ঘায়েল – পর্ব ২১ এবং শেষ

0
500

#ঘায়েল
#পর্ব_২১ (অন্তিম পর্ব)
#Saji_Afroz
.
.
.
পুনম নিজের রুমের মাঝে পায়চারী করে চলেছে।
সাবের নামক আপদটা কেনো যে দেশে আসতে চলেছে! আসতোই যদি কিছুদিন পরে আসতো। রানবীকে মনের কথাটা জানানোর পর আসতো। এখন এই পরিস্থিতিতে কিভাবে তাকে জানাবে মনের কোণে জমে থাকা কথাগুলো!
.
-আসতে পারি?
.
রানবীর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে পুনম বললো-
হু।
-এভাবে হাঁটাহাটি করছো কেনো?
-কথাটি বলতে না পারায় অস্থির অস্থির লাগছে আমার।
-কোন কথা?
.
আমতাআমতা করে সে বললো-
আসলে.. মানে.. বলছিলাম যে…
-আমাকে ঘৃণা করো এটা?
-নাহ!
-সেই যাই হোক। সাবের আসতে চলেছে। আর এক মাস পরেই কোর্টের দেয়া সময়ও শেষ হবে। আমরা জানিয়ে দিবো, একে অন্যের জন্য নয় আমরা। ডিভোর্স টা হয়ে গেলেই সাবের কে বিয়ে করতে পারবে তুমি।
-ওই সাবেরের হাতে তুলে দিবেন আমাকে? বুক কাঁপছেনা?
-না। সে তোমার জন্য পর দেশে পাড়ি জমিয়েছে। মাস্তানি করছেনা তোমার জন্যই। ওর মতো একটা ছেলেকে নিঃসন্দেহে বিয়ে করা যায়। বলো যায়না?
-তার মানে আপনি কিছুই করবেন না, সাবেরের হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে?
-নাহ। সুখী হবে ওর সাথে তুমি।
.
রানবী কথাটি বলেই বেরিয়ে যেতেই বিছানার উপরে বসে পড়লো পুনম।
তার ভালোবাসা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেলো!
এটা ঠিক যে সাবের তার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করেছে। কিন্তু পুনমের মন যে এখন রানবীর কাছে।
ছেলেরা কি প্রকাশ না করলে কিছুই বুঝেনা!
.
.
এতোক্ষণ যাবৎ দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাদের কথপোকথন শুনেছে ইপশিতা।
রানবী বের হতেই তাকে সে প্রশ্ন করলো-
মনেহয়না আমার ননদকে তুমি এতো সহজে ছাড়বে। এসব নাটক কেনো?
.
মুচকি হেসে রানবী বললো-
এই দেখো! এটা তুমি বুঝলে আর তোমার ননদই বুঝলো না।
-আসল কাহিনী কিন্তু বুঝলাম না ভাই।
-কাহিনী হইলো তোমার ননদ রে সময় দিচ্ছি বোঝার জন্য। নাহলে সে পরে সাবের রে নিয়া আমারে খোটা দিবে। বলবে সাবেরের মতো ভালো পোলাডারে আমার জন্য ছাড়ছে। তাই পুনম নিজে আমাকে কিছু না বলা অবধি ওর কাছে নিজের ফিলিংস আর প্রকাশ করবো না।
-বুঝলাম।
-ওরে বইলোনা কিছু।
-তা বলবোনা। কিন্তু পুনম যদি তোমাকে কিছু না বলে, তাহলে ডিভোর্স টা হতে দিবে?
-পাগল নাকি! জোর করে বিয়ে করেছি, না থাকতে চায়লেও জোর করেই রাখবো।
.
.
.
সকাল সকাল ইপশিতার ডাকে ঘুম ভাঙলো পুনমের।
ইপশিতার সাথে পুনম ড্রয়িং রুমে আসলো।
রানবী কে গেস্ট রুম থেকে মাহিম নিয়ে এলো।
মাহাফুজ ও আফরোজা ইসলাম ও এসেছেন।
কেননা সালাউদ্দিন তার ছেলে সাবের কে নিয়ে এসেছেন।
সাবের কে দেখেই পুনমের শরীরে জ্বালা করে উঠলো।
কেনো যেনো তাকে দেখতে একদমই ইচ্ছে করছেনা তার।
সাবের সালাম জানালো সবাই কে।
.
মাহিম জিজ্ঞাসা করলো-
কখন এলে সাবের?
-একটু আগেই।
.
মাহাফুজ ইসলাম গম্ভীরমুখে সালাউদ্দিনের উদ্দেশ্যে বললেন-
কিছু কথা আছে আমার।
-কথা আপনি পরে বলিয়েন। আগে আমাকে বলতে দিন।
-আমার টা জরুরী।
-আমার টা আরো বেশি।
.
রানবী বললো-
জ্বী সালাউদ্দিন আঙ্কেল, আপনিই বলুন?
-আসলে কিভাবে যে কথাটা বলি। আমার ছেলে সাবের তো ডুবাই থেকে বিয়ে করে বউ নিয়ে আসছে।
.
কথাটি শুনেই চমকে গেলো সকলে।
সকলের মুখেই হাসির ঝলক।
কিন্তু রানবী ভ্রু জোড়া কুচকে বললো-
এটা কি বললেন!
-হ্যাঁ! আমি খুবই লজ্জিত।
.
এক লাফে উঠে পড়লো রানবী।
সালাউদ্দিনের পাশে বসে বললো-
আমাদের পুনম স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলেছে সাবেরের জন্য। আর এখন স্বপ্ন ভঙ্গ করে আপনি লজ্জিত বলছেন?
-পুনমের জন্য বলেই এই সাবের কে সাথে নিয়ে এসেছি এখন সরি বলার জন্য। নাহলে আমি সালাউদ্দিন কারো কাছে জবাবদিহি করিনা। ছেলেটা আসলেই খারাপ কাজ করলো।
.
পুনম ও তার পরিবার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রানবীর দিকে।
এদিকে পুনমের উদ্দেশ্যে সাবের বললো-
আসলে পুনম যখন আমি ডুবাই যাই, আমার জীবনে এক কালো অন্ধকার নেমে আসে। ওখানে কাজ করে খাওয়া টাই ছিলো কষ্টকর, প্রতিষ্ঠিত হতে পারা তো দূরের কথা! তখন আমার দিকে হাত বাড়ায় নুহালি। তার মা বাংলাদেশের মেয়ে হওয়াই বাংলা ভাষাও জানে সে। সে আমাকে একটা ভালো কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। বন্ধুত্বের হাতও বাড়ায়। এভাবে আস্তেধীরে তার সাথে চলতে চলতে আমি প্রেমে পড়ে গেলাম তার। আসলে…
.
রানবী বলে উঠলো-
তার মানে তুমি পুনম কে ভালোই বাসোনি। সবটা ছিলো মোহ? খুব খারাপ।
.
রানবীর সাথে তাল মিলিয়ে পুনমও বলতে শুরু করলো-
হুম খুব খারাপ। এখন আমার কি হবে সাবের? আমি কি এখন মমতাজের ‘ফাইট্টা যাই, বুকটা ফাইট্টা যাই’ গানটা গাইবো?
-না পুনম! তুমি ভালো ছেলেই পাবে।
-বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছেনা আর কাউকে। তুমিই বলো? এতো সহজে আর কাউকে আমি বিশ্বাস করতে পারবো?
.
রানবী বললো-
ছ্যাকা খাওয়া মানুষের সাথে ছ্যাকা খাওয়া মানুষেরই থাকা উচিত। তাই বলছিলাম কি তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও।
.
সালাউদ্দিন বলে উঠলেন-
তুমি না বিবাহিত?
-আরে কথা বুঝলেন না? বিবাহিত তবে ছ্যাকা খেয়েছি।
.
সাবের মাথাটা চুলকিয়ে বললো-
বিবাহিত রা ছ্যাকা খায় কিভাবে?
-আমার বউ অন্য একজনের জন্য আমারে ডিভোর্স দিয়েছে। এটা ছ্যাকা না বলুন?
.
সালাউদ্দিন বললেন-
কি সাংঘাতিক!
-তাই বলছিলাম কি পুনম কে আমার সাথেই বিয়েটা দিতে সাহায্য করুন। পুনমও ছ্যাকা খেয়েছে আমিও খেয়েছি। তাই একে অন্যের দুঃখটা বুঝবো।
.
সালাউদ্দিন মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললেন-
আমার আপত্তি নেই। তবে রুম্পাকে বিয়ে করতে পারতে তুমি। যেহেতু পুনম কে আমার ছেলে ইয়া দিয়েছে।
-ছ্যাকা?
-হ্যাঁ ওটাই। তাই ওর জন্য তোমাকে দিয়ে দিলাম।
-কিন্তু মাহিম বা তার পরিবার তো মানবে বলে মনে হচ্ছেনা। যেহেতু আমি ডিভোর্সী।
.
মাহিম, মাহাফুজ ও আফরোজা ইসলাম গম্ভীরমুখ নিয়ে বসে রইলেন।
তাদের দেখে মনে হচ্ছে নারাজ তারা এই প্রস্তাবে।
এদিকে ইপশিতা মুচকি মুচকি হেসে চলেছে। তার শ্বশুরবাড়ির সকলে যে এতো অভিনয় জানে জানা ছিলোনা তার।
.
সালাউদ্দিন সকলের উদ্দেশ্যে বললেন-
এমন ছেলে কোথায় পাবেন! ভাগ্যদোষে বউটা পালায়ছে তার। তার কি দোষ? মেনে নিন সকলে।
.
মাহাফুজ ইসলাম বললেন-
বলতেছেন ভালো হবে?
-হুম হবে।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বললেন-
ঠিক আছে মেনে নিলাম।
.
তার কথা শুনে সালাউদ্দিন বললেন-
ওরে সাবের মিষ্টি নিয়ে আয়!
.
.
.
সকালের নাস্তা সেরে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে আসলো পুনম।
রানবী তাকে দেখে বললো-
সাবের শেষমেশ ছ্যাকা দিলো তোমারে।
.
মুচকি হেসে পুনম বললো-
আপনার বউও কিন্তু আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই বলছিলাম কি…
-কি?
-বুঝছোনা?
.
অবাক হয়ে রানবী বললো-
আপনি থেকে তুমি?
-অধিকার আছে আমার।
-সম্পর্কের?
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুনম বললো-
নাহ! ভালোবাসার।
.
কথাটি শুনে পুনমের কাছে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে নিলো রানবী।
পুনম জিজ্ঞাসা করলো-
সাবের বিয়ে না করলে কি করতে?
-মেরে ধরে আরেক জনের সাথে বিয়ে করিয়ে দিতাম। ওসব বাদ দাও, চলো এখন।
-কোথায়?
-শ্বশুরবাড়ি।
-না যাবোনা।
.
পুনমকে ছেড়ে রানবী জিজ্ঞাসা করলো-
কেনো? তুমি না ভালোবাসো আমাকে?
-বাসি। তবে এবার ধুমধামভাবে বউ নিতে হবে তোমাকে। সবাই জানবে রানবীর বউ পুনম। নিবেনা বলো?
.
ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে রানবী বললো-
হু নিবো।
.
.
.
প্রায় ১০দিন পরে…
খুব ধুমধামভাবেই বিয়ে হলো রানবী ও পুনমের।
চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা আনা হয়েছে নতুন বউকে।
একে একে সকলে এসে নতুন বউ এর মুখ দেখে যাচ্ছে।
কিছুসময় পর খায়রুন সকলের উদ্দেশ্যে বললো-
এবার চলো সকলে। নতুন বউ অনেক ক্লান্ত।
.
সকলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লেও রিমা, খায়রুন, সাবিনা ও রানবীর মা পুনমের পাশে বসলেন।
রানবীর মা তার উদ্দেশ্যে বললেন-
তোমার শ্বশুড় যখন চট্রগ্রাম থেকে এখানে এসেছিলেন, তোমার কথা বলেছিলেন আমাকে।
.
তিনি আবারো বলতে শুরু করলন-
রানবী স্টুডেন্ট, সাথে তুমিও। তাই তোমার পরিবার রাজি হননি। কিন্তু রানবীর স্বভাবের জন্য তিনি তাকে একটি ভালো মেয়ের আঁচলে বেঁধে দিতে চেয়েছিলেন। তোমার জন্য অনেক আফসোস করেছিলেন তিনি। রানবী যেদিন তোমাকে বিয়ে করে আনে, সেদিন তোমাকে খুব চেনা কেউ মনে হচ্ছিলো। পরে রানবীই সবাই কে একত্র করে আমাদের জানালো, তার বাবার পছন্দ করা মেয়েটি তুমিই।
.
পুনম বললো-
রানবী আমাকে চিনেছে?
-হ্যাঁ, তবে মাহিম তাকে সবটা জানানোর পরেই। রানবী পরে আমাদের বলে সব। সাথে সালাউদ্দিনের কথাও জানায়। আর এই কথাটি শুনেই আমরা রানবী কে কিছু বলিনি। নাহলে জোর করে বিয়ে করাটা সাপোর্ট করিনা আমরা।
.
এরা সকলেই কতো ভালো। আর পুনম কিনা….!
শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে পুনম বললো-
আমি খায়রুন বুবুর মতো যোগ্য বউ হয়ে দেখাবো।
.
.
বাসর ঘরে বসে আছে পুনম।
একটু পরে রানবী প্রবেশ করতেই পুনম বলে উঠলো-
সত্যি করে বলোতো? কবে থেকে ঘায়েল হয়েছো তুমি আমার প্রেমে?
-যেদিন বাবা তোমার বর্ণনা দিয়েছিলেন। কিন্তু আফসোস, তোমার পরিবার রিজেক্ট করেছিলো আমাকে।
.
মৃদু হাসলো পুনম।
রানবী তার পাশে এসে বললো-
স্বপ্ন মনে হচ্ছে সব। তুমিও আমার উপর ঘায়েল হলে। ভাবা যায় এসব?
-যায়। ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা জয় করা যায়। আর এটাকে কি বলে জানো?
-কি?
-সাইকোলোজিকাল ফ্যাক্ট -সাইকোলোজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ।
.
রানবী উচ্চশব্দে হেসে বলে উঠলো-
এটা কিন্তু আমার ডায়ালগ।
-তোমার সব কিছুই আমার। ডায়ালগ টাও আমার। হু।
-না হবেনা এটা। চলবেনা এসব।
-কি বললে তুমি?
.
কথাটি বলেই রানবী বুকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে লাগলো পুনম।
একপর্যায়ে হাপিয়ে উঠলো সে।
.
রানবী বললো-
নিজে মেরে নিজেই হাপিয়ে উঠলে?
-হু৷ তেষ্টা পেয়েছে জনাব।
.
আচমকা পুনম কে কাছে টেনে, তার রসালো ঠোঁট জড়ায় ঠোঁট বসালো রানবী।
কিছুক্ষণ পর ঠোঁটটা সরিয়ে ফিসফিসিয়ে রানবী বললো-
এখনো আছে কি তেষ্টা?
.
লজ্জামাখা মুখে পুনম জবাব দিলো-
উহু।
.
সেই লজ্জামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রানবী বললো-
ইশ! আবারো ঘা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here