তুমি বললে আজ – পর্ব ১৪

0
650

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৪

.
“কি রে রূপা, এভাবে খম মে-রে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কিছু হয়েছে?”

ফুপির আওয়াজে ঘোর কাটলো আমার। এতক্ষণ কোথায় হাড়িয়ে গেছিলাম নিজেই জানি না, কি ভাবলাম সেটাও ঠিক মনে করতে পারছি না। শুধু বারবার তাসফি ভাইয়ার সেই কথা গুলোতেই এসে আঁটকে যাচ্ছি। কথাগুলোর সমীকরণ মেলাতে গিয়েও বারংবার ব্যার্থ হচ্ছি। উনি মন থেকেই চান আমি ওনার রুমে থাকি? নাকি আবারও তার বিখ্যাত বিখ্যাত খোঁটা দেবার পয়তারা করছেন? না… উনি কিছু না বললেও ওনার সাথে থাকা সম্ভব না আমার। ওনাকে দেখে আগের চেয়ে ভয়টা কেটে গেলেও একসাথে থাকা সম্ভব নয়, পরে দেখা যাচ্ছে বুকের বা পাশের টিপটিপ শব্দ দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হচ্ছে আর সেখান থেকে হার্টের রোগী হয়ে বিনা টিকিটে উপরে চলে যেতে হচ্ছে।

“কি রে? কিছু বলছিস না কেন? শরীর কি আরও খারাপ লাগছে? তাসফি কে বলবো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে?”

আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো ফুপি। বজ্জাত লোকটার চিন্তা বাদ দিয়ে ফুপির দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিলাম। বললাম,

“না ফুপি, এখন একদম ফিট আছি। কোথাও নিয়ে যেতে হবে না।”

“তাহলে কি এত ভাবছিস? এখনও ফ্রেশ হতে পারিস নি? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে কিছু খেয়ে নে। সারাদিন জার্নি করে তো কিছু মুখে তুলিস নি।”

খাবারের কথা শুনে খিদে পেয়ে গেল অনেক। জার্নিতে থাকাকালীন সময়টা হাজার চেষ্টা করেও গলা দিয়ে খাবার নামে না আমার। বগুড়া থেকে ঢাকা আসার ৫-৬ ঘন্টার জার্নিতে ফুপি ও তাসফি ভাইয়া জোর করেও কিছু খাওয়াতে পারে নি আমায়। একটাই ভয়, যদি বাসের এতগুলো মানুষের সামনে বমি করে দেই, তাহলে? তাহলে আমার ইজ্জতের ছিটে ফোঁটাও থাকবে না। এখন খাওয়ার কথা শুনে খিদেটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এখন কিছু একটা না খেতে পারলে শান্তি নেই, তার আগে ফ্রেশ হওয়াটা জরুরি। তাই লাগেজটা নিতে নিতে ফুপিকে বললাম,

“সত্যিই এখন অনেক খিদে পাচ্ছে ফুপি। আগে ফ্রেশ হয়ে নেই, চলো আমাকে রুম দেখিয়ে দাও।”

“ওও মা… কিসের রুম দেখিয়ে দিবো তোকে আবার?”

“কি আবার? আমি থাকবে যে রুমে সে রুম দেখিয়ে দিবা। ওই রুমেই একেবারে এগুলো রেখে ফ্রেশ হয়ে নেই।”

আমার কথায় হাসলো ফুপি। বললো,

“কেন রে? এ-রুমটা কি তোর পছন্দ হয় নি? এখানেই তো থাকবি।”

এবারো চমকে উঠলাম কিছুটা। ফুপিও দেখি একই সুরে তাল মেলাচ্ছে। তাহলে কি তাসফি ভাইয়া অন্য রুমে থাকবেন? সেজন্যই কি তাসফি ভাই ও ফুপি আমাকে এ-রুমে থাকার কথা বলছে। হঠাৎ আনন্দে ছেয়ে গেল আমার মনটা। ইস্ একথা তো আমি ভাবিইনি। তবুও শিয়র হবার জন্য ফুপিকে বললাম,

“এটা তো তাসফি ভাইয়ার রুম। তোমার ওই বজ্জাত রাগী ছেলে কি আমায় ওনার রুমে এলাউ করবে? আর আমাকে ওনার রুমে থাকতে দিয়ে উনি অন্য রুমে থাকতে পারবেন তো?”

আমার কথায় হেসে উঠলো ফুপি। মনে হলো কোন মজার কোন কথা শুনিয়েছি ফুপিকে। আমার মাথা আস্তে করে বারি মেরে বললো,

“তাসফি ঠিক বলে, গাধা তুই। সহজ কথা কিছুতেই বুঝতে চাস না কিন্তু হ্যাঁ কঠিন কথাগুলো ঠিকই ধরে ফেলিস।”

“ফুপি…. তুমি ও?”

“তা নয়তো কি? তাসফি অন্য রুমে থাকবে কেন? আর ও এখানে থাকলে তুই থাকবি না কেন এখানে? শোন বুড়ি, তাসফি আর শুধু তোর ভাই হয় না, এখন তোদের সম্পর্কের আলাদা একটা নাম হয়েছে। যে ভাবেই হোক জুড়ে গেছিস একে অন্যের সাথে। ছোট থেকে তো তাসফিকে ভাই হিসেবে দেখে এসেছিস, ওর করা শাসন দেখেছিস, রাগ দেখেছিস। একটাবার সে সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে স্বামী রুপে দেখার চেষ্টা কর, তাহলে অন্য তাসফিকে দেখতে পাবি। শাসনের মাঝে কেয়ার, রাগের মাঝে ভালোবাসা খুঁজে পাবি। সেটা দূরে থেকে সম্ভব নয়, একসাথে থাক, একে অপরকে সময় দে তবেই না চোখে পড়বে এসব। আমার ছেলেটাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর, দেখবি নিরাশ হবি না।”

খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম ফুপির কথাগুলো। কথাগুলো কিছুটা হলেও কথাগুলো সত্যি। দেড়- দুই মাস আগে থেকে অন্য রকম ভাবেই খেয়াল করছি ওনাকে। মাঝে মাঝে গুলিয়েও ফেলি আগের তাসফি ভাইয়ার সাথে এখনকার তাসফি ভাইয়া কে। সত্যিই কি তাহলে অন্য এক সত্তা লুকিয়ে আছে ওনার মাঝে? লুকিয়ে আছে তাসফি ভাইয়ার মাঝে তাশরিফ রওনাফ তাসফির অন্য একটা রুপ? হ্যাঁ… হ্যাঁ! অবশ্যই আছে। তা না হলে উনি কেন আমায় অজস্র পবিত্রতাময় ভালোবাসা মেশানো আবেগীময় কথাগুলো বলবেন? তাহলে কি উনি আমাকে নিয়ে কিছু ফিল করেন? নাকি আমার মতোই মায়ায় জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেকে?
শরীর জুড়ে এক শুক্ষ শিহরণ বয়ে গেল আমার মনে। আবারও কানের কোঠায় এসে বারি খেতে লাগলো ওনার বলা কথাগুলো।

” ‘চলে যাচ্ছো যে? ইউ নো না… এ-রুমে থাকার কিন্তু তোমার রাইট আছে। কাগজে-কলমে, আইন পাড়া-প্রতিবেশীদের চোখে, এমনকি সারা পৃথিবীর সামনে তুমিই আমার একমাত্র বিয়ে করা বউ। সো, তুমি বললে আজ থেকে এখানে আমার রুমে আমার সাথেই থাকতে পারো।’

‘তুমি বললে আজ থেকে তোমার কল্পনাময় ঘর আর পাগল বর-টার সাথে পারমানের্ন্ট ভাবে থাকতে পারো, কেউ না করবে না কিন্তু’।”

তাহলে কি সত্যিই আমি বললে আজ থেকে এই ঘর আমার করে নিতে পারি? মেয়েদের বিয়ের পর কি এভাবেই আপন করে নিতে হয় অন্য একটা ঘরকে, অন্য একটা সংসারকে? যুগযুগ ধরে তো ঠিক এমনটাই হয়ে আসছে। আম্মু, বড়মা, ফুপি, রিমিআপু সবাই তো এই ধরায় চলছে। আপন করে নিয়েছে অন্য একটা সংসারকে। তাহলে আমার ক্ষেত্রে এমন হবে না কেন? এমনটা না হলেই তো ভুল হবে। এটা তো এখন থেকে আমার ঘর, আমার সংসার, আমার বর….
আবারও এক নাম না জানা শিহরণ বয়ে গেল শরীর ও মন জুড়ে। কেঁপে উঠলাম কিছুটা। ‘আমার বর’ শব্দ দুটো মাথায় খেলতেই প্রচন্ড জোরে ধকধক করে উঠলো বুকের বা পাশে। ফুপি গায়ে হাত দিয়ে হালকা ঝাঁকিয়ে উঠলো। ভাবনাগুলো ছুটে চমকে উঠে তাকালাম ফুপির দিকে।

“ফুপি আসলে আমি, আমি ওনা…..”

“সারাদিন কি তোমার মাথামোটা ভাস্তি কে নিয়েই পড়ে থাকবা আম্মু? ছেলের দিকে কি নজর দিবা না?”

নিচ থেকে চিৎকার করে বলে উঠলেন তাসফি ভাইয়া। একটু থেমে আবারও বলা শুরু করলেন,

“তোমার ভাস্তি তো আস্ত একটা গাধা, তার তো সারাদিন না খেয়ে থাকলেও চলে। কিন্তু আমি তো মানুষ, আমার তো খুদা লাগে, নাকি? এবার দয়া করে নিচে এসে কিছু খেতে দিয়ে উদ্ধার করো।”

“আর দেরি করিস না আম্মু। তাসফি কিন্তু এবার খুব রেগে যাবে। আমি নিচে যাচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে চলে আয়।”

কথাটা বলেই আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না ফুপি। চলে গেল নিচে। আমিও এক আকাশ সমান হতাশা-অসস্তি-লজ্জা নিয়ে ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে চলে গেলাম ওনার বাথরুমে।

.
ফুপির কোলে মাথা রেখে সোফায় শুয়ে আছি। দুজনের মুখেই কোন কথা নেই। সম্পন্ন মনোযোগ টিভির দিকে। রাত সাড়ে দশটা বাজে সেদিকে যেন কারোরই খেয়াল নেই। সম্পন্ন মনোযোগ শুরু টিভিতে চলা ‘রাব নে বানা দে জোরি’ সিনেমার দিকে। সিনেমাটা বরাবরই আমার ভীষণ প্রিয় মুভির তালিকায় রয়েছে। অসংখ্য বার মুভিটা দেখলেও যখনই চোখের সামনে আসে তখনই দেখা শুরু করি। আজকে আমার সাথে ফুপিও যোগ দিয়েছে।
তাসফি ভাইয়া বাসায় নেই। বিকেলে খাবার খেয়েই বেড়িয়ে গেছেন বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে তবুও আল্লাহর বান্দার আসার কোন নাম নেই। ফুপি ফোন দিয়ে আসতে বললেই বলেন ওনার জন্য অপেক্ষা না করে আমরা যেন রাতের খাবাটা খেয়ে নেই। উনি বন্ধুদের সাথে খেয়ে তারপরেই ফিরবেন। তাই আর দুজনে অপেক্ষা না করে খেয়ে টিভির সামনে এসে বসে পরি। গল্প করতে করতে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে লাগলাম। হঠাৎ মুভিটা দেখে ফুপি আর আমি মিলে দেখা শুরু করলাম।

হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো পরপর দুবার। কিন্তু কিছুতেই আমাদের ধ্যান ভাঙলো না। চুপচাপ টিভি দেখেই যাচ্ছি। একটুপর আবারও বেজে উঠলো কলিং বেল, এবারও উঠলাম না কেউ। আরও দুবার বেজে উঠলো। ফুপি টিভির দিকে সম্পন্ন মনোযোগ রেখেই বললো,

“রূপা যা তো দরজা খুলে দে, তাসফি আসছে মনে হয়।”

“উহুম্ তুমি যাও! এটুকু কিছুতেই মিস করা যাবে না।”

আমিও টিভির দিকে তাকিয়ে একই কথা বললাম। ফুপি হয়তো শুনলো না আমার কথা, প্রতিত্তোর করলো না কথার। গভীরভাবে ডুবে আছে মুভির মাঝে। এবার আগের চেয়েও জোরে কলিং বেল বেজে উঠলো, একসাথে তিন চার বার। তাই ফুপি খুব দিয়ে বললো,

“দরজাটা খুলে দে না মা। তুই তো আগেও দেখেছিস।”

প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে টিভির দিকে তাকিয়েই উটে বসলাম। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে এক ছুটে চলে গেলাম দরজার কাছে। ড্রয়িং রুমের দরজা খুলে একই ভাবে ছুটে মেইন গেটের কাছে গেলাম। দেখি তাসফি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। কোন রকম মেইন গেট খুলে দিয়ে সেভাবেই ছুটে ভেতরে চলে আসলাম। ফুপির কোলে মাথা রেখে একই ভঙ্গিতে শুয়ে টিভি তে মনোযোগ দিলাম।
হঠাৎ টিভির পর্দায় অন্ধকার ছেয়ে যেতেই মনোযোগ সরে গেল সেদিক থেকে। ভাবলাম বিদ্যুৎ চলে গেছে হয়তো কিন্তু ফুপির কথায় বুঝতে পারলাম টিভিটা অফ করা হয়েছে।

“টিভি অফ করলি কেন তাসফি? দেখছিস না সিনেমা দেখছি, দে রিমোট টা দে।”

“বাহ্! আমি তো ভাবলাম দুজনে নাকে সর্ষে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে তাই কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পারছে না। কিন্তু না, এরা তো দেখি টিভির মাঝে ঢুকে গেছে।”

উফ্! মুভিটার শেষ সময় এসে এভাবে বন্ধ করায় অনেক বিরক্ত লাগছে আমার। তাই ফুপির সাথে আমিও তাল মিলিয়ে বললাম,

“টিভির মাঝে কেউ ঢুকতে পারে নাকি? আপনি রিমোটটা দেন তো। ইস্ আর অল্পটুকু আছে, এসময় এসেই বাগড়া দিতে হলো আপনার?”

বলেই তাসফি ভাইয়ার হাত থেকে রিমোটটা নিতে গেলাম কিন্তু পারলাম না।

“দে না আব্বু, আর একটু আছে দেখতে দে না।”

“একদম না, এটাই তোমাদের শাস্তি । কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি সেই খেয়াল আছে তোমাদের? বাড়ি চুড়ি হয়ে গেলেও তো হুস থাকবে না তোমাদের। ফুপি ভাস্তি দুটোই এক, মাথায় ঘিলু-টিলু কিচ্ছু নেই। দুটোই এক বংশের কি না।”

রাগ হলো ওনার কথায়। তেতে উঠে বলতে লাগলাম,

“দেখুন আপনি কিন্তু অপমান করছেন আমাদের। এভাবে ন্…..”

“তুই তো চুপ করেই থাক। কাল যে ভর্তির জন্য ভার্সিটিতে যেতে হবে সেই খেয়াল আছে তোর? বেয়াদব! সকালে তো উঠতে পারবি না, আর এখানে সিনেমা পার্ট করছিস?”

“আমার তো মনেই ছিলো না। রূপা ঘুমিয়ে পর গিয়ে, তা না হলে তো সকালে উঠতে পারবি না।”

হতাশ হলাম এবার। তারমানে মুভিটার শেষটুকু আর দেখা হলো না। বজ্জাত লোক একটা একটু দেখতে দিলে কি এমন হতো? ফুপির দিকে তাকালাম। আস্তে করে বললাম,

“চলো ঘুমাবো।”

ফুপি অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। বললো,

“আমি আবার কোথায় যাবো? তুই উপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পর। ”

“উপরে কে….”

হঠাৎ মনে হলো আমার তো উপরে তাসফি ভাইয়ার রুমে তাসফি ভাইয়ার সাথে থাকার কথা। ভুলেই তো গেছিলাম আমি। ইস্ কিভাবে থাকবো আমি ওনার সাথে? না.. না! কিছুতেই না। রুমটা আমার কল্পনাময় হলেও ওনার সাথে এক ঘরে কিছুতেই থাকতে পারবো না। সে সাহসটা আমার হবে না।

“না… না মানে, তোমার সাথেই থাকি না ফুপি।”

“বিকেলে তোকে কতকিছু বললাম, সে কথাগুলো ভেবে অন্তত চিন্তা কর। বাকী আর কিছু মাথায় আনিস না আম্মু।”

ফুপির কথা শুনে তাসফি ভাইয়ার দিকে কে একবার তাকালাম। আমর দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি। আমার তাকানে দেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে ফুপিকে বললেন,

“আম্মু এই গাধাটা কে তোমার ভাস্তি ট্রিট না করে ছেলের বউয়ের নজরে ট্রিট করো। দেখবে দু’দিনেই সোজা হয়ে গেছে আর তোমার কথাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে।”

হেঁসে উঠলো ফুপি। আমি শুধু দুজনকে দেখে যাচ্ছি। আজকাল তাসফি ভাইয়ার কথাগুলো হজম করতেও অনেক সময় লাগে আমার।

“এখন তোমার বউমাকে বলো, তোমার ছেলে কফি খাবে। চটপট এক কাপ কপি বানিয়ে নিয়ে রুমে আসে যেন।”

“বউমা তাড়াতাড়ি আমার ছেলের জন্য কফি বানিয়ে রুমে নিয়ে যাও। ছেলেটা আমার অনেক ক্লান্ত হয়ে বাসায় আসছে।”

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তাসফি ভাইয়া ও ফুপির দিকে। মুখটা অটোমেটিক হা গয়ে গেছে যেন। ফুপি এসব কি বলছে আমায়, ওনার কথাা তাল মিলিয়ে। দুজন মিলে কি নজা নিচ্ছে আমার? আমাকে একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফুপি আবারও বলে উঠলো,

“কি হলো বউ মা, কি বললাম শুনতে পাও নি? যাও তাড়াতাড়ি কফিটা বানিয়ে আনো। আজকাল বউদের নিয়ে আর পারি না বাপু, সংসারের কোন কাজ করতে চায় না শুধু রংঢং করতে জানে।”

কি হচ্ছে সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার। ফুপি হঠাৎ কি শুরু করলো এগুলো। তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভ্রু নাড়িয়ে চোখ দিয়েই ইশারা করলো আমাকে কফি বানানোর জন্য। ভাবলাম ফুপির কঠিন কঠিন কথাগুলো শোনার চাইতে ওনার জন্য কফি বানানোটা অনেক সহজ। তাই আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলাম রান্নাঘরে। চুলায় গরম পানি বসাতেই ড্রয়িং রুম থেকে ফুপি ও তাসফি ভাইয়ার হাসির আওয়াজ এলো খুব জোরে। তারমানে? তারমানে সত্যি সত্যিই দু’জনে মিলে মজা লুটাচ্ছিলো আমার। আর আমিও বোকার মতো বজ্জাতটার জন্য কফি বানাতে চলে আসলাম। উফ্ রূপা তুই সত্যিই একটা গাধী।

কফি বানিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে তাসফি ভাইয়ার হাতে দিতে চাইলে উনি বলে উঠলেন,

“কফিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি রুমে আয়। ঠান্ডা হয়ে গেলে কিন্তু আবার তোকে দিয়ে বানিয়ে দিবো।”

গটগট করে চলে গেলে উপরে। বজ্জাত-বদমাশ একটা লোক। দু’হাত নাচিয়ে নাচিয়ে উপরে চলে গেল তবুও কফিটা নিয়ে গেল না। আমাকে খাঁটিয়ে কি শান্তি পান উনিই ভালে জানেন। হু্!
হঠাৎ ফুপি আমায় আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো। বললো,

“বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে যেটা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হবে সেটা নিয়ে ভাব। এখন তাড়াতাড়ি করে উপরে যা, তা না হলে কিন্তু আবার শ্বাশুড়ি রুপে ফিরে আসবো।”

“ফুপি আমি কিন্তু ও….”

“আমি কিন্তু বাবা দরজা লক করে ঘুমাবো, তাই নিচে আসার চিন্তা ভাবনা বাদ দিস বলে দিলাম।”

আর কিছু বলার রইলো না আমার। কি-ই বা বলবো আমি। মা-ছেলে তো আমায় জুলুম করা শুরু করছে একপ্রকার। না… এ-সব চিন্তা করে কোন কাজ নেই বরং কফিটা আগে দেওয়া প্রয়োজন ওনাকে। তা না হলে দেখা যাচ্ছে আবার আমাকে কফি বানাতে আসতে হবে। উপরে আসার সময় ফুপির দিকে তাকিয়ে বললাম,

“মা-ছেলে দু’টোই বজ্জাত।”

আমার কথা গায়ে না লাগিয়ে হেঁসে উঠলো ফুপি। চোখ দিয়ে ইশারা করলো উপরে যেতে। আমিও আর না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। রুমে যেতে যেতে তাসফি ভাইয়ার গোষ্ঠীর ষষ্ঠী পুজো করতে লাগলাম মনে মনে।

.
.
(চলবে…..)

যারা যারা গল্পটা পড়বেন সবাই একটু কষ্ট করে সাড়া দিয়ে যাবেন প্লিজ। আপনাদের রিয়াক্ট ও গঠনমূলক মন্তব্য দেখে পরবর্তী পর্ব লেখার আগ্রহটা অনেক বেড়ে যায়। যারা পড়বেন একটু কষ্ট করে রিয়াক্ট দিয়ে যাবেন, যাতে করে বুঝতে পারি কতগুলো পাঠকের কাছে আমার লেখাটা পৌঁছাচ্ছে, কতজনের ভালো লাগছে।🙂 ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা রইল সবার প্রতি।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here