জীবনসঙ্গী
পর্ব ১৯
Writer Tanishq Tani
দুপুরে অনিকেত নিজের অফিসে চলে যায়,,নতুন কয়েকটা গান কম্পোজ করতে হবে,,,২ দিন পর সুইজারল্যান্ডে একটা কনসার্ট আছে,,ওখানকার প্রবাসীরা মিলে আয়োজন করেছে,,,দেশের আরো নামিদামি স্টার রা যাবে,,
অনিকেতের ভেতরে অন্যরকম এক্সাইটমেন্ট কাজ করে,,কনসার্টে যাবে সেই জন্য না,,শশীকে নিয়ে নিজের ড্রিম কান্ট্রিতে যাবে সেই জন্য,,,
এখনি হাজার রকম স্বপ্ন বুনতে থাকে,,প্রচন্ড ছেলেমানুষি কাজ করে ভেতরে,,ছোটবেলা ঈদের আগের দিন চাঁদ দেখলে যেমন খুশি লাগতো সেইরূপ কিছুটা অনুভূতি আসছে,,,
ব্রান্ডের দলের সবার সাথে আলোচনা সেড়ে ডেট ফিক্স করে অনি,,পরশু যাবে,,শশীকে নিয়ে যাবে শুনে বন্ধুরা খুব মজা করতে থাকে,,
অনির দলের অন্যরা গেষ্টহিসেবে হোটেলে থাকলেও অনি নিজের পছন্দের হোটেলে শশীকে নিয়ে নিজ খরচে থাকবে,,কনসার্টের চেয়ে বেশি গুরুত্ব শশীর সাথে একান্তে পছন্দের দেশে সময় কাটানোতে,,
অনির ফিরতে ফিরতে কিছুটা রাত হলো,,
শশীর ভেতরে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে,,ফারিহা তখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে,, কিন্তু একটা কথাও শশীর কানে ঢুকছে না,,মাথায় শুধু মিলার কথায় আসছে,,অনি এখনো ফিরলো না,,কই গেলো,,অনিকে ছাড়া কেমন খালি খালি লাগছে নিজেকে শশীর,,,
হঠাৎ গাড়ির শব্দ শুনে প্রান ফিরে এলো শশীর,,দৌড়ে দরজার কাছে ছুটে গেলো,,হ্যাঁ অনিকেত এসেছে,, চোখে মুখে খুশির ঝলক শশীর,,
অনিকেত মুচকি মুচকি হেসে শশীর কাছে আসে,,,
খুব মিস করছিলে বুঝি আমাকে বেগমসাহেবা!
জানি না,,বলেই দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে গেলো,,,
আচ্ছা মেয়ে মানুষ এমন কেন? সহজে কেন বলে দিতে পারে না নিজের অনুভূতি?
চোখে মুখে উপচে পড়ছে আমার লাগি তোমার প্রেম,,
তবুও কেন কিসের তরে এই দুর্ভেদ,,
আমি তো তোমারি!আমৃত্যু আজীবন
তাহলে বলতে কেন এতো সংকোচ
ভালোবাসি! ভালোবাসি!
রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগাতে লাগাতে বলে অনিকেত,,
শশী বিছানার উপর মাথা নিচু করে বসে শাড়ির আঁচল শক্ত করে ধরে বসে থাকে,,
অনিকেত পাশে বসে শশীর ঘারে হাত রাখতেই শশীর ঝাপিয়ে অনির বুকে আছড়ে পড়ে,,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে,,,
কাদছ কেন পাগলী?কষ্ট পেয়েছ দেরি করে ফিরেছি বলে,,
শশী মাথা হ্যাঁ সূচক নেড়ে অনির টিশার্টের বুকের অংশের কাপড়টা খামছে ধরে কাঁদে,,,
তুমি কেন এতো দেরি করলে অনি! তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া কতো একা একা লাগে আমার,,ভয় হচ্ছিল খুব,,হৃদস্পন্দন থেমে থেমে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল,,, কাঁদো কাঁদো স্বরে বলো শশী,,,
কেন ভয় হচ্ছিল? আমি তোমাকে একা ছেড়ে যাবো তাই? সয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তোমার থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না শশী,,আমি তোমার হয়ে গেছি,,সিলমোহর লেগে গেছে তোমার আমার সম্পর্কে,,,তুমি চাইলে তোমাকে ছাড়তে পারবো না আমি,,,
তাহলে এতোক্ষন দূরে ছিলে কেন? তুমি একটুও ভালোবাসো না আমাকে,,ছেলেরা শরীর পেলে সব ভুলে যায়,,তুমিও ভুলে যাবে একসময় আমাকে,,অবহেলা করবে হয়তো খুব,,তখন আর এভাবে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলাবে না,,খাইয়েও দেবে না ভালোবেসে,,তখন সব নেকামি লাগবে তোমার কাছে,,ডাল ভাত হয়ে যাবো আমি তোমার কাছে জানি,,অভিমানি সুরে বলে
বাহ! আমার বোকা গাধী বউটা দেখি খুব জ্ঞান রাখে,,এসব উল্টো পাল্টা বাজে কথা মাথায় কে ঢুকিয়েছে শুনি,,আমার ভালোবাসায় এতো অতিষ্ঠ হবে তুমি, তখন নিজেই বলবে এতো ভালোবাসো কেন?
তোমার ভালোবাসা আমার কাছে সাত রাজার সম্পদের মতো,,যাকে কারো সাথে শেয়ার করা কিংবা কখনো কম হোক তা চাইবো না,,তুমি ডাল ভাত না আমার জন্য। তুমি অমৃত আমার কাছে,,যার স্বাদ রং সুবাস সবকিছুকে হার মানায়,,বুঝলে বেগমসাহেবা শশীর নাক টেনে,,,
হুমমম,,শশী লাজুক হেসে বলে,,,
শশী! শশীর ঘারে থুতনি ঠেকিয়ে শশীকে জরিয়ে
হুমম! মাথা নিচু করে অনির হাতের আঙুল গুলো নিজের আঙুলের ভাজে নিয়ে,,
জানো আমার খুব ইচ্ছা ছিলো তোমাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের সবুজ ঘাসে অথবা বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়ের পাশে যাবো,এক চাদরে দুজন। তুষারপাত হচ্ছে চারপাশে,, আমার বুকের মাঝে উষ্ণতা খুজবে তুমি?
যাবে আমার স্বপ্নলোকের সেই দেশে? আমার স্বপ্ন কে সত্যি করতে?
শশী ঘুরে অনির দিকে তাকায়,,,
আমরা সুইজারল্যান্ড যাবো? সত্যি খুশির হাসি হেসে,,
হ্যাঁ,, অনিকেত প্রশস্ত হাসি হাসে শশীর হাসি দেখে,,
হ্যাঁ অনি আমি যাবো,,তুমি যেখানে নিয়ে যাবে,,তুমি সাথে থাকলে আর কিছু চাইনা আমার,,আমার জন্য শুধু তুমি তুমিই পরিপূরক,,, অনিকেতের গলা জরিয়ে ধরে,,,
অনিকেত শশীর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে এসে পরম আদরে ছুঁয়ে সমস্ত শরীরে সেই ছোয়ায় ভরিয়ে দেয়,,
চাঁদের আলোতে অনিকেতের বুকে পরম শান্তিতে ঘুমায় শশী,,
১ দিন পর প্লেনে ওঠে শশী অনি সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে,, এই প্রথম প্রিয় মানুষটার সাথে এতোদূর যাচ্ছে শশী,,ভয় নেই কোনো,,শুধুই বুকভরা ভালোবাসা অনির জন্য,,
প্লেন টেক অফ করার সময় শশীর কিছুটা ভয় লাগে। কিন্তু অনিকেত শশীর হাত শক্ত করে ধরে রাখায় ভয় কেটে যায় শশীর,,
শশী প্লেনে উঠে কিছু খেতে পারে না,,বমি বমি লাগে খুব,,শশী খায় না দেখে অনিকেতও কিছুই মুখে দেয় না,,
শশী অনিকেত কে খেতে বলায় অনি বলে
তোমাকে এ অবস্থায় রেখে খাওয়ার কথা চিন্তাও তো করতে পারি না,,
তুমি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করো ভালো লাগবে তোমার,,
শশী ঘুমানোর চেষ্টা করে,,কিন্তু পারে না,,
প্লেন ল্যান্ড করে জুরিখ শহরে এসে,,
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী শহর জুরিখ,,
অসম্ভব সুন্দর একটা শহর,,
এখানে পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়ে শশী,,মাথাটা খুব ধরেছে,,অনিও শশীকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়ে,,
চলবে,,,,