#সুখ
#Part_25
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নীলিমার কথা শুনে সাকিব হেসে দিল। নীলিমার গাল টেনে বলল,
-এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ & ওয়ার। আর বয়স তো সেখানে তুচ্ছ জিনিস।
-হইছে জ্ঞান কম দেন। আজকে রাতে আমায় ফিজিক্সের কিছু চ্যাপ্টার পড়াতে হবে৷ কাল টেস্ট আছে। (সাকিবের পাঞ্জাবির বোতাম হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে)
-আচ্ছা ঠিক আছে। এখন জামাটা পাল্টে নাও। আর শুনো এখন একটু ঘুমিয়ে নাও। লাঞ্চ তো করাই শেষ।
-আপনি কি করবেন?
-কাজ ছাড়া আর কি!
-আচ্ছা করুন তাহলে।
নীলিমা ড্রেস পালটে ঘুমিয়ে যায়। সাকিব পাশে বসেই কাজ করছে। প্রতিদিন ভার্সিটি, পড়াশুনা এসব নিয়ে এখন আর আগের মতো সংসারে সময় দিতে পারেনা নীলিমা। এতে সংসারের কোনো সমস্যা হয়না। তবে মাঝে মাঝে নীলিমা টায়ার্ড থাকলে স্ন্যাকস বানাতে পারেনা। সাকিব তখন বাইরে থেকে কিছু এনে খাওয়ায় সবাইকে। সব দিক থেকে সাকিব নীলিমাকে আষ্টেপৃষ্টে আগলে রেখেছে আর সাপোর্ট দিচ্ছে। নীলিমা মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় এতটা সুখ পেয়ে৷
একটা দিন, দুইটা দিন করে কেটে গেলো সাড়ে চার বছর। সুহানার বিয়ে হয়ে গেছে চার বছর আগেই। সুহানা এখন শ্বশুর বাড়িতেই আছে। প্রায় সময়ই এসে সবার সাথে দেখা করে যায় আয়মান সহ। বাড়ির কোনো অনুষ্ঠান আয়মান আর সুহাকে ছাড়া হয়না। নীলিমার ও অনার্স শেষ হয়ে গেছে। আয়ান পড়াশুনার পাশাপাশি বিজনেস করছে। নীলিমা মাস্টার্সে ভর্তি হবে। তুলিও ইন্টার শেষ করে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। তিশা ক্লাস নাইনে পড়ছে। সাকিবের মা একটু বুড়িয়ে গেছে। ওনাকে এখন সার্বক্ষণিক দেখার জন্য সাকিব একটা মেয়ে রেখে দিয়েছে। নীলিমা যতটুকু পারে মায়ের খেয়াল রাখে। একদিন রাতে সাকিব অফিস থেকে এসে দেখে নীলিমা চুল খোলা রেখে আনমনে বারান্দার গ্রিলে হাত দিয়ে মাথা ঠেকিয়ে বাহির দেখছে। সাকিব ব্লেজারটা বেডের উপর রেখে বারান্দায় যায়।
-কি হয়েছে নীলু? এমন এলোমেলো যে তুমি? (নীলিমার মাথার চুলে হাত দিয়ে সাকিব)
-কখন আসলেন? (চুলগুলো হাতখোপা করে নীলিমা)
-এইত জাস্ট। এসেই চোখে পরলো তুমি বারান্দায় এইভাবে দাঁড়ানো। কি হয়েছে? মন খারাপ?
-না এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। তাই একা ভাল লাগছিলো না।
-খাইছো?
-আপনাকে ছাড়া কবে খেয়েছি? (ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-কথাটা শুনে হেসে দিল সাকিব
সাকিব ফ্রেশ হয়ে এসে নীলিমাকে নিয়ে খেতে বসলো। সাকিব নীলিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নীলিমা খাচ্ছে আর কথা বলছে। খাওয়া শেষ করে দুইজন শুয়ে পরলো। নীলিমা প্রতিদিনের মতই সাকিবের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর সাকিব মাথায় হাত নাড়ছে।
-নীলু আমি জানি তোমার কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে আমাকে বলো? (সাকিব)
-আম্মু আজকে আমাকে কিছু বলেছে। কথাগুলোই সারাদিন ভেবেছি।
-কি বলেছে?
অনেকক্ষণ চুপ থেকে নীলিমা বলল,
-আম্মু বলেছে বিয়ে হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর হলো। কেন কোনো সন্তান নিলাম না। অনার্স শেষ। এখন মা আমার কোলে কোনো বেবি দেখতে চান।
-হ্যা নিবা বেবি সমস্যা কি? আমারো তো ইচ্ছা একটা ছোট্ট বাবু আসুক বাসায়। ইচ্ছাটা অনেকদিনেরই বাট সাহস হয়নি তোমাকে বলার কারণ তোমার স্টাডি হ্যাম্পার হত। এখন তো শুধু এক্সাম ই দিবা মাস্টার্সে। সমস্যা হবে বলে মনে হয়না। তাছাড়া বয়স তো আর কম হয়নি স্পেশালি আমার। প্রায় ৩৫ হতে চলল।
-আপনার ৩৫ আর আমার ২৫ তাও আমিই বুড়িয়ে গেলাম।
-হাহাহা মেয়েরা এমনই। একদিন বলেছিলাম না কুড়িতেই বুড়ি।
-আপনি যখন বলছেন তাহলে ভুল বলেননি। কিন্তু আমি অন্যকিছু ভাবছি।
-কি?
-তুলি অনার্সে পড়ছে। ও এত বড় এই সময় যদি আমাদের বেবি হয় ও কি ভাববে? সমাজের মানুষ কি বলবে?
-তুলির ওতটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে যে তুমি ওর দ্বিতীয় মা আর আমাদের বিয়েটাও ওর বুঝের সময়েই হয়েছে। আর বাকি রইলো সমাজ। তুমি ভাবো সমাজের কথা?? (সাকিব নীলিমার দিকে তাঁকিয়ে)
-নাহ সেইদিন থেকেই সমাজ নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে দিয়েছি যেদিন ওই ঘটনার পরে আপনি আমার সাথে ছিলেন।
-তাহলে কেন এসব উলটা পালটা কথা বলছো? আমি চাই আমার নিজের কোনো সন্তান হোক যাকে আমি নিজের বলেই দাবী করতে পারব। তবে তুলি আর তিশাও আমার নিজের থেকে কম কিছু নয়।
-হ্যা বুঝেছি আমি। (সাকিবকে জড়িয়ে ধরে নীলিমা) আপনার সবগুলো কথাই সত্য আর আপনি ভুল বললেও আমি মানতে বাধ্য কারণ নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস আছে আপনার উপর।
-এই বিশ্বাস রাখলেই চলবে। (নীলিমার হাতে চুমু দিয়ে সাকিব)
দেড় মাস পর…..
সুহানা বাসায় বেড়াতে এসেছে আয়মানকে নিয়ে। পুরো বাড়িতে হৈ চৈ আর আনন্দ। আয়মান আর আয়ান অনেক মজা করছে ড্রইংরুমে বসে। সুহানা আর নীলিমা রান্নাঘরে গল্প করছে আর স্ন্যাকস রেডি করছে। সাকিব ও অফিস থেকে চলে এসেছে। আয়মান সাকিবকে সালাম দিল। আর সুহানা সাকিবকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
-ভাইয়া কেমন আছো?
-আমি তো ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস?
-আমিও ভাল আছি। কতবার বললাম আমার বাসায় আসো। আসলানা।
-আরেহ সময় ই তো পাইনা। আরেকদিন যাব।
-তুমি আর যাবা! যাই হোক ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথেই বসি আমরা।
-ওয়েট কর দশ মিনিটে আসছি।
-যাও।
সাকিব নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ওরা সবাই একসাথে বসে বসে গল্প করছে আর নীলিমা খাবার নিয়ে দেয় ওদের সামনে। নীলিমা যখন আবার ব্যাক করতে যাবে তখন হঠাৎ মাথা ঘুরে যায় ওর। সোফার হ্যান্ডেল ধরে বসে পরে ফ্লোরে। সাকিব দ্রুত উঠে নীলিমাকে ধরে। সুহানা, আয়মান আর আয়ান ও যায়।
-ঠিক আছো তুমি? পরে গেলে কি করে? (সাকিব নীলিমাকে উঠিয়ে সোফায় বসালো)
-বুঝলাম না হঠাৎ মাথা ঘুরলো। (নীলিমা)
-ভাইয়া কয়েকদিন থেকেই দেখছি ভাবির শরীর তেমন একটা ভাল না। কিভাবে যেন চলে! বলেছি তোমাকে বলতে বলেনি। আমি ও যে বলব ভুলে গেছি। (আয়ান)
-কতদিন ধরে? আমায় কেন বলনি? এতটা ব্যস্ত থাকি এখন যে ঠিকমতো কিছুরই খেয়াল রাখতে পারিনাই। এক্ষুণি ডাক্তারের কাছে যাবা চলো। (সাকিব)
-হ্যা ভাইয়া নিয়ে যাও। (সুহা)
-এত রাতে গিয়ে কি করব? এমনিতেই ভাল হয়ে যাব। বাদ দিন তো। আমাকে নিয়ে পরলো সবাই। (নীলিমা)
-চুপ থাকবে তুমি। আয়ান আমার ওয়ালেট আন তো ঘর থেকে। আর গাড়ির চাবিটাও নিয়ে আসবি। (সাকিব)
-আমিও যাই ভাইয়া? (আয়মান)
-না আয়মান তোমরা থাকো। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
সাকিব নীলিমাকে নিয়ে সেই রাতেই ডাক্তারের কাছে যায়। সাকিবেরই বন্ধু সে। নীলিমা একজন পুরুষ ডাক্তারের কাছে এইভাবে সবকিছু বলতে লজ্জাই পাচ্ছে। সাকিব আর সাকিবের ফ্রেন্ড বুঝতে পেরেছে। সাকিবের ফ্রেন্ড ওনার এসিস্ট্যান্ট কে দেখতে বলল নীলিমাকে। আর উনি সাকিবকে নিয়ে বাইরে চলে গেলেন। সব চেকাপ করিয়ে নীলিমা বাইরে আসলো। এরপর সাকিবের ফ্রেন্ড বলল,
-তুই একটু ওয়েট কর আমি রিপোর্ট রেডি করছি।
-যা আমি আছি।
নীলিমা সাকিবকে বলল,
-আপনার বন্ধু প্রেগনেন্সি চেক করালেন কেন আমার?
-কিহ? (অবাক হয়ে সাকিব) মাই গড! সিরিয়াসলি?
-হ্যা
-তার মানে হয়ত তেমন কিছু। যদি তেমন কিছু হয় নীলু তাহলে তোমাকে এখান থেকে কোলে নিয়ে বাসায় যাব।
-হইছে থামেন। যদি মরে যাই তো? সেই রিপোর্ট ও তো আসতে পারে নাকি?
-থাপ্পর খাওনা অনেকদিন থেকেই। থাপ্পর মেরে দাঁত ফেলে দিব এসব বললে। মুডটাই দিল নষ্ট করে।
চলবে