#স্বামী
পর্ব-৬
#Nirzana(TANIMA_anam)
Flash_Back
সায়নের সাথে সম্পর্কের শুরুটা ছিলো বেশ রোমাঞ্চকর…..
ছোট্ট একটা দীঘীর পার, একটা বকুল তলা,কিছু কাশ ফুল আর একটা ছোট্ট নাকফুল!!ব্যাস এগুলোই ছিলো সায়ন-অনুর সম্পর্কের মূখ্য উপাদান!!!
সেদিনটা ছিলো শুক্রবার। অনুর বাবার কোনো এক গ্রাম্য বন্ধুর আমানত্রনে অনুরা হুট করেই গ্রামে যায়।
অনুর বাবার সেই বাল্য বন্ধুর একমাত্র মেয়ের বিয়ে।
তাই বেশ দল বেঁধে পরিবার সহ অনুরা গ্রামে চলে আসে।
তখনও অনুর সাথে সায়নের সম্পর্ক বাড়ির ছাদ অবদিই আটকে আছে।তবে মাঝেমাঝে রাস্তায় দুই একবার দেখা হলে শুধু একটু মুচকি হাসিতেই আবদ্ধ ছিলো তারা দুজন।
অনুর গ্রামে তেমন আশা হয় না।
এখানে এসে গ্রামে সহজ সরল মানুষগুলোর সাথে মিশে বেশ ভালোই লাগছে অনুর।
এরই মাঝে বিপত্তি বাঁধে….
রাতে গায়ে হলুদে মেয়ের জন্য রাখা সব হলুদ চুরি হয়েগেছে।।।
কি সর্বনাশ এখন কি হবে।এদিকে বেলাও যে শেষের দিকে সন্ধ্যের পর হলুদ বাটাবাটি শুরু হবে।
কোনো উপায় না পেয়ে কনে পক্ষের কিছু মেয়ে বেরিয়ে পরে বাগান থেকে হলুদ তুলতে।অনুও তাদের সাথে চলে আসে….
নদীর উপার বাগান থেকে তারা হলুদ তুলে নিয়ে আসবে তারপর বাটাবাটি শুরু হবে….
যথারিতী বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদী পাড় করে তারা হলুদ নিয়ে ফিরছিলো এমন সময় অনুর চোখ যায় রাস্তার উপারে ব্যাগ পত্র নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মাঝামাঝি বয়সি এক মহিলা ও তার মেয়ের দিকে।তারা অসহায়ের মতো মুখ করে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।
দুজকে দেখে মনে হচ্ছে না তারা গ্রামের কেউ।
অনু ঝটপট তাদের কাছে চলে যায়
হতে পারে তারা কোনো বিপদে পড়েছে..
অনু সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করে…
-অ্যান্টি কোনো সমস্যাই পড়েছেন??
-আর বলো না মা অনেকদিন পর গ্রামে এসেছি গ্রামের পথ ঘাট তেমন মনে নেই।।
-ওও আপনি পথ ভুলে গেছেন??
-হ্যা
পাশ থেকে সোহা বলে ওঠে….
-হুম্ম আমরা এখানে একদাদুর বাড়ি এসেছি।এক চাচাতো বোনের বিয়ে কিন্তু আম্মু পথই ভুলে গেছে!!
-তোমাদের সাথে কেউ নেই যে পথ চিনে
-ভাইয়া আছে কিন্তু সে লেইট লতিফ ট্রেন ফেইল করেছে বলে আসতে দেরী হচ্ছে বোধয় ঘন্টা দুয়েক লাগবে।।
-কি সর্বনাশ এতোক্ষন আপনারা এখানে দাড়িয়ে থাকবেন!!
-হুম্ম কি আর করবো।
অনু ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখেন ওনি বড্ড ঘামছেন!!
বোধয় শরীর খারাপ করছে….
-অ্যান্টি আপনি আমাকে সেখানকার ঠিকানা বলুন আমি দেখছি খুজে দিতে পারি কি না।।
-মা ঠিকানাটাই তো মনে নেই!!
আসলে এটা তাদের নতুন বাড়ি এখানে তেমন আশা হয় নি!!
অনুকে এতোক্ষন দাড়িয়ে বকবক করতে দেখে তারাও এগিয়ে আসে।অনুর সাথে কনের ছোট বোন নিলুও ছিলো।।।
নিলু ভদ্র মহিলাকে দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে
-বড় চাচী তুমি এসেছো
-নীলু।।।
নীলু এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে
-সায়ন ভাই কোথায় তাকে তো দেখছি না!!
(নিলুর একমাত্র ক্রাশ হচ্ছে সায়ন)
সোহা ক্ষেপে যায়….
-সবসময় ভাইয়ার খবর নাও কেন এখানে আমি আছি মা আছে দেখতে পাচ্ছো না??? মার শরীর খারাপ চলো আমাদের বাড়ি নিয়ে চলো ভাইয়ার আসতে দেরী হবে।
-ওও তা আগে বললেই তো হয় সায়ন ভাই…….না থাক তোমরা বাড়ি চলো চাচী।।
ভদ্র মহিলা আর কেউ নয় সায়নের মা আর বোন সোহা
পাশ থেকে সায়নের মা বলে ওঠে
-সেই কবে তোদের এই নদীর ধারে বাড়িটাতে এসেছি এতো কি মনে থাকে তাই পথ ভুলে গেছি।।
-ওও আসলে চাচী সায়ন ভাইই বললো এই বাড়িটা থেকেই বিয়ে দিতে।
সোহা:::এখন দাড়িয়ে বকরবকর না করে বাড়ি নিয়ে চলো আমাদের
নিলু:::হুম্ম চল…..নিয়েই তো যাচ্ছি!!
নিলু সামনের দিকে হাটা ধরে….
এতো ব্যাগ পত্র নিয়ে সায়নের মা আর সোহা দাড়িয়ে আছে….
এতোগুলো।নেওয়া যায়।
এদিকে নিলুও হাটা ধরে সামনের পথে!!!
অনু এগিয়ে গিয়ে সায়নের মায়ের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে নেয়।
সবাইকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
সায়নের বাবার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি এটা…..
প্রায় সন্ধ্যে নেমে গেছে বড়রা বড়দের মতো আর ছোটরা ছোটদের মতো আনন্দ করছে।
অনুর বেশ ভালোই লাগছে।একেবারে বিশুদ্ধ বাঙ্গালী বিয়ে যাকে বলে।
অনুর সাথে দুষ্টমিতে যোগ দিয়েছে সোহা ও।
সোহা সহজে কোনো মানুষের সাথে মিশে না তবে যাকে পছন্দ হবে তার কথায় আলাদা।
হলুদ বাটা বাটিতে প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে গেছে।
গ্রামে এইটুকু রাত মানেই গভীর রাত…..
সবাই যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত
সোহা,নিলু আর অনু তিনজন বাড়ির সামনে বকুল তলার নিচে বাধায় করা পাড়টায় বসে বসে গল্প করছিলো….
হটাৎই তিনজনের ডাক পড়ে…
সবাই তেঁতুল মাখিয়েছে অনুকে খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে।
অনু সোহা আর নিলুকে বসতে বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়….
-তোমরা বসো আমি এখানে নিয়ে আসছি
-ওদিকটা কিন্তু বেশ অন্ধকার যেতে পারবে তো??
পাশ থেকে সোহা বলে ওঠে
-সবাই কি তোমার মতো চোখ কপাঁলে তুলে হাটে যে একটু পর পর উল্টে উল্টে পরবে!!
-কি বললি??
-কি আবার বলবো তুমি তো ভাইয়াকে দেখলেই দুম দাম করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাও তাই বললাম….
সোহার কথাশুনে নিলুর মুখটা ছোট হয়ে যায়।
অনু হেসে ওঠে
-অনুদি তুমি আলোটা নিয়ে যাও।
-না লাগবে না সোহা আমি এই যাবো আর আসবো….
অনু অন্ধকারে পথ হাতড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই কঠিন কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে দুম করে নিচে পড়ে যায়….
অনু প্রথমে ভাবে হয়তো তাল গাছ টাছ হবে।পড়ে সেই কঠিন বস্তুকে নড়েচড়ে ওঠতে দেখে অনু ভযে চিৎকার দিয়ে ওঠে……
“বাবা গো গাছ আবার নড়ে”
সোহা নীলু দুজনই অনুর চিৎকারে এগিয়ে আসে…..
-ইয়ে মানে সরি আমি দেখতে পাই নি!!
সোহা ছুটে এসে আলো জ্বালিয়ে দেখে অনু ভয় ভয় মুখ নিয়ে নিচে পড়ে রয়েছে….
-ভাইয়া তুই
-সায়ন ভাই তুমি এসেছো
নিলু সায়নকে দেখে এগিয়ে যেতেই পায়ে পা বিধে দুম করে নিচে পড়ে যায়।
সোহা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে….
-হয়ে গেলো।মানুষ সুলাইমান খানকে দেখেও এতো হুমরি খায় না যতোটা তোকে দেখে হুমড়ি খায়।এখন আবার নিলুপির সাথে অনুপিও যোগ দিয়েছে। এক সাথে দুদুটো মেয়ে…..
চল এখান থেকে বাড়ি ভেতরে চল না হলে দুজনই হয়তো এবার ভিমড়ি খাবে….!!
সায়নের কানে সোহার কথা ঢুকছে না সে তো অনুকে দেখতে ব্যাস্ত।
রাতে মৃদু আলোয় অনুকে চিনে নিতে সায়নের একটুও কষ্ট হয়নি।
অনুও সায়নের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
দুজনের কেউই কাউকে এখানে এভাবে আশা করেনি
সায়ন অনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়….
অনুও সায়নের হাত ধরে নেয়।
অনু সায়নের হাতে ভর করে ওঠে দাড়ায়।।।
নিলু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে!!
সায়ন মুচকি দিয়ে হাসছে….
অনুর কিছুটা লজ্জা লাগছে।
অনুর বুকটা ভীষনভাবে ধুকধুক করছে….
-বোধয় কিছু হতে চলেছে!!
-হয়তো।।।
চলবে…..
(সব রহস্যের সমাধান করেই আমি বিদায় নিবো।একটু ব্যাস্ত থাকায় পার্টগুলো বড় করতে পারছি না সরি।কেমন হলো জানাবেন কিন্তু)