রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 16

0
1956

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–আমি চলে যেতে বললাম আর সত্যি চলে গলো,বাহ খুব ভালো।(ভীষণ অভিমান হচ্ছে শখের ওপরে)
শখ কিছু একটা ভেবে আবার ঘুরে আসলো।এসে কোনো কথা না বলে আয়ানের হাত থেকে কাঁচ গুলো তুলতে যাবে,তার আগেই আয়ান বলে উঠলো।
–স্যারের রুমে প্রবেশ করতে হলে,স্যারের অনুমতি নিতে হয়।তুমি জানো না।নাকি নতুন করে শেখানো লাগবে।
শখ কোনো কথা না বলে দরজার কাছে চলে গেলো।
–আসতে পারি স্যার।
–না।
–কিন্তু আমি আসবো-ই।বলেই শখ ভেতরে চলে গেলো।
–তোমাকে আমি আসতে নিষেধ করলাম না।তুমি তা-ও কেনো আসলে।স্যারের কথা অমান্য করার শাস্তি তুমি পাবে।
–সেসব শাস্তি আমাকে পরে দিবেন।দেখি এদিকে আসুন।লক্ষি স্যারের মতো এখানে বসুন।
–এতদিন লক্ষি ছেলে শুনে এসেছি। আজ নতুন শুনলাম,লক্ষি স্যার।কথাটা বলেই শখের দিকে তাকালো।
আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে শখ কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। চোখ একদম লাল হয়ে গেছে। এর আগে’ও আয়ানকে রেগে লাল হতে দেখছে।কিন্তু আজ প্রয়োজনের থেকে বেশি লাল হয়ে আছে।হয়তো কিছু একটা বললেই কান্না করে দিবে।
শখ আর কোনো কথা না বলে আয়ানকে ধরে বসালো।
–স্যার আপনি ঔষধ কোথায় রাখেন,যদি একটু বলতেন।তাহলে সুবিধা হতো।
–থাক আমার জন্য কাউকে আলগা দরদ দেখাতে হবে না।আমি ঠিক আছি।আপনি আসতে পারেন শখ।
–ভাব নেওয়া হয়েছে। তাহলে বলেন।আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে,তাড়াতাড়ি বলেন।
–বলবো না।যা হয় আমার হবে তোমার এত ভাবতে হবে না।
–ভাবতে হবে।আপনার কিছু হয়ে গেলে।এতগুলো ছাত্রছাত্রীদের কে পড়াবে।
–ও তুমি ওদের কথা ভাবছো।তোমার কিছু হবে না।
–মানে।
–কিছু না,আমি রেগে যাওয়ার আগে চলে যা-ও।
–উম বললে-ই হলো নাকি আমি আপনাকে ঔষধ না লাগিয়ে দিয়ে কোথাও যাব না।
–আমি মরে কেনো যায় না তাতে তোমার কি।
কথাটা শেষ হবার আগেই শখ আয়ানের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো।
–এই চুপ এগুলো কি ধরনের কথা। একদমই বাজে কথা বলবেন।
আয়ান এক হাত দিয়ে শখের হাতটা সরিয়ে দিলো।
–বাজে কথা….
–আর একটা কথা বললে আমি নিজেই আপনার গলা টিপে দিব।
–আমি তোমার স্যার তুমি কি ভুলে যাচ্ছো।আমি…
–পারেন-ই শুধু শাস্তি দিতে। দুর আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি।
অনেক খোঁজা খুঁজির পরে ঔষধের বক্সটি পেলো শখ।
তারপরে যত্ন সহকারে আয়ানের হাতটি পরিষ্কার করে,ব্যান্ডিজ করে দিলো।
এতক্ষণ আয়ান অপলক ভাবে তাকিয়ে শখকে দেখছিলো।সেদিকে শখের কোনো খেয়া’ই ছিলো না।এবার মাথা তুলে তাকাইতেই দেখলো আয়ান শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আগে কোনোদিন আমাকে দেখেন নাই। এভাবে তাকিয়ে থাকলে চোখে ময়লা ঢুকে যাবে।
–আমার চোখে ময়লা ঢুকে যাবে এটা না দেখে,তোমার চুলে পোকা ঢুকে গেলো ওটা আগে বের করো।
–কিহ(অবাক হয়ে)
–আপনি এখন আসতে পারেন শখ।
–কি মানুষ’রে বাবা।এতক্ষণ ধরে উপকার করে দিলাম। কোথায় ধন্যবাদ জানাবে তা না উল্টা আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।
–আমি আপনাকে বলেছিলাম এসে আমার উপকার করুন।
–আপনি আচ্ছা খারাপ মানুষ। আর কোনোদিন আপনার উপকার করতে আসবো না।এখন আবার ডং করে আপনি করে বলা হচ্ছে।থাকেন আপনি আর কোনোদিন আপনার সামনে আসবো না।চললাম বলেই শখ চলে গেলো।
–এই মেয়ে শুনো,আয়ান উঠতে যাবে হাতে ব্যাথা পেয়ে আর উঠতে পারলো না।কি মেয়ে রে বাবা উপকার করে একশো’টা কথা শুনিয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমার সামনে আসবে না।তাহলে কার সামনে যাবে। উ আয়াশের গেলে যাবে তাতে আমার কি।
–হ’হ আয়াশের সাথেই দেখা করতে যামু এখন টাটা স্যার।
–এই মেয়ে তোমাকে কিন্তু…
শখকে আর পায় কে দে দৌড়।
–একটা কাজ তোমারদের দ্বারা হয় না।কি করো বসে বসে।আজ’ই আমি আমার আয়ানের কাছে চলে যেতে পারতাম। এখন আরো ছয়টা মাস অপেক্ষা করতে হবে।সবটা তোমাদের জন্য হয়েছে আমি তোমাদের শেষ করে দিব।
–ম্যাডাম আপনি শান্ত হন।ওরা আসলে বুঝতে পারে নাই।নতুন তো তাই ভুল করে ফেলছে,আর হবে এবারের মতো মাফ করে দেন।
–কিসের মাফ।আর আপনি নতুন লোকদের দিয়ে আমার কাজ করাচ্ছেন,হাউ ডেয়ার ইউ।আপনার সাহস কি করে হয়।আমি আজ’ই আপনাদের হোটেল ছেড়ে অন্য হোটেলে উঠবো।জাস্ট টেন মিনিট।ওকে।
লোকটি এবার মেয়েটির পায়ের নিচে বসে পড়লো।
–সরি ম্যাম,ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করে দিন। আমরা কি কোনোদিন ভুল করছি।একবার ভুল করে ফেলছি।প্লিজ মাফ করে দিন ম্যাম।
মেয়েটি রেগে লোকটিকে লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো।
–এখনি আমার মুখের সামনে থেকে চলে যান সবাই। আপনাদের মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না।আপনাদের একটু ভুলের জন্য আমি আমার আয়ানের কাছে যেতে পারলাম না।বলেই মাটিতে বসে কান্না করতে শুরু করলো।
সবাই চলে গেলো।হঠাৎ করে কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করতেই পেছনে তাকালো মেয়েটি।
–তুমি এখানে তোমার তোর বাং…
–দেখো আমি তোমার কথায় বাংলাদেশ যায়।তোমাকে খুশি করার জন্য। তোমার আয়ান যেনো তোমাকে রেখে অন্য কাউকে ভালো না বাসে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য।কিন্তু গিয়ে আমার কি লাভ হয়।বলতো তুমি সেই কষ্ট’ই পাচ্ছো।তোমার কথা যে আমার সয্য হয়না।তুমি বুজবে কবে বলতো।আমি আর বাংলাদেশে যেতে পারবো না।
–দেখো পাগলামি করার সময় না এটা ওকে।আর আমাকে পাওয়ার আশা তুমি ছেড়ে দাও।কি মনে করছো আমি তোমাকে চিনি না।নাকি তুমি আমাকে ভালোবাসো এটা আমি বুঝি না।আমি সবকিছু বুঝি কিন্তু বুঝে-ও লাভ নেই।কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি না।আমি শুধু আয়ানকে ভালোবাসি।প্লিজ তুমি আমাকে ভুলে যা-ও আমি জানি একতরফা ভালোবাসা খুবই পোড়ায়।বাঁচতে দিবে না তোমাকে,তুমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে।
–আমি তোমাকে একাই সারাজীবন ভালোবেসে যাব।তুমি যখন বুঝে-ই ফেলছো।তখন আমি তোমাকে নিজের করে না পাই।কিন্তু তোমাকে তোমার খুশির জন্য সাহায্য করতে পারি।তোমার সুখেই আমার সুখ।
–বেশ তবে,তাই হোক তুমি আজই বাংলাদেশে ফিরে যাবে কথা দাও।
–ঠিক আছে।আমি আজই বাংলাদেশে চলে যাব।এবার খুশি।
মেয়েটি শুকনো হাসি দিলো তা দেখে ছেলেটি বললো।
–গুড তোমাকে হাসলে খুব সুন্দর লাগে।সব সময় হাসি খুশি থাকবে কেমন।তোমার মুখের হাসি বড্ড বেশি ভালোবাসি।
বলেই ছেলেটি চলে গেলো।মেয়েটি ছেলেটির যাওয়ার প্রানে তাকিয়ে থেকে একদি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
এদিকে..
–বাবা আমার আর সয্য হচ্ছে না।কেনো এমন করছো।আমিঅপেক্ষা করতে পারবো না।আমি কালকে-ই ওকে মেরে ফেলবো।
–শুনো কলিজার আমার এমন করে না।আমি প্রায় তেরো বছরের মতো অপেক্ষা করছি।আর মাত্র কয়টা মাস তাহলেই শখের আঠারো বছর পূর্ণ হবে।ওকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিয়ে ওকে মেরে ফেলবো শেষ।
–রাখো তোমার কয়টা মাস,এত অপেক্ষা করে কি হবে।তুমি বললেই শখকি তোমাকে সবকিছু দিয়ে দিবে।
–আলবাত দিবে।শখ আমাকে খুব ভালোবাসে,আবার অনেক বিশ্বাস’ও করে।আমি যদি মুখ ফুটে বলি আমার জন্য জীবন’ও দিয়ে দিতে রাজি।
–যদি শুনে তুমি ওর বাবা মার খুনি।তাহলে’ও দিয়ে দিবে।যদি যানতে পারে তোমার জন্য শখ তার ছোট বেলা হারিয়েছে।বাবা মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছে।ছোট বেলায় কতো দুঃখ কষ্ট পেয়ে মানুষ হয়েছে।
–কিসের দুঃখ কষ্ট।আহনাফ ওকে যথেষ্ট ভালোবাসে।আহনাফ ও তার স্ত্রী শখকে নিজের ছেলেমেয়ে থেকে-ও বেশি ভালোবাসে।শখের যে বাবা মা নেই।এটা ওরা কোনোদিন বুঝতেই দেয় নাই।
–তুমি নিজে’ও নষ্ট হয়েছো।আমার ছেলেটাকে’ও নষ্ট করে ফেলছো,ছেলেটা আমার আগে কতো ভালো ছিলো নিজের বোনকে কতো ভালোবাসতো।
–কিসের নিজের বোন মায়ের পেটের তো আর বোন না।
–এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যা-ও। এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দাও।
–বাবা আমার মনে হয়।মা ঠিক কথা বলছে।আমরা সত্যি ভুল করছি।এটা তো অন্যায় তাই না বলো।
–দিলে তো ছেলেটার মাথা খারাপ করে।তোমাকে এখানে আসতে বলছে কে।বেড়িয়ে যা-ও বলছি।
–ছেলের মাথা খারাপ আমি না তুমি করে দিয়েছো।ছেলে আমার কতো ভালো মাথাটা খারাপ তুমি করছো ওর।আমি আর কিছু করতে দিব না।
রেগে লোকটি মহিলাকে একটি রুমে আটকে দিলো।
–তুই তোর মায়ের কথা কানে নিবি না কলিজা।তুই ভুলে যাস না।আমি এইসব কার জন্য করছি।সব তো তোর জন্য’ই করছি তাই না বল।আমরা না থাকলে তোকে কে দেখবে আমরা ছাড়া তোর আর দুনিয়াতে কেউ নেই। আল্লাহ না করুক আজ যদি আমরা মরে যাই,তাহলে তোর কি হবে বুঝতে পারছিস তুই।
–বাবা তুমি ঠিক কথা বলেছো।
এদিকে কলেজ শেষ করে ক্লান্ত শরীলে বাসায় ফিরলো শখ।টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে শুরু করলো।
–আসছে মহারাণী রাজকার্য উদ্ধার করে।এখন যে একটা কাজে বলবো।তার কোনো উপায় নেই।বাবা মায়ের আদরের মেয়ে কিছু বললে-ই বাবা মায়ের গায়ে ফোঁসকা পড়ে যায়। বলল মুনতাহা।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here