ঘায়েল – পর্ব ১২

0
138

#ঘায়েল
#পর্ব_১২
#Saji_Afroz
.
.
.
কলিং বেল এর শব্দে জাহারা দরজা খুলতেই, পুনম কে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
জাহারা বললো-
পুনম তুই!
.
জাহারা কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো পুনম। জাহারা তাকে শান্তনা দিয়ে বললো-
শান্ত হো পুনম। কিচ্ছু হয়নি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
-কিচ্ছু ঠিক হবেনা।
.
নিজের বাবা মাহফুজ ইসলাম কে দেখে চমকে গেলো পুনম।
সে বললো-
তুমি এখানে আব্বু!
.
আফরোজা ইসলাম ও মাহিমও ড্রয়িং রুমে হাজির হলো।
তাদের দেখে জাহারা কে ছেড়ে কর্কশ কন্ঠে পুনম বললো-
বাহ! সবাই দেখছি এখানে আছে। তবুও কোনো স্টেপ নিলোনা আমার জন্য। কেনো জানতে পারি? আমি এতোটাই পর হয়ে গেলাম যে কেউ আমার খবর টাও নিলেনা। ছেলেটা আমাকে মেরে ফেললো না কেটে ফেললো তাও জানতে চায়লেনা।
.
আফরোজা ইসলাম মেয়ের পাশে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
আমরা কাল রাতেই এসেছি। এখুনি যেতাম ওইখানে। আর মাহিম তো নজর রেখেছেই ওই বাড়ির উপরে। তোর ক্ষতি আমরা হতে দিবো ভাবলি কি করে!
.
মাকের বুকে মাথা রেখে নীরবে কেঁদে চলেছে পুনম।
তার বাবা পুনমের উদ্দেশ্যে বললো-
এখন কি করবি ঠিক করেছিস?
.
পুনম বললো-
আইনী ব্যবস্থা নিয়ে ওই ছেলেকে জেলের ভাত খাওয়াবো।
.
আফরোজা ইসলাম খেয়াল করলেন, অনেক বেশি ক্লান্ত লাগছে পুনম কে দেখতে। মনেহচ্ছে কাল থেকে তার পেটে কিছু পড়েনি। তিনি জাহারার উদ্দেশ্যে বললেন-
এসব কথা পরে হবে। আগে মেয়েটার জন্য খাবার নিয়ে আসো কিছু।
.
.
.
টি-শার্ট পরে নিলো রানবী। এখুনি বের হয়ে পুনম কে খুঁজতে হবে তার।
এটা ভাবতেই রানবীর ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
.
—-পুনম এখন তার ফুফুর বাসায় আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।
.
মেসেজটি দেখে বিছানার উপরে বসে পড়লো রানবী।
নিজের মনে হাসতে লাগলো সে।
আর মনেমনে বললো-
আর কোথায় বা যাবে সে! গিয়েছে যখন ওখানে, থাকুক কিছুক্ষণ। আবার ধরে বেঁধে নিয়ে আসবো এখানে।
.
.
.
পেটে কিছু পড়লোনা পুনমের। কিছু মুখে নেয়ার ইচ্ছে তার নেই মোটেও।
আফরোজা ইসলাম আর জাহারাও জোরাজোরি করলেন না আর।
আফরোজা ইসলাম বললেন-
বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। আল্লাহ কিন্তু জীবনসঙ্গী ঠিক করে রাখেন। হয়তো ওই ছেলেটাকেই তোর জন্য ঠিক করে রেখেছিলেন আল্লাহ। তাই তোরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিস, না চায়তেও।
.
পুনম কিছু বলার আগেই জাহারা বললো-
কি বলছো টা কি ভাবী তুমি! কোথায় ওই ছেলেটার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করবে তা না করে এসব বলছো! আমাদের পুনম পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালো ছেলেকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতো। এই ছেলের কর্মকান্ড দেখেই তো বুঝা যাচ্ছে সে কেমন! আমি পুনমের সাথে আছি তোমরা ভয় পেলেও। পুনম ডিভোর্স দিবে ওকে।
.
জাহারার কথায় সম্মতি জানিয়ে পুনম বললো-
হু। আমি ডিভোর্স দিবো রানবী নামক মানুষটাকে। মুক্তি পেতে চাই আমি।
.
.
.
বেশখানিকক্ষণ কেটে গেলো। রানবী আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে সে ডাইনিং রুমে এসে চেঁচিয়ে বললো-
ভাবী নাস্তা দাও।
.
খায়রুন এসে মৃদু হেসে বললো-
বিয়ে করার পরেও ভাবী ভাবী করলে হবেনা। কিছুদিন পরেই তোর বউ এর কাছ থেকে নাস্তা চেয়ে নিবি।
.
খায়রুনের কথা শুনে হাসলো রানবী।
খায়রুন বললো-
পুনম কে ডাক। খাবার দিচ্ছি।
-সেতো বাসায় নেই।
-বাসায় নেই মানে?
-হু। ফুফুর বাসায় চলে গিয়েছে সবাই ঘুম থাকতেই।
-এখন কি হবে?
-কিছুই হবেনা। ঘরের বউ কে ঘরেই নিয়ে আসবো।
-আসতে না চায়লে?
-তুলে নিয়ে আসবো।
-থানা পুলিশের ঝামেলা করবে নাতো?
-করলেও লাভ হবেনা।
-কেনো?
-আমার কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার আছে। ভুলে গেলে ভাবী?
-ওহ হো! না ভুলিনি। এখন নাস্তা খেয়ে ঘরের বউ কে ঘরেই নিয়ে আয়।
.
.
নাস্তা খাবার পরেই আরেকটা মেসেজ এলো রানবীর ফোনে।
.
—-পুনম তার ফুফুকে নিয়ে বের হয়েছে তোমাকে ডিভোর্স দেবার ব্যবস্থা করতে। আটকাও ওকে।
.
রানবী রিপ্লাই দিলো-
কোথায় গিয়েছে ঠিকানা টা সেন্ড করুন।
.
রিপ্লাই আসতেই আর দাঁড়ালোনা রানবী।
বেরিয়ে পড়লো সে।
পুনম যে এতোদূর ভাববে সে তা চিন্তাও করেনি।
.
.
.
উকিলের সামনে বসে আছে পুনম ও জাহারা।
উকিল সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন-
তা বিয়ে হয়েছে কখন?
-কালই।
.
কথাটি শুনেই উকিল সাহেবের চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো।
কাল বিয়ে হয়েছে আর আজই ডিভোর্সের জন্য এসেছে!
তিনি ভ্রু জোড়া কুচকে বললেন-
আজকালকার বাচ্চারা বড় আধুনিক হয়ে গিয়েছে। নিজেদের পছন্দে বিয়ে করবে আবার ডিভোর্সও দিবে। তবে এমন ব্যাপার আর দেখিনি বাপু। বিয়ের পরের দিনই ডিভোর্স!
.
পুনম বললো-
আমাকে জোর করে বিয়েটা করেছে। তাই আমি থাকতে চাইনা ওই ছেলেটির সাথে। প্লিজ ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দিন।
.
-কোনো প্রমাণ আছে? আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি?
.
পেছন থেকে রানবীর গলার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো পুনম।
জাহারা বললো-
এটা নাকি ওই অসভ্যটা?
.
পুনম বললো-
হুম।
.
রানবী দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
হু এটাই। তবে অসভ্য না। আমি পুনমের হাসবেন্ড।
.
উকিলের কাছে এসে রানবী বললো-
আসলে আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়েছে। তাই এমনটা বলছে সে। আমাদের মাঝে তো গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কালই আমরা দুজনের ইচ্ছেতেই বিয়েটা করেছি।
.
পুনম রাগান্বিত কন্ঠে বললো-
সব মিথ্যে কথা! আমি কোনোদিন প্রেম করিনি ওর সঙ্গে।
.
রানবী পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটি সেলফি দেখালো উকিল কে।
এই ছবিটি সেদিন কেফে তুলেছিলো রানবী, পুনমের সাথে।
পুনম জানতো না, এই ছবিটির অপব্যবহার রানবী এভাবে করবে।
উকিল সাহেব ছবিটি দেখে বললেন-
হু, দেখতে তো বেশ হাসিখুশিই লাগছে।
.
পুনম বলে উঠলো-
ও যা বোঝাচ্ছে এমন কিছুই আসলে হয়নি। ও তো আমার ভাই বন্ধু ছিলো।
.
জাহারা ও উকিল সাহেব একই সাথে বলে উঠলেন-
ভাই বন্ধু মানে?
.
পুনম কিছু বলার আগেই রানবী বললো-
আরে বুঝছেন না? আমাদের ঝগড়া হয়েছে আর কিছুনা।
.
পুনম রেগেমেগে বললো-
ও আমাকে জোর করে বিয়েটা করেছে।
.
রানবী বললো-
আমি ডিভোর্স পেপারে সই না করলে ডিভোর্স হবেনা পুনম। সো জেদ করোনা।
.
উকিলের উদ্দেশ্যে পুনম বললো-
কোনো উপায় কি নেই ডিভোর্স টা হবার?
-আপনি যা বলছেন, তা যদি সত্যি প্রমাণ করতে পারেন তবেই আইনের সহযোগিতা নিয়ে ডিভোর্স করাতে পারেন।
-অবশ্যই প্রমাণ করতে পারবো। সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো কাজী সাহেব। তিনি সব কিছুর সাক্ষী দিতে পারবেন।
.
জাহারা বললেন-
আর দেরী না করে চল।
.
রানবীর দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
সব প্রমাণ জোগাড় করে আমি ডিভোর্স দিয়েই ছাড়বো তোকে। জেলের ঘানিও টানাবো তোকে দিয়ে। নাহলে আমার নাম পুনম নয়।
-ঠিক আছে। পুরোন বলেই ডাকবো তোমাকে।
.
কোনো কথা না বলে জাহারার সাথে বেরিয়ে পড়লো পুনম।
.
উকিল সাহেব বললেন-
খুবই খারাপ আচরণ আপনার স্ত্রীর। তবুও মাথা গরম করলেন না আপনি।
-একজন রেগে গেলে অপরজন কে ঠান্ডা থাকতে হয়। এটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ।
-ইন্টারেস্টিং!
.
.
.
কাজি সাহেবের সামনে বসে আছে পুনম ও জাহারা।
পুনম বললো-
কাল ওই ছেলেটি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলো। মনে আছে?
.
কাজি সাহেব বললেন-
এমন কোনো কিছু তো আমি দেখিনি।
.
কাজির কথা শুনে পুনম যেনো বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো।
ভাবতে লাগলো সেদিন কাজির সামনে কি কি হয়েছিলো।
.
কাজি বললেন-
কাল আমি যখন এসেছি, ছেলেটি বিয়ে শুরু করতে বললে আমি করেছি। ব্যস এতোটুকুই। জোর করে বিয়ে করার মতো কোনো দৃশ্য আমি দেখিনি। হ্যাঁ আপনি কাঁদছিলেন প্রচুর। তবে কোনো কথা তো বলেন নি।
.
যা ঘটেছে কাজির সামনে ঘটেনি, তা মনে এলো পুনমের। পুনম কে ভয় দেখিয়ে রানবী বিয়েটা করতে বাধ্য করেছে। এটা কাজির জানার কথা নয়। এটা কি করে ভুলে গেলো সে!
.
.
কাজি অফিসের বাইরে এসে সুইটিকে ফোন দিলো পুনম।
-হ্যালো সুইটি?
-পুনম তুই ঠিক আছিস?
-আছি। আচ্ছা কাল আমি জ্ঞান হারানোর পর কি কি হয়েছে বলতে পারবি? তুই তো ছিলিস কাল আমার পাশেই।
-তোকে মাহিম ভাইয়া ও রানবী ভাইয়ার বন্ধুরা মিলে হাসপাতালে নিবে বলে পার্ক থেকে বেরিয়ে পড়েছিলো। এরপরে কি হয়েছে আমার অজানা।
-সেদিন যে রানবীর সাথে আমার ঝামেলা হয়েছে এই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারবি তুই?
-এসব করলে রনি আমার সাথে ব্রেকাপ করে দিবে রে বোন!
-আর কাউকে চিনিস? যে সেদিন উপস্থিত ছিলো?
-নারে!
-ওহ! আচ্ছা রাখছি আমি।
.
পুনম ফোনের লাইন কেটে নিজেরমনে বললো-
তার মানে হাসপাতালে যাবার নাম করে ভাইয়া কে জিম্মি করে আমকে কাজি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। একমাত্র সাক্ষী দিতে পারতো সুইটি। কিন্তু সে নারাজ। তাহলে কে পারবে আমাকে সাহায্য করতে। হুম একজন তো আছেই। আর সে নিশ্চয় না করবেনা। সে আর কেউ নয়, আমার বড় ভাই মাহিম!
.
পুনম জাহারার উদ্দেশ্যে বললো-
ফুফু বাসায় চলো তাড়াতাড়ি।
.
.
.
বাসায় ফিরে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই চমকে গেলো পুনম ও জাহারা।
এই কাকে দেখছে তারা!
.
(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here