জীবনসঙ্গী
পর্ব ২১
writer Tanishq Tani
দেখো রিশাদ!তোমার এসব ফালতু কথা শোনার সময় বা ধৈর্য কোনোটাই নেই আমার? তোমার কি হলো না হলো তাতে আমার কি? তাই তুমি এখান থেকে চলে গেলেই খুশি হব আমি,,
শশী আমি বললাম তো মুখ থেকে একবার বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ,,আমি কথা দিচ্ছি আমি আর আমার চেহারা দেখাবো না তোমাকে,,,
ক্ষমা! এতো সহজে কি করে ক্ষমা চাইতে পারো তুমি রিশাদ? বিবেক বলতে কি কিছু নেই তোমার? কি করেছিলে আমার সাথে সব ভুলে গেলে? অবশ্য তোমার মতো পশুর আর কি বা করার থাকে,,তোমার মতো লোকের ছায়াও মাড়াতে চাই না এখন আমি,,মুখ দেখাও পাপ তোমার,,চলে যাও বলছি,,নয়তো অনিকেত কে আমি সব বলে দেবো? দাঁতে দাঁত চেপে কিছুটা উচ্চস্বরে বলে শশী,,
এতোদিন পর দেখে রিশাদের প্রতি ঘৃণাটা আরো বেড়ে গেছে,,এতোটা বেহায়া কি করে হয় মানুষ,, বেমালুম ভুলে গেলো কতোটা কষ্ট দিয়েছে ও আমাকে,,
যে পাপ করে নিজের অনুশোচনায় ভোগে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় কিন্তু যে পাপ করতে করতে শয়তানে পরিনত হয়,,পাপকাজকে অভ্যাস করে নেয় নিজের জীবনে তাকে ক্ষমা করাটাও এক ধরনের পাপ,,আর শশী এই মুহুর্তে অন্তত সেই পাপটা করতে চাচ্ছে না,,,কারন শশী জানে এসব সব রিশাদের নাটক,,রিশাদ বা রিশাদের কোনো নেকামো কথায় শশী এখন বিশ্বাস করে না,,,রিশাদ কে দেখে এমনিতেই রাগে গা জ্বলছে,,তার উপর ওর এসব নেকামো কথা শুনে মেজাজ ঠিক থাকছে না,,অনিকেত যদি থাকতো হয়তো পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিতো,,
শশী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবে ঠিক সেই সময় রিশাদ শশী হাত টেনে দুহাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে,,
রিশাদ! সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার তোমার? ছাড়ো বলছি,,শশী হাত ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করে,,
শশী প্লিজ শান্ত হও! আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না,,কিন্তু একটিবার আমাকে আমার কথা রাখার সুযোগ টা তো দেবে প্লিজ,,,
আমি তোমার কোনো কথায় শুনতে চাচ্ছি না রিশাদ! তুমি হাত ছাড়ো আমার!
ওকে ওকে! ছেড়ে দিলাম,,কিন্তু আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে,,না হলে এখান থেকে তোমাকেও নড়তে দেবো না,,
ভয় দেখাচ্ছ তুমি আমাকে? আমি তোমার মতো শয়তানকে ভয় পাই না,,কিছুই করতে পারবে না তুমি আমার,,
তুমি জানো না কি কি করতে পারি আমি তোমাকে পাবার জন্য ( মনে মনে বলে রিশাদ)
শশী! ঐ রাতে কি হয়েছিল আমি পরে শুনেছি,, আমি প্রচন্ড নেশায় তোমাকে মেরে আধমরা করে ফেলেছিলাম? নিজেও পরে ছিলাম বেহুশ হয়ে,,, মা বাবা ভেবেছিলো তুমি মরে গেছো,,আমাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানো জন্য তোমাকে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে দেয়,,
ঝুলানোর পর যখন তোমার গলায় টান পড়ে তুমি ছটফট করতে থাকো মুমূর্ষু অবস্থায়।তুমি বেঁচে আছ বুঝতে পেরে মা আবার তোমাকে নামিয়ে নেয়,,আমাদের ঘার থেকে ঝামেলার কমানোর জন্য মা চাইনি তোমার মৃত্যু হোক,,কারন মায়ের মনে ভয় ছিলো যদি পুলিশ সত্যিটা জানতে পারে? তবে কেউ বাঁচতে পারবে না,,তাই মা তোমাকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়,,সাথে সাথে আগের চালাকি করে সই করানো তালাকনামাটা পুলিশের হাতে দিয়ে তোমার চরিত্রে দোষারোপ করে পুলিশ ও তোমার পরিবারকে বিশ্বাস করায় তুমিই নিজেই তালাক দিয়েছ আমাকে,,
শশীর মাথা ঝিমঝিম করে,,মানুষ কতোটা নিচে নামলে আরেকটা মানুষের সাথে এমন করতে পারে,,চুপচাপ দাড়িয়ে রয়,,যেন পুরোনো ক্ষতগুলো আজ আবার নতুন করে ব্যথা দিতে থাকে,,,
শশী বিশ্বাস করো আমাকে,,আমি যা করেছি নেশার ঘোরে আর বাবা মার উপর জিদ করে,,আমি ভেবেছিলাম বিশাখায় আমার জীবনের সব,,ওর জন্য আমি তোমার প্রতি কতো অন্যায় অত্যাচার করেছি,,
তুমি যাওয়ার পর আমার নেশার পাগলামো আরো বেড়ে যায়,,বাবা মা সহ্য করতে না পেরে রিহাব সেন্টারে ভর্তি করায়,,৬ মাস ছিলাম ওখানে আমি শশী,,এই ৬ মাসে তোমাকে কতোশত বার মনে করেছি আমি জানি? পাপের অনুশোচনা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে আমাকে,,একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে আমার শশী,,আমি তোমাকে সত্যি বড্ড ভালোবাসি,,কিন্তু এই কথাটা বুঝতে আমার অনেক দেরি হয়ে গেলো,, জীবনের মূলবান সম্পদ হারিয়ে ফেলেছি আমি,,পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফকির আমি,,শশীর সামনে হাটু মুড়ে কাঁদতে থাকে রিশাদ,,
শশী কি বলবে বুঝতে পারে না,,রিশাদকে এখন ঘৃণাও করতে পারছে না,,ওর পাপের শাস্তি তো ওর অনুশোচনায়,,, আবার কেন যেন বিশ্বাসও করতে চাচ্ছে না মন ওকে,,
তুমি জানো শশী? তোমার শরীরের গন্ধ আজও আমার ভেতর নেশা জাগায়,,সেই মিলনের দিন রাত এখনো আমার চোখে ভাসে,,আরেকটু অপেক্ষা করতে পারলে না আমার জন্য,,,এতো ঠিনকো ঠুনকো ছিল আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা,, শশী ফিরে এসো আমার জীবনে প্লিজ! আমি তোমাকে চাই,,আবার আগের মতো করে,, শশীর হাত ধরে কেঁদে বলে,,
রিশাদের এমন ধরনের কথা শুনে শশীর অসস্তি লাগে,,বিরক্তও লাগে,,নোংরা লাগে ওর মুখের ওসব কথা শুনতে,,,
আর কথা না বাড়িয়ে শশী হুট করে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ঢোক গিলতে থাকে,,,
এ কোন বিপদ আসলো জীবনে,,ভালোই তো ছিলাম,,রিশাদ কেন ফিরে এলো,,আমি তো চাই না আর রিশাদকে,,কিন্তু ওর চোখের পানি আমার সহ্য হয় না,,কি করবো এখন,,
এদিকে হঠাৎ কেউ এসে রিশাদের কাঁধে হাত রাখায় রিশাদ কিছুটা চমকে যায়,,পেছন ফিরে তাকাতেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসি দেয়,,
বাহ! ভালোই তো অভিনয় জানো তুমি রিশাদ,,শশীর রোমাঞ্চের তো ১২ টা বাজিয়ে দিলে,,বেচারি কতো আশা করে এখানে এসেছিলো? তোমার জন্য তো সব আশা দুঃশ্চিতায় রূপ নেবে,,বেচারি,,আজকের পর থেকে আর হাসবে না প্রান খুলে,,
ও হাসবে! তবে সেই হাসির কারন অনিকেত নয় এই রিশাদ হবে,,
তোমাকে ধন্যবাদ শশীকে আবার আমাকে ফিরিয়ে পেতে সাহায্য করায়,,এতোটা দিন হন্নে হয়ে খুজেছি,,কতো অনুনয় বিনয় করেও ওর পরিবারের কাছ থেকে ওর খোজ পাই নি,,তুমি আমাকে সেই খোজ দিলে,,কৃতজ্ঞ আমি তোমার কাছে,,
কি চাও তুমি?
তুমি কি দেবে আমাকে,,তোমার মতো লোকের কি আর সাধ্য আছে আমাকে দেওয়ার,,আমার যা নেওয়ার আমি আপসে নয়তো ছিনিয়েই নেই,,,
বলেই চলে যেতে লাগলো,,,
মিলা? ওয়েট,,সত্যি করে বলো তো স্বার্থ টা কি তোমার?পরোপকারী মেয়ে তুমি যে নও তা অন্তত বুঝি।অনিকেত কে পাবার জন্য এতো নাটক তোমার তাই না? এই জন্যই আমাকে আবার এতোদিন পর তোমার প্রয়োজন হলো,,
হ্যাঁ! হ্যাঁ! অনিকেত কেই প্রয়োজন আমার,,ওকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না,,আর সেই অনিকেতের বাহুতে অন্য কেউ থাকবে এটা আমি মেনে নেবো কি করে বলো,,আমার চোখে ঘুম আসে না আজ ৭ দিন,,অনিকেত কেন বুঝলো না আজও আমার ভালোবাসা,, কেন এভাবে দূরে ঠেলে দিলো,,কোনো জিনিস আপষে না পেলে সেই জিনিস জোর করে আদায় করে নেওয়া মিলা ইমতিয়াজের জন্য ফরজ,,যা আমার তা শুধুই আমার,,
এতোটা বছর ওকে পাওয়া জন্য ওর শত অপমান ইগনোর সহ্য করেছি,,পাপা কে ছাড়া এতোদূর এসে থাকছি জাস্ট বিকজ হিম,,, ও শশীকে বিয়ে করে সুখে থাকবে?আর আমি বসে বসে স্যাড সং শুনে কাদব,,আমার যা হারাবার গেছে হারিয়ে টাইপ?
নেভার! মিলা আলাদা ধাতুর তৈরি,,মিলা ইমতিয়াজ নাম আমার,,নিজের জিনিসে মাছি পড়লে কি করে ফেলতে হয় তা আমি জানি,,
তোমাকে একটা সুযোগ দিলাম।আপোষে ওকে অনির জীবন থেকে সরিয়ে নাও,,নয়তো ওর কপালে শনি আছে বলে দিলাম,,
গট ইট,,
তুমি শশীর কোনো ক্ষতি করবে না,,আমি ওকে চাই,,তোমার অনিকেত দরকার আর আমার শশী,,তোমার টা তুমি আদায় করে নাও,,আমার টা আমিই নিবো,,
গুড চলো এখান থেকে,,অনিকে একটা সারপ্রাইজ তো দিতে হবে,,আজ থেকে অনিকে নিজের করে নেওয়ার মিশন শুরু আমার,,,অনেক ছাড় দিয়েছি আর না,,
শশীর চোখে কান্নাও আসছে না আতঙ্কে,,রিশাদই তো ওকে জীবন থেকে ছুড়ে ফেলেছিলো তবে এখন আবার কেন ফিরে এলো,,,অনিকেত কি কথাটা বলবো? না থাক,,যদি কিছু মনে করে,, আর রিশাদের নাম তো শুনতেই পারে না,,কতো আশা নিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে,,শেষে মুডটাই নষ্ট হয়ে যাবে,,
রাতে অনিকেত খুব ফ্রেশ মেজাজে হোটেলে ফেরে,,আসার সময় কাছের পাকিস্তানি হোটেল থেকে বিরিয়ানী, কাবাব,তন্দুরী সহ আরো কয়েকপদ নিয়ে আসে,, অনিকেত জানে শশী এখনো না খেয়ে বসে আছে,,,
রুমে ঢুকতেই ঘরটা অন্ধকার লাগে,,বিছানায় গুটিশুটি মেরেশুয়ে আছে শশী,,,দরজা বন্ধ করে খাবারের পার্সেল টা টেবিলের উপর রেখে শশীর মাথার কাছে গিয়ে বসে অনিকেত,,,
শশী! এই শশী! ঘুমিয়ে গেছো? মাথায় হাত রেখে বলে,,,
না! একটু চোখ লেগে আসছিলো,,, কখন এলে তুমি? আড়মোড়া ভেঙে ওড়না টা বুকে নিয়ে বলে,,,
এই তো এইমাত্র,,, শরীর কি খারাপ লাগছে তোমার?শশীর দুগালে হাত রেখে বলে,,
না তেমন কিছু না,,মাথাটা খুব ধরেছে,,হঠাৎ হঠাৎ মাথা ঘুরে ওঠে,,ঝিম ঝিম করে থেকে,,
ডাক্তারের কাছে যাবে?
না,, জার্নি কারনে এমন হয়েছে,,ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে,,
হুমম,,খাওয়াও তো হচ্ছে না ঠিক মতো তোমার,,চলো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেবে,,
শশী উঠে ফ্রেশ হতে গেলো।অনির মোবাইলে টুং করে ম্যাসেজের শব্দ হতেই অনি ওপেন করতেই দেখে একটা এমএমএস আর কিছু ছবি,,চোখ মুখ দিয়ে আগুন বের হতে থাকে,,মুখটা কালো হয়ে যায়,,
শশী ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে,,অনিকেত পাশে বসে কি যেন ভাবছে?
তুমি খাবে না?
হ্যাঁ তুমি শুরু করো,,
শশী বিরিয়ানি মুখে দিতেই পেটে মোচর দেয়,,দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,,,
অনিকেত চিন্তিত হয়ে পেছন পেছন ওয়াশরুমে যায়,,,
কি হলো খুব কি খারাপ লাগছে,,চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়,,,
না অনিকেত,, আমি ঠিক আছি,,হয়তো গ্যাস্ট্রিকের জন্য এমন হচ্ছে,,একটা ট্যাবলেট খেলে ঠিক হয়ে যাবো,,ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না,,
হুমম,,যা ভালো বোঝো,,,বলে চলে আসলো শশীর কাছ থেকে,,,
শশীর কেন যেন অনির কথার সুর অন্যদিন থেকে আলাদা লাগলো,,ঘুম থেকে ওঠার আগেও তো ঠিক ছিলো অনি,,তবে কি হলো হঠাৎ ওর,,
চোখ মুখে পানি দিয়ে অনির পাশে বসলো,,
কনসার্টের কি খবর?কবে হবে,,
ভালো,,,কাল হবে,,
কবে ফিরবো তাহলে দেশে আমরা?
কেন আমার সাথে সময় কাটাতে ভালোলাগছে না বুঝি আর?
কি বলছ তুমি? কি হয়েছে অনিকেত তোমার?এমন করে কেন বলছ,,
কিছু না,,আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি,, ফিরতে সময় লাগবে আমার। ঘুমিয়ে পড়ো তুমি,,বলেই হনহন করে চলে গেলো রুম থেকে,,
টেবিলে খাবার ঐ ভাবেই পড়ে আছে,,অনিকেতও কিছু মুখে দেয় নাই,,,
শশীর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে,,,
চলবে,,,