রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 51

0
1235

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৫১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–অতিরিক্ত ভেজার কারনে শরীর থেকে জ্বর বাড়ছে।আবার কমছে।এটা খুব খারাপ।মানসিক চাপ আর চিন্তা থেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।আমি ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি একটু পরে জ্ঞান আসবে।জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিবেন।আর আমি কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি।আনিয়ে নিবেন।আর যতোটা পারবেন ওনাকে চিন্তা মুক্ত রাখবেন।না হলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।বলে-ই ডক্টর চলে গেলো।
–আয়ান ভিজলো কখন।আর শখ তুমি মা হতে চলছো।এত বড় আমাদের থেকে লুকিয়ে গেলে।
–আসলে আপু আমি ভাবছিলাম।উনি আমাকে রেখে চলে গেছেন।আমি ওনাকে বলবো না।এটাই ওনার শাস্তি।কিন্তু…
–দেখলে তো আমি তোমাকে বলেছিলাম।আয়ান এত সহজে সবকিছু মেনে নেওয়ার ছেলে না।আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না বোন।তুমি তোমার দিক দিয়ে ঠিক আছো।কিন্তু এত বড় খবর লুকিয়ে রাখা তোমার একদম ঠিক হয় নাই।তুমি জানো একটা ছেলের জন্য এটা কত বড় উপহার।আচ্ছা তুমি বলো আয়ান কি তোমার খারাপের জন্য তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিল।
–আপু উনি তো আমাকে বলে যাই নাই।আমি কি করে জানবো।আমাকে বলে গেলে আমি এত কিছু করতাম-ই না।
–আচ্ছা রুহি আপু বাদ দাও।এখানে যা কিছু হয়েছে আমাদের কোনো হাত নেই।আমরা সবাই পরিস্থিতির শিকার।বলল শুভ।
আয়ান আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো।তারপরে রুহিকে উদ্দেশ্য করে বললো।
–আপু এক গ্লাস পানি দাও তো।
রুহি আয়ানকে পানি খাইয়ে দিলো।আয়ান শখের দিকে একবারো তাকাচ্ছে না।অন্য সময় হলে বক বক করে শখের মাথা খেয়ে ফেলতো।বড্ড অভিমান জমেছে মনে।শখ কি করে পারলো তার বাবা হবার খবর তার কাছে থেকে লুকিয়ে রাখতে।
রুহি সবাইকে ইশারা করলে সবাই বাহিরে চলে আসলো।শখ এখনো দাঁড়িয়ে আছে।আয়ান উঠে এসে কোনো কথা না বলে শখের হাত ধরে রুমের বাহিরে বের করে দিলো।শখ কম যায় কি সে সোজা রুমের মধ্যে এসে শুয়ে পড়ল।
আয়ান শান্ত হয়ে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আমি জানি আমি অনেক সুন্দর এভাবে নজর দিবেন না।চোখ লেগে যাবে।
–বেড়িয়ে যাও।
–কোথায় যাব।
–আমি জানি না।
–তাহলে আমি’ও যাব না।
–শখ দেখো আমাকে রাগাবে না।
–স্যার দেখুন আমার মাথা খারাপ করে দিবেন না।
–শখ।
–আচ্ছা স্যার আপনার বাবা কি সুন্দর গেম খেললো।আমি’ও যদি আপনার বাবার মতো গেম খেলি।আপনি সত্যিটা না জেনে আপনার বাবা কথা শুনে,আমাকে মেরে ছিলেন।আর আপনার বাবা তো আমার পুরো জীবন টাই নষ্ট করে দিয়েছে।এখন যদি আমি আপনার বাচ্চাকে মেরে ফেলে।আমার বাবা মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেই।তাহলে কেমন হবে।আপনি যদি আপনার ভাইয়ের খুনির মেয়ে-কে মারতে পারেন।তাহলে আমি কেনো আমার বাবা-মায়ের খুনির ছেলের সন্তানকে মারতে পারবো না।
–একটা কাজ করো শখ ভালো হবে।আমার রাগটা কেনো আমার বাচ্চার ওপরে দেখাবে।তুমি আমাকে বিষ দিয়ে মেরে দাও।আমার বাবা তোমার বাবা-মাকে খুন করছে।ওর বাবা তো কিছু করে নাই।তাহলে শাস্তি কেনো ও পাবে।
শখ তো অবাক আয়ানের কথায়।সে,ভেবেছিল আয়ান হয়তো রেগে তাকে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে।এমন কথা বলবে কল্পনা’ও করতে পারে নাই শখ।
–আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো।
–তাহলে কিভাবে কথা বলবো।যাও তুৃমি চলে যাও।আমার ক্লান্ত লাগছে আমি ঘুমাবো।
–আমি থাকলে কি হবে।আমি’ও ঘুমাবো।
–তুমি না থাকতে চাও না আমার সাথে।আমাকে দেখলে তোমার ঘৃণা হয়।এখন কেনো থাকবে।তাছাড়া আমি তোমার বাবা-মায়ের খুনির ছেলে আমার সাথে কেনো থাকবে বলো তো।যা-ও নিজের মতো করে জীবন সাজিয়ে না-ও।
–আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাব।
–যা-ও।
–রাগ করে বলছেন কেনো।ভালোবেসে বলেন।বউ তুমি চলে যা-ও।
–মজা ভালো লাগছে না।তুমি যা-ও তো।
শখ উঠে এসে আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান শখ ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু ভয়ে জোর দেখাচ্ছে না।ভুল বসত যদি পেটে গেলে যায়।
–আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।আপনি ছাড়া আমার কে আছে বলেন তো।আপনাকে ছেড়ে-ই বা আমি কার কাছে যাব বলেন তো।আপনি যদি আমাকে রাখতে না চান।তাহলে সত্যি আমি চলে যাব।জোর করে কারো কাছে থাকা যায় না।কথা গুলো বলতে বলতে শখের চোখে পানি চলে আসলো।আয়ানের থেকে সরে আসতে চাইলে আয়ান শখকে আরো শক্ত করে বুকের সাথে মিলিয়ে নিলো।কিছুক্ষণ পরে শখ নিজের কাঁধে গরম কিছু অনুভব করতে পারলো।
–একি উনি কান্না করছে।আপনি কান্না করছেন কেনো।আপনার কান্না করতে হবে না।আমি চলে যাচ্ছি।
আয়ান কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো।
–কেনো করলে শখ।আমি কি এতটাই খারাপ বলো।যে,তুমি আমার থেকে এত বড় সত্যিটা লুকালে।তুমি জানো না।বাবা তোমাকে মারার জন্য কতটা পাগল হয়ে ছিলো।তোমার ক্ষতি করার জন্য সব সময় তোমার পেছনে পড়ে থাকতো।তোমার যদি কিছু হয়ে যেত আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম না।তুমি জানো শখ একটা ছেলে বাবা হবে।এটা নিয়ে তার কতটা স্বপ্ন থাকে।তুৃমি আমার সবকিছু ভেঙে দিলে শখ।
–আমি জানতাম নাকি আপনি আমার ভালোর জন্য-ই করছেন।আমাকে একটা বার বলতে পারতেন।
–আমি তোমাকে কি ভাবে বলবো বলো।বাবা সব সময় আমাদের ওপরে নজর রাখতো।বিশ্বাস না হলে দেখে আসো আমাদের রুমে প্রতিটা কোনায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখছে আব্বু।বাহিরে গেলে ফলো করতো।এখানে থাকলে আমি তোমার বাবাকে নির্দোষ প্রমান করতে পারতাম না।
–আপনি খুব খারাপ লোক।সত্যি আপনার বাজে লোক দু’টো দেখি নাই।
–আমার মতো বাজে লোকের সাথে তোমার সারাজীবন কাটাতে হবে।
–আমি থাকবো না।আমি এখনি চলে যাব।
–তোমার সাহস আছে যাওয়ার।এক পা নড়লে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।
–আপনি তো এখনি বললেন আমি চলে যেতে।গিরগিটির মতো রং বদলান।
–আমি রাগ করে বলছি তুমি যেতে চাইলেই আমি যেতে দিব এতটা ভালো ছেলে আমি না।এমনিতেই বড় ছাড়া অনেক গুলো দিন কাটিয়ে দিয়েছি।আর পারবো না।
–আমি রাগ করছি।এখন আমি চলে যেতে লাগবো।আর আপনি আমাকে আটকাবেন।না হলে সত্যি সত্যি চলে যাব আমি।
–কি বউ’রে বাবা।কোথায় আমি রাগ করবো।তা-না উল্টা উনি রাগ করছেন।
–আটকাবেন কি না বলেন।
–আটকাবো না।
–ওকে চলে গেলাম।
–যাওয়ার আগে আমার বাচ্চা আমাকে দিয়ে যাও।
–পারলে আমার পেট থেকে বাচ্চা বের করে আপনার পেটে ঢুকিয়ে নিন।
আয়ান হেঁসে দিলো শখের সার মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
–আমার না খুব খারাপ লাগছে শখ।আমি ঘুমাবো।
–তাহলে ঘুমিয়ে পড়েন।
–তুমি চলে যাবে না তো আবার।আমাকে কথা দাও।আমাকে ছেড়ে যাবে না।
–কথা দিলাম আমি যাব না।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।
আয়ান শখকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।পরের দিন সকাল আয়ান ঘুৃম থেকে আগে উঠে পড়লো।ফ্রেশ হয়ে এসে শখকে জাগিয়ে দিলো।
–কি হয়েছে ছুটির দিনে এভাবে সকাল সকাল গরুর মতো চিৎকার করছেন কেনো।
–কি বললে আমি গরু।
–তা না হলে কি।
–তুৃমি তাহলে গরুর বউ।
–আপনার মাথা।
–তোমার মুন্ডু।কথা কম বলো রেডি হয়ে নাও।আমদের এক জায়গায় যেতে হবে।ছুটির দিন না হলে আমার সময় কোথায়।
–আপনার শরীর কেমন আছে।দেখি আয়ানের কপালে হাত দিয়ে বললো।
–আচ্ছা বউ তুমি এত নিরামিষ কেনো বলো তো।সকাল সকাল বরকে কাছে পেয়েছো।কোথায় আদর করবে।তা-না করে তুমি দেখছো।জ্বর কমছে নাকি।
–তাহলে কি দেখবো।
–আমর ঠোঁট কি তোমার চোখে পড়ে না।কি সুন্দর গোলাপি ঠোঁট আমার।দশ বারো টা চুমু খেতে পারো না।
–আপনি একটা আস্ত অসভ্য লোক।দিন দিন আরো বেশি অসভ্য হচ্ছেন।দু’দিন পরে বাচ্চার বাপ হবেন।ভালো হয়ে যান।
–আসবো।বলল রুহি।
–আপু তুৃমি সব সময় ভুল সময়ে আসো।বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করবো।সব সময় বিরক্ত করো।
–আয়ান দিব একটা থাপ্পড় লাগিয়ে।দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।বড় বোন হই আমি তোর।
–তোমার আর ভাইয়ার রোমান্টিক মুহূর্তে আমি কখনো বিরক্ত করছি।তাহলে তুমি কেনো করলে।রুহি আয়ান-কে হালকা করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।
–আম্মু আমি’ও মামুর মতো বউ পাগল হতে চাই।আর বউয়ের সাথে রোমান্স করতে চাই।আচ্ছা আম্মু রোমান্স কি।কেমন করে এটা করে।
রাফির কথা শুনে সবাই বড় বড় করে তাকালো।
–দেখলি তো তোরা যদি এমন করিস।তাহলে বাচ্চারা কি শিখবে।
–বউকে কি করে ভালোবাসতে হয় শিখে নিবে কাজে আসবে আপু।
–কিন্তু আমার বউ তোমার বউয়ের জন্য চিন্তা করে করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।তোমার বউকে বলো একটু ভালো করে কথা বলতে আমার বউয়ের সাথে।বলল ফিয়াজ।
–তোমার বউ আর তোমার সাথে কোনো কথা নেই।চলে যাও।দুই জন আমার সাথে বেইমানি করেছো।
–শখ ফিয়াজ ভাইয়াকে ভুল বুঝো না।ভাইয়া আমাকে সবকিছুতে সাহায্য করেছে।ভাইয়া যদি আমাকে না সাহায্য করতো।তাহলে আমি এত কিছু করতে পারতাম না।
–আচ্ছা ভাইয়ার কথা বাদ দিলাম কিন্তু আয়েশা।ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো না।নিজের বোন ভাবতাম ওকে আমি।কিন্তু আমাকে না বলে ভাইয়ার সাথে এত বছর রিলেশনে ছিলো।বিয়েও করেছে আমি জানি না।
–আমাকে ভুল বুঝিস না রে বোন।ভাইয়ার স্মৃতি ফিরে আসার পরে ভাইয়া আমাকে ভুলে গিয়েছিল।ডক্টর বলেছিলো। ভাইয়ার স্মৃতি ফিরতে সময় লাগবে।নিজরে ভালোবাসার মানুষ যখন চিনতে না পারে কি অবস্থা হতে পারে একটা বার ভাবছিস।ভাইয়া যখন আবার আমার কথা মনে করতে পারে।তখন আমি ভাইয়াকে হারানোর ভয়ে বিয়ে করে ফেলি প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।
–আমি মাফ করে দিলাম।কিন্তু নিজের স্বামীকে ভাইয়া বলে কোন পাগল।
–তুমি যেভাবে আমাকে স্যার বলো।তুমি এক পাগল তোমার বান্ধবী আরেক পাগল।বলল আয়ান।
আয়ানের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।শখ রেগে আয়ানের দিকে তাকালো।
–ভাইয়া রেডি হয়ে না-ও।আমাদের যেতে হবে।আয়ান ফিয়াজ কে উদ্দেশ্য করে বললো।
আয়েশা শখকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–আমার ওপরে এখনো রাগ করে আছিস সোন।তোকে কথা দিলাম ময়না পাখি আর কোনো দিন তোর থেকে কিছু লুকিয়ে রাখবো না।কান্না করতে করতে বললো।
–আমার বউ আমি এখনো আদর করতে পারলাম না।আরেকজন আসছে ভাগ বসাতে।ডং দেখলে বাঁচি না।এবার ছেড়ে দে আমার বউ ওটা তোর না।মনে মনে বলল আয়ান।
–হয়েছে যা ডং করতে হবে না।সত্যি আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।কিন্তু তুই আমার বইন হস আমি তাই তোর ওপরে রেগে থাকতে পারি।এটা ভেবে আরো খুশি হয়েছি এখন তুই আমার ভাইয়ের বউ হয়ে গেছিস।সারাজীবন আমার পাশে থাকতে পারবি।
–শখ বেশি হয়ে যাচ্ছে না।সারাজীবন পাশে থাকার জন্য আমি আছি।শুধু শুধু তোমার ভাইয়ার বউটাকে কষ্ট দেওয়া মানে আছে।আয়েশা যাও নিজের বরের কাছে যাও।আমার বউটাকে ছাড়ো এখন।
–শখ বইন আমি পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।কিছু একটা পুরে কয়লা হয়ে যাচ্ছে।বলল আয়েশা
–শুধু তুমি না আমরা সবাই পাচ্ছি।বলল রুহি।
–আম্মু আমি পাচ্ছি না।তোমরা কি করে পাচ্ছো।
–তুমি খুব পাকা হয়েছো রাফি চলো খাবে।সবাই চলে আসো আমি খাবার রেডি করছি।
আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো, শখ যেতে লাগলে আয়ান শখের হাত ধরে ফেললো।
–তুমি কোথায় যাচ্ছো।
–নিচে।
–আদর করে না দিলে কোথাও যেতে দিব না।ঐ আয়েশা’কে এত ভালোবাসার কি আছে হ্যাঁ।আমার বউ আমি ভাগ পাই না।আবার ও এসে আমার বউয়ের থেকে কত ভালোবাসা নিয়ে গেলো।আমাকে একটু ভালোবেসে দিবে না বউ।
–এত ডং কর কোথায় থেকে শিখলেন।
শখকে জড়িয়ে ধরে বললো তোমার থেকে।
–আমি..আর কিছু বলতে পারলো না শখ।আয়ান শখের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে।বেশ কিছুক্ষণ ছেড়ে দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here