তোমাতে বিলীন – পর্ব 10

0
631

#তোমাতে বিলীন🍁
#লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত ☘
#পর্ব—|| ১০ ||
এদিকে,,,
ঊদিতা নিজ রুমে বিছানায় বসে আছে। বসে বসে চিন্তা করছে যে আজ কী থেকে কী হয়ে গেল!! এতো জলদি বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে তা কখনো ভাবেই নি সে। তাও তার থেকে গুনে গুনে ১০ বছরের বড় একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হবে। আলেয়ার সাথে তাসকিনের বয়সটা মানায়,,, তাসকিন আলেয়ার থেকে মাত্র ২-৩ বছরের বড়।আর ওই লোকটা,, মানে আশিয়ান সে তো প্রাপ্ত বয়স্ক একজন পুরুষ মানুষ।
সঠিক সময়ে বিয়ে করলে এক বাচ্চার বাপ হয়ে যেতো সে।ঊদিতার মাথায় এসব আবোল তাবোল চিন্তাভাবনা চরকার মতো ঘুরপাক খাচ্ছে।
ও যখন এসব চিন্তা করতে ব্যস্ত তখন আলেয়া তার রুমে এসে ঢুকলো।তার একহাতে একটা মিনি কোকের বোতল। আরেকহাতে বড় একটা স্মার্টফোন।প্রচুর ভাবের সহিত কোকের বোতল দুলিয়ে দুলিয়ে এগিয়ে এসে বেয়াদবের মতো ঊদিতার সামনের টেবিলটাতে বসলো সে ৷ ঊদিতা একপলক তাকালো আলেয়ার দিকে।ওর মুখে কীসের জানি ফেসপ্যাক লাগানো।ভুতের মতো লাগছে দেখতে ওকে।আলেয়া ঊদিতাকে উদ্দেশ্য করে বললো;
আলেয়া:-কীরে,,,এরকম হাদার মতো বসে আছিস কেন?তোর তো এখন খুশিতে নাচার কথা! বাংলাদেশের ফেমাস বিজনেসম্যান এন্ড হাজার মেয়ের ক্রাশের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে,,, বুঝতে পারছিস তুই?তোর তো কপাল খুলে গেলো রে ৷অবশ্য বাইরে থেকে গোবেচারা মুখ বানিয়ে রাখলেও ভেতরে ভেতরে যে তুই আনন্দে ফেটে পড়ছিস তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।(গা জ্বালানো হাসি দিয়ে খোঁচা মেরে)
ঊদিতা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকালো আলেয়ার দিকে। এসে গেছে পিঞ্চ মারার জন্য। ওর মতো বলদের আর খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই,,,। হাত ধুয়ে ঊদিতার পিছনে পড়ে থাকে সবসময়।বেয়াদবের মতো কথাবার্তা।বয়সে তো সে ঊদিতার থেকে অনেক বড় তারপরও কথায় কথায় ঊদিতাকে খোঁচা মারতে ছাড়ে না। সবকিছুতে মাতব্বরি না করলে মনে হয় ওর পেটের ভাত হজম হয় না। ঊদিতা কাট কাট গলায় জবাব দিলো;
ঊদিতা:-ভালো করেই জানো তুমি,, যে আমি কেমন টাইপ মেয়ে!জেনেশুনেও যদি এমন কথা বলো তাহলে আমার আর তোমাকে কিছু বলার নেই। আমার ভাগ্য আল্লাহ যার সাথে জুড়ে দিয়েছেন তার সাথেই আমার বিয়ে হবে। এখন কাকের মতো কা কা করলেও আমার ভাগ্য পাল্টে যাবে না নিশ্চয়ই,,,! (পাল্টা খোঁচা মেরে)
ঊদিতার বলা কথা শুনে আলেয়ার মুখ কালো হয়ে গেল।বিব্রত কন্ঠে ভ্রু কুঁচকে বললো;
আলেয়া:-ওয়েট,,,তুই আমাকে কাকের সাথে তুলনা করলি?বিয়ে ঠিক হতে না হতেই দেখছি মুখে বুলি ফোটা শুরু হয়ে গেছে!হে?
ঊদিতা:-কী যে বলো না তুমি আপু,,!তোমাকে কাকের সাথে তুলনা করবো কেন?কাকের সাথে তো তুলনা করছি তাদেরকে যারা আমার ভালো সহ্য করতে পারে না,,আমার ভাগ্যকে হিংসা করে! তাহলে তুমিও তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নাকি আপু?(নিরীহ ভাবে জানতে চেয়ে)
আলেয়া এ কথা শুনে আমতা আমতা করে বললো;
আলেয়া:-ন,,না,,তো,,আমি ক,,কেন তোকে হিংসা,, করতে য,,যাবো?আমারও তো ওই পরিবারের ছেলের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। তাহলে তোকে কেন শুধু শুধু হিংসা করতে যাবো শুনি?
ঊদিতা:-হ্যা তাই তো!তুমি কেন হিংসা করতে যাবে?তুমি তো আমারই ফুপ্পির মেয়ে হও,,আমার বড়বোন। তবে সম্পর্কে আমি তোমার বড় জা হবো বুঝলে আপু?তোমার হবু ভাসুরের হবু বউ!(মুচকি হেসে)
আলেয়া ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
আলেয়া:-তো?এখন কী তোকে সালাম দিয়ে জী আপনি করে তোর সাথে কথা বলতে হবে নাকি?
ঊদিতা:-আরে না!এসব কেন করতে যাবে তুমি? তবে ভাসুরকে যেভাবে রেসপেক্ট করবে তার বউকেও তো সেভাবেই ট্রিট করতে হবে।নাহলে মানুষ তোমাকে বেয়াদব মেয়ে মনে করবে।(হেসে দিয়ে)
আলেয়া:-ইয়ার্কি মারছিস আমার সাথে?তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ঊদিতা,,। খুব ডানা গজিয়েছে তোর তাই না?বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে দেখে এখনই আকাশে উড়া শুরু করেছিস,,,ফিউচারে না জানি কী করবি?বরের টাকা বেশি দেখে এত লাফালাফি করার কিছু নেই। দেখে নিস ওই ছেলে তোকে কখনোই ভালোবাসবে না,।(চাপা রাগে হিসহিস করে)
ঊদিতা ওর কথা শুনে একদম ঠান্ডা গলায় মুখের ওপর জবাব দিলো;
ঊদিতা:-অভিশাপ দিচ্ছো?দিলেও কী না দিলেও কী!আই ডোন্ট কেয়ার দ্যাট!আল্লাহ আমার ভাগ্যে কী রেখেছেন সেটা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। তোমার এসব বলাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি আদৌ স্বামীর ভালোবাসা পাবো কী পাবো না তাও একমাত্র আমার আল্লাহ বলতে পারেন তুমি নও। মনে রেখো অন্যকে হিংসা করে নিজে কখনো ভালো থাকা যায় না।সবচাইতে বেশি ভালো হয় তুমি তোমার রাস্তা মাপো,, আর আমি আমারটা।আমাকে নিয়ে তোমার এত মাথা না ঘামালেও চলবে। আশা করি বুঝতে পারছো।আর যাও গিয়ে আরো বেশি করে রূপচর্চা করো,,নইলে বিয়ের সাজে আমাকে ডাউন মারবে কী করে শুনি?(গা জ্বালানো মুচকি হেসে)
ঊদিতার ঠান্ডা গলার জবাব শুনে আলেয়ার রাগে সারা গা জ্বলে গেল। রাগে সাপের মতো ফণা তোলে ‘তোকে আমি দেখে নেবো’ টাইপ লুক নিয়ে ঊদিতার দিকে একপলক তাকিয়ে রুম থেকে হনহন শব্দ করে বেরিয়ে গেলো।আলেয়া রুম থেকে বেরোনোর সাথে সাথে শাহরিয়ার এসে রুমে ঢুকলো। আলেয়ার যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকালো সে। বুঝতে পারলো না এত রেগে গেল কেন আলেয়া! ঊদিতা ভাইকে দেখে ঠিকঠাক হয়ে বসলো।আগে থেকেই বড়সড় ওড়না দিয়ে গা মাথা সব ঢাকা ছিলো।শাহরিয়ার এসে বোনের পাশে বসলো। ঊদিতা নরম আর শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-কিছু বলবে ভাইয়া?
শাহরিয়ার:-আলেয়া এত রেগে গেলো কেন?
ঊদিতা:-কী জানি?আমার এত খেয়েদেয়ে কোন কাজ নেই যে ওর রাগের কারণ খুঁজতে যাবো!বাদ দাও ওর কথা।
শাহরিয়ার আর কোনো জোর করলো না ঊদিতাকে এ ব্যাপারে।কারণ কিছুটা হলেও আলেয়ার রাগের কারণ সে আন্দাজ করতে পারছে।আলেয়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে শাহরিয়ার বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো;
শাহরিয়ার:-এই কটাদিন তোকে অনেক মিস করেছিলাম বোন,,। বাসাটা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো তোকে ছাড়া।
ঊদিতা:-আমিও তোমাদেরকে প্রচুর মিস করেছি ভাইয়া। ফুপ্পিকে বলেছিলাম বাসায় যাওয়ার কথা,, ওনি একপ্রকার জোর করে আটকে রেখেছিলেন আমাকে।নইলে কবেই চলে যেতাম।ভাবী কই?
শাহরিয়ার:-তানিয়া ভাবীর সাথে রান্নাঘরে রান্না করছে।
ঊদিতা:-আর আমার পিচ্চি ভাতিজাটা কই? সারাদিন ধরে তার দেখা নেই। একবার এসে দুইগালে চুমু দিয়ে চলে গেছে। আর আসে নি।
শাহরিয়ার:-ওই তো মুরাদ ভাইয়ার ছেলেমেয়ে তান্না আর তাহির সাথে খেলায় মত্ত হয়ে আছে। এতদিন পর খেলার সাথী পেয়েছে তো তাই!
ঊদিতা:-ওহহ,,,
শাহরিয়ার ঊদিতার মাথায় আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো;
শাহরিয়ার:-আমার বোনটা অনেক বড় হয়ে গেছে। আর কয়েকদিন পর বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে,, ভাবা যায়?এখনো মনে আছে এইতো সেদিন এই পিচ্চি বোনটাকে কোলে নিয়ে দোকানে যেতাম চকোলেট,চিপস কিনে দিতে ৷আমার গলা জড়িয়ে ধরে কতশত বায়না ধরতো আমার বোনটা৷ ঊষার বিয়ের কথা শুনে এত কষ্ট হয়নি আমার,, যতটা তোর বিয়ের কথা শুনে অনুভব করতে পারছি৷(ছলছল চোখে)
ভাইয়ের বলা কথা শুনে ঊদিতাও কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-কষ্ট তো আমারও অনেক বেশি হচ্ছে ভাইয়া।তোমাদেরকে ছাড়া আমি কী করে অন্য একটা অচেনা জায়গায় গিয়ে থাকবো। এখানে ফুপ্পির বাসায় আসার পর থেকেই চিন্তা করছি কখন বাসায় যাবো,, কখন তোমাদেরকে দেখবো।এতদিন ছটফট করে করে দিন কেটেছে আমার আর এখন এমন একটা জায়গায় যেতে হবে যেখানে চাইলেই তোমাদেরকে দেখতে পারবো না। ইচ্ছা করলেই তোমাদের কাছে ছুটে আসতে পারবো না।এখন বিয়ে না করলে কী হতো না ভাইয়া?তোমাদের ছাড়া কী করে থাকবো আমি?(ভেজা চোখে)
শাহরিয়ার প্রতিত্তোরে কিছু বলতে পারলো না।তারও গলা ধরে এসেছে। কিছু না বলে চোখ মুছে লম্বা করে একটা দম নিলো সে। বুঝতে দিলো না ঊদিতাকে যে তার চোখে পানি চলে এসেছে বোনের কথা শুনে। হাসিমুখে বোনের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো;
শাহরিয়ার:-মনখারাপ করিস না বোনু,,,!মেয়েদের জন্য বিয়ে একটি অনিবার্য পরিণতি। তুই তো কতশত ইসলামিক বই পড়িস! নিশ্চয়ই জানিস মেয়েদের জন্য বিয়েটা কত জরুরি?শরিয়ত অনুযায়ী তোর এই বয়সটা বিয়ের জন্য পুরোপুরি পারফেক্ট।আর এই দুনিয়ায় আশিয়ানের মতো ভালো ছেলে পাওয়া অনেক দুষ্কর। আমি ভাই হয়ে নিশ্চয়ই আমার আদরের বোনকে এরকম যার তার হাতে তুলে দিতে পারি না! ছেলের বিষয়ে সবকিছু জেনে ওদের পরিবারের ব্যাপারে সমস্ত ডিটেইলস জেনে তারপর আমি বিয়েতে রাজি হয়েছি৷আমরা সবসময়ই তোর ভালো চাই বোনু। ভাইয়ের ওপর এতটুকু ভরসা তো রাখতেই পারিস! কথা দিলাম ঠকবি না। আর রইলো আমাদের কথা। তোর বিয়ের পর আমরা কয়েকদিন পর পরই তোকে দেখতে যাবো। আর আশিয়ানকেও বলে দিবো তোকে আমাদের বাসায় দিয়ে আসতে। দেখবি তখন আর একটুও মন খারাপ লাগবে না। অভ্যাস হয়ে যাবে তখন।
ঊদিতা ভাইয়ের ভরসা মূলক কথা শুনে শান্ত হয়ে গেল৷ আর যা-ই হোক তার ভাই কখনো মিথ্যা বলতে পারে না তা সে খুব ভালো করেই জানে। মুচকি হেসে বললো;
ঊদিতা:-আচ্ছা ভাইয়া,,,তোমার কথাই মানলাম।
শাহরিয়ার প্রশান্তির হাসি হাসলো।এটলিস্ট বোনের মুখে তো হাসি ফোঁটাতে পারলো।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো;
শাহরিয়ার:-আচ্ছা বোন আমি এখন যাই। তুই একটুও টেনশন করবি না কিন্তু। মনে রাখিস আল্লাহ তার বান্দার জন্য যা করেন সবসময় তা ভালোর কিন্তু জন্যই করেন।
ঊদিতা:-হুম ভাইয়া মনে থাকবে।
শাহরিয়ার:-এইতো,,আমার সোনা বোনটা।
এই বলে শাহরিয়ার বসা থেকে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। ঊদিতা তার ভাইয়ের যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
🖤🖤🖤
আজ রাতটা মি.আনিসুলের পরিবারের সবাই মিসেস লিমার বাসায় থেকে গেলেন।রাতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে পরিবারের বড়রা মিলে ড্রয়িং রুমে বসে বিয়ের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের দরকারী কথোপকথনে মেতে ওঠেছেন। পরিবারের দু দুটো মেয়ের বিয়ে বলে কথা।আলোচনা ছাড়া এমনি এমনি তো আর সব হয়ে যায় না। মি.গোলজার মি.আনিসুলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন যে;
মি.গোলজার:-বলছি কী আনিস,,,, ঊদিতার এনগেজমেন্টটা আমাদের বাসা থেকেই হোক,,,!কী বলো?এনগেজমেন্ট শেষে বিয়ের আগে নাহয় তোমাদের বাসায় চলে যেও,,, আর নাহয় বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থেকে যাও তোমরা সবাই। আমাদের বাসাটা পুরনো আমলের হলে কী হবে নেহাৎ কম বড় নয়। অনেক গুলো রুম খালি পড়ে আছে আত্মীয় স্বজনরা আসলেও কোনো অসুবিধা হবে না আশা করছি।
(মিসেস লিমাদের বাসাটা বেশ পুরোনো আমলের।ওনার শ্বশুরের নিজ হাতে তৈরী বাসা এটা।।)
মি.গোলজাররের কথায় সায় দিয়ে মিসেস লিমাও বললেন;
মিসেস লিমা:-হ্যা রে আনিস,,,। এনগেজমেন্ট অবধি নাহয় এখানে থাক সবাইকে নিয়ে।তারপর নাহয় নিজের বাসায় ফিরে যাবি!এখান থেকে শাহরিয়ারের অফিসও কাছে আর তোর ভার্সিটিও কাছে আছে। কোনো অসুবিধা হবে না।
ওনাদের কথা শুনে মি.আনিসুল আমতা আমতা করে বললেন;
মি.আনিসুল:-কিন্তু,,, এরকম থেকে গেলে তো হয় না। দুলাভাইয়ের আত্মীয় স্বজনের মতো আমারও অনেক আত্মীয় স্বজন আছে।ঊদিতার বিয়ের কথা শুনলে ওরাও খুব দ্রুত চলে আসবে এখানে।বড়ভাইয়া আর ওনার পরিবারের সবাইও আসবে। ঊদিতার নানুবাড়ির লোকেরাও আসবে। এতজনের জায়গা কী আর হবে বলো!
মুরাদ:-ওসব তোমার চিন্তা করতে হবে না মামা,,,।রুম ভাগ বাটোয়ারা করেও থাকা যাবে। বিয়েবাড়িতে থাকার জায়গার শর্ট পড়ে ঠিকই,, তবে মানিয়ে নিতে পারলে জায়গা হয়ে যায়।ছেলেদের জন্য আলাদা এক অথবা দুই রুম বরাদ্দ থাকবে আর মেয়েদের জন্য এক-দুই রুম।আর বাকি রুম গুলো ভাগ বাটোয়ারা করে বড়রা থাকবে।কোনো অসুবিধা হবে না আশা করি। তুমি এখানে থাকলে ভালো হবে মামা,,,কারণ একাহাতে তুমি এতসব কিছু সামলাতে পারবে না। এরমাঝে তোমার ভার্সিটিতে যেতে হবে। এনগেজমেন্ট ও বিয়ের আগে মিস দিলে সময়মতো ছুটি পাবা না।আর শাহরিয়ারেরও সেইম কন্ডিশন।আমার আর বাবার ওসবের বালাই নেই। নিজের ব্যবসা আছে।আমরা ব্যবসায়ের কাজে না গেলেও আমাদের লোকেরা তা দেখবে।এজন্য বলছিলাম আরকি থেকে যাও এখানে।
শাহরিয়ার:-আব্বু,,, ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে,,,। এখন আমরা বাসায় চলে গেলে একাহাতে এতকিছু মোটেই সামলাতে পারবো না। আমরা কাজে চলে গেলে বাসায় ছেলেমানুষ একজনও থাকবে না।এখন একসাথে থাকাটা আমাদের জন্য একপ্রকার জরুরি বলা যায়। কালকে অফিস থেকে আসার সময় বাসায় ওঠে নাহয় জরুরি কাপড় চোপড় আর টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নিয়ে আসবো এখানে।কী বলো?(জানতে চেয়ে)
মি.আনিসুল সবার কথা শুনে বেশ কিছু সময় গম্ভীর হয়ে চিন্তাভাবনা করলেন৷ তারপর কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে গেলেন তিনি।
মি.আনিসুল:-বেশ,,,। তাহলে তাই হোক। শাহরিয়ার কালকে তুমি উসামাকে আর তোমার মাকে সাথে নিয়ে ও বাসায় যাবে। তারপর প্রয়োজনীয় যা লাগবে তা সব নিয়ে আসবে।আর আসার সময় বাজার টাজার করে এনো।আর চালের বস্তা একটা কিনে নিয়ে এসো সাথে। বুঝতেই পারছো অনেক মেহমান আসবে। তাদেরকে তো খাওয়াতে হবে।
মিসেস লিমা:-তোর এসব চিন্তা করতে হবে না রে পাগল। আমরা আছি তো। সব সামলে নেবো।
মি.আনিসুল:-না,, না,,,তারপরেও,,। এভাবে তোমাদের ওপর বোঝা হয়ে লাভ নেই।আমার ঊদিতার মতো আলেয়ার ও তো বিয়ে,,,আলাদা একটা খরচ আছে না!আমাদের দু পরিবার মিলেই তো সেসব বহন করতে হবে। তাহলে আমাদের সমঝোতায় একটা ব্যালেন্স আসবে।সুন্দরভাবে সব সম্পূর্ণ হবে।
মি.গোলজার:-তা নাহয় ঠিক আছে। তবে আজকের মধ্যে আমাদের নিকট আত্মীয়দের ফোন করে দাওয়াত দিয়ে দিলে ভালো হয়। আর আমি আমার ভাইবোন সবাইকে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এসেছি গতকালকে। তারা কালকে দুপুরের মধ্যেই চলে আসবে। এখন বাকিদেরকে ইনভাইট করে ফেললে ভালো হবে। একটা চাপ থেকে মুক্তি অবশ্য পাবো।
মিসেস লিমা:-তোমার ওসব ভাবতে হবে না। বাকি আত্মীয় স্বজনদের আমি ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি আগেই। এখন আনিতার বাবার বাড়ির লোকজনকে দাওয়াত দিলেই হয়ে যাবে। এ দায়িত্ব আনিসের ওপর ছেড়ে দাও। আনিস তুই তাদেরকে বলে দিস৷
আনিস:-তা বলবো নে। সমস্যা না।
শাহরিয়ার:-ওনারা ফোন দিয়ে জানিয়েছেন যে এনগেজমেন্টের জন্য কেনাকাটা করতে পরশুদিন দুপুর একটার পরে ঊদিতা আর আলেয়াকে নিতে আশিয়ান এবং তাসকিন আসবে এখানে। আমাদের পরিবার থেকে কেউ কেনাকাটা করতে চাইলেও তাদের সাথে জয়েন হতে পারবে।তবে তাদের পরিবার থেকে শুধু তারা ভাইবোনেরা ও আশিয়ানের ভাবীরা যাবে শপিংয়ে। বয়স্করা মেবি কালকে যাবে।
মি.গোলজার:-ভালোই তো। তোমরাও যাও কালকে গিয়ে যাবতীয় শপিং-টপিং করে এসো৷সিরিয়াল বাই সিরিয়াল শপিং সেড়ে ফেললে তাহলে আর বেশি ঝামেলা সৃষ্টি হবে না। ওরা পরশুদিন গিয়ে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করতে পারবে।
মি.আনিস:-ঠিক বলেছো দুলাভাই। তাই করতে হবে। কালকে তাহলে আপু,তানিয়া,উসামা,আনিতা, পিচ্চি বাচ্চাদের ও আত্নীয় যারা আসবে তাদের নিয়ে ওনাদের সাথে শপিংয়ে চলে যাও। গিয়ে এনগেজমেন্ট ও মেহেদী,গায়ে হলুদ, বিয়ে ও রিসিপশন পার্টিতে যা পড়বে তা কিনে নিয়ে আসো।কালকে মুরাদও কাজে যাবে না।আর শাহরিয়ারেরও হাফ ডিউটি আছে। চাইলে আমিও যেতে পারবো তোমাদের সঙ্গে।আড়তের ভার ম্যানেজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে দুলাভাইও যেতে পারবেন তোমাদের সাথে।
শাহরিয়ার:-তা যা বলেছো আব্বু। তাহলে এই কথাই রইলো। আমি ওনাদেরকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি ব্যাপারটা।
মুরাদ:-হ্যা,,,তাই কর তুই। ওনাদেরকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে আমরা কালকে তাদের সাথে যাচ্ছি।
শাহরিয়ার:-ওকে,,,
শাহরিয়ার বাইরে চলে গেল তাদেরকে ফোন করে বিষয়টা জানাতে। ড্রয়িং রুমে আলোচনা চলছে সমানতালে।মেয়েরা তারা আলোচনা করছে কে কী কিনবে তা নিয়ে।কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার এসে জানালো ওরা কালকে এখানে আসবে গাড়ি নিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে।তাদেরকে নিয়ে অতঃপর শপিং করতে বসুন্ধরা সিটিতে যাবে সবাই। এসব আলোচনা শেষ করে রাত সাড়ে ১১ টায় যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।
আজ ঊদিতার সাথে ঊদিতার আম্মু মিসেস আনিতা ঘুমাবেন। মিসেস আনিতা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ওনার ছোটবেলার গল্প বলছেন। ঊদিতাও পরম আবেশে মাকে জড়িয়ে ধরে মন দিয়ে শুনছে মায়ের কথা।একটাসময় গল্প শুনতে শুনতে ঊদিতা ঘুমিয়ে গেল৷ মিসেস আনিতা মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে দেখে মুচকি হেসে মেয়ের কপালে স্নেহের পরশ এঁকে দিয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করলেন। একসময় তিনি নিজেও ঘুমিয়ে পড়লেন।
♦️♦️♦️
পরদিন সকাল হতে না হতেই মি.মোরশেদের বন্ধুর মেয়ে আশা, চৌধুরী হাউজে প্রায় ছুটে এলো। চৌধুরী পরিবারের সবাই তখন ব্রেকফাস্ট করতে বসেছিলো।আশার হঠাৎ আগমন যেন কাম্য ছিল না কারোরই ৷ তাশজিদ ভয়ে ডোক গিললো৷ না জানি কোন ড্রামা সৃষ্টি করবে এই ন্যাকার ষষ্ঠী মেয়েটা৷ মিসেস ইয়াসমিন আশিয়ানের জন্য ভয় পেলেন৷ আশা উল্টো পাল্টা কিছু করলে আজ নির্ঘাত আশিয়ানের হাতে থাপ্পড় খাবে।
ওদিকে তারিন আশার আগমনে মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। এবার সে নিশ্চিত হলো এই বিয়েটা আর হবে না।আয়শা নিশ্চয়ই আশিয়ানের বিয়েটা ভেস্তে দেবে।যে মেয়ে আশিয়ানের গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও বেহায়ার মতো পিছু পিছু ঘুরেছে সেই মেয়ে এত সহজে আশিয়ানকে এখন অন্য মেয়ের হাতে তুলে দেবে তা ভাবাটাই বোকামি।
আশা এসেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। ন্যাকাকান্না করে মি.মোরশেদের কাছে গিয়ে বললো;
আশা:-আঙ্কেল,,, এসব কী শুনছি আমি?আমাকে না জানিয়ে তোমরা আশিয়ানের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো!এটা কী করে করতে পারলে তোমরা?তোমরা সবাই তো খুব ভালো করে জানো আমি আশিয়ানের জন্য ঠিক কতটা পাগল। তারপরেও তোমরা এসব কী করে করলে?
মি.মোরশেদ আমতা আমতা করে আদুরে কন্ঠে বললেন;
মি.মোরশেদ:-দেখো মা,,, তুমি এসেছো,,,আসো আমাদের সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করো।পরে আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি সব।
আশা:-আমি এখানে ব্রেকফাস্ট করতে আসি নি আঙ্কেল। আর আমাকে কিচ্ছুটি বুঝাতে হবে না।আমি সব বুঝতে পারছি। আমার পাপা তোমাকে বলেছিলো না যে আশিয়ানের বউ একমাত্র আমি হবো। তারপরও তোমরা কোথাকার কোন মেয়ের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছো?
মিসেস ইয়াসমিন এবার কঠিন স্বরে বলে উঠলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-সকাল সকাল এসব কী ধরনের সিনক্রিয়েট করছো তুমি আশা?তুমি খুব ভালো করেই জানো যে আশিয়ান তোমাকে পছন্দ করে না। তারপরও এসব করে তোমার কী লাভ হচ্ছে বলো তো?
আশা:-আমি সিনক্রিয়েট করছি?আমি?একথা তুমি বলতে পারলে আন্টি?আমি কীসের সিনক্রিয়েট করছি?আমি বেঁচে থাকতে আশিয়ানের সাথে অন্য কারো বিয়ে হবে না। আমি হতে দেবো না।
মিসেস তারানা:-দেখাে আশা,, তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো,,,(রেগে গিয়ে)
আশা কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই সিড়ি বেয়ে শান্ত ভঙ্গিতে আশিয়ান নামতে নামতে বললো;
আশিয়ান:-কী হয়েছে? এত চিৎকার চেঁচামেচি কীসের? (গম্ভীর হয়ে)
তাজিম আর তাশজিদের ভয়ে ঘাম ছুটে গেছে। কী দরকার ছিলো এখন আশিয়ানের আসার!আর মেয়েটারও কী সাহস বাপরে,,,বাঘের গুহায় এসে নাচানাচি করছে। আশিয়ান যদি একবার খেপে যায় তাহলে আজ আশার খবর আছে!
আশিয়ানকে নামতে দেখে আশার নিজেরই গলা শুকিয়ে গেছে। এতক্ষণ তো ঠিকই বাহাদুরি দেখিয়েছে এখন কী হবে সে নিজেও বলতে পারবে না। তারপরও মনে সাহস জুগিয়ে আশা ছুটে গিয়ে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। আশাকে দেখতে পেয়ে এমনিতেই আশিয়ানের চেহারা বিরক্তিতে কুঁচকে গিয়েছিল আর এখন সবার সামনে এভাবে জড়িয়ে ধরায় তো তার বিরক্তি একদম সীমা ছাড়িয়ে গেছে।এক ঝটকায় আশাকে নিজের থেকে আলাদা করে ফেললো সে। গর্জে উঠে বললো;
আশিয়ান:-মানা করি নি আমি আমাকে এভাবে এসে জড়িয়ে ধরতে?আই হেইট দিস টাইপ অফ চিপ গাই!আর কতবার বলতে হবে তোমায় আমার থেকে দূরে থাকো?কিপ ডিস্টেন্স ফ্রম মি ইউ ইডিয়ট!(রেগে গিয়ে)
আশা ন্যাকা কন্ঠে বলে উঠলো;
আশা:-তুমি এভাবে আমায় বলতে পারো না আশিয়ান!আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না আশিয়ান!আমার সাথে এমন করো না প্লিজ!(ন্যাকাকান্না করে)
আশিয়ান:-রিয়েলি?আমাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না!বাহ,,,নাইস জোক্স অফ দি ইয়ার। ছ্যাঁছড়া দেখেছি,,কিন্তু তোমার মতো চূড়ান্ত লেভেলের ছ্যাঁছড়া জীবনেও দেখি নি। একমাত্র ফিরোজ আঙ্কেলের মেয়ে দেখে তোমায় ছাড় দিচ্ছি নয়তো আমি তোমার এমন হাল করতাম যে আমার নামটা পর্যন্ত উচ্চারণ করার সাহস পেতে না তুমি!(আঙ্গুল তাক করে শাসিয়ে)
আশা এবার রেগে গিয়ে বললো;
আয়শা:-তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার চেষ্টা করলেই আমি সুইসাইড করবো বলে রাখলাম!আমাকে ছাড়া তুমি অন্য কাউকে বউ করার কথা স্বপ্নেও ভেবো না আশিয়ান!তুমি একমাত্র আমার,, আর কারও নয়!কথাটা মনে রেখো!(প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে)
আশিয়ান আশার কথা শুনে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-তাই নাকি?আমাকে না পেলে সুইসাইড করবে তুমি?ঠিক আছে,, তাহলে এক্ষুনি আমার সামনে সুইসাইড করে দেখাও!তাহলেই আমি বুঝবো তুমি আমায় ভালোবাসো!আমি এত ইজিলি তো তোমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে পারি না,, এতে আমার এটিটিউট নষ্ট হয়ে যাবে।তাই সুইসাইড করে তুমি সবার সামনে তোমার ভালোবাসার প্রমাণ দাও এই মুহুর্তে।
(খুব দ্রুতই আশিয়ানের সাথে ঊদিতার দেখা হতে যাচ্ছে।এখানে কিন্তু কো-ইনসিডেন্ট কিছু হবে না।বাস্তবের সাথে মিল রেখে আমাকে এগোতে হবে।নায়িকা যেহেতু ঘর থেকেই বেরোয় না সেখানে এক্সিডেন্টলি তাদের দেখা হওয়ার কোনো চান্স নেই।আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন।হ্যাপি রিডিং গাইজ। ভালোবাসা অবিরাম ❤️ )
চলবে…🍃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here