রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 13

0
1888

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
ঝড়ের গতিতে দৌড়ে আসছে শখ।শখকে এভাবে দৌড়াতে দেখে আয়ান কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।কি হয়েছে মেয়েটা এই ভাবে দৌড়াচ্ছে কেনো।শখ আয়ানের কাছে এসে বললো।
–স্যার বাঁচতে চাইলে পালান।ওরা আসছে।মেরে ফেলবে।
–কারা আসছে।কে মেরে ফেলবে।
–আপনার যদি বাঁচার ইচ্ছে থাকে।তাহলে দৌড় শুরু করেন।না হলে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন।আপনার বউটার জন্য খারাপ লাগছে বেচারি বিয়ে না করতেই বিধান হয়ে যাবে। বলেই শখ দে দৌড়।
শখের কথার আগা মাথা কিছু বুজলো না আয়ান।যেমন ভাবে বললো মনে হয় নিশ্চিয় ডাকাত পড়েছে ওর পেছনে। আয়ান আর কিছু না ভেবে শখের পেছনে দৌড় দিলো।
–স্যার আপনি কতো ভালো দৌড় জানেন।আমার পরে এসে আমার আগে চলে গেলেন।
আয়ান কোনো কথা না বলে দৌড়ের গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে।শখের থেকে কিছুটা দূরে চলে গেলো।এতে শখ বেশ ভয় পেয়ে গেলো।
–এই স্যার আপনি আমাকে রেখে আগে চলে গেলেন কেনো।
–তুমি তো বললে জীবন বাঁচাইতে।তাই আর কি হালকা প্রচেষ্টা।
–বাবা আমি বলছি জন্য আমাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়ে আপনি একটা পালাবেন।আমাকে’ও সাথে নিন।
–আজব আমি জীবন বাঁচাইতে পালাচ্ছি।তোমার সাথে পালাচ্ছি না।তাহলে তোমাকে সাথে নিব কেনো?
–স্যার আপনি সত্যি খুব খারাপ লোক।আমি রুহি আপুকে গিয়ে সব বলে দিব।
–এবার আয়ান থেমে গিয়ে পেছনে ঘুরে শখের কাছে এলো।
–জানো-ই যখন আমি খারাপ লোক তাহলে আসলে কেনো।আমার সাথে আমি কি বলছিলাম আসতে আমার সাথে।
শখ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কুকুর সাতটি শখে কাছে চলে এলো।শখ দৌড়ে আয়ানের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।
–স্যার,আমাকে বাঁচান ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। সেই তখন থেকে তাড়া করছে আমাকে।
–হোয়াট,তুমি এই কুকুর গুলোর জন্য আমাকে পালাইতে বলছিলে।
–হ্যাঁ ওরা আমাকে কামড়ে দিতে আসছিলো।আমি তখন আপনার ওপরে রাগ করে দৌড়ে বাসায় চলে যেতে লাগছিলাম। আর ঐ কুকুর গুলো আমাকে খাউমাউ করে ধরেছে। তাই জন্য তো দৌড়ে আসলাম।নাহলে কি আসতাম নাকি।
আয়ান এবার রেগে বললো।
–ইউ স্টুপিড মেয়ে।তোমাকে ইচ্ছে করছে।
–মারতে তাই তো যা ইচ্ছে খুশি করেন।আগে আমাকে এই কুকুর গুলোর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিন।
–সামান্য কুকুর দেখে ভয় পাও।আবার মুখে সেই বড় বড় কথা বলো।
–সরি স্যার আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো।শুধু আমাকে বাঁচিয়ে দিন।
–বাকি মিথ্যা কথা কালকে বলবে কেমন।একদিনে এত মিথ্যা কথা শুনতে ভালো লাগছে না।বাকি মিথ্যা কথাটা আমি কাল শুনে নিব ওকে।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো।
–আপনার কি মনে হয়।আমি মিথ্যা কথা বলছি।আমি মিথ্যাবাদী। যাব না আমি বাসায় সারারাত এখানে থাকবো হুম।
–ওকে তোমার ইচ্ছে। আমি চলে গেলাম।থাকো সারারাত কুকুরদের সাথে গল্প করো কেমন।বেঁচে তাকলে কাল দেখা হবে।
–স্যার সত্যি আপনি খুব বাজে লোক।আপনার মতো বাজে লোক আমি দুইটা দেখি নাই। আমি রুহি আপুকে সব কথা বলে দিব।
–বেঁচে থাকলে তো বলবে।রাতে থাকবে বুঝতে-ই পারবে এখানে কি হয়।বড় বড় চুল আলা,সাদা শাড়ি পড়া,লালা লাল চোখ,দুই পা মাটিতে পড়ে না।শূন্যে হাটে একটা মহিলা।রাত দুটোর সময় বের হয়।আজ তো তুমি থাকবে।তোমার সাথে দেখা হবে। আমাকে কালকে গল্প শোনাবে কেমন লাগে দেখতে ঠিক আছে।
শখ আয়ানের কথায় অনেক ভয় পেয়ে গেলো। পারে তো কান্না করে দেয়।এমনি সে ভূতে অনেক ভয় পায়।তার ওপরে এসব কথা।
আয়ান ইচ্ছে করে শখকে ভয় দেখানোর জন্য বলছে।আয়ান ভূতে বিশ্বাস করে না।আর না আছে কোনো মহিলা।
শখ কোনো কথা বলছে না।দেখে আয়ান শখ ভয় দেখানোর জন্য বললো।
–শখ ঐ দেখো ঐ মহিলা আসছে।আমি নাই বলেই আয়ান দৌড় শুরু করলো।
–আম্মু…..স্যার দাড়ান আমাকে নিয়ে যান।আমি থাকবো না।শখ কেমন জানি একটা আওয়াজ শুনতে পেলো।ভয়ে দৌড় দিলো।
দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
–প্লিজ স্যার আমাকে রেখে যাবেন না।আমি থাকবো না।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর রাগ করবো না।আমাকে রেখে যাবেন না।ওরা আমাকে মেরে ফেলবে (কান্না করতে করতে বললো শখ।)
আয়ানকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।এতে আয়ানের বেশ খারাপ লাগছে।মেয়েটা এতটা ভয় পাবে সে বুঝতে পারে নাই।সে মজা করেছিলো।যেনো শখ যেতে রাজি হয়ে যায়। এখন উল্টো হয়ে গেলো।আয়ান শখকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললো।
–শখ তোমার কিছু হবে না।কেউ কিছু করতে পারবে না।আমি আছি না।(মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো আয়ান)
শখ আর কিছু বলতে পারলো না।শখের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে শখকে ডাকতে শুরু করলো। নাহ এবার’ও তাই। উপায় না পেয়ে শখকে ধরে নিজের থেকে ছাড়ালো।
–ওহ্হ শিট।শখ তো সেন্সলেস হয়ে গেছে। এখন কি করবো আমি।সন্ধ্যার পরে এই রাস্তায় কেউ আছে না খুব একটা কিছুটা দূরে চলে আসছি আমরা।কিছুটা বাসার দিকে যেতে পারলে দোকান পাওয়া যাবে।আয়ান আর কোনোকিছু না ভেবেই শখকে কোলে তুলে নিলো।
হাঁটতে হাঁটতে বাসার অনেকটা কাছেই চলে আসছে।এভাবে ওকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে না।আগে ওর জ্ঞান ফেরাতে হবে।আয়ান একটা দোকান দেখতে পেলো দোকানে গিয়ে পানি কিনলো।
শখের মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। নাহ মেয়েটার এখনো জ্ঞান আসছে না।খুব বেশি ভয় পেয়েছে মেয়েটা।আয়ান এবার একটু বেশি করে পানি শখের মুখে ছিটিয়ে দিলো।
এবার শখ চোখ পিটপিট করে খুলে তাকালো তাকিয়ে আয়ানকে দেখতে পেয়ে।লাফ দিয়ে উঠে আয়ানের হাত ধরে বললো।
–স্যার আমাকে রেখে যাবে না প্লিজ।আপনি যাহ বলবেন আমি তাই শুনবো।
–শখ শান্ত হও।আমি তোমাকে রেখে যাব না।দেখো আমরা বাসার কাছে চলে আসছি।আর তিন মিনিট এর মধ্যে চলে যেতে পারবো।আসেপাশে অনেক মানুষ’ও আছে দেখো।
শখ এবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো সত্যি তো তাই। কিন্তু আমি তো….আর মনে করতে পারলো না শখ।
–হয়েছে আর একট কথাও না এখন চুপচাপ আমার সাথে যাবে।তোমার বাসার লোক নিশ্চয় তোমার জন্য চিন্তা করছে।আমরা আট টায় বের হয়েছি এখন নয়টা পার হয়ে গেছে।
শখ উঠে দাড়ালো।আয়ান হাঁটা শুরু করলো শখ দৌড় গিয়ে আয়ানের হাত শক্ত করে ধরলো।এমন ভাবে ধরেছে মনে হচ্ছে আয়ান চোর চুরি করে পালাচ্ছে।ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।
–কি হচ্ছেটা কি শখ।এটা কি ধরনের ব্যবহার।আমি তোমার স্যার ভুলে গেছো।যখন তখন আমাকে এভাবে ধরবে না।
–আপনাকে বিশ্বাস নেই স্যার। আপনি পালিয়ে যেতে পারেন আর স্যার তো বাবার মতো হয়।তাই না বলেন হাত ধরলে কিছু হবে ন।
আয়ান এবার রেগে গিয়ে বললো।
–তোমার আমাকে দেখে তোমার বাবা মনে হয়।কোন দিক দিয়ে আমাকে বাবা লাগে দেখতে।
–না মানে ঐ আরকি স্যার আপনি তো যুবক। ভাইয়ের মতো আর কি।স্যার তো বাবা,ভাইয়ের মতো-ই হয় তাই না বলেন স্যার।
–শখ,তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে এসব বাবা,ভাই বলার। আমি তোমার স্যার এসব কথা আমার সাথে বলো কোন সাহসে।
–যাহ বাবা তাহলে কি বলবো জামাই বলবো হ্যাঁ।
–আমি তোমার স্যার আমাকে স্যার বলবে শেষ। এত কথা বললে আবার রেখে চলে আসবো।
–কি আপনি আমাকে ওখানে রেখে আসবেন।আমি সবাই কে বলে দিব।আপনি ওখানে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে কি করছেন।
–বললে বলবে।তাতে আমার কোনো যায় আসে না।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আয়ান)
–আপনি খুব বাজে লোক আর কোনোদিন আপনার সাথে কথা বলবো না।বলেই আয়ানের হাত ঝাড়ি দিয়ে চলে গেলো।
–কি মেয়ে রে বাবা।আমি যে ওর স্যার হয়।সেটা কি ও ভুলে গেছে। এই মেয়েকে শিক্ষা দিতে হবে।বড্ড বাড় বেড়েছে।
বলেই রাগে গজগজ করতে করতে চলে আসলো।
শখকে গেটের সামনে দেখতে রুহি দৌড়ে আসলো।
–পাঁচ মিনিট এর রাস্তা তোমরা যেতে আসতে দুই ঘন্টার’ও বেশি সময় পার করে দিয়েছো।পুরো ফুচকার খেয়ে এসেছো নাকি।এতরাত করলে কেনো তোমরা আয়ান কোথায়। আয়ানের থেকে আমি এটা আশা করি নাই । ও কি করে পারলো এমন বোকার মতো কাজ করতে।
–সরি আপু আসলে।
–আসলে আপু শখ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো।তাই জন্য দেরি হলো।পেছনে থেকে বললো আয়ান।
–সে কি শখ তুমি ঠিক আছো।তোমার কিছু হয় নাই।ভেতরে আসো চলো।
–না আপু যাব না দশটা পার হয়ে গেছে। আব্বু,আম্মুরা চলে গেছে আমাকে রেখে তাই না।আমি আর ভেতরে যাব না।বাসায় চলে যাব।
–বললেই হলো নাকি তোমার বাসার সবাই চলে গেছে খেয়ে।শুধু তোমার বোন আছে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তোমাকে নিয়ে যাবে।চলো সবাই মিলে খেয়ে নেই।
–আপু অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে।আজ কিসের অনুষ্ঠান ছিলো তাও জানতে পারলাম না।
–হ্যাঁ সবকিছু হয়ে গেছে তোমাদের তাড়াতাড়ি আসতে বলছিলাম। আসলে না।আজ আমার ছেলে জন্মদিন ছিলো।
–ওও আচ্ছা আপু।
চলো আর কোনো কথা বলতে হবে না।তারপরে রুহি শখকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here