কলঙ্কের ফুল – পর্ব ২৬

0
336

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_২৬
#Saji_Afroz
.
.
.
পকেট থেকে মোবাইল বের করার সময় আদির মনে পড়ে সে ছবি তুলেছিলো আরিফের মোবাইলে।
মেহেরীকার দিকে তাকিয়ে আদি বললো-
উফ্ফ সরি মেহের!
ছবি ভাইয়ার মোবাইলে।
-ওহ।
-বাসায় গিয়ে দেখাবো কেমন তোমায়। দিবার কাছেও থাকবে।
-ঠিক আছে।
.
.
.
নিজের রুমের বিছানায় শুয়ে আছে রাজীব। চোখের কোণায় জমে আছে তার নোনাজল।
মেহেরীকার জন্য বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা করছে তার।
কি দিতে পেরেছে এই মেয়েটাকে সে?
কিছুই দিতে পারেনি।
অথচ মেয়েটা তাকে কতোই না ভালোবেসেছে। যার পরিণাম হিসেবে পেয়েছে শুধুই কষ্ট।
.
-রাজীব ভাই?
.
সুপ্তির ডাকে শোয়া থেকে বসে পড়ে রাজীব।
-হুম বল?
-ফুফুর ঔষধ কোথায়?
-আম্মার খাটের পাশে ছোট টেবিলটার উপরেই আছেতো।
-ওহ। কাল বাসায় আনার পর থেকেই বলে যাচ্ছে তুমি নাকি পর হয়ে গিয়েছো।
-আমিতো বিয়েটা করিনি। পর কি করে হলাম?
-জানিনা।
-আচ্ছা সুপ্তি একটা সত্যি কথা বলতো?
-কি?
-আম্মার কি সত্যিই শরীর খারাপ?
-মানে! তুমি কি বলতে চাইছো? ফুফু নাটক করেছে?
-অস্বাভাবিক কিছু নয়।
-ডাক্তার কি মিথ্যে বলবেন?
-তা আমি জানিনা। কিন্তু আম্মা যদি সত্যিই এমন কিছু করে থাকেন, এই বাড়ি ছেড়ে মেহের কে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো আমি।
.
.
.
-তোমার বান্ধবীর শরীর ঠিক আছে এখন?
.
সালেহা চৌধুরীর মুখে এমন কথা শুনে চমকে যায় মেহেরীকা।
ভাবতে থাকে কোন বান্ধবীর শরীর খারাপ হলো!
সে কিছু বলার আগেই আদি বলে উঠলো-
হুম মা, আনিকার শরীর ঠিক আছে এখন।
-ঠিক আছে। তুই অফিসে যাবিনা?
-এখন আর গিয়ে কি করবো!
কাল যাবো একেবারে।
-ঠিক আছে।
.
সালেহা চৌধুরী মেহেরীকার দিকে তাকিয়ে বললেন-
দিবার সাথে দেখা করে এসো। তোমাকে কাল সে বড্ড মিস করেছে।
-হুম যাবো।
-আচ্ছা যেও। আমি একটু আসি।
.
সালেহা চৌধুরী সোফা ছেড়ে নিজের রুমের দিকে এগুতে থাকেন।
.
আদির দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা বললো-
মা কি বললেন?
বান্ধবীর অসুখ?
-কাল সবাই তোমার কথা জিজ্ঞাসা করছিলো। চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো তারা।
তাই আমি বানিয়ে বলেছি হঠাৎ আনিকার শরীরটা খারাপ। তার বাসায় কেউ নেই। তাই তোমায় হুট করে যেতে হলো ওখানে।
-আর যদি না ফিরতাম আমি? কি বলতে?
-আমি জানতাম তুমি ফিরবে।
.
.
.
দিবার রুমে প্রবেশ করে মেহেরীকা বললো-
না বলেই ঢুকে পড়েছি আমি।
.
শোয়া থেকে বসে দিবা বললো-
তুমি কখন এলে বাসায়?
-এইতো এখুনি।
-বসোনা ভাবী।
.
মেহেরীকা, দিবার পাশে বসতে বসতে বললো-
এই অসময়ে শুয়ে আছো! শরীর খারাপ?
-আরে না।
কাল সারারাত পিকুর সাথে কথা বলেছিলাম তাই এখন ঘুম পাচ্ছে।
-তোমার পিকুর সাথে দেখাই হলোনা আমার।
-সমস্যা নেই।
অন্য একদিন দেখা করিয়ে দিবো।
-তা না হয় করাবে।
এখন আপাতত ননদের জামাই এর ছবিতো দেখাও?
-হুম অবশ্যই।
.
দিবা ফোন হাতে নিয়ে গ্যালারি থেকে তার বফ এর ছবি বের করে মেহেরীকার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো-
এই নাও ভাবী, দেখো।
.
দিবার কাছ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় মেহেরীকা।
এ কাকে দেখছে সে!
ভ্রু জোড়া কুচকে, দিবার দিকে তাকিয়ে সে বললো-
তুমি মজা করছো আমার সাথে?
-মজা মানে?
-এটা তোমার বফ?
-হ্যাঁ।
-না, তুমি মজা করছো আমার সাথে।
-মজা কেনো করবো ভাবী! এটায় আমার পিকু।
-পিকু নাকি রানা?
.
অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে দিবা জিজ্ঞাসা করলো-
তুমি কিভাবে জানলে?
.
চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা দম ফেললো মেহেরীকা।
করুণ দৃষ্টিতে দিবার দিকে তাকিয়ে বললো-
এই বিয়েটা তুমি করোনা দিবা।
-মানে?
-মানে রানাকে তুমি বিয়ে করবেনা।
-কেনো?
-করবেনা মানে করবেনা। এতো মানে, কেনো এসব করছো কেনো!
.
মেহেরীকার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে দিবা।
.
গম্ভীরমুখে বললো সে-
আমার ভালোবাসার মানুষ সে!
ভালোবেসে তাকে বিয়ে করতে চলেছি। তুমি হুট করে এসে বলছো তাকে বিয়ে করোনা।
কেনো!
কেনো আমি তোমার কথা শুনবো?
.
বসা থেকে মেহেরীকা দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বললো-
কারণ ও একটা প্লে বয়। রানা মোটেও ভালো ছেলে নয়।
.
দিবা দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
তুমি আমাকে বলবে এখন পিকু কেমন ছেলে?
-হুম, আমি বলবো।
কারণ আমার থেকে বেশি কেউ ওকে চিনবেনা।
-ওহ তাই! কি সম্পর্ক তোমাদের?
বলো?
-এতো কিছু তোমার জানার দরকার নেই।
এই বিয়েটা তুমি করবেনা এটাই ফাইনাল।
.
-মেহের!
.
পেছনে ফিরে আদিকে দেখে চমকে যায় মেহেরীকা।
.
আর দিবা ভাইয়ের পাশে গিয়ে বলতে শুরু করলো-
ভাইয়া তোরাতো প্রেম করে বিয়ে করেছিস, তাও পালিয়ে।
আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে সবার সম্মতি নিয়ে বিয়ে করতে চলেছি এটা কি তোর বউ এর সহ্য হচ্ছেনা?
সে কি কোনো ঝামেলা হলেই খুশি হতো?
.
দিবার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মেহেরীকার উদ্দেশ্যে আদি বললো-
রুমে এসো, কথা আছে।
-হুম।
.
.
.
আদির পিছু পিছু মেহেরীকা তাদের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মাঝপথে মিলি এসে তাদের থামিয়ে হেসে বলে উঠলো-
এক রাত থাকোনি তুমি মেহেরীকা, কিন্তু আমার দেবরের কাছে তা ১হাজার রাতের মতো লেগেছে।
.
মিলির কথা শুনে আদি নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
.
তা দেখে মেহেরীকা মৃদু হেসে মিলির উদ্দেশ্যে বললো-
তোমার দেবর আমার উপর রাগ ভাবী।
-কাল রাতে বাসায় ছিলেনা বলে!
আচ্ছা, যাও। রাগ ভাঙ্গাও তার।
.
.
আদির পাশে গিয়ে মেহেরীকা বললো-
এসেছি আমি।
.
মেহেরীকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় আদি প্রশ্ন করলো-
কি বলেছো তুমি দিবাকে? রানা কে যেনো বিয়ে না করে?
-হুম।
-কেনো?
.
মেহেরীকার কাছে কোনো জবাব না পেয়ে আদি বললো-
তার মানে দিবা যা বলছে তাই সত্যি।
ওর ভালো তুমি চাইছোনা।
-আদিয়াত!
-নাহলে কারণ টা কি! তোমার বফ তোমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে বলে অন্যদের ভালোবাসার সফলতা তোমার সহ্য হচ্ছেনা।
তাই তুমি ভুল বাল বুঝিয়ে দিবাকে ওদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করাতে চাইছো। নাহলে রানা তোমার কি ক্ষতি করেছে!
.
এপর্যায়ে চেঁচিয়ে মেহেরীকা বলে উঠলো-
ও আমার কি ক্ষতি করেছে!
আমার আজকের এই পরিণতির কারণ শুধুমাত্র রানা।
আমার দূর্ভাগ্যের কারণ একমাত্র রানা।
.
.
.
কি বলে গেলো মেহেরীকা? রানা একটা প্লে বয়!
কেনো বললো সে এমন?
সত্যিই কি…..?
না, না……
তার পিকু এমন হতে পারেনা, কিছুতেই না।
সে দিবাকে অনেক ভালোবাসে। আর তাই বাসায় প্রস্তাবও নিয়ে এসেছে।
তার সাথেতো কোনো খেলা করেনি সে।
হুম, নিশ্চয় মেহেরীকা বানিয়ে বলছে।
কতো আপন ভেবেছিলো সে মেহেরীকাকে আর সেই কিনা তার ক্ষতি চাইছে!
ছিঃ! কি করে পারলো মেহেরীকা এমন করতে!
.
এসব ভেবে দিবার চোখ বেয়ে পড়ছে অনবরত পানি।
কিন্তু হঠাৎ তার মাথায় আসে, মেহেরীকা কিভাবে জানলো তার পিকুর নাম রানা!
নিশ্চয় বাসার কেউ বলেছে। হুম তাই হবে।
.
.
.
বারান্দার দরজা বন্ধ করে আছে ভেতরে বসে আছে মেহেরীকা।
এদিকে আদি অনবরত দরজার কড়া নেড়ে তার উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছে-
মেহের? আমাকে সবটা খুলে বলো।
না বললে বুঝবো কি করে বলো? প্লিজ মেহের!
-আমি একটু একা থাকতে চাই আদিয়াত।
প্লিজ তুমি যাও এখন।
.
আর কোনো কথা না বলে আদিয়াত বিছানার উপরে এসে বসে।
.
.
মেহেরীকা চোখ জোড়া বন্ধ করে ভাবতে থাকে প্রায় ২মাস আগে ঘটে যাওয়া তার জীবনের কাহিনী।
.
.
.
রাজীবের সাথে দেখা করার জন্য মেহেরীকা তাদের বাড়ির পাশের রেস্টুরেন্ট এ এসেছে।
রাজীব না আসায় ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে তার ফোন নাম্বার ডায়াল করে কানে দেয় সে। হঠাৎ একটা ছেলে এসে তার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে বললো-
বাহ! বেশ সুন্দর ফোন। আমি একটা কল করি?
-এটা কি ধরনের অসভ্যতা!
-সভ্যদের কাছ থেকেই ওসব সভ্যতা আশা কইরো সুন্দরী। আমিতো অসভ্যই।
-আমার ফোন দিন।
-না না, দিবোনা দিবোনা।
.
মেহেরীকা কিছু বলার আগেই পেছনে থেকে রাজীব ছেলেটির হাত থেকে মোবাইলটি নিয়ে ফেললো।
তা দেখে ছেলেটি বলে উঠলো-
তুই কে রে? এই মালকে পটাতে এসেছিস আমার সাথে হিরোগিরি দেখিয়ে?
.
এই কথাটি হজম করতে না পেরে রাজীব ছেলেটিকে মারা শুরু করলো।
.
একপর্যায়ে দুজনের মাঝেই হাতাহাতি শুরু হয়। মারামারি চরম আকারে ধারণ লাভ করলে মেহেরীকা কোনোমতে রাজীবকে শান্ত করিয়ে বললো-
চলো রাজীব। এসব ছেলেকে মেরে নিজের হাত নষ্ট করোনা।
.
মেহেরীকার সাথে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় ছেলেটির উদ্দেশ্যে রাজীব বললো-
এই মেয়েটা হচ্ছে মেহের। আমার হবু স্ত্রী। তাকে নতুন করে পটানোর আমার প্রয়োজন নেই। ওর জন্য আজ বেঁচে গেলি, নাহলে তোর এমন হাল করতাম…..
.
.
.
রাত ১২টা….
ফোনে কথা বলছে মেহেরীকা ও রাজীব।
-এখনো মুড অফ তোমার রাজীব?
-হওয়ার কথা নয় কি? আমার মেহের কে কোন সাহসে ওই ছেলে মাল বলে!
-ওই ছেলেটা জানতো না মেয়েটা কার হবু বউ। জানলে কখনো বলতো না। কেউ কি নিজ ইচ্ছে এতোগুলো মার খেতে চায় বলো?
.
মেহেরীকার কথা শুনে হো হো শব্দে হেসে উঠে রাজীব।
.
রাজীবের হাসি শুনে মেহেরীকা বললো-
রাগ তাহলে কমেছে রাজীব সাহেবের?
-মেহের সাহেবার সাথে কথা বললে রাগ না কমে কি পারে!
-পাম্প দেওয়া হচ্ছে তাইনা?
-তুমি কি চাকা? চাকা হলে নাহয় পাম্প দিতাম।
-আচ্ছা তাই!
-হুম তাই। মেহের?
-হু?
-ছেলেটাকে দেখেছো আগে কোথাও?
-নাতো।
-আমিও দেখিনি।
-উহু বাদ দাওনা রাজীব!
যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। অন্য কথা বলো।
-কিসের কথা বলবো?
-তোমার যা খুশি।
-প্রেমের কথা বলি?
.
মৃদু হেসে মেহেরীকা বললো-
হু, বলো।
.
.
.
৩দিন পর…..
কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় মেহেরীকা।
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ট্যাক্সিতে কলেজে আসা যাওয়া করে সে।
তাই প্রতিদিনের মতো আজও সে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে উঠেছে।
.
.
কিছুদূর যাওয়ার পর মেহেরীকা খেয়াল করলো গাড়ি অন্য পথে যাচ্ছে।
মেহেরীকা আতঙ্কিত মুখে বললো-
ড্রাইভার ভাইয়া? আমার কলেজ ওদিকে নয়। আপনি ভুল দিকে যাচ্ছেন।
.
গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার বললো-
ওহ আচ্ছা! আমি দুঃখিত।
.
হঠাৎ করেই গাড়িতে অন্য একটি ছেলে উঠে মেহেরীকার পাশে বসে বললো-
হ্যালো মেহের!
.
অবাক চোখে তাকিয়ে মেহেরীকা বললো-
তুমি!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here