ঘায়েল – পর্ব ৮

0
152

#ঘায়েল
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz
.
.
.
নিজের রুমে বসে আছে পুনম।
ভাবছে সে রানবীর বলা কথাটি।
বাদশা, রনি বা আকিবের মাঝে কেউ একজন কে যদি আজ না দেখতো, তবে কি সে এইভাবেই খবর নিতো!
প্রশ্নের উত্তর জানা নেই পুনমের। তবে রানবীর একটা কথা সত্য। তা হলো, সে আজ মিস করেছে রানবী কে। কিন্তু কেনো করেছে?
.
.
.
নুসাইবার পাশে অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছে নাতাশা।
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে নুসাইবার দিকে।
নুসাইবা তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো-
এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
-কেনো বুঝছিস না?
-উহু!
-তোরা বিয়েতে রাজি হয়েছিস কেনো?
-তুমিই তো বলেছো রানবী ৪২০হলেও তেমন খারাপ নয়।
-আমি এটাও বলেছি এই বিয়েটা যেনো নাহয়।
-তুমি বলেছিলে রানবী সব সামলে নিবে। ও রাজি হয়েছে তাই আমিও হয়েছি।
-নুসাইবা তুই এটা করতে পারিস না। তুই জানিয়ে দে রানবী কে তোর পছন্দ হয়নি।
-কেনো? তোমার এক্স ছিলো বলে? আপু ও তোমার অতীত। ও বা আমি কেউই দুলাভাই কে কিছু জানতে দিবোনা।
-পৃথিবীতে কি ছেলের অভাব রয়েছে?
.
-কিন্তু রানবীর মতো ছেলের অভাব রয়েছে।
.
সাদ্দামের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো নাতাশা।
সাদ্দাম রুমের ভেতরে প্রবেশ করে নাতাশার উদ্দেশ্যে বললো-
নাতাশা তোমরা দুই বোন, তোমাদের কোনো ভাই নেই। তোমার বাবার শরীরটা ভালো নেই। কিডনিতে সমস্যা উনার। যদিও চিকিৎসা চলছে কিন্তু ডাক্তার বলেছেন বাঁচার চান্স খুব কমই। তাই তিনি মৃত্যুর আগে নুসাইবার বর কে দেখে যেতে চান। তোমার সাথে সাথে নুসাইবার দায়িত্বও তিনি আমাকে সপে দিয়েছেন। এসব তো তোমার অজানা নয়?
.
মাথা নিচু করে নাতাশা জবাব দিলো-
হুম।
-আমি তাই ওর জন্য একটা ভালো পাত্র খুঁজছি। সবুজের শালা রানবী। সবুজ আমার বিশ্বস্ত কর্মচারী। সবুজের মুখে ওর কথা অনেক শুনেছি। আর্থিক অবস্থাও ভালো। নিজেদের গামেন্টস আছে। ছেলে সুন্দর ও ভালো। মাস্টার্স টা শেষ হলেই কাজে হাত লাগাতে পারবে। সব কিছুই যখন ঠিক আছে, নুসাইবাও রাজি হয়েছে। তাহলে সমস্যা টা কি?
.
নাতাশা কে চুপ থাকতে দেখে সাদ্দাম বললো-
তুমি কি ওকে চেনো? ওর সম্পর্কে জানো? জেনে থাকলে আমায় জানাও।
.
নাতাশাকে কিছু বলতে না দিয়ে নুসাইবা বললো-
আসলে দুলাভাই তেমন কিছু নয়। আপু চেয়েছে তার একমাত্র বোন আরো অনেক পাত্র দেখে যেকোনো একজন কে বেছে নিবে। যদি রানবীর থেকেও ভালো কেউ আসে!
.
সাদ্দাম মৃদু হেসে বললো-
ওহ এই ব্যাপার! এতো বাছাবাছির কিছু নেই। রানবীর পরিবারের সকলেও ভালো অনেক। সুখে রাখবে নুসাইবা কে সে। ভরসা নেই আমার উপর?
.
সাদ্দামের দিকে তাকিয়ে নাতাশা জবাব দিলো-
আছে।
-তাহলে আর চিন্তা করোনা। বাবারা ফিরলে বিয়ের কথাতে এগুতে হবে। ঠিক আছে?
-হুম।
.
সাদ্দাম রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নুসাইবার পাশে এসে, নাতাশা বললো-
তোরা একে অপরকে পছন্দ করে থাকলে আমার আর কি বলার থাকে! ভালো থাক তোরা, এই দোয়া করবো। কিন্তু সাদ্দাম যেনো জানতে না পারে কিছু। মানুষটা অনেক ভালোরে। হয়তো কষ্ট পাবে জেনে।
.
নুসাইবা নাতাশার হাত ধরে বললো-
জানবে না কিছু।
.
.
.
সাবিনা আজ ভীষণ খুশি। রানবী তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে এই বিয়েটাতে রাজি হয়েছে। আর নুসাইবাও রানবী কে পছন্দ করেছে। নুসাইবার মতো একটা ভালো, সুন্দরী মেয়েই তার ভাই এর কাম্য।
সাবিনা বাসায় ফেরার পথে বাড়ির সকলের জন্য মিষ্টি নিয়ে এসেছিলো।
রানবী এই বিয়েতে রাজি হয়েছে শুনে বাড়ির সকলে খুশি হলেও রিমা ও খায়রুন পড়ে গেলো মহা ভাবনায়।
যে রানবী কিনা পুনম পুনম জপে যাচ্ছিলো, সেই কিনা নুসাইবা কে দেখে সিদ্ধান্ত বদলালো। তবে কি সে পুনম কে ভালোবাসেনা? আর পাঁচটা মেয়ের মতো তার সাথেও মজা নিতে চেয়েছে!
.
খায়রুন ও রিমা এই বিষয়ে কথা বলছিলো।
হঠাৎ তাদের রুমে আগমণ ঘটলো রানবীর।
রানবী কে দেখে ভ্রু জোড়া কুচকে খায়রুন বললো-
তোর মতলব টা কি ভাই? পুনমের প্রেমে নাকি ঘায়েল হয়েছিস অথচ বিয়ে করতে চলেছিস নুসাইবা কে!
.
রিমা বললো-
আসলেই ভাইয়া! তুই নুসাইবা কে দেখে পুনম কে ভুলে গিয়েছিস। নুসাইবা কি পুনমের চেয়ে সুন্দরী?
.
মৃদু হেসে রানবী বললো-
সুন্দরী হলেই যে ঘায়েল হবো কথা নেই। এটা একটা হৃদয়ের টান। আর সেই টান টা আমি অনুভব করেছি…
-নুসাইবার জন্য?
.
রিমার প্রশ্নে হেসে উঠলো রানবী।
হাসতে হাসতেই বললো-
এতো চাপ নিস না। রানবী যার উপর ঘায়েল হয়েছে তাকেই বিয়ে করবে।
.
.
.
ইউটিউবে বাংলা নাটক দেখছিলো পুনম।
হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো-
আজ তুমি আমাকে মিস করছিলে, এটা সত্যি তাইনা?
.
রানবীর গলার চিনতে ভুল করলোনা পুনম।
অবাক কণ্ঠে বললো সে-
রানবী!?
-হু রানবী।
.
হালকা কেশে পুনম বললো-
তা ভাইয়া আপনি আমার ফোন নাম্বার কিভাবে পেলেন?
-মনে আছে?
-কি?
-আজ সুইটির সাথে ফোন নাম্বার অদলবদল করেছো?
.
রাগে কটমট করে পুনম বললো-
সুইটি আমাকে না বলেই নাম্বার দিয়ে দিয়েছে!
-উহু না! সুইটির মোবাইল ঘাটাঘাটি করছিলো রনি। সেই ওখানে তোমার টা পেয়েছে। আর আমাকে দিয়েছে।
-কিন্তু কেনো?
-বারেহ! তুমি আমাকে মিস করছো তাই কথা বলার জন্য দিয়েছে।
-আমি আপনাকে মোটেও মিস করছি না।
-সত্যি?
-হু।
-তবে রাখছি।
.
কথাটি শুনেই চুপ হয়ে গেলো পুনম।
রানবী হেসে বললো-
আমার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছে তোমার। স্বীকার করলেই পারো।
.
এই কি হচ্ছে পুনমের! আসলেই তার ভালো লাগছে রানবীর সাথে কথা বলতে। কিন্তু কেনো?
.
ওপাশ থেকে রানবী বললো-
এইটা সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ।
.
পুনম বললো-
সরি? বুঝলাম না?
-ও কিছুনা। তুমি ফ্রি থাকলে কথা কিন্তু বলতেই পারো। ফোন তো আমি করেছি, ব্যালেন্স আমারি যাবে।
.
রানবীর কথা শুনে হাসলো পুনম।
রানবী বলে উঠলো-
টোল পড়ছে তো গালে?
.
ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই পুনম দেখলো, পড়ছে টোল!
সে রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
এসবও খেয়াল করেছেন?
-হু করেছি।
.
.
.
মাহিমের উদ্দেশ্যে আফরোজা ইসলাম বললেন-
তোর কি একবার ঢাকা যাওয়া উচিত নয়?
-কেনো বলছো?
-পুনম কে দেখে আসা উচিত। তার কলেজ কেমন চলছে, জাহারার বাসায় থাকতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে কিনা এসব দেখে আসার জন্য।
-হুম ঠিক বলেছো। কাল ভোরেই রওনা দিবো আমি। গিয়ে দেখে আসবো কি অবস্থা তোমার মেয়ের। তবে ওকে বলিও না। সারপ্রাইজ দিবো।
-ঠিক আছে।
.
.
প্রায় ১ঘন্টা কথা বলার পর পুনম রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
আচ্ছা এখন রাখি কেমন?
-হু।
-বাই।
-শুনো?
-কি?
-কাল কি এক কাপ কফি খাবে আমার সাথে?
-ডেইটে নিতে চাচ্ছেন?
-উহু! না। এমনিতেই। আমরা তো বন্ধু তাইনা?
-ভাই বন্ধু।
-ভাই তা বাদ দেয়া যায় না?
-উম্ম… এক শর্তে।
-কি?
-রেগুলার ক্লাস করতে হবে আপনার।
-ক্লাস করলে তোমার দেখা পাবো কি করে?
-আমার দেখা কেনো পেতে হবে?
-না মানে, আমরা বন্ধু হলাম তো!
-ক্লাস শেষে হবে দেখা। ফোন তো আছেই।
-সত্যি?
-হু। রাখি এখন।
.
ফোন রাখার পর রানবী নিজের মনে বললো-
তোমার কথায় রেগুলার ক্লাস কেনো সারাজীবন ক্লাস করতেও পারবো। তবে এতো সহজে আমার সাথে কফি খেতে তুমি রাজি হয়ে যাবে ভাবিনি।
তবে কি তুমিও ঘায়েল হতে চলেছো আমার প্রেমে?
.
.
এদিকে ফোন রেখে পুনমও পড়ে গেলো ভাবনায়।
এতোক্ষণ যাবৎ এই প্রথম কোনো ছেলের সাথে সে কথা বলেছে আবার তার সাথে কফি খেতেও রাজি হয়েছে।
কিছু কি হচ্ছে তার সাথে! কিন্তু হচ্ছেটা কি!
.
.
.
সকাল ১১টা…
সারারাত অস্থিরতায় কেটেছে রানবীর।
পুনমের সাথে দেখা করবে বলে যেনো খুশির সীমা ছিলোনা তার।
না ঘুমানোর ফলে চোখের নিচে দাগ পড়ে গিয়েছে তার।
কলেজের পাশেই একটা ক্যাফেতে বসেছে রানবী ও পুনম।
রানবীর দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
ঘুমান নি মনে হচ্ছে?
-অতি এক্সাইটেড এর ফলে ঘুম হয়নি।
-এক্সাইটেড কেনো?
-ও কিছুনা।
-হু। কফি তো খাওয়া হলো। এখন আমি আসি। একটা ক্লাস আছে।
-ঠিক আছে।
-আপনার ক্লাস নেই?
-না এখন নেই।
.
দুজনে একসাথে বেরিয়ে পড়লো ক্যাফ থেকে।
রনিরা এগিয়ে আসছে রানবীর দিকে।
তাদের এগিয়ে আসতে দেখে রানবীর উদ্দেশ্যে পুনম বললো-
আমি আসি। তবে একটা কথা।
-কি?
-আমরা কিন্তু কোনো ডেইটে ছিলাম না। শুধুই বন্ধুত্ব।
.
মুচকি হেসে রানবী বললো-
হু।
.
পুনম এগিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ একটি ছেলে এসে তার উদ্দেশ্যে বলতে থাকলো-
দাঁড়া পুনম?
.
তার ডাক পুনমের কান পর্যন্ত পৌছালো না। নিজের মতো এগিয়ে গেলো সে।
রানবী ছেলেটিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-
ওই মেয়েটি কি হয় আপনার? একেবারে নাম ধরে তুই করে ডাকছেন যে?
.
ছেলেটি ভ্রু জোড়া কুচকে বললো-
আমি যাই ডাকিনা কেনো আপনার কি!
.
ততক্ষণে রানবীর বন্ধুরাও তার পাশে চলে এসেছে।
ছেলেটির কথা শুনে রনি বললো-
ওর কি মানে! আপনি জানেন মেয়েটি ওর কি হয়?
-কি?
-ওর গফ হয় গফ। আর আমাদের ভাবী।
.
(চলবে)
.
বি:দ্র: ঘায়েল পর্ব ৭ এর প্রথমে কিছু অংশ ভুলে এড করিনি আমি।
ব্যস্ত ছিলাম বলে তাড়াহুড়ো করে পোস্ট দেয়াতে ভুলটা হয়েছে।
বিষয়টি পরে চোখে পড়লো আমার। আমি আবার এডিট করে আমার আইডি ও পেইজে এড করেছি।
শুরুর অংশটা পড়ে নিন সকলে।
আর যারা বিভিন্ন গ্রুপ/পেইজে গল্পটি দিচ্ছেন তারা প্লিজ এডিট করে অংশ টি এড করে দিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here