সুখ – পর্ব ২২

0
408

#সুখ
#Part_22
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সাকিবের আমিষ হওয়ার কথা শুনে নীলিমা হোহো করে হেসে দিল। সাকিব ও হেসে দিল এইটা ভেবে যে ও কি বলে ফেলল। বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর সাকিব নীলিমাকে নিয়ে ঘরে চলে আসে। ঘরে এসে সাকিব আয়ানকে ফোন দেয়।

-হ্যা ভাইয়া বলো।
-সবাই ভাল আছে?
-হ্যা ভাইয়া সবাই ভাল আছে। আর তোমরা কি করছো? খেয়েছো?
-হ্যা খেয়েছি। তুই ভার্সিটি তে কখন যাবি?
-ভাইয়া আমি রাস্তায়। যাচ্ছি ভার্সিটি তে। ভাবির কাগজপত্র গুলো খুঁজে দিয়েছে ভাবির আম্মু। সেইগুলো নিয়ে আসলাম ভাবির বাড়ি থেকে।
-ও আচ্ছা। কাজ শেষ হলে জানাবি।
-অবশ্যই।

সাকিব ফোন কেটে দিয়ে নীলিমাকে হঠাৎ করেই বলে,

-মাঝে মাঝে তোমার কথা শুনলে মনে হয় আমার চেয়েও তুমি বড়।
-হঠাৎ এই কথা?
-এমনেই। তখন ভাবি আর হাসি যে কি বলে এই পাক্নী।
-কি এমন বলেছি?
-না থাক সেসব আর মনে করতে চাইনা।

কোনোরকম দুপুরটা কাটিয়ে দিয়ে বিকেলে নীলিমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো সাকিব। ঘুরাঘুরি খুব বেশি একটা পছন্দ না নীলিমার। কিন্তু ভাল লাগছে অনেক। সাকিবের হাত ওর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটছে নীলিমা। সাকিব নীলিমার সাথে কথা বলছে আর হাঁটছে। কিছুদূর যাওয়ার পর নীলিমা বলে

-আর কত হাঁটবো?
-হয়রান হয়ে গেলে?
-পা ধরে আসছে। এত হাঁটার অভ্যাস নেই।
-আসো কোলে নেই।
-মানুষ কি বলবে?
-ধ্যাৎ মানুষ যা ইচ্ছা বলুক।

সাকিব নীলিমাকে কোলেই নিলো আর বলল,

-আহারে স্লিম ফিগার আমার। তোমার মতো আরো তিনজনকে কোলে নেওয়া যাবে।
-আমাকে নিলেই হবে। তিনজন লাগবেনা। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)

সন্ধ্যের পর সাকিব আর নীলিমা হোটেলে চলে আসে। সাকিব চেঞ্জ করে নরমাল টি শার্ট পরে নেয় আর নীলিমা ও শাড়ি চেঞ্জ করে ফেলে। কানের দুল খুলছিলো তখন সাকিব বলে,

-আমি খুলে দেই?
-আমি পারিনা নাকি?
-হ্যা এইদিকে আসো।

সাকিব নীলিমার কানের দুল খুলে দিলো। চুল থেকে তুলি খুলে নীলিমার চুল আঁচড়ে দিল। নীলিমা বলে,

-আপনি এসব ও পারেন?
-ওই একটু আধটু।
-আর কি কি একটু আধটু পারেন?
-আর কিছু পারিনা।

নীলিমা গিয়ে শুয়ে পরলো। অনেক টায়ার্ড লাগছে। সাকিবের তো কিছুই হলো না কারণ ওর অভ্যাস আছে। নীলিমার পেটের উপর মাথা দিয়ে সাকিব ফোন টিপছিলো। নীলিমা বলে,

-আচ্ছা আপনি কত বছর বয়সে কিশোর হয়েছিলেন?

প্রশ্নটা শুনে সাকিবের হাত থেকে ফোন পরে গেল আর সাকিব তো অবাক।

-কি লেম মার্কা প্রশ্ন এগুলো! (নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে সাকিব)
-আরে বলেন ই না।
-মনে নাই তো। কতই হবে ১৪/১৫ হয়ত হবে।
-এখন তাহলে আপনাকে কি বলা যায়?
-প্রবীণ।
-প্রবীণ বলে! তরুণ ই আছেন এখন। কি এনার্জি আপনার। আজকে কিভাবে কোলে নিলেন। আবার বলে স্লিম ফিগার🤣😂
-মুটকি বললে খুশি হইতা তাই না? তবে বিয়ের দিন যেমন চিকনা দেখেছিলাম এখন তেমন নেই। একটু মোটা হয়েছো।
-জানি। শরীরেও ভাঁজ পরছে। বুড়ি হতে আর দেরিনেই।
-এহ আসছে! আমার ছেলে মেয়ে হবে, ওদের বিয়ে দিব এরপর বুড়া বুড়ি হওয়ার প্ল্যান করব।
-বুড়া বুড়ি নাকি প্ল্যান করে হয়! কি আশ্চর্য!
-হাহাহাহাহা।

খুনশুটি আর রোম্যান্স এর মধ্যেই ওরা দিনগুলো পার করেছে৷ এত ভাল সময় হয়ত নীলিমা কাটায় নি এর আগে কখনো। নীলিমা শুধু ভাবে একটা সময় ওনাকে আমি বিয়ে না করার জন্য বাবা মা র সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছিলাম আর আজ ওনাকে ছাড়াই তো কিছু বুঝিনা! সাতদিন পর ওরা কক্সবাজার থেকে ঢাকা চলে আসে। বাসায় আসার পর তিশা আর তুলি নীলিমাকে জড়িয়ে ধরলো। নীলিমাও ওদের জড়িয়ে ধরলো। আয়ান ব্যাগগুলো সাকিবের ঘরে রেখে আসলো। সাকিবের আম্মু একবারের জন্যও আসেনি। সাকিব ওর আম্মুর সাথে দেখা করে আসে। নীলিমাও যায় দেখা করতে। নীলিমার সাথে কোনো কথা বলেনাই সাকিবের আম্মু। সাকিব সেইটা খেয়াল করলো কিন্তু তখন কিছু বলল না। ঘরে এসে ওরা ফ্রেশ হয়। সন্ধ্যায় সবার সাথে স্ন্যাকস করে। সুহানা ই দেখেছে এতদিন সব। এইদিকে তিশা বারবার বায়না করছে আজকে ও ওর আম্মু আর বাবাইয়ের সাথে ঘুমাবে। নীলিমা বলল ঠিক আছে। রাতে ডিনার করে নীলিমা তিশাকে নিয়ে উপরে ওর ঘরে চলে আসে। সাকিব তখন বই পড়ছিলো। কতদিন পর সাকিব বই হাতে নিলো! তিশা আর নীলিমাকে দেখে সাকিব বই হাত থেকে রাখলো।

-আম্মু চলে আসছো?
-হ্যা বাবাই। অনেক মিস করেছি তোমাদের। তাই আজ তোমাদের সাথে ঘুমাবো। (বাবাইকে জড়িয়ে ধরে তিশা)
-আচ্ছা আম্মু।
-আমি কিন্তু মাঝখানে ঘুমাতে পারিনা। আমাকে সাইডে দিও। (তিশা)
-তাহলে মাঝখানে কে ঘুমাবে? (সাকিব)
-আম্মু। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।
-আচ্ছা (হাসতে হাসতে সাকিব)

সাকিব তিশার সাথে মজা করছে আর নীলিমা ফ্রেশ হতে গেছে। ফ্রেশ হয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে নীলিমা শুয়ে পরে। সাকিব উঠে গিয়ে বাতি বন্ধ করে দেয়। নীলিমা তিশাকে জড়িয়ে ধরে কত রকম গল্প করছে। দুইজন অনেক হাসাহাসি করছে। কিছুক্ষণ পর তিশা ঘুমিয়ে যায়। সাকিব তো এপাশ ওপাশ করছে শুধু।

-কি হয়েছে আপনার? এপাশ ওপাশ করছেন যে! (নীলিমা)
-ঘুম আসছে না৷
-কেন? (সাকিবের দিকে ঘুরে নীলিমা)
-তোমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমানো আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন তো আর জড়িয়ে ধরতে পারছি না তাই ঘুম ও আসছেনা।
-হাহাহাহাহা।
-হাসো কেন তুমি?
-এই আস্তে মেয়ে ঘুমাচ্ছে৷
-ঘুমিয়ে গেছে তিশা?
-হ্যা।
-এইবার তাহলে জড়িয়ে ধরি!

এই কথা বলেই সাকিব নীলিমাকে ঘুরায় এরপর জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর সাকিব ও ঘুমিয়ে যায়৷ নীলিমা পিছু ফিরে দেখে সাকিব ঘুমিয়ে গেছে। এরপর হাল্কা হাসে নীলিমা। তারপর ও ঘুমিয়ে যায়৷

সকালবেলা……..

নীলিমা ঘুম থেকে উঠে দেখে তিশা নেই। আর সাকিব ও ওকে জড়িয়েই ঘুমাচ্ছে। নীলিমা আস্তে করে সাকিবের হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে যায়। নিচে গিয়ে দেখে তিশা রেডি হচ্ছে স্কুলে যাওয়ার জন্য আর তুলিও রেডি হচ্ছে। নীলিমাকে দেখে তিশা বলে

-আম্মু কালকে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে তাহলে সকালে বাবাইয়ের কাছে গেলা কিভাবে? দেখলাম বাবাই তোমাকে ইয়া শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।

তিশার কথা শুনে নীলিমার চোখ তো চরকগাছ! এ মেয়ে কি বলে! তুলি তো হাসতে গিয়েও হাসছে না। সুহানা হাল্কা হেসে তিশাকে ধমক দেয়।

-তিশু এইটা কিন্তু ঠিক না। বাবাই আর আম্মুকে নিয়ে এসব বলতে হয়না। (সুহানা)
-আচ্ছা ফুপ্পি।

নীলিমা এতবাজে ভাবে লজ্জা পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। নীলিমা কথা কাটিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। রান্নাঘরে গিয়ে ওদের জন্য টিফিন বানালো। ওদের স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে নীলিমা ঘরে যায়। সাকিব ঘুমাচ্ছিলো। নীলিমা সাকিবকে আর ডাকেনি। ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। ঘরটা পরিষ্কার করে ফেলে নীলিমা।

দুইমাস পর…….

এইদিকে ইশতিয়াকের রায় ও হয়ে যায় পাঁচ বছরের জেইল। কোনো বেইল হবেনা। নীলিমার প্রথম ভার্সিটির ক্লাসে সাকিব দিয়ে এসেছিলো আবার নিয়ে এসেছিলো। নীলিমার শাশুড়ি এখন কথা বলে নীলিমার সাথে সাকিব বোঝানোর পর। আয়ান ঢাকা ভার্সিটিতেই পড়ছে আর নীলিমা প্রাইভেট একটা ভার্সিটিতেই। পড়াশুনা, সংসার, মেয়ে দুইটার দেখাশোনা, শাশুড়ির দেখাশোনা, দেবর-ননদের চাহিদা আর সাকিবের চাহিদা তো আছেই সব একা হাতে সামলায় নীলিমা। রাতে বাসায় আসার পর সাকিব নীলিমাকে পড়তে বসায় আর নীলিমা পড়া না পারলেই বলে

-আজ রাতে খবর আছে কিন্তু। যদি এই চ্যাপ্টার আজকে শেষ না করে উঠো তাহলে দেখবা কি করি।
-কি খবর আছে? প্রতিদিনই তো এক কথা বলেন। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-এই মেয়ে তোমার তো সাহস কম না টিচারকে ভেঙাও। এর শাস্তি কি হতে পারে জানো? আর সমস্যা কি হ্যা? মাস শেষ হয়ে গেলো অথচ আমি আমার ফিস পেলাম না। আমারো তো চলা লাগবে নাকি? আজকেই আমাকে ফিস দিবা।
-পাগল হলে যা হয় আর কি! বউয়ের কাছে ফিস চাইছে!
-আজকে ফিস না দিলে জোর করে সিন্দুক ভেঙেই নিতে হবে।

সাকিবের হাসি দেখে নীলিমা বুঝেছে ও কি চাইছে। নীলিমাও বলল,

-পারব না আমার কাছে টাকা পয়সা নেই। আমার স্বামীর থেকে চেয়ে নিবেন।
-নেওয়াচ্ছি স্বামীর থেকে।

সাকিব নীলিমার বই এক সাইডে করে ওকে নিয়ে ধুম করেই বিছানায় পরে যায়।

-এইটা মানুষ না আর কিছু? পা বুঝি গেলো আমার। (নীলিমা)
-আরো কত কিছু যাবে এখন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here