ঘায়েল – পর্ব ১৫

0
157

#ঘায়েল
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর, পুনম নিজেকে আবিষ্কার করলো রানবীর বুকের মাঝে।
রানবী তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে ধরেছে দেখে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো সে।
রানবী শোয়া থেকে এক লাফে উঠে বসে বললো-
কি হয়েছে? কি হয়েছে?
.
গায়ের কাপড় ঠিক করে রানবীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুনম বললো-
আমাকে এভাবে চেপে ধরেছিস কেনো?
-এইরে! আবারো তুই!
-তোকে ভালো মানুষ মনে করেছে আম্মু। কিন্তু তুই তো একটা খবিশ শয়তান। চরিত্রহীন ছেলে। নাহলে একটা ঘুমন্ত মেয়ের সাথে কেউ এই ধরনের আচরণ করতে পারে! তোর সাহস কি করে হয় আমাকে জড়িয়ে ধরার?
.
রানবী দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
শুধু জড়িয়ে ধরা! কাল রাতে কি হয়েছে মনে নেই তোমার?
-কি হয়েছে মানে? কি হয়েছে?
.
রানবী পুনমের কাছে এসে আচমকা কপালে ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে বললো-
এই হয়েছে এই।
.
স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো পুনম।
রানবী বসা থেকে উঠে এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে।
.
এদিকে পুনমের শরীর টা বেশ দূর্বল লাগছে। কাল কি হয়েছিলো আসলেই সে মনে করতে পারছেনা।
তবে তার যে শরীর টা গরম তা সে ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে। তাহলে জ্বরের ঘোরে রানবীর সাথে কি ভুল পথে পা বাড়ালো সে! এটা কি হয়ে গেলো! আপন মনে এসব ভেবে দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে পুনমের।
রানবী ওয়াশরুম থেকে এসে পুনমের অবস্থা দেখে বললো-
তুমি সিরিয়াল, সিনেমা এসব দেখোনা?
.
এমন একটা মুহূর্তে রানবী এসব প্রশ্ন করছে শুনে পুনমের মেজাজ টায় বিগড়ে গেলো।
সে রেগেমেগে বললো-
রোমান্স শেখার জন্য?
-উহু! আমি তোমার সাথে যে অভিনয় টা করেছি সেটা তো প্রায় সিরিয়াল বা সিনেমায় নায়করাই নায়িকার সাথে করে। এই ভবনের আমি নায়ক তুমি নায়িকা। এতোটুকু অভিনয় আমি করতেই পারি।
.
পুনম কিছু বুঝে উঠার আগেই রানবী তার দিকে একটি বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো-
এখানে মেডিসিন আছে। মেডিসিন নেয়া প্রয়োজন এখন তোমার।
সকাল সকাল রিং টোনের শব্দে ঘুম ভাঙতেই, খানিকটা বিরক্তি নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো মাহিম।
-হ্যালো কে?
.
ওপাশ থেকে ইপশিতা বললো-
আমার নাম্বারটাও কি ডিলিট করে দিয়েছো?
.
ইপশিতার কণ্ঠ শুনে বসে পড়লো মাহিম। অবাক হয়ে বললো সে-
এই বাবা! আমার রাগ ভাঙানোর জন্য কোনো কষ্টই করতে হলোনা।
-খুশি হয়ে বলছো?
-হু।
-চট্রগ্রাম কবে আসবে সেটা বলো।
-সব ঠিক থাকলে আজই চলে আসবো।
.
ইপশিতার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মাহিমের ফোনে আরেকটি কল আসলো।
সালাউদ্দিনের ফোন দেখে অনেকটাই ঘাবড়ে গেলো মাহিম। তবুও সাহস করে রিসিভ করে বললো-
হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়া আলাইকুমুসসালাম। তা তোমরা কোথায়? কাউরে দেখা যাইতেছেনা।
-আসলে আমরা একটা রিলেটিভ এর বাসায় বেড়াতে আসছি।
-কার বাসা?
-আত্নীয়।।
-ও! তা পুনম ভালো আছে তো?
-জ্বী আছে।
-ওর কোনো অসুবিধে হইলে কোনো ব্যাপারে, আমারে বলবা কিন্তু।
-জ্বী আচ্ছা।
.
ফোন রাখার পরেই মাহিম এগিয়ে গেলো রুমের বাইরে।
ড্রয়িং রুমে নিজের বাবাকে দেখে, তার পাশে বসে মাহিম বললো-
আমি তোমাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।
-কেনো?
-সালাউদ্দিন ফোন দিয়েছে।
-কি বলছে?
-খবরাখবর নিচ্ছে আমাদের।
-ওহ!
-সালাউদ্দিন যদি জানতে পারে পুনমের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কি হবে আব্বু?
.
মাহাফুজ ইসলাম চিন্তিত স্বরে বললেন-
সেটাই ভাবছি!
.
.
.
কি বোকাটাই না বানালো রানবী পুনম কে! রানবী তার সাথে এসব কিছুই করেনি। আর সে কিনা ভেবেছে…
তবে এভাবে জড়িয়ে কেনো ধরেছে রানবী তাকে।
হয়তো কোলবালিশ ভেবে! কিন্তু কোলবালিশ টা গেলো কোথায়!
এদিক ওদিক তাকিয়ে পুনম কোলবালিশ খুঁজতে লাগলো।
রানবী নাস্তার প্লেট নিয়ে ভেতরে এসে বললো-
কোলবালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরিনি। ইচ্ছে করেই ধরেছি।
-আপনি কিভাবে বুঝলেন, এটাই ভাবছিলাম আমি?
-ভালোবাসার মানুষের চোখ দেখেই বুঝা যায়, সে কি বলতে চায়ছে। ইটস সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ।
-আর ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরার মানে?
.
পুনমের পাশে বসে রানবী বললো-
আগে খাবারটা খেতে হবে। তারপর বলবো।
-উহু!
-উহু টুহু চলবে না। খেতেই হবে। নাহলে বলছি না।
-হুম।
.
রানবী নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিলো পুনম কে।
সে খাবার খাবার পরে বললো-
এবার বলুন?
-কাল রাতে দুটো কাঁথা দেয়ার পরেও কাঁপছিলে তুমি অনবরত। হয়তো অনেকক্ষণ পানিতে ভিজেছো তাই। আমার কাছে কম্বল ছিলোনা সেই মুহুর্তে। তাই নিজে কম্বল হয়ে জড়িয়ে নিয়েছি তোমাকে, শরীরে গরম তাপের জন্য। একরাত নাহয় আমাকেই কম্বল মনে করো।
তবে হ্যাঁ, কপালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর জন্য দুঃখিত আমি।
.
কথাটি বলে রানবী বেরিয়ে যাচ্ছিলো রুম থেকে।
পুনম বলে উঠলো-
গরম লাগেনি আপনার?
.
ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে রানবী জবাব দিলো-
সত্যি বলতে শান্তি লেগেছে প্রচুর। এমন শান্তির জন্য আমি বারবার কম্বল হতেও রাজি আছি।
.
.
.
৭দিন কেটে গেলো।
পুনমের শরীর টা খারাপ থাকলেও, তাকে এই অবস্থায় ফেলে
তার মা বাবারা চট্রগ্রাম চলে গিয়েছিলো।
কিন্তু রানবী তার কোনো অযত্ন হতে দেয়নি। রানবীর পুরো পরিবার তার সেবা করেছে।
খেয়াল রেখেছে তার।
এই ৭দিনেই এই বাড়ির প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করছে পুনম। তবে কি আঁটকে যাচ্ছে সে সম্পর্কের টানে!
.
.
এদিকে মাহিমের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে।
১০দিন পরেই বিয়ে মাহিমের।
জমজমাট ভাবে আয়োজন করতে চায় ইপশিতার পরিবার।
আফরোজা ইসলাম পুনমকে খবরটি দিতে চায়লেও বাধা দিলেন মাহাফুজ ইসলাম।
মাহিমও এটা নিয়ে বাবার সাথে নারাজ। তার বিয়েতে তার বোন থাকবেনা!
পুনমের বিয়ে হয়েছে কেউই জানেনা। আর বিয়েটা যে হয়েছে এটা কেউ জানুক এখন এটাও চান না মাহাফুজ ইসলাম।
আফরোজা ইসলাম এসব শুনে বললেন-
সকলে যখন জানতে চায়বে, একমাত্র ভাইয়ের বিয়েতে বোন কোথায়? তখন কি বলবে?
.
মাহাফুজ ইসলাম পড়ে গেলেন মহা চিন্তায়।
তিনি কি পুনম ও রানবীর পরিবার কে আমন্ত্রণ করবেন? তাতে যদি মাহিমের বিয়েতে কোনো অঘটন হয়ে যায়?
এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন তো তিনি!
.
মাহিম তাকে অভয় দিয়ে বললো-
ইপশিতার সাথে কথা বলবো আমি। তার পরিবার নিশ্চয় সাপোর্ট করবে আমাদের।
.
এদিকে ইপশিতা মাহিমের সাথে থাকলেও তার পরিবার বেঁকে বসলো।
ইপশিতার বাবা বললো-
যে পরিবারের মেয়ে পড়াশোনার নাম করে ঢাকা যেতে না যেতেই এসব কান্ড ঘটাতে পারে, সে পরিবারের ছেলেটা কেমন হবে আমার জানা আছে।
.
ইপশিতার কাছে সবটা শুনে তার বাবার কাছে এলো মাহিম।
তাকে সবটা বুঝিয়ে বলার পর তিনি শর্ত দিলেন-
পুনম যে বিবাহিতা এটা যেনো অজানাই থাকে সবার। সে এখানে একা আসবে বিয়েতে এটেন্ড করতে। আমি চাইনা, কেউ আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কটু কথা বলুক।
.
এই শর্তে পুনমের পরিবার রাজি হলেও রাজি হলোনা রানবী।
সে পুনম কে কোনোমতেই একা চট্রগ্রাম আসতে দিতে পারেনা।
তাই মাহিম বুদ্ধি দিলো, মাহিমের বন্ধু হিসেবে রানবী আসতেই পারে। এই কথায় রাজি হলো রানবী।
সবটা শুনে পুনম হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়ে বললো-
প্রথমে ছিলেন ভাই, তারপর ভাই বন্ধু, এরপর জোরজবস্থি স্বামী আর এখন বড় ভাই এর বন্ধু! আর কতো কি হবেন আপনি আমার!
.
মৃদু হেসে রানবী বললো-
সবটাই ভালোবাসার জন্যই। আমি তো হতে চাই তোমার পাগল প্রেমিক।
.
পুনম নিজের মনে বললো-
যতোই ভালোবাসা দেখান মি.রানবী, একবার চট্রগ্রাম যাই। আর ফিরবোনা আমি। ডিভোর্স তো দিয়েই ছাড়বো। আটকাবো না কোনো সম্পর্কের টানে।
.
(চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here