রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 49

0
1094

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪৯(সারপ্রাইজ পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
শখ রুমে গিয়ে আয়ান’কে একটার পরে একটা কল দিয়ে-ই যাচ্ছে।আয়ান বারবার কেটে দিচ্ছে।শখ রেগে বারবার কল করছে।আয়ান বিরক্ত হয়ে অবশেষে ফোন অফ করে দিলো।
–তুমি বিয়ে করবে তাই না।আমি’ও দেখবো তুমি আমাকে রেখে কি করে অন্য একটা মেয়ে’কে বিয়ে করো।কালকে আমি নিজে তোমার বিয়ে খেতে যাব।রেগে জোরে জোরে বলল শখ।
এসব দেখে মুনতাহা আর শুভ হাসছে।
–এত সহজে তো ধরা দিব না শখ পাখি।এবার আমি না তুমি নিজে আসবে আমার কাছে।বলে’ই শুয়ে পড়ল।শরীরটা বেশ খারাপ।আর কোনোকিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লো আয়ান।
পরের দিন যথাযথ সময়ে আয়ানদের বাসায় ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হলো।সবাই চলে এসেছে।মিহু’কে সাজানো হচ্ছে।
–দেখো আয়ান আমার কিন্তু ভয় লাগছে।
–লাইক সিরিয়াসলি তুমি ভয় পাচ্ছো।দেখো সময় কম।আমার শরীর-টা ভালো না।আমার কিছু হয়ে যাওয়ার আগে কাজ’টা সেরে ফেলো।
–ছোট বোনের দুলাভাই।সরি ছোট বোনের জামাই।আমাকে এভাবে বিপদের মধ্যে ঢেলে দিলে।
–আচ্ছা চলো তাহলে তোমাকে বাসায় রেখে আসি।আমি না হয় অন্য কাউকে খুঁজে নিব।
–আয়ান,,
–আমি তোমার ছোট বোনের বর আয়াশ তুমি আমার সাথে চোখ গরম দেখা’ও।আমার থেকে বেশি গরম নাকি তোমার চোখ।
–তোমার সাথে কথা বলে পারা যাবে না।আমি চুপ রইলাম।
শখরা চলে এসেছে।বুকের ভেতর’টা কেমন কাঁপছে শখের।এতক্ষণ শক্ত থাকতে পারলে’ও এখন সে দূর্বলতা অনুভব করছে।ভেতরে আসতে-ই রুহি খুব সন্মান করে বসিয়ে দিলো সবাইকে।
–শখ কেমন আছো।তোমার মতো বকা মেয়ে দুইটা দেখি নাই।যে,কি-না নিজের বরের বিয়ে খেতে আসছে।
শখ অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আয়ান নিচে আসছিল শখকে দেখে শখের দিকে এগিয়ে আসলো।
–বাবা কি ভালোবাসা দেখেছো আপু।বরের বিয়ে খেতে চলে এসেছে।আপু শখকে একটু বেশি বেশি খেতে দিবে।দেখো না দিন দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে।আমার বড় বউ বলে কথা।
শখ রাগী চোখে আয়ানের দিকে তাকালো।
–এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো।আগে কোনোদিন ছেলে দেখো নাই।আমি জানি আমি খুব সুন্দর।সবাই আমার ওপরে ক্রাশ খায়।কিন্তু তুমি যেভাবে তাকিয়ে আছো।মনে হচ্ছে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবে।
–আপনি একটা অসভ্য লোক আপনার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই।আমার রুচি এতটা খারাপ হ’য়ে গেছে।যে,আমি একটা রাম ছাগলকে দেখে ক্রাশ খাব।যতো সব।কিছুটা ভাব নিয়ে বলল।
–তুমি আমাকে রামছাগল বললে তুমি কি,তুৃমি নিজে একটা পেতনী।
–আমি পেতনী হলে আপনি কি ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা কোথাকার।দেখুন আপনার বউ চলে এসেছে।যান বউয়ের গলা ধরে বসে পড়ুন।কথা গুলো বলতে বলতে গলা ধরে এলো শখের।কেমন জানি কান্না চলে আসছে ভেতর থেকে।বাহিরে যত-ই নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি।ভেতর থেকে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেন না।এসব ভাবতে ভাবতে পাশে তাকাতে-ই আয়ান নেই।
–উনি কোথায় গেলো।তারমানে সত্যি উনি বিয়েটা করবেন।চোখ গেলো মিহুর পাশে বরের মুখ ঢাকা থাকায় শখ বরের মুখ দেখতে পারছে না।দেখে-ও কি লাভ।আয়ান-ই তো।না এখানে আর থাকা যাবে না।আমার আর সয্য করার ক্ষমতা নেই।শখ চলে যাবে।তার আগে-ই রুহি এসে শখকে ধরে ফেলল।
–কোথায় যাচ্ছো।বিয়ে শেষ না হওয়ার পর্যন্ত কোথাও যেতে পারবে না।শখ আর কোনো কথা বলল না।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
কাজে সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।বর’কে কবুল বলতে বললে তাড়াতাড়ি করে কবুল বলে দিলো।কাজী সাহেব মিহুর কাছে আসলো রাফি এসে মিহুর মাথা খেয়ে দিচ্ছে বকবক করে।মিহু কোনো কথা বলছে।কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে রাফির বকবক,আর রাফির হাতের ফোনের আওয়াজের জন্য ছেলের নাম না শুনে-ই কবুল বলে দিলো মিহু।অবশেষে বিবাহ সম্পূর্ন হলো।
শখ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে।আয়ানের মুখ’টা একবার দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে।কিন্তু দেখতে’ই পারছে না।খুব শখ তাই না দুই বউ নিয়ে সংসার করার।আমি যদি আপনাকে জেলের ভাত না খাইয়েছি।তাহলে আমার নাম’ও শখ না।
–কি সুন্দর বিয়েটা হয়ে গেলে তাই না বলো বউ।কি সুন্দর লাগছে দু’জনকে।একদম রাজযোটক।
–রাজযোটক না ছাই।মানুষ এতটা খারাপ কি করে হতে পারে।কি সুন্দর গিরগিটির মতো রং বদলে ফেললো।দুদিন আগেও আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছে।আর এখন চরিত্র হীন ছেলেদের মতো আরেকটা বিয়ে করে নিলো।
–একদম বাজে কথা বলবে না।আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে চরিত্র হীন ছেলে মনে হয়।আমার মতো ভালো ছেলে পুরো পৃথিবীতে নেই।একটা বউয়ের জ্বালায় বাঁচি না।আরেকটা বিয়ে করে বিপদ ঘরে আনবো নাকি।
শখ পেছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো।
–আপনি।
–কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি।
–আপনি এখানে তাহলে ওখানে কে।
–সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হব না-কি।আমাকে খুঁজছিলে কেনো তাই বলো।
–কচু আপনাকে খুঁজছিলাম।
–এখনি তো বললে আমাকে নাকি জেলের ভাত খাওয়াবে।তা-না হলে তোমার নাম শখ না।তুমি আমাকে জেলের ভাত খাওয়াতে পারবে না।তাই তোমার নাম,শখের সাথে পাখি যোগ করে শখ পাখি রাখলাম।কেমন হয়েছে বলো।
শখ কিছু বলতে যাবে তার আগে-ই মিহুর চিৎকার ভেসে আসলো।
–আয়াশ তুমি এখানে।আয়ান ভাইয়া কোথায়।তুমি এখানে কি করছো।
–আয়াশের সাথেই তোমার বিয়ে হয়েছে মিহু।বলল রুহি।
–কি বলছো এসব।আমি এই বিয়ে মানি না।আয়ান ভাইয়া আমাকে ঠকিয়েছে।আয়াশ তোমাকে তো আমি খুন করে ফেলবো তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে বিয়ে করার।
–আমি কিছু করি নাই।আয়ান আমাকে নিয়ে আসছে।আমি ওকে অনেক বার বলছি।কিন্তু ও আমার কথা শুনে নাই।
–আয়ান ভাইয়া তুমি এভাবে আমাকে ধোঁকা দিলে।আমি তোমাকে ছাড়বো না।আমি তোমার নামে মামলা করবো।তুমি আমাকে বিয়ের আশা দিয়ে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে।
আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।
–আমি তোর ভাই হয় না।তোর প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না।বোনের বিয়ে তো ভাইকে’ই দিতে হবে তাই না বল।আমি শুধু ভাইয়ে দায়িত্ব পালন করছি।আর তুই তো বললি তোর বিয়ে করার,বউ সাজার খুব শখ তাই ভাই হয়ে বোনের শখ পূরন করে দিলাম।
–আমি এই বদলটাকে বিয়ে করতে চাই নাই।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছি।আমি জানতাম তুমি পরে অস্বীকার যেতে পারো তাই আমি আগেই তোমার ভয়েস রেকর্ড করে রাখছিলাম।
–ঐ তোকে কখন বললাম আমি তোকে বিয়ে করবো।আমি তোকে বলছি মিহু বিয়ে করবি।কাকে করবি সেটা বলি নাই।আর এটা’ও বলি নাই।মিহু আমাকে বিয়ে করবি।আমার কথা না বুঝে তোকে এত হাইপার হতে আমি বলে ছিলাম।তুই নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিস আর এখন আমাকে দোষ দিচ্ছিস।কই দেখা তোর ভয়েস রেকর্ড।সবাই শুনুক,কোথায় আমি তোকে বিয়ে করার কথা বলছি।
–তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে আয়ান ভাইয়া।তুমি কি মনে করেছো আমাকে এভাবে ঠকিয়ে তুমি শখকে আর শখের বাচ্চাকে নিয়ে সুখে সংসার করবে।আর আমি বসে বসে দেখবো।আমি আজ শখ আর ওর বাচ্চা দু’জনকে’ই মেরে ফেলবো।ওর বাচ্চার জন্যই তুমি আমার সাথে এমন করলে তাই না।বাচ্চাই যদি না থাকে তাহলে বুঝবে।হারানোর ব্যাথা কি জিনিস।আমি তোমাকে হারিয়েছি।তুমি এবার নিজের বাচ্চা হারিয়ে বুঝবে।ব্যাথাটা কোথায় লাগে।বলে’ই হাতের কাছে থাকা ফুলদানি নিয়ে শখের এগিয়ে যেতে লাগলো।
আয়ান আস্তে করে বলে উঠলো বাচ্চা।রুহি’সহ সবাই অবাক হয়ে গেলো মিহুর কথায়।মিহু শখের অনেক’টা কাছে চলে গেছে।মিহু একদম পাগল হয়ে গেছে।ফুলদানি শখের পেটে দিকে ছুরতে যাবে।তার আগে-ই শখ আমার বাচ্চা বলে-ই পেটে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো।মিহু যেনো তার পেটে আঘাত করতে না পারে।ফিয়াজ এসে মিহুর থেকে ফুলদানিটি কেঁড়ে নিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মিহুর গালে।
–তোর সাহস কম না।তুই আমার বোনের দিকে হাত বাড়াস।তোকে আমি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিব।তুই চিনিস আমি কে।
রুহি গিয়ে শখকে তুলে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো।
–ভয় পেও না।আমরা আছি কিছু হবে না।বলল রুহি শখ ভয়ে ভয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।আয়ান শখের দিকে তাকিয়ে আছে।দু-চোখ অসম্ভব লাল হয়ে।খুব শান্ত চোখ তাকিয়ে আছে শখের দিকে।
–মিহু তুই জানিস আমি বিবাহিত।তবুও যদি তুই আমার সংসার ভাঙতে আসিস।আমার বউ হবার স্বপ্ন দেখিস।তাহলে আমি কেনো এতটুকু করতে পারবো না।আয়াশ এমনিতে অনেক ভালো ছেলে।তোকে খুব ভালোবাসে।তোকে খুব ভালো রাখবে।আমাকে এখন জালাস না।এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।তুই যেনো কোনো ঝামেলা করতে না পারিস।তাই তোর ঝামেলা শেষ করে দিলাম।আয়াশ তুমি তোমার বউকে নিয়ে চলে যা-ও।আমি রেগে গেলে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।
–আমি এই মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মানি না।আমার ঘরে আমি এই মেয়েকে বউ করে তুলবো না।বলল রাহেলা বেগম।
–আয়ান তুই কাজ’টা ঠিক করলি না।তোকে দেখে নিব।আমি আমার মেয়েকে ঐ ছেলের সাথে কিছুতে-ই পাঠাবো না।বলে-ই মিহুকে নিয়ে চলে গেলো মিহুর মা।আয়াশকে নিয়ে রেগে চলে গেলো রাহেলা বেগম।
আবরাহাম চৌধুরী কিছু দিনের জন্য বাহিরে গিয়েছিলেন।একটু আগে এসে সবকিছু শুনে তার মাথায় আগুন ধরে গেছে।রেগে রুমের মধ্যে বসে আছে।ছেলেটা বড্ড বার বেড়েছে।একটা কিছু করে ভেঙে দিতে হবে।
আয়ান কাউকে কিছু না বলে সোজা বাবার রুমে চলে আসলো।
–বাবা আসবো।খুব শান্ত হয়ে বললো।ছেলের এমন শান্ত হয়ে কথা বলা দেখে আবরাহাম চৌধুরী কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।তবুও রেগে বললো তুমি চলে যা-ও।তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
–বাবা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।আমার সাথে একটু ড্রয়িং রুমে পর্যন্ত যাবে।তাহলে সবকিছু বুঝতে পারবে।
আয়ান আর কোনো কথা না বলে আবরাহাম চৌধুরীর চোখ ধরে ফেললো দুই হাত দিয়ে।
–আরে কি করছো আয়ান।ফাজলামির একটা সিমা থাকে।
আয়ান কোনো কথা না বলে তার বাবাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গিয়ে চোখ খুলে দিয়ে বললো।
–বাবা সারপ্রাইজ।
আয়ানের বাবা দেখলো পুরো বাসা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে।সবার মুখে প্রশ্নের ছাপ।আবরাহাম চৌধুরী ভয়ে ঘামতে শুরু করলো।তারমানে সে,যেটা আন্দাজ করেছিলো সেটা’ই সত্যি হলো……
চলবে….. v

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here