সুখ – পর্ব ২

0
503

#সুখ
#Part_2
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সাকিবের বেডরুমে গেলো নীলিমা সাকিব কে ডাকতে। কিন্তু সাকিবকে ডাকার মত সাহস হচ্ছেনা নীলিমার। এইদিকে সময় ও বেশি নেই। অফিসের টাইম হয়ে গেছে। নীলিমা এসব ভাবতে ভাবতে সাকিব আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে গেলো। উঠেই নীলিমার মুখ দেখলো সাকিব। সাকিব তো রেগে আগুন নীলিমাকে দেখে। নীলিমা বুঝতে পেরেছে সাকিব রেগে গেছে তাই নীলিমা সাকিবের ঘর থেকে আস্তে করে বেরিয়ে আসে। তুলি আর তিশাকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে নীলিমা সাকিবকে ব্রেকফাস্ট বেড়ে দেয়। সাকিব খাবার না খেয়েই ডায়নিং থেকে উঠে চলে যায়। নীলিমা মন খারাপ করেই আস্তে করে চেয়ারে বসে পরে। আয়ান ব্রেকফাস্ট করতে এসেছে তাই আয়ানকে ব্রেকফাস্ট বেড়ে দিল আর আয়ানের সাথে বিভিন্ন কথা বলছিলো নীলিমা। হঠাৎ নীলিমা আয়ানকে অদ্ভূত একটা প্রশ্ন করলে বসলো যার জন্য আয়ান মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

-তোমার ভাই কি ১৩/১২ বছর বয়সে বিয়ে করেছিল? (নীলিমা আনমনে হয়ে আয়ানকে প্রশ্নটা করলো)
-এসব কি বলছো তুমি বড় ভাবি? (খাওয়া বন্ধ করে আয়ান)
-যদি সেইটা না করে তাহলে ১৪/১৫ বছরের একটা মেয়ে তার কিভাবে হয়? আর আমি তার ১০ বছরের ছোট কিভাবে হই? (অনেক চিন্তিত হয়ে নীলিমা)
-ভাইয়া আর্লি মেরিজ করেছে তবে সেইটা ২১ বছর বয়সে। যেহেতু ভাইয়া তানহা ভাবিকে ভালোবাসত তাই ভাবিকে নিয়ে রিস্কে যেতে চায়নি আর পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা করেছে। আম্মুও একটা সময় মেনে নিয়েছিলো আর তিশা বা তুলি কেউই ভাইয়ার নিজের মেয়ে না। (মাথা নিচু করে আয়ান)
-Whatttt? কি বলছো তুমি এসব? (অবাকের উচ্চসীমায় নীলিমা)
-দুইবছর আগে ওদের রাস্তায় এক্সিডেন্ট করা অবস্থায় দেখে ভাইয়া আর ভাবি তখন ওদের নিয়ে আসে এই বাসায়। ওরাও জানে যে এই পরিবারের কেউ না ওরা। কিন্তু কেউ আমরা ওদের কম আদর যত্ন করিনা। আর ডাক্তার বলেছিলো ভাবি কোনোদিন মা হতে পারবেনা তাই নিজ হাতে দেড়টা বছর ওদের আগলে রেখেছে। ওদের মা বাবা সেদিন ই মারা গিয়েছিলো। এরপর থেকে ভাবিকেই ওরা মা ডাকে আর ভাইয়াকে বাবাই। ছয়মাস আগে ভাবির ব্রেইন টিউমার ধরা পরে আর ভাবি ১৫ দিনের মাথায় মারা যায়। আবার নিঃশ্ব হয়ে যায় তিশা আর তুলি। ভাইয়া পাগলের মত হয়ে যায়। অফিস, খাওয়া দাওয়া সব ভুলে শুধু তানহা তানহা করত। আর কিছুতেই চালানো যাচ্ছিলো না ওদের। তাই জোর করে ভাইয়াকে বিয়ে দেওয়া। তুমি কোনোদিন তিশা আর তুলিকে কষ্ট দিও না। খুব অল্প বয়সেই মা বাবা হারা হয়েছে ওরা। (অনেক কষ্টে কথাগুলো বলল আয়ান)
-খাও তুমি। চিন্তা কর না। (চোখের পানি মুছে নীলিমা)

নীলিমা উঠে সাহস করে সাকিবের ঘরে যায় আর সাকিবের ডায়েরিটা সামনে পায়। নীলিমা ডায়েরি পড়ে বুঝেছে তানহাকে বিয়ের পর সাকিবের ঘুরে দাঁড়ানো টা আর তানহা মারা যাওয়ার পরের কষ্টটা। পড়তে পড়তে নীলিমা নিজেই কেঁদে দেয় আর ভাবে

-মানুষটাকে আমি বদমেজাজি ভাবতাম কিন্তু তা না। উনি অত্যন্ত স্নেহসুলভ একজন মানুষ। (মনে মনে নীলিমা)

ডায়েরিটা পড়ে নীলিমা পুরোটা ঘর গুছালো। তানহার জিনিসগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো। এরপর তুলি আর তিশার ঘরটা গুছিয়ে আয়ানের ঘরে গেলো গোছানোর জন্য।

-ভাবি তুমি এই ঘরে? (কান থেকে হেডফোন খুলে আয়ান)
-বিছানা থেকে নামো ঘরটা গোছাবো। পুরো বাড়িটা তো জঙ্গল বানিয়ে রেখেছো তোমরা। (আয়ানের ল্যাপটপ আর ট্যাব হাতে নিয়ে)
-তোমায় কিচ্ছু করতে হবেনা ভাবি। তুমি গিয়ে ঘুমাও যাও। রহিমা (কাজের মেয়ে) করে দিবে সব।
-তুমি সরো এখান থেকে। (ঝারি দিয়ে নীলিমা)
-এসেই জ্বালানো শুরু করে দিছো? (আয়ান)
-জ্বি দেবর জ্বি। যাও নয়ত এখন হেডফোনটা ভাঙব!
-যাচ্ছি!

এরপর আয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আর নীলিমা শাড়ির আচলটা হালকা বেঁধে আর চুলটা খোপা করে সবকিছু গুছিয়ে দেয়। শ্বাশুরির সাথে গিয়ে গল্প করে আসে আর ওষুধ দিয়ে আসে। এরপর গোসল করে রান্না করতে যায়। রান্না শেষ করতে না করতে সাকিব দ্রুত বাসায় ঢুকে কতগুলো পেপারস হাতে নিয়ে। মুখে হাসির ঝলক।

-আম্মু? আম্মু? তুমি কোথায়? (ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে সাকিব)
-হ্যা বল। (বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে আম্মু)
-আম্মু আমি প্রমোশন পেয়ে গেছি। (আম্মুকে জড়িয়ে ধরে সাকিব)

নীলিমা চুলাটার আঁচ কমিয়ে ড্রইংরুমে এসে দাঁড়ালো।

-আমার সারাজীবনের স্বপ্ন এইটা। আম্মু আমি এখন ওই কোম্পানির co managing director. (খুশিতে আত্মহারা সাকিব) যাই তানহাকে জানিয়ে আসি। (সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত উঠতে গিয়ে আবার থেমে যায় সাকিব আর মন খারাপ করে পিছু ফিরে তাঁকায়)

নীলিমা সেখান থেকে সরে যায় আর সাকিবের আম্মু সাকিবকে বলে

-আব্বু ভালোবাসা আজীবন থাকবে কিন্তু ভালবাসার মানুষ নয়। অতীত ভুলে যাও। বর্তমান নিয়েই সামনে এগিয়ে যাও। নীলিমার মতো একটা মেয়েকে এইভাবে কষ্ট দিওনা। বউমা খুব ভালো। এতটুকু বয়সে তোমার বউ হয়ে এসেছে সেইটা কি তোমার শ্রেষ্ঠ পাওয়া নয়? (আম্মু)
-আম্মু ও শুধু তিশা আর তুলির মা বাট আমার বউ না। তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি আজ থেকে ওর আর আমার ঘরটাও আলাদা। বাকি বাঁচবো হয়ত আর ৫০ বছর সেই জীবনটা নিজের মতই করে বাঁচতে দাও। কবুল বলাকে বিয়ে বলেনা সেইটাকে দায়বোধ বলে। যাইহোক আয়ানকে আর সুহানাকে আমার ঘরে আসতে বলো।

এই কথা বলে সাকিব নিজের ঘরে চলে যায় আর পেপারসগুলো কাবার্ডে রেখে দেয়। পেছনে ঘুরেই সাকিব দেখে পুরো ঘরটা কেমন যেন গোছানো! একদম তানহার মনের মতো করেই৷ তানহা এইভাবে ঘর গুছাতো। শো পিস, বই, বিভিন্ন জিনিসপত্র কি সুন্দরভাবে গুছিয়েছে! কিন্তু গোছালো কে? এইটাই ভাবছে সাকিব।

-ভাইয়া ডেকেছো? (আয়ান আর সুহানা একসাথে)
-হুম আয়। (ব্লেজারটা খাটের উপর রেখে সাকিব) অনেকদিন ধরে না আমাকে বলছিলি বাইরে ঘুরতে যাবি? আজকে যাবি? (পকেটে হাত দিয়ে সাকিব)
-তুমি যাবে ভাইয়া? (খুশিতে আয়ান আর সুহানা)
-হুম।
-ইয়াহুউউউউউউ! ভাবিকেও নিয়ে যাব কিন্তু।
-দরকার নেই। আমরা পাঁচ জনেই যাব। আমি তোরা আর আমার মেয়েরা। বাইরের কোনো মানুষকে আমি নিতে পারবো না৷ Do you get it?
-ভাইয়া প্লিজ she is your wife. তার ও একটা জীবন আছে। সে এত কিছু কিসের আশায় স্যাক্রিফাইস করবে? প্লিজ ভাইয়া try to understand
-তোরা যা পারিস কর! আর কিছুই আমি বলব না। (রেগে সাকিব ছাদে চলে গেলো)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here