জীবনসঙ্গী – পর্ব ৩

0
344

জীবনসঙ্গী
পর্ব ৩
writer Tanishq Tani

লজ্জা পাচ্ছো কেন শশী,,মোবাইলে তো কতো কিছু বলো,,অথচ সামনা সামনি এতো চুপ,,শশীর দিকে এগোতে এগোতে,,

কই,,না তো,শশী নিচে তাকাতে তাকাতে,,

মিথ্যা বললে তোমার মুখ যে লাল হয়ে যায় তা কি জানো শশী?শশীকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে,,,

শশীর হাত পা রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে রিশাদে স্পর্শে,,, কিছু বলার মতো স্বর গলা থেকে বের হচ্ছে না,,

আমি কি বাঘ না ভাল্লুক শশী,,এভাবে কাপছ কেন?শশীর গালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে,,
পুরো শরীর শিহরিত হয় শশীর

আমি কলেজ ড্রেস চেঞ্জ করে আসি,,আপনি বসুন,,আস্তে করে ভেঙে ভেঙে কথাগুলো বলে,,

আমি থাকতে এতো কষ্ট কেন করবে তুমি,,

জ্বী,,শশী রিশাদের চোখের দিকে চমকে তাকাতেই

রিশাদ নিজের দুওষ্ঠ শশীর ওষ্ঠে বিলীন করে দেয়,,,
সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরে নিজের সাথে শশীকে,,

বেশকিছুক্ষন পর শশীকে ছেড়ে শশীর মুখটা দুহাতে ধরে মুচকি হাসে রিশাদ,,

তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে শশীকে কোলে তুলে নেয়,,

শশীর কাছে স্বপ্ন লাগে সব কিছু,,

রিশাদের বুকের ভালোবাসার সমুদ্রে হারিয়ে যায় শশী,,লুটিয়ে দেয় নিজেকে রিশাদের কাছে,,,

দুপুরে মা এসে ঘরে খাবার দিয়ে যাই,,

রিশাদ একটু লাজুক স্বভাবের,,সবার সাথে তেমন খোলামেলা না,,আমার মা কে মা ডাকতেও তার লজ্জা খুব,,আসার পর থেকে রুম থেকে একবারটিও বের হয় নি,,আমাকেও যেতে দিচ্ছে না,,

খাবার প্লেটে শশী বেড়ে দেয়,,

শুনতাম বিয়ে হলে বউ নাকি স্বামীকে খাইয়ে দেয়,,আমার বউ তো শুধু বেড়েই দিচ্ছে,, মুখ গোমড়া করে বলে রিশাদ,,

শশীর তো রিশাদের কথা শুনে লজ্জায় লাগে,,

খাওয়াবা না শশী আমাকে,,আআআ খাওয়াও না,,

শশীর লজ্জা লাগলেও রিশাদের কষ্ট লাগবে জেনে সব লজ্জা ভুলে রিশাদকে খাইয়ে দেয়,,

এবার আমি খাওয়াবো তোমাকে,,

শশী অল্প করে মুখ খুলতেই রিশাদ খাইয়ে দেয়,,

শশী রিশাদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দেয়,,

কি হলো শশী! কাদছ কেন? ঝাল লেগেছে,, কোথাও কষ্ট হচ্ছে,,

শশীকে বুকে টেনে নেয় হাত ধুয়ে,,

কাঁদছ কেন পাগলী,,

আমার ভয় হয় রিশাদ,,,

কিসের ভয়,,আমি আছি তো তোমার পাশে,,

এতো সুখ কি আমার কপালে সইবে,,

সইবে মানে কি সইয়ে তো গেছে,,এই আমার বুকে তুমি আছো,,

আমাকে এখান থেকে কখনো ছুড়ে ফেলে দেবেন না তো আপনি,,আমার বাবা যেমন আমার মাকে ছেড়ে চলে গেছে,,আপনিও এমন করবেন না তো আমার সাথে,,আমার যে খুব ভয় করে রিশাদ,,

আমাকে তোমার তাই মনে হয় শশী,,তোমাকে আমি বিয়ে করেছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য? তোমাকে আমার সারাজীবন চাই নিজের করে,,ফের এসব কথা বলো না শশী,,

আমার মায়ের মতো এতো ধৈর্য সাহস আমার নেই রিশাদ,,আমি যে আপনাকে নিজের ভালোবাসা,সতিত্ব,জীবন সব সঁপে দিয়েছি,,
আমার তো আর কিছুই নাই নিজের বলতে,,

আমিই তো পুরোটা তোমার হয়ে গেলাম শশী,,আর কি চাই তোমার,,

আমাকে কথা দিন,,আমাকে ধোঁকা দিবেন না,,ভুলে যাবেন না কোনোদিন,, আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই চলবো,,তবু ছেড়ে যাবেন না,,,

কথা দেওয়া লাগবে কেন,,আমার প্রতি বিশ্বাস নেই তোমার,,

বিশ্বাসের কথা না,,আপনি রাগ করবেন না প্লিজ,, আমার শান্তির জন্য কথাটা দিন আমাকে,,

ঠিক আছে দিলাম কথা,এবার একটু হাসো,,

শশী রিশাকে জরিয়ে ধরে খুশিতে,,

দিনে একশবার এমন কথা দিতে পারি যদি কেউ আমাকে কথা দেয়,,প্রতিবার সে আমাকে ঠিক এভাবেই জরিয়ে রাখবে,,,

শশী লজ্জায় খিলখিল করে হেসে দেয়,,
রিশাদ মুগ্ধ নয়নে শশীর দিকে তাকিয়ে থাকে,,,

এভাবে প্রায় মাঝে মাঝে আসতো রিশাদ,,আর মোবাইলে তো দুমিনিট পর পরই কথা হতো দুজনের,,

চাতক চাতকীর মতো শশী আর রিশাদ,, রিশাদ ফোন না দিলে শশীর কোনোকিছুই ভালো লাগতো না,,মিস কল দেওয়ার পর কল ব্যাকে দুমিনিট দেরি হলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো শশী,,

তারপর রিশাদ তার মিষ্টি বউটার মান ভাঙাতো নানা ছলা কলায়,,

প্রায় ৬মাস পর শশীকে নিজেদের বাড়িতে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নেওয়ার তোরজোর শুরু হলো ,,,

যদিও কথা ছিলো না অনুষ্ঠান করার কিন্তু রিশাদের বাবা মা একপ্রকার প্রেশার দিতে থাকলো,,রিশাদ নিজেও শশীকে কিছুটা চাপ দিলো ওদের স্টাটাসের কথা বলে,,,
খুব কষ্ট লেগেছিলো শশীর,, রিশাদ এমনটা করবে ও ভাবতেও পারে নি,,
ঐ কয়দিন রিশাদ ভালো করে কথাও বলে নি,,
কিন্তু ঐ সময়টাতে শশীর রিশাদের সাপোর্টের খুব দরকার ছিলো,,,

মেয়ের সুখের জন্য শশীর মা নিজের গয়না বিক্রি করে লোন নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করলো,,,

কিন্তু এর মধ্যে রিশাদের মা একদিন ফোন দিয়ে শশীর মাকে বললো,,

বেয়াইন আমরা তো তেমন কিছুই চাই নি,,আমাদের হিরার টুকরো ছেলেটাকে আপনাদের দিয়ে দিলাম,,তো ছেলে তো আপনাদেরই ছেলের দাদীর খুব ইচ্ছা ছেলেকে আপনারা একটা বাইক আর হিরার আংটি দিবেন,,আসলে বুঝেন ই তো রিশাদকেও মানুষের সাথে মিশতে হয়,,মানুষ যদি জিজ্ঞেস করে,, কিরে রিশাদ তোর শ্বশুরবাড়ির লোক কি দিয়েছে,,যদি কিছু না দেন তখন কি মুখ থাকবে আপনার জামাতার বলেন,,আর মেয়েকে তো আর আপনারা খালি হাতে দিবেন না তা তো জানিই,,,

শশীর মার হার্ট ফেল হওয়ার উপক্রম,,

এতো টাকা কই পাবো আল্লাহ ,,,
কমসে কম ৫ লাখ টাকার জিনিস,,
মাথায় হাত দিয়ে ভেঙে পড়ে শশীর মা,,

শশী দরজার পিছনে দাড়িয়ে মায়ের অসহায়ত্ব দেখে দুচোখের অশ্রু ফেলে,,

আচ্ছা এমন নিয়ম কেন সমাজে,,
প্রত্যেকের সন্তানকেই বাবা মা একই কষ্টে ত্যাগ ভালোবাসায় বড় করে,,তাহলে মেয়েদের বাবা মাকে কেন সব কিছু দিয়ে মেয়েকে বিদায় করতে হবে,,কেন একটা মেয়ে জন্ম নিলে বাবা মার কপালে চিন্তার বিন্দু ফুটে উঠবে,,
মেয়েদের যেমন খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছে,, ছেলেদের বেলায়ও তো তাই করেছে,,

ছেলেপক্ষ এতো কিছু কেন দাবি করে,, তারা কি বউ নেয় নাকি একটা কিনলে একটা ফ্রি এই অফার চাই,,,,

কিছুই চাই না বলে বলে বাবা মার শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নেয় জোর করে,,,

বাড়িতে এনিয়ে সবার মাঝেই দুশ্চিন্তা বিরাজ করে,,মায়ের তো প্রেশার বেড়ে অবস্থা কাহিল,,,কি করবে আমার হতভাগী মা,,
মামী তো রিশাদের মায়ের কথা শুনে মামাকে
একহাত নিয়েছে,,, খুব ঝগড়া হয়েছে মামার সাথে,,একদিক থেকে ঠিকই আর কতো করবে আমাদের জন্য,,
মামীর সংসারে পরগাছা হয়ে বেঁচে আছি,,
সারাজীবন মাকে মামীর খুটা শুনে মাথা নিচু করে চলতে হলো,,,

আজ প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে নিজের মেয়ে হয়ে জন্মানোতে,,মেয়ে কি বাজারের পন্য যাকে সমাজে টাকা দিয়ে জিনিস দিয়ে বিচার করা হয়,,নিজ্বতা বলতে কিছুই নেই,,বাবা মায়ের চিন্তার কষ্টের কারন হতে হয় বার বার,,,নিজেকে মেয়ে বলে মনে হয় মনে হয় কলুর বলদ,,

মাকে ওষুধ খাইয়ে ঘরে এসে মোবাইল টা চেক করে না আজ সারাটাদিনে একবারও কল করে নি রিশাদ,,,একা লাগে শশীর খুব,,নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে,,

কিন্তু অসহায় মা আর ছোট ছোট ভাই বোনের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসতেই সাহস পায় না মরতে,,,

রিশাদকে কল করবে কি না ভাবে,,খুব অভিমান হয় রিশাদের উপর,,এই এতো ভালোবাসা তাহলে আজকে সারাটা দিন একটু খোজ নিতে পারলো না,,
কল করবে না করবে না ভাবত ভাবতে কল করে শশী,,রিশাদের সাথে কথা বলাটা যে নেশার মতো হয়ে গেছে,, কি করে থাকবে কথা না বলে,,

কয়েকবার রিং বাজার পর কল ব্যাক করে রিশাদ,,,

হ্যাঁ বলো,,রূঢ় ভাবে বলে,,

খুব কি বিজি আপনি,,,

হ্যাঁ বিজি,,জুরুরি কথা থাকলে বলো,,নয়তো কাটো কল,,

ঠিক আছে,,রেখে দিচ্ছি,, ভালো থাকবেন,,শশীর দুচোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরে,,,

ঠিক আছে বলার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কলটা কেটে দেয় রিশাদ,,,

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here