লিজ আমার সাথে আসো।
আর রিমা তুই পুনম কে নিয়ে আমার রুমে যা।
.
পুনম! খায়রুন আর রিমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কে এই মেয়েটি!
.
.
.
মাহিম তার বাবাকে ফোনে সবটা জানালো। তারা জানিয়েছে আজই আসবে ঢাকায়।
রানবীর পরিবারের সকলের সাথে কথা বলবেন তারা।
এদিকে জাহারা তো পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
রানবীর সাহস কি করে হয় এসব করার!
তার পাশে বসে মাহিম বললো-
ফুফু তুমি উত্তেজিত না হলেই ভালো হয়। এসব থানা পুলিশ না করে আব্বুরা আসার অপেক্ষা করলেই ভালো হয়।
.
মাহিমের কথা শুনে শান্ত স্বরে জাহানা বললো-
ঠিক আছে।
.
.
.
পুনমের পাশে বসে আছে রিমা।
প্রথমে না বুঝলেও এই মেয়েটি সেই মেয়ে যার উপর ঘায়েল হয়েছে তার ভাই, এটা ভালোভাবেই বুঝেছে রিমা।
কিন্তু কেনো এভাবে হুট করে বিয়েটা করলো তার ভাই!
এটা বুঝতে পারছেনা রিমা।
.
ফোন বেজে উঠলো রিমার।
তার নতুন প্রেমিকের ফোন এসেছে।
রুম থেকে বের হয়ে রিসিভ করে বললো রিমা-
আমি এখন ব্যস্ত আছি।
-বেবি তখন ওভাবে চলে গেলে তুমি! একটু কথা বলোনা প্লিজ।
-পরে বলি বাবুটা?
-না এখুনি।
-আমি বললাম তো ব্যস্ত আছি।
-কিন্তু আমি যে মিস করছি বেবিটাকে। বলো কথা। বলতে হবে।
.
গলাটা গম্ভীর করে রিমা বললো-
মগের মুল্লুক নাকি! ওই ব্যাটা ফোন রাখ। তোর সাথে ব্রেকাপ আমার।
-মানে! কেনো?
.
ফোনের লাইন কেটে দিলো রিমা।
পেছন থেকে রানবী বলে উঠলো-
ব্রেকাপ করে দিলি?
-হু! এদিকে এতোকিছু ঘটে যাচ্ছে আর আমি নাকি তার সাথে কথা বলবো! যত্তসব। ওসব বাদ দে ভাইয়া। তুই বিয়ে করে ফেললি কেনো হুট করে?
-ভাবীর কাছে শুনিস। পুনম কই?
-তোর রুমে।
.
.
রানবী পুনমের কাছে এগিয়ে এসে বললো-
এনগেজমেন্ট করতে যাচ্ছি। তোমার কোনো আপত্তি আছে?
.
নিশ্চুপ হয়ে আছে পুনম।
পুনমের কাছে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বেরিয়ে পড়লো রানবী।
.
বিছানার চাদর হাত দিয়ে চেপে ধরে, বিড়বিড় করে পুনম বললো-
আমাকে জোর করে বিয়ে করলো, এখন বলছে ডিভোর্স দিবে। আজ বিয়ে করেছে আর আজই অন্যজনের সাথে আবার এনগেজমেন্টও! কি করতে চায়ছে টা কি রানবী?
আমাকে কি তার পুতুল মনেহয়! পুতুল!
.
(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here