প্রেমমানিশা – পর্ব ৩০

0
201

#প্রেমমানিশা(৩০)

‘ স্যার ‘

অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল প্রণয়। ইতিমধ্যে সকলেই বেরিয়ে পড়েছে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে। আজকে প্রণয়ের ক্লাসটা সবার শেষে ছিল। প্রণয় নিজের মতো ওর বই আর মার্কার নিয়ে বের হচ্ছিল এমন সময় কেউ একজন পিছন থেকে ‘ স্যার ‘ বলে ডেকে উঠলো। প্রণয় কণ্ঠস্বরের মালিক কে চিনে তাই পিছনে ফিরল না। সটান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

অতসী প্রণয়কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রণয়ের সামনে এসে দাড়ালো। ইনিয়ে বিনিয়ে বললো ‘ না মানে স্যার..… ‘

‘ কিছু বলার থাকলে দ্রুত বলুন মিস অতসী। আমার সময়ের মূল্য আছে। আমার সময় ফেলনা নয় ‘

প্রণয়ের কাটকাট গলায় বলা কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো অতসী। প্রণয়ের কাছ থেকে কখনও এরকম শক্ত গলায় কথা শুনেনি। হতবাক অতসী নিজেকে সামলে বললো ‘ আসলে স্যার আমার মনে হলো আপনি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছেন। আমি কি কোনো ভুল করেছি ? ‘

‘ আপনার সঙ্গে রাগারাগি করার মতো সম্পর্ক কি আমার আপনার সঙ্গে আছে ? নিজেকে এত ইম্পর্ট্যান্ট কেন মনে করেন আপনি ? কে হন আপনি আমার ? কেউ না আপনি আমার…… ‘ প্রণয় কাটকাট গলায় উত্তর দিলো।

এবার যেন অতসী আরও অবাক হলো। এ ও কাকে দেখছে ? এটা কি সেই মানুষটা যে ওর সঙ্গে একবার দেখা করার জন্য এত কাকুতি মিনতি করেছে। অতসী খানিকটা ভেজা গলায় কোনোমতে ‘ ঠিক বলেছেন..… কেউ হইনা আমি আপনার। কেউ না..… ‘ বলে দৌড়ে চলে গেলো।

অতসীকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো প্রণয়। ওর মনের কোণে জমে থাকা সন্দেহের জট এখন ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। প্রণয় এখন বুঝতে পারছে এতদিনের অতসীর অনুপস্থিতির কারণ।

তবে প্রণয় বরাবর প্রমাণে বিশ্বাসী তাই উপস্থিত প্রমাণ না দেখে কোনো আগাম পদক্ষেপ নিবে না। ওর ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে খুব শীঘ্রই ও ওর মিস ইন্ডিয়াকে ফিরে পাবে। এখন শুধু দেখার পালা মিস ইন্ডিয়া নিজে থেকে প্রণয়ের কাছে ধরা দেয় নাকি প্রণয়কে তাকে হাতেনাতে ধরতে হয়।

—-

সবেমাত্র সানার ক্লাস শেষ হয়েছে। সময়টা এখন প্রায় দুপুর। আজ আবার দুটো ক্লাস ছিল তাই তাড়াতাড়ি ছাড়া পাওয়া। তবে তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়েও শেষ শান্তি হলো না। সূর্য এখন মাথার উপর খাড়া হয়ে দাড়িয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে বসন্তকাল এসে গেছে।

সানাহ্ ক্লাস ছেড়ে বের হলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করলো। ফারহানকে ফোন দিয়ে শপিংয়ের জন্য ডেকে আনা যাক। সানাহ্ কন্টাক্ট লিস্টে ফারহানের নাম্বার খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ ওকে ‘ সানাহ্ ‘ বলে ডাকছে।

সানাহ্ ফোনের উপর থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো। এরপরই নজর পড়ে গেলো অদূরে সামনে দাড়িয়ে থাকা ফারহানের উপর। মুহূর্তের মাঝেই সানার ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি ভেসে উঠলো কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী রইলো না যখন সানাহ্ দেখলো ফারহানের পাশে রিয়াশা দাড়িয়ে আছে।

ফারহান দূর থেকে সানাহ্কে হাত উঠিয়ে ডাকছে কিন্তু ফারহানের পাশে রিয়াশাকে দেখে সানার আর ফারহানের কাছে যেতে ইচ্ছা করছে না। তবুও নিজের ভিতরে থাকা কষ্টগুলো পাথর চাপা দিয়ে ঠোটের কোণে মেকি হাসি ঝুলিয়ে ফারহানের দিকে এগিয়ে গেলো সানাহ্। সানাহ্ এগিয়ে গিয়ে ফারহানের কাছে দাড়াতেই ফারহান রিয়াশার কাছ থেকে সরে এসে সানার কাছে দাড়িয়ে সানার কাধে হাত রেখে বলল ‘ হেই রিয়া মিট মাই ফিয়ন্সে …. সাইয়ারা কায়নাত সানাহ্। এ স্টুডেন্ট অফ ইংলিশ লিটারেচার ডিপার্টমেন্ট। তিনদিন পরই আমাদের বিয়ে। ‘

‘ আরে মামা তিনদিন পর তোর বিয়ে আর তুই আমাকে এখন বলতেছিস ? আমি তোর বিয়ের কথা না বললে তো তুই বলতিই না। শেষে দেখা যেত বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা পয়দা করে সারলে আমি জানতাম আমার বন্ধুর বিয়ে হয়েছে। এইডা তুই কি করলি ? আমারে একবার বললিও না ? বিয়ে করছিস তো করছিস তাও আবার তোর অপনেন্ট কে…. বাংলা আর ইংলিশ তো এক ঘাটে জল খায় না। ‘ রিয়াশা হাসতে হাসতে ফারহানের কাধে চাপর মেরে বললো।

রিয়াশার এরকম হম্বিতম্বি ভাব সানাহ্ তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে। মেয়েটাকে ওর একদমই ভালো লাগে না। সবসময় কেমন ফারহানের গাঁয়ে পড়া ভাব করে। এসব গাঁয়ে পড়া মেয়েদের সানাহ্ দুই চোখ কেন এক চোখেই সহ্য করতে পারেনা। এরা ওর চোখের বিষ। যদি পারতো তাহলে দুটো লাথি মেরে বিদায় করতো।

‘ আসলে একটু তাড়াহুড়োতেই আছি। বিয়ের পরপরই সানার অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা। এখন সেই কারণেই মূলত বিয়েটা আরও এক সপ্তাহ আগানো হয়েছে। যার কারণে সব দ্রুত করতে হচ্ছে। বিয়ে আমরা ঘরোয়া ভাবে করবো কিন্তু বিয়ের পর বৌভাতের অনুষ্ঠান করার প্ল্যান আছে। এখন যে যার ভাগ্যে আছে তার সঙ্গেই তো বিয়ে হবে। সানাহ্ আমার ভাগ্যে তাই তার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। বাই দা ওয়ে তুই বৌভাতে আসবি তো ? ‘ ফারহান বোকার মত মাথা চুলকিয়ে হাসতে হাসতে বললো।

‘ আরে যাবো মানে ? আমাকে তো যেতেই হবে। আখের মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যা..… হাম না যায়ে তো ক্যাসে হোগা। হাম জারুর জায়েঙ্গে…. ‘ রিয়াশা হাসতে হাসতে বললো।

তারপর ফারহান রিয়াশার সঙ্গে আরও দুয়েক জরুরি কথা বলে রিয়াশাকে বিদায় জানিয়ে সানাহ্কে নিয়ে হাঁটা ধরলো। সানাহ্ যেন এতক্ষণে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এতক্ষণ দুই বন্ধুর মধ্যে নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছিল। এরা নিজেরা নিজেরা কথা বলছিল অথচ ওর দিকে খেয়ালই নেই।

‘ তো সানাহ্ আজকে কি কি শপিং করবে ? কসমেটিকস,শাড়ি,গয়না, স্টিলেটো, ব্যাগ আর…. আর কি ? চুড়ি ? ‘ ফারহান জিজ্ঞেস করলো।

‘ এতকিছু কিনার কি আছে ? আমি কি এত জিনিস বিয়েতে পড়ব ? বিয়ে তো ঘরে হবে। তাহলে এসবের দরকার কি ? আর যদি অনুষ্ঠানের জন্য কিনি তাহলে এতকিছুর কি দরকার ? আপনার কি আমাকে এক গাদা আটা ময়দা মেখে বসে থাকা সুন্দরী মনে হয় ? ‘ সানাহ্ তির্যক চোখে প্রশ্ন করলো।

‘ ওহ্ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি আবার আর পাঁচজন মেয়েদের মতো এত সাজগোজ করতে পছন্দ করো না। সিম্প্লিসিটি ইজ ইউর রুল…. ‘ ফারহান চোখ দুটো বড় বড় করে হেসে বলল।

‘ সাজলে বুঝি আপনার জন্য ভালো হতো ? আপনার ওই বান্ধবীর মত আটা ময়দা মেখে সুন্দরী হলে কি আমায় সারাদিন দেখতেন ? ‘ সানাহ্ দাতে দাত চেপে কথাগুলো বলে ধুপধাপ পায়ে ফারহানকে ফেলেই এগিয়ে গেলো।

ফারহান কিছুক্ষণ আহাম্মকের মত দাড়িয়ে রইলো। সানার কথার অর্থ তার বোধগম্য হয়নি। সানাহ্ কি কথাগুলো নরমালি বললো নাকি রেগে গিয়ে বলল সেটাই তো বুঝার অবকাশ হলো না। তার আগেই তো ধুপধাপ করে চলে গেলো। কি হলো জিনিসটা ?

সানাহ্ দাত কিরবির করতে করতে এগোচ্ছে। রাগে ওর পুরো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। রাগে গজরাতে গজরাতে বলছে ‘ এই লোকটা এমন কেন ? ওই মেয়েকে দেখলেই আমার কথা ভুলে যায়। মেয়ে দেখলেই পুরুষ মানুষ খালি ছুকছুক করে। ঘরে বউ রেখে বাইরে মুখ দেওয়া ছেলেদের স্বভাব । এরা জীবনেও বদলাবে না।। আমিই পাগল…. উনার বদলানোর আশা করছি ‘ ইত্যাদি আরও নানান কথা বলতে বলতে সানাহ্ এগোচ্ছে।

‘ সানসাইন ‘

হঠাৎ সানার মনে হলো জাপানের গলা পেলো। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ? ওর জাপান ভাই তো ব্যবসায়ের কাজে দেশের বাইরে এখন । সে যদি ঢাকা আসতো তাহলে তো অবশ্যই জানাতো। অগত্যা ব্যাপারটা কে নিজের মনের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিল।

কিন্তু কিছুক্ষন পরই আবারও ডাকটা কানে ভেসে এলো সানার। এবার আর সানাহ্ চুপ থেকে পারলো না। ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাল। নজরে পড়লো ভার্সিটির বাইরে কালো মার্সিডিজ এর গাঁয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা জাপানের দিকে। দুপুরের সোনালী রোদ জাপানের চোখে মুখে আছড়ে পরে জাপানকে দিচ্ছে অপার সৌন্দর্য।

বহুদিন পর জাপানকে দেখে সানাহ্ যেন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। এক দৌড়ে ছুটে গেলো জাপানের কাছে। অনেকটা জায়গা দৌড়ে যাওয়ায় জাপানের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে হাপিয়ে গেলো। জাপানের সামনে দাড়িয়ে দু মিনিট দাড়িয়ে জিরিয়ে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে বলতে শুরু করলো ‘ জাপান ভাই তুমি সত্যিই এসেছ ? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। আরও আগে এলে না কেন ? আসার আগে আমাকে জানাওনি কেন ? আমাকে বুঝি সারপ্রাইজ দিতে এসেছ ? ‘ সানাহ্ কথাগুলো বলে আনন্দে জাপানের বাম হাত ধরে টানতে লাগলো। এই একটা মানুষকে সানার খুব পছন্দ,তার জাপান ভাই। জাপান সানার মনের কথা সানার মুখ দিয়ে বের করার আগেই বুঝে যায় বলেই সানার তাকে এত পছন্দ।

প্রত্যেক নারীর জীবনে বিশেষ একজন মানুষ থাকে যাকে সেই নারী জীবনের যেকোনো মুহূর্তে বিশ্বাস করতে পারে,ভরসা করতে পারে। তবে সানার ক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রম। সানার জীবনে বিশেষ ভরসার মানুষ হলো চারজন যাদের সে জীবনের কোনো মুহূর্তে কোনো ক্রমেই অবিশ্বাস করতে পারে না। প্রথম জন ওর বাবাই মিস্টার আফজাল করিম যে তার জন্মদাতা, যে তাকে তার জীবনের দশটা বছর আগলে রেখেছে। দ্বিতীয়জন ওর ছোটো মামা শায়খ, যার সঙ্গে সে তার শৈশবের মূল্যবান সময় পার করেছে।

তৃতীয়জন ওর ফুপাতো ভাই জাপান, যে ওকে সবসময় নিজের বোনের মতো আগলে রেখেছে। জাপান কখনোই সানাহ্কে এটা বুঝতে দেয়নি যে সানার কোনো ভাই নেই। সে সানার বড় ভাইয়ের অভাব পূরণ করেছে। আর সবিশেষে চতুর্থ জন বা শেষ জন হলো সানার হবু বর ফারহান। যে তার নারী মন বুঝতে অপারগ কিন্তু নিজের সবটা দিয়ে সানাহ্কে আগলে রাখতে সক্ষম।

সানাহ্ এই চারজন মানুষকে কখনোই অবিশ্বাস করতে পারে না। হ্যাঁ হয়তো নারীর স্বভাব সুলভ রুপে সে একটু আগে ফারহানকে নিয়ে কিছু অবাস্তব কথা বলছিলো কিন্তু সে জানে ফারহান তাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না।

কিন্তু নারী মস্তিষ্ক বরাবরই প্রিয়জনদের নিয়ে ঈর্ষাপরায়ণ। প্রিয় মানুষকে তারা কখনোই অন্যের সংস্পর্শে সহ্য করতে পারে না তাইতো অকারণে রেগে যায়। রাগারাগি করে,মান অভিমান করে আর মূর্খ প্রেমিক পুরুষ তার মানে অন্য কিছু বের করে। এই কারণেই হয়তো মানুষ যত লম্বা হয় তার বুদ্ধি ততটাই হাঁটুর নিচে থাকে।

‘ আরে ব্রো রিলাক্স। একসঙ্গে এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিবো কি করে ? আমি তোর মত এত দ্রুত উত্তর দিতে পারবো না। আমি একটা একটা করেই দিচ্ছি। তুই সময় নিয়ে শুন। সত্যিই এসেছি বলেই আমাকে নিজের সামনে দেখতে পারছিস। তোকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই না জানিয়ে হুট করে এসেছি। এই এক সপ্তাহ ব্যবসায়ের কাজে দেশের বাইরে ছিলাম। এই কালই ফিরলাম আর দেশে ফিরেই তোর বিয়েতে চলে এলাম। এখন এতদিন না আসার খেসারত একেবারে দিবো…. একেবারে তোর বিয়ের অনুষ্ঠান অ্যাটেন্ড করে তবে যাবো। তোর দস্যু বোনের জন্য তো আসতে পারি না। এখন বাড়ি ফিরে আমাকে পেলেই ঝগড়া জুড়ে দিবে। ‘

‘ তুমি একলা এলে ? ফারাইরা এলো না যে ? ওর কি শরীর খারাপ ? ‘ সানাহ্ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। সে আশা করেছিল ফারাইরা আসবে। কিন্তু সে আসে নি।

‘ আর বলিস না…… ওর সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয়েছে। পরীক্ষা বলে আসতে পারছিল না বলে মন খারাপ করছিলো। পরে আমি বললাম তোর বিয়ের পর তোর শশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওকে তোর সঙ্গে দেখা করিয়ে আনবো। কথাটা শুনে তার খুশি আর দেখে কে। ও তোকে অনেক পছন্দ করে। ‘ জাপান এক গাল হেসে বললো।

সানাহ্কে রেগে যেতে দেখে ওর পিছু পিছু আসছিল ফারহান। আচমকা ওকে দৌড় দিতে দেখে সে ঘাবড়ে গিয়েছিল তাই সে নিজেও দৌড়ে ছুটে এলো। কিন্তু এসেই সানাহ্কে অচেনা এক পুরুষের সঙ্গে হাসাহাসি করতে দেখে তার মনটাই বিষিয়ে গেলো। কৌতূহল হলো ছেলেটা কে জানার। নিশ্চই বিশেষ কেউ নাহলে সানাহ্ যার তার সঙ্গে হাসাহাসি করে না।

জাপানের সঙ্গে কথা বলাতে ব্যস্ত থাকলেও সানার হঠাৎ খেয়াল হলো ফারহান কোথায়। সে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ফারহানকে খুঁজলো। ফারহানকে নিজের কাছেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিষ্টি হেসে জাপানকে দেখিয়ে বললো ‘ ফারহান ও আমার জাপান ভাইয়া। বলেছিলাম না ওর কথা আপনাকে। দেখলেন হুট করে আমাকে চমকে দিতে না বলেই চলে এসেছে । ব্যাপারটা সারপ্রাইজিং না ? ‘

ছেলেটা জাপান জানার পর ফারহানের মন ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাওয়ার আর যতটুকুও বাকি ছিল তারও আশা শেষ। ফারহানের মন চাইছে সানার মতো যদি হুটহাট বেরিয়ে যেতে পারতো সব ছেড়েছুঁড়ে তাহলে তার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না। তবুও নিজের বুকে ওঠা ঝড় সামলে মেকি হেসে বললো ‘ হুম অনেক সারপ্রাইজিং। তুমি,অতসী, আন্টি আর তোমার জাপান ভাই সকলেই চমকে দিতে খুব পছন্দ করো। চমকে দেওয়া তোমাদের রক্তে বইছে। ‘

ফারহানের দাতে দাত চেপে মেকি হেসে কথাগুলো বলার ধরন জাপানকে বেশ অবাক করলো। সেই সঙ্গে অসস্তিতেও ফেললো। কেবলই মনে হচ্ছে ফারহান তাকে পছন্দ করে না। তাই সে সানাহ্কে বললো ‘ মনে হয় ভাইয়া আমার হুট করে আসাটা পছন্দ করেননি। ‘

‘ নাহ্ কই ? ফারহান সেরকম ধরনের মানুষই না। উনি অনেক আন্তরিক। আমার ভাই বোনদের নিজের ভাইবোন মনে করেন। তাইনা ফারহান ? ‘ সানাহ্ এক গাল হেসে বলল।

ফারহানের মনে হলো চোখে মুখে কেউ এক বাটি চুন মেখে দিয়েছে। সানার কথা শুনে থমথমে গলায় বলল ‘ অবশ্যই তাই। আফটার অল তুমি আমার হবু বউ। তোমার ভাই বোন মানেই আমার ভাই বোন। তোমার যা তাইতো আমার। ‘

সানাহ্ ফারহানের কথায় থাকা গম্ভীর ভাব ধরতে পারলো না। বরং ফারহানের কথা শুনে মস্ত হেসে জাপানকে বললো ‘ দেখেছো বলেছিলাম না ফারহান ওরকম মানুষই নন। যাই হোক এসব কথা এখন ছাড়ো। আমরা আজকে আমাদের বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছি আর সেখানে তুমিও যাবে আমাদের সাথে। তুমি তো জানো এত জামা কাপড়ের মধ্যে আমি নিজের জন্য কিছু পছন্দ করতে হিমশিম খাবো তাই তুমি হেল্প করলে আমার লাভ হবে। তোমার চয়েস ভালো আর আমার পছন্দের সঙ্গেও মিলে তাই কোনো প্রবলেম হবে না। ‘

‘ বলছিস ? তুই যখন বলেছিস তখন তো আর না করতে পারি না। ঠিক আছে কি আর করবো…. চল দেখি ‘ বলে জাপান নিজের গাড়ির দিকে এগোতে লাগলো।

জাপানকে ওর গাড়ির দিকে এগোতে দেখে সানাহ্ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ‘ তুমি কি এখন আলাদা গাড়িতে যাবে ? ওহ প্লিজ তুমি এখন বলো না তাহলে কিসে যাবো। আজব তো তিনজন যখন একই জায়গায় যাচ্ছি তাহলে একসঙ্গে গেলেই হয়। আলাদা যাওয়ার কি কোনো দরকার আছে ? তুমি ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দাও। আমি শিওর আমরা সবাই একসঙ্গে গেলে ফারহান খুশি হবেন। তাইনা ? ‘

ফারহান আর কি বলবে। শুধু নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিল। জাপান সানার কথামত ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। ফারহান এবার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সানাহ্ আর জাপানকে ওদের জায়গায় বসতে বললো।

ফারহান ভেবেছিল সানাহ্ এবার অন্তত ওর চিন জাপান ভাইয়ের সঙ্গে চিপকে থাকবে না কিন্তু ওকে নিরাশ করে সানাহ্ এবারও একই কাজ করলো। জাপানের সঙ্গে পিছনের সিটে বসার আগে একবার বললোও না যে সে পিছনে বসছে। একবারের জন্য ফারহানকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না। নিজের জাপান ভাইকে পেয়ে ফারহানকেই ভুলতে বসেছে। এটা কেমন ভালোবাসা যেখানে অন্য কাউকে পেয়ে ভালোবাসাকে ভুলে থাকা যায় ? ফারহানের উত্তর জানা নেই তাই সে বিষাদ মনে গাড়ি নিয়ে এগোলো….

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here