জীবনসঙ্গী
পর্ব ১৮
writer Tanishq Tani
নতুন সকালের স্বচ্ছ সতেজ আবহাওয়া গায়ে লাগিয়ে এগিয়ে যায় শশী আর অনিকেতের গন্তব্যের পথচলা,,
পুরোটা রাস্তা শশীর হাত টা নিজের হাতে ধরে রেখে গাড়ি চালায় অনি,,যেতে বার বার ঘুরে ফিরে চোখটা যেন শশীর দিকেই এসে থামে,,এটাই যে শেষ গন্তব্য অনির,,শশীতেই যে বিলীন হয়ে গেছে সম্পূর্ণরূপে,,,
শশী লজ্জায় লাল নীল হয়ে অনির ভালোবাসা উপলব্ধি করে,,জীবন টা এতো মধূর অনিকে এভাবে না পেলে শশী বুঝতেই পারতো না,,
রিশাদের কারনে একসময় পুরুষজাতীর উপর ঘৃণা ধরে গিয়েছিলো।আজ অনির সংস্পর্শে এসে সে ধারনা পাল্টে গেলো,,এখন শ্রদ্ধা করে অনির মতো পুরুষকে,,আসলে জগতে সব মানুষ তো এক না,,দুনিয়াতে যেমন শয়তান আছে।তার বিপরীতে আল্লাহ পাক ফেরেশতাও বানিয়েছেন,,,ভালো খারাপ দিয়েই দুনিয়াটা,,,হতাশ হওয়া তো সয়ং রাব্বুল আলামীনেরও পছন্দ না,,
গাড়ি এসে থামে চৌধুরী মঞ্জিলে,,,
অনিকেত গাড়ি থামিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়,,,নাক চিকন করে শশীর দিকে অগ্রসর হয়,,
কি হচ্ছে টা কি,,কেউ দেখে ফেলবে তো?
সরো,,,
অনিকেতের বুকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়,,,
দেখলে কি হয়েছে,,, যা করছি নিজের বউয়ের সাথেই তো করছি,,পরকীয়া করছি নাকি?যে লোকলজ্জার ভয় করবো,,, ডিস্ট্রার্ব করো না তো? খুব ইচ্ছা করছে,,একটা শুধু একটা দিবো বেগমসাহেবা,, ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে,,,
একটাও না,,,বলেছি না,,অনির বুকে হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে,,,
আমি কিন্তু খুব রাগ করবো বেগমসাহেবা,,আমাকে কষ্ট দেবে তুমি? স্বামীকে এসব বিষয়ে না করতে নেই কিন্তু বেগম সাহেবা,,,পাপ হব্বে পাপ,,ঘোর পাপ,,
করুন চোখে তাকিয়ে,,,
অনি! এটা কিন্তু ঠিক না,,ইমোশনাল ব্লাকমেইল করবা না বলে দিলাম,,এতো রোমাঞ্চ কোথা থেকে আসে বলোতো,,, এতো এনার্জি কই পাও,,,রাগ দেখিয়ে বলে,,,
সব তোমার দোষ এতো সুন্দর কেন তুমি? এতো নেশা কেন তোমার দেহে,,চাইলে নজর সরাতে পারি না,,,তুমি এমনি জিনিস আমার কাছে যাকে হাজার লক্ষ কোটিবার ভালোবাসলেও তৃপ্ত হবো না আমি,,তোমাকে দেখলে অটোমেটিক্যালিই এনার্জি চলে আসে,,শশীর গালটা টেনে দেয়,,
হু,, গাল ঢলতে ঢলতে,,এখন সব দোষ আমার,,আমার দোষ তাই আমিই এখন তোমাকে শুধরাবো,,এসব লুচুগিরী চলবে না এখন থেকে,,,
একশ বার চলবে,,হাজার বার চলবে,,
তোমার জন্য লুচু, লুচি,লিচি,ম্যাংগো সব হবো আমি,,বাট একটা দাও না বেগমসাহেবা,,বাচ্চাদের মতো নেকাসুরে বলে,,
হিহিহিহি,,না দিবো না,,নেকাশষ্টি একটা,,
ঠিক আছে দিবা না তো,,যাও লাগবে না,,মুখ কালো করে অন্য দিকে ফিরে দরজার হাতলে হাত রাখে অনিকেত,,,
অনিকেত কি সত্যি রাগ করলো? আমি কি একটু বেশিই করে ফেললাম,,একটা কিসিই তো চেয়েছিলো,,ধ্যাৎ আমি না একটু বেশি বেশিই করি,,কিন্তু সে এমন কেন? নিজেরই তো বউ এতো নেকামির কি আছে না দিলে জোর করে নিতে পারে না,,আমি তো এখন তারই,,আমি কি কিছু মনে করবো নাকি? মনে মনে বলে শশী,,
অনিকেত! সরি,,রাগ করো নাআআআ
কথা শেষ না হতেই শশীর চুলের ভেতর হাত দিতে মাথা চেপে ধরে নিজের ঠোটের দখলে নিয়ে নেয় শশীর ঠোঁট জোড়া,,
আচমকা অনিকেত এমন করাই,,শশী ভয়ে চোখ বড় করে ফেলে,,,অনিকেত বুকে হাত ঠেকিয়ে সরানোর চেষ্টা করে,,কিন্তু তাতে লাভ হয় না,,অনিকেত নিজের কাজে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ব্যস্ত এখন,,কোনো বাঁধায় ইহাতে ব্যঘাত ঘটাতে পারে,,
অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দেয়,,শশীর ঠোটদুটো ভার হয়ে থাকে,,
বউ বলদী হলে স্বামীকেই যে সব শিখিয়ে বুঝিয়ে অভিজ্ঞ করে নিতে হয়,,দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম বিষয়টা,,,শশীর গালের দুপাশে আলতো করে আবারও ভালোবাসার পরশ দিয়ে মৃদু হাসতে হাসতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়,,,
শশী থ হয়ে বসে থাকে সিটে,,ঠোটে হাত দিয়ে বসে থাকে,,,জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস ওঠানামা করে,,অনির যাওয়ার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকে,,,
অনিকেত তো হাসতে হাসতে বাড়ির ভেতরে ঢোকে,,,শশীর ঐ অবস্থা দেখে অনির যথেষ্ট হাসি পায়,,,
ঐ যে অনি চলে এসেছে,,,
অনি দেখ কে এসেছে?
অনির হাসি মুখ সিরিয়াস হয়ে যায়,,,
মিলা! তুমি?
হ্যাঁ,, আমি,,কি দেখছি এসব আমি আন্টি?
অনি! তুমি একদমি ডায়েট মেইনটেইন করো না,,আন্টি দেখেছেন? দুইদিন একটু দূরে কি গিয়েছিলাম অনির তো নিজের প্রতি কোনো খেয়ালই নেই,,অনির সামনে দাড়িয়ে অনিকে দেখতে দেখতে বলে,,
আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি,,,
মম! ও গাড়িতে বসে আছে,,ফারিহা কে বলো গিয়ে দেখতে,,,মায়ের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে অনি,,,
আচ্ছা দেখছি আমি,,,অরুনা চৌধুরী চলে যায়,,,
মন তো চাই অনিকে শক্ত করে জরিয়ে সিনার মাঝে গেথে নিতে,,কিন্তু কিভাবে সম্ভব হবে,,অনি যে এখনো ভালোবাসে না মিলা কে,,,আর কত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে আমাকে বলো না অনি,,আর যে মন মানে না আমার,,তোমাকে নিজের করে পাবার জন্য মনটা বড় ব্যাকুল আমার,,কেন বোঝো না তুমি আমাকে? কেন?স্থির দৃষ্টিতে অনিকেতের দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবে,,,
মিলা!অনিকেত মিলার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,,
কি হলো,,এভাবে কি দেখছ?
কেঁপে ওঠে মিলা তুড়ির আওয়াজে,,,
কই! কিছু নাতো,,মাথা নিচু করে চোখের কোনের জল মুছতে মুছতে বলে,,
কখন এসেছ? গ্রাম থেকে,,,
কাল রাতেই ফিরেছি ঢাকায়,,, ফিরেই তোমাকে কল করেছি,,, কিন্তু তোমার মোবাইল বন্ধ ছিলো,,,প্রায় ৪দিন ধরেই বন্ধ পাচ্ছি তোমার মোবাইল ,,,
ওহ সরি! আসলো একটু ব্যস্ত ছিলাম,,তারপর বলো এতো লং টাইম ছুটি কাটালে,,মিস করো নাই আমাদের,,কিছুটা মজা করেই কথাটা বলে অনি সোফায় বসতে বসতে,,
আর কাওকে মিস করিনি,,তবে প্রতিটা সেকেন্ড তুমি আমার মস্তিষ্কে, হৃদয়ের স্পন্দনে ছিলে,,শুধুমাত্র বাবার অসুস্থতার জন্য তোমাকে ছেড়ে এতোদিন একা থাকতে হলো আমাকে,,,বাবা সুস্থ হলেই তোমার কথা বাবাকে বলবো আমি,,তুমি জানো না আমি কার মেয়ে অনি? তোমাকে সোজাসুজি না পেলে জোর করে হলেও নিজের করে ছাড়বো আমি,,,কারন তোমার উপর শুধু এই মিলা ইমতিয়াজের হক,,
বির বির করে বলে নিলা,,
ঐ হ্যাঁলো! আবার হারিয়ে গেলে,,কি হয় যে তোমার মিলা হঠাৎ হঠাৎ,, এভাবে তাকিয়ে কি বিরবির করো বলোতো,,,
না কিছু না,,,তুমি কিন্তু অনিকেত খুব অনিয়ম করছ,,আমি তোমার ডায়েটিশিয়ান,,আমি থাকতে আর তোমাকে ডায়েট মিস করতে দেবো না,,
মিলা আপু! দেখো কে আমার সাথে,,
মিলা পেছনে তাকাতেই হাসির শেষ রেখাটাও মুছে যায়,,,
এ কাকে দেখছে? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না,,যাকে অনির জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কতো কি না করেছে,,আর সেই অনিকেতের বাড়িতে,,,কিন্তু ও এখানে কেন,,মিলার মুখে কালো মেঘ জমে যায়,,
তবুও জোর করে হালকা হাসে মিলা,,,
আরে শশী যে,,, কতদিন পর দেখা,,,তারপর কেমন আছ? রিশাদ কেমন আছে,,,এখানে কেন তুমি?শশীর সামনে এসে,,
শশীর মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটে ওঠে মিলার কথায়,,মিলাকে এখানে দেখে শশীর বুকের মধ্যে কেমন কেমন করে,,,
রিশাদের কথা জিজ্ঞেস করায় চোখ মুখ ভার করে অনির দিকে তাকায় শশী,,,
অনিকেত কিছু বলতে যাবে দাঁত কটমট করে তার আগেই ফারিহা বলে ওঠে,,,
আরে মিলাআপু! তুমি ভাবি কে চেনো??
ভাবি? শশী তোমার কেমন ভাবি লাগে ফারিহা?রিশাদ কি তোমাদের কাজিন হয় নাকি?
রিশাদ টা আবার কে? আমি তো বলছি শশী ভাবি হলো আমার ওয়ান এ্যান্ড অনলি অনি ভাইয়ের মিষ্টি মিষ্টি বউ,,
হোয়াট? কি বলছ তুমি? চিৎকার দিয়ে ফারিহার সামনে চোখ বড় করে তাকায়,,
পা দুটো অসাড় হয়ে আসছে মিলার,,
আমি কি মিথ্যা শুনলাম! না না,এ হতে পারেনা,,অনিকেত তুমি শুধু আমার অনিকেত,,,, তুমি অন্য কারো হতে পারো না,,,স্থিরদৃষ্টিতে পাথর হয়ে দাড়িয়ে রয় মিলা,,
উপস্থিত সবাই কিছুটা অবাক হয় মিলার এমন রিয়াকশনে,,,
কি হলো মিলাপু! মিলাকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে,,এই মিলাপু,,
হ্যাঁ,,,, হ্যাঁ,,,ফারিহার দিকে বেকুবের মতো চেয়ে,,
কি হলো তোমার,,,,
না কিছু না,,অনির দিকে তাকিয়ে,,,
মিলা বসো,,খেয়ে দেয়ে যেয়ো,,,দুপুরে কথা হবে তোমার সাথে।
অনেক টায়ার্ড লাগছে আমার,,
ফারিহা ব্রেকফাস্ট টা উপরে দিয়ে যাস,,
শশী চলো,,,,,,, অনিকেত শশীর হাত ধরে উপরে চলে যায়,,,
শশী যেতে যেতে পেছন ফিরে মিলার দিকে তাকায়,,কাল নাগিনী কাছ নাগ মনি নিলেও হয়তো এমন মুখাবয়ব করবে না যেমনটা মিলার মুখাবয়ব হয়েছে এখন,,,শশী ঠিক বুঝতে পেরেছে মিলা শশীকে অনিকেতের জীবনে দেখে বিন্দুমাত্র খুশি হয় নাই,,,
মিলাপু বসো,,,এই মিনু আপা!ভাইয়া ভাবির নাস্তা উপরে দিয়ে আসো,,,
আপু বসো কতোদিন গল্প করি না তোমার সাথে,,আমাকে একটা ডায়েট টিপস দাও তো,,মোটা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন,,
ফারিহা আমি বরং আজ আসি,,অনির রুমের দিকে তাকিয়ে। কথাটাবলেই হন হন করে চলে গেলো,,,,
ফারিহা হা করে বসে রইল,,কেমন অভদ্র ব্যবহার করলো মিলা।জবাব না দিয়েই চলে গেলো,,, কি হয় মিলা আপু কে জানে,,,থেকে থেকে ডং করে,,ডায়েটিশিয়ান না সুপার মডেল কে জানে,,ভাব দেখায়,,,ভেংচি দিয়ে বলে ফারিহা
কিরে মিলা কই?
ডঙির আবার ভং ধরেছে,, চলে গেছেন উনি,,আচ্ছা মম মিলাপু শুধু ভাইয়ার কথায় কেন মানে,,আমাদের কথা কেন মানে না,,
বেয়াদব মেয়ে! মিলা তোর বড় বোনের মতো না,,কি সব বলিস ওকে তুই,,, ও তোর কথা মানতে যাবে কেন?মিলা কি তোর ডায়েটিশিয়ান,,, আর ও তো খুব ভালো মেয়ে,,বাবা মা মরা মেয়েটা,,ওকে একদম কিছু বলবি না,,,
হ হ বলবো না,,দুনিয়ার সবাই ভালা,, একা এই ফারিহায় ভালা না,,,
আমি তো ভালা না ভালা না তাইলে ভালা লইয়াই থাকো,,,আমি যাই,,,
ফাজিল মেয়ে,,অরুনা চৌধুরীর মাঝে মধ্যে রাগ হয় ফারিহার বাচ্চামো দেখলে,,বয়স হলেও বুদ্ধি বাড়ে নাই,,,
অনিকেত শশীকে নিয়েই ওয়াশরুমে ঢোকে,,এক আয়নার সামনে দুজনে ব্রাশ করতে থাকে,,অনিকেত ব্রাশ করে আর শশীর দিকে চেয়ে থাকে,,
শশীর স্থির দৃষ্টি আয়নার দিকে। ব্রাশটা ঠিক করছে না,,মুখে ব্রাশ নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছে।চোখের সামনে শুধু মিলার চমকে যাওয়া মুখটা ভাসছে,,আচ্ছা মিলা কি সত্যি ভালোবাসে অনিকে,,মিলা এখানে কি করছে? নানা চিন্তা শশীর মাথায় ঘুরপাক করছে,,,
হঠাৎ কারো ভেজা হাত নিজের পেটের উপর অনুভব করে,,তাকাতেই দেখে অনি বাকা হাসি হাসছে,,
ছাড়ো,,কি করছ কি,,ঠান্ডা লাগছে তো,,,
লাগুক ঠান্ডা,, শশীকে নিজের কাছে টেনে শশীর ঘারে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়ায়,,
তুমি না! ব্রাশ টাও কি করতে দেবে না,,
করো ব্রাশ,, আমি কি বাঁধা দিয়েছি,,তুমি তোমার কাজ করো আর আমি আমার কাজ করি,,,
তোমার এসব ঘোড়ার ডিম কে কাজ বলে,,
ছাড়ো না,,তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,,তুমি থাকতে আমি শান্তি মতো ফ্রেশ হতে পারবো না,,যাও যাও,,অনিকে জোর করে ওয়াশরুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়,,
বেগম সাহেবা এটা কিন্তু ঠিক না,,আমাকে সবসময় দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো,,একসময় তুমি আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বেশি ব্যাকুল হবে দরজার ওপাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে,,,,,
হুমম ঘোড়ার ডিম হবো,,,শশীও দরজার এপাশে হেলান দিয়ে মুচকি হেসে বলে,,,
চলবে,,,