ঘায়েল – পর্ব ৩

0
193

#ঘায়েল
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz
.
.
.
দেয়ালে টাঙানো বাবার ছবিটির দিকে তাকিয়ে রানবী বললো-
তোমার আশা পূরণ হতে চলেছে বাবা। একটা ভালো মেয়ে আমার জীবনে চেয়েছিলে না তুমি?সেই ভালো মেয়েটিই আমার জীবনে আসতে চলেছে। আজ তাকে আমি দেখেছি। সুন্দরী, মায়াবতী, সরল একটা মেয়ে। ঘায়েল হয়ে গিয়েছি বাবা! তুমি চিন্তা করোনা। এই ভালো মেয়েটিই তোমার পুত্রবধু হবে।
.
-ছবি কি কথা বুঝে? আমাকে বল না?
.
পেছনে ফিরে মা আনোয়ারা ইসলাম কে দেখতে পেয়ে রানবী বললো-
ছবি কথা না বুঝলেও এই ছবিকে কথা শেয়ার করে যে শান্তি পাই আমি।
-হু বাবাই যেনো সব তোর। আমি কিছুনা?
.
মায়ের পাশে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে রানবী বললো-
কে বলেছে কিছুনা!
-তাহলে কি বলছিলি বল?
-সময় হলেই বলবো।
.
কথাটি বলে রানবী এগিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে।
আনোয়ারা ইসলাম স্বামীর ছবিটির দিকে তাকিয়ে বললেন-
একটা মাস হয়ে যাচ্ছে তুমি নেই কিন্তু সে তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে মনের কথা বলতে ভুলেনা। কতোটা ভালোবাসে তোমার ছেলে তোমাকে বুঝেছো? কিন্তু তুমি তো ওকে ভুল বুঝতে সবসময়।
এখন কি ওপার থেকে দেখতে পাচ্ছো, তোমার ছেলের ভালোবাসা?
.
.
.
পুনমের বাবা মাহফুজ ইসলাম…
ছোটখাটো ব্যবসা করেন তিনি।
সৎপথে রোজগার করে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুখী থাকাটাই তার লক্ষ্য।
মাহফুজ ইসলাম
তার স্ত্রী আফরোজা ইসলামের উদ্দেশ্যে বললেন-
পুনমের সাথে কথা হয়েছে?
.
আফরোজা ইসলাম বললেন-
হু। তবে মেয়েটা মনমরা।
-বিয়ে হলে এমনেও পর হয়ে যাবে। এখন থেকে অভ্যাসটা করুক।
-তুমি পারোও বটে! মন খারাপ লাগছেনা মেয়ের জন্য?
-লাগছে। কিন্তু ওর ভালো ও ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ টা নিয়েছি আমি।
সেটা তোমার অজানা নয়। একদিন বুঝবে সে, যা করেছি ওর ভালোর জন্যই করেছি।
-হু। ভাগ্যিস ঢাকায় জাহারা ছিলো।
-হ্যাঁ। সেতো পুনম কে চোখে হারায়। ওর কোনো অযত্ন জাহারা হতে দিবেনা।
-হুম জানি আমি। আর তাই তো পুনম কে কাছ ছাড়া করতে রাজি হয়েছি। মেয়েটা এখন ওখানের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলেই হয়।
.
.
.
রানবীর ছোট বোন রিমা এবার সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে।
অথচ তাকে কেউ দেখলে বলবেই না সে, ইন্টারের ছাত্রী।
দেখতে মনেহয় অনার্সের ছাত্রী!
রিমা দেখতে অনেকটাই রানবীর মতোই।
সুন্দরী, স্মার্ট আর দুজনের মাঝে সবচেয়ে যেটা মিল তা হলো দুজনেই প্রেম করেছে অগণিত।
রিমা ক্লাস ৯থেকেই এসব প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।
বফ বদলানো যেনো তার পেশা!
তার এসব অভ্যেসের ব্যাপারে অবশ্য অজানা নয় রানবীর।
প্রথম যেদিন তার বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছিলো, রিমা প্রেম করছে। সেদিন বোনকে শাসন করার বদলে সে বলেছিলো তা বন্ধুকে-
বি কুল দোস্ত! ক্লাস নাইন মানেই কিন্তু লাইন। এখন এসব করবে না তো কখন করবে? আর বোন তো আমারি। আমার মতোই তো হবে তাইনা? তুই আমাকে বলেছিস ঠিক আছে, বাসায় বলতে যাস না এসব।
.
দুই ভাই বোনের মধ্যে যে শুধু চেহারা বা আচরণে মিল আছে তা নয়। দুজনের মাঝে সখ্যতাও অনেক। দুজন দুজন কে চোখে হারায়।
.
রানবী নিজের রুমে বসে আছে। হঠাৎ রিমা এসে বললো-
আমার আগে ভাবী তোর প্রেমের কথা জেনে গেলো! দিস ইজ নট ফেয়ার ব্রো!
.
রানবী মুচকি হেসে বললো-
প্রেম! আমি কোথায় প্রেম করছি?
-করছিস না প্রেমে পড়েছিস।
-উহু রিমা! প্রেমে পড়িনি, ঘায়েল হয়েছি।
-মানে কি!
-এদিকে আয়। বস আমার পাশে। বুঝিয়ে বলছি তোকে।
.
রিমা পাশে বসতেই রানবী বললো-
তুই এই নিয়ে ডজন খানেক ছেলের সাথে তো প্রেম করেছিস তাইনা?
-হু।
-কাউকে প্রথম দেখাতেই কি মনেহয়েছে? তাকে তোর আজীবনের জন্য দরকার?
.
কোনো কিছু না ভেবেই রিমা জবাব দিলো-
না।
-আমার পুনম কে দেখে এটা মনে হয়েছে।
আর এটাই তো ঘায়েল হওয়া মাই সিস্টার।
-এখনো বুঝলাম না!
-আমার হৃদয়ে একটা কোপ বসিয়ে দিয়েছে ওই মেয়ে। আর এটাই হলো ঘায়েল হওয়া। যেদিন নিজে হবি সেদিনই বুঝবি।
.
.
.
সন্ধ্যে হতেই খায়রুনের স্বামী জাফর বাসায় আসলো।
নিজস্ব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে তাদের। যদিও এটা তাদের বাবার গড়া তবে তিনি মৃত্যুর আগে সমস্ত দায়িত্ব জাফর কে দিয়েছেন।
রানবী যে এসব সামলাতে পারবে এমনটা তিনি কল্পনাও করেন নি। তাই এসবের কিছুই তিনি রানবী কে বুঝিয়ে দেননি।
পরিবারের সবার কাছে রানবী ভদ্র হলেও বাবার কাছে অপছন্দের পাত্র ছিলো সে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রানবীর বাবা। শেষ সময়ে রানবীর কাছে একটি জিনিসই তিনি চেয়েছেন। রানবী বাবার ইচ্ছাটা পূরণ করবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েছে।
.
খায়রুনের স্বামী তার উদ্দেশ্যে বললো-
রানবীর মাস্টার্স শেষ হলেই আমার সাথে কাজে হাত লাগাতে বলবো তাকে।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে খায়রুন বললো-
ছোট মানুষ এসব বুঝবে নাকি?
-বুঝবে নাকি মানে! বিয়ে দিতে হবেনা ওর? বেকার ছেলেকে কে বিয়ে করবে!
-তুমি ভাই কিসের জন্য আছো? ভাই একটা বউ পালতে পারবেনা!
.
খায়রুনের এতো ভালো মানুষী একেবারেই পছন্দ নয় তার। বিরক্তিভরা কণ্ঠ নিয়ে সে বললো-
বেকার ছেলের জায়গা কোথাও নাই। বাবা ওকে দায়িত্ব তুলে না দিলেও আমার দিতে হবে। এভাবে জীবন চলতে পারেনা। আর তোমাকেও এসব কেনো বলছি আমি! রানবী কে বললেই হয়। ও নিশ্চয় আমার কথা অমান্য করবেনা।
-আরে বাদ দাও, আমি বলবো ওকে।
-হুম বলিও। এর পর আমরা সবাই মিলে একটা ভালো মেয়ে খুঁজবো ওর জন্য। আমার ভাই তো অন্য ছেলেদের মতো প্রেম ট্রেম করেনা। আসলেই এই যুগে এমন ভদ্র ছেলে পাওয়া মুশকিল। বাবা যে কেনো ওকে ভুল বুঝতো জানিনা বাপু।
.
কথাটি শুনে নিজের মনে খায়রুন বললো-
নিজের ভাই হয়েও রানবী কে চিনলোনা আমার জামাইটা!
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেকটাই দেরী হয়ে গেলো রানবীর।
তাড়াহুড়ো করে সে এগিয়ে যাচ্ছে সদর দরজার দিকে।
তা দেখে তার মা আনোয়ারা ইসলাম বললেন-
কই যাচ্ছিস?
-ক্লাসে।
-নাস্তা তো সেরে যা।
-দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাইরে সেরে নিবো।
.
কথাটি বলেই দ্রুতবেগে বেরিয়ে পড়লো রানবী।
খায়রুনের দিকে তাকিয়ে আনোয়ারা বললেন-
দেখেছো আমার ছেলেটা ক্লাস মিস হবে বলে কিভাবে ছুটছে!
.
মুচকি হেসে খায়রুন বললো-
জ্বী।
.
.
.
দেরী করে ফেলেছে রানবী।
এতোক্ষণে নিশ্চয় পুনম কলেজে প্রবেশ করে ফেলেছে।
হতাশ মনে রানবী ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে এগিয়ে গেলো।
ওখানে যেতেই দেখা পেলো পুনমের।
এক ঝাক মেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
রানবী যেতে চেয়েও গেলোনা। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো পুনম কে।
তখনি একটি ছেলে এসে পুনমের উদ্দেশ্যে বললো-
এই ঢাকা শহরে তোমার মতো মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। কেনো যেনো তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে সাত জনমের পরিচিত আমরা। আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
.
পুনম কিছু বলার আগেই পেছন থেকে রানবী বলে উঠলো-
বোন হতে পারে।
.
ছেলেটি পেছনে তাকিয়ে রানবী কে দেখে চমকে গেলো।
রানবী তার হাত ধরে টেনে, একটু দূরে নিয়ে তাকে কথা বলতে লাগলো।
পুনম বুঝার চেষ্টা করলো রানবী কি বলছে ছেলেটিকে।
একটু পরেই রানবী পুনমের কাছে আসতেই সে বলে উঠলো-
সমস্যা কি আপনার?
-আমার কোনো সমস্যা নেই। ছেলেটি তোমাকে বিরক্ত করতে এসেছিলো।
-তো?
-তো মানে! আমি তোমাকে প্রটেক্ট করলাম।
-আচ্ছা তাই! কি বলেছেন ছেলেটিকে? আমি আপনার গফ?
-নাহ! বলেছি ও তোমার বড় বোন।
-মানে?
-মানে ছেলেটি আমার পরিচিত৷ সে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আমাদের কলেজেই। আর তুমি তো অনার্সের স্টুডেন্ট। সো তুমি ওর সিনিয়র আপু। আর এটাই বলেছি তাকে।
.
কিছুক্ষণ নীরব থেকে পুনম বললো-
ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
.
আবার ভাইয়া!
রানবীর বন্ধুরা হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
পুনম মুচকি হেসে চলে যেতে চাইলে দাঁড়িয়ে পড়লো রানবীর ডাকে।
রানবী বললো-
পুনম মানে কি?
-পূর্ণিমা।
.
.
.
পুনম চলে যেতেই রনি এসে হাসতে হাসতে বললো-
ধন্যবাদ ভাইয়া!
-ধন্যবাদ দিয়েও কিন্তু ভালোবাসার শুরু হয়। এটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ।
-আচ্ছা তাই! আর ‘ভাইয়া’ ডাকের ব্যাপারে তোর সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট কি বলে?
.
ভ্রু জোড়া কুচকে রানবী বললো-
শুনবি?
-হুম।
-মেয়েরা যার প্রতি দূর্বল হবে ভাবে তাকেই কিন্তু ভাইয়া ডাকে আগে। ভাই ডাক এটা আজকাল ফ্যাশন। যাই হোক, এই ভাই ডাক যদি জান ডাকে পরিবর্তন করতে না পারি তবে আমার নামও রানবী নয়। হু!
.
-অন্য একটা মেয়েকে ফাঁসানোর ধান্দায় মেতে উঠেছো তুমি! কিন্তু আমি তোমার এই নোংরা খেলায় আর কোনো মেয়েকে জড়াতে দিবোনা। এখুনি পুনমের কাছে গিয়ে তোমার সম্পর্কে সবটা জানাবো আমি।
.
পেছনে ফিরে নুসাইবাকে দেখে চমকে গেলো রানবী।
সে হঠাৎ এসব বলছে কেনো!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here