#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_১১
#Extra_part
রওশনের বকবক শুনতে শুনতে আবার ঘুমিয়ে গেলো দিয়া,, যখন চোখ খুললো তখন দেখলো রওশন ওর দিকে ঝুকে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে লাফিয়ে উঠলো ও।
— অদ্ভুদ মানুষ তো এভাবে কেউ তাকায়..? আরেকটু হলেই জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো,,,
— তোমাকে তখন বকছিলাম আমি… আর তুমি ঘুমাচ্ছিলে..? আমার থেকে তুমি বেশি অদ্ভুদ।
— তার মানে স্বীকার করছেন যে আপনি অদ্ভুদ। তো নিজেই দু-একটা কারন বলুন তো যে কারনে নিজেকে অদ্ভুদ মনে হয়।
— তুমি বলো আমি শুনি। তাছাড়া আমি তোমার কথা রিপিট করেছি এটা বলতে চাইনি যে আমি অদ্ভুদ। আমিও আর পাঁচটা সারাধণ মানুষের মতোই একজন।
— নো গিরগিটি টাইপের মানুষ। এখন একরকম তো তখন অরেকরকম হন।
রওশন দিয়াকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলো,, তারপর ওর ওপর উবু হয়ে নাক নাক ঘসতে ঘসতে বললো,,
— তাই নাকি তাহলে এখন একটু অন্যরকম হই..?? লাইক রোম্যান্টিক হাসবেন্ড।
— লুচ্চা ব্যাটা।
রওশনের কাছ থেকে উঠে ফ্রেস হতে চলে যায় দিয়া। রওশন ডেভিল লুকে হেসে চলে যায় ওখান থেকে।
কিছুক্ষন পর রওশন ফিরে আসে। দিয়া তখন বই পড়ছিলো। রওশন রেগে দিয়ার হাত থেকে বই টেনে নিচে ছুড়ে মারে। তারপর ধমক দিয়ে বলে,,,
— কি চাও তুমি..?? সুস্থ হতে চাওনা..?? সারাদিন আমার উল্টো পথে চলো,,, আমি কিছু বললে শুনতে চাও না কেন..?? আমি কি তোমার খারাপের জন্য কিছু চাই..?
দিয়া হা করে রওশনের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটা ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলায় কেন..?
— একটু আগে তো অন্যরকম ছিলো এখন আবার চিল্লাচ্ছে কেন..?
— একটু আগে মানে..?? কেমন ছিলাম আমি..??( কিছুটা ঘাবড়ে কথাটা বললো )
— শুরু হয়ে গেলো এর জন্য মনে মনে কথা বলেও শান্তি পাইনা। সব শুনতে পায় কি করে আল্লাহই জানে।
রওশন এসে দিয়ার পাশে বসলো। দিয়ার কপালে হাত বুলিয়ে চোখ বুজে বসে রইলো রওশন। দিয়া মুখ বাঁকিয় রওশনের দিকে তাকিয়ে আছে।
— আপনাকে দেখে আমার কেন অস্বাভাবিক মনে হয়..?? আপনি নরমাল না তাইনা..?
চমকে তাকালো রওশন। রওশনের বাদামী চোখটা জ্বলজ্বল করছে। রওশন নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো,,
— নরমাল হবে না কেন..?? আমার কি চারটা চোখ..? ছয়টা পা..? নাকি দুটো মাথা..?
— কেনোটাই না তবুও আপনার মধ্যে অদ্ভুদ কিছু আছে যা আপনি লুকাতে চান।
— তেমন কিছু নেই দিয়াপাখি। তুমি ঘুমাও। আমি তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
— খালি ঘুম আর ঘুম খেতে টেতে দিবেন না নাকি..?
— ওহ সরি তুমি বস আমি খাবার আনছি।
খাওয়া শেষে দিয়াকে রওশন নিজের বুকের সাথে জরিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু দিয়ার চোখ কিছুতেই এক হচ্ছে না। মাথায় একটা প্রশ্নই বারবার ঘুরছে। রওশন ওর মনের কথা জানতে পারে কিভাবে ?? দিয়া এটা জিজ্ঞাসা করার জন্য যখনই রওশনের দিকে তাকায়,, দেখে রওশন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
— ঘুমানোর আর টাইম পেলো না। নিজেকে এখন বিড়াল ছানা লাগছে। যে দিয়া সারা কলেজের সবার ব্যান্ড বাজায় সে এর সামনে মিউ মিউ করছে। মানুষ ঠিকই বলে বিয়ের পর মেয়েদের অনেক পরিবর্তন হয়। না না ছেলেদের হয় ছেলেরাই বাঘ থেকে বিড়াল হয় বউ এর ভয়ে।
— এতোকিছু না ভেবে ঘুমাও দিয়াপাখি। বেশি রাত জাগা ভালো না তোমার জন্য।
— ওরে ডেভিল। এ দেখি জেগে আছে। আমার সাথে অলঅয়েজ চিটিং
— চিটিং না দিয়াপাখি,, তুমি ঘুমাও।
— ঘুম আসছে না তো। কি করবো..?
— কেন..?
— আপনি মন পড়তে পারেন কিভাবে… সেটা আগে বলুন। ওটা না শুনলে ঘুম আসবে না।
— তুমি কি চাও..? বাসর রাতের কার্যক্রম আবার শুরু করি..?? জেগে থাকলে তোমার গোলুমলু চেহারা কিন্তু আমাকেও জাগতে বাধ্য করবে। আর তোমার গলার তিললল। উফ
— বদ ব্যাটা।
দিয়া সরে নিজের বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পড়লো। রওশন যখন টের পেলো দিয়া ঘুমিয়ে গেছে তখন নিজেও বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
রশনি তখন ছাদে দাড়িয়ে নিঝুমের সাথে কথা বলছিলো রাত তখন ১টা। রওশনকে এমন সময় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে বেশ অবাক হয় ও। নিঝুমের সাথে কথা শেষ করে রশনিই গাড়ি নিয়ে বের হয় রওশনের পেছনে। কেন জানি না আজ রওশনের ব্যাপারে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর,, এতো কৌতুহলের কারণ রওশনের ছাঁয়া। ওর ছাঁয়া আর পাঁচগুন বেশি বড় দেখা গেছে,, যেটা রশনি আগে কখনো দেখেনি।
রওশন একটা পুরোনো বাংলোর সামনে গাড়ি থামিয়ে ভেতরে চলে গেলো। এলাকাটা অনেক নির্জন। চারপাশে গাছগাছালিতে ভরা। ছমছম করে উঠলো রশনির শরীর। রশনি গাড়ি থেকে নেমে রওশনের পিছু পিছু গেলো। দরজা খুলতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে হারিয়ে গেলো ও। পায়ের শব্দ শুনে শুনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো রশনি। একটা রুম থেকে নিভু নিভু আলো বের হচ্ছে। রশনি দরজা খুলতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো,,,
— তোমারা…… তোমরা কি করছো এসব….??
সকালে,,,
দিয়া ঘুম থেকে উঠে রওশনকে দেখতে পেলো না। ভাবলো ফ্রেস হয়ে হয়তো ও নিচে চলে গেছে। তাই নিজেও ফ্রেস হয়ে সারা শরীর কাপড় দদিয়ে স্পন্জ করে ড্রেস পাল্টে নিচে আসলো।
— গুড মর্নিং আপু।
রশনি মুচকি হেসে উত্তর দিলো।
— গুড মর্নিং পিচ্চি ভাবি। বসো। কি খাবে..?
— তুমি কি খাচ্ছো..?
— আমি তো যাস্ট ব্রেড উইথ বাটার। বাট তোমাকে তো হেভি কিছু খেতে হবে। সুপ অর স্টু..?
— সুপ। আম্মু কোথায়..?
— তোমার জন্য সুপ বানাচ্ছে। আম্মু জানতো যে তুমি সুপই খেতে চাইবে তাই আগে থেকেই বানিয়ে ফেলছে।
— তো তোমাদের কি খবর..? লং ড্রাইভে কবে যাচ্ছো..? আর বিয়ে করবে কবে..?
— কিছুদিন পর এক্সাম। এক্সামের পরই। ভাবি তোমার বন্ধু আছে না সবুজটিয়া..?? ওদের কি কোনো
— ভেবেছিলাম ওদের ভেতরও টিটুয়েন্টি চলে এখন দেখছি ওরা টেস্ট ম্যাচও খেলে না।
— আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। ওরা আসলেই একে অন্যকে পছন্দ করে। তবে মুখে বলে না।
— মুখে না বললে বুঝবো কিভাবে..? আমি তো আর মন পড়তে পারি না। যাই হোক ওরা তো আসবে আবার।
— হ্যা আমাদের তো আপাতত ট্যুরে যাওয়া হচ্ছে না তাই ভাইয়া বললো আশেপাশেই একটা ছোট করে পিকনিক করা হবে।
বিকালে দিয়া ফোন করে টিয়াদের সবটা জানিয়ে দিচ্ছে এমন সময় নিঝুম আসলো,
— পিচ্চি ভাবি আসবো..?
— হ্যা হ্যা আসুন। কিছু বলবেন..??
— কাল বাবা মায়ের এনিভার্সারি আমি আর মা চাইছিলাম কাল যদি আপনারা আমাদের বাড়ি যেতেন।
— সেটা আম্মুকে বললেই তো হতো ভাইয়া।
— না মানে নিজে গিয়ে কিভাবে বলবো..? রশনিও নাকি বলতে পারবে না। লজ্জা লাগছে।
— আচ্ছা আমি বলে দিবো। আর কিছু..?
— ভাইয়াদেরও নিয়ে যাবেন। তাহলে সবাই খুশি হবে। এখন আসি একবার কলেজ ঘুরে বাড়ি যেতে হবে।
নিঝুম চলে যেতেই দিয়া ভাবতে বসলো,,,
— কিছু একটা তো আছেই যা সবাই জানে কিন্তু আমি জানি না। কি সেটা..?
রাতে রওশন আসলে নিঝুমের ব্যাপারটা দিয়া রওশনকে বলে। কিন্তু রওশন কোনো উত্তর না দিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায়। কিছুক্ষন পর বেরিয়ে একটা তাবিজ এনে দিয়ার হাতে বেঁধে দেয়।
— যম নিয়ে যার বাস, তার ঘরেতেই ভুতের আভাস।
— এটা কি কবিতা..?
— না গো জামাই কবিতা না ছড়া মাত্র বানালাম। ভুতটুত আসবে নাকি হঠাৎ তাবিজ পড়াচ্ছেন..?
— না এটা তো আম্মু দিলো। এটা পড়লে নাকি তুমি তাড়াতাড়ি মা হবা।
— ( সেদিনই তো আম্মু বললো ২০বছরের আগে বাবু হবে না। এখন তো আমার ১৯বছর ২মাস চলে। মনে হয় এক বছরে কিছু হবে। দিসে যখন পড়েই নেই। ) ওহ।
— খেয়েছো..?
— হ্যা। আপনি বসুন আমি খাবার আনছি।
— নিচ থেকেই খেয়ে এসেছি। কাল বিকালে রেডি থেকো নিঝুমদের বাড়ি যাবো। আর হ্যা শাড়ি পরার দরকার নেই,, সামলাতে পারবে না।পড়ে হাত পা ভেঙে ফেলবা।
— নিজেকে মিস্টার পার্ফেক্ট আর আমাকে মিসেস রসগোল্লা ভাবেন নাকি..? সব শুধু আপনিই পারেন আমি পারি না..?
দিয়া গাল ফোলাতেই রওশন দিয়ার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো। গায়ের ওরনাটা হাত দিয়ে সরিয়ে গলায় ঠোটের স্পর্শ দিতেই ফোন বেজে উঠলো ওর। বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকালো রওশন।
— একটু রোম্যান্স করবো তারও সুযোগ দেয় না এরা। দিয়াপাখি তুমি শুয়ে পড়ো আমি আসছি।
— না আমাকে মিস্ট্রি সলভ করতেই হবে। উনার অদ্ভুদ আচরণের কারন কি জানতে হবেই। হুটহাট করে রূপ বদলানোর রহস্যও জানতে হবে। নিঝুম ভাইয়ার বলা “ভাইয়াদের” ব্যাপারটাও জানতে হবে। ওনার চোখ বাদামী হওয়ার কারন জানতে হবে। মনের কথা কিভাবে বুঝতে পারে সেটাও জানতে হবে। কেন যে ডিটেক্টিভ হলাম না….
এভাবে কেটে গেলো একমাস। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো কিন্তু দিয়া নিজের প্রশ্নের উত্তর এখনো পায়নি। রওশনকে যতবার জিজ্ঞাসা করে রওশন ততবার স্কিপ করে যায় ব্যাপারটা। কাল পিকনিকে যাবে সবাই। সেদিন নিঝুম আর রশনির বিয়ের ডেটও ফাইনাল হয়েছিল আগামী মাসেই ওদের বিয়ে।
পিকনিকের পুরো এরেন্জমেন্ট রওশন করছে। সাজানোর ব্যাপারটা সবুজ দেখছে,,, টিয়া তিথি রান্নার দিকটা,, রশনি নিঝুম তাবু বানাচ্ছে। বাংলোটার সামনে পুরোটাই বাগান। অনেকটা জায়গা তাই ওরা তাবু বানিয়ে থাকার প্লান করেছে। তুহিন বাজার করতে গেছে। আর দিয়া বসে বসেসে খাচ্ছে। রওশন স্ট্রিক্টলি মানা করেছে যেন ও কিছু না করে।
সকালে দিয়াদের পৌছে দিয়ে রওশন বেরিয়েছিলো,আর দুপুর গড়িয়ে আসলো, এখনো তার ফেরার নাম নেই। দিয়া কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো বাট ফোন সুইচ্ড অফ।
— যম কোথাকার যখন থাকবিই না তখন পিকনিক করার জন্য লাফাইছিলি কেন..?? সবাই সবার বররে নিয়ে মজা করছে আর আমি এখনো বিবাহিত সিঙ্গেল হয়ে বসে চকলেট চিবোচ্ছি।
বিকালের দিকে রওশন আসলো। দিয়া ওকে দেখেও না দেখার ভান করে বাংলোর পেছনের দিকটা দেখতে চলে গেলো।
—পিচ্চি ভাবি রেগে গেছে তোমার ওপর। সারাদিন কোথায় ছিলে..?
— কাজ ছিলো। তোর ভাবি খেয়েছে..?
— হুম।
তিথি রশনিকে চিমটি দিয়ে বললো,,
— আরে চিন্তা করো না রাগ না করলে তো বউরা আদর পায় না তাই মাঝে মাঝে রাগ করার পেছনের কারন না খুজে আদর করার সামনের কারন খুজতে হয়।
তিথির কথায় হাসলো রওশন। সবুজ টিয়া কিছুটা দূরে একটা গাছের গুরির ওপর বসে আছে। দুজনেই চুপচাপ। টিয়া গম্ভির গলায় বললো,,
— বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করেছে আমার।
— ওয়াও গুড নিউজ। তো ট্রিট দিবি কবে..?? আমারও কিন্তু সেম কেস। চল একখরচে চালিয়ে দেই।
— তোর খুশি লাগছে..?
— দুঃখ পাবো কেন..? বড় হচ্ছি বিয়ে টিয়ে করবো না..?? বর পাওয়ার অধিকার শুধু তোর আছে..? বউ পাওয়ার অধিকার কি আমার নেই..?
— থাকবে না কেন..? আছে। আচ্ছা তুই বস আমি যাই।
— হয় যা। তবে শোন বিয়ের পর তোর জামাইরে কম প্যারা দিস্। বেচারা তোর মতো চুরেলকে বিয়ে করে জীবন বলি দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ এর শহীদের জন্য আমার দুঃখে ভরা শুভেচ্ছা।
অন্য সময় হলে সবুজকে মারতে যেত টিয়া,, কিন্তু আজ তার কোনোটাই হলো,,, মুখ ভার করে চলে গেলো তাবুর ভেতর।ওদিকে সবুজের বুকের ভেতরটাও খচখচ করছে,,, কেন হচ্ছে এমন..?
চলবে,,