#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৩ (অংশ ১)
.
প্রচন্ড ক্লান্তি, সাথে পুরো শরীর ব্যাথা নিয়ে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে অর্ধ রোগী হয়ে শুয়ে আছি বিছানায়। এটা নতুন কিছু নয়। বরাবরই লং জার্নিতে আমার শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। একটু আগে ফুপি এসে এক গ্লাস লেবুর শরবত খাইয়ে দিয়ে গেছে আমাকে। তাতে কিছুটা হলেও শান্তি অনুভব লাগছে। মিনিট বিশেক আগে এসে পৌঁছেছি ফুপির বাসায়। অবশ্য ফুপি বা ফুপার বাসা বললে ভুল হবে, এটা পুরোপুরিই তাসফি ভাইয়ার বাসা বলা চলে। তাসফি ভাইয়ার উনিশ তম জন্মদিনে তার দাদু গিফট হিসেবে এই ছেট-খাটো ডুপ্লেক্স বাসাটা ওনাকে দেয়।
তাসফি ভাইয়া ছোট থেকেই অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন। এসএসসি পর্যন্ত নিজ জেলা শহরে পড়াশোনা করলেও এসএসসির পর চলে আসেন ঢাকায়। দুজন বন্ধু সহ একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকলেও আট-নয় মাস পর উনার দাদু এই বাসাটা বানিয়ে গিফট হিসেবে দেন। আমাদের পরিবারের মতোই ওনার পরিবারেও তাসফি ভাইয়া একমাত্র ছেলে। চাচাতো, ফুপাতো ভাইবোন বলে কেউ নেই উনার। যারা আছে তারা ফুপার দূরসম্পর্কের ভাইবোনের ছেলেমেয়ে। দাদু ওনাকে অনেক বেশিই ভালোবাসতেন। তাসফি ভাইয়া ঢাকায় চলে আসার পর দাদু যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না তার একমাত্র আদরের নাতী ভাড়া বাসায় থাকবে। তারপরই জায়গা কিনে এই ছোটো খাটো ডুপ্লেক্স বাসাটা বানিয়ে দেয়। ফুপিরা একবছরে মতো এখানে থাকলেও পরে চলে যান জেলা শহরে। আব্বু ও বড় চাচার সাথে ফুপার যৌথ ব্যাবসার জন্য ওখানেই থাকতে হয়। তাসফি ভাইয়া ও দাদু এখানে থাকতেন। পাঁচ বছর আগে দাদু মারা যাবার পর উনি একাই থাকেন এখানে আর ফুপা ফুপি মাঝে মাঝে এসে ঘুরে যান। এখন থেকে আমার ঠিকানাও এটাই হলো।
তাসফি ভাইয়া থাকলেও প্রথম প্রথম এখানে মানিয়ে নিতে পারবো না জন্যই ফুপি এসেছে সাথে। বড়মা ও আম্মু আসতে চাইলেও পারে নি, তাই সবাইকে চিন্তামুক্ত করে ফুপিই চলে এসেছেন। ছেলের কাছেও কিছুদিন থেকে যেতে পারবেন বলে।
শুয়ে থাকতে থাকতে চোখ লেগে এসেছে অনেকটা। আর একটু পরেই হয়তো গভীর ঘুমে ডুবে যেতাম, কিন্তু মুখের উপর হালকা গরম বাতাস আছড়ে পড়ায় ঘুমটা আর গভীর হলো না। চোখ বন্ধ থাকায় বুঝতে পারলাম না কিসের বাতাস। কিন্তু মনে হচ্ছে ঠিক বাতাস না কারো গরম নিশ্বাস আছড়ে পরছে আমার মুখে। কিছুটা ভয় নিয়েই ফট করে চোখ খুলে তাকালাম। মুখের অতি নিকটে তাসফি ভাইয়ার মুখটা দেখে চমকে উঠলাম আমি। কিছুটা ভয় পেলেও চিৎকার করলাম না। হুর মুর করে উঠতে নিলাম আর ঠাস করে মাথায় একটা বারি খেলাম ওনার মাথার সাথে। সাথে সাথে মাথায় হাত চলে গেল। মাথায় হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে উঠে বসে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে। এত জোরে লাগার পরেও উনার কোন হেলদোল নেই। এতক্ষণ আমার দিকে ঝুকে থাকলেও এখন সোজা হয়ে বসে বিরক্ত মাখা মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ভাবতে লাগলাম এটা ওনার মাথা না অন্যকিছু, বাড়ি খাওয়ার পর থেকে যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখছি আমি। আর উনি দিব্যি ভাব নিয়ে বসে আছে।
“আ..আপনি এখানে? কি ক্ দেখছেন?”
ওনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম। উনি গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,
“তোকে আবার নতুন করে কি দেখার আছে? মরে টরে গেছিস কি না সেটাই চেক করছিলাম। যে ভাবে মৃগী রোগীর মতো অবস্থা হয়েছিল তোর, তাই দেখতে এলাম আর কি। ভাবলাম হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে কি না।”
“আপনি একটু বেশিই ভেবে ফেলেছেন না? আমি মোটেই তেমন একটা অসুস্থ হয় নি। এমন একটু সবারই হয়ে থাকে।”
“বাকি সবার মতো তো আর তোর অবস্থা ছিলো না। মাতালের মতো যেভাবে ঢুলছিলি, ভাগ্যিস মেয়ে পাচারকারী ভেবে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় নি আমাকে।”
বলেই আফসোস করতে লাগলো তাসফি ভাই। ওনার কথায় দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
“আপনি এবার খুব বেশিই ভাবনা ভাবতে শুরু করেছেন। কেন এসেছেন এখানে? এখন যান এখান থেকে, আর আমাকে একটু শান্তিমতো ঘুমাতে দেন।”
“তুই যে দিন দিন চরম লেভেলের বেয়াদব হয়ে গেছিস তার প্রমাণ আবারও দিলি। আমার বাড়িতে, আমার রুম থেকে আমাকেই বের হয়ে যেতে বলিস বেয়াদব।”
ওনার কথায় থতমত খেয়ে গেলাম আমি, কিন্তু পাত্তা দিলাম না তেমন। হু্ বললেই হলো নাকি ওনার রুম? ফুপি তো আমাকে এই রুমটায় দেখিয়ে দিলো, আর এক নজরে অনেক বেশিই পছন্দ হয়েছে রুম। আমি তো কিছুতেই এই রুমটা বে-দখল করবো না, উনি মিথ্যা বলে তাড়াতে চাইলেও না। তাই কাট কাট গলায় বলে উঠলাম,
“উ্হুম! বললেই হলো নাকি এটা আপনার রুম, আপনার বলা মিথ্যা কথা মনে হয় আমি ধরতে পারবো না। আপনার রুম হলে ফুপি কিছুতেই এ রুমে আনতো না আমাকে।”
“তোর মতো গাঁধার বিশ্বাস করা না করা দিয়ে আমার কিছুই হবে না। গাঁধা গাঁধাই থাকবি তুই।”
আর থাকলেন না এখানে, সোঁজা উঠে আলমারি খুলে ওনার কাপড় বের করলেন। তারপর টাওয়ালটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো। আমি বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি সেদিকে। এটা ওনার রুম? তা না হলে ওনার জামা-কাপড় এ-রুমে কেন থাকবে? চারদিকে এবার ভালোভাবে নজর দিলাম। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে যা বুঝতে পারলাম এটা সত্যিই ওনার রুম।
.
.
(চলবে…..)
ফেসবুকে কোন একটা সমস্যার কারণে ফেসবুক লাইট থেকে আপ দিতে হলো। তাই চাইলেও এর চেয়ে বেশি দিতে পারলাম না। বাকি অংশ আগামীকাল দিবো।🖤