#ঘায়েল
#পর্ব_১৯
#Saji_Afroz
.
.
.
পুনম ভাবছে, রানবী সই করবে নাকি করবে না।
হ্যাঁ এতোদিন সে মানিয়ে নিতে চেয়েছিলো সবকিছুই। কিন্তু রানবী তাকে ঠকিয়েছে এটা মনে হতেই শরীরে জ্বালা করে উঠে তার। রানবীর জন্যই তার পরিবার ভুল বুঝেছে তাকে।
বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন থাকে একটা মানুষের। আর রানবী কিনা জোর করে বিয়ে করে স্বপ্নটা ভেঙে দিলো তার!
এই কেমন বিয়ে? যেখানে বাবার বাসায় গিয়ে নিজের স্বামীর পরিচয় গোপণ রাখতে হয়েছে।
সব কিছু শুরু থেকে মনে করলে রানবীকে ঘৃণা করা উচিত। এটাই মনেহয় পুনমের। সে যে কাজটা করেছে তার শাস্তি পাওয়াই প্রাপ্য। তাই রানবীর বিশ্বাস জয় করে এই সুযোগটা পুনম নিয়েছে।
.
পুনম কে কথা দিয়েছে, আজকের দিনে সে যা চায়বে তা সে দিবে। তাই বলে ডিভোর্স! এমন কিছু যে সে চায়বে ভাবতেও পারেনি। পুনম কে ডিভোর্স সে দিতে পারেনা। আবার কথার খেলাপও করতে পারেনা সে। তবে এখন তার করণীয় কি!
.
পুনম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো-
রানবী কি তবে কথার খেলাপ করে? আজ আমি জন্মদিনের উপহার পাচ্ছিনা তাহলে?
.
মৃদু হেসে রানবী বললো-
প্রাণটা চায়লেও হয়তো এতোক্ষণে দিয়ে দিতাম। কিন্তু ডিভোর্স…
-কি?
-এটাই যদি তোমার কাছে সেরা উপহার হয়, তাই দিলাম।
.
কাঁপাকাঁপা হাতে ডিভোর্স পেপারে সইটা করেই দিলো রানবী। পুনম আগে থেকেই করে রেখেছে।
চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে রানবীর।
তা খেয়াল করলেও নজর এড়ালো সে। মায়ায় জড়াতে চায়না সে কোনো। অন্যায় কে প্রশ্রয় দিতে পারেনা সে, কিছুতেই না। যা হচ্ছে তা হতে দেয়াই শ্রেয়।
.
.
.
একটু পরেই পুনমের রুমে এলো রিমা ও খায়রুন।
রিমা বললো-
ভালোবাসার মানে নিজেই তো জানোনা। অন্যকে কেনো বুঝাতে গিয়েছিলে?
-মানে?
-তোমার কথা শুনে আমি ভালোবাসা উপলব্ধি করতে শিখেছি। আর সেই তুমিই কিনা ভাইয়ার ভালোবাসা টা বুঝলে না?
.
নিশ্চুপ হয়ে থাকলো পুনম।
খায়রুন মুখ খুললো এই পর্যায়ে-
আমি ভেবেছিলাম তুমি সবটা মেনে নিচ্ছো। কিন্তু এটা কি শুনলাম আমি! সময় থাকতে কাগজটি ছিড়ে ফেলো পুনম। একটা কাগজে সম্পর্ক নষ্ট হয়না।
-কিসের সম্পর্ক ভাবী? আমাদের মাঝে তেমন কোনো সম্পর্কই গড়ে উঠেনি।
-রানবী তোমাকে ভালোবাসে।
-আপনারা শুধু ওর দিকটাই ভাবছেন। ও আমার সাথে কি করেছিলো সেটা ভাবছেন না? এখন সব দোষ আমার একাই! এটা কেমন কথা?
-ভালোবাসার ক্ষেত্রে সব জায়েজ পুনম।
-ওহ তাই! তাহলে যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তাই। রানবীর জন্য ভালোবাসা তো, আমার জন্য যুদ্ধ।
.
পেছন থেকে রানবী বলে উঠলো-
ভালোবাসা ও যুদ্ধে সব জায়েজ হলে, আমার জন্য ভালোবাসা আর যুদ্ধ দুটোই এখন একসাথে। তাহলে তুমিই বলো কি করা উচিত আমার?
-এখন আর কিছু করার নেই।
-চাইলে অনেক কিছুই আমি করতে পারি। কিন্তু করবো না। নিজের ভালোবাসা কে সুযোগ দিবো একটা। আমার বিশ্বাস, তোমার জেদ আমার ভালোবাসার কাছে হেরে যাবে।
.
.
.
১মাস পর…
রানবী ও পুনম ডিভোর্স পেপারে সই করলেও কোর্ট তাদের সম্পর্ক কে আরো তিনমাস সময় দিয়েছে। এই তিনমাসে যদি তারা বুঝতে পারে, একে অপরের জন্য ঠিক নন তারা। তবেই ডিভোর্স টা গ্রাহ্য হবে। তিনমাস তাদের একই ছাদের নিচে থাকতে বলা হয়েছিলো। তাই পুনম আজো আছে রানবীর সাথেই।
রানবী সেইদিন থেকেই যেনো আশার আলো খুঁজে পায়।
এই তিনমাসে যদি পুনমের মনে রানবীর জন্য একটু জায়গা হয়!
রাতের খাবারের পরে বিছানায় বসে সিনেমা দেখছে পুনম।
রানবী দুই বাটি নুডলস নিয়ে এলো। এক বাটি এগিয়ে দিলো পুনমের দিকে।
-একটু আগেই তো ভাত খেলাম।
-ফিল্ম দেখে দেখে নুডলস খাবার মজাই আলাদা।
.
আরেক বাটি নিয়ে রানবী বিছানার এক পাশে বসে পড়লো।
সিনেমা দেখে দেখে নুডলস খাচ্ছে পুনম। তার দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে রানবী।
হঠাৎ পুনম তা খেয়াল করতেই বললো-
আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে সিনেমা দেখলেই পারেন।
-সিনেমা দেখে কি করবো?
-উপভোগ করবেন।
-আমি সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি। তুমি নুডলস খেয়ে খেয়ে টিভি দেখো আর আমি তোমাকে।
.
খানিকক্ষণ এভাবে কাটার পর বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো পুনম।
এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি তো লাগবেই।
ড্রেসিংং টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে সে তার ঠোঁটের উপরের তিলটা ঘষতে থাকলো।
-কি করছো তুমি?
-তুলে ফেলার চেষ্টা করছি এটা।
-যাদের ঠোঁটের উপরে বা নিচে তিল নেই তার এঁকে হলেও বসিয়ে দেয়, আর তুমি কিনা…
-কারণ আমি শুনেছি, এই তিল দেখেই আপনি আমার প্রেমে পড়েছেন।
-উহু ঘায়েল হয়েছি। দেখি এদিকে আসো এবার। এভাবে কখনোই উঠবেনা।
.
পুনম এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
রানবী তার পাশে শুয়ে কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বললো-
আচ্ছা, আমি যদি তিল আঁকি নিজের ঠোঁটের উপরে। তবে কি ঘায়েল হবে তুমি?
.
মুখটা লুকিয়ে মৃদু হাসলো পুনম। এভাবে চলতে থাকলে সত্যিই সে ঘায়েল হয়ে যাবে!
.
.
.
সকালের নাস্তা সেরে নিজের রুমে এসে কলেজের জন্য তৈরী হলো পুনম। আজ রানবীর ক্লাস নেই।
ক্লাস না থাকলেও রানবী পুনমের সাথে যায় কলেজে। কিন্তু আজ পুনম তাকে ডাকলো না।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।
হঠাৎ রানবীর ঘুমন্ত চেহারার দিকে চোখ যেতেই অদ্ভুত এক মুগ্ধতা কাজ করছে পুনমের মাঝে। তার পাশে বসলো পুনম। ইচ্ছে করছে রানবীর মুখটাই নিজের ঠোঁটটা একটু ছুয়ে দিতে। আর না ভেবে রানবীর কপালে ঠোঁটটা ছুইয়ে দিলো পুনম।
রানবী চোখটা খুলতেই তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লো সে। এইরে!
এ কি করে ফেললো সে। অবাধ্য ঠোঁট জোড়া রানবীর কপাল ছঁুয়ে দিয়েছে তা কি দেখেছে সে!
ঘুমঘুম চোখে রানবী বললো-
আজ কি ক্লাস আছে তোমার?
-হু। কিন্তু যেতে হবেনা আপনাকে। ঘুমান আপনি।
-উহু না! বউ এর সাথে হাসবেন্ড না গেলে কি চলে!
.
রানবী উঠে বাইরের দিকে যেতে চায়লে তাকে আটকালো পুনম।
পুনম খেয়াল করলো, রানবীর কপালে তার লিপস্টিক এর দাগ রয়েছে। এটা কেউ দেখলে কি বলবে! তাছাড়া রানবীও এটা জানুক পুনম তা চায়না।
পুনম বললো-
আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
-আমার একটু হাটাহাটি করতে হয়। জানোনা তুমি?
-তাও প্লিজ।
-প্লিজ মানে!
-না মানে আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তাই..
-ও হ্যাঁ। ঠিক আছে।
.
রানবী ওয়াশরুমে ঢুকতেই স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো পুনম।
এদিকে ওয়াশরুমের দেয়ালে টাঙানো আয়নায়, নিজের কপালে লিপস্টিক এর দাগ দেখে রানবীর খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে।
তাহলে পুনম ঘায়েল হতে চলেছে!
.
ওয়াশরুমেও যে আয়না আছে তা মনেই ছিলোনা পুনমের। রানবী কি না দেখেই মুখটা ধুয়ে ফেলেছে? হবে হয়তো। নাহলে এতোক্ষণে মজা নিতে আসতো।
.
.
.
রাত ১২টা…
পুনম শুয়ে আছে বিছানায়।
রানবী তার পাশে এসে কোলবালিশ টা সরিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
পুনম ভ্রুজোড়া কুচকে বললো-
বালিশ কেনো সরালেন?
.
আচমকা রানবী পুনমের খুব কাছে এসে, তার শরীরের উপরে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিলো।
পুনম রাগান্বিত স্বরে বললো-
এসবের মানে কি?
-তুমি ঘুমন্ত রানবীর উপরে হামলা করতে পারো। আর আমি এভাবে পারিনা বুঝি?
.
তার মানে রানবী তখন দেখেছে!
লজ্জায় পুনমের মুখটা লাল হয়ে গেলো।
রানবী মুচকি হেসে বললো-
জেগে থাকতেই দিতে আদর টা, উপভোগ করতে পারতাম।
.
কথা বলার সময় রানবীর নিঃশ্বাস পড়ছে পুনমের মুখের উপর। ঘন নিঃশ্বাসের স্পর্শ পড়তেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো পুনম।
তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট জোড়া পুনমের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিলো রানবী। পুনমের ঠোঁটের কাছাকাছি এসেও থেমে গেলো সে। নিজেকে সামলিয়ে উঠে বসলো রানবী।
চোখ জোড়া খুলে বসে পড়লো পুনমও।
রানবী কোলবালিশ টা এনে মাঝখানে রেখে বললো-
হু! আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে জানি।
.
রানবীর কথাতে রাগ করার কথা হলেও করলোনা পুনম।
বরং হেসে চলেছে সে।
.
.
.
আরো একমাস পর…
দুটো মাস চোখের পলকে কিভাবে কেটে গিয়েছে পুনম জানেনা।
এই দুটো মাস রানবীর পরিবার অনেক বেশিই ভালোবাসা দিয়েছে তাকে। আর রানবী?
সেতো একটা সাইকো লাভার পুনমের কাছে।
এসব ভেবে মুচকি হেসে চলেছে সে।
-যখন কেউ কারো প্রেমে পড়ে তখনি এভাবে একা একা মুচকি হাসে। এটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ।
.
রানবী কথাটি বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।
পুনম বিড়বিড়িয়ে বললো-
ঘায়েল হয়ে গিয়েছি আমি! হ্যাঁ রানবীর উপর ঘায়েল হয়েছি। এই তিনটা মাস যদি সময় না দিতো, তাহলে হয়তো এটা বুঝতামই না আমি।
.
পুনম ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বললো-
তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসুন।
-হু আসছি!
.
টুং শব্দে বেজে উঠলো রানবীর ফোন।
পুনম এগিয়ে এসে হাতে নিয়ে দেখলো একটি মেসেজটি এসেছে। কিন্তু মেসেজটি দেখে তার চোখ উঠে গেলো কপালে। এটা কি দেখছে সে!
.
(চলবে)