#তুমি_আমার
#পর্ব_০২
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
.
.
অনেকটা রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আবরার আবেশ খান।অতি তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে উনি যে এই কাজ করতে পারেন সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি আমি।একটু আগে আয়ানকে কেক মাখাতে গিয়ে ভুলবশত হাতে থাকা সমস্ত কেক উনার মুখ আর ব্লেজারে লেগে যায়।নিজের এই অবস্থা মানতে পারেননি উনি।ব্যাপারটা যখন বোগম্য হলো তখন সরি বলতে যাবো তাঁর আগেই ঠাস করে এক থাপ্পড় পরলো আমার গালে। লজ্জা রাগ মিশ্রিত হয়ে মরে যেতে ইচ্ছে।সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকাতে পর্যন্ত ইচ্ছে করছে না।সামনে পিছে তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখেছে কিনা।না আশেপাশে কেউ নেই শুধু খানিক দূরে হ্যাবলার মত দাড়িয়ে আছে আয়ান।আমি চোখ গরম করে তাকাতেই ওখান থেকে কেটে পরলো সে। রাগে ফুস ফুস করে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে চোখ দুটো লাল করে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম….
-‘হাউ ডেয়ার ইউ?আপনার সাহস হয় কি করে আমার উপর হাত তোলার’।
লোকটা আরো শতসহস্র রাগ নিয়ে জবাব দিল….
-‘তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে কেক মাখানোর।আমার ব্লেজার নষ্ট করার।চড়টা কম হয়েছে যদি তুমি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতে এতক্ষণে তোমার কি হাল হতো আমি নিজেই জানি না’।
আঁখি যুগল জলে টইটুম্বুর হয়ে উঠলো।জলগুলো গড়িয়ে পড়ার আগেই নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলো।দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-‘আমি কি আপনাকে দেখে আপনার উপর কেক ছুড়েছি।দুর্ভাগ্যবশত হয়ে গেছে।এই একটা ব্লেজারের জন্য আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন।বলুন কত টাকা দাম আপনার ব্লেজারের।আমি এক্ষুণি টাকা দিয়ে দিচ্ছি কিনে নিবেন।আর আমাকে যেই থাপ্পড় দিয়েছে সেটাও ফেরত নেবেন’।
সিরাতের কথায় সুক্ষ্ম ভাঁজ পরলো আবেশের কপালে।বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টায় আছে।কারণ ব্লেজারটা ওর প্রিয় খুব যত্ন করে রেখেছে সে।আট আজ কিনা এই অসভ্য মেয়েটাকে নষ্ট করে দিল ভিতর থেকে একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো ওর।এক হাতে কপালে স্লাইড করতে করতে বললো…
-‘আমাকে টাকার গরম দেখিও না।তুমি ভালোমতোই জানো আমার অবস্থা।যাইহোক তোমার থাপ্পড় যেমন কখনও ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না।তেমনি আমার ব্লেজারও আগের মতো করে দেওয়া তোমার কেন পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই।ভালোয় ভালোয় সামনে থেকে সরে যাও নইলে আরো খারাপ হয়ে যাবে’।
-‘কি খারাপ করবেন আপনি।আর কি করার বাকী রেখেছেন’।
দাঁতে দাঁত চেপে খানিকটা সামনে এসে বললেন…..
-‘এখনও কিছুই করিনি।সামান্য একটা থাপ্পড় মেরেছি।শুকরিয়া আদায় কর’।
-‘আপনার মাথায় সমস্যা আছে।নরমাল জিনিস গুলোকে সবসময় বড় একটা ইস্যু বানিয়ে ফেলেন।হয়তো কখন কি করেন নিজেই জানেন না বুঝেন না।সকালে তুচ্ছ একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাকে পুরো ক্লাস দাঁড় করিয়ে রেখেছেন আর এখন এইটুকুর জন্য আমার গাল ফাটিয়ে দিলেন।ভাববেন না আরুর ভাই বলে সমসময় পার পেয়ে যাবেন’।এক নাগাড়ে একথাগুলো বলে থামলো সিরাত।আবেশ স্থির হয়ে ওর কথাগুলো মনযোগ সহকারে শুনছে।ওর কথা শেষ হতেই এক পা এক পা করে দিকে এগুতে লাগলো।ওকে এগুতে দেখে সিরাতের ধুকপুকুনি বেড়ে গেছে। একদম নিজের কাছাকাছি এসে দাঁড়াতে দেখে ও দু কদম পিছিয়ে গেলো।ও পিছাতেই আরো সামনে এগুচ্ছে আবেশ আর মুখে শয়তানি হাসি।এই হাসিই বলে দিচ্ছে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে ওর সাথে।দুপা পিছাতেই খপ করে ওর ধরে ফেললো আবেশ।বিস্মিময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সিরাত আমতা আমতা করে বলল…..
-‘আআপনি এগুচ্ছেন কেন?আমার হাতই বা ধরেছেন কেন?ছাড়ুন বলছি’।হাত ছাড়াতে গিয়েও ছাড়াতে পারলো না।
-‘ছাড়ার জন্য তো ধরিনি।আমি মেন্টালি সিক।কখন কি করি জানিনা। এখন তোমার হাত ধরেছি নাকি কই আমি তো বুঝতে পারছি না’।
হতভম্ব বিস্মিত সিরাত।ওর কথার জালে ওকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বুঝতে বেগ পেতে হয়নি ওর।ওর আরেকটু কাছ আসতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ পর কোনোকিছুর সাড়াশব্দ না পাওয়ায় আপনাআপনি চোখ খুলে অবাক সামনে আবেশ নেই আরু আসছে।আরুকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সিরাত।নিজে নিজে নিজেকে হারার খানেক গালি দিতে লাগলো।
কাঁচের জানালা ভেদ করে বাইরের ঝলঝল রোদ রুমে এসে পরছে।এই ঝলমলে উজ্জ্বল রোদ জানান দিচ্ছে বেলা অনেক গড়িয়েছে।আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় উঠলো সিরাত।গতকাল ফিরতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আজ সকালে উঠতে লেইট হয়ে গেছে।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো সিরাত।চা বাগানের পাশেই ওদের বাসা।ফোন হাতে দিয়ে টাইম দেখে অবাক ন’টা বাজে কলেজ যেতে দেরি হয়ে যাবে।দেরি হলে আবার আরেক প্যারা।আবেশের কথা মনে হতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর।বিষণ্ণ মনে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।নিচে এসেই ভাইয়ের মুখোমুখি হলো।মাকে এক কাপ কফি দিতে গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসল।কাল থেকে একটা প্রশ্ন বারবার মাথায় আসছিলো সেটা এবার করতেই হবে।ভাইয়া আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো….
-‘কিরে আজ এত সকাল উঠলি যে?সূর্য আজ কোনদিকে উঠেছে’?
-‘তুমি খুঁজে দেখ।আমার কলেজ আছে তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে।আচ্ছা ভাইয়া আবেশ ভাইয়া আমাদের কলেজে জয়েন করেছেন সেটা জানো তুমি’?
-‘হুম জানি’!সহজ সরল জবাব দিলো সিয়াম।
-‘তাহলে আমাকে আগে বলো নি কেন?ওই বান্দর হনুমান ওখানে জব করছে’?
-‘ওমা এটা আমি তোকে বলতে যাবো কেন?তুই তো এমনি দেখতে পাবি’।
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।ভাইয়া ত্যাড়্যা বাঁকা কথাই বলবে।তার চেয়ে মেইন পয়েন্টে আসা যাক।
-‘তুমি জানো তোমার বন্ধু গতকাল আমার সাথে কি করেছে?গতকাল…..
-‘হুম জানি!গতকাল ক্লাসে লেট করে যাওয়ার অপরাধে পুরো ক্লাস কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।অবশ্য এটা নিয়ে ওকে আমার কিছু বলার নেই।কারণ আমি নিজেই তোদের ফার্স্ট ক্লাসে লেইট করার জন্য শাস্তি দিতে বলেছিলাম।এখন আমি হ্যাপী দেখ ওর ভয়ে আজ তাড়াতাড়ি কলেজ মুখো হচ্ছিস।এবার সবকয়টা পড়াচোর ফাঁকিবাজ শায়েস্তা হবি’।কথাগুলো বলে বএিশ পাটি দাঁত বের করে সানগ্লাস ঠিক করতে করতে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো ভাইয়া।ভাইয়ার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ মনে মনে এটাই আওড়ালাম এটা আমার ভাই নাকি মীরজাফর।
কর্মব্যস্ততায় মুখর সকালের সিলেট।এইসময় বেলা ভীর ভাট্রা লেগেই থাকে।তখন কলেজ যাওয়ার রিকশা বা সিএনসি পাওয়া বড্ড দুষ্কর।বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে রিয়া।কিন্তু কোথাও রিকশার ছিটেফোঁটাও নেই।ক্লাসেরও লেইট হচ্ছে।তাই ধীর পায়ে সামনে এগুচ্ছে।হঠাৎ কেউ একজন সজোরে ধাক্কা মারলো ওকে।ধাক্কা খেয়ে নিচে পরতে পরতে কোনো মতে বেঁচে গেছে সে।এমনিতেই মেজাজ গরম তাঁর উপর এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যার দরুন রাগ দপদপ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।বিপরীত পাশের লোকটাকে কোনো বাক্য খরচ করার সুযোগ না দিয়েই বললো….
-‘এই যে মিঃ দেখতে হ্যান্ডসাম বলেই কি মেয়ে দেখলেই তাঁদের গায়ের উপর ঢলে পরতে ইচ্ছে করে নাকি?পোষাক পরিচ্ছেদ ভালোই মনে হচ্ছে কিন্তু ব্যবহার এত খারাপ কেন?’
মেয়েটার কথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো সিয়ামের মাথায়।কি বলে এই পুচকি ছানা।যেহেতু দোষটা নিজের তাই নিজেকে শান্ত করে মিহি সুরে বলল….
-‘দেখুন মিস আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ধাক্কা দেইনি।একটু তাড়া ছিলো তাই আপনাকে খেয়াল করিনি।তার জন্য সরি’!
-‘একটা সরি সাত খুন মাফ।আপনাদের মত ছেলেদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে।ইচ্ছে করে এমন করেন পরে আবার মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য সাধু সাজেন’।
-‘আরে মহা ঝামেলা।বললাম ত ভুল হয়ে গেছে।এখানে ইমপ্রেস করার কথা আসছে কোথা থেকে’।
-‘থাক আর শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না।আমি যা বোঝার বুঝে নিয়েছি।এখন আর উল্টা পাল্টা বোঝাতে আসবেন না’।
-‘ আরে এত মহা মুশকিল রে বাবা!এখন ত আমার মনে হচ্ছে আপনি ইচ্ছে করে ছেলেদের সাথে এরকম করেন।এতে আপনার ভালো লাগে।মুখে শয়তানি হাসি টাঙিয়ে তা এরকম আর কয়টা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়েছেন’?
-‘হোয়াট!কি বললেন আপনি’?
-‘শুনতে পান নি নাকি বয়ড়া।আসলে আপনাদের মতো মেয়েদের সাথে ভালো ভাবে কথাই বলতে নেই।তখন বাজে ভাবে টাচ করে চলে যেতাম সেটা ঠিক হতো।বাই দ্যা ওয়ে আসছি’।
-‘এই শুনুন আপনি আমাদের মত মেয়ে বলতে কি মিন করলেন?আর পরের কথাগুলো ছি ছি তাহলে আমি আপনাকে যা ভেবেছি আপনি তাই প্রমাণ হলো ত’।
-‘ঘোড়ার ডিম হলো।এই আপনার মাথায় গোবর ছাড়া কিছু নেই না।একটা সাধারণ বিষয়কে এত জটিল করে কোথা থেকে কেথায় নিয়ে গেলেন?আচ্ছা রোজ এইভাবে রাস্তায় ছেলেদের অপদস্থ করাই আপনার পেশা নাকি’?
ছেলেটার কথায় এবার চুড়ান্ত অপমাণিত বোধ করলো রিয়া।এক নিমিষে তাঁকে নিয়ে কোথায় পৌঁছে দিলো।চোখগুলো জ্বালা করা শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।নিজের কান্না আটকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল….
-‘দেখুন এবার কিন্তু এর মধ্যেই সিরাত এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে।রিয়ার পাশে ভাইকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো ওর।আর সিয়ামের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।রিয়া ওকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললো।তারপর সিয়ামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক এক করে সব বলতে শুরু করলো।সবটা শুনে সিয়ামের দিকে তাকালো সিরাত।সে মৃদু হাসছে যার অর্থ এবার বোন এই অপবাদের হাত থেকে রক্ষা করবে। ওকে কোনোকিছু বলে দোষ ঢাকতে হবে না।তাই ও চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।সিয়ামকে অবাক করে দিয়ে সিরাত বলল….
-‘এই যে ভাইয়া বিয়ের বয়স ত প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে তাই রাস্তায় কাউকে ডিস্টার্ব না করে বাসায় থেকে বিয়ে দিতে বলুন এতে অন্যের মা বোন একটু ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারবে।আপনিও বাড়িতে বউ রেখে অন্যের সাথে ফ্লাট করার কথা চিন্তা করতে পারবে না’।
হতভম্ব বিস্মিত সিয়াম।বোনের মুখে এমন কথা শুনে চোখ দুটো বেড়িয়ে আসার উপক্রম।আর সিরাতের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।সিয়ামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল…..
-‘রিয়া তুই উনাকে বুঝিয়ে দে আমরা মেয়েরা অবলা নই।আমি ততক্ষণে দেখি রিকশা পাই কিনা।রাস্তায় এক বজ্জাত কলেজে আছে আরেক বজ্জাত লেইট হলে রেহাই নেই বলে চলে যেতে উদ্যত হলো।যাওয়ার সময় একদম সিয়ামের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল….
-‘কেমন দিলাম ভাইয়ু!একেই বলে টিট ফর ট্যাট।তুমি বন্ধুকে দিয়ে আমায় শায়েস্তা করেছো আর আমি বান্ধবী দিয়ে হিসাব সমান সমান’।
[এটা আমার লেখা প্রথম গল্প।আপনাদের এত এত ভালোবাসা পাবো ভাবিনি।ভাবনার চাইতেও বেশি পেয়েছি।আশা করি সামনেও একই পাবে ভালোবাসা পাবো।রমজান মাস কোন সময় গল্প দিলে আপনাদের সুবিধা হবে কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ!]
.
#চলবে