#সুখ
#Part_28
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
বাঁধন আর নীলিমা বরকে বরণ করার জন্য বিভিন্ন জিনিস গুছিয়ে নিলো। বাঁধন শরবত আগে থেকেই বানিয়ে রেখেছিলো। নীলিমা আর বাঁধন যখন ড্রইংরুমে সব গুছাচ্ছিলো তখন দুইভাই তাড়াহুরো করে ঘরে ঢুকে। সাকিব নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে আছে আর আয়ান বাঁধনের দিকে। আয়ান বাঁধনকে বলল,
-ভাবির থেকে শিখো কিছু! এত রঙ চঙ মেখেছো যে চেনাই যাচ্ছেনা। ভাবিকে কত সুন্দর লাগছে দেখো তো!
-দেখেছো ভাবি দেখেছো আমার কোনো জিনিসের প্রশংসা শুনলাম না কোনোদিন তোমার দেবরের মুখ থেকে! যা করি তাতেই বলে ভাবিকে দেখে শিখো। (নীলিমাকে বিচার দিয়ে বাঁধন)
-আয়ান এইটা কিন্তু ঠিক না! মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। আর কতটা সুন্দর লাগছে বাঁধনকে দেখো তো। আর কি তোমাদের খবর কি? এখনো রেডি হওনাই তোমরা দুইভাই। আর বরপক্ষ প্রায় চলে আসলো। দুইজনের পাঞ্জাবি আমি গুছিয়ে রেখেছি আমার বেডের উপরে। তারাতারি পরে এসো। আর পাজামার ফিতা ও মনে হয় লাগানো। বাঁধন লাগিয়েছিলে? (বাঁধনকে জিজ্ঞেস করে নীলিমা)
-হ্যা ভাবি।
-নীলিমা তুমি একটু ঘরে আসো তো! (সাকিব)
-কাজ করছি তো!
-ভাবি যাও তুমি। আমি দেখছি। (বাঁধন)
-আচ্ছা চলো। আয়ান এসো পাঞ্জাবিটা নিয়ে যাও। (নীলিমা)
নীলিমা, সাকিব আর আয়ান গেলো নীলিমার বেডরুমে। আয়ান ওর পাঞ্জাবি আর পাজামা নিয়ে বেরিয়ে এলো নিজের ঘরে। নীলিমা আয়না দেখে খোঁপা ঠিক করতে করতে সাকিবকে বলল,
-বলেন কেন ডেকেছিলেন?
সাকিব কোনো কথা না বলে নীলিমার পেটে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। নীলিমাও সাকিবের হাত ধরলো। সাকিব নীলিমার ঘাড়ে থুতুনি রেখে বলল,
-আমার কি মনে হচ্ছে তোমাকে দেখে জানো? (সাকিব)
-কি?
-মেয়ের নয়, মায়ের বিয়ে হচ্ছে। খুব সুন্দর লাগছে। স্পেশালি খোঁপাটা আরো বেশি টানছে আমায়। (উলটো করে নীলিমার কানের নিচে চুমু দিয়ে সাকিব)
-আল্লাহ এইসব দেখার জন্য তুমি আমাকে রাখছো? আজকে মেয়ের বিয়ে আর কিছুক্ষণ পর শ্বশুর হবে আর সে সমানে রোমান্স করেই যাচ্ছে। বয়স ঠেকলো গিয়ে চল্লিশে আর সে! ওই ছাড়ুন আমায়! আপনার কাজ না থাকলেও আমার আছে। (হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে নীলিমা)
-সুন্দরী ছাড়াতে পারবেনা। (নীলিমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সাকিব) একটা কিস করি প্লিজ!
-আজব তো! কিসের কিস! তুলির আব্বু সাবধান কিন্তু। সরেন এখন। আমার কাজ আছে।
কথাটা বলে নীলিমা চলে যেতে নেয় আর সাকিব নীলিমার হাত ধরে নীলিমাকে আলমারির সাথে মিশায়। নীলিমা শাড়ির সাথে তাল দিতে না পেরে দুইটা কুঁচি খুলে যায়। নীলিমা তো রেগে শেষ।
-বদলোক কোথাকারের! আমার শাড়ি খুলে গেছে। এভাবে টান দিলেন কেন?
সাকিব নীলিমার হাত ধরে উঁচুতে উঠায়। আর নীলিমার হাতের আঙুল সব ওর হাতের মুঠোয় বন্দি করে। নীলিমা আরেকটু রাগার আগেই সাকিব নীলিমার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর……
নীলিমা ভ্যাবলার মত তাঁকিয়ে আছে সাকিবের দিকে। সাকিব ওর পকেট থেকে রুমালটা বের করে নিজের ঠোঁট মুছলো কারণ মিষ্টি রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছিলো নীলিমা আর সেইটা সাকিবের ঠোঁটেও লেগে গেছে কিস করার জন্য। নিজের ঠোঁট মুছার পর সাকিব নীলিমার ঠোঁট মুছে দিলো। নীলিমা পারছেনা সাকিবকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় বাড়ি মারে। সাকিব ড্রেসিংটেবিল এর উপর থেকে ওই রঙের লিপস্টিক টা নিয়ে নীলিমার ঠোঁটে লাগিয়ে দেয় আর নীলিমার শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে ওর পেটে গুঁজে দেয়।
-পরে দেখে নেবো আমি। সময় নেই এখন।
কথাটা বলেই নীলিমা ধুম করেই বেরিয়ে গেলো। সাকিব হাসতে হাসতে পাঞ্জাবি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে সাকিব নিচে এলো। আয়ান আর সাকিব মিলে খাবার দাবারের দিকটা দেখছে আর নিবির বাবাইয়ের হাত ধরেই আছে। তিশা তুলিকে নিয়ে চলে এসেছে পার্লার থেকে।
বরকে বরণ করলো নীলিমা আর বাঁধন মিলে। এরপর বিয়েটাও পরানো হলো। বিয়ের কোনো ত্রুটি রাখেনি বাবাই আর চাচ্চু মিলে। সন্ধ্যায় তুলিকে বিদায় দিয়ে কান্নার রোল পড়ে যায় বাসায়। তুলিই ছিল সে সংসারের বড় মেয়ে। কষ্ট সবারই হয়েছে। নিবির তো দিভাইকে ছাড়বেই না। তুলি যখন নিবিরকে কোলে নিয়ে আদর করছিলো তখন নিবির বলল,
-দিভাই এই ভাইয়াটা কে? বর সেজে আছে কেন?
রুদ্র (তুলির হাজবেন্ড) হেসে দিলো নিবিরের কথা শুনে সাথে নীলিমাও কাঁদতে কাঁদতে হেসে দিল। তুলি হেসে দিয়ে বলল,
-ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কর।
-ভাইয়া তুমি বর সেজে আছো কেন? (রুদ্রকে প্রশ্ন করল নিবির)
-আসো আমার কোলে। (রুদ্র নিবিরকে কোলে নিলো) তোমার দি ভাই কেন বউ সেজে আছে? আমি তোমার দি ভাইকে বিয়ে করেছি। (নিবিরের গাল টেনে রুদ্র)
-বিয়ে কি? (নিবির)
-নিবির ভাইয়াকে জ্বালিয়ো না। আসো আমার কাছে। (সাকিব)
-না আব্বু আমার ভীষণ ভালো লাগছে কিন্তু। অন্তত এই কিউট শালাবাবুর জন্য আমাকে এই বাড়িতে এভ্রিডে আসতে হবে। (রুদ্র)
-কেন নয়? এইটা কি আবার বলতে হয়? (আয়ান)
-শালাবাবু কি ভাইয়া? (নিবির)
-কালকে এসে বলব। আজ আমি তোমার দি ভাইকে নিয়ে যাই? (রুদ্র)
-না। কোথায় নিয়ে যাবা তুমি আমার দিভাইকে? (নিবির)
-আমার বাসায়।
-কেন? আমার দিভাই এর বাসা আছে। তোমার বাসায় কেন যাবে? দিভাই তুমি যেয়ো না। (কান্না করে দিয়ে নিবির)
-আব্বু তুমি কাঁদছো কেন? আসো চাচ্চুর কাছে আসো। দিভাই কালকে আবার চলে আসবে। (আয়ান)
-চাচ্চু দিভাই চলে গেলে আমি ঘুমাবো কার সাথে? (কেঁদেই যাচ্ছে নিবির)
-ভাই আমি আছি না? (তিশা)
-ছোড়দি ভাই, ভাইয়াকে না বল দিভাইকে নিয়ে যেতে! (নিবির)
-তোর জেট প্লেন এর রিমোট চাই নাকি দিভাইকে হুম? (তিশা)
-রিমোট চাই। (হাসিমুখে নিবির)
-দেখেছো ওর ভালবাসা রিমোট কন্ট্রোল প্লেনের উপর বেশি! আর এতক্ষন শুধু শুধু কাঁদছিলো। আয় আমি তোকে দিচ্ছি। (তিশা)
নিবিরের কান্ড দেখে সবাই হেসে দিল। রুদ্র নিবিরকে ভালবেসে ফেলেছে। রাতে সব গুছিয়েছে সার্ভেন্ট দিয়ে আয়ান আর সাকিব। বাড়ির দিকটায় নীলিমা আর বাঁধন দেখছিলো। রাত তিনটায় প্রায় কাজগুল্প শেষ করে সাকিব আর আয়ান দুজনেই বাড়িতে এলো। নিবির সোফার উপর তিশার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে আর তিশাও সোফার উপর হ্যালান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আয়ান তিশাকে ডাকলো আস্তে করে। তিশা উঠে নিবিরকে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। সাকিব আর আয়ান যে যার যার ঘরে চলে এলো।
সাকিব ঘরে ঢুকে দেখে নীলিমা শাড়ি চেঞ্জ করছে। গহনাগুলো খুলে সাইডে রেখেছে। সাকিব গহনাগুলো গুছিয়ে রাখলো নীলিমা না করা সত্তেও।
-আপনি রাখেন, আমি গুছাচ্ছি। (নীলিমা)
-একই কথা। তুমি চেঞ্জ কর।
-রুদ্র ফোন দিয়েছিলো?
-হ্যা ওরা একটা বাজে চলে গেছে বাসায়। খারাপ লাগছে। তুলিই তো হৈচৈ বেশি করতো। আজ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সব।
-আমারো। এখন মেয়ে সুখে থাকলেই হয়।
-সেই বিশ্বাস আছে আমার রুদ্রর উপর।
-আপনার মত স্বামী পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। রুদ্র কিছুইনা সেখানে। (আলমারিতে শাড়ি তুলে রেখে নীলিমা)
-আহারে দুপুরেই তো বললা আমি বদ!
-ও হ্যা কারেক্ট! সেই শোধ টা তো তোলা হয়নি। (পাউডারের বোতল হাতে নিয়ে নীলিমা সাকিবকে ইচ্ছামতো মারছিলো। সাকিব শেষে নীলিমার হাত দুইটা পেছনে নিয়ে নীলিমার খালি ঘাড়ে ইচ্ছেমতো কিস করছে)
চলবে