জীবনসঙ্গী
পর্ব ১৭
writer Tanishq Tani
আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি এতোদিন,,যে আমাকে পাগলের মতো নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছে তাকে আমি শুধু কষ্টই দিয়েছি,,আর না,,আজ থেকে আমি তোমাকে আমার সব কিছু সমর্পণ করলাম,,আমার যা কিছু বাকি আছে সব তোমার চরনে সঁপে দিলাম ভালোবেসে বিশ্বাস করে,,,শশী আজ থেকে অনিকেতের আকাশের শশী হয়ে থাকবে,,এই আকাশই হবে শশীর শেষ ঠিকানা,,,শশী কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
অনিকেত শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে চোখে চোখ রেখে নিজের দুঠোটের স্পর্শে শশীর চোখের জল মুছে দেয়,,বুকের মধ্যে জরিয়ে রাখে,,
অনিকেত আমাকে ধোঁকা দেবে না তো বলো?তোমাকে হারালে আমি বাঁচতে পারবো না অনিকেত,,
আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে তোমায় বিহনে,,
তুমি ছাড়া আমি অনিকেত জীবন্ত লাশ শশী,,তুমি আমার অক্সিজেন,, তোমাকে শুধু ভালোবাসতেই শিখেছি আমি,,আর কিছু শেখায় নি তোমার ভালোবাসা আমাকে,,,
শশীকে কোলে উঠিয়ে নেয় অনিকেত,, শশী অনিকেতের বুকে মাথা এলিয়ে দেয়,,ঘরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে অনি পাশে বসে,,,,বাইরে থেকে থেকে আকাশে বিজলি ডাকছে,,বিজলির আলো এসে শশীর ভেজা মুখের উপর পরে,,এলোমেলো চুলের খোঁপার ফুল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে,,লাল ঠোঁট থেকে থেকে কম্পিত হচ্ছে শশীর,,
অনিকেত শশীর দেহ থেকে শাড়ির আচল সরিয়ে নেয়,,লজ্জায় অনিকে ঝাপটে ধরে শশী,,,নিজের ভেজা পাঞ্জাবি খুলে শশীর কপালে চুমু দিয়ে আলমিরা থেকে টাওয়াল বের করে নিজের চুল মুছে শশীর দিকে এগিয়ে যায়,,,
শশীর চোখ দিয়ে এখনো থেকে থেকে জল গড়াচ্ছে,,, স্থির দৃষ্টিতে নিচে চেয়ে আছে,,,
শশীর কানের দুল,গলার নেকলেস খুলে দেয় অনিকেত,, শশীকে বুকের মাঝে নিয়ে চুলের খোপা থেকে গাজরা খুলে খোপাটা খুলে খোলা পিঠের উপর ছেড়ে দেয় চুলগুলো,,নিজের হাতে শশীর চুলগুলো মুছে দেয় অনিকেত,,
বুকের মাঝে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় শশীকে,,,নিজের দু ঠোট শশীর দুঠোটে,,তারপর শশীর সমস্ত দেহজুরে নিজের ভালোবাসার চিহ্ন একে দেয়,,
শশী কেঁপে কেঁপে ওঠে,, রিশাদ তো কামনা মেটাতে শুধু দেহ ছুয়েছিলো,,অনিকেত আজ শশীর দেহ মন দুটোয় ছুয়ে দিলো ভালোবাসার পরশে,,ঐ ছোয়া আর আজকের ছোয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য,,,অনিকেতের ছোঁয়ায় ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই নেয়,,প্রতিটি ছোয়াতে শুধু ভালোবাসি ভালোবাসি খুজে পায় শশী,,,
বাইরে প্রচন্ড ঝড় বইছে,,,শো শো বাতাসে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ,,,
সব কিছু ভেদ করে দুটি দেহ দুটি মন এক হয় চিরতরের লাগি,,,কিন্তু প্রকৃতি এতো বৈরি কেন আজ,,,তবে কি শশীর খুশিতে খুশি নয় প্রকৃতি,,
অনিকেতের আজ খুশির সীমা নেই,, নিজের করে পেয়েছে শশীকে,,একান্তই যেন শশী তার,,শশী নামক সম্পদ সম্পত্তির একচ্ছত্র অধিপতি আজ অনিকেত,,নিজের জীবনকে পরিপূর্ণ লাগছে,,,এই রাত এই সময়টা যদি এখানেই থামিয়ে দেওয়া যেত,,
ঘুমন্ত শশীর মুখে উপর পড়া চুলটাকে সহস্তে যতনে কানের পাশে সরিয়ে দেয়,,চাদরটাকে শশীর গায়ের আরেকটু উপরে উঠিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে উঠে যায় অনিকেত,,, মন চায় এভাবেই সারাজীবন জরিয়ে ধরে রাখতে,,,
কিন্তু বেগমসাহেবা যে খুব ক্ষুদার্ত,, শশী ঘুম থেকে ওঠার আগেই তাই অনিকেত নিজ হাতে ওর বেগম সাহেবার জন্য খাবার রান্না করে আনবে,,,বেগম সাহেবাকে নিজের রান্না করা খাবার খাওয়াবে আজ অনিকেত,,,
শশী চোখ বন্ধ করে ঘুম ঘুম ভাবে,,নিজের পাশে হাতরাতে থাকে,,,
অনিকেত কে না পেয়ে লাফ দিয়ে ওঠে বিছানা থেকে,,,কই গেলো অনিকেত,, এদিকে ওদিক চোখ ঘুড়ায়,,
অনিকেত! অনিকেত!
কোথায় তুমি? কাঁদো কাঁদো স্বরে,,,
না রুমে কারো সাড়াশব্দ নেই,,শরীরে চাদর পেচিয়ে ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে নামতেই ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে,,
সামনে টেবিলে উপর লাল শাড়ির সেট,,সাথে লাল চুরি ও আছে,,,উপরে একটা চিরকুট দেখতে পায় শশী,,শশী বুঝতে পায় এটা অনিকেতের কাজ,,
চিরকুট হাতে নিতেই মুখের হাসিটা আরো প্রশস্ত হয় শশীর,,,চোখে মুখে শান্তির ছাপ,,
” ভালোবাসার বেগমসাহেবা!
তোমাকে রেখে এক সেকেন্ড কোথাও যেতে আমার মন প্রান দেহ কোনটাতেই সম্মতি দেয় নাই,,তবুও যেতে হলো কিছুক্ষণের জন্য,,কারন আমার বেগম সাহেবার জন্য রাতের ডিনারের ব্যবস্থাটা যে করতে হবে,,,
এখানে কিছু পোষাক রেখে দিলাম,,রেডি হয়ে থেকো,,ততক্ষণে তোমার এই অধম দেওয়ানা বাদশাহ হাজির হয়ে যাবে,,
শশী চিরকুট পড়ে যথেষ্ট হাসে,,সত্যি শশী নিজেও দেওয়ানা হয়ে গেছে এই বাদশাহজাদার উপর,,
শশী ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি পড়ে আসে,,,
সামনের ড্রেসিং টেবিলে দাড়িয়ে ম্যাচিং কানের দুল,চুরি পড়ে,,,ঠোটে লিপিস্টক দেয়,,
তুমি জানো তোমাকে দেখলে তোমার প্রেমে বার বার খুন হতে ইচ্ছা করে আমার,,,
আচমকা পেছন থেকে অনিকেতের এমন কথা শুনে সামনে থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে,,লজ্জা লাগে খুব শশীর অনিকেত কে দেখে,,,
অনিকেত খাবার ট্রে সহ ভেতরে ঢোকে,,একটু পর একটা বেয়ারা গোছের ছেলে আরো কিছু খাবার দিয়ে সামনের ছোট টেবিলটা সাজিয়ে দিয়ে যায়,,
বেয়ারাটা চলে গেলে অনিকেত দরজা লাগিয়ে দেয়,,,
শশী অনিকেতের পাশ কেটে অন্য পাশে যেতে যাবে তখনি শশীর হাতটা টেনে নিজের কাছে টেনে নেয় শশীকে,,,
কই যাও বেগমসাহেবা,,আর দূরে সরে যেতে দেবো না তোমায়,,একচুলও না,,দরকার হলে পাজরের হাড়ে গেঁথে রাখবো তোমাকে,,,
শশীর থুতনি ধরে উচু করে শশীর চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিয়ে,,
অনিকেতের ঠোটদুটো শশীর ঠোঁটে কাছে যেতেই শশী অনিকেতের ঠোঁটে নিজের হাত রেখে বাঁধা দেয়,,
অনিকেত হাসি দিয়ে শশীর হাতের তালুতে চুমু দিয়ে হাতটা বুকের বামপাশে চেপে ধরে,,
এই হৃদয় ততদিনই হৃদয় হয়ে থাকবে যতদিন তুমি থাকবে আমার পাশে,,,
শশী লাজুক হাসি দিয়ে দাড়িয়ে থাকে,,,
চলো বেগম সাহেবা!খেতে বসি,,আমার ক্ষুদা কিন্তু একটুও নেই,,আজ এতো??শশী আবার মুখ চেপে ধরে অনিকেতের,,,
আমি কিন্তু খাবো না তুমি এমন করলে,,লজ্জা লাগে না আমার বুঝি?শশী মাথা নিচু করে বলে,,
আচ্ছা আর বলবো না,,চলো খাইয়ে দেই তোমাকে,,মৃদু হাসি দিয়ে,,
না! আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো,,
সত্যি! এটাতো আমার জন্য পরম পাওয়া,,আমার বেগম সাহেবার হাতের ছোঁয়া পেলে এ খাবার আজ নিজেদের ধন্য মনে করবে,,,
আআ,,খাওয়াও হেসে শশীর দিকে মুখ ঝুঁকিয়ে হা করে,,,
শশী খাবার মুখে তুলে দিতে যাবে তখনি অনিকেত শশীর হাত ধরে ফেলে,,
বেগম সাহেবা! তোমার হাত কেটেছে কি ভাবে,,কতোখানি কেটে গেছে,,খুব ব্যথা করছে বুঝি,,অনিকেতের স্বর ভারি হয়ে ওঠে,,
ও কিছু না,,চুড়িতে লেগে কেটে গেছে,,,
আমি দিয়েছি এই ব্যথা তাই না,,আমার কারনে এই ব্যথা পেয়েছ তাই না?খুব কষ্ট দিয়েছি তোমাকে আমি বেগম সাহেবা?শশীর কাটা হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অনিকেত,,
নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে অনির,,
সামনে থাকা চাকুটা দিয়ে নিজের হাতে টান দিতে যাবে তখনি শশী অনির হাত ধরে ফেলে,,,
কি করছ কি তুমি? পাগল হয়ে গেলে,,ব্যথা কি তুমি ইচ্ছা করে দিয়েছ? তুমি তো আমাকে এতো ভালোবাসো তুমি কোনোদিনও আমাকে ব্যথা দিতে পারো না,,অনিকেত রা শুধু ভালোবাসতে জানে ব্যথা দিতে জানে না,,
আর আমি ঠিক আছি,,একটুও ব্যথা নেই আমার,,সব যে তোমার ভালোবাসার ওষুধে সেড়ে গেছে,,,এখন যা আছে সব তোমার দেওয়া অফুরন্ত সুখের হাসি,,,
এবার হা করো,,তোমার বেগম সাহেবার কিন্তু খুব ক্ষুদা লেগেছে,,তুমি না খেলে আমি খেতে পারবো না,,
শশী অনিকেত কে খাইয়ে দেয়,,
অনিকেত খেয়ে শশীকেও খাইয়ে দেয়,,
খাওয়া শেষে জানালার পাশে গিয়ে বসে অনিকেতের বুকে মাথা রেখে শশী,,বাইরের ঝড়ো বৃষ্টি হাওয়া এসে দুজনকে আরো কাছে নিয়ে আসে,,,
এভাবেই,,,,,,
দুজন দুজনকে ভালোবাসার আবেশে জরিয়ে রাখে,,
চলবে,,,