তুমি বললে আজ – পর্ব ১৫

0
587

#তুমি_বললে_আজ
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৫

.
“যাবো না আমি।”

“তুই কি আমার সাথে ফাজলামি শুরু করলি? তাড়াতাড়ি উঠে বস, দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”

“ফাজলামি করবো কেন? আপনার এই হিরো মার্কা বাইক দেখেই তো আমার ভয় করছে। পুরো রাস্তা যাবো কি করে আমি?”

আমার কথায় তাসফি ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

“কেন? আমার ঘাড়ে চড়ে যাবি।”

অবাক হয়ে গেলাম তাসফি ভাইয়ার কথায়। ওনার ঘাড়ে চড়ে যাবো মানে? আমাকে ফাজলামির কথা বলে এখন কি উনি আমার সাথে ফাজলামো শুরু করলেন নাকি? আজকাল এই মানবকে বোঝা বড় দায়।

অস্বস্তি ভয় ও লজ্জা নিয়ে সারারাত দু-চোখের পাতা এক করতে পারি নি। সকালের দিকে ঘুমটা গভীরভাবেই লেগেছিল। কিন্তু আমার এই শান্তির ঘুমটা কিছুতেই সহ্য হয়নি একজনের। শান্তির ঘুমটা ভঙ্গ করে বিছানা থেকে একপ্রকার টেনেই তোলা হয়েছে আমাকে। আর এই যথাসাধ্য কাজটা করেছেন তাসফি নামক বজ্জাত লোকটা।
আবারও ঘুমিয়ে পড়তে চাইলে বজ্জাত লোকটার ধমকের সুরে টিকে থাকতে পারি নি বিছানায়। একেবারে রেডি হয়ে নিচে আসতেই ফুপিও তাড়া দিলো তাড়াতাড়ি খাবার জন্য। আজকে আমার ভার্সিটিতে প্রথম দিন। ক্লাসের প্রথম দিন না হলেও প্রথম দিন বললে ভুল হবে না। আজকে প্রথম পা রাখবো সেই স্বপ্নের ভার্সিটিতে। তাসফি ভাইয়ার সাথেই যেতে হবে ভর্তি হবার জন্য। উনি নাস্তা শেষ করে আমাকে তাড়া দিয়ে চলে আসলেন বাহিরে। আজ প্রথম ভার্সিটিতে যাবো বলে আমিও অনেক এক্সাইটেড। তাই ওনার কথা প্রতিত্তোরে কিছু না বলে কোন রকমভাবে খাবারটা শেষ করলাম। ফুপি আস্তে খাবার কথা বললেও কানে নিলাম না। তাড়াতাড়ি করে প্রয়োজনীয় কাগজগুলো নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। মেইন গেট পেরিয়ে বাহিরে আসতেই মুখটা চুপসে গেল ওনার হিরো মার্কা এই বাইকটা দেখে।
আগেও বহুবার ওনার সাথে বাইকে উঠলেও এমন বাইকে উঠা হয়নি। এমন বাইকগুলো দেখতেই কেমন যেন ভয় লাগে আমার। পিছনে ধরার তো কোন জায়গায় নেই সাথে বসার অল্পটুকু জায়গাও অনেক উঁচু। এটাতে করে গেলে আমাকে হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। একদম ইন্না-লিল্লাহ! আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাইকে উঠতে বলেন তাসফি ভাইয়া। আর আমি ও সাথে সাথে যাবো না বলে বারণ করে দেয়।

.
“এবার আমার ঘাড়ে চড়ে উদ্ধার কর আমায়।”

“আমাকে কি আপনার জিন-ভুত বলে মনে হচ্ছে, যে আপনার ঘাড়ে চড়বো? অবশ্য সারাদিন যে পরিমাণ অত্যাচার করেন, তার শোধ নেবার জন্য উঠতেই পারি।”

শেষের কথাটা আস্তে করেই বললাম। তবে উনি শুনে ফেললেন আমার কথাটা। বললেন,

“তোর মতো শাঁকচুন্নি এটা ছাড়া আর কি পারবে বল?”

আমি কিছু বলার জন্য মুখটা খুলতেই উনি আবারও বললেন,

“তোর এই ঘিলু বিহীন মস্তিষ্কের প্রতি চাপ না দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পর৷ তা না হলে কিন্তু ভার্সিটির চেহারাও দেখতে পাবি না, বলে দিলাম।”

প্রতিত্তোরে কিছু বললাম না আর। মনে ভয় নিয়ে এগিয়ে গেলাম বাইকের কাছে। উঠে বসতে বসতে তাসফি ভাইয়াকে আস্তে করে বললাম,

“না.. মানে পিছনে তো ধরার মতো কিছু নেই, যদি পড়ে যাই?”

আমার কথা শুনে মাথা ঘুরে পিছনে তাকালেন তাসফি ভাইয়া। ওনার সেই বিখ্যাত হাসিটা দিলেন। শান্ত গলায় বললেন,

“হাতটা সামনে এনে শক্ত করে ধরে রাখ আমায়। ভয় পাস না, আমি আছি তো। কখনোই পড়ে যেতে দিবো না তোকে।”

জানি না ওনার কথায় কি হলো আমার। কেঁপে উঠলাম কিছুটা, নাম না জানা সেই শিহরণ বয়ে গেল মনে। সামান্য এ-টুকু কথাতেই এক আকাশ পরিমান ভরসা খুঁজে পেলাম যেন। মনে হলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস কার যায় এই মানবকে।
কিছু না বলেই ওনার কাঁধে হাত দিয়ে উঠে বসলাম বাইকে। একহাতে ফাইলটা শক্ত করে ধরলাম। অপর হাতটা ওনার কাঁধ থেকে সরিয়ে সামনে নিয়ে ওনার পেট ও বুকের মাঝ বরাবর কাঁপা কাঁপা অবস্থায় আমার হাতটা রাখলাম। সাথে সাথে বুকের টিপটিপ শব্দটা বেড়ে যেতে লাগলো। আমার অবস্থা বুঝতে পেরে হাসলেন হয়তো উনি।

“এতদিনেও বাইকে বসা শিখতে পারলি না। এভাবে থাকলে ছয় মাসের জন্য বিছানা বরাদ্দ হবে তোর জন্য। তাই এভাবে ধরে বসা শিখে নে তাড়াতাড়ি।”

বলেই একটানে আমার হাতটা একটু ওপরে উঠিয়ে ওনার বুকের সাথে চেপে ধরলেন। পুরো শরীর সহ কেঁপে উঠলাম আমি। বুকের টিপটিপ শব্দটা দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেল মুহুর্তেই। কয়েক মিনিট পর আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বাইক স্টার্ট করলেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“শক্ত করে ধর আমাকে।”

বলেই আর দেরি করলেন না উনি। টেনে নিয়ে যোতে লাগলেন বাইকটা। হঠাৎ চালু হওয়ায় চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে শক্ত করে ওনার গায়ের শার্ট ধরলাম। তাসফি ভাইয়া আপন গতিতে বাইক চালাচ্ছেন।
কিছুটা যাবার পর ভয়টা কেটে গেল আমার। কিন্তু তবুও তাসফি ভাইয়ার বুকের কাছে শার্টটা ধরে থাকলাম।
বাইকে করে ঘোরাঘুরি বিষয়টা আমার প্রিয় একটা কাজ। তাই স্কুল কলেজের কোন কাজে, কোথায় ঘুরতে গেলে তাসফি ভাইয়ার সাথে কেউ যেতে বললে না করতাম না আমি, বরং খুশি মনে যেতাম। কারণ ওনার সাথে কোথাও যাওয়া মানেই বাইকে করে ঘোরাঘুরি। শেষবার রিমি আপুর বিয়েতে আপুর শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলাম ওনার সাথে।

আজকে তাসফি ভাইয়ার হিরো মার্কা বাইককে একটু ভয় করলেও অনেক বেশিই ভালোলাগা কাজ করছে। বারবার মনে হচ্ছে এই মানুষটার সাথে থাকলে কোন ভয় নেই, এক বিন্দু বিপদের আঁচ আসতে দিবেন না আমার কাছে। আসতে দিবেন না ভয়ের রেশমাত্র। আগলে রাখবেন আমাকে।
হঠাৎ বাইক থামতেই ভাবনাগুলো ছুটে গেল আমার। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি একটা পৌঁছে গেছি সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গাটিতে। আরও একটা অনুভূতি এসে মজা হলো মনে। বাইক থেকে নেমে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। মুগ্ধতায় ছেয়ে গেল ছোট্ট মনটা। অদ্ভুত একটা ফিলিংস হতে লাগলো। আজ থেকে আমিও তাসফি ভাইয়ার মতো গর্ভ করে বলতে পারবো ‘এটা আমার ভার্সিটি’। হ্যাঁ আমার ভার্সিটি এটা।
তাসফি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি। ওনার দিকে তাকানে দেখে বললেন,

“কি? কেমন লাগছে আমার ভার্সিটি?”

আমি সাথে সাথেই বললাম,

“উ্মহু! শুধু আপনার একার না, আজ থেকে এটা আমারও ভার্সিটি।”

আমার কথা শোনার পর আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকলেন কয়েক সেকেন্ড। হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,

“ঠিক এভাবেই আমার প্রতিটা জিনিসের উপর নিজের অধিকার করে নিবে।”

ফট করে তাকালাম ওনার দিকে। কথাটা বুঝেও যেন বুঝতে পারলাম না। আমার দিকে তাকিয়েই অদ্ভুত একটা হাসি দিলেন তাসফি ভাইয়া। আমি কিছু বলতে চাইলেই উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরলেন। হাঁটতে হাঁটতে বললেন,

“পরে দেখে নিস ক্যাম্পাস, আগে ভর্তির কাজটা কমপ্লিট করতে হবে।”

.
আমার সিরিয়াল দেরিতে থাকলেও তাসফি ভাইয়ার জন্য খুব তারাতাড়িই ভর্তির কাজটা সম্পন্ন হলো। ওনাকে দেখেই স্যাররা অনেজটা উত্তেজিত হয়ে গেলেন, আমায় কাগজগুলো দিতে বললেন। কিন্তু তাসফি ভাইয়া তাড়াহুড়ো না করে খুব শান্তভাবেই ফর্মগুলো পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজগুলো জমা দিলেন। তারপর স্যারদের সাথে আমাকে পরিচয় করে দিলেন। সরাসরি কাজিন রুপে পরিচয় করে দিলেও আকার ইঙ্গিতে ঠিকই বুঝিয়ে দিলেন অন্যকিছু। আর সেটা যে আমকে ওনার বউ বলে পরিচয় দিলেন আমার বুঝতে বাকি রইলো না। হঠাৎ মাথাটা নামিয়ে নিলাম, একরাশ লজ্জা এসে ভীর জমালো আমার কাছে। স্যারদের সামনে কথাটা না বললেই কি হতো না ওনার? অযথা লজ্জা পেতে হতো না তাহলে আমাকে।

তাসফি ভাইয়া স্যারদের থেকে বিদায় নিয়ে একইভাবে আমার হাতটা ধরে নিয়ে আসলেন ওখান থেকে। বাকী কাজগুলো সারতে সারতে আরও কিছুটা সময় চলে গেল। দুপুর গড়িয়ে গেল প্রায়। বাইকে বসে আমাকেও বসতে বললেন। ভালোভাবে ধরে বসার কথাটা বলতে ভুললেন না।
সোজা এসে বাইকটা থামালেন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। আমি কিছু বলতেই উনি বললেন দুপুরের খাবারটা এখানেই খেয়ে যাবেন। আমিও আর না করলাম না। ভেতরে গিয়ে বসতেই উনি মেনু অনুযায়ী ওর্ডার করলেন। যথারীতি খাবারটা আসতেই দুজনে খেতে শুরু করলাম। খাবার প্রায় শেষের পর্যায়, হঠাৎ তাসফি ভাইয়া আমাকে ডেকে উঠলেন,

“রুপু!”

চমকে উঠে তাকালাম ওনার দিকে। এই পর্যন্ত দ্বিতীয়বার ওনার মুখে এই ডাকটা শুনলাম আমি। আজকেও তাসফি ভাইয়ার কণ্ঠে ‘রুপু’ নামটা শুনে অদ্ভুত এক অনুভূতিতে ঘিরে ধরলো আমাকে। কিছু বললতে পারলাম না আমি মুখ ফুটে। মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে।

“রুপু…..”

আমার সারা না পেয়ে আবারও একই ভাবে ডেকে উঠলেন উনি। উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। মুখের খাবারটা কোন ভাবে গিলে ফেললাম। আস্তে করে বললাম,

“হুম”

“যাবা আমার সাথে?

” ক্..কোথায়?”

ঠোঁট কামড়ে হাসলেন তাসফি ভাইয়া। আমার দিকে গভীর চোখ তাকিয়ে বলে উঠলেন,

“তুমি বললে আজ হারিয়ে যেতে চাই দূর অজানায়। ভালোবাসতে বাধ্য করতে চাই, আঁটকে রাখতে চাই কারোর প্রেমের বাঁধনে।”

.
.
(চলবে…..)

রিচেক করা হয়নি, ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না। আগামীকাল হয়তো দিতে পারবো না গল্পটা। পরশু দিন থেকে রেগুলার দিবো ইনশাআল্লাহ। 🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here