সুখ – পর্ব ৪

0
304

#সুখ
#Part_4
#Written_By_Nilma_Zabin_Tanmona
নীলিমাকে সাকিব ওর উপর থেকে ফেলে দিলো আর সাকিবের ও ডুশ খেয়ে হুশ হওয়ার মতো অবস্থা হলো। সাকিব দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে যায় আর নীলিমা শাড়ির আচলটা ঠিক করে উঠে চলে যায়। সাকিব হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো ই টানছে। ও তানহা আর নীলিমার মধ্যে পার্থক্য বুঝলো না?? এইটা ভেবেই ওর লজ্জা লাগছে। সাকিব আজ অফিসে যাবেনা সেইটা আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছে৷ আজকে বিকেলেই ওরা ঘুরতে বের হবে বাইরে। কমপক্ষে দুইদিনের জন্য ওরা ঢাকার বাইরে কোথাও যাবে। কিন্তু সাকিব এখনো ডিসাইড করতে পারলো না যে কোথায় যাবে। তাই আয়ান আর সুহানা মিলেই বলল যে রাঙামাটি যাবে।সাকিব শুধু বলল মন্দ হয়না। সবাই মিলে প্যাকিং করা শুরু করলো কিন্তু নীলিমা কিছুই করছেনা। সাকিব নীলিমাকে না করে দিয়েছে শপিং আর না দিয়েছে কিছু। একটা চেইন পর্যন্ত কিনে দেয়নি। এতে নীলিমার কোনো কষ্ট নেই তবে চাপা একটা অভিযোগ রয়েই যায়। প্যাকিং করার সময় সুহানা হঠাৎ দৌঁড়ে সাকিবের ঘরে যায়৷
-ভাইয়া আসবো? (দরজায় নক করে সুহানা)
-আয়।
-ভাইয়া তুমি কি কাজটা ঠিক করছো বলো তো? আমরা সবাই গোছগাছ নিয়ে ব্যস্ত আর ভাবিকে একটা বার ও যাওয়ার কথা বলছো না তুমি?
-আমার কোনো প্রয়োজন নেই। কেন এসেছিস সেইটা বল।
-ভাইয়া ভাবিকে অন্তত গিয়ে বলো রেডি হতে যাও।
-সুহানা প্লিজ। ওই মেয়েকে ওর মত থাকতে দে আর আমাকে আমার মতো। ফালতু মেয়ে একটা! (ফোন হাতে নিয়ে সাকিব)
-ভাইয়া?
-তুই তোর জিনিস গুছিয়ে নে এরপর তিশা আর তুলির জিনিসপত্র গোছা যা। (বিরক্ত হ্যে সাকিব)
-যাচ্ছি।
সুহানা এক প্রকার রাগ করেই চলে গেলো। সাকিব এর এই রাগে কিছু আসে যায় না। আয়ান আর সুহানা বাধ্য হয়েই নীলিমাকে ছাড়া যাচ্ছে নয়ত সাকিব প্রচুর রাগ করবে। মেয়েদের আর ভাই বোনদের নিয়ে আম্মুকে বিদায় জানিয়ে সাকিব বেরিয়ে গেলো। নীলিমাকে একটা কথাও বলে যায়নি যাওয়ার সময়। আম্মু অনেকবার বলেছে নীলিমাকে নিয়ে যেতে কিন্তু সাকিব নিবেনা। কোনোভাবেই সাকিব নীলিমাকে নিয়ে যাবেনা।
নীলিমা রাতে ঘুমানোর সময় কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে। সারারাত শুধু কেঁদেছে নীলিমা। পুরো বাড়ি ফাঁকা। এর মাঝে নীলিমাকে একটা কল ও সাকিব করেনি। আয়ান কথা বলেছে অবশ্য। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে নীলিমা আম্মুকে নাস্তা বানিয়ে দেয়। এরপর ঘরের কাজ সেড়ে গোসল করতে যায়। নীলিমা ওর বাবার সাথে কথা বলেনা কারণ জোর করেই ওর বাবা ওকে সাকিবের কাছে বিয়ে দিয়েছে। নীলিমা চায়নি দুই মেয়ের বাবার বউ হতে। নিজেকে শেষ করা যদি সর্বোচ্চ গুনাহ না হত তবে নীলিমা নিজেকে শেষ করে দিত।
সারাটাদিন মন খারাপ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে ছিলো নীলিমা। সুহানা এর মাঝে একবার ফোন দিয়েছিলো কিন্তু নীলিমা কথা বলেনি কারণ ওর মন খারাপ। সাকিব বিন্দাস ঘুরছে আর মজা করছে। বিকেলের দিকে গিয়ে নীলিমা আয়ানের ঘর থেকে বই এনে পড়তে বসে। কিন্ত এখন পড়াশুনাও বিস্বাদ লাগছে। কিছুতেই কিছু ভালো লাগছেনা ওর।
টানা দুইটাদিন একা বাসায় ছিল নীলিমা। যেদিন ওদের বাড়ি ফেরার কথা সেইদিন সকাল থেকে নীলিমার জ্বর। নীলিমা বের হতে পারেনি ঘর থেকে। নীলিমার শ্বাশুরি নীলিমার খোঁজ নিতে উপরে যায় আর গিয়ে দেখে নীলিমা এলোমেলো হয়ে খাটে পরে আছে৷ তার বুক চিন করে উঠে। তিনি নীলিমার পালস রেট চেক করে দেখলেন স্বাভাবিক আছে সব তবে গায়ে জ্বর প্রচন্ড। নীলিমা মরার মত ঘুমাচ্ছে। উনি নীলিমাকে জাগালেন কিন্তু নীলিমা মাথা তুলে উঠতে পারছিলো না। কাজের লোককে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন দেওয়ালেন আম্মু। ডাক্তার এসে নীলিমাকে মেডিসিন দিয়ে যায় আর রেস্ট এ থাকতে বলে। ওষুধ খেয়ে নীলিমা কখন ঘুমিয়ে যায় তা ও বলতেই পারেনা৷ বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙে নীলিমার। ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে পাঁচটা বাজে। নীলিমা ধড়ফড় করে খাট থেকে নামে আর শাড়িটা কোনোমতে পালটে নিচে যায়। নিচে গিয়ে দেখে সাকিব আর ওর আম্মু ড্রইংরুমে বসে গল্প করছে। সাকিব নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে ফেলল।
-বউমা তুমি কেন উঠলে? কি দরকার ছিলো বলো আমায়। (নীলিমার শ্বাশুরি)
-আসলে মা রান্না করতে হবে তো৷ সবাই চলে এসেছে। খাবে কি? (গোঙাতে গোঙাতে নীলিমা। মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেনা)
-তুমি ঘরে যাও৷ কাজের মেয়ে আছে ও করবে৷ আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমার ঘরে।
-না মা জমিদারী আমাকে মানায় না। (শাড়ির আচল ছেড়ে দিয়ে নীলিমা)
সাকিব বসে বসে শুধু শুনলো। নীলিমা রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করার জন্য রেডি হচ্ছিলো তখন সাকিব রান্নাঘরে ঢুকে।
-আপনাকে নিশ্চই এই বাড়ির চাকরানী হিসেবে আনিনি? (পেছন থেকে সাকিব)
-বউ হিসেবেও আনেন নি। (চুলায় প্যান বসিয়ে নীলিমা)
-ত্যাড়া ত্যাড়া কথা আমার সহ্য হয়না জাস্ট মাইন্ড ইট! ঘরে গিয়ে রেস্ট করুন। কাজের লোক আছে সে করবে।
-আমিই সেই। সেসব বাদ দিন। আপনি ঘরে যান। স্ন্যাকস এ কি খাবেন বলেন, করে দিচ্ছি।
-আপনি ঘরে যান। রান্না করতে হবেনা বলছি তো। (ধমক দিয়ে সাকিব)
-প্লিজ। এই রান্নাঘরটাই আমার একমাত্র আপন। আমাকে এভাবে বের করে দেওয়ার কোনো মানে নেই। (আস্তে করে বলল নীলিমা)
-ধ্যাৎ!
সাকিব প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে নীলিমার হাত ধরে টেনেই ঘরে নিয়ে এলো নীলিমাকে। নীলিমা একটুও অবাক হয়নি কারণ ও সম্পূর্ণ অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে। #সুখ নেই আর ওর জীবনে আর না আছে স্বামীর ভালবাসা। সারাক্ষণ ডিপ্রেশনে থাকে নীলিমা।
-ঘরে থাকুন। ঘুমান চুপ করে। (সাকিব)
-নাহ ঘুম আসবেনা। তাছাড়া আপনার এতটা কেয়ার ও যে আমার সহ্য হচ্ছেনা। (মুচকি হেসে নীলিমা)
-কিহ? কে কার কেয়ার করছে? ও হ্যালো! আপনার কেয়ার করার জন্য আমি বসে নেই। শুধু দায়িত্ববোধ থেকেই করছি।
-গুড!
নীলিমা বাইরে তাঁকিয়ে ছিল আর সাকিব এসব বলছিলো।
-এই বাড়িতে আমার কথাই শেষ কথা হয় আর সেইখানে আপনি আমার সাথে তর্ক করছেন! (সাকিব)
-তর্ক করছিনা তবে কথা বলছি এই প্রথম সেইটা জানি।
নীলিমার কথা শুনে সাকিব স্তব্ধ হয়ে গেলো। এতটা সাহস আর কেউ দেখায়নি ওর উপর যতটা দেখিয়েছে নীলিমা।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here