জীবনসঙ্গী
পর্ব ১৪
writer Tanishq Tani
আমি আপনার যোগ্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করবো,,কিন্তু তার আগে আপনাকে কিছু কথা দিতে হবে আমায়,,,
একনাগাড়ে বলে যায় শশী,,
বুকের মাঝে ড্রাম বাজানোর মতো বাড়ি দিতে থাকে।যে লেভেলের রেগে গেছে অনিকেত,,শশীর তো ভয় ই করছে কষিয়ে থাপ্পড় না দিয়ে দেয় অনিকেত
কিন্তু শশীকে অবাক করে দিয়ে অনিকেত শান্ত গলায় বলে,,,
কি কথা বলো,,তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য আর কতো পরীক্ষা দিতে হবে বলো আমাকে,,আমি সব পরীক্ষা দিতে রাজি,,
শশীর খুব খারাপ লাগে অনিকেতের এমন দুঃখ বিধুর কথা শুনে,,
আপনি আজ থেকে ওসব ছাই পাস খাবেন না,,অন্য আট দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো ঘরে থাকবেন। সবার সাথে আগের মতো আচরণ করবেন,,মদ ছুঁয়েও দেখবেন না,,আর নিয়মিত নামাজ পড়বেন,,,
এই অগোছালো জীবনকে গোছালো করবেন,, নিজের চেহারাটা একটিবার আয়নাতে দেখেছেন,,কি হাল করেছেন নিজের,,মুখের দাড়ি টা মনে হয় সহস্র বছর ধরে শেভ করেন নি,,শশী কিছুটা অভিমান নিয়ে বলে,,
এসব করলে আমাকে ভালোবাসবে,,
মৃদু হাসি দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলে,,
হুমমমম,,শশী মাথা নিচু হয়ে বলে,,,
তাহলে আমাকে গোছালো করার ভারটা নিয়ে নাও তুমি,,আমি কথা দিচ্ছি সব কথা শুনবো তোমার,,,তুমি আমার পাশে না থাকলে আমি যে এই অগোছালো জীবনকে গোছাতে পারবো না শশী,,তুমি থাকবে তো পাশে আমার?করুনস্বরে বলে,,
জ্বী,,হাত পা থর থর করে কাপছে কেন যেন এসব কথা শুনে,,,আবার কষ্টও লাগছে অনিকেতের এমন অসহায় মুখটা দেখে
ঠিক আছে,, চলো নিচে যাওয়া যাক,,,না হলে সবাই অন্য কিছু ভাববে,,,বাঁকা হাসি দিয়ে
কি ভাববে? অনির ঠোঁটের বাঁকা হাসি মোটেও ভালো সংকেত না,,শশী একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়,,
সেটা যারা ভাববে তাদের কাছেই জিজ্ঞেস করো,,আমি কি সবজান্তা নাকি?বলেই অনিকেত হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মুখে মৃদু হাসি নিয়ে,,,
শশী কপাল কুঁচকে দাড়িয়ে রয় কিছুক্ষন অনিকেতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে,, অনিকেতের দুষ্টু ইংগিত শশী ঠিক বুঝতে পারে,,,
ফাজিল একটা,,ভেংচি দেয় শশী,,
শশী নিচে নেমে দেখে অনিকেত খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে মায়ের রান্না করা খাবার খাচ্ছে আর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে,,,
শশীর খুব রাগ হয়,,একটু আগে কি রাগ টাই না দেখালো,,এখন আবার সব বেমালুম ভুলে কি ভাবটাই দেখাচ্ছে যেন কিছুই হয় নি,,এই ছেলে জাতটাই এমন,,সাধনার জিনিস পেয়ে গেলে ভাব ধরে,,,ডং
শশী কে এদিকে আসতে দেখে অরুনা চৌধুরী শশীর কাছে ছুটে যায়,,,
তোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ,, তুই আমার কথা রেখেছিস বউ মা,,দেখ আজ আমি আবার আমার সেই অনিকে ফিরে পেলাম,,এটা শুধু তোর জন্যই সম্ভব হয়েছে রে মা,,
এটা আমার দায়িত্ব মা,,স্বামী হিসেবে তাকে সঠিক পথ দেখানো বউ হিসেবে আমার কর্তব্য,, আপনি চিন্তা করবেন না উনাকে নিয়ে,,,
না রে আমার আর চিন্তা নাই,,তুই যে এসেছিস আমার অনির জীবনে,,আমার দুশ্চিন্তা সব শেষ,,আজ বুঝতে পারলাম অনি কেন এতো পাগল তোর জন্য,,
কারন ও বুঝতে পেরেছে তোর চেয়ে উত্তম জীবনসঙ্গী ওর জন্য আর কেও না,,
শশী লাজুক হাসিতে আড়চোখে অনির দিকে তাকাতেই অনিকে আঙুল চাটতে চাটতে এদিকে ভ্রুকুটি দিয়ে তাকাতে দেখে,,,
শশী কেন যেন অনিকেতের চোখের দিকে তাকাতে পারে না,,কেমন নেশাভরা চোখ অনির,,
মুখ ছাড়া আর কোনো অঙ্গ দিয়ে যদি মানুষের মনের ভাব বোঝা যায়,,সেটি ঐ দু আখি,,,
অনিকেতের আখি অনিকেতের হৃদয়স্পর্শী গানের চেয়েও মারাত্মক,, বেশিক্ষণ চেয়ে থাকলে ও আখির নেশায় পড়ে যাবে নিশ্চিত,,,
এইমুহুর্তে প্রচন্ড রকম লজ্জা অনুভব করছে শশী অনিকেতের সামনে,, একটু আগেই তো ওর সাথে নিজের জীবনের অংশীদারিত্ব ভাগাভাগি করলো,,যতোই বলুক সময় লাগবে তাকে আপন করতে,,কিন্তু ভয় লাগে যদি এইটুকু অনুমতি তে জোর করে কাছে আসতে চাই অনি?
গলা শুকিয়ে যায় শশীর,,,
মম আমাকে আরেকটু মাংস দিয়ে যাও,,শশীর দিকে তাকিয়ে
হ্যাঁ আসছি বাবা,,
চল,,তুই ও ওর সাথে বসে খাবি,,,
না,,মা আমি বরং পরে সবার সাথে খাব,,
পরে কেন খাবি? স্বামীর সাথে বসে খাওয়া সওয়াব,,চল খাবি,,,শশীকে একপ্রকার জোর করে অনিকেতের পাশে বসিয়ে দেয়,,
অনিকেতের মা টেবিলে মাংস ভর্তি বাটি এনে দেয় রান্না ঘর থেকে,,
নে এবার তোরা খেয়ে নে,,আমি দেখি কল করে তোর ড্যাড কখন আসবে,,বলেই চলে যায় নিজের রুমে অরুনা চৌধুরী,,,
নিচে কেউ নেই,, শুধু শশী আর অনিকেত ছাড়া,,বাকি মানুষ গুলো কই কে জানে,,,
শশী এদিক ওদিক তাকায় কেউ আছে কি না দেখতে,,,
অনিকেতের পাশে বসে কেমন কেমন যেন লাগছে এখন,,
যাদের খুজছ তারা কেউ নেই এখানে,, আগামী ২/১ ঘন্টার মধ্যেও কেউ এদিকে আসবে বলে মনে হয় না,,তাই চুপচাপ খেয়ে রুমে যাও,,,
শশীর ইচ্ছা করে নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি দিতে,,এই লোকটার সামনে মনে মনে কিছুই দেখি ভাবা যায় না,,সব বুঝে ফেলে,,ঠোঁট ফুলিয়ে বসে থাকে অনিকেতের পাশে,,
মুখ খুলো,,হা করো তো,,
শশী হাত মুচরাতে থাকে,এই মুহুর্তে অনির মুখে খাওয়ানোর কথা শুনে
কি হলো? তুমি কি কানে কম শুনো,,
কম শুনবো কেন?মাথা নিচু করে,,
এইতো তাড়াতাড়ি জবাব দিলা,,থেকে থেকে মুখে কি হয় তোমার? জবাব দিতে কষ্ট হয় বুঝি,,হা করো খাইয়ে দেই,,
আমি খেতে পারবো?
তুমি তো আমাকে স্বামীর অধিকার দিলে,,সেই অধিকারে তোমাকে খাইয়ে দেওয়ার অনুমতি কি পেতে পারি না?
কি বলবো এখন,,ধ্যাৎ ভাল্লাগে না,,কি একটা পরিস্থিতি তে পড়েছি,,মনে মনেভাবে,,
কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়,,,
জ্বী,,পারেন,,চোখ নামিয়ে বলে নিচুস্বরে বলে,,
শশীর মুখের সামনে মাংস সহ খিচুড়ি মেখে তুলে ধরে অনিকেত,,,
শশী কিছুক্ষন ইতস্তত করে,,মুখে পুরে নেয় অনিকেতের হাতের মাখানো খাবার,,
অনিকেতের আঙুল গুলো মুখে ঠোঁটে লাগতেই অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে শশীর শশীরে,,
খাবার টা খেয়ে এতো মজা লাগে টেস্ট টা,,শশীর মনে হয় যেন অমৃত মুখে দিয়েছে,,,
আমার মম কেমন রান্না করে বলো তো?খাবার মাখাতে মাখাতে বলে,,
অনেক ভালো,,,হুমম দেখতে হবে না শ্বাশুড়িটা কার?হেসে বলে,,
শশী না চাইতেও অনিকেতের দিকে তাকায় কথাটা শুনে,,
লোকটার হাসিটা না এই অমৃতসমান খাবার থেকেও ইমামমম,,এতো সুন্দর রাজকুমারের মতো স্বামী শুধু রুপকথার গল্পেই হয়,,, অনিকেত কে স্বামী হিসেবে পেয়ে শশীর সেই ধারণা পাল্টে গেছে,,, বাস্তবেও রাজকুমার আসে কারো কারো জীবনে,,যেমন অনিকেত এসেছে রূপকথার রাজকুমার হয়ে দূঃখীনি গরিবকন্যা শশীর জীবনে,,
মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে শশীর,,
কি হল,,হা করো,,
কথাটা শুনে শশীর অনিকেতের উপর থেকে মোহাচ্ছন্নতা কাটে,,
হা করে খাবার টা মুখে নিতেই অনিকেতের মুচকি হাসি দেখে শশী জিবে কামড় দেয়,,
এই রে আবার মনে কথা সব বুঝে গেছে,,কি ভাববে তোকে,,নিশ্চয়ই পাগল ই ভাববে,,
আমি কিছু বুঝি নি,,নাও পানি খেয়ে রুমে যাও,,হাসি দিয়ে বলে অনিকেত,,
শশী কোনোমতে ঢকঢক করে পানি খেয়ে তাড়াতাড়ি রুমে চলে যায়,,,
অনিকেত শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে,,পাগলী একটা,,,
এভাবে প্রায় এক মাস কেটে যায়,,,শশী এখন অনিকেতের বাড়ির সবাইকে আপন ভাবতে শুরু করেছে,,অনিকেতের সাথেও সম্পর্ক অনেকটা উন্নতি হয়েছে,,,দুজনের বিছানা আলাদা হলেও মনটা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে,,,
শশী! শশী! চিৎকার করে
জ্বী! দৌড়ে আসে
কোথাই থাকো বলো তো,,
আমি তো এখানেই ছিলাম? চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে বলে,,,
বিছানার উপর যে শাড়িটা আছে পড়ে রেডি হয়ে নাও তো?
কেন?
সবসময় কেন কেন করো কেন তুমি? মাঝে মাঝে চুপচাপ স্বামীর কথা শুনলে কি সমস্যা হয় বউ,,,
শশী আর কিছু বলে না,, জানে এখন কিছু বললে দুষ্টু মিষ্টি কথা শুনিয়ে লজ্জা দেবে,,
তার চেয়ে যা বলছে তাই চুপচাপ শোনা ভাল,,
শশী বিছানার উপর থেকে কাপড়টা হাতে নিয়ে দেখে নীল শাড়ি,, মাঝে কাঠ গোলাপের ফুলের কারুকাজ,,, দারুন চয়েস অনির,,
যাও গিয়ে পড়ে আসো,,,অনিকেতের ধমকে শশী কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে,,
কাপড় পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে চোখ কপালে শশীর,,
নীল পাঞ্জাবি তে আয়নার সামনে চুল নাড়িয়ে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত অনিকেত,,,খোঁচা খোচা দাড়িতে ফর্সা বলিষ্ঠ দেহের এই সুপুরুষের উপর জরাতে পেরে আজ বুঝি নীল পাঞ্জাবিটাও নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছে,,
শশী তো এইমুহুর্তে অনিকেত কে দেখে
মনের অজান্তেই বলতে লাগলো,,,
দেখেছি তো কতোবার তোমায়,,
তবুও মেটেনা তোমায় দেখার স্বাদ,,
প্রতিবার নতুন আরো নতুন হয়ে
ধরা দাও তুমি আমার হৃদগৃহে,,
হৃদয়জুড়ে তোলপাড় হঠাৎ হঠাৎ
শুধু তোমাকে দেখলেই এ মনে বার বার,,
বলো না কি আছে তোমাতে,,,
কেন হাজার বাধাতেও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি তোমার মায়াতে,,
এখন যে মনে হয় বাচা দায়,,
এক সেকেন্ডও তুমি বিহনে আমার,,
চলবে,,,