জীবনসঙ্গী
পর্ব ১৬
writer Tanishq Tani
ওভার স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে অনিকেত,, পাশে চুপচাপ বসে আছে শশী,,
গাড়ি বাড়িতে নয়,,এসে থামে একটা অচেনা জায়গায়,,
পুরোটা রাস্তা দুজনের কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে নাই,,
গাড়ি থামিয়ে ব্রেকে হাত চেপে জোরে জোরে হর্ন বাজাতে থাকে অনিকেত,, যেন সব রাগ হর্ন হয়ে আকাশ পাতাল কাঁপাচ্ছে,,
শশী কানে হাত দিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে থাকে সিটে,,
একটু পর খুব দ্রুত গতিতে দৌড়ে ৪
জন হোটেল বয় ছুটে আসে,,
এদের মধ্যে থেকে একজন গাড়ির দরজা খুলে দিতেই অনিকেত গাড়ি থেকে বের হয়ে সজোরে ছেলেটাকে চর দিতে গিয়েও হাত মুঠ করে নামিয়ে নেয়,,
অনিকেত নিজে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে শশীর হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায়
তারপর আবার আগের গতিতে হাঁটতে শুরু করে,,শশী চুপচাপ মাথানিচু করে অনিকেতের সাথে চলতে থাকে,,এতো শক্ত করে অনিকেত শশীর হাত ধরেছে মনে হচ্ছে ছাড়া পেলে শশী হয়তো পালাবে,,
শশীর হাত বেয়ে ফোঁটা ফোটা রক্ত পড়ছে,,
অনিকেতের হাতের চাপ লেগে চুড়ি ভেঙে হাত কেটে গেছে,,শশী কোনোরকম উহ আহ শব্দ করে না,,দাঁতে দাত চেঁপে ব্যথা সহ্য করে,,ব্যথা সহ্য করার পটু হয়ে গেছে আজকাল শশী,,
লিফটের কাছে এসে থামে অনিকেত,, লিফট ওপেন করতেই ঢুকে পড়ে শশীকে নিয়ে তারপর ৫ম ফ্লোরের বাটন চাপ দেয় অনিকেত,,
মেজাজ প্রচন্ড খারাপ আজ অনির,,সকালে শশী মুখের ভালোবাসা প্রকাশ সেই সাথে শাড়িতে আকর্ষণীয় লাগছিলো শশীকে,,খুব ইচ্ছা করছিলো গিয়ে শশীকে দুবাহুতে জরিয়ে ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে,,কিন্তু শশী যে এখনো তার অনুমতি দেয় নাই,,তাই না চাইতেও দূরত্ব বজায় রাখে শশীর থেকে,,
কিন্তু কথায় আছে না প্রেমের মরা মরে বার বার,,তাই ই হলো,,শশীর নীল শাড়ি পড়া দেখে যতোটুকু পাগল হয়েছিল এখন পরিপূর্ন অপ্সরা লাগছে,,ফারিহার সাথে যখন রুম থেকে সেজেগুজে বের হলো আমার পছন্দমত জিনিসে পরে,,আমার তো হার্টবিট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল,,
এভাবে তিলে তিলে মেরে কি মজা পায় এই মেয়ে আমাকে,,ইচ্ছা ছিলো রাতে ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাব,,কিন্তু তা হতে দিলো কই?
মানছি খালামনি ওকে যা তা বলেছে,,তাই বলে ও এখনো আমাদের বিয়ের এতোদিন বাদ এসেও বলবে ও আমার যোগ্য না,,
মন ত চাচ্ছিল কষে দুগালে লাগিয়ে দেয়,,কিন্তু ও যে আমার জান,, ওকে আঘাত করা আমার পক্ষে সম্ভব না,,বড্ড ভালোবাসি যে ওকে,,
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো,,
অনিকেত পাশে তাকানো ভঙ্গিতে চোখের পানি মুছে নিলো,,
শশী জীবনে কোনোদিন লিফটে ওঠে নি,,আজ প্রথম উঠলো,,লিফট উপরে ওঠার সাথে সাথে শশী ভয়ে অনিকেতের হাত খামছে ধরে,,ভীষণ ভয় করে ওর,,
লিফট খোলার সাথে সাথে অনিকেত হাত ধরে হোটেলের একটা বিলাসবহুল কামরায় নিয়ে যায় শশীকে,,
শশী ভিতরে ঢুকে থ হয়ে যায়,,এতো সুন্দর করে ডেকোরেশান করে সাজান,,মুভিতে দেখেছিলো হিরো হিরোইনের জন্য লাল গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে বিছানার মাঝবরাবর লাভ শেপ করা,,
মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে,, কি যেন বলে এটাকে ওহ্ হ্যাঁ ক্যান্ডেলাইট ডিনার,, কিন্তু এখানে কিছুটা অন্য রকম,,
বিছানায় ফুল আছে কিন্তু ডিনার টা নাই,,খাবারের কথা মনে পড়তেই পেটে ইদুর লাফালাফি করে,,উফ্ বড্ড ক্ষুদা লেগেছে,,,
কিন্তু আমার স্বামীটা যে মুডে আছে তা মোটেও সুবিধার না,,ঝড় ওঠার পূর্বাভাস দিচ্ছে তার নিরবতা,,,
কিন্তু ঘরটা উফ্,, পুরাই রোমান্টিক ফিলিংস এনে দিচ্ছে,,বাইরের আকাশ টাও মেঘাচ্ছন্ন,, থেকে থেকে দমকা হাওয়া বইছে,,শশী ধীর পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাড়াতেই হিমেল হাওয়া পুরো শরীর শিহরিত করে,,
শাড়ির আঁচল টা খোলা পিঠে ঢেকে নেয়,,
অনিকেত ওয়াশরুমে সেই কখন ঢুকেছে এখনো বের হলো না,,
এতোক্ষন কি করে উনি ওয়াশরুমে? ,শশী এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দরজার কাছে,,
দরজায় টোকা দেওয়ার জন্য হাত উঠিয়েও আবার নামিয়ে নেয়,,অনির মেজাজ চড়া হয়ে আছে,,শশীর মনে ভয়ও লাগছে,,, যদি রাগ করে অনি,,
শশী বুঝতে পারে না এতো কিসের রাগ হলো আজ তার,,নিজেই তো বিকাল থেকে ভাব নিচ্ছিলো আবার নিজেই এখন এমন রাগ করছে মনে হচ্ছে আমিই যেন তার সাথে ভাব দেখাইছি,,
হুহ্ যত দোষ এখন এই শশী নন্দঘোষের,,
আচ্ছা নন্দঘোষের স্ত্রী লিঙ্গ কি হতে পারে?
ধূর ভাল্লাগছে না,,কি করছে এতোক্ষন ভেতরে,,উনিশ বিষ চিন্তা করে শশী সাহস নিয়ে দরজায় টোকা দেয়,,
এই যে শুনছেন?
না ভেতর থেকে পানি পড়ার শব্দ ছাড়া কোনো শব্দই আসছে না,,,
অনিকেত! শুনছেন আপনি? কথা বলছেন না কেন? কাঁদো কাঁদো স্বরে,,
আচমকা দরজা খুলে শশীর হাত হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে নিয়ে যায় শশীকে অনিকেত,,,
শশীকে শাওয়ারের নিচে নিজের সাথে চেপে ধরে অনিকেত,, আকস্মিক এমন ঘটনায় শশী থতমত খেয়ে যায়,,
শাওয়ারের পানির স্পিডে চোখ মেলে তাকাতেও পারছে না তেমন,,
তারপরও চেষ্টা করলো চোখ মেলে অনিকেতের দিকে তাকাতে,,
চোখ তো নয় যেন জ্বলন্ত আগুনের গোলা,, অনিকেতের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পায় শশী,,
শশীর দুবাহু চেপে নিজের খুব কাছে রেখেছে অনিকেত,,,,
অনিকেতের ঠোঁট চিবুক বেয়ে শাওয়ারের পানি ফোঁটা ফোটা গড়িয়ে শশীর ঠোঁটে পড়ছে,,
আমি যে আর পারছি না এই দূরত্ব সইতে,, আমার জান টা নিয়ে নাও তুমি,,মেরে ফেলো আমাকে,,এভাবে তিলে তিলে মরার চেয়ে আজ একেবারে মেরে ফেলো,,,
শশী কি বলবে,, এই মুহূর্তে কি বলা উচিত? কিছু মাথায় আসছে না শশীর,,
ভালোবাসায় এতো কষ্ট জানলে নেশা করতাম তবু শালার প্রেম করতাম না,,
তোমার প্রেম আমাকে পাগল করে ছাড়বে,,,
আমি বদলে গেছি শশী,,তোমার নেশায় আমি আজ উন্মাদ হয়ে যায়,,হিতাহিতজ্ঞানহীন হয়ে যাচ্ছি,,
এতোক্ষন শাওয়ারের নিচে থাকায় অনিকেত শশী দুজনের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে,, শশী তো রীতিমতো কাঁপছে,,
অনিকেতের ঘোর কাটে যখন শশীর কাপুনীর আওয়াজ কানে যায়,,
নিজের হাত শশীর বাহুতে দেখে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয়,,
চোখে মুখে অপরাধ বোধ ফুটে ওঠে,,,
হাতের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ শশীর পেছনের দেয়ালে সজোরে ঘুষি মারে,,,
হাত ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়,,,
শশী আতঙ্কে চোখ বড় করে চিৎকার করে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে যায়,,,
কি করছেন কি? অনিকেতের হাত নিজের হাতে নিয়ে,,,
মাফ করে দাও শশী? আমি বুঝি তুমি যেই কষ্ট পেয়েছ,, যেই বিভৎসতা দেখেছ তাতে সহজে কাওকে বিশ্বাস করা তোমার পক্ষে সম্ভব না,,কিন্তু আমি বার বার নিজের ভালোবাসার নেশার উন্মাদনার কাছে তোমার কষ্ট গুলো ভুলে যায়,,জোর করে নিজের ভালোবাসা চাপিয়ে দিতে চাই তোমার উপর,,
ভুলে যায় তোমাকে দেওয়া কথাগুলো,,তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করে পাপ করেছি আমি,,,আমাকে ক্ষমা করে দাও শশী,,হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে থাকে,,,
শশী অবাক হয় অনিকেতের এমন রুপ দেখে,,ছোট বাচ্চা শিশুর মতো কাঁদছে,,,কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে অনিকে কাঁদতে দেখে,,,
শশী আর সহ্য করতে পারে না,,অনিকেতের সামনে বসে জরিয়ে ধরে সমস্ত শক্তি দিয়ে,,,
শশী ভালোবাসার অর্থ কি আজ বুঝেছে,,প্রকৃত জীবনসাথী কি আজ বুঝেছে,,বুকের মাঝে গেঁথে রাখতে ইচ্ছা করছে অনিকেত কে আজ শশীর,,,সারাজীবন ভর অনিকেত কে বুকের মাঝে এভাবেই জরিয়ে বাঁচতে ইচ্ছা করছে শশীর
অনিকেত কে বাহুডোর থেকে আলাদা করে নিজের কপাল অনির কপালে ঠেকায় শশী,,,
আমি তোমাকে ভালোবাসি অনিকেত,,,
খুব ভালোবাসি,,,তোমাকে ছাড়া আমার বাঁচা মরার শামিল,,,আমি তোমাকে তোমার ভালোবাসাকে ছাড়া তুচ্ছ,,,আমি বড় ভাগ্যবতী সৃষ্টিকর্তা আমাকে তোমার মতো জীবনসঙ্গী দিয়েছে,,,
চলবে,,,,