#তুমি_আমার
#পর্ব_০৭
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
এ্যায়ারপোর্টে বসে বোরিং টাইম পার করছে একজন সুদর্শন যুবক।পাশের লাগজটার হাতলে হাত টেকিয়ে এক পায়ে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে সে।পরণের কোর্ট খুলে হাতে তুলে নিয়েছে ইতিমধ্যে। চোখে তাঁর রাজ্যের ক্লান্তি বিদ্যমান।সেই আধঘন্টা আগে প্ল্যান লেন করেছে অথচ পাঁচ মিনিট বলে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি এখনও এসে পৌছায় নি।ফোন হাতে আরেকবার ডায়াল করার আগে সামনে এসে বএিশ পাটি দাঁত বের করে দাঁড়ালো কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষ।রেগে মেগে কয়েটা কথা শুনাতে উদ্যত হলেই দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে তাকে।কিছুক্ষণ এভাবে কাটার পর নিজেকে ধাতস্থ করে অনুনয়ের সুরে বলল,
-‘সরি!সরি ভাইয়া সরি ফর লেট।একচুয়েলি এতক্ষণ জ্যামে বসেছিলাম।তাছাড়া অন্তু ভাইয়ারও আসতে একটু লেট হয়ে গেছে সেজন্য রাগ করিস না বলে কান ধরল সে’।
তিথি মেয়েটা যেমন দেখতে শুনতে ভালো স্মার্ট তেমনি সবাইকে আপন করার ক্ষমতাও রয়েছে প্রখর।দেহের গঠনে মোটিও নয় আবার না চিকন।গুলুমুলু টাইপ।এখানে এসেছে মূলত তার খালা ত ভাই রাদিফ কে নিয়ে।লন্ডন থেকে এসেছে সে।বাবা মা কেউ নেই ছোট বেলায় মারা গেছেন।সেই থেকে খালার কাছে মানুষ।পেশায় একজন ডক্টর।একদম নিজের বোনের মত স্নেহ করে তাঁদেরও কোনো ভাই না থাকায় সেই ফাঁকা জায়গাটা ওকে দিয়েই পূরণ করে নিয়েছে।তিথি লক্ষ্মী একটি মেয়ে।কারোর উপায় নেই এই মেয়ের উপর পাঁচ মিনিটের উপরে রাগ করে থাকার।সামনে থাকা ছেলেটিও পারলো না রাগ ধরে রাখতে।গম্ভীর মুখ খানাতে না চাইতেও হাসির রেখা ফুটাতে হলো তাকে।মিহি সুরে বলল,’পারিসও বটে’।মেয়েটি হাসলো সাথে সেও।ততক্ষণে বাহিরে থেকে ডাক চলে এলো তাঁদের।নিজের ব্যাগপত্র গুলো নিয়ে ছুটলো গাড়ির দিকে।গাড়িতে বসে জানালার ফাঁক দিয়ে নিজের মাতৃভূমিকে দেখছে মুগ্ধ নয়নে।প্রায় একবছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলো সে।এবার পার্মানেন্টলি থাকার ইচ্ছে আছে।মাঝে একবার ওখানে ফিরলেও আবার ফিরে আসবে নিজের আপন ভুবনে।এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।আস্তে আস্তে দিনের সেই আলো নিভে প্রকৃতিতে নেমে আসছে আবছা অন্ধকার।।সবাই চুপচাপ তিথি বলল,
-‘ভাইয়া তুই কি সোজা বাড়িতে যাবি নাকি শপিংমলে’?
-‘সোজা বাড়ি এখন কোথায়ও যাচ্ছি না’।
-‘আমরা ত ওখানে নামব তুই একা যাবি’।
-‘নো প্রবলেম!তোরা যা আমার একটু রেস্টের প্রয়োজন’।অন্তু আর তিথি দুজনে আর কোনোকথা বাড়ালো না।জার্নি করে এসে রেস্ট নেওয়াটাই স্বাভাবিক।হঠাৎ একটা কথা মনে হতেই উচ্ছাসিত কন্ঠে অন্তু বলল,
-‘ব্রো তোমার ওই পিচ্চি মায়াবীনির খবর কি?আর কোনো খোঁজ পেয়েছিলে’?নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে যায় তাঁর।এই একবছর ওই পিচ্চি মায়াবীনি অনেক জ্বালাতন করেছে তাঁকে।কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারে নি।দিন রাত মাথায় জেঁকে বসে ছিল।ওকে ভুলতে একটি রিলেশনে জড়াতে চেয়েও পারে নি কোথায় যেন আটকে গেছে।এবার পার্মানেন্টলি এখানে আসার কারণও অচেনা সেই মেয়েটি।যদিও মেয়েটির নাম ঠিকানা কিছুই জানে না সে। তবুও একটাই বিশ্বাস এবার তাঁর দেখা সে পাবেই পাবে।আর যদি না পায় ত চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?ফিচেল হেসে জবাব দিল,
-‘আমি ওদেশে থেকে তাঁর খোঁজ কি করে পাব’?অন্তু মলিন মুখে বলল,
-‘তাও ঠিক’!
🍁🍁🍁
শপিংমলে যে যার কেনাকাটায় ব্যস্ত।সিয়াম আর আবেশ এক পাশে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। তাদপর সাথে যোগ দিয়েছে তিন্নির কাজিন অন্তু ।শপিংয়ে আবেশের আসার বিন্দু পরিমান ইচ্ছে ছিল না কিন্তু ভাইয়ের বিয়ের কেনাকাটা না এসেও উপায় নেই।আর সিয়াম যাকে ছাড়া সে কিছুই করে না তাঁকে বাদ দেওয়া যায় না কারণ পুরো খান বাড়ী মানে ও তাদের পরিবারেরই একজন।সিরাত বিরক্ত হয়ে একটা চেয়ারে বসে আছে।প্রায় সব কিছুই কেনা শেষ শুধু বিয়ের লেহেঙ্গা ছাড়া। এক ঘন্টা ধরে বিয়ের লেহেঙ্গা কিনা হচ্ছে কিন্তু মন মত হচ্ছে না।কেউ বলছে বেনারসি কেউ লেহেঙ্গা তাই পছন্দ করতে হিমশিম খাচ্ছে।।একগাদা লোক এদিক সেদিক ছোটে এটা ওটা কিনছে।এত যাচাই বাচাই সিরাতের একদম পছন্দ নয় শুধু শুধু টাইম ওয়াস্ট।তারচেয়ে যা নিবে সেটা মনস্থির করে সে অনুযায়ী নেবে তাহলে এত ঝামেলা পোহাতে হয় না।তিন্নি ভাবী আবিদ ভাইয়ার হবু স্ত্রী আজই প্রথম আলাপ সিরাতের সাথে।মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী।খান পরিবারের পছন্দ আছে।তার ছোট বোন তিথি সেও দেখতে তিন্নি ভাবীর মত।তবে উনার মত গম্ভীর নয় চটফটে স্বভাবের।তিন্নি ভাবী লজ্জায় মাথা নিচু করে আছেন আর আবিদ ভাইয়া কিছুটা দূর থেকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছেন তার দিকে।মূলত এই জন্যই অতিরিক্ত লজ্জা তাকে ঘিরে ধরেছে।
অবশেষে লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছে সেটাও সিরাত আর আবেশের জন্য।সকলকে এত হিজিবিজি করতে দেখে একটা লেহেঙ্গা দেখিয়ে হাত উঁচু করতেই সামনে আরেকটি হাত দৃশ্যমান হয় তার।নির্বোধের মত একে অন্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে দুজনে।সেই চুজ করা লেহেঙ্গা টাই নেওয়া হয় অবশেষে।সিরাত আর আরু দুটো লেহেঙ্গা কিনেছে সেটা সিয়ামের পছন্দ করা।সকলের না করা স্বও্বেও বিল সিয়াম পে করেছে।এবার আবেশের একটি শাড়ির দিকে নজর গেলো আরুকে দেখিয়ে সেটা নিয়ে নিলো তবে একটি নয় সেও দুটো নিয়েছে।
সবাইকে রেখে সিরাত জুয়েলারি সাইডে গিয়ে লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি খুঁজতে ব্যস্ত।পেছন থেকে ভরাট পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনে থেমে পেছন ফিরে তাকায়।হাত ভাঁজ করে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে আবেশ তাকে দেখে কপাল কুচকে এলো তার কিন্তু কিছু বলল না।
-‘ব্যাথা সেড়েছে সিরাত’?সিরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।ওর পাশে এসে কাছ ঘেঁষে দাঁড়াতেই কেঁপে উঠলো সিরাত।আবেশ হাসলো রহস্যজনক হাসি।সিরাত খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে কেনাকাটায় মনযোগ দিল কিন্তু কিছুতেই সে পুরো মনযোগ দিতে পারছে না।বারবার আবেশের দিকে নজর যাচ্ছে।কিছুক্ষণ ওর কার্যকলাপ দেখে আবারও কাছে এলো তবে এবার কিছুটা দূরুত্ব নিয়ে।মেয়েদের জিনিসে কোনো আইডিয়া নেই তার তাই বোকা বোকা চাহনি দিয়ে দেখছে।বিরক্তি নিয়ে সিরাত বলল,
-‘আপনি এখানে কি করছেন?যান ত এখান থেকে আমি একটু একা দেখতে চাই’।
-‘পাহাড়া দিচ্ছি’!চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সিরাত।অবাক কন্ঠে বলল,’কাকে’?
-‘এই ঝাঁষির রাণী কে’।ডানে বামে তাকিয়ে সে ছাড়া পরিচিত কাউকে শপে দেখতে পেলো না তাই আবারও বলল,’ঝাঁষির রাণী কে?কোথায়,তাকে আপনি পাহাড়া দিচ্ছেন কেন’?আবেশ জানত এই প্রশ্নটাই করবে তাই তার তৈরী করা জবাব দিল,
-‘ভীতুর ডিম!ভাইয়ের আদরে বাদর কিনা যদি হারিয়ে যায় তখন বন্ধুকে কি জবাব দেব।ভাই ত আমার আশায় এই রাতের বেলা রেখে গেছে কিনা।আমি বাবা রিস্ক নিতে চাই না তাই পাহাড়া দেওয়াই ভাল’।
-‘ইয়ার্কি হচ্ছে’?গম্ভীর মুখে জবাব দেয়…..
-‘নো আই’এম সিরিয়াস’!
সকলে রেস্টুরেন্টে বসে আছে।রাতের ডিনার সেরে তবেই বাসায় যাবে।আবিদ আর আবেশ সকল ব্যাগপএ রাখতে গেছে। তিন্নির সাথে আরুর বেশ ভাব হয়ে গেছে।দুদিন পর যে বাড়ীতে থাকবে সেখানের সবার সাথে আসার আগেই ইজি হওয়া ব্যাপারটা ভালো।দুই ভাগ করে টেবিলে বসেছে সবাই।একদিকে ইয়াং সবাই আর অন্যটিতে বড়রা।জায়গা হয়নি বলে অন্তু ওদের সাথে আছে।আবেশরা আসলে খাওয়া শুরু হবে।সকলেই খাচ্ছে আবেশ দুটো টেবিল দেখে বসতে বসতে প্রশ্ন করলো,
-‘সিরাত কোথায়’?এতক্ষণে সিরাতের কথা মনে পরলো আরুর।খাবার মুখে নিতে গিয়েও থেমে গেলো।দশ পনেরো মিনিট হলো তাকে দেখছে না সে।সেটাকে পাওা না দিয়ে তিন্নির সাথে গল্প জুড়েছিল।ভেবেছিল হয়ত অন্যদের সাথে আছে।আরু বলল,
-‘ওই টেবিলে নেই’?
-‘না’।চিন্তার ভাঁজ পরলো আরুর কপালে মেয়েটা গেলো কোথায়।তখন দুইটা ছেলে ডিস্টার্ব করেলছিল বলে মন খারাপ করে একটু দূরে গিয়েছিল।ফোন হাতে নিয়ে ওকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।।তিথি বলল,
-‘উনাকে ওয়াশরুমের দিকে শেষবার যেতে দেখেছি আমি’।আবেশ বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ছুটলো ওদিকে কিন্তু পেল না।সকলেই এবার চিন্তায় পরে গেছে।আবিদ উদ্ভিগ্ন কন্ঠে বলল,
-‘মেয়েটা গেলো কোথায়’?আরু ফোনে পেয়েছিস’?আরু হতাশ হয়ে না বলল।আবেশ রাগ দেখিয়ে আরুকে বলল,
-‘এই তোর দায়িত্ব।এবার সিয়ামকে আমি কি জবাব দেব’।আরুরও চিন্তা বাড়ছে।আবেশ এগুতে যাবে তখন সিরাতের কণ্ঠস্বর শুনে থেমে গেলো হাঁপাতে হাঁপাতে কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
-‘আরু ওই ছেলেগুলো আমাকে একটা অর্ধ নির্মিত বিল্ডিংয়ে নিয়ে এসেছে আমি পালিয়ে এসেছি ওরা আমার পিছু নিয়েছে পা কেটে গেছে হাঁটতে পারছি না। আমার খুব ভয় করছে বাঁচা আমাকে প্লিজ ভাইয়া আর আব্বুকে এইটুকু বলেই থেমে গেলো টুট টুট টুট।আরুর চোখ থেকে টপাটপ পানি পরছে।হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।ধপ করে বসে পরেছে চেয়ারে।আবিদ ফোনটা হাত থেকে নিয়ে আবার কল দিল কিন্তু সুইচ অফ।উপস্থিত সকলে হতভম্ব দিশেহারা।সিয়ামকে জানানো উচিৎ হবে কিনা জানা নেই আবেশের।জানালেই বা কি বলবে সেটাও বুঝতে পারছে না।মিসেস খান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তিনিও কাঁদছেন।মেয়েটা কোন অবস্থায় আছে কে জানে।আবিদ তাড়া দিয়ে বলল,
-‘আবেশ এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না চল ওকে খুঁজতে হবে নইলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।পুলিশেও ইনফর্ম করা জরুরি।সিয়ামকেও ত বলতে হবে’।পাশ থেকে মিঃ খান বললেন,আমি যাচ্ছি পুলিশ স্টেশন’।আবেশ বলল,
-‘ভাইয়া তুমি সবাইকে সেইফলি বাড়ী পাঠানোর ব্যবস্থা কর আমি আসছি আর সিয়ামকে জানাচ্ছি ‘।আরুর ফোন নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে গেলো সে।তিন্নিদের বাসায় কল করে গাড়ি পাঠানোর কথা বলেছে আবিদ।তিন্নির মা পাঠাচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।আবিদের এখানে কাজ আছে তাই যেতে পারবে না।
শপিংমলের চারদিক খুঁজে চলেছে আবেশ কিন্তু কোথাও সিরাত নেই।মাথা কাজ করছে না নিজের চুল ধরে নিজেই টানছে।এতগুলো লোকের মাঝখান থেকে বেচে বেচে এই মেয়েটাকেই ধরতে হলো।মেয়েটাও ইডিয়ট নইলে এখান থেকে নিয়ে যায় কি করে।ইতিমধ্যে সিয়াম এসে পৌঁছে গেছে পুলিশও খুঁজছে।হাঁটতে হাঁটতে বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেছে আবেশ কিন্তু কোথায় সে কোথায়।কোথায় অর্ধ নির্মিত সেই বিল্ডিং কিচ্ছু জানে না।শপিংমল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে লোকসমাগম নেই তেমন সেখানে সিরাতের একটি জুতো চোখে পরলো তার।জুতোয় রক্ত লেগে আছে।রাস্তার পাশে ঝোপঝাড় দেখা যাচ্ছে।কৌতূহলবশত সামনে এগুলো।ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে আর কোথাও রক্তের চাপ আছে কিনা দেখার জন্য।
ঝোপ পেড়িয়ে কিছু শব্দ পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আবেশ।কোথা হতে শব্দের উৎপওি খুঁজতে থাকে।শব্দগুলোর উৎপওি ওর পেছনে।পেছন ঘুরে হতবাক আবেশ সিরাতকে চারটি ছেলে জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওকে।ওর দিকে নজর দিতেই আতকে উঠে।গায়ে ওড়না নেই,চুলগুলো এলোমেলো,এক পা দিয়ে মাটিতে ভর দিতে ব্যর্থ।মুহূর্তেই রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো আবেশ।আচমকা থামায় সামনে তাকিয়ে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো সিরাতের।একটি ছেলে বলল,
-‘ওই কে তুই আমাদের সামনে থেকে সর’।
কথাটা শেষ হতে না হতেই একটি ঘুষি পরলো ওর নাক বরাবর।সিরাতকে ছেড়ে সবাই হামলে পরলো ওর উপর কিন্তু সব কয়টাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে।আবেশকে ভয়ংকর দেখাচ্ছে এখন।সবাইকে মেরে এগিয়ে গেলো সিরাতের সামনে।সিরাত কোনোদিক বিবেচনা না করে আবেশের গলা জড়িয়ে হামলে পরলে ওর বুকে।এতক্ষণ পর একটি পরিচিত মুখ।ভরসা, আশ্রয়স্থল পেয়েছে সে।সে জানে যাইহোক না কেন এই মানুষটা থাকতে কেউ ছুঁতেও পারবে না তাকে।এই বুকই যে এখন তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।আচমকা একটি ছেলে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে আসলে আবেশ নিজের হাত দিয়ে আটকাতে গিয়ে অনেক খানি কেটে যায় তাঁর হাত গরগর করে রক্ত পরতে থাকে।ওর পেছনে আরো কয়েকজনকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি সিরাতকে নিয়ে পালাতে লাগলো।সিরাত হাঁটতে পারছে না কষ্ট হচ্ছে পা ফেলতে।তবুও দাঁত মুখ খিচে আবেশের সাহায্যে হাঁটছে।রাস্তায় পৌছে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল আবেশ।সিরাত এখনও আবেশের বুকের সাথে মিশে শার্ট খামছে ধরে আছে।আবেশও পরম আবেশে একহাতে আগলে রেখেছে।অন্যহাতে রক্ত ঝরছে সেটা সিরাতের দৃষ্টির অগোচরে লুকিয়ে রেখেছে।ভীষণ ভয় পেয়েছে এমনিতেই। এরপর রক্ত দেখলে আরও ভয় পাবে।কিন্তু আবার ওরা এদিকে আসছে দেখে আবেশ ঘাবড়ে যায়।রাস্তায় কোনো গাড়িও নেই।এই অবস্থায় ওকে নিয়ে যাওয়াও যাবে না।চিন্তার ভাঁজ পরলো কপালে।সিরাতকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দুহাতের মুঠোয় মুখ ধরে বলল,
-‘প্লিজ সিরাত কেঁদো না।তুমি এখনও নিরাপদ নও।ওরা আসছে আমি ওদের আটকাচ্ছি তুমি আস্তে আস্তে পা ফেলে সামনে এগুও।ততক্ষণে মানুষজনের কাছে পৌঁছে যাবে’।আবেশকে দুহাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না মিশ্রিত গলায় বলল,
-‘আমি যাবো না।আপনাকে এই বিপদে একা ফেলে কোথাও যাব না আমি’!অনেকটা ধমকের সুরে বলল,
-‘জেদ করো না যাও বলছি’।
-‘আমি যাব না’।বলে ফুঁপিয়ে উঠলো সিরাত।আর কিছু বলার সাহস পেলো না আবেশ।এমনিতেই বারবার কেঁপে উঠছে তার উপর যদি জোর করে তাহলে হয়তো ভয়ের চোটে হিতে বিপরীত কিছু ঘটবে।তার চেয়ে থাক যা হওয়ার হবে।পেছন থেকে একটি ছেলের গলা শোনে পেছনে তাকালো।সিরাত হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে ধরলো….
-‘ভালোয় ভালোয় মেয়েটাকে ছেড়ে দে বলছি’।সহজ প্রশ্ন আবেশের,
-‘আর যদি না ছাড়ি’
-‘জান নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবি না’।
সিরাতকে এক হাতে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।দুজনকে মেরে ফেলে দিয়েছে রাস্তার ধাড়ে।মুখ থুবরে পরে আছে তারা।আচমকা মাথার সামনে বারি পরায় মাথা ঘুরে উঠলো আবেশের।হাত দিয়ে দেখল রক্ত বের হচ্ছে।সিরাত আবেশের নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠলো।চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে।এখনও সিরাতকে আগলে আছে ও।থুতনি ধরে বলল ‘কিচ্ছু হবে না তোমার ভয় পেও না।আমি আছি ত’।এখন নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে সিরাতের।তার জন্য প্রিয় মানুষটার এই অবস্থা।তবুও নিজের চিন্তা না করে ওর চিন্তায় বিভোর।কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো সিরাতের।মাথার দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো।অস্ফট স্বরে বলল ররক্ত।মূহুর্তেই হাত পা অসাড় হয়ে এলো।আস্তে আস্তে শরীর সব ভার ছেড়ে দিচ্ছে আবেশের উপর।ও হয়ত কিছু বলছে কিন্তু কিছুই কর্ণগোচর হচ্ছে না তার।সিরাত সেন্সলেস হয়ে গেছে।নিজেও সেন্স হারাবে সুনিশ্চিত।তার আগে সিরাতকে সেইফ জায়গায় রাখতে হবে।কিন্তু সেটা আর করতে পারলো না ওকে নিয়ে লুটিয়ে পরলো রাস্তার কিনারে।
#চলবে