রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 48

0
1050

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
তখনি আহনাফ সাহেব এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে শখের মুখের সামনে ধরলো।
–তাড়াতাড়ি খেয়ে নে মা।শরীর খুব দুর্বল।সকালে অল্প খেয়ে বেড়িয়েছিস।এভাবে খাওয়া দাওয়া করে শরীর ভালো থাকবে বল।
–আমি খাব না।তুমি নিয়ে যা-ও।ফ্রেশ হয়ে ঘুমোবো একটু।
–আগে খাবি তারপরে,না হলে কোথাও যেতে দিব না।
শখ বিরক্ত হয়ে খেয়ে উপরে চলে গেলো, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে শখ।এখন একটা ফ্রেশ ঘুম দিবে বিছানায় বসতে-ই ফিয়াজ এসে হাজির।শখের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
–শুনলাম তুই নাকি মা হবি।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না।শরীর খুব দূর্বল।চিন্তা করিস অনেক।এভাবে চলতে থাকলে।বাচ্চা কি ভালো থাকবে।নিজরে সাথে বাচ্চা’ও ক্ষতি করছিস তো।
–আপনার না ভাবলে’ও চলবে।আগে তো কখনো এত দরদ দেখান নাই।এখন বউয়ের কথায় দরদ দেখাতে আসছেন।
–ভাই তার বোনের কাছে আসবে।তা-ও আবার কারো কথা শুনে।এটা কেমন কথা বললি রে বোন।
–বাবা আপনি-ও দেখছি।সবার মতো রং বদলাতে শুরু করে দিয়েছেন।কবে থেকে এত ভালোবাসা দেখাই’তে শুরু করলেন।
–আয়ান জানে সে, বাবা হবে।তাকে জানিয়েছিস খবর’টা।
শখ এবার মাথা নিচু করে জবাব দিলো না।
–এখনো বলিস নাই।ওর বাবা হবার খবর’টা ওকে জানিয়ে দিস কেমন।বেশি বারাবাড়ি ভালো না।আয়ান যা করছে তোর ভালোর জন্য-ই করছে।ওকে ভুল বুঝিস না।বলে-ই ফিয়াজ চলে গেলো।
ফিয়াজের কথার আগা মাথা কিছু-ই বুঝলো না শখ।কিন্তু এত গুলো বছর পরে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসা পেয়েছে।ফিয়াজের কথার মধ্যে।এর আগেও ফিয়াজ শখের সাথে কথা বলেছে।কই এর আগে তো এমন ভালোবাসা অনুভব করে নাই।এসব ভাবতে ভাবতে শখ ঘুমিয়ে গেলো।শখের ঘুম ভাংলো রাত আট-টায় ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে।
–কিরে শরীর এখন কেমন আছে।দুপুরে না খেয়ে ঘুমিয়েছিস।চল খেতে বসবি।বলল মুনতাহা সবাই খেতে বসলো।সবাই খাওয়া দাওয়া করে,নয়টার দিকে ঘুমোতে যাবে।তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।শখ গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আয়ানকে দেখে রেগে আয়ানের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিলো।আয়ান দরজার ওপাশে থেকে বললো।
–শখ দরজা খলো।আমি তোমার কাছে ভালোবাসা চাই ভিক্ষা না।তুমি এভাবে দরজা লাগিয়ে দিতে পারো না।
–আমি আপনার সাথে যাব না।কেনো এসেছেন।চলে যান।
–বৃষ্টিতে ভিজে এত কষ্ট করে এসেছি।চলে যাওয়ার জন্য।আমি তোমাকে না নিয়ে আমি যাব না।
–আপনার ইচ্ছে।আমি আপনার সাথে যাব না।আর কেউ যদি দরজা খোলে তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।বলে-ই নিজের রুমে চলে গেলো শখ।
মুনতাহা আর শুভ দরজা খুলে দেখলো আয়ান নেই।ভাবছে হয়তো চলে গেছে।আয়ান রেগে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।যতক্ষণ না শখ তার সাথে যাবে।সে,এখানে থেকে এ পা নড়বে না।সবাই যে,যার মতো ঘুমোতে চলে গেলো।রাত বাজে বারো’টা হঠাৎ মুনতাহা ঘুম ভেঙে যায়।পানি খাওয়ার জন্য ড্রয়িং রুমে আসতে-ই জানালা দিয়ে চোখ যায়,আয়ানের দিকে ভিজে একাকার হয়ে গেছে।শরীরে কাঁপনি উঠে গেছে।নিজে-ই নিজেকে দু-হাত দিয়ে ধরে আছে।মনে হচ্ছে হালকা করে ধাক্কা দিলে-ই পড়ে।শখের জন্য আফসোস হলো মুনতাহার।মুনতাহা দৌড়ে গিয়ে শুভ কে ডাকতে শুরু করলো।
–এই শুভ উঠো।আয়ান ভাইয়া এখনো দাঁড়িয়ে আছে।বাহিরে মেঘের গর্জন করছে।আয়ান ভাইয়ার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ভেতর নিয়ে আসতে হবে।
মুনতাহার কথা শুনে শুভ ধর ফরিয়ে উঠলো।
–কি বলছো এসব।চলো গিয়ে দেখি।
শুভ গিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি আয়ান বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বসে পড়লো।শুভ আর মুনতাহা যাওয়ার আগে-ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।শুভ দৌড়ে গিয়ে আয়ানের মাথা শুভর কোলে তুলে নিলো।
–ভাইয়া,এই ভাইয়া তাকা’ও।মুনতাহা ভাইয়া পুরো শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে।যে,কোনো সময় কিছু হয়ে যেতে পারে।ভাইয়া কি ছোট বাচ্চা হ’য়ে গেছে নাকি।এমন পাগলের মতো কাজ কেউ করে।শুভ কোনো রকম আয়ান’কে ধরে বাসার মধ্যে নিয়ে এসে।কাপড় বদলে দিলো।শরীরে কম্বল দিয়ে’ও কাজ হচ্ছে না।সময়ের সাথে আয়ানের কাঁপনি বেড়ে-ই চলেছে।শুভ না পেরে তার পরিচিত ডক্টরকে ফোন করলো।ডক্টর কিছু পরমর্শ দিলেন।শুভ আর মুনতাহা মিলে আয়ান’কে অল্প কিছু খাইয়ে দিয়ে।ঔষধ খাইয়ে দিলো।সারারাত দু’জন মিলে আয়ানের সেবা করলো।
পরের দিন সকালে শুভর ঘুম ভাঙতেই পাশে তাকিয়ে দেখলো।আয়ান নেই।চারিদিকে তাকিয়ে কোথাও খুঁজে পেলো না।বাহিরে যাবে তার আগেই মুনতাহা আসলো রুমে।
–মুনতাহা ভাইয়া কোথায়।ভাইয়ার শরীর খুব খারাপ।হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।আমাকে ডাকো নাই কেনো।কতো বেলা হয়ে গেছে।ভাইয়া কোথায়।
–শান্ত হও।ভাইয়া ভরে চলে গেছে।
–চলে গেছে মানে,তুমি জানোনা ভাইয়ার কি অবস্থা।তুমি একা যেতে দিলে।
–আমি কি যেতে দিতে চাই ছিলাম নাকি।সকালে ডক্টর আংকেল আসছিলো।মাকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলাম।এসে ভাইয়াকে দেখে গেছে।একটা ইনজেকশন ও করে গেছে কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে গেছে।আর ভাইয়াকে রেস্ট করতে বলে গেছে।ভাইয়া ঠিক মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না।তবু’ও জোর করে বেড়িয়ে গেছে।ধরে রাখতে পারি নাই।তোমাকে ডেকে ছিলাম।তুমি শুনো নাই।
এদিকে আয়ান বাসায় আসতে-ই নীলিমা চৌধুরী অস্থির হয়ে বললেন।
–সারারাত কোথায় ছিলি।একটা ফোন পর্যন্ত করিস নাই।আমাদের চিন্তা হয় না।তুই ঠিক আছিস তো বাবা।তোর কিছু হয় নাই।বলতে বলতে কান্না করে দিলো।
–মা,তুমি চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।
–ঠিক আছি বললে-ই হয় না আয়ান ভাইয়া।তোমাকে দেখে ঠিক লাগছে না।তুমি তো ঠিক মতো কথা-ও বলতে পারছো না।বলল মিহু।
–মিহু তুই।
–হ্যাঁ ভাইয়া তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে কাল রাতে আসছিলাম।
মিহুর কথা শুনে হালকা হাসলো আয়ান।রুহি রেগে আয়ানকে মারতে যাবে।আয়ানের শরীরে হাত দিয়ে ভয় পেয়ে গেলো।
–একি ভাই তোর পুরো জ্বরে পুরে যাচ্ছে।সারারাত কোথায় ছিলি।কিছু খেয়েছিস।খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি চল।
–আপু ঔষধ খেয়েছি লাগবে না।আমি ঘুমোবো।আমাকে একটু পরে ডেকে দিও কলেজে যেতে হবে।
–বলি ফাজলামি করছিস তুই।তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব চল।সারারাত কোথায় ছিলি।কালকে শখের কাছে ফোন দিয়ে ছিলাম।ওর কাছে’ও যাস নাই।শখের কথা মনে পড়তে-ই আয়ান মিহুকে বলল।
–মিহু বিয়ে করবি।
আয়ানের কথা শুনে মিহুর মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।খুশি হয়ে বলল।
–আয়ান ভাইয়া সত্যি বলছো।তুমি আমাকে বিয়ে করবে।আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য সব সময় রাজি।কিন্তু তুমি আমাকে বিয়ে না করে ঐ শখকে করেছো।তুমি জানো আমার বউ হবার।বউ সাজার কতটা ইচ্ছে।কবে বিয়ে করবে তাই বলো।আমি বউ সেজে তোমার সামনে এসে হাজির হবো।
–কালকে বউ সেজে চলে আসবি।শখের পরিবার।আমার পরিবার।আর তোর পরিবার।আর কেউ থাকবে না।বিয়েতে।মনে থাকে যেনো।
আয়ানের কথা শুনে রুহিসহ নিলিমা চৌধুরী আবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।
–আয়ান তুই কি পাগল হয়ে গেছিস।তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আয় কিছু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি।তাহলে যদি তোর মাথা একটু ঠিক হয়।
আয়ান কোনো কথা না বলে,ওপরে চলে গেলো।মিহু খুশিতে মা’কে ফোন করে জানালো।মিহুর মা-ও খুব খুশি হয়েছে।
বিকেল বেলা শখ বসে বসে ভাবছে।না ওনার সাথে বেশি করা হয়ে যাচ্ছে।ওনার কাছে মাফ চাইতে হবে।রেডি হতে যাবে তার আগে-ই কলিং বেল বেজে উঠলো।মুনতাহা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আয়ানকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল।
–আয়ান ভাইয়া তুমি।এখন কেমন আছো।তুমি এই শরীর নিয়ে,চলাফেরা করছো কেনো।ডক্টর তোমাকে রেস্ট করতে বলছে।ভেতরে আসো।
–আরে আয়ান ভাইয়া তুমি না বলে চলে গিয়েছিলে কেনো।খুব রেগে আছি।আয়ানকে ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো শুভ।
–আয়ান বাবা তোমার শরীর এখন কেমন আছে।বলল রাহেলা বেগম।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
–কতটা ভালো আছো,দেখতে-ই পাচ্ছি।কথা বলতে পারছো ঠিক মতো।দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তোমার।পুরো শরীর কাঁপছে।
–ঠিক আছে কিছু হবে না।শখ আয়ানের দিকে এগিয়ে আসলো শখ কিছু বলতে যাবে।তার আগে-ই আয়ান বলল।
–যেতে হবে না তোমাকে।নিতে আসি নাই।দরজা লাগিয়ে দিতে হবে না।আমি নিজে থেকে চলে যাচ্ছি।এই না-ও বিয়ের কার্ড কালকে সন্ধ্যা বেলা চলে আসবে।আপনারা সবাই আসবেন।বলে-ই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো আয়ান।শখ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কি হলো কিছু-ই বুঝতে পারছে না।
–শখ তোর এবার শান্তি হয়েছে।আয়ান ভাইয়া তোর পিছু ছেড়ে দিয়েছে।মিহুকে বিয়ে করছে।এবার ছাড়া জীবনের জন্য তুই মুক্তি পেয়ে যাবি ভাইয়ার কাছে থেকে।কাল পুরো চার ঘন্টা বৃষ্টি ভিজেছে।উনি এখনো ঠিক আছে এটাই অনেক।কাল যদি আমি না দেখতাম।তাহলে কি হতো আল্লাহ ভালো জানে।তুই এত নিষ্ঠুর কবে থেকে হলি-রে শখ।তুই তো এমন ছিলি না।
–এসব কি বলছো আপু।আমি তো জানি না।আমাকে একবারো ডাকো নাই।
শুভ রেগে বলল।
–আমার ভাই আমি আর মুনতাহা মিলে সারারাত সেবা করছি।তোমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করি নাই।এসে কি করতে।আমার ভাইয়ের যতটুকু প্রান ছিলো।সেটুকুও কেঁড়ে নিতে।
–ভাইয়া।
–এবার ভালো হয়েছে।আমার বোন-টা আয়ান ভাইয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসে তোমার মতো না অবহেলা করবে।অনেক ভালো রাখবে।
কথাটা শোনা মাত্রই শখের মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজা টা ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসছে।
–আমি’ও দেখবো উনি কিভাবে আরেক-টা বিয়ে করেন।বলে-ই শখ চলে গেলো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here